সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘আমিই তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি’

‘আমিই তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি’

‘আমিই তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি’

“অনেকে ইতস্ততঃ ধাবমান হইবে, এবং জ্ঞানের [“সত্যিকারের জ্ঞানের,” ইজি-টু-রিড ভারসন] বৃদ্ধি হইবে।”—দানি. ১২:৪.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

আধুনিক দিনে ‘সত্যিকারের জ্ঞান’ কীভাবে জানানো হয়েছে?

যারা সত্য গ্রহণ করে নিয়েছে, তাদের সংখ্যা কীভাবে ‘অনেক’ হয়ে উঠেছে?

কোন কোন উপায়ে সঠিক জ্ঞান “বৃদ্ধি” পেয়েছে?

১, ২. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, যিশু বর্তমানে তাঁর প্রজাদের সঙ্গে রয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও তাদের সঙ্গে থাকবেন? (খ) দানিয়েল ১২:৪ পদ অনুসারে, মনোযোগের সঙ্গে শাস্ত্র নিয়ে অধ্যয়ন করার ফল কী হবে?

 কল্পনা করুন যে, আপনি পরমদেশে আছেন। প্রতিদিন সকালে আপনি সতেজ হয়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন এবং আপনার দিন শুরু করার জন্য একেবারে তৈরি থাকেন। আপনার কোনো ব্যথা কিংবা কষ্ট নেই। আপনার যে-দুর্বলতাগুলো ছিল, সেগুলোও আর নেই। আপনার সমস্ত ইন্দ্রিয়—দর্শনেন্দ্রিয়, শ্রবণেন্দ্রিয়, ঘ্রাণেন্দ্রিয়, স্পর্শনেন্দ্রিয় এবং রসনেন্দ্রিয়—একেবারে নিখুঁতভাবে কাজ করছে। আপনার প্রচুর কর্মশক্তি রয়েছে, আপনার অনেক আনন্দদায়ক কাজ রয়েছে, আপনার অনেক বন্ধু রয়েছে এবং আপনার সমস্ত উদ্‌বিগ্নতা দূর হয়ে গিয়েছে। এই আশীর্বাদগুলোই আপনি ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে উপভোগ করতে পারবেন। মনোনীত রাজা খ্রিস্ট যিশু, তাঁর প্রজাদের আশীর্বাদ করবেন এবং তাদেরকে যিহোবা বিষয়ক জ্ঞান সম্বন্ধে শিক্ষা দেবেন।

তাঁর অনুগত দাসেরা যখন ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী এই শিক্ষাদানের কার্যক্রমে অংশ নেবে, তখন যিহোবা তাদের সঙ্গে থাকবেন। ঈশ্বর এবং তাঁর পুত্র শত শত বছর ধরে বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে রয়েছে। স্বর্গারোহণের আগে, যিশু তাঁর অনুগত শিষ্যদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন। (পড়ুন, মথি ২৮:১৯, ২০.) এই আশ্বাসের প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য আসুন আমরা ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত একটা ভবিষ্যদ্‌বাণীর কেবল একটা বাক্য পরীক্ষা করে দেখি, যা ২,৫০০ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রাচীন বাবিলে লেখা হয়েছিল। আমরা যে-সময়টাতে বাস করছি, সেই “শেষকাল” সম্বন্ধে ভাববাদী দানিয়েল লিখেছিলেন: “অনেকে ইতস্ততঃ ধাবমান হইবে, এবং সত্যিকারের জ্ঞানের বৃদ্ধি হইবে।” (দানি. ১২:৪) রূপকভাবে চিন্তা করলে এবং আমাদের দিনের ঘটনাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে, এখানে যে-ইব্রীয় শব্দটিকে “ইতস্ততঃ ধাবমান” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পরীক্ষা করার ধারণা প্রকাশ করে। এভাবে ইতস্তত ধাবমান হওয়া কত অপূর্ব আশীর্বাদই না নিয়ে আসবে! যারা মনোযোগের সঙ্গে শাস্ত্র নিয়ে অধ্যয়ন করে, তারা ঈশ্বরের বাক্যের সত্যিকারের বা সঠিক জ্ঞান লাভ করবে। ভবিষ্যদ্‌বাণী এও বলে যে, অনেকে ‘সত্যিকারের জ্ঞান’ গ্রহণ করে নেবে। এ ছাড়া, এই জ্ঞানের বৃদ্ধি হবে। এই জ্ঞান ব্যাপকভাবে বিতরিত হবে এবং সহজেই পাওয়া যাবে। আমরা যখন পরীক্ষা করব যে, কীভাবে এই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে, তখন আমরা দেখতে পাব যে, বর্তমানে যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে রয়েছেন এবং যিহোবা যেসমস্ত প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেগুলো পরিপূর্ণ করার জন্য যিহোবা পুরোপুরি সমর্থ আছেন।

