সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘কাল ও ঋতুর’ ঈশ্বর যিহোবার ওপর নির্ভর করুন

‘কাল ও ঋতুর’ ঈশ্বর যিহোবার ওপর নির্ভর করুন

‘কাল ও ঋতুর’ ঈশ্বর যিহোবার ওপর নির্ভর করুন

“তিনিই কাল ও ঋতু পরিবর্ত্তন করেন; রাজাদিগকে পদভ্রষ্ট করেন, ও রাজাদিগকে পদস্থ করেন।”—দানি. ২:২১.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কীভাবে সৃষ্টি এবং পরিপূর্ণ ভবিষ্যদ্‌বাণী দেখায় যে, যিহোবা মহান সময়রক্ষক?

যিহোবা ‘কাল ও ঋতুর’ ঈশ্বর, এই বিষয়টা উপলব্ধি করা আমাদের কী করতে অনুপ্রাণিত করে?

কেন যিহোবার সময়সূচি জগতের বিভিন্ন ঘটনা ও মানবপরিকল্পনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না?

১, ২. কোন বিষয়টা দেখায় যে, সময় কী তা যিহোবা পুরোপুরিভাবে বোঝেন?

 যিহোবা ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করার অনেক আগে সময় পরিমাপ করার মাধ্যম জুগিয়েছিলেন। চতুর্থ সৃষ্টি দিবসে, ঈশ্বর বলেছিলেন: “রাত্রি হইতে দিবসকে বিভিন্ন করণার্থে আকাশমণ্ডলের বিতানে জ্যোতির্গণ হউক; সে সমস্ত চিহ্নের জন্য, ঋতুর জন্য এবং দিবসের ও বৎসরের জন্য হউক।” (আদি. ১:১৪, ১৯, ২৬) যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে নিশ্চিতভাবে সেটাই হয়েছে।

কিন্তু, বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত সময়ের প্রকৃতি সম্বন্ধে বিতর্ক করে থাকে। “সময় জগতের সবচেয়ে গভীর রহস্যগুলোর মধ্যে একটা,” একটি এনসাইক্লোপিডিয়া বলে। “কেউই সঠিকভাবে বলতে পারে না যে, এটা কী।” কিন্তু, সময় কী, তা যিহোবা পুরোপুরিভাবে বোঝেন। কারণ তিনি “আকাশমণ্ডলের সৃষ্টিকর্ত্তা সদাপ্রভু, . . . যিনি পৃথিবীকে সংগঠন করিয়া নির্ম্মাণ করিয়াছেন।” এ ছাড়া, যিহোবা ‘শেষের বিষয় আদি অবধি জ্ঞাত করেন, যাহা সাধিত হয় নাই তাহা পূর্ব্বে জানান।’ (যিশা. ৪৫:১৮; ৪৬:১০) তাঁর প্রতি এবং তাঁর বাক্য বাইবেলের প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার চিন্তা মাথায় রেখে, আসুন আমরা বিবেচনা করি, কীভাবে সৃষ্টি এবং পরিপূর্ণ ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো দেখায় যে, যিহোবা মহান সময়রক্ষক।

সৃষ্টি মহান সময়রক্ষকের প্রতি বিশ্বাস জাগিয়ে তোলে

৩. ভৌত জগতে নির্ভুল সময় কীভাবে পরিলক্ষিত হয়?

ভৌত জগতে, নির্ভুল সময় আণুবীক্ষনিক মানদণ্ডে ও সেইসঙ্গে চাক্ষুষভাবে পরিলক্ষিত হয়। পরমাণুগুলো নিয়মিতভাবে একই গতিতে কম্পিত হয়। পারমাণবিক কম্পনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক প্রমাণ-সময় ঘড়িগুলো ৮ কোটি বছরে এক সেকেন্ডও এদিক-ওদিক হয় না। গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধির সময়ও নির্ভুলভাবে নির্ধারিত রয়েছে। আকাশমণ্ডলে সেগুলোর নির্ধারিত অবস্থান ঋতু চিহ্নিত করার এবং নৌযাত্রা অথবা বিমানযাত্রা করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যিহোবার—এই নির্ভরযোগ্য “ঘড়িগুলোর” নির্মাতার—নিশ্চিতভাবেই “শক্তির প্রাবল্য” রয়েছে এবং তিনি আমাদের প্রশংসা লাভের যোগ্য।—পড়ুন, যিশাইয় ৪০:২৬.

