সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি একজন নির্ভরযোগ্য অধ্যক্ষ!

আপনি একজন নির্ভরযোগ্য অধ্যক্ষ!

আপনি একজন নির্ভরযোগ্য অধ্যক্ষ!

“তোমরা নিজের নও।” —১ করি. ৬:২০.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

প্রাচীন গৃহাধ্যক্ষের ভূমিকা কী ছিল?

ঈশ্বরের সমস্ত গৃহাধ্যক্ষের কোন দায়িত্বগুলো রয়েছে?

আমাদেরকে আস্থা সহকারে যে-অধ্যক্ষ পদ দেওয়া হয়েছে, সেটাকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

১. স্বাধীনতার প্রতি এই জগতের কোন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে?

 একজন গ্রিক নাট্যকার প্রায় ২,৫০০ বছর আগে লিখেছিলেন: “কেউই স্বেচ্ছায় দাসত্বের জোয়াল কাঁধে তুলে নেয় না।” বর্তমানে, অনেকেই একবাক্যে এই উক্তির সঙ্গে একমত হবে। দাসত্ব সাধারণত এমন নিপীড়িত এবং বন্দি লোকেদের চিত্র তুলে ধরে, যাদের কাজ ও ত্যাগস্বীকার নিজেদের জন্য নয় বরং তারা যাদের অধীনে কাজ করে এবং যারা তাদের ওপর কর্তৃত্ব করে, তাদের জন্য উপকার নিয়ে আসে।

২, ৩. (ক) খ্রিস্টের ইচ্ছুক দাসেরা কোন পদ লাভ করে? (খ) গৃহাধ্যক্ষের দায়িত্ব সম্বন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

কিন্তু, যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর শিষ্যরা নম্র দাস হবে। তবে, সত্য খ্রিস্টানদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই দাসত্বের মধ্যে কোনো অবমাননাকর অথবা পীড়নকর কিছু নেই। এই দাসেরা সম্মানজনক, নির্ভরযোগ্য এবং মর্যাদাপূর্ণ এক পদ লাভ করে। উদাহরণস্বরূপ, যিশু মারা যাওয়ার কিছু দিন আগে একজন “দাস” সম্বন্ধে যে-মন্তব্য করেছিলেন, তা বিবেচনা করে দেখুন। খ্রিস্ট ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, তিনি ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসকে’ দায়িত্ব প্রদান করবেন।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.

এই বিষয়টা তাৎপর্যপূর্ণ যে, একইরকম একটা বিবরণে সেই দাসকে “গৃহাধ্যক্ষ” বলে অভিহিত করা হয়েছে। (পড়ুন, লূক ১২:৪২-৪৪.) বর্তমানে, বেঁচে থাকা অধিকাংশ বিশ্বস্ত খ্রিস্টানই এই বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষশ্রেণীর সদস্য নয়। কিন্তু, শাস্ত্র দেখায় যে, ঈশ্বরকে সেবা করে এমন সকলের গৃহাধ্যক্ষের দায়িত্ব রয়েছে। এর সঙ্গে কোন কোন দায়িত্ব জড়িত? সেগুলোকে কীভাবে দেখা উচিত? উত্তর পাওয়ার জন্য আসুন আমরা প্রাচীনকালের গৃহাধ্যক্ষদের ভূমিকা পরীক্ষা করে দেখি।

গৃহাধ্যক্ষদের ভূমিকা

৪, ৫. প্রাচীন গৃহাধ্যক্ষদের কোন দায়িত্বগুলো ছিল? উদাহরণ দিন।

প্রাচীনকালে, একজন গৃহাধ্যক্ষ এমন এক নির্ভরযোগ্য দাস ছিলেন, যাকে তার প্রভুর গৃহ অথবা ব্যবসায়িক বিষয়গুলোর তত্ত্বাবধান করার জন্য নিযুক্ত করা হতো। সাধারণত, গৃহাধ্যক্ষদের যথেষ্ট কর্তৃত্ব ছিল এবং তাদেরকে গৃহের বিভিন্ন বিষয়, টাকাপয়সা এবং অন্যান্য দাসের দেখাশোনা করার দায়িত্ব অর্পণ করা হতো। এটা আমরা ইলীয়েষরের ক্ষেত্রে দেখতে পাই, যাকে আস্থা সহকারে অব্রাহামের বিস্তর সম্পত্তির যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অব্রাহাম সম্ভবত ইলীয়েষরকেই তার ছেলে ইস্‌হাকের জন্য একজন স্ত্রী বাছাই করার উদ্দেশে অরাম-নহরয়ীমে (মেসোপটেমিয়ায়) পাঠিয়েছিলেন। কতই না গুরুত্বপূর্ণ এবং বিরাট এক কার্যভার!—আদি. ১৩:২; ১৫:২; ২৪:২-৪.

