সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেভাবে এই জগতের শেষ আসবে

যেভাবে এই জগতের শেষ আসবে

যেভাবে এই জগতের শেষ আসবে

“তোমরা অন্ধকারে নও যে, সেই দিন চোরের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িবে।”—১ থিষল. ৫:৪.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

নীচের এই শাস্ত্রপদগুলোতে এখনও অদৃশ্য এমন কোন কোন ঘটনাকে নির্দেশ করা হয়েছে?

১ থিষলনীকীয় ৫:৩

প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৬

দানিয়েল ২:৪৪

১. কী আমাদেরকে জেগে থাকতে এবং পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে?

 পৃথিবী আলোড়নকারী ঘটনাগুলো শীঘ্র ঘটবে। বাইবেলের বিভিন্ন ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতা এই বিষয়টা নিশ্চিত করে আর তাই আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কী আমাদেরকে জেগে থাকতে সাহায্য করবে? প্রেরিত পৌল আমাদেরকে ‘অদৃশ্য বস্তু লক্ষ্য করিবার’ জোরালো পরামর্শ দেন। হ্যাঁ, আমাদেরকে অনন্তজীবনের পুরস্কারের কথা মনে রাখতে হবে, হোক তা স্বর্গে অথবা পৃথিবীতে। এই প্রসঙ্গ দেখায় যে, পৌল এই কথাগুলো সহবিশ্বাসীদেরকে তাদের বিশ্বস্ত কাজের আনন্দদায়ক ফলের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য লিখেছিলেন। এটা তাদেরকে পরীক্ষা এবং তাড়নার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতেও সাহায্য করবে।—২ করি. ৪:৮, ৯, ১৬-১৮; ৫:৭.

২. (ক) আমাদের আশাকে দৃঢ়রূপে ধরে রাখার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (খ) এই প্রবন্ধে ও সেইসঙ্গে পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করব?

পৌলের উপদেশের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ নীতি রয়েছে: আমাদের আশাকে দৃঢ়রূপে ধরে রাখার জন্য আমাদের ঠিক সামনেই যে-বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলোকে ছাড়িয়ে আরও বেশি কিছুকে দেখতে হবে। আমাদের সেই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে, যেগুলো এখনও অদৃশ্য। (ইব্রীয় ১১:১; ১২:১, ২) তাই, এই প্রবন্ধে ও সেইসঙ্গে পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা দশটা ভাবী ঘটনা বিবেচনা করে দেখব, যেগুলো আমাদের অনন্তজীবনের আশার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

শেষ আসার ঠিক আগে কী ঘটবে?

৩. (ক) ১ থিষলনীকীয় ৫:২, ৩ পদে উল্লেখিত কোন ঘটনাগুলো এখনও ঘটা বাকি আছে? (খ) রাজনৈতিক নেতারা কী করবে এবং তাদের সঙ্গে হয়তো কারা যোগ দেবে?

 থিষলনীকীয়দের প্রতি লেখা তার চিঠিতে প্রেরিত পৌল একটা ভাবী ঘটনা সম্বন্ধে উল্লেখ করেন। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:২, ৩.) তিনি ‘প্রভুর, [“যিহোবার,” NW] দিনের’ প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করান। এখানে ব্যবহৃত “যিহোবার দিন” শব্দগুলো সেই সময়কালকে নির্দেশ করে, যা মিথ্যা ধর্মের ধ্বংস দিয়ে শুরু হবে এবং আরমাগিদোন যুদ্ধের দ্বারা শেষ হবে। কিন্তু, যিহোবার দিন শুরু হওয়ার ঠিক আগে জগতের নেতারা এইরকমটা বলতে থাকবে “শান্তি ও অভয়।” এই বিষয়টা হয়তো একটা অথবা ধারাবাহিক কয়েকটা ঘটনাকে নির্দেশ করে। জাতিগণ এইরকমটা মনে করতে পারে যে, তারা তাদের বড়ো বড়ো কিছু সমস্যা প্রায় সমাধান করতে যাচ্ছে। ধর্মীয় নেতাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? যেহেতু তারা জগতের অংশ, তাই সম্ভবত তারাও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগ দেবে। (প্রকা. ১৭:১, ২) পাদরিরা এভাবে প্রাচীন যিহূদার মিথ্যা ভাববাদীদের অনুকরণ করবে। যিহোবা তাদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: ‘তাহারা যখন শান্তি নাই, তখন শান্তি শান্তি বলে।’—যির. ৬:১৪; ২৩:১৬, ১৭.