‘সত্যিকারের জ্ঞান’ প্রকাশিত হয়

৩. প্রেরিতদের মৃত্যুর পর “সত্যিকারের জ্ঞানের” কী হয়?

প্রেরিতদের মৃত্যুর পর, প্রকৃত খ্রিস্ট ধর্ম থেকে ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত ধর্মভ্রষ্টতা বৃদ্ধি পায় এবং তা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। (প্রেরিত ২০:২৮-৩০; ২ থিষল. ২:১-৩) এরপর, শত শত বছর ধরে ‘সত্যিকারের জ্ঞান’ কেবল যারা বাইবেল সম্বন্ধে কিছুই জানে না, তাদের মধ্যেই নয় কিন্তু যারা নামধারী খ্রিস্টান ছিল, তাদের মধ্যেও দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধি পায়নি। যদিও খ্রিস্টীয়জগতের নেতারা শাস্ত্র বিশ্বাস করে বলে দাবি করত কিন্তু তারা বিভিন্ন ধর্মীয় মিথ্যা—ঈশ্বরের প্রতি অসম্মান নিয়ে আসে এমন ‘ভূতগণের শিক্ষামালা’—সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিল। (১ তীম. ৪:১) সাধারণ লোকেদেরকে আধ্যাত্মিক অজ্ঞানতার মধ্যে রাখা হয়েছিল। ধর্মভ্রষ্ট মতবাদগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল, ঈশ্বর হলেন ত্রিত্ব, আত্মার অমরত্ব এবং কোনো কোনো আত্মা চিরকাল নরকাগ্নিতে কষ্ট পায়।

৪. কীভাবে ১৮৭০ দশকে খ্রিস্টানদের একটা দল “সত্যিকারের জ্ঞানের” অনুসন্ধান করতে শুরু করেছিল?

কিন্তু, ১৮৭০ দশকে—‘শেষ কাল’ শুরু হওয়ার প্রায় চার দশক আগে—যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় আন্তরিক খ্রিস্টানদের একটা ছোট্ট দল অধ্যবসায়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার এবং “সত্যিকারের জ্ঞানের” অনুসন্ধান করার জন্য একত্রে মিলিত হয়েছিল। (২ তীম. ৩:১) তারা নিজেদেরকে বাইবেল ছাত্র হিসেবে অভিহিত করেছিল। তারা সেই ‘বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান’ ব্যক্তি ছিল না, যাদের কাছে এই জ্ঞান গুপ্ত রাখা হবে বলে যিশু বলেছিলেন। (মথি ১১:২৫) তারা ছিল এমন নম্র ব্যক্তি, যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য আন্তরিকভাবে আকাঙ্ক্ষী। তারা মনোযোগের সঙ্গে এবং প্রার্থনাপূর্বক শাস্ত্র পাঠ করত, সেটা নিয়ে আলোচনা করত এবং তা নিয়ে ধ্যান করত। এ ছাড়া, তারা বাইবেলের বিভিন্ন পদ তুলনা করত এবং যেসমস্ত ব্যক্তিরা একই ধরনের গবেষণা করেছিল, তাদের লেখাগুলো পরীক্ষা করে দেখত। ধীরে ধীরে, এই বাইবেল ছাত্ররা সেই সত্যগুলো সম্বন্ধে বোধগম্যতা লাভ করে, যেগুলো শত শত বছর ধরে অস্পষ্ট ছিল।

৫. পুরাতন ঈশ্বরতত্ত্বিদ্যা নামক ধারাবাহিক ট্র্যাক্টের উদ্দেশ্য কী ছিল?

