সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“প্রবাসী” ব্যক্তিরা সত্য উপাসনায় একতাবদ্ধ

“প্রবাসী” ব্যক্তিরা সত্য উপাসনায় একতাবদ্ধ

“প্রবাসী” ব্যক্তিরা সত্য উপাসনায় একতাবদ্ধ

“বিজাতি-সন্তানেরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রের কৃষক ও তোমাদের দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পাইটকারী হইবে। কিন্তু তোমরা সদাপ্রভুর যাজক বলিয়া আখ্যাত হইবে।”—যিশা. ৬১:৫, ৬.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কিছু লোক বিদেশিদেরকে কোন দৃষ্টিতে দেখে কিন্তু বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে ভিন্ন?

সমস্ত জাতির লোকেদেরকে কোন আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে?

কোন অর্থে আমরা ইতিমধ্যেই এমন এক জগৎ উপভোগ করি, যেখানে বিদেশি নেই?

১. কিছু লোক বিদেশিদেরকে কোন দৃষ্টিতে দেখে কিন্তু কেন তা ন্যায্য নয়?

 আগের প্রবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘বিজাতি’ বা বিদেশি শব্দটিকে লোকেরা তুচ্ছ অর্থে ব্যবহার করে, যা অবজ্ঞা আর এমনকী সরাসরি ঘৃণাকে নির্দেশ করে। অন্য জাতির লোকেদেরকে নিজেদের দেশের লোকেদের চেয়ে হেয় বলে গণ্য করা অসম্মানজনক। অধিকন্তু, এই ধরনের মনোভাব বাস্তব বিষয়গুলো উপেক্ষা করাকে নির্দেশ করে। মানবকুলের বিভিন্ন জাতি (ইংরেজি) নামক প্রকাশনাটি বলে: “মানবকুলের বিভিন্ন জাতি সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, তা হল, তারা—ভ্রাতা।” যদিও ভ্রাতারা প্রায়ই বেশ আলাদা হয়ে থাকে কিন্তু তারপরও তারা ভ্রাতা।

২, ৩. বিদেশিদের প্রতি যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি কী?

অবশ্য, আমরা যে-দেশেই থাকি না কেন, বিদেশিরা আমাদের মধ্যে বাস করছে। প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের বেলায়ও এটা সত্য ছিল, যারা ব্যবস্থা চুক্তির মাধ্যমে যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে এক বিশেষ সম্পর্কে প্রবেশ করেছিল। ন-ইস্রায়েলীয়দের অধিকার কিছুটা সীমিত ছিল কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের বলা হয়েছিল যেন তারা তাদের সঙ্গে সম্মান সহকারে এবং ন্যায্যভাবে আচরণ করে। আমাদের অনুসরণের জন্য কতই না চমৎকার এক উদাহরণ! সত্য খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনো পক্ষপাতিত্ব অথবা ভেদাভেদের স্থান নেই। কেন? প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “আমি সত্যই বুঝিলাম, ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।”—প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫.

প্রাচীন ইস্রায়েলের বিদেশিরা জন্মগত ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা থেকে উপকার লাভ করত। এটা সেই বিষয়ে যিহোবার চিন্তাকে প্রতিফলিত করেছিল, যা কয়েক বছর পর প্রেরিত পৌলের দ্বারা সেই সময় প্রকাশিত হয়েছিল, যখন তিনি যিহোবা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “ঈশ্বর কি কেবল যিহূদীদের ঈশ্বর, পরজাতীয়দেরও কি নহেন? হাঁ, পরজাতীয়দেরও ঈশ্বর।”—রোমীয় ৩:২৯; যোয়েল ২:৩২.

৪. কেন বলা যেতে পারে যে, ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ মধ্যে কোনো বিদেশি নেই?

