সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তোমরা ফরীশীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক”

“তোমরা ফরীশীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক”

“তোমরা ফরীশীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক”

যিশু তাঁর শিষ্যদের সাবধান করেছিলেন: “তোমরা ফরীশীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক, তাহা কপটতা।” (লূক ১২:১) যিশুর এই কথা সম্বন্ধে একইরকম আরেকটি বিবরণ স্পষ্ট করে যে, তিনি ফরীশীদের ‘শিক্ষাকে’ নিন্দা করছিলেন।—মথি ১৬:১২.

বাইবেল মাঝে মাঝে কলুষতার প্রতীক হিসেবে “তাড়ী” বা ইস্ট শব্দটি ব্যবহার করে। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, ফরীশীদের শিক্ষা ও মনোভাব উভয়ই তাদের শ্রোতাদের ওপর এক কলুষিত প্রভাব ফেলেছিল। কেন ফরীশীদের শিক্ষা বিপদজনক ছিল?

১ ফরীশীরা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে বড়াই করত আর তারা সাধারণ লোকেদের নীচু হিসেবে গণ্য করত।

যিশুর একটা নীতিগল্পে এই আত্মধার্মিকতা সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেছিলেন: “ফরীশী দাঁড়াইয়া আপনা আপনি এইরূপ প্রার্থনা করিল, হে ঈশ্বর, আমি তোমার ধন্যবাদ করি যে, আমি অন্য সকল লোকের—উপদ্রবী, অন্যায়ী ও ব্যভিচারীদের—মত কিম্বা ঐ করগ্রাহীর মত নহি; আমি সপ্তাহের মধ্যে দুই বার উপবাস করি, সমস্ত আয়ের দশমাংশ দান করি। কিন্তু করগ্রাহী দূরে দাঁড়াইয়া স্বর্গের দিকে চক্ষু তুলিতেও সাহস পাইল না, বরং সে বক্ষে করাঘাত করিতে করিতে কহিল, হে ঈশ্বর, আমার প্রতি এই পাপীর প্রতি দয়া কর।”—লূক ১৮:১১-১৩.

যিশু এই বলে সেই করগ্রাহীর নম্র মনোভাবের প্রশংসা করেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এই ব্যক্তি ধার্ম্মিক গণিত হইয়া নিজ গৃহে নামিয়া গেল, ঐ ব্যক্তি নয়; কেননা যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে; কিন্তু যে আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে।” (লূক ১৮:১৪) যদিও অসততার জন্য করগ্রাহীদের দুর্নাম ছিল, কিন্তু যিশু তাদের মধ্যে থেকে সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন, যারা তাঁর কথা শুনেছিল। অন্ততপক্ষে দুজন করগ্রাহী—মথি এবং সক্কেয়—তাঁর অনুসারী হয়েছিল।

আমরা যদি এইরকম মনে করি যে, আমাদের ঈশ্বরদত্ত বিভিন্ন যোগ্যতা বা বিশেষ সুযোগ রয়েছে বলে অথবা অন্যদের বিভিন্ন ব্যর্থতা ও দুর্বলতা রয়েছে বলে আমরা তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তাহলে? আমাদের দ্রুত এইরকম চিন্তাভাবনা বাদ দেওয়া উচিত কারণ শাস্ত্র বলে: “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর, ঈর্ষা করে না, প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব্ব করে না, অশিষ্টাচরণ করে না, স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না, অপকার গণনা করে না, অধার্ম্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে।”—১ করি. ১৩:৪-৬.

আমাদের প্রেরিত পৌলের মতো একইরকম মনোভাব বজায় রাখা উচিত। “খ্রীষ্ট যীশু পাপীদের পরিত্রাণ করিবার জন্য জগতে আসিয়াছেন,” এই কথা বলার পর পৌল এটা যুক্ত করেছিলেন: “তাহাদের মধ্যে আমি অগ্রগণ্য।”—১ তীম. ১:১৫.

ধ্যানের জন্য প্রশ্নগুলো:

আমি কি বুঝতে পারি যে, আমি একজন পাপী এবং আমার পরিত্রাণ যিহোবার অযাচিত দয়ার ওপর নির্ভর করে? নাকি বহু বছর ধরে আমার বিশ্বস্ত সেবাকে, যিহোবার সংগঠনে বিশেষ সুযোগগুলোকে অথবা আমার সহজাত ক্ষমতাকে অন্যদের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করার এক ভিত্তি হিসেবে দেখি?

২ ফরীশীরা জনসমক্ষে তাদের ধার্মিকতা দেখানোর দ্বারা অন্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করত। তারা বিশিষ্টতা ও তোষামোদকারী উপাধি পেতে পছন্দ করত।

কিন্তু, যিশু সাবধান করেছিলেন: “তাহারা লোককে দেখাইবার জন্যই তাহাদের সমস্ত কর্ম্ম করে; কেননা তাহারা আপনাদের কবচ [“পবিত্র শাস্ত্রের পদ-লেখা তাবিজ,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] প্রশস্ত করে, এবং বস্ত্রের থোপ বড় করে, আর ভোজে প্রধান স্থান, সমাজগৃহে প্রধান প্রধান আসন, হাটে বাজারে মঙ্গলবাদ, এবং লোকের কাছে রব্বি (গুরু) বলিয়া সম্ভাষণ, এ সকল ভালবাসে।” (মথি ২৩:৫-৭) তাদের মনোভাবের সঙ্গে যিশুর মনোভাবের পার্থক্য লক্ষ করুন। যদিও তিনি ঈশ্বরের সিদ্ধ পুত্র ছিলেন, কিন্তু তিনি ছিলেন একজন নম্র ব্যক্তি। একজন ব্যক্তি যখন তাঁকে “সৎ” বলে ডেকেছিলেন, তখন যিশু এই কথা বলেছিলেন: “আমাকে সৎ কেন বলিতেছ? এক জন ব্যতিরেকে সৎ আর কেহ নাই, তিনি ঈশ্বর।” (মার্ক ১০:১৮) আরেকটা ঘটনায়, যিশু তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন আর এভাবে তাঁর অনুসারীদের জন্য নম্রতার এক উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন।—যোহন ১৩:১-১৫.

