“প্রবাসী” হিসেবে আমাদের অবস্থান বজায় রাখা
“প্রবাসী” হিসেবে আমাদের অবস্থান বজায় রাখা
“আমি নিবেদন করি, তোমরা বিদেশী ও প্রবাসী বলিয়া মাংসিক অভিলাষ সকল হইতে নিবৃত্ত হও।”—১ পিতর ২:১১.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
কেন অভিষিক্ত ব্যক্তিদেরকে প্রবাসী বলে অভিহিত করা যেতে পারে?
কোন অর্থে “আরও মেষ” প্রবাসী?
আপনি কীসের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করে আছেন?
১, ২. “মনোনীত” শব্দটির দ্বারা পিতর কাদেরকে নির্দেশ করেছিলেন এবং কেন তিনি তাদেরকে “প্রবাসী” বলে অভিহিত করেছিলেন?
যিশু স্বর্গারোহণ করার প্রায় ৩০ বছর পর, প্রেরিত পিতর ‘পন্ত, গালাতিয়া, কাপ্পাদকিয়া, এশিয়া ও বিথুনিয়া দেশে ছিন্নভিন্ন প্রবাসিগণের, মনোনীতদের’ উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেছিলেন। (১ পিতর ১:১) স্পষ্টতই, “মনোনীত” শব্দটির দ্বারা পিতর সেই ব্যক্তিদের নির্দেশ করেছিলেন, যারা তারই মতো পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিল এবং যাদেরকে স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করার জন্য ‘জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত পুনর্জন্ম’ প্রদান করা হয়েছিল। (পড়ুন, ১ পিতর ১:৩, ৪.) কিন্তু, কেন তিনি পরে এই মনোনীত ব্যক্তিদের “বিদেশী ও প্রবাসী” বলে অভিহিত করেছিলেন? (১ পিতর ২:১১) কেন আমাদের সকলের এই বিষয়ে আগ্রহী হওয়া উচিত, যখন বিশ্বব্যাপী কেবল অল্পসংখ্যক সাক্ষি নিজেদের অভিষিক্ত বা মনোনীত বলে দাবি করে?
২ প্রথম শতাব্দীর অভিষিক্ত ব্যক্তিদের বেলায় “প্রবাসী” শব্দটি প্রয়োগ করা উপযুক্ত ছিল। বর্তমানে বেঁচে থাকা এই দলের অবশিষ্ট ব্যক্তিদের মতো, পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্বও স্থায়ী ছিল না। প্রেরিত পৌল, যিনি স্বয়ং ‘ক্ষুদ্র মেষপালের’ একজন সদস্য ছিলেন, তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমরা স্বর্গপুরীর প্রজা; আর তথা হইতে আমরা ত্রাণকর্ত্তার, প্রভু যীশু খ্রীষ্টের, আগমন প্রতীক্ষা করিতেছি।” (লূক ১২:৩২; ফিলি. ৩:২০) “স্বর্গপুরীর প্রজা” হওয়ায়, মৃত্যুতে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা আরও উত্তম এক বিষয়ের জন্য, স্বর্গে অমর জীবনের জন্য পার্থিব জীবন ত্যাগ করবে। (পড়ুন, ফিলিপীয় ১:২১-২৩.) তাই, শয়তানের নিয়ন্ত্রণাধীন পৃথিবীতে একেবারে আক্ষরিকভাবে তাদের বেলায় “প্রবাসী” শব্দটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. “আরও মেষ” সম্বন্ধে এখন কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়?
৩ কিন্তু, “আরও মেষ” সম্বন্ধে কী বলা যায়? (যোহন ১০:১৬) তাদের কি শাস্ত্রীয়ভাবে পৃথিবীর স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুপ্রতিষ্ঠিত আশা নেই? অবশ্যই, এটা তাদের স্থায়ী বাড়ি হবে! তবে, এক অর্থে বর্তমানে তাদেরকেও প্রবাসী বলে গণ্য করা যেতে পারে। কোন অর্থে?
