সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পিলগ্রিমদের সঙ্গে ভ্রমণ করা

পিলগ্রিমদের সঙ্গে ভ্রমণ করা

আমাদের আর্কাইভ থেকে

পিলগ্রিমদের সঙ্গে ভ্রমণ করা

“আমার পক্ষে ঘরে ঘরে যাওয়া অসম্ভব!” অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছে প্রচার করার ব্যাপারে নতুন বাইবেল ছাত্রদের মধ্যে কত জনই না এইরকমটা অনুভব করে! কিন্তু, এইরকম আপত্তি এমন একজন অভিজ্ঞ বক্তা এবং বাইবেল শিক্ষক জানিয়েছিলেন, যাকে আগে একজন পিলগ্রিম বলে অভিহিত করা হতো।

জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার পত্রিকার অনেক পাঠক, যারা গির্জা ত্যাগ করেছিল, তারা সেই ব্যক্তিদের সাহচর্য লাভ করার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষী ছিল, যারা পরস্পরের কাছে বাইবেলের সত্যের প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করত। এই পত্রিকা, এর পাঠকদেরকে তাদের মতোই মূল্যবান বিশ্বাস রয়েছে এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে এবং নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য একত্রিত হতে জোরালো পরামর্শ দেয়। ১৮৯৪ সালের শুরুর দিকে, ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি সেই দলগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য ভ্রমণ প্রতিনিধিদের পাঠায়, যারা একটা পরিদর্শনের জন্য অনুরোধ করেছিল। এই অভিজ্ঞ ও কঠোর পরিশ্রমী ব্যক্তিরা, যাদেরকে পরবর্তী সময়ে পিলগ্রিম বলে অভিহিত করা হয়, তাদেরকে মৃদুশীলতা, বাইবেল সম্বন্ধে জ্ঞান, চমৎকার কথা বলার এবং শিক্ষা দেওয়ার ক্ষমতার জন্য ও সেইসঙ্গে মুক্তির মূল্যের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করার জন্য বাছাই করা হয়েছিল। সাধারণত এক বা দুই দিনের মধ্যেই এই পরিদর্শন করা হতো আর তা খুবই ব্যস্ততার মধ্যে কাটত। অনেক বাইবেল ছাত্র সেই ইস্তাহার বিতরণ করার মাধ্যমে ক্ষেত্রের পরিচর্যা সম্বন্ধে প্রথম অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল, যা জনসাধারণের উদ্দেশে একজন পিলগ্রিমের বক্তৃতার জন্য ছাপানো হয়েছিল। একটা স্কুলে বিকেলের বক্তৃতা দেওয়ার পর, হুগো রিমার নামে একজন ভাই, মধ্যরাত পর্যন্ত বাইবেলের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন, যিনি পরবর্তী সময়ে পরিচালকগোষ্ঠীর একজন সদস্য হয়েছিলেন। পরিশ্রান্ত থাকা সত্ত্বেও, তিনি আনন্দিত হয়ে বলেছিলেন, সভাটা “চমৎকার” ছিল।