নতুন চুক্তির মাধ্যমে সেই আক্ষরিক ইস্রায়েল জাতির পরিবর্তে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মণ্ডলীকে স্থাপন করা হয়েছিল, যে-জাতির সঙ্গে ঈশ্বরের এক বিশেষ সম্পর্ক থাকার কথা ছিল। তাই, এই মণ্ডলীকে ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ বলে অভিহিত করা হয়েছিল। (গালা. ৬:১৬) আর পৌলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই নতুন জাতির মধ্যে “গ্রীক কি যিহূদী, ছিন্নত্বক্‌ কি অচ্ছিন্নত্বক্‌, বর্ব্বর [“বিদেশি,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন], স্কুথীয়, দাস, স্বাধীন বলিয়া কিছু হইতে পারে না, কিন্তু খ্রীষ্টই সর্ব্বেসর্ব্বা।” (কল. ৩:১১) তাই, এই অর্থে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মণ্ডলীতে কোনো বিদেশি থাকার কথা ছিল না।

৫, ৬. (ক) যিশাইয় ৬১:৫, ৬ পদ সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে? (খ) যিশাইয়ের দ্বারা উল্লেখিত “সদাপ্রভুর যাজক” এবং “বিদেশি” কারা? (গ) এই দুই দলের মধ্যে কোন বিষয়ে মিল রয়েছে?

অন্যদিকে, কেউ হয়তো যিশাইয় বইয়ের ৬১ অধ্যায় সম্বন্ধে বলতে পারেন, যেখানে এমন একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী রয়েছে, যা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে পরিপূর্ণ হচ্ছে। এই অধ্যায়ের ৬ পদ সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে উল্লেখ করে, যারা “সদাপ্রভুর যাজক” হিসেবে সেবা করবে। কিন্তু, ৫ পদ সেই “বিজাতি-সন্তানের” বা বিদেশিদের সম্বন্ধে বলে, যারা সেই ‘যাজকদের’ সঙ্গে সহযোগিতা এবং কাজ করবে। এটাকে কীভাবে বোঝা যেতে পারে?

আমরা বুঝতে পারি যে, “সদাপ্রভুর যাজক” হল অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা, যারা “প্রথম পুনরুত্থানের” অংশী এবং যারা “ঈশ্বরের ও খ্রীষ্টের যাজক হইবে, এবং সেই সহস্র বৎসর তাঁহার সঙ্গে রাজত্ব করিবে।” (প্রকা. ২০:৬) এ ছাড়া, এমন অনেক অনুগত খ্রিস্টান আছে, যাদের পার্থিব আশা রয়েছে। যারা স্বর্গে সেবা করবে, তাদের সঙ্গে যদিও এরা কাজ করছে এবং ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করছে, তবুও রূপক অর্থে বললে, এরা হচ্ছে বিদেশি। তারা ‘সদাপ্রভুর যাজকদেরকে’ আনন্দের সঙ্গে সমর্থন করে এবং তাদের সঙ্গে কাজ করে এবং রূপকভাবে তাদের “কৃষক” এবং “দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পাইটকারী” হিসেবে সেবা করে। হ্যাঁ, তারা ঈশ্বরের গৌরবের জন্য আধ্যাত্মিক ফল গড়ে তোলায় সাহায্য করে, লোকেদেরকে প্রশিক্ষণ দেয় এবং সংগ্রহ করে। বাস্তবিকপক্ষে, অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এবং “আরও মেষ” সেই অকপট ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে এবং এরপর তাদেরকে প্রেমের সঙ্গে পালন করে, যারা চিরকাল ঈশ্বরের সেবা করার জন্য আকাঙ্ক্ষী।—যোহন ১০:১৬.

অব্রাহামের মতো “প্রবাসী”

৭. বর্তমানের খ্রিস্টানরা কীভাবে অব্রাহাম ও প্রাচীনকালের অন্যান্য বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের মতো?

