সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবাকে প্রকৃত স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করতে সুযোগ দিন

যিহোবাকে প্রকৃত স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করতে সুযোগ দিন

যিহোবাকে প্রকৃত স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করতে সুযোগ দিন

‘হেঁট হইয়া স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাত কর।’—যাকোব ১:২৫.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

কোন ব্যবস্থা প্রকৃত স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যায় এবং কারা সেই ব্যবস্থা থেকে উপকার লাভ করে?

প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করার রহস্য কী?

যারা জীবনের পথে থাকে, তাদের সকলের জন্য কোন স্বাধীনতা অপেক্ষা করছে?

১, ২. (ক) জগতের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কী ঘটছে এবং কেন? (খ) যিহোবার দাসদের জন্য সামনে কোন স্বাধীনতা রয়েছে?

 আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যখন লোভ, অধর্ম এবং দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। (২ তীম. ৩:১-৫) আর এই কারণে সরকারগুলো আরও ব্যবস্থা বা আইন তৈরি করছে, পুলিশবাহিনীকে জোরদার করছে এবং নজর রাখার জন্য বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মেশিন বসাচ্ছে। কিছু দেশের নাগরিকরা নিজেদের বাড়িতে অ্যালার্ম সিস্টেম স্থাপন করার ও সেইসঙ্গে বাড়তি তালা লাগানোর এবং এমনকী ইলেকট্রনিক বেড়া দেওয়ার মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তাকে বাড়ানোর চেষ্টা করে। অনেকে রাতের বেলা বাইরে যেতে চায় না অথবা তাদের সন্তানদেরকে একা একা বাইরে খেলতে দেয় না—হোক তা দিনে অথবা রাতে। স্পষ্টতই, স্বাধীনতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে এবং তা আরও হ্রাস পাবে বলে মনে হয়।

অতীতে, এদন উদ্যানে শয়তান এই দাবি করেছিল যে, প্রকৃত স্বাধীনতার মূল চাবি হল, যিহোবার কাছ থেকে স্বাধীন হওয়া। এটা কতই না বিদ্বেষপূর্ণ এবং জঘন্য মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে! প্রকৃতপক্ষে, লোকেরা যতই ঈশ্বরের দ্বারা স্থাপিত নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সীমা উপেক্ষা করে, পুরো সমাজ ততই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই মন্দতর পরিস্থিতি যিহোবার দাস হিসেবে আমাদেরকেও প্রভাবিত করে। তবে, মানবজাতি যে-পাপ ও ক্ষয়ের দাসত্বে রয়েছে, সেটার শেষ দেখার এবং বাইবেল যেটাকে “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা” বলে অভিহিত করেছে, তা উপভোগ করার আশা আমাদের রয়েছে। (রোমীয় ৮:২১) বস্তুতপক্ষে, যিহোবা ইতিমধ্যেই তাঁর দাসদেরকে সেই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। কীভাবে?

৩. যিহোবা খ্রিস্টের অনুসারীদেরকে কোন ব্যবস্থা দিয়েছেন এবং আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

এর উত্তর সেই বিষয়টার মধ্যেই রয়েছে, যেটাকে বাইবেল লেখক যাকোব ‘স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থা’ বলে অভিহিত করেছেন। (পড়ুন, যাকোব ১:২৫.) অন্যান্য সংস্করণ এই বাক্যাংশটিকে এভাবে অনুবাদ করে, যেমন, “মুক্তির সেই সিদ্ধ বিধান” (জুবিলী বাইবেল) এবং “যে পরিপূর্ণ আইন মানুষকে স্বাধীনতা দান করে” (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন)। অবশ্য, লোকেরা সাধারণত আইনকে বিধিনিষেধের সঙ্গে যুক্ত করে, স্বাধীনতার সঙ্গে নয়। তাহলে, ‘স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থা’ কী? আর কীভাবে সেই ব্যবস্থা আমাদেরকে স্বাধীন করে?

যে-ব্যবস্থা স্বাধীন করে

৪. ‘স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থা’ কী এবং কারা এটি থেকে উপকার লাভ করে?

