সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

সত্য জানার আগে, আমার স্ত্রী এবং আমি একটা বাচ্চা নেওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতির অবলম্বন করেছিলাম। আমাদের সবগুলো নিষিক্ত ডিম্বাণু (ভ্রূণ) ব্যবহার করা হয়নি; কিছু কিছু ভ্রূণ হিমায়িত এবং সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এগুলো কি সংরক্ষণ করতেই হবে, নাকি এগুলো নষ্ট করে ফেলা যেতে পারে?

▪ এটা হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক বিষয়গুলোর মধ্যে মাত্র একটা, যে-বিষয়ে দম্পতিদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যদি তারা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতি বেছে নেয়। প্রত্যেক দম্পতি কী করবে সেই বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্তের জন্য যিহোবার কাছে দায়বদ্ধ। তা সত্ত্বেও, প্রজননের ক্ষেত্রে সাহায্যকারী এই প্রযুক্তি সম্বন্ধে ধারণালাভ করা সাহায্য করতে পারে।

১৯৭৮ সালে ইংল্যান্ডের একজন মহিলা টেস্ট টিউব বেবি নামে পরিচিত এক পদ্ধতিতে প্রথম গর্ভধারণ করেন। তিনি গর্ভধারণ করায় সক্ষম ছিলেন না কারণ জরায়ুর নালী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার ডিম্বাণু শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হতে পারত না। চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার ডিম্বাশয় থেকে একটা পরিণত ডিম্বাণু বের করে এনে একটা কাচের পাত্রে রাখে এবং এটাকে তার স্বামীর শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত করে। এর ফলে যে-ভ্রূণের জন্ম হয়, সেটিকে অনুকূল পরিবেশে বেড়ে উঠতে দেওয়া হয় এবং এরপর সেই মহিলার গর্ভে স্থাপন করা হয়। এক সময় তার একটি মেয়ে শিশু জন্ম নেয়। এই পদ্ধতি এবং এর বিভিন্ন রূপকে ইন ভিট্রো (গ্লাসের ভিতর) ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ বলা হয়।

বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতির বিস্তারিত বিষয়গুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকলেও, সাধারণত আইভিএফ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো এইরকম: স্ত্রীকে কয়েক সপ্তাহ ধরে শক্তিশালী প্রজননক্ষম ঔষধ প্রদান করা হয়, যা তার ডিম্বাশয়কে অসংখ্য ডিম্বাণু তৈরি করার জন্য উদ্দীপিত করে তোলে। নতুন শুক্রাণু গ্রহণের জন্য স্বামীকে হয়তো হস্তমৈথুন করতে বলা হয়। ডিম্বাণু আর পরিশোধিত শুক্রাণুগুলোকে ল্যাবরেটরিতে একত্রে মিশ্রিত করা হয়। একাধিক ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে পড়তে পারে আর এর ফলে সেগুলো বিভাজিত হতে শুরু করে, যা মানব ভ্রূণে পরিণত হয়। একদিন বা তারও বেশি সময় পর, এই সদ্যগঠিত ভ্রূণগুলোর মধ্যে কোনগুলো খুঁতযুক্ত এবং কোনগুলো স্বাস্থ্যবান আর সেইসঙ্গে কোনগুলো স্থাপন করা হলে বৃদ্ধি লাভ করতে পারবে, তা সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করা হয়। সাধারণত তৃতীয় দিনের মধ্যে স্ত্রীর গর্ভের ভিতর শুধু একটা নয় বরং দুটো বা তিনটে সর্বোত্তম ভ্রূণ প্রবেশ করানো হয়, যেন গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে আরও বৃদ্ধি করা যায়। যদি একটা বা তারও বেশি ভ্রূণ স্থাপন করা হয়, তাহলে তিনি গর্ভধারণ করেন এবং আশা করা হয় যে, সঠিক সময়েই তিনি সন্তানের জন্ম দেবেন।