৪. সাধারণ মানবজাতির বিপরীতে আমরা কী বুঝতে পারি?

কারা “শান্তি ও অভয়” বলায় অংশ নেবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং এই ঘটনা ইঙ্গিত দেবে যে, যিহোবার দিন শুরু হতে যাচ্ছে। তাই, পৌল বলতে পেরেছিলেন: “ভ্রাতৃগণ, তোমরা অন্ধকারে নও যে, সেই দিন চোরের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িবে। তোমরা ত সকলে দীপ্তির সন্তান।” (১ থিষল. ৫:৪, ৫) সাধারণ মানবজাতির বিপরীতে, আমরা চলতি ঘটনাগুলোর শাস্ত্রীয় তাৎপর্য বুঝতে পারি। “শান্তি ও অভয়” বলা সম্বন্ধীয় এই ভবিষ্যদ্‌বাণী কতটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিপূর্ণ হবে? তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তাই, আসুন আমরা ‘জাগিয়া থাকিবার ও মিতাচারী হইবার’ বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।—১ থিষল. ৫:৬; সফ. ৩:৮.

‘যে-রাণী’ তার সম্ভাবনা সম্বন্ধে ভুল ধারণা করে

৫. (ক) কীভাবে “মহাক্লেশ” শুরু হবে? (খ) কোন ‘রাণী’ তার রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা সম্বন্ধে ভুল ধারণা করবে?

এরপর কোন অদৃশ্য ঘটনা ঘটবে? পৌল বলেছিলেন: “লোকে যখন বলে, শান্তি ও অভয়, তখনই তাহাদের কাছে . . . আকস্মিক বিনাশ উপস্থিত হয়।” ‘আকস্মিক বিনাশের’ প্রথম পর্যায় হল, ‘মহতী বাবিলের’ অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের বিশ্বসাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ, যেটা “বেশ্যা” নামেও পরিচিত। (প্রকা. ১৭:৫, ৬, ১৫) খ্রিস্টীয়জগৎ-সহ সমস্ত ধরনের মিথ্যা ধর্মের বিরুদ্ধে এই আক্রমণই হল ‘মহাক্লেশের’ শুরু। (মথি ২৪:২১; ২ থিষল. ২:৮) অনেকের জন্য এই ঘটনা অপ্রত্যাশিতভাবে আসবে। কেন? কারণ সেই সময় পর্যন্ত সেই বেশ্যা আস্থার সঙ্গে নিজেকে এমন একজন ‘রাণী’ হিসেবে দেখবে, যে “কোন মতে শোক দেখিবে না।” কিন্তু, হঠাৎ করে সে বুঝতে পারবে যে, রক্ষা পাওয়ার বিষয়ে তার সম্ভাবনা সম্বন্ধে সে ভুল ধারণা করেছে। তাকে দ্রুত, যেন “একই” বা এক ‘দিনের’ মধ্যেই নির্মূল করে দেওয়া হবে।—প্রকা. ১৮:৭, ৮.

৬. কে মিথ্যা ধর্মকে ধ্বংস করে দেবে?