‘স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থা’ মোশির ব্যবস্থা নয় কারণ সেই বিধি অপরাধ প্রকাশ করে দিত এবং তা খ্রিস্টে পরিপূর্ণ হয়েছে। (মথি ৫:১৭; গালা. ৩:১৯) তাহলে, যাকোব কোন ব্যবস্থার বিষয়ে উল্লেখ করছিলেন? তার মনে “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” ছিল, যেটাকে “বিশ্বাসের ব্যবস্থা” এবং “স্বাধীনতার ব্যবস্থা” বলেও অভিহিত করা হয়েছে। (গালা. ৬:২; রোমীয় ৩:২৭; যাকোব ২:১২) তাই, ‘সিদ্ধ ব্যবস্থার’ মধ্যে সেই সমস্তকিছু রয়েছে, যা যিহোবা আমাদের কাছ থেকে চান। অভিষিক্ত খ্রিস্টান এবং “আরও মেষ,” উভয়ই এটি থেকে উপকার লাভ করে।—যোহন ১০:১৬.

৫. স্বাধীনতার ব্যবস্থা কেন দুর্বহ নয়?

অনেক দেশের ব্যবস্থাবিধির মতো ‘সিদ্ধ ব্যবস্থা’ জটিল অথবা দুর্বহ নয় বরং এটি সহজ-সরল আজ্ঞা ও বিভিন্ন মৌলিক নীতির সমন্বয়ে গঠিত। (১ যোহন ৫:৩) “আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু,” যিশু বলেছিলেন। (মথি ১১:২৯, ৩০) অধিকন্তু, ‘সিদ্ধ ব্যবস্থার’ মধ্যে শাস্তির বা দণ্ডের এক দীর্ঘ তালিকার প্রয়োজন নেই, কারণ এর ভিত্তি হচ্ছে প্রেম এবং এটি মন ও হৃদয়ের মধ্যে লিখিত, প্রস্তরফলকের মধ্যে নয়।—পড়ুন, ইব্রীয় ৮:৬, ১০.

‘সিদ্ধ ব্যবস্থা’ যেভাবে আমাদের স্বাধীন করে

৬, ৭. যিহোবা যা চান, সেই বিষয়ে আমরা কী বলতে পারি আর স্বাধীনতার ব্যবস্থা আমাদেরকে কী করতে সমর্থ করে?

যিহোবা তাঁর বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীদের জন্য যে-সীমাগুলো আরোপ করেছেন, সেগুলো তাদের মঙ্গল এবং সুরক্ষার জন্য। উদাহরণস্বরূপ, ভৌত নিয়ম যেমন, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা বিবেচনা করুন, যা শক্তি এবং পদার্থকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেই নিয়মের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়েও লোকেরা কোনো অভিযোগ করে না। এর পরিবর্তে, তারা সেগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখিয়ে থাকে এবং স্বীকার করে যে, প্রাকৃতিক নিয়মগুলো তাদের মঙ্গলের জন্য অপরিহার্য। একইভাবে, যিহোবার নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক মান, যেগুলো খ্রিস্টের ‘সিদ্ধ ব্যবস্থার’ মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে, সেগুলো মানুষের উপকারের জন্য।

সুরক্ষা হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি, স্বাধীনতার ব্যবস্থা আমাদেরকে নিজেদের কোনোরকম ক্ষতি অথবা অন্যদের অধিকার ও স্বাধীনতায় কোনো হস্তক্ষেপ না করেই আমাদের সমস্ত উপযুক্ত আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সমর্থ করে। তাহলে, প্রকৃত স্বাধীন হওয়ার—আমরা যা করার আকাঙ্ক্ষা করি, সেটা করতে সমর্থ হওয়ার—রহস্য হল এমন সঠিক আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা, যেগুলো যিহোবার ব্যক্তিত্ব এবং মানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্য কথায়, আমাদের সেই বিষয়গুলোকে ভালোবাসতে শিখতে হবে, যেগুলোকে যিহোবা ভালোবাসেন এবং সেই বিষয়গুলোকে ঘৃণা করতে শিখতে হবে, যেগুলোকে তিনি ঘৃণা করেন আর স্বাধীনতার ব্যবস্থা আমাদেরকে তা করতে সাহায্য করে।—আমোষ ৫:১৫.