৪. জীবজগতের সময় কীভাবে ঈশ্বরের প্রজ্ঞাকে প্রকাশ করে?

নির্ভুল সময় জীবজগতেও পরিলক্ষিত হতে পারে। অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনচক্র আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ঘড়ি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অনেক পাখি প্রবৃত্তিগতভাবেই জানে, কখন তাদের পরিযাণ (এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাত্রা) শুরু করতে হবে। (যির. ৮:৭) মানুষেরও আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ঘড়ি রয়েছে, যা সাধারণত দিন-রাত মিলে ২৪ ঘন্টার এক চক্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কয়েকটা সময়-মান মণ্ডল (দুটো দ্রাঘিমাংশের মধ্যবর্তী যে-অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট সময়-মান চালু থাকে) অতিক্রম করার পর, একজন ভ্রমণকারীর দেহের সেই ঘড়িগুলোকে নতুন অবস্থায় খাপ খাওয়ানোর জন্য কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। সত্যিই, সৃষ্টির মধ্যে সময়ের অনেক উদাহরণ ‘কাল ও ঋতুর’ ঈশ্বরের শক্তি ও প্রজ্ঞাকে প্রকাশ করে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৪:২৪.) হ্যাঁ, মহান সময়রক্ষক হচ্ছেন সর্ববিজ্ঞ এবং সর্বশক্তিমান। আমরা এই বিশ্বাস রাখতে পারি যে, তিনি তাঁর ইচ্ছা সম্পাদন করতে সমর্থ!

সঠিক সময়ে পরিপূর্ণ হওয়া ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো বিশ্বাসকে উদ্দীপিত করে

৫. (ক) একমাত্র কোন উপায়ে আমরা মানবজাতির ভবিষ্যৎ জানতে পারি? (খ) কেন যিহোবা বিভিন্ন ঘটনা ও সেগুলোর সময় সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করতে পারেন?

সৃষ্টি সম্বন্ধীয় পুস্তক যিহোবার “অদৃশ্য গুণ” সম্বন্ধে যদিও অনেক কিছু শিক্ষা দেয় কিন্তু এটি এইরকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয় না যেমন, মানবজাতির ভবিষ্যৎ কী? (রোমীয় ১:২০) উত্তরটা পাওয়ার জন্য আমাদেরকে ঈশ্বর তাঁর বাক্য বাইবেলের পাতায় পাতায় যা প্রকাশ করেছেন, সেটির সাহায্য নিতে হবে। আমরা যখন এটি পরীক্ষা করি, তখন আমরা এমন ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো খুঁজে পাই, যেগুলো সবসময় একেবারে সঠিক সময়ে পরিপূর্ণ হয়েছে! যিহোবা এমন বিষয়ও প্রকাশ করতে পারেন, যা এখনও ঘটতে বাকি আছে কারণ তিনি আগে থেকে যথাযথভাবে ভবিষ্যৎ দেখতে পারেন। অধিকন্তু, শাস্ত্র যা ভবিষ্যদ্‌বাণী করে তা সঠিক সময়েই ঘটে, কারণ যিহোবা ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য ও সময়সূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন ঘটনা ঘটাতে পারেন।

৬. কোন বিষয়টা দেখায় যে, যিহোবা চান যেন আমরা বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে বুঝতে পারি?

যিহোবা চান যে, তাঁর উপাসকরা যেন শাস্ত্রীয় ভবিষ্যদ্‌বাণী বুঝতে পারে এবং সেগুলো থেকে উপকৃত হয়। যদিও সময় সম্বন্ধে আমাদের যে-বোধগম্যতা রয়েছে, সেটার দ্বারা ঈশ্বরকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া যায় না, কিন্তু তিনি যখন ভবিষ্যদ্‌বাণী করেন যে, কোনো ঘটনা একটা নির্দিষ্ট সময়েই ঘটবে, তখন আমরা তাঁর ব্যবহৃত শব্দগুলো বুঝতে পারি। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৯০:৪.) উদাহরণস্বরূপ, প্রকাশিত বাক্য বইটি ‘চারি দূত’ সম্বন্ধে উল্লেখ করে, যাদের “দণ্ড, ও দিন ও মাস ও বৎসরের জন্য প্রস্তুত করা হইয়াছিল,” যেগুলো হচ্ছে সময়ের এমন একক, যা আমরা বুঝতে পারি। (প্রকা. ৯:১৪, ১৫) ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো কীভাবে নির্দিষ্ট সময়েই পরিপূর্ণ হয়েছিল তা লক্ষ করা, ‘কাল ও ঋতুর’ ঈশ্বর এবং তাঁর বাক্যের প্রতি বিশ্বাসকে উদ্দীপিত করবে। আসুন আমরা কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করি।