অব্রাহামের প্রপৌত্র যোষেফ পোটীফরের গৃহের দেখাশোনা করতেন। (আদি. ৩৯:১, ২, ৪) পরে, যোষেফের নিজেরই একজন গৃহাধ্যক্ষ ছিল, যাকে ‘যোষেফের বাটীর’ ওপর নিযুক্ত করা হয়েছিল। সেই গৃহাধ্যক্ষ যোষেফের দশ জন ভাইয়ের জন্য আতিথেয়তার ব্যবস্থা করেছিলেন। আর যোষেফের আজ্ঞা অনুযায়ী তিনি পরিকল্পিতভাবে রুপোর বাটি “চুরি” হয়ে যাওয়ার ঘটনাটা সাজিয়েছিলেন। স্পষ্টতই, গৃহাধ্যক্ষের অনেক নির্ভরযোগ্য পদ ছিল।—আদি. ৪৩:১৯-২৫; ৪৪:১-১২.

৬. বিভিন্ন খ্রিস্টান প্রাচীনদের কোন ধরনের গৃহাধ্যক্ষের দায়িত্ব রয়েছে?

কয়েক শতাব্দী পর, প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে, খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের “ঈশ্বরের ধনাধ্যক্ষ” হতে হবে। (তীত ১:৭) ‘ঈশ্বরের পালকে’ পালন করার জন্য নিযুক্ত হওয়ায় এই অধ্যক্ষরা মণ্ডলীতে নির্দেশনা প্রদান করে এবং নেতৃত্ব দেয়। (১ পিতর ৫:১, ২) অবশ্য, দায়িত্বগুলো বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে অধিকাংশ খ্রিস্টান অধ্যক্ষ একটা মণ্ডলীতে সেবা করে থাকে। ভ্রমণ অধ্যক্ষরা একাধিক মণ্ডলীতে সেবা করে থাকে। আর শাখা কমিটির সদস্যরা দেশের সমস্ত মণ্ডলীর দেখাশোনা করে থাকে। তা সত্ত্বেও, আশা করা হয় যেন তারা সকলেই বিশ্বস্তভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে; সকলকেই ঈশ্বরের কাছে “নিকাশ দিতে” হবে।—ইব্রীয় ১৩:১৭.

৭. কীভাবে আমরা জানি যে, এক অর্থে সমস্ত খ্রিস্টানই গৃহাধ্যক্ষ?

কিন্তু, সেইসমস্ত অনুগত খ্রিস্টানদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা অধ্যক্ষ নয়? প্রেরিত পিতর এই বলে সমস্ত খ্রিস্টানের উদ্দেশে একটা চিঠি লিখেছিলেন: “তোমরা যে যেমন অনুগ্রহদান পাইয়াছ, তদনুসারে ঈশ্বরের বহুবিধ অনুগ্রহ-ধনের উত্তম অধ্যক্ষের মত পরস্পর পরিচর্য্যা কর।” (১ পিতর ১:১; ৪:১০) ঈশ্বর তাঁর অনুগ্রহ বা অযাচিত দয়ার কারণে আমাদের সকলকে দান, সম্পদ, ক্ষমতা অথবা মেধা দিয়েছেন, যেগুলো আমরা সহবিশ্বাসীদের উপকারের জন্য ব্যবহার করতে পারি। এই অর্থে, যারা ঈশ্বরকে সেবা করে, তারা সকলে গৃহাধ্যক্ষ আর তাদের গৃহাধ্যক্ষ পদের সঙ্গে সম্মান, নির্ভরতা এবং দায়িত্বের বিষয়টাও আসে।

আমরা ঈশ্বরের

৮. একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি কি, যেটা আমাদের মনে রাখতে হবে?