৮, ৯. যারা অনুগতভাবে স্বাধীনতার ব্যবস্থা পালন করে, তারা কোন কোন উপকার লাভ করে? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

আমরা আমাদের অসিদ্ধ অবস্থায় মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলোকে জয় করার জন্য লড়াই করি। তবে, যখন আমরা অনুগতভাবে স্বাধীনতার ব্যবস্থা পালন করি, তখন আমরা এমনকী এখনই এর স্বাধীন করার ক্ষমতা উপভোগ করে থাকি। উদাহরণস্বরূপ: জে নামে একজন নতুন বাইবেল ছাত্র তামাকের প্রতি আসক্ত ছিলেন। তিনি যখন জানতে পেরেছিলেন যে, তার এই বদভ্যাস ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে, তখন তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। তিনি কি ক্রমাগতভাবে তার মাংসিক আকাঙ্ক্ষার কাছে নতিস্বীকার করবেন, নাকি তিনি যিহোবার বশীভূত থাকবেন? বিজ্ঞতার সঙ্গে তিনি ঈশ্বরকে সেবা করা বেছে নিয়েছিলেন, এমনকী যদিও তিনি নিকোটিন নেওয়ার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা বোধ করতেন। এই বদভ্যাস কাটিয়ে ওঠার পর তিনি কেমন বোধ করেছিলেন? “আমি অসাধারণ স্বাধীনতা এবং অত্যন্ত আনন্দ বোধ করেছিলাম,” পরে তিনি বলেছিলেন।

জে তার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখতে পেরেছিলেন যে, জগতের স্বাধীনতা, যা লোকেদেরকে ‘মাংসিক বিষয় ভাবিতে’ প্ররোচিত করে, তা আসলে এক প্রকার দাসত্ব আর অন্যদিকে যিহোবার স্বাধীনতা, যেটার অর্থ “আত্মার ভাব,” তা স্বাধীন করে এবং ‘জীবন ও শান্তির’ পথে নিয়ে যায়। (রোমীয় ৮:৫, ৬) জে তার এই বদভ্যাসের দাসত্ব কাটিয়ে ওঠার জন্য কোথা থেকে শক্তি লাভ করেছিলেন? নিজের কাছ থেকে নয় বরং ঈশ্বরের কাছ থেকে। “আমি নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলাম, পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করেছিলাম এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মাধ্যমে স্বেচ্ছায় জোগানো প্রেমময় সাহায্য খুঁজেছিলাম,” তিনি বলেছিলেন। এই বিষয়গুলো আমাদেরকেও প্রকৃত স্বাধীনতার সন্ধান পাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। আসুন, আমরা দেখি যে, কীভাবে।

হেঁট হয়ে ঈশ্বরের বাক্যে দৃষ্টিপাত করুন

১০. “হেঁট হইয়া” ঈশ্বরের ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাত করার অর্থ কী?

১০ যাকোব ১:২৫ পদের কিছু অংশে লেখা আছে: “যে কেহ হেঁট হইয়া স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাত করে, ও তাহাতে নিবিষ্ট থাকে, . . . সেই আপন কার্য্যে ধন্য হইবে।” যে-মূল গ্রিক শব্দকে “হেঁট হইয়া” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তার অর্থ “পর্যবেক্ষণ করার জন্য নীচের দিকে ঝোঁকা” আর এটা জোর প্রচেষ্টা করাকে বোঝায়। হ্যাঁ, আমরা যদি চাই যে, স্বাধীনতার ব্যবস্থা আমাদের মন ও হৃদয়কে প্রভাবিত করুক, তাহলে আমাদেরকে অধ্যবসায়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার এবং আমরা যা পড়ি, তা নিয়ে প্রার্থনাপূর্বক ধ্যান করার মাধ্যমে অবশ্যই নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে হবে।—১ তীম. ৪:১৫.

১১, ১২. (ক) কীভাবে যিশু সত্যকে আমাদের জীবনের পথ করে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন? (খ) ওপরে যেমন তুলে ধরা হয়েছে, অল্পবয়সিদেরকে নির্দিষ্টভাবে কোন বিপদ অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে?

