সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সমস্যায় জর্জরিত এক বিয়ের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন

সমস্যায় জর্জরিত এক বিয়ের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন

সমস্যায় জর্জরিত এক বিয়ের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন

“বিবাহিত লোকদিগকে এই আজ্ঞা দিতেছি—আমি দিতেছি তাহা নয়, কিন্তু প্রভুই দিতেছেন।”—১ করি. ৭:১০.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

কোন অর্থে ঈশ্বর বিবাহসাথিদের যোগ করেছেন?

কীভাবে প্রাচীনরা সেই খ্রিস্টানদের সাহায্য করতে পারে, যাদের বৈবাহিক সমস্যা রয়েছে?

বিয়েকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

১. খ্রিস্টানরা বিয়েকে কীভাবে দেখে থাকে এবং কেন?

 খ্রিস্টানরা যখন বিয়ে করে, তখন তারা ঈশ্বরের সামনে এক অঙ্গীকার করে থাকে—এমন এক দায়িত্ব, যেটাকে হালকাভাবে নেওয়া যায় না। (উপ. ৫:৪-৬) যিহোবা এই অর্থে বৈবাহিক ব্যবস্থার উদ্যোক্তা যে, তিনি সেই ব্যক্তিদেরকে “যোগ করিয়া দিয়াছেন,” যারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। (মার্ক ১০:৯) সেই যোগবন্ধন ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অটুট থাকে, তা বিয়ে সম্বন্ধে কোনো দেশের আইন যা-ই বলুক না কেন। বিয়েকে যিহোবার দাসদের এক অবশ্যপালনীয় ব্যবস্থা হিসেবে দেখা উচিত, তা তারা তাদের বিয়ের সময়ে যিহোবার উপাসক থাকুক বা না-ই থাকুক।

২. এই প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে?

এক সফল বিয়ে পরম সুখ নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু, বৈবাহিক বন্ধন যদি সমস্যায় জর্জরিত থাকে, তাহলে কী করা যেতে পারে? দুর্বল হয়ে পড়া কোনো বৈবাহিক বন্ধনকে কি শক্তিশালী করা যেতে পারে? সেই ব্যক্তিদের জন্য কোন সাহায্য রয়েছে, যাদের বৈবাহিক শান্তি ঝুঁকির মুখে রয়েছে?

এটা কি আনন্দদায়ক হবে, নাকি পীড়াদায়ক?

৩, ৪. একজন ব্যক্তি যদি বিবাহসাথি বাছাই করার সময় মূর্খতাপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেন, তাহলে কী হতে পারে?

যখন একজন খ্রিস্টানের বিয়ে সফল হয়, তখন সেটা আনন্দদায়ক হয় এবং যিহোবার জন্য সম্মান নিয়ে আসে। যদি সেটা ব্যর্থ হয়, তাহলে তা কেবল পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে। একজন অবিবাহিত খ্রিস্টান, যিনি বিবাহবন্ধনের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করছেন, তিনি ঈশ্বরের নির্দেশনা অনুসরণ করার মাধ্যমে উত্তমভাবে বিবাহিত জীবন শুরু করার মতো অবস্থানে আছেন। অন্যদিকে, একজন ব্যক্তি যখন স্বামী অথবা স্ত্রী বাছাই করার সময় মূর্খতাপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেন, তখন তিনি হয়তো অসন্তুষ্ট হতে ও মনোদুঃখ পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, কিছু তরুণ-তরুণী সেই সময়ে ডেটিং করতে শুরু করে, যখন তারা বিবাহিত জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দায়দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকে না। কিছু ব্যক্তি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্ভাব্য সাথি খুঁজে থাকে এবং তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করে, যা খুবই অসুখী এক বিয়ে হিসেবে প্রমাণিত হয়। আবার অন্যেরা, বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশা করার সময় গুরুতর পাপ করে ফেলে আর এর পরও বিয়ে করে, কিন্তু তারা হয়তো একে অন্যের প্রতি সামান্যই সম্মান নিয়ে তাদের বিবাহিত জীবন শুরু করে।