একজন প্রকৃত খ্রিস্টানের উচিত তার সহবিশ্বাসীদের সেবা করা। (গালা. ৫:১৩) বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য, যারা মণ্ডলীতে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ্য হতে চায়। যদিও ‘অধ্যক্ষপদের আকাঙ্ক্ষী হওয়া’ উপযুক্ত, কিন্তু এই লক্ষ্য যেন অন্যদের সেবা করার আকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত হয়। এই ‘পদ’ বিশিষ্টতা অথবা ক্ষমতালাভের কোনো পদ নয়। যারা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করছে, তাদেরকে যিশুর মতো “নম্রচিত্ত” হতে হবে।—১ তীম. ৩:১, ৬; মথি ১১:২৯.

ধ্যানের জন্য প্রশ্নগুলো:

আমার কি সেই ব্যক্তিদের প্রতি অনুগ্রহ দেখানোর প্রবণতা রয়েছে, যারা মণ্ডলীতে দায়িত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে, হতে পারে এইরকম প্রত্যাশা নিয়ে যে, এর ফলে আমি বিশিষ্টতা অথবা আরও বিশেষ সুযোগ লাভ করতে পারব? আমি কি ঈশ্বরের সেবার প্রধানত সেই দিকগুলোর প্রতিই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি, যেগুলো আমাকে লক্ষণীয় করে তুলবে ও আমার প্রশংসা নিয়ে আসবে বলে মনে হয়? বস্তুতপক্ষে, আমি কি অন্যদের সামনে শ্রেষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করি?

৩ ফরীশীদের নিয়মকানুন ও পরম্পরাগত বিধি সাধারণ লোকেদের জন্য ব্যবস্থা পালন করাকে বোঝা স্বরূপ করে তুলেছিল।

মোশির ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়রা যেভাবে যিহোবার উপাসনা করবে, সেই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কাঠামো প্রদান করেছিল। কিন্তু, সেই ব্যাপারে একেবারে খুঁটিনাটি বিষয় প্রদান করেনি। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবস্থা বিশ্রামবারে কাজ করাকে নিষিদ্ধ করেছিল, কিন্তু কোনটা কাজ এবং কোনটা কাজ নয় সেই ব্যাপারে এটি সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেনি। (যাত্রা. ২০:১০) ফরীশীরা তথাকথিত সেই ফাঁকা জায়গাগুলো তাদের নিয়মকানুন, সংজ্ঞা ও পরম্পরাগত বিধি দিয়ে পূর্ণ করার চেষ্টা করেছিল। যদিও যিশু ফরীশীদের অযৌক্তিক নিয়মকানুনকে উপেক্ষা করেছিলেন কিন্তু তিনি মোশির ব্যবস্থা পালন করেছিলেন। (মথি ৫:১৭, ১৮; ২৩:২৩) তিনি ব্যবস্থার শব্দমালাকে ছাড়িয়ে আরও বেশি কিছু দেখেছিলেন। যিশু ব্যবস্থার পিছনের মনোভাব আর সেইসঙ্গে করুণা ও সমবেদনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি যুক্তিবাদী ছিলেন, এমনকী সেই সময়ও, যখন তাঁর অনুসারীরা তাঁকে অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, গ্রেপ্তার হওয়ার রাতে যদিও তিনি তাঁর তিন জন প্রেরিতকে জেগে থাকার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা বার বার ঘুমিয়ে পড়েছিল। তা সত্ত্বেও, তিনি সহানুভূতি সহকারে বলেছিলেন: “আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।”—মার্ক ১৪:৩৪-৪২.

ধ্যানের জন্য প্রশ্নগুলো:

আমি কি অযৌক্তিক ও কঠোর নিয়মকানুন তৈরি করার চেষ্টা করি এবং ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়মে পরিণত করে ফেলি? অন্যদের কাছ থেকে আমি যা আশা করি, সেই ব্যাপারে আমি কি যুক্তিবাদী?

যিশু এবং ফরীশীদের শিক্ষার মধ্যে যে-পার্থক্য রয়েছে, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। আপনি কি এমন ক্ষেত্রগুলো দেখতে পান, যেখানে আপনি উন্নতি করতে পারেন? যদি পান, তাহলে তা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন না কেন?

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফরীশীরা পবিত্র শাস্ত্রের পদ-লেখা কবচ পড়ত। —মথি ২৩:২, ৫.

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

অহংকারী ফরীশীদের বৈসাদৃশ্যে, নম্র খ্রিস্টান প্রাচীনরা অন্যদের সেবা করে থাকে

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

অন্যদের কাছ থেকে আপনি যা আশা করেন, সেই ব্যাপারে আপনি কি যিশুর মতো যুক্তিবাদী?