১১ একইসঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে আমাদের “নিবিষ্ট” বা ধৈর্যশীল হতে হবে আর এভাবে সত্যকে জীবনের পথ করে নিতে হবে। যিশুও একই চিন্তাধারা প্রকাশ করেছিলেন, যখন তিনি তাঁকে বিশ্বাস করেছিল এমন কয়েক জনকে এই কথাগুলো বলেছিলেন: “তোমরা যদি আমার বাক্যে স্থির থাক, তাহা হইলে সত্যই তোমরা আমার শিষ্য; আর তোমরা সেই সত্য জানিবে, এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে।” (যোহন ৮:৩১, ৩২) একটা তথ্যগ্রন্থ বলে যে, এখানে ‘জানা’ শব্দটির অর্থ উপলব্ধি থাকাকেও বোঝায় কারণ “যে-ব্যক্তি ইতিমধ্যেই জানেন, তার কাছে ‘জানা’ বিষয়টার মূল্য ও গুরুত্ব রয়েছে।” এভাবে, আমরা যখন সত্যকে আমাদের জীবনের পথ করে নেব, তখন আমরা পূর্ণরূপে সত্য ‘জানিতে’ পারব। সেই সময় আমরা সঠিকভাবে বলতে পারব যে, ‘ঈশ্বরের বাক্য’ আমাদের মধ্যে ‘কার্য্য সাধনও করিতেছে,’ আমাদের ব্যক্তিত্বকে গঠন করছে, যেন আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে আরও ভালোভাবে প্রতিফলিত করি।—১ থিষল. ২:১৩.

১২ নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি আসলেই সত্য জানি? আমি কি এটাকে আমার জীবনের পথ করে তুলেছি? নাকি আমি এখনও জগতের কিছু “স্বাধীনতা” পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করি?’ খ্রিস্টান বাবা-মায়ের ঘরে মানুষ হয়েছেন এমন একজন বোন তার ছোটোবেলার কথা স্মরণ করে লেখেন: “আপনি যখন সত্যে বৃদ্ধি পেতে থাকেন, তখন বলতে গেলে সবসময়ই যিহোবা সঙ্গে আছেন। কিন্তু, আমার ক্ষেত্রে আমি আসলে কখনোই তাঁকে জানিনি। আমি কখনো সেই বিষয়গুলোকে ঘৃণা করতে শিখিনি, যেগুলোকে তিনি ঘৃণা করেন। আমি কখনো এটা বিশ্বাস করতাম না যে, আমি যা করি, সেগুলোকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। আর আমি যখন সমস্যায় পড়তাম, তখন কখনোই তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে শিখিনি। আমি নিজ বিবেচনার ওপর নির্ভর করতাম, যেটাকে এখন আমার কাছে বোকামির কাজ বলে মনে হয় কারণ আমি কিছুই জানতাম না।” আনন্দের বিষয় হল, সেই বোন পরে বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার চিন্তাধারা পুরোপুরি ভুল ছিল আর তাই তিনি কিছু বড়ো পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি এমনকী একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করেছিলেন।

পবিত্র আত্মা আপনাকে স্বাধীন হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে

১৩. কীভাবে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা আমাদেরকে স্বাধীন হতে সাহায্য করে?

১৩ দ্বিতীয় করিন্থীয় ৩:১৭ পদে আমরা পড়ি: “যেখানে প্রভুর [ঈশ্বরের] আত্মা, সেইখানে স্বাধীনতা।” কীভাবে পবিত্র আত্মা আমাদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অবদান রাখে? অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এটা আমাদের মধ্যে সেই গুণাবলি গড়ে তোলে, যেগুলো স্বাধীনতার জন্য অপরিহার্য— “প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন।” (গালা. ৫:২২, ২৩) এই গুণাবলি, বিশেষভাবে প্রেম ছাড়া কোনো সমাজই প্রকৃতভাবে স্বাধীন হতে পারে না আর এই বিষয়টা বর্তমান জগতে স্পষ্ট দেখা যায়। আগ্রহের বিষয় হল, আত্মার ফলের তালিকা তুলে ধরার পর, প্রেরিত পৌল আরও যুক্ত করেছিলেন: “এই প্রকার গুণের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নাই।” তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? ঈশ্বরের আত্মার ফল এমন কোনো ব্যবস্থা দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়, যা কিনা এর বৃদ্ধিকে রোধ করতে পারে। (গালা. ৫:১৮) এই ধরনের এক ব্যবস্থার উদ্দেশ্যই বা কী? এটা যিহোবার ইচ্ছা যে, আমরা যেন চিরকালের জন্য খ্রিস্টতুল্য গুণাবলি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করি এবং কোন সীমাবদ্ধতা ছাড়াই সেগুলো প্রদর্শন করি।

১৪. কোন কোন উপায়ে জগতের আত্মা সেই ব্যক্তিদের দাসত্বে রাখে, যারা এর কাছে নতিস্বীকার করে?