৭. যিরূশালেম ও যিহূদার বিষয়ে যিরমিয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতা কীভাবে দেখায় যে, যিহোবা মহান সময়রক্ষক?

প্রথমে, আসুন আমরা খ্রি.পূ. সপ্তম শতাব্দীর দিকে ফিরে তাকাই। “যোশিয়ের পুত্ত্র যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমের চতুর্থ বৎসরে, . . . যিহূদার সমস্ত লোকের বিষয়ে” মহান সময়রক্ষক যিহোবার বাক্য ‘যিরমিয়ের নিকটে উপস্থিত হইয়াছিল।’ (যির. ২৫:১) যিহোবা যিরূশালেমের ধ্বংস এবং যিহুদিদের যিহূদা দেশ থেকে বাবিলে নির্বাসন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন। সেখানে তারা “সত্তর বৎসর বাবিল-রাজের দাসত্ব” করবে। বাবিলীয় সেনাবাহিনী খ্রি.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংস করেছিল এবং যিহুদিরা সত্যি সত্যিই যিহূদা থেকে বাবিলে নির্বাসিত হয়েছিল। কিন্তু, ৭০ বছর পর কী ঘটবে? যিরমিয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “সদাপ্রভু এই কথা কহেন, বাবিলের সম্বন্ধে সত্তর বৎসর সম্পূর্ণ হইলে আমি তোমাদের তত্ত্বাবধান করিব, এবং তোমাদের পক্ষে আমার মঙ্গলবাক্য সিদ্ধ করিব, তোমাদিগকে পুনর্ব্বার এই স্থানে ফিরাইয়া আনিব।” (যির. ২৫:১১, ১২; ২৯:১০) এই ভবিষ্যদ্‌বাণী একেবারে সঠিক সময়ে—খ্রি.পূ. ৫৩৭ সালে মাদীয় ও পারসীকরা যিহুদিদেরকে বাবিলের কাছ থেকে মুক্ত করার পর—পরিপূর্ণ হয়েছিল।

৮, ৯. মশীহের আসার এবং স্বর্গীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো কীভাবে দেখায় যে, যিহোবা ‘কাল ও ঋতুর’ ঈশ্বর?

ঈশ্বরের প্রাচীনকালের লোকেদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরেকটা ভবিষ্যদ্‌বাণী বিবেচনা করুন। যিহুদিরা বাবিল ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রায় দু-বছর আগে, ঈশ্বর ভাববাদী দানিয়েলের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, যিরূশালেম পুনর্নির্মাণের আজ্ঞা বের হওয়ার ৪৮৩ বছর পর মশীহ আবির্ভূত হবেন। মাদীয়-পারসীক রাজা খ্রি.পূ. ৪৫৫ সালে সেই আজ্ঞা দিয়েছিলেন। এর ঠিক ৪৮৩ বছর পরে—২৯ খ্রিস্টাব্দে—নাসরতের যিশু তাঁর বাপ্তিস্মের সময়ে পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিলেন আর এভাবে মশীহ হয়েছিলেন। *নহি. ২:১, ৫-৮; দানি. ৯:২৪, ২৫; লূক ৩:১, ২, ২১, ২২.