আমরা এখন তিনটে নীতির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করব, যেগুলো গৃহাধ্যক্ষ হিসেবে আমাদের বিবেচনা করতে হবে। প্রথমটা হল: আমরা সকলে ঈশ্বরের এবং আমাদেরকে তাঁর কাছে নিকাশ দিতে হবে। পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা নিজের নও, কারণ মূল্য দ্বারা” অর্থাৎ খ্রিস্টের বলিদানমূলক রক্তের দ্বারা “ক্রীত হইয়াছ।” (১ করি. ৬:১৯, ২০) যেহেতু আমরা যিহোবার, তাই আমরা তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করতে বাধ্য, যেগুলো দুর্বহ নয়। (রোমীয় ১৪:৮; ১ যোহন ৫:৩) এ ছাড়াও, আমরা খ্রিস্টের দাস হয়ে উঠি। প্রাচীনকালের গৃহাধ্যক্ষের মতো আমাদেরও যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে—তবে আমাদের স্বাধীনতার সীমা রয়েছে। আমাদেরকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেভাবে দায়িত্বগুলো পালন করতে হবে। আমরা সেবার যে-বিশেষ সুযোগই উপভোগ করি না কেন, আমরা ঈশ্বর এবং খ্রিস্টের দাস।

৯. কীভাবে যিশু প্রভু এবং দাসের মধ্যে যে-সম্পর্ক রয়েছে, তা উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন?

যিশু আমাদেরকে প্রভু ও দাসের মধ্যে যে-সম্পর্ক রয়েছে, তা বুঝতে সাহায্য করেন। একবার তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে এমন একজন দাস সম্বন্ধে বলেন, যিনি সারাদিন কাজের পর বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। প্রভু কি এইরকমটা বলেন যে, “তুমি এখনই আসিয়া খাইতে বস”? না। তিনি বলেন: “আমি কি খাইব, তাহার আয়োজন কর, এবং আমি যতক্ষণ ভোজন পান করি, ততক্ষণ কোমর বাঁধিয়া আমার সেবা কর, তাহার পর তুমি ভোজন পান করিবে।” কীভাবে যিশু এই দৃষ্টান্তটা প্রয়োগ করেছিলেন? “সেই প্রকারে সমস্ত আজ্ঞা পালন করিলে পর তোমরাও বলিও আমরা অনুপযোগী দাস, যাহা করিতে বাধ্য ছিলাম, তাহাই করিলাম।”—লূক ১৭:৭-১০.

১০. কী দেখায় যে, যিহোবা তাঁকে সেবা করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন?

১০ অবশ্যই, যিহোবা তাঁকে সেবা করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন। বাইবেল আমাদেরকে আশ্বাস দেয়: “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।” (ইব্রীয় ৬:১০) যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা চান, সেই ব্যাপারে তিনি কখনো অযৌক্তিক নন। অধিকন্তু, তিনি যা চান, তা আমাদের মঙ্গলের জন্যই এবং সেগুলো কখনোই দুর্বহ নয়। তবে, যিশুর নীতিগল্প অনুযায়ী একজন দাস নিজেকে সন্তুষ্ট করেন না, নিজের আগ্রহের বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখেন না। মূল বিষয়টা হল, আমরা যখন নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করি, তখন আমরা তাঁর আগ্রহগুলোকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখা বেছে নিই। আপনি কি এর সঙ্গে একমত নন?

যিহোবা আমাদের সকলের কাছ থেকে যা চান

১১, ১২. গৃহাধ্যক্ষ হিসেবে আমাদের অবশ্যই কোন গুণ প্রদর্শন করতে হবে এবং কী এড়িয়ে চলতে হবে?