ঈশ্বরের বাক্য বেশ্যার আক্রমণকারীকে ‘দশ শৃঙ্গবিশিষ্ট পশু’ হিসেবে চিত্রিত করে। প্রকাশিত বাক্য বইয়ের অধ্যয়ন দেখায় যে, পশু রাষ্ট্রসংঘকে (ইউএন-কে) নির্দেশ করে। “দশ শৃঙ্গ” বর্তমানে বিদ্যমান সমস্ত রাজনৈতিক ক্ষমতাগুলোকে চিত্রিত করে, যেগুলো ‘এই সিন্দূরবর্ণ পশুকে’ সমর্থন করে। * (প্রকা. ১৭:৩, ৫, ১১, ১২) সেই আক্রমণ কতটা মারাত্মক হবে? ইউএন-এর জাতিগুলো বেশ্যার সম্পদ লুঠ করে নেবে, তার আসল চরিত্র প্রকাশ করে দেবে, তাকে গ্রাস করবে এবং “তাহাকে আগুনে পোড়াইয়া দিবে।” তার চূড়ান্ত পরিণতি হবে ধ্বংস।পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৬.

৭. ‘পশুর’ আক্রমণ করার পিছনে কী ইন্ধন জোগাবে?

বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী এও নির্দেশ করে যে, এই আক্রমণ করার পিছনে কী ইন্ধন জোগাবে। যেকোনোভাবেই হোক, যিহোবা রাজনৈতিক শাসকদের হৃদয়ে ‘তাঁহারই মানস পূর্ণ করিবার’ অর্থাৎ বেশ্যাকে ধ্বংস করার প্রবৃত্তি দেবেন। (প্রকা. ১৭:১৭) যুদ্ধবাজ ধর্ম জগতের মধ্যে বিঘ্নসৃষ্টিকারী ক্ষমতা হিসেবে কাজ করেই চলবে; তাই, জাতিগুলো হয়তো মনে করবে যে, সেই বেশ্যাকে ধ্বংস করে দেওয়ার মাধ্যমে তারা নিজেদেরই ইচ্ছা পূরণ করছে। বস্তুতপক্ষে, শাসকরা যখন আক্রমণ করবে, তখন তারা মনে করবে যে, তারা “একমনা” হয়েই তা করছে। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে তারা সমস্ত মিথ্যা ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার বিষয়ে ঈশ্বরের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। এভাবে ঘটনাটা হঠাৎ করেই ভিন্ন দিকে মোড় নেবে অর্থাৎ শয়তানের জগতের একটা অংশ এর আরেকটা অংশকে আক্রমণ করবে এবং তা রোধ করার কোনো ক্ষমতাই শয়তানের থাকবে না।—মথি ১২:২৫, ২৬.

ঈশ্বরের লোকেদের ওপর এক আক্রমণ

৮. “মাগোগ দেশীয় গোগের” আক্রমণ কী?

মিথ্যা ধর্ম ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও, ঈশ্বরের দাসদেরকে “নির্ভয়ে” এবং “প্রাচীরহীন স্থানে বাস” করতে দেখা যাবে। (যিহি. ৩৮:১১, ১৪) আপাতদৃষ্টিতে অরক্ষিত বলে মনে হওয়া সেই দলের লোকেদের প্রতি কী ঘটবে, যারা ক্রমাগত যিহোবার উপাসনা করে? এইরকমটা মনে হয় যে, “অনেক জাতি” সর্বশক্তি দিয়ে তাদেরকে আক্রমণ করবে। ঈশ্বরের বাক্য এই ঘটনাকে “মাগোগ দেশীয় গোগের” দ্বারা আক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করে। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৮:২, ১৫, ১৬.) এই আক্রমণকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

৯. (ক) খ্রিস্টানদের প্রধান চিন্তার বিষয় কী? (খ) আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের এখন কোন পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত?