যদিও বাইবেল ছাত্ররা যা শিখছিল, সেই ব্যাপারে অনেক রোমাঞ্চিত হয়েছিল কিন্তু তারা তাদের নবলব্ধ জ্ঞানের কারণে গর্বিত হয়ে পড়েনি; কিংবা নিজেরা নতুন কিছু ঘোষণা করছে বলে দাবি করেনি। (১ করি. ৮:১) এর পরিবর্তে, তারা পুরাতন ঈশ্বরতত্ত্বিবদ্যা (ইংরেজি) নামক একটি ধারাবাহিক ট্র্যাক্ট প্রকাশ করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল পাঠকদেরকে সেই শাস্ত্রীয় সত্যগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, যেগুলো বাইবেলে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই ট্র্যাক্টের প্রথম সংখ্যায় “বাইবেল অধ্যয়নের সহায়ক হিসেবে আরও পাঠ্য বিষয়বস্তু” দেওয়া হয়েছিল “আর এর উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের তৈরি সমস্ত মিথ্যা প্রথা থেকে মুক্ত করা এবং আমাদের প্রভুর ও প্রেরিতদের পুরাতন ঈশ্বরতত্ত্বিবদ্যাকে সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা।”—পুরাতন ঈশ্বরতত্ত্বিবদ্যা, নম্বর ১, এপ্রিল ১৮৮৯, পৃষ্ঠা ৩২.

৬, ৭. (ক) ১৮৭০ দশক থেকে আমাদেরকে কোন সত্যগুলো বুঝতে সাহায্য করা হয়েছে? (খ) বিশেষভাবে কোন সত্যগুলো শিখতে পেরে আপনি কৃতজ্ঞ?

এক-শো বছরেরও বেশি সময় আগের সেই ছোট্ট শুরু থেকে কত অপূর্ব সত্যই না উন্মোচিত হয়েছে! * এই সত্যগুলো ঈশ্বরতত্ত্বিবদদের জন্য তর্ক করার মতো কোনো নীরস ও পুঁথিগত বিদ্যা নয়। এগুলো হল রোমাঞ্চকর এবং স্বাধীনতাদানকারী সত্য, যেগুলো আমাদের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে এবং আমাদেরকে আনন্দ ও আশায় পূর্ণ করে। এগুলো আমাদেরকে যিহোবাকে—তাঁর প্রেমময় ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর উদ্দেশ্যগুলো—জানতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, এগুলো যিশুর ভূমিকাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, কেন তিনি জীবিত ছিলেন এবং মারা গিয়েছিলেন, সেটা ব্যাখ্যা করে ও সেইসঙ্গে এখন তিনি কী করছেন, তা জানিয়ে থাকে। এই মূল্যবান সত্যগুলো প্রকাশ করে যে, কেন ঈশ্বর মন্দতা থাকতে অনুমতি দিয়েছেন, কেন আমরা মারা যাই, কীভাবে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত এবং কীভাবে আমরা প্রকৃতই সুখী হতে পারি।