এখন লক্ষ করুন যে, শাস্ত্র রাজ্যের বিষয়ে কী ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল। বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, মশীহ রাজ্য ১৯১৪ সালে স্বর্গে প্রতিষ্ঠিত হবে। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল যিশুর উপস্থিতির “চিহ্ন” প্রদান করেছিল এবং বলেছিল যে, সেই সময়ে পৃথিবীতে মহা বিপর্যয় ঘটবে কারণ শয়তানকে স্বর্গ থেকে নিক্ষেপ করা হবে। (মথি ২৪:৩-১৪; প্রকা. ১২:৯, ১২) অধিকন্তু, বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী একেবারে সঠিক সময়কে—১৯১৪ সালকে—নির্দেশ করেছিল, যখন “জাতিগণের সময় সম্পূর্ণ [হবে]” এবং স্বর্গে রাজ্য শাসন শুরু হবে।—লূক ২১:২৪; দানি. ৪:১০-১৭. *

১০. ভবিষ্যতে কোন ঘটনাগুলো একেবারে নির্ধারিত সময়ে ঘটবে?

১০ সামনে যা রয়েছে, সেটা হল যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত “মহাক্লেশ।” এরপর তাঁর হাজার বছরের রাজত্ব শুরু হবে। এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না যে, এই বিষয়গুলো একেবারে নির্ধারিত সময়ে ঘটবে। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন যিহোবা ইতিমধ্যেই সেই ‘দিন ও দণ্ড’ স্থির করে রেখেছিলেন।—মথি ২৪:২১, ৩৬; প্রকা. ২০:৬.

“সুযোগ কিনিয়া লও”

১১. আমরা যে শেষকালে বাস করছি, এই বিষয়টা জানা আমাদের ওপর কোন প্রভাব ফেলে?

১১ রাজ্যের শাসন যে শুরু হয়েছে এবং আমরা যে ‘শেষকালে’ বাস করছি, এই বিষয়গুলো বুঝতে পারা আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করে? (দানি. ১২:৪) অনেকে পরিস্থিতিকে মন্দ থেকে মন্দতর হতে দেখে কিন্তু তার পরও এটা স্বীকার করতে চায় না যে, এই ঘটনাগুলো শেষকালের বিষয়ে বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীকে পরিপূর্ণ করে। তারা হয়তো মনে করে, এই পরিস্থিতি একদিন আরও খারাপ হয়ে পড়বে অথবা এইরকমটা বিশ্বাস করে, মানুষের প্রচেষ্টায় কোনো না কোনোভাবে “শান্তি ও অভয়” অর্জিত হবে। (১ থিষল. ৫:৩) কিন্তু, আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা যদি এটা বুঝতে পারি যে, আমরা শয়তানের জগতের শেষকালের একেবারে শেষ সময়ে বাস করছি, তাহলে আমাদের কি বাকি সময়টাকে ‘কাল ও ঋতুর’ ঈশ্বরের সেবা করার এবং অন্যদেরকে তাঁকে জানতে সাহায্য করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত নয়? (২ তীম. ৩:১) আমরা কীভাবে আমাদের সময়কে ব্যবহার করব, সেই বিষয়ে আমাদের বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।—পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১৫-১৭.

১২. নোহের সময় সম্বন্ধে যিশুর উক্তি থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১২ বিক্ষেপে পরিপূর্ণ এক জগতে “সুযোগ” বা সময় ‘কিনিয়া লওয়া’ সহজ নয়। “নোহের সময়ে যেরূপ হইয়াছিল,” যিশু সাবধান করেছিলেন, “মনুষ্যপুত্রের আগমনও তদ্রূপ হইবে।” নোহের সময় কেমন ছিল? এটা ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল যে, সেই সময়ের জগৎ ধ্বংস হবে। সেই সময়ে, দুষ্ট মানুষেরা পৃথিবীব্যাপী এক জলপ্লাবনের জলে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” হিসেবে নোহ বিশ্বস্তভাবে তার সময়ের লোকেদের কাছে ঈশ্বরের বার্তা ঘোষণা করেছিলেন। (মথি ২৪:৩৭; ২ পিতর ২:৫) কিন্তু তারা “ভোজন ও পান করিত, বিবাহ করিত ও বিবাহিতা হইত, এবং বুঝিতে পারিল না, যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল।” তাই, যিশু তাঁর অনুসারীদের সাবধান করেছিলেন: “তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্ত্র আসিবেন।” (মথি ২৪:৩৮, ৩৯, ৪৪) আমাদের নোহের মতো হতে হবে, তার সময়ের লোকেদের মতো নয়। কোন বিষয়টা আমাদের প্রস্তুত থাকতে সাহায্য করবে?