‘সমস্ত সৃষ্টি আর্ত্তস্বর করিতেছে’
৪. জগতের নেতারা কোন বিষয়টা রোধ করতে অপারগ?
৪ যতদিন শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থাকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে, ততদিন খ্রিস্টানরা-সহ প্রত্যেককে যিহোবার বিরুদ্ধে শয়তানের বিদ্রোহের পরিণতিগুলো ভোগ করে যেতে হবে। রোমীয় ৮:২২ পদে আমরা পড়ি: “আমরা জানি, সমস্ত সৃষ্টি এখন পর্য্যন্ত একসঙ্গে আর্ত্তস্বর করিতেছে, ও একসঙ্গে ব্যথা খাইতেছে।” জগতের নেতারা, বিজ্ঞানীরা এবং জনদরদি ব্যক্তিরা যদিও আন্তরিক, তবুও তারা তা রোধ করতে অপারগ।
৫. লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি ১৯১৪ সাল থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং কেন?
৫ উনিশ-শো চোদ্দো সাল থেকে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ঈশ্বরের রাজা খ্রিস্ট যিশুর ইচ্ছুক প্রজা হওয়ার বিষয়টা বেছে নিয়েছে। শয়তানের জগতের অংশ হওয়ার কোনো আকাঙ্ক্ষাই তাদের নেই। তারা শয়তানের জগতের সমর্থনকারী হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করে। এর পরিবর্তে, তারা তাদের জীবন ও সম্পদ ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করে এবং এই রাজ্যের জন্য সেবা করে থাকে।—রোমীয় ১৪:৭, ৮.
৬. কোন অর্থে যিহোবার সাক্ষিদের প্রবাসী বলে অভিহিত করা যেতে পারে?
৬ হ্যাঁ, যিহোবার সাক্ষিরা দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২০০-টারও বেশি জায়গায় আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে পরিচিত, তবে তারা যেখানেই বাস করুক না কেন, তারা প্রবাসীদের মতো জীবনযাপন করে। বর্তমানের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তারা পুরোপুরি এক নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখে। এমনকী এখনই তারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট নতুন জগতের প্রজা বলে গণ্য করে। এক অসিদ্ধ জগৎ ব্যবস্থায় তাদের প্রবাসী জীবনের দিন দ্রুত শেষ হয়ে আসতে দেখে তারা আনন্দিত।
৭. কীভাবে ঈশ্বরের দাসেরা স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে উঠবে এবং কোন জায়গার বাসিন্দা?
৭ খুব শীঘ্র খ্রিস্ট শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করবেন। খ্রিস্টের সিদ্ধ সরকার পৃথিবীকে পাপ ও দুঃখ থেকে মুক্ত করবে। এটা যিহোবার ন্যায্য সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে সমস্ত দৃশ্য এবং অদৃশ্য বিদ্রোহের চিহ্ন দূর করে দেবে। ঈশ্বরের অনুগত দাসেরা পার্থিব পরমদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার এক অবস্থানে থাকবে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৫.) পূর্ণ অর্থে, সৃষ্টি তখন “ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা” পাবে।—রোমীয় ৮:২১.
সত্য খ্রিস্টানদের কাছ থেকে কী আশা করা হয়?