ওয়াচ টাওয়ার বলেছিল যে, পিলগ্রিমের পরিদর্শনের “প্রধান উদ্দেশ্য” ছিল, বিশ্বাসীদের ঘরে সভা করার মাধ্যমে “বিশ্বাস বাটির পরিজনকে” গড়ে তোলা। আশেপাশের এলাকা থেকে বাইবেল ছাত্ররা বক্তৃতা শোনার এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব উপভোগ করার জন্য আসত। এরপর, খ্রিস্টীয় আতিথেয়তা দেখানো হতো। মড অ্যাবোট নামে একজন বোন ছোটোবেলায় সকালের একটা বক্তৃতা শুনেছিলেন, যে-বক্তৃতার পরে উঠোনে রাখা একটা লম্বা টেবিলের চারপাশে সকলে জড়ো হয়েছিল। “অনেক মজাদার খাবার—হ্যাম, ফ্রাইড চিকেন, বিভিন্ন ধরনের রুটি, পাই, কেক! সকলেই ইচ্ছামতো খেয়েছিল এবং প্রায় দুপুর দুটোর দিকে আমরা আরেকটা বক্তৃতা শোনার জন্য মিলিত হয়েছিলাম।” কিন্তু, সেই বোন স্বীকার করেন যে, “এরপর সকলেই প্রায় ঘুমিয়ে পড়ছিল।” দীর্ঘসময়ের একজন পিলগ্রিম, বেঞ্জামিন বার্টন একবার এই মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমার সামনে তেল-মশলাযুক্ত যে-খাবার পরিবেশন করা হতো, সেগুলোর সবই যদি আমি খেতাম, তাহলে অনেক আগেই আমার পিলগ্রিমের কাজ শেষ হয়ে যেতো।’ অবশেষে, ব্রুকলিনের প্রধান কার্যালয় থেকে আসা একটা চিঠির মাধ্যমে সদুদ্দেশ্যসম্পন্ন বোনদের এই বিষয়ে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল যে, যারা পিলগ্রিমের জন্য কিছু করতে চায় তাদের পক্ষে পিলগ্রিমের জন্য “রোজকার সাধারণ খাবার” এবং “নির্বিঘ্নে ঘুমের” ব্যবস্থা করা আরও ভালো হবে।

পিলগ্রিমরা শিক্ষাদানে এবং বিভিন্ন ছক, নমুনা অথবা হাতের কাছে যা-কিছু থাকত, সেগুলো ব্যবহার করে তাদের বিষয়বস্তুকে জীবন্ত করে তোলায় দক্ষ ছিল। আর. এইচ. বারবারের বক্তৃতা “সবসময়ই অত্যন্ত আগ্রহজনক ছিল।” ডব্লিউ. জে. থর্ন, যিনি পিতৃতুল্য মনোভাব দেখাতেন, তিনি “প্রাচীনকালের একজন কুলপতির মতো” কথা বলতেন। একদিন একটা মডেল এ ফোর্ড গাড়িতে চড়ে যাওয়ার সময় শিল্ড টুট্‌জিয়ান হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠেছিলেন, “থামুন!” তিনি গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে কিছু বুনো ফুল তুলে নেন এবং কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই তার সঙ্গীদেরকে যিহোবার সৃষ্টি সম্বন্ধে এক শিক্ষা প্রদান করেন।

পিলগ্রিমের কঠিন কাজ অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে এসেছিল আর তা বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিদের জন্য, যারা মাঝবয়সি বা মাঝবয়স পার করে ফেলেছে। কিন্তু, কারো কারো জন্য তাদের কাজের উদ্দেশ্য পরিবর্তীত হওয়াই সবচেয়ে বড়ো পরীক্ষা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে এইরকমটা আশা করা হয়েছিল, যেন তারা ঘরে ঘরে প্রচার কাজে নেতৃত্ব দেয়। ১৯২৪ সালের ১৫ মার্চ প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় বলা হয়েছিল যে, সত্য খ্রিস্টানদের ‘প্রধান কাজগুলোর মধ্যে একটা হল, রাজ্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া। পিলগ্রিমদের এই উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।’

স্পষ্টতই, কিছু পিলগ্রিম এই পরিবর্তনের ফলে এতটাই বিরক্ত হয়েছিল যে, তারা ভ্রমণ কাজ ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল আর এমনকী কোনো কোনো অসন্তুষ্ট ব্যক্তি নিজেদের ধর্মীয় দল পর্যন্ত গঠন করেছিল। রবি ডি. অ্যাডকিন্স বর্ণনা করেছিলেন যে, চমৎকার বক্তা ছিলেন এমন একজন পিলগ্রিম তিক্তভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন: “আমি কেবল মঞ্চে দাঁড়িয়েই প্রচার করতে পারি। আমার পক্ষে ঘরে ঘরে যাওয়া অসম্ভব!” ভাই অ্যাডকিন্স আরও বলেন: “এরপর আমি তাকে ১৯২৪ সালে ওহাইওর কলম্বাসের সম্মেলনে দেখেছিলাম। সেখানে তাকে সবচেয়ে অসহায় দেখাচ্ছিল, যিনি একা একটা ছোটো গাছের ছায়ার নীচে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর হাজার হাজার আনন্দিত ভাইবোনদের মধ্যে তাকে দুঃখার্ত বলে মনে হচ্ছিল। আমি আর কখনো তাকে দেখিনি। এর পর পরই তিনি সংগঠন ত্যাগ করেছিলেন।” অন্যদিকে, “অনেক আনন্দিত ভাই তাদের গাড়িতে করে বই নিয়ে যাচ্ছিল,” স্পষ্টতই ঘরে ঘরে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তারা অত্যন্ত উৎসুক ছিল।—প্রেরিত ২০:২০, ২১.

