সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাইবেলের কুসংস্কারপূর্ণ ব্যবহার সম্বন্ধে সাবধান থাকুন

বাইবেলের কুসংস্কারপূর্ণ ব্যবহার সম্বন্ধে সাবধান থাকুন

বাইবেলের কুসংস্কারপূর্ণ ব্যবহার সম্বন্ধে সাবধান থাকুন

“ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক।” (ইব্রীয় ৪:১২) এই কথাগুলোর মাধ্যমে প্রেরিত পৌল উল্লেখ করেছিলেন যে, ঈশ্বরের বাক্যের হৃদয়কে স্পর্শ করার ও জীবনকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রয়েছে।

বাইবেলের বার্তার ক্ষমতার প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গি একসময় অস্পষ্ট হয়ে পড়েছিল, যখন প্রেরিতদের মৃত্যুর পর ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত ধর্মভ্রষ্টতা বিস্তার লাভ করেছিল। (২ পিতর ২:১-৩) এক সময়, গির্জার নেতারা এইরকমটা চিন্তা করতে শুরু করেছিল যে, ঈশ্বরের বাক্যের এক জাদুকরি ক্ষমতা রয়েছে। অধ্যাপক হ্যারি ওয়াই. গ্যামবেল “খ্রিস্টীয় শাস্ত্রপদগুলোর জাদুকরি ব্যবহারের” বিষয়ে উল্লেখ করেন। তিনি বলেছিলেন, তৃতীয় শতাব্দীর গির্জার ফাদার ওরিজেন এই পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, “পবিত্র বাক্যগুলো শোনা কোনো না কোনোভাবে উপকারী: যদি পৌত্তলিক জাদুমন্ত্রের বাক্যগুলোর ক্ষমতা থেকে থাকে, তাহলে শাস্ত্রে উল্লেখিত সত্যিকারের ঐশিক বাক্য আরও কতই না ক্ষমতার অধিকারী।” চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিকে জন ক্রিসেসটম লিখেছিলেন যে, “দিয়াবল সেই গৃহের ধারেকাছেও আসতে সাহস করবে না, যে-গৃহে একটা সুসমাচারের পুস্তক রয়েছে।” এ ছাড়াও তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, কেউ কেউ সুসমাচারের পুস্তকগুলো থেকে কোনো উদ্ধৃতাংশ বা ছাপানো অংশ-বিশেষকে এক মন্ত্রপূত কবচ হিসেবে তাদের গলায় ঝুলিয়ে রাখত। অধ্যাপক গ্যামবেল আরও বলেন, ক্যাথলিক ঈশ্বরতত্ত্বিবদ অগাস্টিন “এই বিষয়টাকে অনুমোদনযোগ্য বলে মনে করতেন যে, কারো মাথাব্যথা হলে বালিশের নীচে যোহনের সুসমাচারের একটা কপি নিয়ে ঘুমানো যায়”! এভাবেই বাইবেলের পদগুলো জাদুকরি উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল। আপনি কি বাইবেলকে একটি মন্ত্রপূত কবচ বা সৌভাগ্যের কোনো রক্ষাকবচ বলে মনে করে থাকেন, যেটি আপনাকে মন্দের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে?

বাইবেলের আরও সাধারণ একটা অপব্যবহার হল বিব্লিওমেনসি। এটা কী? এটা হল, কোনো একটা বইয়ের—প্রায় ক্ষেত্রেই বাইবেলের—যেকোনো একটি পাতা খোলা এবং প্রথমেই যে-শাস্ত্রপদটি চোখে পড়ে, সেটি এই বিশ্বাস নিয়ে পড়া যে, ওই কথাগুলো প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জোগাবে। উদাহরণস্বরূপ, অধ্যাপক গ্যামবেল উল্লেখ করেন যে, একবার একটা ঘটনায় যখন অগাস্টিন প্রতিবেশীর বাড়িতে একটা বাচ্চার বলা এই কথাগুলো শুনতে পেয়েছিলেন: “খোলো আর পড়ো, খোলো আর পড়ো,” তখন অগাস্টিন মনে করেছিলেন যে, এটা হল বাইবেল খুলে প্রথমেই যে-পদটি চোখে পড়বে, সেটি পড়ার জন্য এক ঐশিক নির্দেশ।

আপনি কি এমন লোকেদের কথা শুনেছেন, যারা কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার সময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছে এবং এরপর এই বিশ্বাস নিয়ে বাইবেলের কোনো পাতা খুলেছে যে, প্রথমেই যে-শাস্ত্রপদটি তাদের চোখে পড়বে, সেটি তাদেরকে সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে? তাদের উদ্দেশ্য হয়তো ভালো, তবে খ্রিস্টানদের এই উপায়ে শাস্ত্র থেকে নির্দেশনা খোঁজা উচিত নয়।

যিশু তাঁর শিষ্যদের এই বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদের জন্য “সেই সহায়, পবিত্র আত্মা” পাঠিয়ে দেবেন। তিনি আরও বলেছিলেন, “তিনি সকল বিষয়ে তোমাদিগকে শিক্ষা দিবেন, এবং আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা বলিয়াছি, সে সকল স্মরণ করাইয়া দিবেন।” (যোহন ১৪:২৬) এর বিপরীতে, বিব্লিওমেনসির জন্য শাস্ত্রের ওপর কোনো জ্ঞান থাকার প্রয়োজন হয় না।

বিব্লিওমেনসির অনুশীলন এবং বাইবেলের অন্যান্য কুসংস্কারপূর্ণ ব্যবহার এক সাধারণ বিষয়। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্য গণনা করার বা শুভ-অশুভ লক্ষণ খোঁজার বিষয়ে নিষেধ করে। (লেবীয়. ১৯:২৬; দ্বিতীয়. ১৮:৯-১২; প্রেরিত ১৯:১৯) “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক,” কিন্তু আমাদের এটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দক্ষ হতে হবে। কুসংস্কারপূর্ণভাবে বাইবেল ব্যবহার করা নয় বরং এর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান থাকাই লোকেদের জীবনকে উন্নত করে। এই ধরনের জ্ঞান লাভ করা অনেক ব্যক্তিকে উত্তম নৈতিক মান গড়ে তুলতে, ধ্বংসাত্মক জীবনধারা পরিত্যাগ করতে, পারিবারিক জীবনকে শক্তিশালী করতে এবং বাইবেলের গ্রন্থকারের সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।