আমরা এখন সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর অর্থ বুঝতে পারি, যেগুলো যুগ যুগ ধরে “রুদ্ধ” ছিল কিন্তু এখন এই শেষকালে পরিপূর্ণ হচ্ছে। (দানি. ১২:৯) এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো, যেগুলো পুরো শাস্ত্রে বিশেষভাবে সুসমাচারের বইগুলোতে এবং প্রকাশিত বাক্য বইয়ে পাওয়া যায়। যিহোবা আমাদেরকে এমনকী সেই ঘটনাগুলোও বুঝতে সাহায্য করেছেন, যেগুলো আমরা আক্ষরিক চোখ দিয়ে দেখতে পারি না যেমন, যিশুর সিংহাসনে অধিষ্ঠান, স্বর্গে যুদ্ধ এবং শয়তানকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করার ঘটনা। (প্রকা. ১২:৭-১২) এ ছাড়া, ঈশ্বর আমাদেরকে এমন বিষয়গুলোর অর্থ বোঝার জন্যও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছেন, যেগুলো আমরা দেখতে পারি যেমন, যুদ্ধবিগ্রহ, ভূমিকম্প, মহামারী, দুর্ভিক্ষ ও সেইসঙ্গে ভক্তিহীন লোকেরা, যারা ‘শেষ কালের বিষম সময়ের’ জন্য দায়ী।—২ তীম. ৩:১-৫; লূক ২১:১০, ১১.

৮. আমরা যে-বিষয়গুলো দেখতে এবং শুনতে পেরেছি, সেগুলোর জন্য আমরা কাকে কৃতিত্ব দিই?

যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে যে-কথাগুলো বলেছেন, সেগুলো বোঝা আমাদের জন্য সহজ: “ধন্য সেই সকল চক্ষু, তোমরা যাহা যাহা দেখিতেছ, যাহারা তাহা দেখে। কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা যাহা যাহা দেখিতেছ, তাহা অনেক ভাববাদী ও রাজা দেখিতে বাঞ্ছা করিয়াও দেখিতে পান নাই; এবং তোমরা যাহা যাহা শুনিতেছ, তাহা তাঁহারা শুনিতে বাঞ্ছা করিয়াও শুনিতে পান নাই।” (লূক ১০:২৩, ২৪) আমাদেরকে এই ধরনের বিষয়গুলো দেখতে এবং শুনতে সমর্থ করার জন্য আমরা যিহোবা ঈশ্বরকে কৃতিত্ব দিই। আর আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে, “সেই সহায়” অর্থাৎ ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা যিশুর অনুসারীদেরকে “সমস্ত সত্যে” নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে! (পড়ুন, যোহন ১৬:৭, ১৩.) আমরা যেন সবসময় সত্যিকারের জ্ঞানকে মূল্যবান বলে গণ্য করি এবং নিঃস্বার্থভাবে তা অন্যদেরকে জানাই!

‘অনেকে সত্যিকারের জ্ঞান’ গ্রহণ করে নেয়

৯. এই পত্রিকার ১৮৮১ সালের এপ্রিল মাসের সংখ্যায় কোন আহ্বান জানানো হয়েছিল?

আঠারো-শো একাশি সালের এপ্রিল মাসে, প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এই পত্রিকায় ১,০০০ জন প্রচারক চেয়ে একটা আহ্বান জানানো হয়। এই প্রবন্ধে বলা হয়েছিল: “যে-ব্যক্তিদের সম্পূর্ণরূপে প্রভুর কাজে নিজেদের সময়ের অর্ধেক অথবা এর চেয়ে বেশি সময় দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের এই পরামর্শ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে . . . , যেমন: আপনারা আপনাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কলপোর্টার অথবা সুসমাচার প্রচারক হিসেবে ছোটো বা বড়ো শহরগুলোতে গিয়ে সমস্ত জায়গায় এমন আন্তরিক খ্রিস্টানদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, যাদের অনেকের মধ্যে যদিও আপনারা ঈশ্বরের প্রতি উদ্যোগ খুঁজে পাবেন, তবে তা জ্ঞানানুযায়ী নয়; তাদেরকে আমাদের পিতার কৃপা এবং তাঁর বাক্যের সৌন্দর্য জানানোর চেষ্টা করুন।”

১০. পূর্ণসময়ের প্রচারকদের ব্যাপারে যে-আহ্বান জানানো হয়েছিল, সেটার প্রতি লোকেরা কেমন সাড়া দিয়েছিল?