৮, ৯. ‘মাংসিক অভিলাষ হইতে নিবৃত্ত হও,’ এই কথার দ্বারা পিতর যা বুঝিয়েছিলেন, তা ব্যাখ্যা করুন।
৮ খ্রিস্টানদের কাছ থেকে যা আশা করা হয়, তা পিতর ব্যাখ্যা করেন, যখন তিনি আরও বলেন: “প্রিয়তমেরা আমি নিবেদন করি, তোমরা বিদেশী ও প্রবাসী বলিয়া মাংসিক অভিলাষ সকল হইতে নিবৃত্ত হও, সেগুলি আত্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।” (১ পিতর ২:১১) এই উপদেশ প্রথমে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু এটা যিশুর আরও মেষের বেলায়ও সমভাবে প্রযোজ্য।
৯ কিছু অভিলাষ যখন ঈশ্বরের বিধি অনুযায়ী পূরণ করা হয়, তখন সেগুলো ভুল নয়। সত্যিই, সেগুলো জীবনে আরও আনন্দ নিয়ে আসে। উদাহরণস্বরূপ, স্বাভাবিক কিছু অভিলাষও রয়েছে যেমন, সুস্বাদু খাবার উপভোগ করা এবং পান করা, সতেজতাদায়ক কাজকর্মে অংশগ্রহণ করা ও গঠনমূলক সাহচর্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়া। এমনকী বিবাহিত সাথির সঙ্গে যৌনসম্পর্ক উপভোগ করার অভিলাষও উপযুক্ত এবং এর একটা নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। (১ করি. ৭:৩-৫) তাই, পিতর সঠিকভাবেই ‘মাংসিক অভিলাষ সকলের’ মধ্যে সীমা আরোপ করেছিলেন, যেগুলো সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন যে, সেগুলো “আত্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।” এর অর্থ আসলে কী, তা স্পষ্ট করার জন্য কিছু বাইবেল অনুবাদ এটাকে এভাবে বলে যেমন, ‘মাংসের কামনা-বাসনা’ (বাংলা জুবিলী বাইবেল) ‘পাপ-স্বভাব’ (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন)। স্পষ্টতই, যিহোবার প্রকাশিত উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে একজনের উত্তম সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন যেকোনো মাংসিক অভিলাষ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নতুবা আত্মা বা প্রাণ বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে একজন খ্রিস্টানের আশা গুরুতরভাবে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
১০. কিছু পদ্ধতি কী, যেগুলো শয়তান খ্রিস্টানদেরকে তার জগতের অংশ করে তোলার জন্য ব্যবহার করে থাকে?
১০ শয়তানের লক্ষ হল, বর্তমান বিধিব্যবস্থায় নিজেদেরকে “প্রবাসী” হিসেবে মনে করার ব্যাপারে সত্য খ্রিস্টানদের দৃঢ়সংকল্পকে দুর্বল করে দেওয়া। বস্তুবাদিতার চাকচিক্য, অনৈতিকতার প্রলোভন, বিশিষ্ট হওয়ার আকর্ষণ, স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষা এবং প্রবল জাতীয়তাবাদ—এগুলোর সবই শয়তানের ফাঁদ এবং এগুলোকে আমাদের শয়তানের ফাঁদ হিসেবেই শনাক্ত করতে হবে। এই ধরনের নেতিবাচক মাংসিক অভিলাষ থেকে বিরত থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্প বজায় রাখার মাধ্যমে আমরা স্পষ্টভাবে দেখাই যে, আমরা শয়তানের দুষ্ট জগতের অংশ হতে চাই না। আমরা এই প্রমাণ দিই যে, আমরা এখানে কেবল ক্ষণস্থায়ীভাবে বাস করছি। আমরা আসলেই যা চাই এবং যা লাভ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করছি, তা হল ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগতে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া।
উত্তম আচরণ
১১, ১২. বিদেশিদের মাঝে মাঝে কীভাবে দেখা হয় আর যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে?