ঈশ্বরের লোকেদের ওপর এই আক্রমণ সম্বন্ধে আগে থেকেই জানা আমাদেরকে অতিরিক্ত উদ্‌বিগ্ন করে না। এর পরিবর্তে, আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় নিজেদের পরিত্রাণ নয় বরং যিহোবার নামের পবিত্রীকরণ এবং তাঁর সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদন। ইব্রীয় ভাষায় যিহোবা ৬০ বারেরও বেশি এই কথা বলেছিলেন: “তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW]।” (যিহি. ৬:৭) এই বাক্যাংশ পৃথিবীতে যিহোবার নামের পবিত্রীকরণকে নির্দেশ করে। তাই, যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীর এই উল্লেখযোগ্য দিকটা পরিপূর্ণ হতে দেখার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি, এই নির্ভরতা রেখে যে, “প্রভু [“যিহোবা,” NW] ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে . . . জানেন।” (২ পিতর ২:৯) এই সময়ের মধ্যে, আমরা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিটা সুযোগকে ব্যবহার করতে চাই আর এর ফলে আমরা যে-পরীক্ষার মুখোমুখিই হই না কেন, যিহোবার প্রতি আমাদের “সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW]” বজায় রাখতে পারব। আমাদের কী করা উচিত? আমাদের প্রার্থনা করা, ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন ও তা নিয়ে ধ্যান করা এবং অন্যদেরকে রাজ্যের বার্তা জানানো উচিত। তা করার মাধ্যমে আমরা আমাদের অনন্তজীবনের আশাকে দৃঢ়রূপে, “লঙ্গরস্বরূপ” ধরে রাখি।—ইব্রীয় ৬:১৯; গীত. ২৫:২১.

জাতিগণকে যিহোবাকে স্বীকার করতে হবে

১০, ১১. কোন বিষয়টা আরমাগিদোনের সংকেত দেবে আর সেই সময় কী ঘটবে?

১০ যিহোবার দাসদের ওপর আসা আক্রমণের কারণে পৃথিবী-আলোড়নকারী কোন ঘটনা ঘটবে? যিশু এবং স্বর্গীয় বাহিনীর মাধ্যমে যিহোবা তাঁর লোকেদের পক্ষে কাজ করবেন। (প্রকা. ১৯:১১-১৬) সেই হস্তক্ষেপ হবে ‘সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের মহাদিনের যুদ্ধ’—আরমাগিদোন।—প্রকা. ১৬:১৪, ১৬.

১১ সেই যুদ্ধ সম্বন্ধে, যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা ঘোষণা করেন: “আমি আপনার সকল পর্ব্বতে [গোগের] বিরুদ্ধে খড়্গ আহ্বান করিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] বলেন; প্রত্যেকের খড়্গ তাহার ভ্রাতার বিরুদ্ধ হইবে।” আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে, শয়তানের পক্ষের লোকেরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে এবং নিজেদের লোকেদের ওপর নিজেরাই—সৈনিকের বিরুদ্ধে সৈনিকেরাই—অস্ত্র তুলবে। কিন্তু, শয়তানের বিধিব্যবস্থার ওপরও বিনাশ আসবে। যিহোবা বলেন: “আমি . . . [গোগের] উপরে, তাহার সকল সৈন্যদলের উপরে ও তাহার সঙ্গী অনেক জাতির উপরে . . . অগ্নি ও গন্ধক বর্ষণ করিব।” (যিহি. ৩৮:২১, ২২) এই ঐশিক পদক্ষেপের ফল কী হবে?

১২. জাতিগণ কী করতে বাধ্য হবে?

১২ জাতিগুলোকে বুঝতে হবে যে, তাদের শোচনীয় পরাজয় যিহোবার আদেশেই হয়েছে। এরপর, যে-প্রাচীন মিশরীয় আক্রমণকারীরা সূফসাগরে ইস্রায়েলীয়দের পিছু ধাওয়া করেছিল, তাদের মতো শয়তানের বাহিনীও বিচলিত হয়ে আর্তনাদ করে বলবে: “সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] তাহাদের পক্ষে . . . যুদ্ধ করিতেছেন”! (যাত্রা. ১৪:২৫) হ্যাঁ, জাতিগুলো যিহোবাকে স্বীকার করতে বাধ্য হবে। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৮:২৩.) আমরা এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলো শুরু হওয়ার কতটা নিকটে আছি?

আর কোনো বিশ্বশক্তির উদয় হবে না

১৩. দানিয়েল যে-প্রতিমা সম্বন্ধে বর্ণনা করেছেন, তার পঞ্চম অংশ সম্বন্ধে আমরা কী জানি?

