সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

স্বাধীন ঈশ্বরের সেবা করুন

স্বাধীন ঈশ্বরের সেবা করুন

স্বাধীন ঈশ্বরের সেবা করুন

“ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।”—১ যোহন ৫:৩.

আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?

কীভাবে শয়তান ঈশ্বরের আইনগুলোকে দুর্বহ করে তোলার চেষ্টা করে?

নিজেদের সঙ্গীসাথির ব্যাপারে কেন আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে?

কী আমাদেরকে স্বাধীন ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকতে সাহায্য করবে?

১. যিহোবা স্বাধীনতাকে কীভাবে দেখেন আর আদম ও হবার সঙ্গে আচরণের সময় তিনি তা কীভাবে দেখিয়েছেন?

 যিহোবাই হলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি পুরোপুরি স্বাধীন। তা সত্ত্বেও, তিনি কখনো এর অপব্যবহার করেন না; কিংবা তাঁর দাসদের খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয় নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতাকে একচেটিয়াভাবে ব্যবহার করেন না। এর পরিবর্তে, তিনি তাদেরকে স্বাধীন ইচ্ছা দান করেছেন, যা তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে এবং তাদের উপযুক্ত আকাঙ্ক্ষাগুলো মেটাতে সমর্থ করে। উদাহরণস্বরূপ, আদম ও হবাকে ঈশ্বর কেবল একটা নিষেধাজ্ঞা—‘সদসদ্‌জ্ঞানদায়ক বৃক্ষের ফল’ খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা—দিয়েছিলেন। (আদি. ২:১৭) নিজেদের সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা পালন করার ক্ষেত্রে কত চমৎকার স্বাধীনতাই না তাদের ছিল!

২. কেন আমাদের আদি পিতামাতা তাদের ঈশ্বরদত্ত স্বাধীনতা হারিয়েছিল?

কেন ঈশ্বর আমাদের আদি পিতামাতাকে এতটা স্বাধীনতা দান করেছিলেন? তিনি তাদেরকে নিজ প্রতিমূর্তিতে নির্মাণ করেছিলেন ও সেইসঙ্গে তাদেরকে এক বিবেক প্রদান করেছিলেন আর উপযুক্তভাবেই আশা করেছিলেন যে, সৃষ্টিকর্তা হিসেবে তাঁর প্রতি তাদের ভালোবাসা তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা দেবে। (আদি. ১:২৭; রোমীয় ২:১৫) কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আদম ও হবা তাদের মহান জীবনদাতার এবং তিনি তাদেরকে যে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, সেটার প্রতি উপলব্ধি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিল। এর পরিবর্তে, তারা শয়তানের দ্বারা প্রস্তাবিত অনুপযুক্ত স্বাধীনতা বেছে নিয়েছিল আর সেটা হল নৈতিক স্বাধীনতা। কিন্তু, আরও স্বাধীনতা লাভ করার পরিবর্তে, আমাদের আদি পিতামাতা নিজেদেরকে ও তাদের ভাবী বংশধরদেরকে পাপের দাসত্বে বিক্রি করে দিয়েছিল, যেটার ফল ছিল মারাত্মক।—রোমীয় ৫:১২.

৩, ৪. কীভাবে শয়তান আমাদেরকে যিহোবার মান সম্বন্ধে প্রতারিত করার চেষ্টা করে?

ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে শয়তান যদি দুজন সিদ্ধ মানুষকে প্ররোচিত করতে পারে—আর বেশ কিছু সংখ্যক আত্মিক প্রাণীদের কথা না হয় বাদই রইল—তাহলে সে আমাদেরও প্রতারিত করতে পারে। তার কলাকৌশল পরিবর্তিত হয়নি। সে আমাদেরকে এইরকম চিন্তা করানোর ব্যাপারে ভ্রান্ত করার চেষ্টা করে যে, ঈশ্বরের মানগুলো দুর্বহ এবং সেগুলো আমাদের আনন্দ ও উচ্ছ্বাস কেড়ে নেয়। (১ যোহন ৫:৩) এই ধরনের চিন্তাধারা অনেকখানি প্রভাব বিস্তার করতে পারে, যদি কিনা আমরা বার বার এগুলো নিয়ে চিন্তা করি। “বিশেষভাবে এই বিষয়টা ভেবে আমি ভয় পেতাম যে, আমার মতামত আমার সঙ্গীসাথিদের থেকে ভিন্ন হয়ে যায় কি না আর তাই কুসংসর্গ আমার ওপর অনেকটাই প্রভাব ফেলেছিল,” ২৪ বছর বয়সি একজন বোন বলেছিলেন, যিনি যৌন অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। আপনারও হয়তো সঙ্গীসাথিদের কাছ থেকে একইরকম চাপ অনুভব করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

দুঃখের বিষয় হল, সঙ্গীসাথিদের নেতিবাচক প্রভাব মাঝে মাঝে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর ভিতর থেকেই আসতে পারে। “আমি এমন কিছু অল্পবয়সিদেরকে জানি, যারা অবিশ্বাসীদের সঙ্গে ডেটিং করে,” একজন তরুণ বলেছিল। কিন্তু, পরিশেষে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমি যত বেশি তাদের সান্নিধ্যে ছিলাম, তত বেশি তাদের মতো হয়ে উঠছিলাম। আমার আধ্যাত্মিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছিল। আমি সভাগুলোতে আধ্যাত্মিক খাদ্য উপভোগ করছিলাম না এবং পরিচর্যায় বের হতাম না বললেই চলে। সেই সঙ্গীসাথিদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করার জন্য এটা ছিল আমার জন্য একটা সংকেত আর আমি তা-ই করেছিলাম!” আপনার সঙ্গীসাথি আপনার ওপর যে-প্রভাব ফেলতে পারে, সেই সম্বন্ধে আপনি কি সচেতন আছেন? একটা সময়োপযোগী বাইবেলের উদাহরণ বিবেচনা করুন।—রোমীয় ১৫:৪.

তিনি তাদের চিত্ত হরণ করেছিলেন

৫, ৬. কীভাবে অবশালোম অন্যদেরকে ভ্রান্ত করেছিলেন এবং তার ষড়যন্ত্র কি সফল হয়েছিল?

বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তির উদাহরণ রয়েছে, যারা অন্যদের ওপর মন্দ প্রভাব ফেলেছিল। এইরকম একটা উদাহরণ হল, রাজা দায়ূদের একজন পুত্র অবশালোম। অবশালোম অত্যন্ত সুদর্শন ছিলেন। কিন্তু, একসময় তার হৃদয়ও শয়তানের মতো লোভাতুর উচ্চাকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ হয়ে উঠেছিল কারণ তিনি তার পিতার সিংহাসনের প্রতি লোভ করেছিলেন, যা পাওয়ার অধিকার তার ছিল না। * চালাকি করে রাজপদ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য অবশালোম সহইস্রায়েলীয়দের প্রতি গভীর চিন্তা দেখানোর ভান করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে চতুরতার সঙ্গে এই চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যে, রাজদরবারে তাদের প্রতি কোনো চিন্তা দেখানো হয় না। হ্যাঁ, ঠিক এদন উদ্যানের দিয়াবলের মতোই অবশালোম নিজেকে একজন পরোপকারী ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেছিলেন এবং একইসঙ্গে নিষ্ঠুরভাবে তার পিতা সম্বন্ধে কুৎসা রটিয়েছিলেন।—২ শমূ. ১৫:১-৫.

অবশালোমের চতুর ষড়যন্ত্র কি সফল হয়েছিল? হ্যাঁ, কিছুটা হয়েছিল কারণ বাইবেলের বিবরণ বলে: “অবশালোম ইস্রায়েল লোকদের চিত্ত হরণ করিল।” (২ শমূ. ১৫:৬) কিন্তু, অবশেষে অবশালোমের উদ্ধত মনোভাব তার নিজেরই পতন ঘটিয়েছিল। আর দুঃখের বিষয় হল, এটা তার নিজের ও সেইসঙ্গে তার দ্বারা প্রতারিত হয়েছিল এমন হাজার হাজার ব্যক্তির জন্য মৃত্যু ডেকে এনেছিল।—২ শমূ. ১৮:৭, ১৪-১৭.