কিছু খ্রিস্টান “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করে না এবং তারা প্রায়ই ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত এক পরিবারে থাকার দুঃখজনক পরিণতি ভোগ করে থাকে। (১ করি. ৭:৩৯) আপনার অবস্থা যদি এইরকম হয়ে থাকে, তাহলে ঈশ্বরের ক্ষমা ও সাহায্য লাভ করার জন্য প্রার্থনা করুন। তিনি যদিও একজন ব্যক্তির অতীতের ভুলগুলোর প্রভাব দূর করে দেন না কিন্তু অনুতপ্ত ব্যক্তিদেরকে পরীক্ষার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেন। (গীত. ১৩০:১-৪) তাই, এখন ও চিরকাল তাঁকে খুশি করার জন্য আপনার যথাসাধ্য করুন আর তাহলে ‘সদাপ্রভুতে যে আনন্দ, তাহাই আপনার শক্তি হইবে।’—নহি. ৮:১০.

যখন বৈবাহিক বন্ধন ঝুঁকির মুখে থাকে

৫. একটা অসুখী বিয়ে সম্বন্ধে কোন ধরনের চিন্তাভাবনা এড়িয়ে চলা উচিত?

বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যারা মর্মপীড়া ভোগ করে থাকে, তারা হয়তো ভাবতে পারে: ‘আমার এই অসুখী বিয়েকে টিকিয়ে রেখে আসলেই কি কোনো লাভ হবে? আমি যদি কেবল একবার ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে অন্য একজন বিবাহসাথির সঙ্গে জীবনটা আবারও শুরু করতে পারতাম!’ তারা হয়তো সেই বন্ধনকে ভেঙে ফেলার স্বপ্ন দেখতে পারে—‘আহ্‌, আমি আবারও স্বাধীন হতে চাই! তাহলে বিবাহবিচ্ছেদ করছি না কেন? এমনকী আমি যদি শাস্ত্র অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদ করতে না-ও পারি, তবুও পৃথক হয়ে আবারও জীবনটা উপভোগ করছি না কেন?’ এইরকম কথাবার্তা চিন্তা করার অথবা যা হতে পারত সেই বিষয়ে দিবাস্বপ্ন দেখার পরিবর্তে, খ্রিস্টানদের ঈশ্বরের নির্দেশনা খোঁজার ও তা অনুসরণ করার মাধ্যমে নিজেদের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে যতটা সম্ভব মানিয়ে নেওয়ার জন্য যথাসাধ্য করা উচিত।

৬. মথি ১৯:৯ পদে যিশু যা বলেছেন, তা ব্যাখ্যা করুন।

একজন খ্রিস্টান পুরুষ অথবা নারী যদি বিবাহবিচ্ছেদ করতে চান, তিনি আবারও বিয়ে করার জন্য শাস্ত্রীয়ভাবে স্বাধীন হতে পারেন বা না-ও হতে পারে। যিশু বলেছিলেন: “ব্যভিচার দোষ ব্যতিরেকে যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে।” (মথি ১৯:৯) এখানে ‘ব্যভিচারের’ অন্তর্ভুক্ত পারদারিকতা এবং অন্যান্য গুরুতর যৌন সংক্রান্ত পাপ। যখন কোনো সাথিই যৌন অনৈতিকতার দোষে দোষী না হয়, তখন বিবাহবিচ্ছেদের যেকোনো চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

৭. কোনো খ্রিস্টীয় বিয়ে যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রত্যক্ষদর্শীরা হয়তো কী চিন্তা করতে পারে?

একটা ব্যর্থ বিয়ে হয়তো একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক অবস্থা সম্বন্ধে সন্দেহ জাগিয়ে তুলতে পারে। প্রেরিত পৌল এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন: “যদি কেহ ঘর শাসন করিতে না জানে, সে কেমন করিয়া ঈশ্বরের মণ্ডলীর তত্ত্বাবধান করিবে?” (১ তীম. ৩:৫) বস্তুতপক্ষে, যখন উভয় সাথিই নিজেদের খ্রিস্টান বলে দাবি করে অথচ তাদের বিয়ে যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রত্যক্ষদর্শীরা হয়তো চিন্তা করতে পারে যে, এই ব্যক্তিরা যা প্রচার করে, সেগুলো আসলে তারাই পালন করে না।—রোমীয় ২:২১-২৪.

৮. খ্রিস্টান বিবাহসাথিরা যদি আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে অবশ্যই কী ভুল রয়েছে?