কিন্তু, দুর্বল অথবা এমনকী খুঁতযুক্ত ভ্রূণ-সহ অন্য যে-ভ্রূণগুলো গর্ভে স্থাপন করা হয়নি, সেগুলো সম্বন্ধে কী বলা যায়? যদি এমনি এমনি রেখে দেওয়া হয়, তাহলে অতিরিক্ত ভ্রূণগুলো খুব শীঘ্র নষ্ট হয়ে যাবে। নষ্ট হওয়ার আগেই অতিরিক্ত ভ্রূণগুলোকে তরল নাইট্রোজেনের মধ্যে হিমায়িত করা যেতে পারে। কেন? যদি আইভিএফ করার প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহলে সংরক্ষিত ভ্রূণগুলো থেকে কয়েকটা নিয়ে কম খরচে আবারও মায়ের গর্ভে স্থাপন করা যেতে পারে। কিন্তু এটা নৈতিকতার বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে। যে-দম্পতি ওপরের প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেছে, তাদের মতো অনেকেই হিমায়িত ভ্রূণগুলো নিয়ে কী করবে, তা নিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যায়। তারা আর কোনো সন্তান না-ও চাইতে পারে। তাদের বয়স অথবা আর্থিক অবস্থা আরও সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তারা হয়তো একই সময়ে একাধিক গর্ভধারণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঝুঁকিগুলো নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়তে পারে। * এ ছাড়া, একজন অথবা উভয় সাথির মৃত্যু কিংবা পুনর্বিবাহ হয়তো পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে। হ্যাঁ, বিভিন্ন উদ্‌বিগ্নতা রয়েছে আর তাই কিছু কিছু দম্পতি ভ্রূণ সংরক্ষণ করে রাখার জন্য বছরের পর বছর অর্থ প্রদান করতে থাকে।

২০০৮ সালে একজন প্রধান ভ্রূণ বিশেষজ্ঞ দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস্‌ পত্রিকায় উল্লেখ করেছিলেন যে, অনেক বাবা-মা তাদের অতিরিক্ত ভ্রূণ নিয়ে কী করবে, তা ভেবে একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। প্রবন্ধটি বলেছিল: “সারা দেশের বিভিন্ন ক্লিনিকে অন্ততপক্ষে ৪,০০,০০০ ভ্রূণ হিমায়িত অবস্থায় রয়েছে এবং প্রতিদিনই আরও নতুন নতুন যোগ হচ্ছে . . . যদি সঠিকভাবে হিমায়িত করা হয়, তাহলে ভ্রূণগুলো এক দশক বা তার চেয়েও বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরিয়ে আনার পর সেগুলোর মধ্যে সবগুলোই যে বেঁচে থাকে এমন নয়।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) দ্বিতীয় বিষয়টা খ্রিস্টানদেরকে একটু সময় নিয়ে আরেক বার বিবেচনা করার কারণ জোগায়। কেন?

যে-খ্রিস্টান দম্পতিরা আইভিএফ পদ্ধতি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের মুখোমুখি হয়, তারা হয়তো ভিন্ন একটা চিকিৎসা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সৃষ্ট সম্ভাব্য পরিস্থিতিগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারে। একজন খ্রিস্টানের হয়তো মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছেন এমন কোনো প্রিয়জনকে নিয়ে কী করবেন, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে, যাকে কৃত্রিম উপায়ে যেমন, তার শ্বাসপ্রশ্বাস সচল রাখার জন্য ভেনটিলেটর দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। সত্য খ্রিস্টানরা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে অবহেলা করাকে সমর্থন করে না; যাত্রাপুস্তক ২০:১৩ এবং গীতসংহিতা ৩৬:৯ পদের সঙ্গে মিল রেখে তারা জীবনের প্রতি এক উচ্চ সম্মান বজায় রাখে। ১৯৭৪ সালের ৮ মে সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকা উল্লেখ করেছিল: “বাইবেলের নীতি অনুযায়ী জীবনযাপন করতে আকাঙ্ক্ষী এমন ব্যক্তিরা জীবনের পবিত্রতার প্রতি ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করায়, নিজেদের বিবেকের প্রতি সম্মানের কারণে এবং সরকারের আইনের প্রতি বশ্যতা দেখিয়ে কখনোই যন্ত্রণাহীন স্বেচ্ছা-মৃত্যু বেছে নেবে না,” নিশ্চিতভাবেই এটা হচ্ছে একজন রোগীর জীবনকে শেষ করে দেওয়া। তা সত্ত্বেও, কিছু কিছু পরিস্থিতিতে কোনো প্রিয়জনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জীবনরক্ষাকারী কৃত্রিম প্রযুক্তিই হচ্ছে একমাত্র উপায়। এই ক্ষেত্রে, পরিবারের সদস্যদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা এই কৃত্রিম ব্যবস্থাকে চালিয়ে যাবে কি না।