১৩, ১৪. যিহোবা সম্বন্ধে কী মনে রাখা আমাদেরকে মনুষ্যপুত্রের আগমনের জন্য অপেক্ষা করার সময় বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে?

১৩ যদিও মনুষ্যপুত্র সেই দণ্ডে আসবেন, যে-দণ্ডের বিষয়ে আমরা চিন্তাও করব না, কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, যিহোবা হলেন মহান সময়রক্ষক। তাঁর সময়সূচি জগতের ঘটনা ও মানুষের পরিকল্পনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। যিহোবা, তাঁর ইচ্ছাকে সম্পাদন করার জন্য বিভিন্ন বিষয়ের সময় ও ফলাফলকে নিয়ন্ত্রণ করেন। (পড়ুন, দানিয়েল ২:২১.) বস্তুতপক্ষে, হিতোপদেশ ২১:১ পদ আমাদের বলে: “সদাপ্রভুর হস্তে রাজার চিত্ত জলপ্রণালীর ন্যায়; তিনি যে দিকে ইচ্ছা, সেই দিকে তাহা ফিরান।”

১৪ যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করার ও তা সঠিক সময়ে পরিপূর্ণ করার জন্য বিভিন্ন ঘটনাকে প্রভাবিত করতে পারেন। জগতের অতি গুরুত্বপূর্ণ অনেক পরিবর্তন ভবিষ্যদ্‌বাণীকে, বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণীকে, পরিপূর্ণ করছে। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও এর ফলাফল সম্বন্ধে চিন্তা করে দেখুন। অল্প লোকই ভেবেছিল যে, এত দ্রুত এইরকম ব্যাপক রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো ঘটতে পারে। কিন্তু, এইরকম পরিবর্তনের ফল স্বরূপ, সুসমাচার এখন এমন অনেক দেশে প্রচারিত হচ্ছে, যেখানে আমাদের কাজ আগে নিষিদ্ধ ছিল। তাই, যেভাবেই হোক, আসুন আমরা ‘কাল ও ঋতুর’ ঈশ্বরকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করার জন্য সময় কিনে নিই।

যিহোবার নিরূপিত সময়ের প্রতি বিশ্বাস দেখিয়ে চলুন

১৫. কীভাবে আমরা সাংগঠনিক রদবদলগুলোর ব্যাপারে বিশ্বাস দেখাতে পারি?

১৫ এই শেষকালে রাজ্যের প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যিহোবার নিরূপিত সময়ের ওপর বিশ্বাস দেখানো প্রয়োজন। পরিবর্তনশীল জগৎ পরিস্থিতির কারণে, শিষ্য তৈরির কাজ যেভাবে সম্পাদিত হয়, তাতে কিছু পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে। সংগঠন হয়তো রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে আমাদের কাজের প্রয়োজন বুঝে মাঝে মাঝে রদবদল করতে পারে। আমরা “মণ্ডলীর মস্তক” অর্থাৎ তাঁর পুত্রের অধীনে থেকে অনুগতভাবে সেবা করার সময়, এইরকম রদবদলকে পূর্ণরূপে সমর্থন করার মাধ্যমে ‘কাল ও ঋতুর’ ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস প্রকাশ করি।—ইফি. ৫:২৩.

১৬. কেন আমরা বিশ্বাস রাখতে পারি যে, যিহোবা সঠিক সময়ে সাহায্য জোগাবেন?

১৬ যিহোবা চান যেন আমরা এই বিষয়ে পূর্ণ আস্থা রেখে তাঁর কাছে নির্দ্বিধায় প্রার্থনা করি যে, তিনি ‘সময়ের উপযোগী উপকার’ বা সঠিক সময়ে সাহায্য করবেন। (ইব্রীয় ৪:১৬) এটা কি ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে আমাদের জন্য তাঁর প্রেমময় চিন্তাকে প্রকাশ করে না? (মথি ৬:৮; ১০:২৯-৩১) আমরা নিয়মিতভাবে তাঁর সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করে আর এরপর আমাদের প্রার্থনা ও তাঁর নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করে যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বিশ্বাস দেখিয়ে থাকি। অধিকন্তু, আমরা সহবিশ্বাসীদের জন্যও প্রার্থনা করার বিষয়টা মনে রাখি।

১৭, ১৮. (ক) যিহোবা শীঘ্র তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেবেন? (খ) আমাদের কোন ফাঁদ এড়িয়ে চলতে হবে?