১১ দ্বিতীয় নীতিটা হল: গৃহাধ্যক্ষ হিসেবে আমরা সকলেই একই মৌলিক মান অনুসরণ করি। এটা ঠিক যে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কিছু কিছু দায়িত্ব কেবল কয়েক জন ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়। কিন্তু, অধিকাংশ দায়িত্বই সবাই পালন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, খ্রিস্টের শিষ্য এবং যিহোবার সাক্ষি হিসেবে পরস্পরকে প্রেম করার জন্য আমাদের আজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যিশু বলেছিলেন যে, প্রেম সত্য খ্রিস্টানদের শনাক্তকারী চিহ্ন। (যোহন ১৩:৩৫) কিন্তু, আমাদের প্রেম কেবল ভ্রাতৃসমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমরা সেই লোকেদের প্রতিও প্রেম দেখানোর চেষ্টা করি, যারা আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়। এটা এমন একটা বিষয়, যা আমরা সকলে করতে পারি এবং আমাদের তা করা উচিত।

১২ আমাদের কাছ থেকেও উত্তম আচরণ আশা করা হয়। আমরা এমন আচরণ এবং জীবনধারা এড়িয়ে চলতে চাই, যে-সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্যে নিন্দা করা হয়েছে। পৌল লিখেছিলেন: “যাহারা ব্যভিচারী কি প্রতিমাপূজক কি পারদারিক কি স্ত্রীবৎ আচারী কি পুঙ্গামী কি চোর কি লোভী কি মাতাল কি কটুভাষী কি পরধনগ্রাহী, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।” (১ করি. ৬:৯, ১০) এটা ঠিক যে, ঈশ্বরের ধার্মিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কিন্তু, এই ধরনের প্রচেষ্টা সার্থক আর আমাদের জন্য বিভিন্ন উপকার নিয়ে আসে যার অন্তর্ভুক্ত এমন জীবনধারা, যা উত্তম স্বাস্থ্য, অন্যদের সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক এবং ঈশ্বরের সঙ্গে এক অনুমোদনযোগ্য অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করে।—পড়ুন, যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮.

১৩, ১৪. সমস্ত খ্রিস্টানকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সেটাকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

১৩ মনে রাখবেন যে, গৃহাধ্যক্ষকে কাজও করতে হতো। আমাদেরও করতে হবে। আমাদেরকে এক মূল্যবান দান—সত্যের জ্ঞান—প্রদান করা হয়েছে। ঈশ্বর চান যেন আমরা সেই জ্ঞান অন্যদেরকে জানাই। (মথি ২৮:১৯, ২০) পৌল লিখেছিলেন: “লোকে আমাদিগকে এরূপ মনে করুক যে, আমরা খ্রীষ্টের সেবক ও ঈশ্বরের নিগূঢ়তত্ত্বরূপ ধনের অধ্যক্ষ।” (১ করি. ৪:১) পৌল উপলব্ধি করেছিলেন যে, অধ্যক্ষের এই দায়িত্বের অর্থ হল মনোযোগের সঙ্গে “নিগূঢ়তত্ত্বরূপ ধনের” প্রতি লক্ষ রাখা এবং বিশ্বস্ততার সঙ্গে তা অন্যদের প্রদান করা, যেমনটা প্রভু যিশু খ্রিস্ট নির্দেশ করেছিলেন।—১ করি. ৯:১৬.

১৪ সবচেয়ে বড়ো কথা হল, অন্যদেরকে সত্য জানানো এক প্রেমময় কাজ। অবশ্য, একেক জন খ্রিস্টানের পরিস্থিতি একেক রকম। সকলেই পরিচর্যায় একইরকম কাজ করতে পারে না। যিহোবা সেটা বোঝেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, ব্যক্তিগতভাবে আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, ততটুকু করা। এভাবে আমরা ঈশ্বর এবং আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি নিঃস্বার্থ প্রেম প্রদর্শন করি।

বিশ্বস্ত থাকার গুরুত্ব

১৫-১৭. (ক) কেন একজন অধ্যক্ষের পক্ষে বিশ্বস্ত হওয়া অপরিহার্য? (খ) কীভাবে যিশু অবিশ্বস্ততার পরিণতি উদাহরণের সাহায্যে তুলে ধরেছিলেন?

১৫ তৃতীয় নীতিটা, যা আগের দুটো নীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা হল: আমাদের অবশ্যই বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য হতে হবে। একজন গৃহাধ্যক্ষের হয়তো অনেক চমৎকার গুণ এবং ক্ষমতা থাকতে পারে কিন্তু এগুলোর সবই বৃথা হয়ে যাবে যদি তিনি দায়িত্বজ্ঞানহীন হন অথবা তার প্রভুর প্রতি অনুগত না হন। একজন কার্যকারী এবং সফল গৃহাধ্যক্ষ হওয়ার জন্য বিশ্বস্ততা এক অপরিহার্য বিষয়। মনে করে দেখুন যে, পৌল লিখেছিলেন: “ধনাধ্যক্ষের এই গুণ চাই, যেন তাহাকে বিশ্বস্ত দেখিতে পাওয়া যায়।”—১ করি. ৪:২.