এটা ঠিক যে, এই পরিস্থিতি এবং যে-দম্পতিরা আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের ভ্রূণগুলোকে সংরক্ষণ করে রেখেছে, তাদের পরিস্থিতি একইরকম নয়। কিন্তু তাদেরকে একটা যে-বাছাই দেওয়া হতে পারে তা হল, ভ্রূণগুলোকে নাইট্রোজেন ফ্রিজার থেকে বের করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরিয়ে আনা। ফ্রিজারের কৃত্রিম পরিবেশ ছাড়া ভ্রূণগুলোর অবস্থা খুব শীঘ্র এমন এক পর্যায়ে চলে আসবে, যখন সেগুলো আর টিকে থাকতে সক্ষম হবে না। এই ক্ষেত্রে দম্পতিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা সেটা অনুমোদন করবে কি না।—গালা. ৬:৭.

কোন দম্পতি গর্ভধারণ করার এবং একটা সন্তান লাভের আশায় আইভিএফ পদ্ধতি গ্রহণ করার পর, তাদের হিমায়িত ভ্রূণগুলোকে সংরক্ষণ করে রাখার ব্যয় বহন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে অথবা ভবিষ্যতে আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তানলাভের প্রচেষ্টায় সেগুলো ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু, অন্য কোনো দম্পতি হয়তো এই বিষয়টা চিন্তা করে তাদের হিমায়িত ভ্রূণগুলো সংরক্ষণ করা বন্ধ করে দিতে পারে যে, এগুলো শুধু কৃত্রিম উপায়েই বেঁচে থাকতে সক্ষম। যে-খ্রিস্টানরা এই সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়, তারা তাদের বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেককে যেভাবে ব্যবহার করে, সেটার জন্য ঈশ্বরের কাছে দায়বদ্ধ। তাদের আকাঙ্ক্ষা হওয়া উচিত অন্যদের বিবেককে উপেক্ষা না করে এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখা।—১ তীম. ১:১৯.

এই ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ লক্ষ করেছিলেন যে, অধিকাংশ দম্পতি “তাদের [হিমায়িত] ভ্রূণগুলোকে নিয়ে যা করবে, সেই বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্তের দায় নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত এবং উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়ে।” তিনি উপসংহারে বলেছিলেন: “অনেক দম্পতি মনে করে যে, আসলে কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নেই।”

স্পষ্টতই, যে-সমস্ত সত্য খ্রিস্টান আইভিএফ পদ্ধতি নিয়ে এমনকী চিন্তাও করছে, তাদের সেই পদ্ধতির সঙ্গে জড়িত সমস্ত সম্ভাব্য গুরুতর দিকগুলো মূল্যায়ন করে দেখা উচিত। বাইবেল পরামর্শ দেয়: “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়, কিন্তু অবোধ লোকেরা অগ্রে গিয়া দণ্ড পায়।”—হিতো. ২২:৩.

বাইবেল অধ্যয়ন করছে এমন এক অবিবাহিত যুগল বাপ্তিস্ম নিতে চায়, কিন্তু তারা তাদের বন্ধনকে বৈধ করতে পারছে না কারণ সেই পুরুষ ওই দেশে অবৈধভাবে বাস করছেন। সরকার অবৈধভাবে বসবাসকারী একজন ব্যক্তিকে বিয়ে করার অনুমতি দেয় না। তারা কি বিশ্বস্ততার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে এবং এরপর বাপ্তিস্ম নিতে পারে?