৭. অবশালোমের বিবরণ থেকে আমরা কোন শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি? (১৪ পৃষ্ঠার ছবি দেখুন।)

কেন সেই ইস্রায়েলীয়রা এত সহজেই প্রতারিত হয়েছিল? তারা হয়তো সেই বিষয়গুলো পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিল, যেগুলোর বিষয়ে অবশালোম তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কিংবা তারা হয়তো তার বাহ্যিক চেহারা দেখে প্রভাবিত হয়েছিল। যা-ই হোক না কেন, আমরা এই বিষয় সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকতে পারি যে: যিহোবা ও তাঁর নিযুক্ত রাজার প্রতি তাদের আনুগত্যের অভাব ছিল। বর্তমানেও, যিহোবার দাসদের চিত্ত হরণ করার প্রচেষ্টায় শয়তান ক্রমাগত ‘অবশালোমের’ মতো ব্যক্তিদের ব্যবহার করে। ‘যিহোবার মানগুলো অত্যন্ত কঠিন,’ তারা হয়তো বলতে পারে। “আর এই লোকেদের দেখুন, যারা যিহোবার সেবা করে না। তারা সব ধরনের মজা করে!” আপনি কি এই ধরনের জঘন্য মিথ্যাগুলো শনাক্ত করতে পারবেন এবং ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকবেন? আপনি কি স্বীকার করবেন যে, কেবল যিহোবার ‘সিদ্ধ ব্যবস্থাই’ অর্থাৎ খ্রিস্টের ব্যবস্থাই আপনাকে প্রকৃত স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করতে পারে? (যাকোব ১:২৫) যদি করে থাকেন, তাহলে সেই ব্যবস্থাকে মূল্যবান বলে গণ্য করুন এবং কখনো খ্রিস্টীয় স্বাধীনতার অপব্যবহার করার জন্য প্রলোভিত হবেন না।পড়ুন, ১ পিতর ২:১৬.

৮. বাস্তব জীবনের কোন অভিজ্ঞতাগুলো দেখায় যে, যিহোবার মানগুলো উপেক্ষা করার ফলে সুখ আসে না?

বিশেষত, অল্পবয়সিরা শয়তানের লক্ষ্যবস্তু। একজন ভাই, যার বয়স ৩০-এর কোঠায়, তিনি তার কিশোর বয়স সম্বন্ধে বলেন: “যিহোবার নৈতিক মানগুলোকে আমি সুরক্ষা হিসেবে নয় বরং কড়াকড়ি হিসেবে দেখতাম।” আর এই কারণে তিনি যৌন অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, এটা তার জন্য কোনো সুখ নিয়ে আসেনি। “অনেক বছর ধরে আমি তীব্র অপরাধবোধ এবং অনুশোচনার অনুভূতি বয়ে বেড়িয়েছি,” তিনি বলেছিলেন। কিশোর বয়সের কথাগুলো মনে করে একজন বোন লিখেছিলেন: “অনৈতিক কাজ করার পর নিজেকে আপনার নিষ্প্রাণ এবং শূন্য বলে মনে হবে। ১৯ বছর পর এমনকী এখনও আমাকে দুঃসহ স্মৃতিগুলো তাড়িয়ে বেড়ায়।” আরেকজন বোন বলেছিলেন: “আমি যাদেরকে অনেক ভালোবাসি, তাদেরকে আমার আচরণ যে চূর্ণ করে দিয়েছে, তা চিন্তা করাই আমাকে মানসিকভাবে, আধ্যাত্মিকভাবে এবং আবেগতভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল। যিহোবার অনুগ্রহ ছাড়া বেঁচে থাকা ভয়ংকর।” শয়তান আপনাকে পাপের এই ধরনের পরিণতি সম্বন্ধে চিন্তা করার সুযোগ দেয় না।

৯. (ক) কোন প্রশ্নগুলো আমাদেরকে যিহোবা ও সেইসঙ্গে তাঁর আইন এবং নীতি সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করে দেখতে সাহায্য করতে পারে? (খ) কেন ঈশ্বরকে ভালোভাবে জানা গুরুত্বপূর্ণ?