যখন বাপ্তাইজিত বিবাহসাথিরা পৃথক থাকার অথবা একে অন্যের সঙ্গে শাস্ত্রীয় ভিত্তি ছাড়া বিবাহবিচ্ছেদ করার পরিকল্পনা করে, তখন নিশ্চিতভাবেই তাদের জীবনে আধ্যাত্মিকভাবে কিছু ভুল রয়েছে। স্পষ্টতই, একজন সাথি অথবা হতে পারে উভয় সাথিই শাস্ত্রীয় নীতিগুলো কাজে লাগাচ্ছে না। তারা যদি “সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস” বা নির্ভর করত, তাহলে এটা বিশ্বাস করার সামান্যই কারণ থাকে যে, তাদের বিয়ে ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার বিষয়টা তারা এড়াতে পারেনি।—পড়ুন, হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.

৯. কিছু খ্রিস্টান বিয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তাদের ধৈর্যশীল প্রচেষ্টার কারণে কীভাবে পুরস্কৃত হয়েছে?

অনেক বিয়ে, যেগুলো ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল বলে মনে হয়েছিল, সেগুলো সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ সফল বিয়েতে পরিণত হয়েছে। যে-খ্রিস্টানরা এক চাপপূর্ণ বিয়ের ব্যাপারে দ্রুত হাল ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টাকে প্রত্যাখ্যান করে, তারা প্রায়ই এক চমৎকার পুরস্কার লাভ করে। ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত একটা পরিবারে কী ঘটতে পারে, সেই বিষয়টা একটু বিবেচনা করুন। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “হে ভার্য্যা সকল, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।” (১ পিতর ৩:১, ২) হ্যাঁ, একজন অবিশ্বাসী স্বামী তার সাথির চমৎকার আচারব্যবহারের কারণে সত্যকে গ্রহণ করে নিতে পারেন! এভাবে যে-বিয়েটা টিকে যায়, তা ঈশ্বরের সম্মান নিয়ে আসে আর সেই স্বামী ও স্ত্রীর জন্য এবং তাদের যদি কোনো সন্তান থাকে, তাহলে তার জন্যও প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে আসতে পারে।

১০, ১১. একটা বিয়েতে কোন অপ্রত্যাশিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে, কিন্তু একজন খ্রিস্টান কোন ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন?

১০ অধিকাংশ অবিবাহিত খ্রিস্টান যিহোবাকে খুশি করার এক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে উৎসর্গীকৃত সহবিশ্বাসীদের বিবাহসাথি হিসেবে বাছাই করে থাকে। কিন্তু, তার পরও বিভিন্ন পরিস্থিতি হয়তো অপ্রত্যাশিতভাবে ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কদাচিৎ কোনো সাথির হয়তো গুরুতর মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অথবা মাঝে মাঝে, বিয়ে করার পর একজন সাথি হয়তো নিষ্ক্রিয় প্রকাশক হয়ে যেতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে: লিন্ডা * নামে একজন উদ্যোগী খ্রিস্টান ও একনিষ্ঠ মা অসহায়ভাবে দেখেছিলেন যে, তার বাপ্তাইজিত স্বামী অনুতাপহীনভাবে এক অশাস্ত্রীয় পথে চলতে শুরু করেছে এবং সমাজচ্যুত হয়েছে। সেই সময়ে একজন খ্রিস্টানের কী করা উচিত, যদি তার মনে হয় যে, এইরকম এক কারণের জন্য তার বিবাহবন্ধন একেবারে ভেঙে যাচ্ছে?

১১ ‘যা-ই ঘটুক না কেন, আমাকে কি আমার বিয়েটা টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করতেই হবে?’ আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন। কেউই আপনার হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না অথবা তার নেওয়া উচিতও নয়। তবে, দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এমন বৈবাহিক বন্ধনের ব্যাপারে হাল ছেড়ে না দেওয়ার পিছনে উপযুক্ত কারণগুলো রয়েছে। ঈশ্বরভয়শীল একজন পুরুষ অথবা নারী, যিনি সংবেদ বা বিবেকের কারণে চাপপূর্ণ বিয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করেন, তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রিয়। (পড়ুন, ১ পিতর ২:১৯, ২০.) যিহোবা তাঁর বাক্য ও পবিত্র আত্মার মাধ্যমে এমন একজন খ্রিস্টানকে সাহায্য করবেন, যিনি সমস্যায় জর্জরিত এক বিয়েকে শক্তিশালী করার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা করেন।

তারা সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত

১২. আমরা যদি প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য খোঁজার চেষ্টা করি, তাহলে তারা আমাদের কীভাবে দেখবে?