▪ সেটা একটা সমাধান বলে মনে হতে পারে কিন্তু তাদের সমস্যা সমাধান করার জন্য এটা কোনো শাস্ত্রীয় উপায় নয়। এর কারণটা উপলব্ধি করার জন্য আসুন আমরা প্রথমে বিশ্বস্ততার অঙ্গীকারনামার উদ্দেশ্য কী, কেন তা তৈরি করা হয়েছে এবং কোন ক্ষেত্রে এটা কার্যকর হতে পারে, তা বিবেচনা করে দেখি।

এই দলিল হল সাক্ষিদের সম্মুখে এমন এক যুগলের স্বাক্ষর করা একটা লিখিত বিবৃতি, যারা নীচে উল্লেখিত কারণগুলোর জন্য বিয়ে করতে পারছে না। এই দলিলে তারা একে অন্যের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার এবং যদি সম্ভব হয়, তাহলে তাদের বন্ধনকে বৈধ করার জন্য অঙ্গীকার করে থাকে। মণ্ডলী তাদেরকে এমনভাবে দেখবে, যেন ঈশ্বর এবং মানুষের সামনে তারা একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার প্রমাণ রেখেছে আর এর ফলে তাদের বন্ধনকে এমনভাবে বিবেচনা করা হবে, যেন বেসামরিক কর্তৃপক্ষই তা কার্যকর করেছে।

কেন এবং কখন বিশ্বস্ততার অঙ্গীকারনামা ব্যবহার করা হয়? যিহোবা বিয়ের প্রবর্তন করেছিলেন এবং তিনি এটাকে উচ্চ সম্মান দিয়ে থাকেন। তাঁর পুত্র বলেছিলেন: “ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।” (মথি ১৯:৫, ৬; আদি. ২:২২-২৪) যিশু আরও বলেছিলেন: “ব্যভিচার [যৌন অনৈতিকতার] দোষ ব্যতিরেকে যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে।” (মথি ১৯:৯) তাই, “ব্যভিচার,” অন্য কথায় যৌন অনৈতিকতাই হল বিবাহবিচ্ছেদের একমাত্র ভিত্তি, যা শাস্ত্রীয়ভাবে একটা বিয়ের সমাপ্তি ঘটাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন পুরুষ যদি বিয়ের বাইরে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, তাহলে নির্দোষ স্ত্রী তার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করবেন কি না, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর যদি সেই স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ করেন, তাহলে তিনি অন্য কাউকে বিয়ে করার ব্যাপারে স্বাধীন।

কিন্তু, কোনো কোনো দেশে, বিশেষভাবে অতীতে প্রভাবশালী গির্জা বাইবেলের এই স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেয়নি। এর বিপরীতে, এই গির্জা শিক্ষা দিয়েছিল যে, কোনো কারণেই বিবাহবিচ্ছেদকে অনুমোদন করা যেতে পারে না। তাই, কিছু কিছু জায়গায়, যেখানে গির্জার অনেক জোরালো প্রভাব ছিল, সেখানে দেওয়ানি আইন অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না, এমনকী যিশুর বলা উপযুক্ত ভিত্তির ওপর নির্ভর করেও বিবাহবিচ্ছেদ করা যেত না। অন্যান্য দেশে বিবাহবিচ্ছেদের ব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু এর প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ, জটিল এবং কঠিন। বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার জন্য হয়তো অনেক বছর লেগে যেতে পারে। এটা এমন যেন গির্জা অথবা সরকার সেই বিষয়টাকে “নিবারণ” করছে, যেটা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য।—প্রেরিত ১১:১৭.