এটা কতই না দুঃখজনক যে, সত্যে থাকা অনেক অল্পবয়সিকে—এমনকী অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদেরকেও—কঠিন উপায়ে শিখতে হয়েছে যে, পাপপূর্ণ আনন্দের কারণে প্রায়ই চরম মূল্য দিতে হয়! (গালা. ৬:৭, ৮) তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘শয়তানের কলাকৌশলের আসল রূপ—নিষ্ঠুর প্রতারণা—কি আমি বুঝতে পারি? যিহোবাকে কি আমি আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দেখি, যিনি সবসময় সত্য বলেন এবং আমার জন্য সর্বোত্তমটা চান? আমি কি এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত যে, তিনি আমাকে কখনো এমন কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত করবেন না, যা প্রকৃতপক্ষে উত্তম এবং আমার জন্য পরম সুখ নিয়ে আসবে?’ (পড়ুন, যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮.) হৃদয় থেকে হ্যাঁ বলার জন্য যিহোবা সম্বন্ধে ওপর ওপর জ্ঞান থাকার চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। তাঁকে আপনার ‘অন্তরঙ্গভাবে’ জানতে এবং এটা উপলব্ধি করতে হবে যে, বাইবেলের আইন এবং নীতিগুলো আপনার প্রতি তাঁর ভালোবাসাকে প্রতিফলিত করে, আপনাকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়ে তাঁর ইচ্ছাকে নয়।—গীত. ২৫:১৪, NW.

এক বিজ্ঞ ও বাধ্য হৃদয়ের জন্য প্রার্থনা করুন

১০. কেন যুবক রাজা শলোমনকে আমাদের অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করা উচিত?

১০ শলোমন যখন একজন যুবক ছিলেন, তখন তিনি প্রার্থনায় নম্রভাবে বলেছিলেন: “আমি ক্ষুদ্র বালকমাত্র, বাহিরে যাইতে ও ভিতরে আসিতে জানি না।” এরপর তিনি এক জ্ঞানশালী বা বিজ্ঞ এবং “বুঝিবার, [“বাধ্য,” NW]” হৃদয়ের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। (১ রাজা. ৩:৭-৯, ১২) যিহোবা সেই আন্তরিক অনুরোধের উত্তর দিয়েছিলেন আর আপনার বেলায়ও তিনি একই বিষয় করবেন, তা আপনি যুবক বা বৃদ্ধ, যা-ই হয়ে থাকুন না কেন। অবশ্য, যিহোবা আপনাকে অলৌকিকভাবে অন্তর্দৃষ্টি এবং প্রজ্ঞা দেবেন না। কিন্তু, তিনি আপনাকে বিজ্ঞ করে তুলবেন, যদি আপনি আন্তরিকভাবে তাঁর বাক্য অধ্যয়ন করেন, পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করেন এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মাধ্যমে জোগানো আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করেন। (যাকোব ১:৫) বস্তুতপক্ষে, এই বিষয়গুলোর মাধ্যমে যিহোবা এমনকী তাঁর অল্পবয়সি দাসদেরকেও তাঁর পরামর্শ উপেক্ষা করে এমন ব্যক্তিদের থেকে আর এমনকী এই জগতের তথাকথিত “বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের” থেকে বিজ্ঞ করে তোলেন।—লূক ১০:২১; পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৯৮-১০০.