১০ সেই আহ্বান দেখিয়েছিল, বাইবেল ছাত্ররা এই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, সত্য খ্রিস্টানদের জন্য এক অপরিহার্য কাজ হল সুসমাচার প্রচার করা। কিন্তু, ১,০০০ জন পূর্ণসময়ের প্রচারকের ব্যাপারে যে-আহ্বান জানানো হয়েছিল, তা ছিল এক আশা মাত্র কারণ সেই সময়ে বাইবেল ছাত্রদের সভাগুলোতে মাত্র কয়েক-শো লোক উপস্থিত হতো। তবে, একটি ট্র্যাক্ট অথবা একটি পত্রিকা পড়ার পর, অনেক লোক সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছিল এবং সহজেই সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল ছাত্রদের দ্বারা প্রকাশিত প্রহরীদুর্গ পত্রিকার একটি সংখ্যা এবং একটি পুস্তিকা পড়ার পর ১৮৮২ সালে, ইংল্যান্ডের লন্ডনের একজন পাঠক লিখেছিলেন: “কীভাবে এবং কী প্রচার করতে হবে, সেই সম্বন্ধে দয়া করে আমাকে নির্দেশনা দিন, যাতে সেই অপূর্ব কাজ সম্পন্ন হয়, যা হোক বলে ঈশ্বর চান।”

১১, ১২. (ক) কলপোর্টারদের মতো আমাদেরও কোন একই উদ্দেশ্য রয়েছে? (খ) কলপোর্টাররা কীভাবে “ক্লাস” বা মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করেছিল?

১১ আঠারো-শো পঁচাশি সালের মধ্যে প্রায় ৩০০ জন বাইবেল ছাত্র কলপোর্টারের সেবায় অংশ নিয়েছিল। পূর্ণসময়ের সেই পরিচারকদের বর্তমানে আমাদের মতো একই উদ্দেশ্য ছিল আর তা হল, যিশু খ্রিস্টের শিষ্য তৈরি করা। তবে, তাদের পদ্ধতিগুলো আমাদের থেকে ভিন্ন ছিল। বর্তমানে, আমরা নির্দিষ্ট একটা সময়ে সাধারণত একজন ব্যক্তিকেই বাইবেল অধ্যয়ন করাই এবং কেবল তাকেই নির্দেশনা দিই। এরপর, আমরা বাইবেল ছাত্রকে ইতিমধ্যেই স্থাপিত একটা মণ্ডলীতে মেলামেশা করার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু, সেই সময়ে কলপোর্টাররা বিভিন্ন বই বিতরণ করত এবং এরপর আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে একটা দল হিসেবে শাস্ত্র অধ্যয়ন করার জন্য একত্রিত করত। আলাদা আলাদা ব্যক্তিকে অধ্যয়ন করানোর পরিবর্তে, তারা বিভিন্ন “ক্লাস” অথবা মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করেছিল।

১২ উদাহরণস্বরূপ, ১৯০৭ সালে কলপোর্টারদের একটা দল সেই ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য একটা নির্দিষ্ট শহরে অভিযান চালিয়েছিল, যাদের কাছে ইতিমধ্যেই “সহস্র বছরের সূচনা” (যেটাকে শাস্ত্র নিয়ে অধ্যয়ন-ও বলা হতো) (ইংরেজি) নামক বই ছিল। ওয়াচ টাওয়ার জানায়: “এই ব্যক্তিরা [আগ্রহী ব্যক্তিরা] তাদের কোনো একজনের বাড়িতে একটা ছোটো সভাতে মিলিত হতো। একজন কলপোর্টার এক রবিবার পুরো দিন বিভিন্ন যুগ সম্বন্ধে ঐশিক পরিকল্পনা (ইংরেজি) বই নিয়ে কথা বলতেন এবং পরের রবিবার নিয়মিত সভা করার কথা উল্লেখ করতেন।” ১৯১১ সালে, ভাইয়েরা এই প্রক্রিয়ায় রদবদল করেন। ৫৮ জন বিশেষ ভ্রমণ পরিচারক যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাজুড়ে জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়েছিল। এই ভাইয়েরা সেইসমস্ত আগ্রহী ব্যক্তির নাম এবং ঠিকানা নিয়েছিল, যারা বক্তৃতায় উপস্থিত হয়েছিল ও সেইসঙ্গে নতুন “ক্লাস” গঠন করার লক্ষ্যে তাদেরকে বিভিন্ন জনের বাড়িতে একত্রে মিলিত হওয়ার জন্য সংগঠিত করেছিল। ১৯১৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বাইবেল ছাত্রদের ১,২০০-টা মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল।