১২ আপনি যদি বৈবাহিক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন, তাহলে পরিপক্ব খ্রিস্টানদের কাছ থেকে আধ্যাত্মিক সাহায্য খোঁজার ব্যাপারে ইতস্তত করবেন না। প্রাচীনরা পালের পালক হিসেবে সেবা করে থাকে আর তারা আনন্দের সঙ্গে শাস্ত্রে প্রাপ্ত অনুপ্রাণিত পরামর্শের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করাবে। (প্রেরিত ২০:২৮; যাকোব ৫:১৪, ১৫) এই উপসংহারে আসবেন না যে, আপনি ও আপনার সাথি যদি প্রাচীনদের কাছ থেকে আধ্যাত্মিক সাহায্য খোঁজার চেষ্টা করেন এবং তাদের সঙ্গে কোনো গুরুতর বৈবাহিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন, তাহলে আপনাদের প্রতি তাদের সম্মান হারিয়ে যাবে। আপনাদের জন্য তাদের প্রেমময় চিন্তা আরও বৃদ্ধি পাবে, যখন তারা দেখবে যে, আপনারা আন্তরিকভাবে ঈশ্বরকে খুশি করতে চান।

১৩. প্রথম করিন্থীয় ৭:১০-১৬ পদে কোন পরামর্শ রয়েছে?

১৩ যখন প্রাচীনদের কাছে এমন খ্রিস্টানদের জন্য সাহায্য চাওয়া হয়, যারা ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত পরিবারে বাস করছে, তখন প্রাচীনরা পৌলের পরামর্শ উল্লেখ করে, যিনি লিখেছিলেন: “আর বিবাহিত লোকদিগকে এই আজ্ঞা দিতেছি—আমি দিতেছি তাহা নয়, কিন্তু প্রভুই দিতেছেন—স্ত্রী স্বামীর নিকট হইতে চলিয়া না যাউক—যদি চলিয়া যায়, তবে সে অবিবাহিতা থাকুক, কিম্বা স্বামীর সহিত সম্মিলিতা হউক—আর স্বামীও স্ত্রীকে পরিত্যাগ না করুক। . . . কারণ, হে নারি, তুমি কি করিয়া জান যে, তুমি তোমার স্বামীকে পরিত্রাণ করিবে কি না? অথবা হে স্বামী, তুমি কি করিয়া জান যে, তুমি তোমার স্ত্রীকে পরিত্রাণ করিবে কি না?” (১ করি. ৭:১০-১৬) একজন অবিশ্বাসী সাথিকে যখন সত্য উপাসনার পক্ষে নিয়ে আসা হয়, তখন তা কতই না আশীর্বাদ নিয়ে আসে!

১৪, ১৫. কখন একজন খ্রিস্টান সাথি চলে যাওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করতে পারে কিন্তু কেন বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনাপূর্বক ও সৎভাবে বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ?

১৪ কোন কোন পরিস্থিতিতে একজন খ্রিস্টান স্ত্রী ‘চলিয়া যাইতে’ পারেন? কেউ কেউ পৃথক থাকা বেছে নিয়েছে, কারণ তার সাথি ইচ্ছাকৃতভাবে ভরণপোষণ জোগায় না। অন্যেরা চরম শারীরিক নির্যাতনের কারণে অথবা একজন খ্রিস্টানের আধ্যাত্মিকতা নিশ্চিত ঝুঁকির মুখে পড়ার কারণে একই বিষয় করেছে।

১৫ একজন ব্যক্তি চলে যাবেন কি যাবেন না, সেটা একটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু, একজন বাপ্তাইজিত সাক্ষির এই বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনাপূর্বক এবং সৎভাবে বিবেচনা করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, অবিশ্বাসী সাথিই কি আধ্যাত্মিক ঝুঁকির জন্য পুরোপুরি দায়ী, নাকি সেই খ্রিস্টান নিজেই বাইবেল অধ্যয়নকে উপেক্ষা করছেন, সভায় যোগ দেওয়ার এবং পরিচর্যায় যাওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়ছেন?