আগের প্রবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছিল যে, সত্য খ্রিস্টানরা শয়তানের দুষ্ট জগতে বিদেশি অথবা প্রবাসীর মতো। এই অর্থে, তারা অব্রাহাম-সহ প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের মতো, যাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছিল, ‘তাহারা পৃথিবীতে বিদেশী ও প্রবাসী।’ (ইব্রীয় ১১:১৩) ভবিষ্যতের জন্য আমাদের আশা যা-ই হোক না কেন, যিহোবার সঙ্গে অব্রাহামের যে-সম্পর্ক ছিল তা উপভোগ করার বিশেষ সুযোগ আমাদেরও রয়েছে। যাকোব ব্যাখ্যা করেন যে, “‘অব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস করিলেন, এবং তাহা তাঁহার পক্ষে ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হইল,’ আর তিনি ‘ঈশ্বরের বন্ধু’ এই নাম পাইলেন।”—যাকোব ২:২৩.

৮. অব্রাহামের কাছে কোন প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল এবং এর পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে তিনি কেমন বোধ করেছিলেন?

ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, অব্রাহাম এবং তার বংশধরদের মাধ্যমে পৃথিবীর সমস্ত পরিবার—কেবল একটা জাতি নয়—আশীর্বাদ লাভ করবে। (পড়ুন, আদিপুস্তক ২২:১৫-১৮.) যদিও ঈশ্বরদত্ত এই প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা দূর ভবিষ্যতের বিষয় ছিল, তবুও অব্রাহাম সেই পরিপূর্ণতার ওপর আস্থা বজায় রেখেছিলেন। তার জীবনের অর্ধেকের চেয়েও বেশি সময় তিনি এবং তার পরিবার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। আর সেই সময়ে অব্রাহাম যিহোবার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব বজায় রেখেছিলেন।

৯, ১০ (ক) কোন কোন উপায়ে আমরা অব্রাহামের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি? (খ) আমরা অন্যদের কোন আমন্ত্রণ জানাতে পারি?

তার আশা বাস্তবে পরিণত হতে দেখার জন্য তাকে কতটা সময় অপেক্ষা করতে হবে, তা না জানা সত্ত্বেও যিহোবার প্রতি অব্রাহামের প্রেম এবং ভক্তি কখনো টলে যায়নি। তিনি তার চোখকে স্থির রেখেছিলেন, কোন জাতির মধ্যে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার চেষ্টা করেননি। (ইব্রীয় ১১:১৪, ১৫) আমাদের জন্য অব্রাহামের উদাহরণ অনুসরণ করা অর্থাৎ এক সাদাসিধে জীবনযাপন করা এবং বস্তুগত ধনসম্পদ, সামাজিক পদমর্যাদা অথবা কেরিয়ারের বিভিন্ন লক্ষ্য সম্বন্ধে অতিরিক্ত উদ্‌বিগ্ন না হওয়া কতই না বিজ্ঞতার কাজ! কেন শীঘ্র শেষ হয়ে যাবে এমন একটা বিধিব্যবস্থায় তথাকথিত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চেষ্টা করবেন? কেন ক্ষণস্থায়ী বিষয়গুলোর সঙ্গে অতিরিক্ত যুক্ত থাকবেন? অব্রাহামের মতো আমরাও আরও উত্তম কিছুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এক ধৈর্যশীল মনোভাব এবং আমাদের আশা বাস্তবে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার মনোভাব দেখানোর জন্য ইচ্ছুক।—পড়ুন, রোমীয় ৮:২৫.

১০ যিহোবা এখনও অব্রাহামের বংশের মাধ্যমে আশীর্বাদ লাভ করার জন্য সমস্ত জাতির লোকেদেরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। আর “সদাপ্রভুর যাজক” ও সেইসঙ্গে “বিদেশি” আরও মেষ পৃথিবীব্যাপী লোকেদেরকে ৬০০-টারও বেশি ভাষায় এই আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।

জাতিগত সীমানার ঊর্ধ্বে দৃষ্টি দিন

১১. শলোমন কোন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিলেন, যার মধ্যে কেবল ইস্রায়েলীয়রাই নয় বরং অন্যরাও ছিল?