যদিও অনেক পিলগ্রিম হয়তো সেই ব্যক্তিদের মতোই শঙ্কিত ছিল, যাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাদেরকে পাঠানো হয়েছিল, তবুও তারা মন লাগিয়ে কাজ করেছিল। ঘরে ঘরে সাক্ষ্যদান সম্বন্ধে জার্মানভাষী পিলগ্রিম ম্যাক্সওয়েল জি. ফ্রেন্ড (ফ্রিশেল) লিখেছিলেন, “পিলগ্রিম কাজের এই দিকটা ভ্রমণ কাজে অনেক আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল।” পিলগ্রিম জন এ. বোনেট জানিয়েছিলেন যে, অন্যান্য ভাইয়েরা রাজ্যের প্রচার কাজের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টাকে পূর্ণহৃদয়ে সমর্থন করেছিল। তার কথা অনুসারে, বহু সংখ্যক ব্যক্তি “যুদ্ধের প্রথম সারিতে থাকার জন্য অত্যন্ত উদ্যোগ” দেখিয়েছিল।

যে-ভাইয়েরা বিশ্বস্তভাবে ভ্রমণের কাজ করেছে, তারা বছরের পর বছর ধরে এক উত্তম প্রভাব হয়ে উঠেছে। “পিলগ্রিমদের কাজের মূল্য এবং উপকার যে প্রশ্নাতীত, তা আমি এমনকী একজন বালক থাকা সত্ত্বেও লক্ষ করেছিলাম,” নরম্যান লারসন নামে দীর্ঘদিনের একজন সাক্ষি বলেছিলেন। “তারা আমাকে সঠিক উপায়ে গড়ে ওঠার জন্য অনেক সাহায্য করেছে।” এখনও পর্যন্ত, এই ধরনের আত্মত্যাগী এবং অনুগত ভ্রমণ অধ্যক্ষরা সহবিশ্বাসীদেরকে এই কথা বলার জন্য সাহায্য করে চলছে, “আমরা ঘরে ঘরে যেতে পারি!”

[৩২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

পিলগ্রিমের পরিদর্শনের দিনটা অনেক আনন্দে কাটত!

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯০৫ সালে বেঞ্জামিন বার্টনকে ভ্রমণপথে ১৭০-টা জায়গায় থামতে হয়েছিল

[৩২ পৃষ্ঠার চিত্র]

ওয়াল্টার. জে. থর্ন এমন একজন পিলগ্রিম হিসেবে পরিচিত ছিলেন, যাকে তার পিতৃতুল্য ও খ্রিস্টতুল্য স্বভাবের কারণে ভালোবেসে প্যাপি বলে ডাকা হতো

[৩২ পৃষ্ঠার চিত্র]

জে. এ. ব্রাউনকে একজন পিলগ্রিম হিসেবে ১৯২০ সালের দিকে জ্যামাইকায় পাঠানো হয়েছিল, যেন তিনি ১৪-টা ছোটো দলকে শক্তিশালী করতে ও উৎসাহ প্রদান করতে পারেন

[৩২ পৃষ্ঠার চিত্র]

পিলগ্রিমের কাজ বিশ্বাস গড়ে তুলত, খ্রিস্টীয় একতাকে শক্তিশালী করত এবং ভাইদেরকে সংগঠনের নিকটবর্তী করত