১১ পিতর ১২ পদে এই কথাগুলো বলার দ্বারা “প্রবাসী” খ্রিস্টানদের কাছ থেকে যা আশা করা হয়, সেই সম্বন্ধে আরও ব্যাখ্যা করেন: “পরজাতীয়দের মধ্যে আপন আপন আচার ব্যবহার উত্তম করিয়া রাখ; তাহা হইলে তাহারা যে বিষয়ে দুষ্কর্ম্মকারী বলিয়া তোমাদের পরীবাদ করে, স্বচক্ষে তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিলে সেই বিষয়ে তত্ত্বাবধানের দিনে ঈশ্বরের গৌরব করিবে।” বিদেশিদের অর্থাৎ নিজেদের দেশে বাস করে না এমন প্রবাসীদের মাঝে মাঝে উপহাস করা হয়। তারা তাদের প্রতিবেশীদের থেকে আলাদা, শুধু এই কারণেই তাদেরকে হয়তো এমনকী দুষ্কর্মকারী বলে গণ্য করা হয়। তাদের কথাবার্তা, তাদের কাজ, তাদের পোশাক-আশাক, এমনকী তাদের চেহারা হয়তো কিছুটা আলাদা হতে পারে। কিন্তু, তারা যখন ভালো কাজ করে অর্থাৎ তাদের আচরণ যখন উত্তম হয়, তখন আলাদা হওয়ার কারণে তাদের সম্বন্ধে যে-নেতিবাচক মন্তব্যগুলো করা হয়, সেগুলো ভিত্তিহীন হয়ে পড়ে।
১২ একইভাবে, নির্দিষ্ট কিছু দিক দিয়ে সত্য খ্রিস্টানরা তাদের অনেক প্রতিবেশীদের থেকে আলাদা যেমন, কথাবার্তা অথবা আমোদপ্রমোদ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। তাদের পোশাক-আশাক এবং সাজগোজ প্রায়ই তাদেরকে সমাজের অধিকাংশ লোক থেকে আলাদা হিসেবে শনাক্ত করে। এই ধরনের পার্থক্যের কারণে মাঝে মাঝে ভুল তথ্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাদেরকে রূপক অর্থে দুষ্কর্মকারী বলে অভিযোগ করতে পরিচালিত হয়। কিন্তু, অন্য লোকেরা হয়তো তাদেরকে তাদের জীবনধারার জন্য প্রশংসা করে থাকে।
১৩, ১৪. কীভাবে প্রজ্ঞা “নিজ কর্ম্মসমূহের দ্বারা নির্দ্দোষ বলিয়া গণিত হয়”? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।
১৩ হ্যাঁ, উত্তম আচরণ অন্যায্য উপহাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। এমনকী যিশুকে, ঈশ্বরের প্রতি নিখুঁত বিশ্বস্ততা রক্ষাকারী একমাত্র মানুষকেও মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। কেউ কেউ তাঁকে “এক জন পেটুক ও মদ্যপায়ী, করগ্রাহীদের ও পাপীদের বন্ধু” বলে অভিহিত করেছিল। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে তাঁর প্রজ্ঞার কাজ এই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছিল যে, তিনি একজন অন্যায়কারী ছিলেন। “প্রজ্ঞা নিজ কর্ম্মসমূহ দ্বারা নির্দ্দোষ বলিয়া গণিত হয়,” যিশু বলেছিলেন। (মথি ১১:১৯) বর্তমানেও একই বিষয় প্রযোজ্য। উদাহরণ হিসেবে, কিছু প্রতিবেশী সেই খ্রিস্টান ভাইবোনদের অদ্ভুত বলে মনে করে, যারা জার্মানির সেল্টারের বেথেলে সেবা করছে। কিন্তু, সেখানকার মেয়র এই যুক্তি দেখিয়ে তাদের পক্ষে কথা বলেছিলেন: “যে-সাক্ষিরা সেখানে সেবা করে, তাদের জীবনযাপনের নিজস্ব মান রয়েছে কিন্তু তা কোনোভাবেই সমাজের অন্যদের জীবনকে বিঘ্নিত করে না।”
১৪ রাশিয়ার মস্কোতে বসবাসরত যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধেও সম্প্রতি একই উপসংহারে আসা হয়েছিল। তারা কয়েকটা অন্যায় কাজ করেছে বলে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১০ সালের জুন মাসে, ফ্রান্সের স্ট্রেসবার্গের ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত এই ঘোষণা দিয়েছিল: “আদালত খতিয়ে দেখেছে যে, ধর্মীয় এবং মেলামেশার স্বাধীনতা সম্বন্ধে আবেদনকারীর যে-অধিকার রয়েছে, সেটাতে [মস্কোর] হস্তক্ষেপ করা ন্যায়সঙ্গত ছিল না। স্থানীয় আদালতগুলো এই বিষয়টা দেখানোর জন্য ‘প্রাসঙ্গিক এবং পর্যাপ্ত’ কারণ দাখিল করতে পারেনি যে, আবেদনকারী দল” এইরকম বিষয়গুলোর জন্য দোষী ছিল যেমন, পরিবারের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করা, আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করা অথবা চিকিৎসা গ্রহণ করতে প্রত্যাখ্যান করা। তাই, “স্থানীয় আদালতগুলোর দ্বারা ঘোষিত শাস্তি স্থানীয় আইনের অনমনীয়তার প্রেক্ষিতে অত্যন্ত চরম এবং এর যে-বৈধ উদ্দেশ্য সাধন করার কথা ছিল, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
উপযুক্ত বশ্যতা
১৫. সারা পৃথিবীর সত্য খ্রিস্টানরা বাইবেলের কোন নীতি অনুসরণ করে?