১৪ যারা জগতের আত্মা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং যারা তাদের মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলোকে চরিতার্থ করে, তারা হয়তো চিন্তা করতে পারে যে, তারা স্বাধীন। (পড়ুন, ২ পিতর ২:১৮, ১৯.) কিন্তু, বাস্তবিকপক্ষে বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের ক্ষতিকর বাসনা এবং আচরণকে প্রতিহত করার জন্য অসংখ্য নিয়মনীতির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। “ধার্ম্মিকের জন্য নহে, কিন্তু যাহারা অধর্ম্মী ও অদম্য, . . . তাহাদের জন্য . . . ব্যবস্থা স্থাপিত হইয়াছে,” পৌল বলেন। (১ তীম. ১:৯, ১০) তারাও পাপের দাস কারণ তারা “মাংসের অভিলাষ অনুসারে আচরণ” করার জন্য প্ররোচিত হয় আর এই মাংস হল এক নিষ্ঠুর প্রভু। (ইফি. ২:১-৩) এক অর্থে, এই ধরনের ব্যক্তিরা একটা মধুর পাত্রে বসা কীটের মতো। যদিও ক্ষুধার কারণে তারা সেখানে গিয়ে থাকে কিন্তু শীঘ্র তারা ফাঁদে পড়ে যায়।—যাকোব ১:১৪, ১৫.

খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মধ্যে স্বাধীন হোন

১৫, ১৬. মণ্ডলীর সঙ্গে আমাদের মেলামেশা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর আমরা কোন স্বাধীনতা উপভোগ করি?

১৫ আপনি যখন খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করেছিলেন, তখন এমন নয় যে আপনি নিজে কোনো সামাজিক ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন। এর পরিবর্তে, আপনি মণ্ডলীতে এসেছিলেন কারণ যিহোবা আপনাকে আকর্ষণ করেছিলেন। (যোহন ৬:৪৪) কী তাঁকে এই বিষয়টা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল? তিনি কি একজন ধার্মিক, ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তিকে দেখেছিলেন? “একেবারেই তা নয়!” আপনি হয়তো বলতে পারেন। তাহলে, ঈশ্বর কী দেখেছিলেন? তিনি এমন একটা হৃদয় লক্ষ করেছিলেন, যা তাঁর স্বাধীনতা প্রদানকারী ব্যবস্থা মেনে নেবে এবং তাঁর সদয় নির্দেশনার প্রতি বশীভূত থাকবে। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মধ্যে যিহোবা আপনাকে আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রদান করার, ধর্মীয় মিথ্যাচার এবং কুসংস্কার থেকে স্বাধীন করার এবং কীভাবে খ্রিস্টতুল্য ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা যায়, সেই সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার হৃদয়কে গড়ে তুলেছেন। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:২২-২৪.) এর ফল স্বরূপ, আপনার পক্ষেই শুধু জগতের সেই ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিশেষ সুযোগ রয়েছে, যাদেরকে উপযুক্তভাবে ‘স্বাধীন’ বলে অভিহিত করা যেতে পারে।—যাকোব ২:১২.

১৬ এই বিষয়টা বিবেচনা করুন: আপনি যখন এমন ব্যক্তিদের সাহচর্যে থাকেন, যারা তাদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে যিহোবাকে ভালোবাসে, তখন আপনি কি ভয় পান? আপনি কি বার বার পিছনে ফিরে তাকান? কিংডম হলে কথাবার্তা বলার সময় আপনি কি আপনার জিনিসপত্র ধরে রাখেন, যাতে সেগুলো হারিয়ে না যায়? কখনোই তা করেন না! বরং আপনি সহজ এবং স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। জগতের কোনো অনুষ্ঠানে কি আপনি এইরকমটা বোধ করেন? না! অধিকন্তু, ঈশ্বরের লোকেদের মাঝে আপনি যে-স্বাধীনতা উপভোগ করছেন, তা সামনে যে-স্বাধীনতা রয়েছে, সেটার এক পূর্বাভাস মাত্র।

“ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা”

১৭. কীভাবে মানবজাতির স্বাধীনতা “ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের প্রকাশপ্রাপ্তির” সঙ্গে যুক্ত?