১৭ এখন “অবিশ্বাস বশতঃ সন্দেহ” করার সময় নয়; এখন হচ্ছে বিশ্বাসে বলবান হওয়ার সময়। (রোমীয় ৪:২০) ঈশ্বরের শত্রুরা—শয়তান ও তার প্রভাবাধীন লোকেরা—সেই কাজকে থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে, যে-কাজের জন্য যিশু তাঁর অনুসারীদের নিযুক্ত করেছিলেন, যাদের মধ্যে আমরাও রয়েছি। (মথি ২৮:১৯, ২০) দিয়াবলের বিভিন্ন আক্রমণ সত্ত্বেও, আমরা যিহোবাকে ‘সেই জীবন্ত ঈশ্বর’ হিসেবে জানি, “যিনি সমস্ত মনুষ্যের, বিশেষতঃ বিশ্বাসীবর্গের ত্রাণকর্ত্তা।” তিনি “ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে . . . জানেন।”—১ তীম. ৪:১০; ২ পিতর ২:৯.

১৮ শীঘ্র, যিহোবা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসবেন। কখন সেটা ঘটবে সেই ব্যাপারে আমাদেরকে যদিও সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য ও একেবারে সঠিক সময়টা জানানো হয়নি, কিন্তু আমরা জানি যে, খ্রিস্ট একেবারে সঠিক সময়েই ঈশ্বরের শত্রুদের দূর করে দেবেন এবং যিহোবার সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদিত হবে। তাই, আমরা এখন যে-‘বিশেষ বিশেষ কাল ও সময়ে’ বাস করছি, সেটার অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হওয়া কতই না ভুল হবে! আমরা যেন কখনোই এইরকম চিন্তাভাবনার ফাঁদে পড়ে না যাই যে, “সমস্তই সৃষ্টির আরম্ভ অবধি যেমন, তেমনই রহিয়াছে।”—১ থিষল. ৫:১; ২ পিতর ৩:৩, ৪.

‘অপেক্ষা করুন’

১৯, ২০. কেন আমাদের যিহোবার জন্য অপেক্ষা করা উচিত?

১৯ মানবজাতির জন্য যিহোবার আদি উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত হল, তারা তাঁর সম্বন্ধে এবং তাঁর অপূর্ব সৃষ্টি সম্বন্ধে অনন্তকাল ধরে জানবে। উপদেশক ৩:১১ পদ বলে: “তিনি [সদাপ্রভু] সকলই যথাকালে মনোহর করিয়াছেন, আবার তাহাদের হৃদয়মধ্যে চিরকাল রাখিয়াছেন; তথাপি ঈশ্বর আদি অবধি শেষ পর্য্যন্ত যে সকল কার্য্য করেন, মনুষ্য তাহার তত্ত্ব বাহির করিতে পারে না।”

২০ আমরা কতই না আনন্দিত হতে পারি যে, যিহোবা মানুষের জন্য তাঁর যে-উদ্দেশ্য রয়েছে, সেটাকে কখনোই পরিবর্তন করেননি! (মালাখি ৩:৬) ঈশ্বরের “অবস্থান্তর কিম্বা পরিবর্ত্তনজনিত ছায়া হইতে পারে না।” (যাকোব ১:১৭) তাঁর সময়সূচি মানুষের সময় পরিমাপের মাধ্যম যেমন, পৃথিবীর আবর্তন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। যিহোবা “যুগপর্য্যায়ের রাজা।” (১ তীম. ১:১৭) তাই, আসুন আমরা ‘আমাদের ত্রাণেশ্বরের অপেক্ষা করি।’ (মীখা ৭:৭) বস্তুতপক্ষে, “হে সদাপ্রভুর অপেক্ষাকারী সকলে, সাহস কর, তোমাদের অন্তঃকরণ সবল হউক।”—গীত. ৩১:২৪.

[পাদটীকাগুলো]

^ বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ১৯৭-১৯৯ পৃষ্ঠার পরিশিষ্ট দেখুন।

^ বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ২১৫-২১৮ পৃষ্ঠার পরিশিষ্ট দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরদত্ত ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতার প্রতি দানিয়েলের বিশ্বাস ছিল

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য সময়ের সদ্‌ব্যবহার করেন?