১১ খ্রিস্টপূর্ব ১০২৬ সালে মন্দির উদ্‌বোধনের সময় এবং অব্রাহামের কাছে করা যিহোবার প্রতিজ্ঞার সঙ্গে মিল রেখে শলোমন উপলব্ধি করেছিলেন যে, সমস্ত জাতির লোকেরা যিহোবার প্রশংসা করায় অংশ নেবে। এক আন্তরিক প্রার্থনায় তিনি বলেছিলেন: “অধিকন্তু তোমার প্রজা ইস্রায়েল গোষ্ঠীয় নয়, এমন কোন বিদেশী যখন তোমার নামের অনুরোধে দূর দেশ হইতে আসিবে,—কারণ তাহারা তোমার মহানাম, তোমার বলবান হস্ত ও তোমার বিস্তারিত বাহুর কথা শ্রবণ করিবে;—যখন সে আসিয়া এই গৃহের অভিমুখে প্রার্থনা করিবে তখন তুমি তোমার নিবাস-স্থান স্বর্গে তাহা শুনিও; এবং সেই বিদেশী তোমার নিকটে যে কিছু প্রার্থনা করিবে, তদনুসারে করিও; যেন তোমার প্রজা ইস্রায়েলের ন্যায় তোমাকে ভয় করণার্থে পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতি তোমার নাম জ্ঞাত হয়, এবং তাহারা জানিতে পায় যে, আমার নির্ম্মিত এই গৃহের উপরে তোমারই নাম কীর্ত্তিত।”—১ রাজা. ৮:৪১-৪৩.

১২. কেন কিছু লোক যিহোবার সাক্ষিদেরকে অদ্ভুত অথবা “বিদেশি” হিসেবে দেখে থাকে?

১২ একজন বিদেশি মূলত সেই ব্যক্তি, যিনি এমন একটা দেশে বাস করেন, যা তার নিজের নয় অথবা এমন একজন ব্যক্তি, যিনি একটা সমাজের বা দলের বাইরে থেকে এসে সেখানে বাস করেন। এটা যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে ভালোভাবে বর্ণনা করে। তারা মূলত এক স্বর্গীয় সরকারের প্রতি, খ্রিস্টের অধীনে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি তাদের বশ্যতা দেখিয়ে থাকে। তাই, রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে তারা কঠোর নিরপেক্ষতা বজায় রাখে, এমনকী যদিও কিছু লোক তাদেরকে বর্তমান সমাজের বাইরে থেকে আসা অদ্ভুত ব্যক্তি হিসেবে দেখে থাকে।

১৩. (ক) কোন অর্থে “বিদেশি” শব্দের ধারণাটা প্রায়ই কেবল দৃষ্টিভঙ্গির একটা বিষয়? (খ) যিহোবার আদি উদ্দেশ্যের মধ্যে কি বিদেশিদের কোনো ধারণা অন্তর্ভুক্ত ছিল? ব্যাখ্যা করুন।

১৩ বিদেশিদেরকে প্রায়ই তাদের সংখ্যালঘু দলের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য শনাক্ত করা যায়। এটা হতে পারে, তারা যে-ভাষায় কথা বলে, সেটার জন্য, তাদের প্রথার জন্য, তাদের শারীরিক গঠনের জন্য আর এমনকী তাদের পোশাক-আশাকের ধরনের জন্য। তা সত্ত্বেও, তাদের জাতীয়তা যা-ই হোক না কেন, যে-বিষয়গুলোর জন্য অন্য সমস্ত মানুষের সঙ্গে তাদের মিল রয়েছে, সেগুলো ওইরকম যেকোনো বৈশিষ্ট্যের চেয়ে আরও তাৎপর্যপূর্ণ। তাই, প্রকৃতপক্ষে একজন বিদেশিকে কেবল এই কারণেই বিদেশি হিসেবে দেখা হয় যে, তিনি কিছু কিছু দিক দিয়ে আলাদা। আমরা যখন বাস্তব অথবা অলীক পার্থক্যগুলোর ঊর্ধ্বে দৃষ্টি দিই, তখন “বিদেশি” শব্দটি এর অর্থ অনেকটা হারিয়ে ফেলে। পৃথিবীর সকলে যদি একটা রাষ্ট্রের অথবা সরকারের অধীনে বাস করত, তাহলে রাজনৈতিক অর্থে কেউই বিদেশি হতো না। বস্তুতপক্ষে, যিহোবার আদি উদ্দেশ্য ছিল যে, সমস্ত মানবজাতি একই শাসনের—তাঁর শাসনের—অধীনে একটা পরিবার হিসেবে একতাবদ্ধ হবে। সারা পৃথিবীর সমস্ত জাতির লোকেদের পক্ষে তা কি সম্ভব হবে?