১৭ যিহোবা তাঁর পার্থিব দাসদের জন্য যে-স্বাধীনতা রেখেছেন, সেই সম্বন্ধে আলোচনা করার সময় পৌল লিখেছিলেন: “সৃষ্টির ঐকান্তিকী প্রতীক্ষা ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের প্রকাশপ্রাপ্তির অপেক্ষা করিতেছে।” এরপর তিনি আরও লিখেছিলেন: “সৃষ্টি নিজেও ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে।” (রোমীয় ৮:১৯-২১) “সৃষ্টি” পার্থিব আশাসম্পন্ন সেই মানবজাতিকে নির্দেশ করে, যারা ঈশ্বরের আত্মায় অভিষিক্ত পুত্রদের ‘প্রকাশপ্রাপ্তি’ থেকে উপকার লাভ করবে। এই প্রকাশপ্রাপ্তি সেই সময় শুরু হবে, যখন এই ‘পুত্ত্রগণ’ আত্মিক রাজ্যে পুনরুত্থিত হবে, পৃথিবী থেকে দুষ্টতা দূর করার ক্ষেত্রে খ্রিস্টের সঙ্গে অংশ নেবে এবং ‘বিস্তর লোককে’ নতুন বিধিব্যবস্থায় নিয়ে আসবে।—প্রকা. ৭:৯, ১৪.

১৮. কীভাবে বাধ্য মানবজাতির জন্য স্বাধীনতা বৃদ্ধি পাবে এবং অবশেষে তারা কোন স্বাধীনতা উপভোগ করবে?

১৮ উদ্ধারকৃত মানবজাতি তখন সম্পূর্ণ নতুন স্বাধীনতা—শয়তান ও তার মন্দদূতদের প্রভাব থেকে স্বাধীনতা—উপভোগ করবে। (প্রকা. ২০:১-৩) সেটা কতই না স্বস্তিদায়ক হবে! এরপর, খ্রিস্টের ১,৪৪,০০০ জন সহ-রাজা ও যাজক, ধীরে ধীরে মুক্তির মূল্যের উপকারগুলো প্রয়োগ করার মাধ্যমে মানবজাতিকে মুক্ত করে চলবে আর তা সেই সময় পর্যন্ত চলবে, যে পর্যন্ত না আদমের পাপ ও অসিদ্ধতা সম্পূর্ণরূপে দূর করে দেওয়া হয়। (প্রকা. ৫:৯, ১০) এমনকী পরীক্ষার মধ্যেও বিশ্বস্ততার প্রমাণ দেওয়ায়, মানুষেরা এমন নিখুঁত স্বাধীনতা লাভ করবে, যা তারা লাভ করুক বলে যিহোবার উদ্দেশ্য ছিল আর তা হল “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা।” একটু চিন্তা করুন! আপনাকে আর ঈশ্বরের দৃষ্টিতে যা সঠিক, তা করার জন্য লড়াই করতে হবে না কারণ আপনার সমস্ত দেহ সিদ্ধ হয়ে যাবে এবং আপনার ব্যক্তিত্ব পুরোপুরি ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে রূপান্তরিত হবে।

১৯. বর্তমানে, আমরা যদি প্রকৃত স্বাধীনতার পথে থাকতে চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই কী করে চলতে হবে?

১৯ আপনি কি ‘ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতার’ জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষী? যদি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার মন ও হৃদয়কে ক্রমাগত ‘স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থার’ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ দিন। হ্যাঁ, অধ্যবসায়ের সঙ্গে শাস্ত্র অধ্যয়ন করুন। সত্য অনুযায়ী জীবনযাপন করুন এবং সেটাকে নিজের করে নিন। পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করুন। খ্রিস্টীয় মণ্ডলী এবং যিহোবার দ্বারা জোগানো আধ্যাত্মিক খাদ্য থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করুন। ঈশ্বরের পথ অতিরিক্ত কঠিন, এইরকম চিন্তা করার জন্য নিজেকে কখনো শয়তানের দ্বারা প্রতারিত হতে দেবেন না, যেমনটা সে হবাকে প্রতারিত করেছিল। এটা নিশ্চিত যে, দিয়াবল অনেক চতুর হতে পারে। কিন্তু, পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা যেমন দেখব, আমাদের “শয়তানকর্ত্তৃক প্রতারিত” হওয়ার প্রয়োজন নেই “কেননা তাহার কল্পনা সকল আমরা অজ্ঞাত নই।”—২ করি. ২:১১.

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমি কি এখনও জগতের কিছু “স্বাধীনতার” জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষী?

[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমি কি সত্যকে আমার জীবনের পথ করে নিয়েছি?