১৫ মস্কোর—বস্তুতপক্ষে সারা পৃথিবীর—যিহোবার সাক্ষিরা খ্রিস্টানদের জন্য পিতরের দ্বারা উল্লেখিত আরেকটা চাহিদা পূরণ করে। তিনি লিখেছিলেন: “তোমরা প্রভুর নিমিত্ত মানব-সৃষ্ট সমস্ত নিয়োগের বশীভূত হও, রাজার বশীভূত হও, তিনি প্রধান।” (১ পিতর ২:১৩, ১৪) যদিও সত্য খ্রিস্টানরা দুষ্ট জগতের অংশ নয়, তবুও তারা স্বেচ্ছায় “ঈশ্বরনিযুক্ত [‘ঈশ্বরের দ্বারা আপেক্ষিক স্থানে নিযুক্ত,’ NW]” সরকারি কর্তৃপক্ষের বশীভূত হয়, যে-বিষয়ে এমনকী পৌলও তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন।—পড়ুন, রোমীয় ১৩:১, ৫-৭.
১৬, ১৭. (ক) কী প্রমাণ দেয় যে, আমরা সরকারবিরোধী নই? (খ) কিছু রাজনৈতিক নেতা কী স্বীকার করেছে?
১৬ যিহোবার সাক্ষিরা যখন বর্তমান বিধিব্যবস্থায় “প্রবাসী” হিসেবে আচরণ করে, তখন তারা যে নীরবে কোনো নাগরিক বিদ্রোহের অংশ হিসেবে তা করে এমন নয়; কিংবা তারা অন্যদের বিরোধিতাও করে না অথবা তাদের বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপও করে না, যারা নিজেদের রাজনৈতিক বা সামাজিক সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিয়ে থাকে। অন্যান্য ধর্মীয় দলের বিপরীতে যিহোবার সাক্ষিরা রাজনীতিতে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকে। তারা কখনো নাগরিক কর্তৃপক্ষের কূটনৈতিক বিষয়গুলোতে নির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করে না। তারা যে জনশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করবে অথবা গোপনে সরকারের ক্ষতিসাধন করার প্রচেষ্টা করবে, এই ধারণাটা পুরোপুরিই ভিত্তিহীন!