১৪, ১৫. যিহোবার সাক্ষিরা একটা দল হিসেবে কোন বিষয়টাকে উপলব্ধি করেছে?

১৪ এক স্বার্থপর ও জাতীয়তাবাদী জগতে এমন ব্যক্তিদের পাওয়া খুবই সতেজতাদায়ক, যারা জাতিগত সীমানার ঊর্ধ্বে দৃষ্টি দিতে পারে এবং দিয়ে থাকে। এটা ঠিক যে, ভেদাভেদ কাটিয়ে ওঠা কঠিন হতে পারে। সিএনএন টেলিভিশন নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা টেড টার্নার বিভিন্ন জাতির বেশ কয়েক জন মেধাবী ব্যক্তির সঙ্গে তার কাজ সম্বন্ধে এই মন্তব্য করেন: “এই লোকেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ছিল এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা। অন্য দেশ থেকে আশা সেই ব্যক্তিদেরকে আমি ‘বিদেশি’ হিসেবে নয় বরং একই গ্রহের সহনাগরিক হিসেবে দেখতে শুরু করেছিলাম। ‘বিদেশি’ শব্দটিকে আমি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেছিলাম এবং সিএনএন-এর মধ্যে এমন আইন সৃষ্টি করেছিলাম যে, সম্প্রচারের অথবা অফিসে কথাবার্তার সময় এই শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না। এর পরিবর্তে, ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে।”

১৫ সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একমাত্র যিহোবার সাক্ষিরা একটা দল হিসেবে ঈশ্বরের মতো চিন্তাভাবনা গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার মতো করে দেখার মাধ্যমে তারা মানসিকভাবে এবং আবেগগতভাবে জাতিগত সীমানা ভেঙে ফেলতে সমর্থ হয়েছে। বিভিন্ন জাতির দলের লোকেদের সঙ্গে অবিশ্বাস, সন্দেহ অথবা এমনকী সরাসরি ঘৃণা সহকারে আচরণ করার পরিবর্তে, তারা এই দলের বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং ক্ষমতাকে অপূর্ব বিষয় হিসেবে মূল্যবান বলে গণ্য করতে শিখেছে। আপনি কি এই অর্জন সম্বন্ধে এবং কীভাবে এটা অন্যদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে আপনাকে উপকৃত করতে পারে, সেই সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেছেন?

বিদেশি নেই এমন এক জগ

১৬, ১৭. প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৬ এবং দানিয়েল ২:৪৪ পদের পরিপূর্ণতা ব্যক্তিগতভাবে আপনার জন্য কোন অর্থ রাখতে পারে?

১৬ শীঘ্র বর্তমান দিনের সমস্ত জাতি ঈশ্বরের শাসনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধের সময় যিশু খ্রিস্ট এবং তাঁর স্বর্গীয় বাহিনীর সম্মুখীন হবে, যে-যুদ্ধকে “ইব্রীয় ভাষায় . . . হর্‌মাগিদোন বলে।” (প্রকা. ১৬:১৪, ১৬; ১৯:১১-১৬) ২,৫০০ বছরেরও বেশি সময় আগে, এই কথাগুলো লেখার মাধ্যমে ভাববাদী দানিয়েল সেই মানব সরকারগুলোর পরিণতি সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, যারা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের বিরোধিতা করে: “সেই রাজগণের সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না; তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”—দানি. ২:৪৪.