১৩ দানিয়েল বইয়ের একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে যে, সময়ের প্রবাহে আমরা এখন কোথায় আছি। দানিয়েল বিভিন্ন ধাতু দিয়ে তৈরি একটা মানব প্রতিমা সম্বন্ধে বর্ণনা করেন। (দানি. ২:২৮, ৩১-৩৩) এটা ধারাবাহিক বিশ্বশক্তিগুলোকে চিত্রিত করে, যেগুলো অতীতে এবং বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেদের ওপর জোরালো প্রভাব ফেলেছে। এগুলো হল বাবিল, মাদীয়-পারস্য, গ্রিস, রোম—আর অবশেষে আমাদের সময়ে আরেকটা বিশ্বশক্তি। দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করা দেখায় যে, এই শেষ বিশ্বশক্তিকে প্রতিমার চরণ ও অঙ্গুলি দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র এক বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। হ্যাঁ, দানিয়েলের প্রতিমার পঞ্চম অংশটা হল অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি। প্রতিমার শেষ অংশ হচ্ছে চরণ আর এটা চিত্রিত করে যে আর কোনো বিশ্বশক্তি আবির্ভূত হবে না। চরণ এবং অঙ্গুলি যে লৌহ ও কর্দম দ্বারা গঠিত, তা অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তির দুর্বল অবস্থাকে চিত্রিত করে।

১৪. আরমাগিদোনের সময় কোন বিশ্বশক্তি শাসনরত থাকবে?

১৪ এই একই ভবিষ্যদ্‌বাণী ইঙ্গিত দেয় যে, এক বৃহৎ প্রস্তর দ্বারা চিত্রিত ঈশ্বরের রাজ্য ১৯১৪ সালে যিহোবার সার্বভৌমত্বের পর্বত থেকে খনিত হয়েছিল। এই প্রস্তর এখন এর লক্ষ্যবস্তুর—প্রতিমার চরণের—দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছে। আরমাগিদোনের সময়ে চরণ এবং প্রতিমার বাকি অংশ চূর্ণ হয়ে যাবে। (পড়ুন, দানিয়েল ২:৪৪, ৪৫.) তাই, অ্যাংলো-আমেরিকা সেই সময়ও শাসনরত বিশ্বশক্তি হিসেবে থাকবে, যখন আরমাগিদোন আঘাত হানবে। এই ভবিষ্যদ্‌বাণী সম্পূর্ণরূপে পরিপূর্ণ হতে দেখা কতই না রোমাঞ্চকর হবে! * কিন্তু, শয়তানের প্রতি যিহোবা কী করবেন?

ঈশ্বরের প্রধান শত্রুর প্রতি যা করা হবে

১৫. আরমাগিদোনের পর, শয়তান ও তার মন্দদূতদের প্রতি কী ঘটবে?

১৫ প্রথমত, শয়তানকে পৃথিবীতে তার সমগ্র সংগঠনের নির্মূল হয়ে যাওয়ার বিষয়টা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করতে হবে। এরপর, স্বয়ং শয়তানের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা হবে। তার পর কী ঘটবে, তা প্রেরিত যোহন বর্ণনা করেন। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩.) যিশু খ্রিস্ট—সেই ‘দূত, যাঁহার হস্তে অগাধলোকের চাবি’—শয়তান ও তার মন্দদূতদেরকে বন্দি করবেন, তাদেরকে অগাধলোকে নিক্ষেপ করবেন এবং সেখানে তাদেরকে হাজার বছর আটকে রাখবেন। (১ যোহন ৩:৮) এই কাজের মাধ্যমেই সর্পের মস্তককে চূর্ণ করার প্রাথমিক পর্যায় শুরু হবে। *আদি. ৩:১৫.

১৬. শয়তানের ‘অগাধলোকে’ থাকার অর্থ কী?