১৭ ‘রাজাকে সমাদর করিবার’ বিষয়ে পিতরের পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে সরকারি কর্মকর্তাদের বাধ্য থাকার মাধ্যমে খ্রিস্টানরা সেই সম্মান এবং সমাদর দেখিয়ে থাকে, যেগুলো সেই কর্মকর্তারা যে-অবস্থানে রয়েছে, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (১ পিতর ২:১৭) মাঝে মাঝে, কর্মকর্তারা স্বীকার করেছে যে, যিহোবার সাক্ষিদের নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো উপযুক্ত কারণই নেই। উদাহরণস্বরূপ, জার্মান রাজনীতিবিদ স্টিফেন রাইক, যিনি ব্র্যানডেনবার্গ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীসভার মন্ত্রী এবং পরে জার্মান সংসদের সদস্য ছিলেন, তিনি বলেছিলেন: “বন্দি শিবির এবং কারাগারগুলোতে যিহোবার সাক্ষিদের আচরণ এমন উত্তম গুণাবলি প্রদর্শন করেছিল, যেগুলো অতীতের মতো বর্তমানেও একটা গণতান্ত্রিক দেশের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য আর এগুলো হল মূলত এসএস বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের দৃঢ়তা এবং সহবন্দিদের প্রতি তাদের সমবেদনা। বিদেশি ও রাজনৈতিক মতাবলম্বী লোকেদের অথবা আদর্শবাদীদের বিরুদ্ধে আমাদের সমাজের বৃদ্ধিরত নিষ্ঠুরতার কথা বিবেচনা করলে এই উত্তম গুণগুলো আমাদের দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য এক অপরিহার্য বিষয়।”
প্রেম দেখানো
১৮. (ক) কেন আমাদের জন্য সমগ্র ভ্রাতৃসমাজকে প্রেম করা স্বাভাবিক বিষয়? (খ) কিছু ন-সাক্ষি ব্যক্তি কী মন্তব্য করেছে?
১৮ প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “ভ্রাতৃসমাজকে প্রেম কর, ঈশ্বরকে ভয় কর।” (১ পিতর ২:১৭) যিহোবার সাক্ষিদের ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করার ব্যাপারে গঠনমূলক ভয় রয়েছে আর এটা তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য তাদেরকে আরও অনুপ্রেরণা জোগায়। তারা বিশ্বব্যাপী সেই ভ্রাতৃসমাজের অংশ হিসেবে যিহোবাকে সেবা করতে পেরে আনন্দিত, যাদের একই আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। তাই, তাদের জন্য ‘ভ্রাতৃসমাজকে প্রেম করা’ খুবই স্বাভাবিক। এই ধরনের ভ্রাতৃপ্রেম, যা বর্তমান স্বার্থপর সমাজে খুবই দুর্লভ, তা দেখে ন-সাক্ষিরা কখনো কখনো অবাক হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকার ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করেন এমন একজন টুর গাইড জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ২০০৯ সালের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিদেশি অভ্যাগতদের প্রতি সাক্ষিদের প্রদর্শিত অনুরাগ এবং সহযোগিতা দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, গাইড হিসেবে তার কর্মজীবনে তিনি কখনো এইরকম বিষয় দেখেননি। পরে, যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে একজন এই মন্তব্য করেছিলেন: “আমাদের সম্বন্ধে তিনি যা-কিছু বলেছিলেন, সেগুলো অত্যন্ত বিস্ময় এবং উদ্যমের সঙ্গে প্রকাশ করেছিলেন।” আপনি যে-সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন, সেখানে সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকে কি আপনি একইরকম প্রতিক্রিয়া লাভ করেছেন, যারা যিহোবার সাক্ষিদের লক্ষ করেছিল?
১৯. আমাদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত এবং কেন?
১৯ ওপরে উল্লেখিত সমস্ত উপায়ে—এবং আরও অন্যান্য উপায়ে—যিহোবার সাক্ষিরা দেখায় যে, প্রকৃত অর্থে তারা শয়তানের বিধিব্যবস্থায় “প্রবাসী।” আর তারা এইরকমটা থাকার জন্য আনন্দ সহকারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। তাদের এই আশা অত্যন্ত জোরালো এবং সুপ্রতিষ্ঠিত যে, শীঘ্র তারা ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগতের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে উঠবে। আপনি কি এর জন্য অপেক্ষা করছেন না?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা শয়তানের জগৎকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা করছি না
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা ঈশ্বরের নতুন জগৎকে সমর্থন করছি
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাইবেলের সত্য রাশিয়ার এই পরিবারকে একতাবদ্ধ হতে সাহায্য করেছে