১১-১৩. (ক) গীতসংহিতা ২৬:৪, হিতোপদেশ ১৩:২০ এবং ১ করিন্থীয় ১৫:৩৩ পদ থেকে আমরা কোন মূল্যবান শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি? (খ) কীভাবে আপনি এই শাস্ত্রীয় নীতিগুলো প্রয়োগ করবেন?

১১ যিহোবাকে যেন আমরা অন্তরঙ্গভাবে জানতে পারি, সেই জন্য বাইবেল অধ্যয়ন করার এবং আমরা যা পড়ি, তা নিয়ে ধ্যান করার মূল্য সম্বন্ধে দেখার জন্য নীচের শাস্ত্রপদগুলো বিবেচনা করুন। প্রত্যেক শাস্ত্রপদের মধ্যে সঙ্গীসাথি বাছাই করার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ নীতি রয়েছে: “আমি অলীক লোকদের সঙ্গে বসি নাই, আমি ছদ্মবেশীদের সঙ্গে চলিব না।” (গীত. ২৬:৪) “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতো. ১৩:২০) “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।”—১ করি. ১৫:৩৩.

১২ এই শাস্ত্রপদগুলো থেকে আমরা কোন মূল্যবান শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি? (১) যিহোবা চান যেন বন্ধু বাছাই করার ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক থাকি। তিনি আমাদেরকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সুরক্ষা করতে চান। (২) আমরা যে-লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করি, তারা আমাদের ওপর ভালো বা মন্দ প্রভাব ফেলতে পারে; এটা জীবনের একটা বাস্তব সত্য। আগের পদগুলো যেভাবে লেখা হয়েছে, তা দেখায় যে, যিহোবা আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিচ্ছেন। কীভাবে? লক্ষ করুন যে, কোনো শাস্ত্রপদের মধ্যেই নিয়ম স্থাপন করা হয়নি, যেমন, “তুমি . . . করতে পারবে না।” এর পরিবর্তে, এগুলো সাধারণ সত্য উক্তি হিসেবে লেখা হয়েছে। আসলে, যিহোবা আমাদেরকে বলছেন: ‘এগুলো হচ্ছে বাস্তব বিষয়। তুমি কীভাবে সাড়া দিতে চাও? তোমার হৃদয়ে কী রয়েছে?’

১৩ সর্বোপরি, যেহেতু এই তিনটে শাস্ত্রপদকে মৌলিক সত্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, তাই এগুলো সবসময়ের জন্যই প্রযোজ্য এবং এগুলোর এক ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করুন, যেমন: কীভাবে আমি সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করা এড়িয়ে চলতে পারি, যারা ‘ছদ্মবেশী’? কোন পরিস্থিতিগুলোতে আমি হয়তো এই ধরনের ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসতে পারি? (হিতো. ৩:৩২; ৬:১২) সেই ‘জ্ঞানী’ ব্যক্তি কারা, যাদের সঙ্গে আমি মেলামেশা করি বলে যিহোবা চান? ‘হীনবুদ্ধি’ ব্যক্তি কারা, যাদের সঙ্গে আমি মেলামেশা করা এড়িয়ে চলি বলে তিনি চান? (গীত. ১১১:১০; ১১২:১; হিতো. ১:৭) কুসংসর্গ বাছাই করার মাধ্যমে আমি কোন কোন “শিষ্টাচার” নষ্ট করে ফেলতে পারি? আমি কি কেবল জগতের মধ্যেই কুসংসর্গের সংস্পর্শে আসতে পারি? (২ পিতর ২:১-৩) আপনি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কীভাবে দেবেন?

১৪. কীভাবে আপনি আপনার পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যাকে আরও উন্নত করতে পারেন?