১৬ আমরা যদি বিশ্বস্ত থাকি, তাহলে আমরা যে পুরস্কৃত হব, তা একেবারে নিশ্চিত। আমরা যদি বিশ্বস্ত না থাকি, তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। এই নীতিটা আমরা যিশুর তালন্তের দৃষ্টান্তে দেখতে পাই। যে-দাসেরা প্রভুর অর্থ দিয়ে বিশ্বস্ততার সঙ্গে ‘ব্যবসা করিয়াছিল,’ তাদেরকে প্রশংসা করা হয়েছিল এবং তারা প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করেছিল। যে-দাস প্রভুর কাছ থেকে আস্থা সহকারে প্রাপ্ত বিষয় নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে কাজ করেছিল, তাকে “দুষ্ট অলস” এবং “অনুপযোগী” দাস হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। তাকে যে-তালন্ত দেওয়া হয়েছিল, তা তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং তাকে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।—পড়ুন, মথি ২৫:১৪-১৮, ২৩, ২৬, ২৮-৩০.

১৭ আরেক বার, যিশু অবিশ্বস্ততার পরিণতি সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “এক জন ধনবান্‌ লোক ছিল, তাহার এক দেওয়ান ছিল; সে স্বামীর ধন অপচয় করিতেছে বলিয়া তাহার নিকটে অপবাদিত হইল। পরে সে তাহাকে ডাকিয়া কহিল, তোমার বিষয়ে এ কি কথা শুনিতেছি? তোমার দেওয়ানী-পদের হিসাব দেও, কেননা তুমি আর দেওয়ান থাকিতে পারিবে না।” (লূক ১৬:১, ২) যেহেতু সেই দেওয়ান বা গৃহাধ্যক্ষ তার প্রভুর সম্পদের অপচয় করেছিলেন, তাই প্রভু তাকে বহিষ্কার করেছিলেন। আমাদের জন্য কতই না জোরালো এক শিক্ষা! আমাদের কাছ থেকে যা চাওয়া হয়, সেই ব্যাপারে নিশ্চিতভাবেই আমরা কখনো অবিশ্বস্ত হতে চাই না।

নিজেদেরকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা—এটা কি বিজ্ঞতার কাজ?

১৮. কেন আমাদের নিজেদেরকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়?

১৮ আমরা প্রত্যেকে জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমার গৃহাধ্যক্ষ পদকে আমি কীভাবে দেখি?’ সেই সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে, যখন আমরা নিজেদেরকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করি। বাইবেল আমাদের পরামর্শ দেয়: “প্রত্যেক জন নিজ নিজ কর্ম্মের পরীক্ষা করুক, তাহা হইলে সে কেবল আপনার কাছে শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবে, অপরের কাছে নয়।” (গালা. ৬:৪) আমাদের কাজের সঙ্গে অন্যদের কাজের তুলনা করার পরিবর্তে ব্যক্তিগতভাবে আমরা কী করতে পারি, সেই বিষয়ের ওপর আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা উচিত। এটা কেবল আমাদেরকে গর্বিত হওয়া থেকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে নিরুৎসাহিত হওয়া থেকেও রক্ষা করবে। নিজেদেরকে মূল্যায়ন করার সময় আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। হতে পারে যে, খারাপ স্বাস্থ্য, বার্ধক্য অথবা বিভিন্ন দায়িত্বের কারণে আমরা আগে যা করতে পারতাম, সেগুলোর সবই এখন করতে পারি না। অন্যদিকে, এখন আমরা হয়তো যা করছি, তার চেয়েও বেশি করতে সমর্থ হতে পারি। যদি তা-ই হয়, তাহলে আমরা নিজেদের কাজকে আরও বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি না কেন?

১৯. আমরা যদি নির্দিষ্ট কোনো বিশেষ সুযোগ না পাই, তাহলে কেন আমাদের হতাশ হয়ে পড়া উচিত নয়?