উদাহরণস্বরূপ, এক দম্পতি হয়তো এমন একটা দেশে বাস করে, যেখানে বিবাহবিচ্ছেদ করা অসম্ভব বা এর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা অত্যন্ত কঠিন, হতে পারে তা কার্যকর হতে কয়েক বছর লেগে যায়। যদি তারা আইনগতভাবে বৈধ একটা বিয়েকে শেষ করার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা করে এবং যদি তারা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বিয়ে করার জন্য যোগ্য হয়, তাহলে তারা বিশ্বস্ততার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে পারে। এই অনুমোদন হল খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর এমন এক সদয় ব্যবস্থা, যা এই ধরনের দেশগুলোতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, অধিকাংশ দেশেই, যেখানে বিবাহবিচ্ছেদ করা সম্ভব, সেখানে এই ব্যবস্থা ব্যবহার করা যাবে না, এমনকী সেই প্রক্রিয়া যদি বেশ ব্যয়বহুল বা জটিলও হয়।

বিশ্বস্ততার অঙ্গীকারনামার উদ্দেশ্য না বোঝার কারণে, বিবাহবিচ্ছেদ করার সুযোগ রয়েছে এমন জায়গায় বসবাসকারী কিছু ব্যক্তি যেকোনো ধরনের ঝামেলা বা অসুবিধা এড়িয়ে চলার জন্য সেই দলিলে স্বাক্ষর করার ব্যাপারে অনুরোধ করে থাকে।

প্রশ্নে উল্লেখিত পরিস্থিতির পুরুষ ও নারী, যারা একসঙ্গে অনৈতিকভাবে বসবাস করছে, তারা বিয়ে করতে চায়। উভয়েই শাস্ত্রীয়ভাবে স্বাধীন; তাদের কেউই পূর্বের সঙ্গীর কাছে আবদ্ধ নয়। কিন্তু, সেই পুরুষ ওই দেশে বৈধভাবে বাস করছেন না এবং সরকার অবৈধভাবে বসবাসকারী একজন ব্যক্তিকে বিয়ে করার অনুমতি দেবে না। (অনেক দেশে কর্তৃপক্ষ বিয়ের অনুমতি দিয়ে থাকে, এমনকী এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ যদি সেই দেশে আইনগতভাবে বৈধ না-ও থাকে।) আলোচ্য পরিস্থিতিতে, সেই দেশে বিবাহবিচ্ছেদের ব্যবস্থা রয়েছে। তাই, সেখানে বিশ্বস্ততার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করা ঐচ্ছিক কোনো বিষয় নয়। এটা এমন পরিস্থিতি নয়, যেখানে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ করার প্রয়োজন রয়েছে এবং দেশের আইন অনুযায়ী তারা তা করতেও পারবে না। তারা উভয়েই বিয়ে করার ব্যাপারে স্বাধীন। কিন্তু, সেই পুরুষ যেহেতু ওই দেশে অবৈধভাবে বাস করছেন, তাই কীভাবে তারা বিয়ে করতে পারে? তাদেরকে হয়তো অন্য একটা দেশে যেতে হতে পারে, যেখানে তার বৈধতা নিয়ে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবে না। অথবা তারা এখন যে-দেশে বাস করছে, সেই দেশে থেকেই তাদের জন্য বিয়ে করা সম্ভব হতে পারে, যদি সেই পুরুষ সেখানে বৈধ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন।

হ্যাঁ, সেই যুগল ঈশ্বরের মান এবং কৈসরের আইনের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা শুরু করতে পারে। (মার্ক ১২:১৭; রোমীয় ১৩:১) আশা করা হয় যে, তারা এটা করবে। এরপর, তারা বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে পারে।—ইব্রীয় ১৩:৪.

[পাদটীকা]

^ যদি বাড়ন্ত ভ্রূণটির কোনো অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পায় বা একাধিক ভ্রূণ স্থাপন করা হয়, তাহলে? নিশ্চিতভাবেই, কোনো গর্ভাবস্থাকে শেষ করে ফেলা হবে গর্ভপাত। আইভিএফ করা হলে একটা যে-স্বাভাবিক বিষয় ঘটে থাকে, তা হল একই সময়ে একাধিক (যমজ, তিনটে বা তারও বেশি বাচ্চা) গর্ভধারণ করা, যা কিনা অপরিণত প্রসব এবং গর্ভকালীন রক্তক্ষরণের মতো বিষয়গুলোর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। একজন নারী, যিনি একই সময়ে একাধিক গর্ভধারণ করে থাকেন, তাকে হয়তো “বাছাই করে ভ্রূণ অপসারণ” করার জন্য জোর করা হতে পারে আর এর জন্য তাকে এক বা একাধিক ভ্রূণ নষ্ট করতে হতে পারে। নিশ্চিতভাবেই এটা গর্ভপাত, যা হত্যা করার সমান।—যাত্রা. ২১:২২, ২৩, NW; গীত. ১৩৯:১৬.