১৪ শাস্ত্র নিয়ে এভাবে যুক্তি করার জন্য বাইবেলের সেইসমস্ত পদও পরীক্ষা করে দেখুন না কেন, যেগুলো আপনার অথবা আপনার পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্বন্ধে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনাকে প্রকাশ করে? * বাবা-মায়েরা, আপনাদের পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যায় এই ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার কথা বিবেচনা করুন। তা করার সময় মনে রাখবেন যে, আপনাদের লক্ষ্য হল পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে আমাদের প্রতি ঈশ্বরের সেই প্রেমের গভীরতার বিষয়টা আরও পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে সাহায্য করা, যে-প্রেম তাঁর আইন ও নীতিগুলোর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। (গীত. ১১৯:৭২) প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের অধ্যয়ন যেন পরিবারের সকলকে যিহোবার ও পরস্পরের নিকটবর্তী করে।

১৫. আপনি এক বিজ্ঞ ও বাধ্য হৃদয় গড়ে তুলছেন কি না, তা কীভাবে নির্ণয় করতে পারেন?

১৫ আপনি এক বিজ্ঞ ও বাধ্য হৃদয় গড়ে তুলছেন কি না, তা কীভাবে বলতে পারেন? একটা উপায় হল, প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে আপনার চিন্তাভাবনা তুলনা করে দেখার মাধ্যমে আর তাদের মধ্যে একজন হলেন রাজা দায়ূদ, যিনি লিখেছিলেন: “হে আমার ঈশ্বর, তোমার অভীষ্ট সাধনে আমি প্রীত, আর তোমার ব্যবস্থা আমার অন্তরে আছে।” (গীত. ৪০:৮) একইভাবে, ১১৯ গীতের লেখক বলেছিলেন: “আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়।” (গীত. ১১৯:৯৭) এই ধরনের ভালোবাসা অগভীর ভূমিতে গড়ে ওঠে না। এর পরিবর্তে, এটা হল গভীর অধ্যয়ন, প্রার্থনা, ধ্যান এবং অভিজ্ঞতার—ঈশ্বরের মানগুলো পালন করার কারণে একজন ব্যক্তির জীবনে আসা অসংখ্য আশীর্বাদ দেখতে পাওয়ার—ফল।—গীত. ৩৪:৮.

খ্রিস্টীয় স্বাধীনতার জন্য লড়াই করুন!

১৬. আমরা যদি প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করার লড়াইয়ে জয়ী হতে চাই, তাহলে আমাদের কোন বিষয়ে অবগত থাকতে হবে?

১৬ ইতিহাসজুড়ে, বিভিন্ন জাতি স্বাধীনতার নামে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধগুলোতে রত হয়েছে। তাহলে, খ্রিস্টীয় স্বাধীনতার পক্ষে আধ্যাত্মিকভাবে লড়াই করার জন্য আপনার আরও কত বেশিই না ইচ্ছুক হওয়া উচিত! অবগত থাকুন যে, শয়তান, এই জগৎ এবং এর বিষাক্ত আত্মাই কেবল আপনার শত্রু নয়। আপনাকে নিজের অসিদ্ধতাগুলোর এবং এর পাশাপাশি এক বঞ্চক হৃদয়ের সঙ্গেও লড়াই করতে হয়। (যির. ১৭:৯; ইফি. ২:৩) তবে, যিহোবার সাহায্যে আপনি এই লড়াইয়ে জয়ী হতে পারেন। অধিকন্তু, প্রতিটা জয়ের—তা সেটা ছোটো বা বড়ো যা-ই হোক না কেন—অন্ততপক্ষে দুটো ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। প্রথমত, আপনি যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করতে পারবেন। (হিতো. ২৭:১১) দ্বিতীয়ত, আপনি যখন ঈশ্বরের ‘স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থার’ স্বাধীন করার ক্ষমতা উপভোগ করবেন, তখন আপনি অনন্তজীবনের ‘সঙ্কীর্ণ দ্বারে’ থাকার জন্য এমনকী আরও বেশি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হবেন। পরিশেষে, আপনি আরও ব্যাপক স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবেন, যা যিহোবার অনুগত ব্যক্তিদের জন্য অপেক্ষা করছে।—যাকোব ১:২৫; মথি ৭:১৩, ১৪.

১৭. আমাদের অসিদ্ধতার কারণে কেন আমাদের হতাশ হওয়া উচিত নয় আর যিহোবা কোন সাহায্য জোগান?