১৩. বর্তমানে “সত্যিকারের জ্ঞানের” প্রসারের কোন বিষয়টা আপনার কাছে আগ্রহজনক?

১৩ বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১,০৯,৪০০-টা মণ্ডলী রয়েছে এবং প্রায় ৮,৯৫,৮০০ জন ভাই ও বোন অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছে। প্রায় আশি লক্ষ লোক এখন ‘সত্যিকারের জ্ঞান’ গ্রহণ করেছে এবং তা নিজেদের জীবনে কাজে লাগাচ্ছে। (পড়ুন, যিশাইয় ৬০:২২.) * এটা বিশেষভাবে আগ্রহজনক কারণ যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, তাঁর শিষ্যরা তাঁর নামের কারণে “সকলের ঘৃণিত হইবে।” তিনি আরও বলেছিলেন, তাঁর অনুসারীরা তাড়িত হবে। (লূক ২১:১২-১৭) শয়তান, তাঁর মন্দদূত এবং মানবজাতির মধ্যে যে-বিরোধী ব্যক্তিরা রয়েছে, তাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও যিহোবার লোকেরা শিষ্য তৈরি করার ব্যাপারে তাদের যে-কার্যভার রয়েছে, তা সম্পাদন করার ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য লাভ করেছে। বর্তমানে, তারা “সমুদয় জগতে,” গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চল থেকে শুরু করে হিমশীতল তুন্দ্রা অঞ্চলে, পাহাড়-পর্বতে, মরুভূমিতে, শহরগুলোতে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে প্রচার করছে। (মথি ২৪:১৪) ঐশিক সমর্থন ছাড়া এটা কখনোই সম্পাদিত হতে পারত না।

“সত্যিকারের জ্ঞানের বৃদ্ধি” হয়

১৪. কীভাবে ‘সত্যিকারের জ্ঞান’ ছাপানো বিষয়বস্তুর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে?

১৪ ‘সত্যিকারের জ্ঞান’ সেইসমস্ত ব্যক্তির মাধ্যমে বৃদ্ধি পেয়েছে, যারা সুসমাচার সম্বন্ধে ঘোষণা করছে। এ ছাড়া, এই জ্ঞান ছাপানো বিষয়বস্তুর মাধ্যমেও বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৮৭৯ সালে, বাইবেল ছাত্ররা এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশ করেছিল, যেটার শিরোনাম ছিল জায়ন্স ওয়াচটাওয়ার অ্যান্ড হেরাল্ড অভ্‌ ক্রাইস্টস প্রেজেন্স। একটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সেই সংখ্যাটি ছাপানো হয়েছিল আর কেবল ইংরেজিতেই এর সংখ্যা ছিল ৬,০০০ কপি। সাতাশ বছর বয়সি চার্লস টেজ রাসেলকে সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল এবং আরও পাঁচ জন পরিপক্ব বাইবেল ছাত্র নিয়মিতভাবে এই কাজে সহায়তা করেছিল। বর্তমানে, প্রহরীদুর্গ পত্রিকা ১৯৫-টা ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে। পৃথিবীর মধ্যে এটিই হচ্ছে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে বিতরিত পত্রিকা, যেটির প্রতিটি সংখ্যার ৪,২১,৮২,০০০-টি কপি বিতরণ করা হয়। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এর সহযোগী পত্রিকা সচেতন থাক!, যেটি ৮৪-টা ভাষায় ৪,১০,৪২,০০০-টি কপি বিতরণ করা হয়। এ ছাড়াও, প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি বই এবং বাইবেল ছাপানো হয়।

১৫. আমাদের ছাপাখানার খরচ কীভাবে চলে?