১৯ আরেকটা বিবেচ্য বিষয় হল, আমাদের কোন ধরনের দায়িত্ব রয়েছে অথবা আমরা কোন ধরনের দায়িত্বের জন্য আকাঙ্ক্ষা করি। উদাহরণস্বরূপ, একজন ভাই হয়তো মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করার অথবা সম্মেলনের বিভিন্ন দায়িত্বে নিযুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতে পারেন। এই ধরনের বিশেষ সুযোগের জন্য যোগ্য হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রম করা উত্তম কিন্তু আমরা যে-সময়ে সেগুলো পাব বলে আশা করি, সেই সময়েই যদি প্রদান করা না হয়, তখন আমাদের হতাশ হয়ে পড়া উচিত নয়। আমরা সহজেই বুঝতে পারি না এমন কারণগুলোর জন্য কিছু বিশেষ সুযোগ হয়তো আমরা যখন পাব বলে আশা করি, তার চেয়ে অনেক পরে প্রদান করা হয়। মনে করে দেখুন যে, ইস্রায়েলীয়দেরকে মিশর থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য মোশিকে প্রস্তুত বলে মনে হয়েছিল কিন্তু তা করার জন্য তাকে ৪০ বছর ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এটা তাকে সেই গুণগুলো গড়ে তোলার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিয়েছিল, যেগুলো শক্তগ্রীব ও বিদ্রোহী লোকেদেরকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল।—প্রেরিত ৭:২২-২৫, ৩০-৩৪.

২০. যোনাথনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?

২০ মাঝে মাঝে নির্দিষ্ট কোন বিশেষ সুযোগ হয়তো আমাদের সকলকে দেওয়া হয় না। যোনাথনের বেলায় এমনটা হয়েছিল। তিনি শৌলের পুত্র ছিলেন আর তাই সমস্ত ইস্রায়েলের ওপর তারই রাজা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ঈশ্বর আরও অল্পবয়সি একজন ব্যক্তি দায়ূদকে রাজা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এটা জেনে যোনাথন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি তা মেনে নিয়েছিলেন এবং নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও দায়ূদকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি দায়ূদকে বলেছিলেন: “তুমি ইস্রায়েলের উপরে রাজা হইবে, এবং আমি তোমার দ্বিতীয় হইব।” (১ শমূ. ২৩:১৭) আপনি কি মূল বিষয়টা দেখতে পাচ্ছেন? যোনাথন তার পরিস্থিতি মেনে নিয়েছিলেন এবং তার বাবার মতো তিনি দায়ূদকে হিংসা করেননি। অন্যদেরকে যা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে, তা নিয়ে ঈর্ষান্বিত হওয়ার পরিবর্তে আমরা সকলে আমাদের যে-দায়িত্বগুলো রয়েছে, সেগুলো পালন করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারি। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, নতুন জগতে যিহোবা দেখবেন যেন তাঁর সমস্ত দাসের উপযুক্ত আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়।

২১. আমাদের গৃহাধ্যক্ষের পদকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

২১ আসুন আমরা এই বিষয়টা মনে রাখি যে, নির্ভরযোগ্য গৃহাধ্যক্ষ হিসেবে আমরা এমন নির্মম দাসত্ব সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করি না, যেখানে পীড়ন এবং কান্না জড়িত রয়েছে। বরং এর একেবারে বিপরীত বিষয়টা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করি। আমরা যথেষ্ট মর্যাদাপূর্ণ পদ লাভ করেছি, কারণ আমাদেরকে আস্থা সহকারে এই বিধিব্যবস্থার শেষকালে সুসমাচার সম্বন্ধে ঘোষণা করার অদ্বিতীয় কাজ দেওয়া হয়েছে। এই কাজ করার সময় কীভাবে আমরা আমাদের দায়িত্বগুলো পালন করব, সেই ব্যাপারে প্রচুর স্বাধীনতা উপভোগ করি। তাই, আসুন আমরা বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষ হয়ে উঠি। আর আমরা যেন সমস্ত নিখিলবিশ্বের সর্বপ্রধান ব্যক্তির সেবা করার যে-বিশেষ সুযোগ পেয়েছি, সেটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করি।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমাদেরকে যা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে, আসুন আমরা তা বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করি