১৬ ‘অগাধলোক’ কী, যেখানে শয়তান ও মন্দদূতদের নিক্ষেপ করা হবে? সেটা হচ্ছে এমন একটা স্থান, যা যিহোবা ও সেই ‘দূত, যাঁহার হস্তে অগাধলোকের চাবি’ রয়েছে, তিনি ছাড়া বাকি সকলের ধরাছোঁয়ার একেবারে বাইরে। সেখানে, শয়তানকে মৃতবৎ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রাখা হবে, যাতে “সে জাতিবৃন্দকে আর ভ্রান্ত করিতে না পারে।” সত্যিই, সেই ‘গর্জ্জনকারী সিংহ’ নিশ্চুপ হয়ে যাবে!—১ পিতর ৫:৮.

যে-ঘটনাগুলো শান্তির সময়ের দিকে পরিচালিত করে

১৭, ১৮. (ক) এই পর্যন্ত আমরা এখনও অদৃশ্য এমন কোন কোন ঘটনা বিবেচনা করেছি? (খ) এই ঘটনাগুলোর পর আমরা কোন সময়কাল উপভোগ করব?

১৭ আমাদের সামনে তাৎপর্যপূর্ণ এবং পৃথিবী-আলোড়নকারী ঘটনাগুলো রয়েছে। “শান্তি ও অভয়” বলার বিষয়টা কীভাবে ঘটবে, তা দেখার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি। এরপর আমরা মহতী বাবিলের ধ্বংস, মাগোগ দেশীয় গোগের আক্রমণ এবং আরমাগিদোনের যুদ্ধ দেখতে পারব। তার পর, শয়তান ও তার মন্দদূতদেরকে অগাধলোকে নিক্ষেপ করা হবে। এই ঘটনাগুলোর পর, যখন সমস্ত দুষ্টতা শেষ হয়ে যাবে, তখন আমরা জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করব আর তা হল খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময়, যে-সময়টাতে আমরা ‘শান্তির বাহুল্য’ উপভোগ করব।—গীত. ৩৭:১০, ১১.

১৮ এই পর্যন্ত আমরা যে-পাঁচটা ঘটনা পরীক্ষা করেছি, সেগুলো ছাড়া আরও “অদৃশ্য বস্তু” রয়েছে, যেগুলো আমরা ‘লক্ষ্য করিতে’ চাই। এই ঘটনাগুলো পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ ২০১২ সালের ১৫ জুন প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৭-১৮ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ দানিয়েল ২:৪৪ পদের ‘ঐ সকল রাজ্য বিনষ্ট করা’ বাক্যাংশটি সেই রাজ্য বা বিশ্বশক্তিগুলোকে নির্দেশ করে, যেগুলো প্রতিমার বিভিন্ন অংশের দ্বারা তুলে ধরা হয়েছে। বাইবেলের অনুরূপ একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী দেখায় যে, ‘জগৎ সমুদয়ের রাজারা সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের’ সময় যিহোবার বিরুদ্ধে একত্রিত হবে। (প্রকা. ১৬:১৪; ১৯:১৯-২১) তাই, আরমাগিদোনের সময় কেবল সেই প্রতিমার রাজ্যগুলোকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে এই জগতের অন্যান্য সমস্ত রাজ্যকেও ধ্বংস করে দেওয়া হবে।

^ সর্পের মস্তককে একেবারে চূর্ণ করে দেওয়ার বিষয়টা হাজার বছরের শেষে ঘটবে, যখন শয়তান ও তার মন্দদূতদেরকে “‘অগ্নি ও গন্ধকের’ হ্রদে” নিক্ষেপ করা হবে।—প্রকা. ২০:৭-১০; মথি ২৫:৪১.

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৪, ৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

যে-পাঁচটা ঘটনা ঘটবে:

১ “শান্তি ও অভয়” সম্বন্ধে ঘোষণা

২ ‘মহতী বাবিলের’ ওপর জাতিগুলোর আক্রমণ এবং ধ্বংস

৩ যিহোবার লোকেদের ওপর আক্রমণ

৪ আরমাগিদোনের যুদ্ধ

৫ শয়তান ও তার মন্দদূতদের অগাধলোকে নিক্ষেপ