১৫ এই বিরাট কাজের খরচ স্বেচ্ছাকৃত দানের মাধ্যমে চলে। (পড়ুন, মথি ১০:৮.) কেবল এই বিষয়টাই প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রির সেই ব্যক্তিদের অবাক করে দেয়, যাদের ছাপাখানা, কাগজ, কালি এবং অন্যান্য বিষয়ের খরচ সম্বন্ধে ধারণা রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন এমন একজন ভাই বলেছিলেন: “যেসমস্ত ব্যাবসায়ীরা আমাদের ছাপাখানাগুলো পরিদর্শন করে, তারা স্বেচ্ছাকৃত দানের মাধ্যমে চালিত এই ধরনের উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন এবং ব্যাপক উৎপাদন ক্ষমতা দেখে অবাক হয়ে যায়। এ ছাড়া, তারা আমাদের বেথেলকর্মীদের মধ্যে এত যুবক এবং আনন্দিত ব্যক্তিদের দেখেও মুগ্ধ হয়ে যায়।”

পৃথিবী ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হবে

১৬. ‘সত্যিকারের জ্ঞান’ জানানোর উদ্দেশ্য কী?

১৬ ‘সত্যিকারে জ্ঞান’ এক উত্তম উদ্দেশ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈশ্বরের ইচ্ছা হল, যেন “সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীম. ২:৩, ৪) যিহোবা চান যেন লোকেরা সত্য সম্বন্ধে জানে, যাতে তারা তাঁকে সঠিকভাবে উপাসনা করতে এবং তাঁর আশীর্বাদ লাভ করতে পারে। ‘সত্যিকারের জ্ঞান’ জানানোর মাধ্যমে যিহোবা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশকে একত্রিত করেছেন। এ ছাড়া, তিনি “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” মধ্যে থেকে ‘বিস্তর লোককে’ একত্রিত করেছেন, যাদের পৃথিবীতে চিরকাল বাস করার আশা রয়েছে।—প্রকা. ৭:৯.

১৭. সত্য উপাসনার প্রসার কোন উপসংহারে আসতে পরিচালিত করে?

১৭ বিগত ১৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সত্য উপাসনার প্রসার এই জোরালো উপসংহারে আসতে পরিচালিত করে যে, ঈশ্বর এবং তাঁর মনোনীত রাজা যিশু খ্রিস্ট পৃথিবীতে যিহোবার দাসদের সঙ্গে সঙ্গে আছে—তাদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছে, সুরক্ষা করছে, সংগঠিত করছে এবং শিক্ষা দিচ্ছে। তাদের বৃদ্ধি এই নিশ্চয়তাকেও জোরালো করে যে, ভবিষ্যতের জন্য করা যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হবেই। “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (যিশা. ১১:৯) সেই সময় মানবজাতি কত আশীর্বাদই না লাভ করবে!

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিরা—বিশ্বাস কার্যরত, ১ম ভাগ: অন্ধকারের মধ্যে থেকে (ইংরেজি) এবং যিহোবার সাক্ষিরা—বিশ্বাস কার্যরত, ২য় ভাগ: দীপ্তি প্রকাশিত হোক (ইংরেজি) নামক ভিডিওগুলো দেখার মাধ্যমে আপনি উপকার লাভ করতে পারবেন।

^ ২০০২ সালের ১ জুলাই প্রহরীদুর্গ পত্রিকার পৃষ্ঠা ১৯, অনুচ্ছেদ ১৬ দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রাথমিক সময়ের বাইবেল ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত ছিল এমন নম্র ব্যক্তিরা, যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ব্যাপারে আন্তরিকভাবে আকাঙ্ক্ষী

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের ‘সত্যিকারের জ্ঞান’ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে আপনাদের প্রচেষ্টাকে যিহোবা মূল্যবান বলে গণ্য করেন