১৬. কোন বিষয়টা খ্রিস্টানদেরকে বিবাহবিচ্ছেদ করার ব্যাপারে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত করবে?

১৬ আমরা যে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে মূল্যবান বলে গণ্য করি এবং তাঁর দত্ত বিয়ের দানের জন্য কৃতজ্ঞ, এই বিষয়টা যেন আমাদেরকে বিবাহবিচ্ছেদ করার ব্যাপারে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত করে। যিহোবার দাস হিসেবে আমরা তাঁর পবিত্র নামের পবিত্রীকরণের ব্যাপারে আগ্রহী। তাই, নিশ্চিতভাবেই আমরা কখনোই একটা বিয়ে থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য ফাঁকফোকর খুঁজব না, যখন কিনা আমাদের হৃদয় আরেকটা বিয়ে করার জন্য পরিকল্পনা করছে।—যির. ১৭:৯; মালাখি ২:১৩-১৬.

১৭. কোন কোন পরিস্থিতিতে এটা বলা যেতে পারে যে, ঈশ্বর বিবাহিত খ্রিস্টানদের শান্তিতে আহ্বান করেছেন?

১৭ একজন খ্রিস্টান, যিনি একজন অবিশ্বাসীকে বিয়ে করেছেন, তার বিবাহবন্ধনকে অটুট রাখার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা উচিত। তবে, একজন খ্রিস্টান সেই সময়ে নিজেকে দোষী মনে করবেন না, যদি সেই খ্রিস্টান বন্ধনকে টিকিয়ে রাখার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা করা সত্ত্বেও, অবিশ্বাসী সাথি বিশ্বাসী সাথির সঙ্গে থাকার বিষয়টাকে প্রত্যাখ্যান করেন। “অবিশ্বাসী যদি চলিয়া যায়, চলিয়া যাউক,” পৌল লিখেছিলেন। “এমন স্থলে সেই ভ্রাতা কি সেই ভগিনী দাসত্বে বদ্ধ নহে, কিন্তু ঈশ্বর আমাদিগকে শান্তিতেই আহ্বান করিয়াছেন।”—১ করি. ৭:১৫. *

যিহোবার ওপর প্রত্যাশা রাখুন

১৮. এমনকী একটা বিয়েকে যদি টিকিয়ে রাখা সম্ভব না-ও হয়, তবুও তা করার প্রচেষ্টা করে কোন উত্তম ফলাফল লাভ করা যেতে পারে?

১৮ যেকোনো বৈবাহিক সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় সাহসের জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করুন এবং সবসময় তাঁর অপেক্ষায় থাকুন বা তাঁর ওপর প্রত্যাশা রাখুন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ২৭:১৪.) লিন্ডার কথা বিবেচনা করুন, যার সম্বন্ধে আগে উল্লেখ করা হয়েছে। তার বিয়েটা শেষপর্যন্ত বিবাহবিচ্ছেদের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়ে গিয়েছিল, যদিও তিনি সেটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক বছর ধরে প্রচেষ্টা করেছিলেন। তিনি কি এইরকম মনে করেন যে, তিনি তার সময় নষ্ট করেছেন? “একেবারেই না,” তিনি বলেন। “আমার প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে এক উত্তম সাক্ষ্য দিয়েছে। আমার এক শুদ্ধ বিবেক রয়েছে। আর সবচেয়ে ভালো বিষয়টা হল, সেই বছরগুলো আমার মেয়েকে সত্যে দৃঢ় থাকতে সাহায্য করেছে। সে যিহোবার একজন উদ্যোগী এবং উৎসর্গীকৃত সাক্ষি হিসেবে বড়ো হয়ে উঠেছে।”

১৯. একটা বিয়েকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রচেষ্টা করা হলে কী হতে পারে?