[১৪ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

যে-খ্রিস্টানরা এই সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়, তারা তাদের বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেককে যেভাবে ব্যবহার করে সেটার জন্য ঈশ্বরের কাছে দায়বদ্ধ

[১৫ পৃষ্ঠার বাক্স]

অন্যান্য আইভিএফ পদ্ধতি

আইভিএফ পদ্ধতির উন্নয়ন অন্যান্য এমন পদ্ধতি ব্যবহারের পথ খুলে দিয়েছে, যেগুলো স্পষ্টতই শাস্ত্রে উল্লেখিত ঈশ্বরের চিন্তাধারার সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন নারীর ডিম্বাণু এমন একজন পুরুষের শুক্রাণুর দ্বারা নিষিক্ত করা হতে পারে, যিনি তার স্বামী নন। সেই নারী এর ফলে সৃষ্ট ভ্রুণকে তার গর্ভে স্থাপন করার বিষয়টা অনুমোদন করতে পারেন। (মাঝে মাঝে সমকামী নারী যুগলরা এই পদ্ধতি বেছে নেয়।) অথবা একজন স্বামীর শুক্রাণু তার স্ত্রী নয় এমন একজন নারীর ডিম্বাণু নিষিক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। এর ফলে সৃষ্ট ভ্রুণকে সেই স্বামীর স্ত্রী হয়তো তার গর্ভে স্থাপন করার বিষয়টা অনুমোদন করতে পারেন।

অন্য একটা পরিস্থিতিকে কেউ কেউ “ভ্রুণ দত্তক নেওয়া” হিসেবে অভিহিত করে, যে-ক্ষেত্রে একজন স্ত্রীর গর্ভে এমন ভ্রুণকে প্রবেশ করানো হয়, যে-ভ্রুণের ডিম্বাণু তার নিজের নয় এবং শুক্রাণুও তার স্বামীর নয়। আরেকটা পরিস্থিতিতে একটা বিবাহিত দম্পতির কাছ থেকে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু সংগ্রহ করে গর্ভের বাইরে আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে নিষিক্ত করা হয়। এরপর, সৃষ্ট ভ্রূণকে একজন বিকল্প মায়ের অর্থাৎ অন্য একজন নারীর গর্ভে স্থাপন করা হয়, যিনি সেই দম্পতির জন্য গর্ভধারণ করেন এবং সন্তান জন্ম দেন। *

এই প্রজনন পদ্ধতিগুলো ঈশ্বরের দাসদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় কারণ তারা তাঁর এই নির্দেশনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে থাকে যে, “তুমি আপন স্বজাতীয়ের স্ত্রীতে গমন করিয়া আপনাকে অশুচি করিও না।” (লেবীয়. ১৮:২০, ২৯; হিতো. ৬:২৯) যখন নিষিক্তকরণের ক্ষেত্রে এমন কোনো ডিম্বাণু বা শুক্রাণু (অথবা উভয়ই) অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেগুলো বিবাহবন্ধনের বাইরের কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়, তখন বাইবেল সেটাকে পরনিয়া অর্থাৎ যৌন অনৈতিকতা বলে। এই পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে যৌনাঙ্গগুলোর এক চরম অপব্যবহার করা হয়।—মথি ৫:৩২; ১ করি. ৫:১১; ৬:৯, ১৮; ইব্রীয় ১৩:৪.

[পাদটীকা]

^ ১৯৯৩ সালের ৮ এপ্রিল সচেতন থাক! ব্রোশারের ২৭-২৮ পৃষ্ঠায় বিকল্প মাতৃত্ব সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।