১৭ আপনি কি কল্পনা করে দেখেছেন যে, এর পরিপূর্ণতা ব্যক্তিগতভাবে আপনার জন্য কী অর্থ রাখবে? মানুষের সৃষ্ট জাতিগত সীমানা, যা বর্তমানে কোনো না কোনো অর্থে প্রত্যেক মানুষকে একজন বিদেশি করে তোলে, তা আর থাকবে না। সম্ভাব্য যেকোনো বাহ্যিক পার্থক্য অথবা বিদ্যমান যেকোনো শারীরিক বৈশিষ্ট্য কেবল এই বিষয়টা তুলে ধরবে যে, ঈশ্বরের সৃষ্টির মধ্যে অপূর্ব বৈচিত্র্য রয়েছে। এই ধরনের এক রোমাঞ্চকর প্রত্যাশা যেন আমাদের সকলকে সাধ্য অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরের প্রশংসা ও সম্মান করে যেতে অনুপ্রাণিত করে।

১৮. সাম্প্রতিক কোন ঘটনাগুলো দেখায় যে, “বিদেশি” শব্দটির ধারণা অতিক্রম করা যেতে পারে?

১৮ বিশ্বব্যাপী এই ধরনের পরিবর্তন যে ঘটতে পারে, তা বিশ্বাস করা কি অবাস্তব? না। বরং, এটা বিশ্বাস করা পুরোপুরি যুক্তিযুক্ত যে, এইরকমটা ঘটবে। “বিদেশি” শব্দটির ধারণা ইতিমধ্যেই যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে এর অর্থ অনেকটা হারিয়ে ফেলেছে, যারা তাদের মাঝে থাকা লোকেদের জাতীয়তার প্রতি সামান্যই মনোযোগ দিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি তাদের বেশ কয়েকটা ছোটো ছোটো শাখা অফিসকে তত্ত্বাবধানের কাজকে সহজ করে তোলার এবং রাজ্যের সুসমাচার প্রচারের কাজ সম্পন্ন করার কার্যকারিতাকে উন্নত করার জন্য একত্রিত করা হয়েছে। (মথি ২৪:১৪) এই ধরনের একত্রীকরণের সময় বৈধ চাহিদা অনুযায়ী যতদূর সম্ভব জাতিগত সীমানাকে উপেক্ষা করা হয়। এটা আরেকটা দৃশ্যত প্রমাণ যে, উপযুক্তভাবেই সিংহাসনে অধিষ্ঠিত যিহোবার শাসক হিসেবে যিশু খ্রিস্ট মানব সীমানা ভেঙে ফেলছেন এবং তিনিই শীঘ্র “জয় করিবেন” বা জয় সম্পন্ন করবেন!—প্রকা. ৬:২.

১৯. সত্যের বিশুদ্ধ ভাষা কী সম্ভবপর করেছে?

১৯ বিভিন্ন জাতি থেকে আসায় এবং সেই কারণে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলায় যিহোবার সাক্ষিরা সত্যের বিশুদ্ধ ভাষাকে সমর্থন করার জন্য প্রচেষ্টা করে। এটা এমন এক একতা সৃষ্টি করে, যা ভেঙে ফেলা অসম্ভব। (পড়ুন, সফনিয় ৩:৯.) এটা এমন এক আন্তর্জাতিক পরিবার, যা বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও, সেটা থেকে আলাদা। বর্তমানে এই একতাবদ্ধ পরিবার ভবিষ্যতে আসতে যাচ্ছে এমন একটা জগতের পূর্বাভাসমাত্র—যে-জগতে কোনো বিদেশি থাকবে না। তখন জীবিত সকলে কোনো আপত্তি ছাড়াই আনন্দের সঙ্গে পূর্বে উল্লেখিত প্রকাশনায় বলা কথাগুলোর সত্যতা স্বীকার করবে: “মানবকুলের বিভিন্ন জাতি সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, তা হল, তারা—ভ্রাতা।”—মানবকুলের বিভিন্ন জাতি।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

আপনি কি এমন একটা সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছেন, যখন মানুষের দ্বারা সৃষ্ট জাতিগত সীমানা থাকবে না এবং যখন “বিদেশি” শব্দটির ধারণা অতীতের এক বিষয় হবে?

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনিও কি অব্রাহামের মতো ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখবেন?

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার দৃষ্টিতে এদের কেউই বিদেশি নয়