১৯ মেরিলিন নামে একজন খ্রিস্টান মহিলা আনন্দিত যে, তিনি ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করেছেন এবং তার বিয়েকে টিকিয়ে রাখার জন্য বাড়তি প্রচেষ্টা করেছেন। “আমি আমার স্বামীর কাছ থেকে পৃথক হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হয়েছিলাম কারণ সে আর্থিকভাবে ভরণপোষণ করত না এবং আমার আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো ঝুঁকির মুখে ছিল,” তিনি বলেন। “আমার স্বামী অবিবেচনাপূর্ণ ব্যাবসায়িক চুক্তিতে জড়িত হওয়ার আগে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করেছিল। সে সভাগুলোতে যাওয়া বাদ দিতে শুরু করেছিল আর স্বাভাবিকভাবেই আমরা ভাববিনিময় করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমাদের শহরে ঘটে যাওয়া এক সন্ত্রাসী আক্রমণের কারণে আমি এতটাই আতঙ্কিত হয়েছিলাম যে, আমি নিজেকে শামুকের মতো গুটিয়ে নিয়েছিলাম। তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমি নিজেও দোষী। আমরা আবারও ভাববিনিময় শুরু করেছিলাম, পুনরায় আমাদের পারিবারিক অধ্যয়ন শুরু করেছিলাম এবং নিয়মিতভাবে সভাতে গিয়েছিলাম। প্রাচীনরা সদয় ছিল এবং অনেক সাহায্য করেছিল। আমাদের বিবাহিত জীবনটা নতুনভাবে শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে, আমার স্বামী আবারও মণ্ডলীর বিশেষ সুযোগগুলো লাভ করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠেছিল। এটা ছিল একটা কঠিন শিক্ষা, যেটার ফলাফল সুখকর ছিল।”

২০, ২১. বিয়ের ব্যাপারে আমাদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?

২০ আমরা অবিবাহিত অথবা বিবাহিত, যা-ই হই না কেন, আসুন আমরা সবসময় সাহসের সঙ্গে কাজ করি এবং যিহোবার ওপর প্রত্যাশা রাখি। আমরা যদি বৈবাহিক সমস্যার মুখোমুখি হই, তাহলে আমাদের সেগুলো সমাধান করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা উচিত, এই বিষয়টা মনে রেখে যে, যারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, তারা “আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ।” (মথি ১৯:৬) আর আসুন আমরা এই বিষয়টা মনে রাখি যে, আমরা যদি বিভিন্ন কষ্ট সত্ত্বেও এক বিভক্ত পরিবারে থাকার ব্যাপারে হাল ছেড়ে না দিই, তাহলে আমরা হয়তো একজন সাথিকে সত্য উপাসনার পক্ষে নিয়ে আসার আনন্দ লাভ করতে পারি।

২১ আমাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমরা যেন অত্যন্ত সতর্কভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, যাতে আমরা মণ্ডলীর বাইরের প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে এক চমৎকার সাক্ষ্য লাভ করতে পারি। আমাদের বিয়ে যদি ঝুঁকির মুখোমুখি হয়, তাহলে আসুন আমরা একাগ্রভাবে প্রার্থনা করি, আমাদের উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে সততার সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করি, সতর্কতার সঙ্গে শাস্ত্র বিবেচনা করি এবং প্রাচীনদের কাছ থেকে আধ্যাত্মিক সাহায্য খোঁজার চেষ্টা করি। সর্বোপরি, আমরা যেন সমস্ত বিষয়ে যিহোবা ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই এবং তাঁর দত্ত বিয়ের দানের জন্য প্রকৃত উপলব্ধি দেখাই।

[পাদটীকাগুলো]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” বইয়ের ২৫১-২৫৩ পৃষ্ঠা; ১৯৮৮ সালে ১ নভেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২৬-২৭ পৃষ্ঠা; ১৯৭৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৫৭৫ পৃষ্ঠা দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

যে-খ্রিস্টানরা সমস্যায় জর্জরিত এক বিয়ের ব্যাপারে দ্রুত হাল ছেড়ে দেয় না, তারা প্রায়ই এক চমৎকার পুরস্কার লাভ করে

[১২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

সবসময় যিহোবার ওপর প্রত্যাশা রাখুন এবং সাহসের জন্য তাঁর ওপর নির্ভর করুন

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা সেই খ্রিস্টান সাথিদের আশীর্বাদ করেন, যারা সমস্যায় জর্জরিত এক বিয়েকে শক্তিশালী করার জন্য প্রচেষ্টা করে থাকে

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রিস্টীয় মণ্ডলী সান্ত্বনা ও আধ্যাত্মিক সাহায্যের এক উৎস হতে পারে