১৭ অবশ্য, মাঝে মাঝে আমরা সবাই ভুল করি। (উপ. ৭:২০) যখন এইরকমটা হয়, তখন নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করবেন না অথবা অতিরিক্ত হতাশ হয়ে পড়বেন না। রূপকভাবে বললে, আপনি যদি হোঁচট খান, তাহলে উঠে দাঁড়ান এবং সামনের দিকে এগিয়ে চলুন—এমনকী এর জন্য যদি আপনাকে স্থানীয় প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ারও প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাদের “বিশ্বাসের প্রার্থনা,” যোহন লিখেছিলেন, “সেই পীড়িত ব্যক্তিকে সুস্থ করিবে, এবং প্রভু [ঈশ্বর] তাহাকে উঠাইবেন; আর সে যদি পাপ করিয়া থাকে, তবে তাহার মোচন হইবে।” (যাকোব ৫:১৫) হ্যাঁ, কখনো ভুলে যাবেন না যে, ঈশ্বর সত্যিই কৃপাময় এবং আপনার মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছেন বলেই তিনি আপনাকে মণ্ডলীতে আকর্ষণ করেছেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৩:৮, ৯.) তাই, যতদিন পর্যন্ত আপনি যিহোবার প্রতি একাগ্র অন্তঃকরণ বজায় রাখবেন, ততদিন পর্যন্ত তিনি আপনার ব্যাপারে কখনো হাল ছেড়ে দেবেন না।—১ বংশা. ২৮:৯.

১৮. কীভাবে আমরা যোহন ১৭:১৫ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে পারি?

১৮ যিশু তাঁর জীবনের শেষরাতে তাঁর ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিতের সঙ্গে প্রার্থনা করার সময় তাদের হয়ে এই অবিস্মরণীয় কথাগুলো বলেছিলেন: “তাহাদিগকে সেই পাপাত্মা হইতে রক্ষা কর।” (যোহন ১৭:১৫) যিশু কেবল তাঁর প্রেরিতদের জন্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর সমস্ত অনুসারীদের জন্যও চিন্তা দেখিয়েছিলেন। তাই, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, এই বিষম সময়ে আমাদের প্রতি লক্ষ রাখার মাধ্যমে যিহোবা যিশুর প্রার্থনার উত্তর দেবেন। “যাহারা সিদ্ধতায় [“নীতিনিষ্ঠায়,” NW] চলে, [সদাপ্রভু] তাহাদের ঢাল। তিনি . . . আপন সাধুদের [“অনুগত ব্যক্তিদের,” NW] পথ সংরক্ষণ করেন।” (হিতো. ২:৭, ৮) হ্যাঁ, নীতিনিষ্ঠার পথে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে কিন্তু এটাই হচ্ছে, অনন্তজীবন এবং প্রকৃত স্বাধীনতার একমাত্র পথ। (রোমীয় ৮:২১) কেউ-ই যেন প্রলুব্ধ করে আপনাকে সেই পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে না যায়!

[পাদটীকাগুলো]

^ ভাবি “বংশ” যে সিংহাসন লাভ করবে, সেই সম্বন্ধে দায়ূদের কাছে করা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাটা অবশালোমের জন্মের পরে করা হয়েছিল। তাই, অবশালেমের এটা জানা উচিত ছিল যে, দায়ূদের উত্তরসূরি হিসেবে যিহোবা তাকে মনোনীত করেননি।—২ শমূ. ৩:৩; ৭:১২.

^ এর উত্তম উদাহরণগুলো হল, ১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮ পদ, যেখানে পৌল প্রেম সম্বন্ধে বর্ণনা করেছেন এবং গীতসংহিতা ১৯:৭-১১ পদ, যেখানে ঈশ্বরের আইনগুলোর প্রতি বাধ্য থাকার ফলে যে-আশীর্বাদগুলো আসে, সেই সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কীভাবে আমরা আধুনিক দিনের অবশালোমের মতো ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে এবং তাদের কাছ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি?