অনুশোচনা না করে সেবা করা
অনুশোচনা না করে সেবা করা
“পশ্চাৎ স্থিত বিষয় সকল ভুলিয়া গিয়া সম্মুখস্থ বিষয়ের চেষ্টায় একাগ্র।” —ফিলি. ৩:১৩.
এই মূল বিষয়গুলো আলাদা করুন:
পৌলের অনুশোচনা করার মতো যে-অতীত ছিল, তা কাটিয়ে উঠতে কী তাকে সাহায্য করেছিল?
মনের শান্তি লাভ করার জন্য ঐশিক নীতিটা কী?
কোন নীতিটা আমাদের অনুশোচনা না করে ঈশ্বরের সেবা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?
১-৩. (ক) অনুশোচনা কী আর এটা আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? (খ) অনুশোচনা না করে ঈশ্বরের সেবা করার বিষয়ে পৌলের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
একজন কবি লিখেছিলেন: “দুঃখ প্রকাশ করার জন্য লেখ্য ও কথ্য যে-সমস্ত শব্দ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুঃখজনক শব্দ হল এগুলো: ‘যদি এটা করতাম!’” সেই কবি ছিলেন জে. জি. হুইটিয়ার এবং তিনি সেইসমস্ত বিষয় সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, যেগুলোর জন্য আমরা অনুশোচনা করি; যেগুলো আবারও করতে পারলে আমরা ভিন্নভাবে করতে চাই। “অনুশোচনা” হল কোনো কিছু করার অথবা হতে পারে না করার কারণে মানসিক কষ্ট, মনোদুঃখ আর এর অর্থ হতে পারে “আবার কান্নাকাটি করা।” আমরা সকলেই এমন বিষয়গুলো করেছি, যেগুলো আবার করতে পারলে আমরা ফিরে গিয়ে ভিন্নভাবে করতে চাই। আপনি কোন ব্যাপারে অনুশোচনা করেন?
২ কিছু লোক জীবনে বিভিন্ন চরম ভুল করেছে, এমনকী গুরুতর পাপ করেছে। অন্যেরা এত খারাপ কিছু করেনি কিন্তু তারা এই ব্যাপারে সন্দেহ করে যে, তাদের জীবনের কিছু বাছাই আসলেই সর্বোত্তম ছিল কি না। কিছু লোক তাদের অতীতের বিষয়কে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে এবং জীবনে এগিয়ে যাচ্ছে। আবার অন্যেরা তাদের অতীত সম্বন্ধে ক্রমাগত এইরকম চিন্তার দ্বারা জর্জরিত হয়ে থাকে, “ইস্ কেন যে করলাম” অথবা “ইস্ কেন যে এটা করলাম না।” (গীত. ৫১:৩) আপনার সম্বন্ধে কী বলা যায়? আপনার কি কখনো এইরকম মনে হয়েছে যে, আমি যদি অনুশোচনা ছাড়া ঈশ্বরকে সেবা করতে পারতাম—অন্ততপক্ষে আজকে থেকে সামনের দিনগুলোতে? কোনো বাস্তব উদাহরণ কি রয়েছে, যার কাছ থেকে আমরা তা করার বিষয়ে শিখতে পারি? অবশ্যই রয়েছে আর তিনি হলেন প্রেরিত পৌল।
৩ পৌল তার জীবনে মারাত্মক ভুল এবং বিজ্ঞতাপূর্ণ বাছাই দুটোই করেছিলেন। যদিও তার অতীতের অনুশোচনার বিষয়গুলোর ব্যাপারে তার অনুভূতি গভীর ছিল, কিন্তু একইসময়ে তিনি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত সেবায় তার জীবনকে সফল করে তুলতে শিখেছিলেন। আসুন আমরা দেখি যে, অনুশোচনা না করে সেবা করার বিষয়ে তার উদাহরণ আমাদের কী শেখায়।
পৌলের অনুশোচনা করার মতো অতীত
৪. প্রেরিত পৌলের অনুশোচনা করার মতো কোন অতীত ছিল?
৪ একজন ফরীশী যুবক হিসেবে পৌল এমন বিষয়গুলো করেছিলেন, যেগুলোর জন্য তিনি পরে অনুশোচনা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি খ্রিস্টের শিষ্যদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড তাড়নার এক অভিযান চালিয়েছিলেন। বাইবেলের বিবরণ বলে যে, স্তিফানকে তার ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে হত্যা করার পর পরই “শৌল [যিনি পরে পৌল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন] মণ্ডলীর উচ্ছেদ সাধন করিতে লাগিলেন, ঘরে ঘরে প্রবেশ করিয়া পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে টানিয়া আনিয়া কারাগারে সমর্পণ করিতে লাগিলেন।” (প্রেরিত ৮:৩) পণ্ডিত ব্যক্তি অ্যালবার্ট বার্নজ্ বলেছিলেন যে, ‘উচ্ছেদ সাধন করা’ হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দটি হচ্ছে “এক জোরালো অভিব্যক্তি, যা [শৌল] যে-উত্তেজনা ও প্রচণ্ড রোষ নিয়ে তাড়নায় রত হয়েছিলেন, সেটাকে প্রকাশ করে।” তাই, বার্নজ্ বলেছিলেন, “শৌল গির্জার বিরুদ্ধে একটা বন্য জন্তুর মতো ক্রোধ প্রকাশ করেছিলেন।” একজন ধর্মপ্রাণ যিহুদি হিসেবে শৌল বিশ্বাস করতেন যে, খ্রিস্ট ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হচ্ছে তার প্রতি ঈশ্বরদত্ত দায়িত্ব। সেই কারণে তিনি নৃশংস নিষ্ঠুরতার সঙ্গে খ্রিস্টানদের পিছনে তাড়া করেছিলেন, “পুরুষ ও স্ত্রী যে সমস্ত লোককে পান,” তাদের “বিরুদ্ধে ভয়প্রদর্শন ও হত্যার নিশ্বাস টানিতেছিলেন।”—প্রেরিত ৯:১, ২; ২২:৪. *
৫. শৌল কীভাবে যিশুর অনুসারীদের এক তাড়নাকারী থেকে পরিবর্তিত হয়ে খ্রিস্টের প্রচারক হয়ে উঠেছিলেন, তা ব্যাখ্যা করুন।
৫ শৌলের উদ্দেশ্য ছিল দম্মেশকে গিয়ে যিশুর শিষ্যদের তাদের ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে এনে যিরূশালেমে মহাসভার রোষের মুখে ফেলা। কিন্তু, তিনি তা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন কারণ তিনি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তকের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। (ইফি. ৫:২৩) শৌল যখন দম্মেশকের উদ্দেশে যাত্রাপথে ছিলেন, তখন যিশু তার সামনে এসেছিলেন এবং এক অলৌকিক আলোর কারণে শৌল অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তার পর, যিশু শৌলকে দম্মেশকে পাঠিয়ে পরবর্তী যোগাযোগ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। এরপর যা ঘটেছিল, আমরা তা জানি।—প্রেরিত ৯:৩-২২.
৬, ৭. কোন বিষয়টা দেখায় যে, পৌল তার বেদনাদায়ক অতীত সম্বন্ধে ভালোভাবেই অবগত ছিলেন?
৬ একজন খ্রিস্টান হওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই পৌলের মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছিল। তিনি খ্রিস্ট ধর্মের এক ঘোর শত্রু হয়ে ওঠার পরিবর্তে অতি উদ্যমী সমর্থক হয়ে উঠেছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি পরে নিজের সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “তোমরা ত যিহূদী-ধর্ম্মে আমার পূর্ব্বকার আচার ব্যবহারের কথা শুনিয়াছ; আমি ঈশ্বরের মণ্ডলীকে অতিমাত্র তাড়না করিতাম ও তাহা উৎপাটন করিতাম।” (গালা. ১:১৩) এরপর, তিনি আবারও তার অনুশোচনা করার মতো যে-অতীত ছিল, সেই সম্বন্ধে করিন্থীয়দের, ফিলিপীয়দের ও তীমথিয়ের উদ্দেশে লেখার সময় উল্লেখ করেছিলেন। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:৯; ফিলি. ৩:৬; ১ তীম. ১:১৩) পৌল গর্ব করে নিজের সম্বন্ধে এই ধরনের বিষয়গুলো লেখেননি কিংবা এগুলোর কোনোটাই যেন কখনো ঘটেনি এমন ভান করারও চেষ্টা করেননি। তিনি ভালোভাবেই অবগত ছিলেন যে, তিনি গুরুতর ভুল করেছেন।—প্রেরিত ২৬:৯-১১.
৭ বাইবেল পণ্ডিত ফ্রেডরিক ডব্লু. ফারার “ভয়ানক তাড়নার” ক্ষেত্রে শৌলের ভূমিকা সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। ফারার আরও বলেছিলেন যে, একমাত্র যখন আমরা পৌলের জীবনের এই দুঃখজনক সময়কালের সাংঘাতিক পরিণতি মূল্যায়ন করব, তখনই “আমরা সেই বিবেকের দংশনের ভার অনুভব করতে পারব, যা নিশ্চয়ই তার ওপর চেপে বসেছিল এবং সেই বিদ্রূপ অনুভব করতে পারব, যা তার চরম শত্রুদের কাছ থেকে এসেছিল।” বিভিন্ন মণ্ডলীতে পরিদর্শন করার সময়, কখনো কখনো পৌল হয়তো এমন ভাইদের মুখোমুখি হয়েছিলেন, যে-ভাইদের সঙ্গে তার প্রথম বার দেখা হয়েছিল আর তারা এইরকম কথা বলেছিল, ‘তাহলে আপনি সেই পৌল—আপনিই আমাদের ওপর তাড়না করেছিলেন!’—প্রেরিত ৯:২১.
৮. যিহোবা এবং যিশু যে পৌলের প্রতি করুণা ও প্রেম দেখিয়েছিল, সেই সম্বন্ধে পৌল কেমন অনুভব করেছিলেন আর সেটা আমাদের কোন শিক্ষা প্রদান করে?
৮ কিন্তু, পৌল বুঝতে পেরেছিলেন যে, একমাত্র ঈশ্বরের অনুগ্রহ বা অযাচিত দয়ার কারণেই তিনি তার পরিচর্যা সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। তার লেখা ১৪টি চিঠিতে তিনি প্রায় ৯০ বার ঈশ্বরের করুণাপূর্ণ মনোভাব সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন—অন্য কোনো বাইবেল লেখকই এই বিষয়ে এত বেশি উল্লেখ করেননি। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:১০.) পৌলের প্রতি যে-করুণাপূর্ণ উপায়ে আচরণ করা হয়েছিল, সেটা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন এবং তিনি এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে, তার প্রতি দেখানো ঈশ্বরের অযাচিত দয়া যেন নিষ্ফল না হয়। তাই, তিনি অন্য সমস্ত প্রেরিতের চেয়ে ‘অধিক পরিশ্রম করিয়াছিলেন।’ পৌলের উদাহরণ স্পষ্টভাবে দেখায় যে, আমরা যদি আমাদের পাপ স্বীকার করি ও আমাদের পথ পরিবর্তন করি, তাহলে যিহোবা যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে এমনকী জঘন্য পাপগুলোও মুছে ফেলার ব্যাপারে কতটা ইচ্ছুক। সেইসমস্ত ব্যক্তির জন্য কতই না উত্তম শিক্ষা, যাদের পক্ষে এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, খ্রিস্টের বলিদানের উপকারগুলো ব্যক্তিগতভাবে তাদের জন্য অর্থপূর্ণ হতে পারে! (পড়ুন, ১ তীমথিয় ১:১৫, ১৬.) এমনকী যদিও পৌল খ্রিস্টের একজন চরম তাড়নাকারী ছিলেন, কিন্তু তিনি এটা লিখতে পেরেছিলেন: ‘ঈশ্বরের পুত্র আমাকে প্রেম করিলেন, এবং আমার নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন।’ (গালা. ২:২০; প্রেরিত ৯:৫) হ্যাঁ, অনুশোচনায় জর্জরিত না হয়ে কীভাবে সেবা করা যায়, সেই নীতিটা পৌল শিখেছিলেন। আপনিও কি সেটা শিখতে পেরেছেন?
আপনি কি কোনো ব্যাপারে অনুশোচনা করেন?
৯, ১০. (ক) কেন যিহোবার কিছু লোক অনুশোচনা করে? (খ) অতীত নিয়ে ক্রমাগত দুশ্চিন্তা করা কেন ভুল?
৯ আপনি কি এমন বিষয়গুলো করেছিলেন, যেগুলোর জন্য এখন আপনি অনুশোচনা করেন? আপনি কি কখনো ভুল বিষয়গুলোর অনুধাবন করে আপনার মূল্যবান সময় ও শক্তি নষ্ট করেছেন? আপনি কি এমন কোনো উপায়ে কাজ করেছেন, যার ফলে অন্যেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? অথবা হতে পারে অন্য কোনো কারণের জন্য আপনার অনুশোচনা করার অপ্রীতিকর অনুভূতি রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ব্যাপারে আপনি কী করতে পারেন?
১০ অনেক লোক দুশ্চিন্তা করে! ক্রমাগত দুশ্চিন্তা করার অর্থ হচ্ছে নিজেকে যাতনা দেওয়া, নিজেকে অস্বস্তিতে রাখা, নিজেকে তাড়না করা। এটা অনেক উদ্বিগ্নতা নিয়ে আসে। দুশ্চিন্তা করে কি কোনো সমস্যার সমাধান করা যায়? একদমই করা যায় না! বিষয়টা এভাবে কল্পনা করুন, আপনি একটা রকিং চেয়ারে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা দোল খেয়ে, আপনার সমস্ত শক্তি নিঃশেষ করে সামনে এগিয়ে চলার চেষ্টা করছেন, কিন্তু আসলে কোথাও যেতে পারছেন না! দুশ্চিন্তা করার পরিবর্তে, আপনার পক্ষ থেকে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া উত্তম ফলাফল নিয়ে আসতে পারে। আপনি যার প্রতি অন্যায় করেছেন, সেই ব্যক্তির কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইতে পারেন, হতে পারে পুনরায় উত্তম সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন। যে-বিষয়টা আপনাকে মন্দ কাজ করতে পরিচালিত করেছে, তা আপনি পরিহার করতে পারেন আর এভাবে ভবিষ্যতে সমস্যা এড়াতে পারেন। তার পরও, আপনাকে হয়তো জীবনের কিছু পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবেই। কিন্তু, দুশ্চিন্তা এক ধরনের পক্ষাঘাত ছাড়া কিছুই নয়, যা একজন ব্যক্তিকে পূর্ণরূপে ঈশ্বরের সেবা করার ক্ষেত্রে অক্ষম করে ফেলতে পারে। আর দুশ্চিন্তা করার জন্য কোনো পুরস্কার নেই!
১১. (ক) কীভাবে আমরা যিহোবার করুণা ও প্রেমপূর্ণ-দয়া লাভ করতে পারি? (খ) আমাদের অতীতের ব্যর্থতা কাটিয়ে মনের শান্তি লাভ করার ঐশিক নীতিটা কী?
১১ কারো কারো অতীতের ব্যর্থতাগুলোর দ্বারা জর্জরিত হয়ে এমন এক পর্যায়ে চলে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, যখন তারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের চোখে অযোগ্য বলে মনে করে। তারা হয়তো মনে করতে পারে যে, ঈশ্বরের করুণা লাভ করা তাদের নাগালের বাইরে আর এর কারণ, হয় তারা অনেক বড়ো কোনো ভুল করেছে নতুবা বার বার ভুল করেছে। কিন্তু প্রকৃত বিষয়টা হল, অতীতে তারা যা-ই করে থাকুক না কেন, তারা অনুতপ্ত হতে পারে, পরিবর্তিত হতে পারে এবং ক্ষমা চাইতে পারে। (প্রেরিত ৩:১৯) যিহোবা তাদের প্রতি করুণা ও প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখাতে পারেন, যেমনটা তিনি অন্য অনেকের প্রতি দেখিয়েছেন। যিহোবা একজন নম্র ও সৎ ব্যক্তির প্রতি এবং তার আন্তরিক অনুতাপের প্রতি সদয় দৃষ্টি দেবেন। ঈশ্বর ইয়োবের ক্ষেত্রে তা করেছিলেন, যিনি এই কথা বলেছিলেন: “আমি . . . ধূলায় ও ভস্মে বসিয়া অনুতাপ” বা অনুশোচনা “করিতেছি।” (ইয়োব ৪২:৬) আমাদের সবাইকে মনের শান্তি লাভ করার জন্য এই ঐশিক নীতি অনুসরণ করতে হবে: “যে আপন অধর্ম্ম সকল ঢাকে, সে কৃতকার্য্য হইবে না; কিন্তু যে তাহা স্বীকার করিয়া ত্যাগ করে, সে করুণা পাইবে।” (হিতো. ২৮:১৩; যাকোব ৫:১৪-১৬) তাই, আমরা ঈশ্বরের কাছে পাপ স্বীকার করতে পারি, তাঁর ক্ষমা লাভ করার জন্য প্রার্থনা করতে পারি এবং ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারি। (২ করি. ৭:১০, ১১) আমরা যদি এই বিষয়গুলো করে থাকি, তাহলে আমরা সেই ব্যক্তির করুণা উপভোগ করতে পারি, যিনি ‘প্রচুররূপে ক্ষমা করেন।’—যিশা. ৫৫:৭.
১২. (ক) দোষী বিবেকের সঙ্গে মোকাবিলা করার সর্বোত্তম উপায় সম্বন্ধে দায়ূদের উদাহরণ আমাদের কী শিক্ষা দেয়? (খ) কোন অর্থে যিহোবা অনুশোচনা করেছেন আর তা জানা আমাদের কীভাবে সাহায্য করে? (বাক্স দেখুন।)
১২ প্রার্থনার শক্তি রয়েছে; এর মাধ্যমে ঈশ্বর অনেক কিছু করেন। দায়ূদ বিশ্বাসের এক প্রার্থনায় তার গভীর অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন, যা গীতসংহিতা বইয়ে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩২:১-৫.) দায়ূদ যেমন স্বীকার করেছিলেন, দোষী বিবেকের দংশন দমন করার চেষ্টা করে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন! তিনি স্পষ্টতই মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে খারাপ ফল ভোগ করেছিলেন এবং পাপ স্বীকার করতে ব্যর্থ হয়ে নিজের আনন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কোন বিষয়টা দায়ূদকে ক্ষমা ও স্বস্তি এনে দিয়েছিল? শুধুমাত্র ঈশ্বরের কাছে পাপ স্বীকার করা। যিহোবা দায়ূদের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন এবং তাকে জীবনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এবং মূল্যবান কোনো কিছু সম্পাদন করার জন্য শক্তি দিয়েছিলেন। একইভাবে, আপনি যদি হৃদয় থেকে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেন, তাহলে আপনি এই আস্থা রাখতে পারেন যে, যিহোবা আপনার বিনতির প্রতি আগ্রহ সহকারে মনোযোগ দেবেন। যদি অতীতের ভুলগুলো আপনাকে কষ্ট দেয়, তাহলে আপনার পক্ষে যতটা সংশোধন করা সম্ভব হয় তা করুন আর এরপর যিহোবার এই আশ্বাসের প্রতি বিশ্বাস রাখুন যে, তিনি আপনাকে ক্ষমা করেছেন!—গীত. ৮৬:৫.
ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি রাখুন
১৩, ১৪. (ক) এখন আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় কী হওয়া উচিত? (খ) কোন প্রশ্নগুলো আমাদেরকে জীবনের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে?
১৩ কথিত আছে যে, পিছনের দিকে তাকালে জীবনকে বোঝা যায় কিন্তু জীবনকে অতিবাহিত করার জন্য সামনের দিকে তাকাতে হবে। তাই, অতীত সম্বন্ধে দুশ্চিন্তা করার পরিবর্তে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে চিন্তিত হওয়া উচিত। আমরা ঠিক এখন যা করছি অথবা যা করতে ব্যর্থ হচ্ছি, সেই সম্বন্ধে এখন থেকে বেশ কয়েক বছর পরে কি আমরা এইরকম মনে করব, যদি সেটা না করতাম অথবা ভিন্নভাবে করতাম? আমরা কি এমন বিশ্বস্ততার পথ অনুধাবন করছি, যেটার কারণে আমাদের ভবিষ্যতে সম্ভাব্য কোনো ধরনের অনুশোচনা করতে হবে না?
১৪ যেহেতু মহাক্লেশ এগিয়ে আসছে, তাই আমরা উদ্বেগপূর্ণ এইরকম চিন্তাভাবনা দ্বারা জর্জরিত হতে চাই না: ‘আমি কি ঈশ্বরের সেবায় আরও বেশি করতে পারতাম? যখন সুযোগ এসেছিল, তখন কেন আমি অগ্রগামীর কাজ করিনি? একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করার আকাঙ্ক্ষী হওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা আমাকে বাধা দিয়েছে? আমি কি নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করার জন্য সত্যিকারের প্রচেষ্টা করেছি? আমি কি সেই ধরনের ব্যক্তি, যেমনটা যিহোবা আমাকে তাঁর নতুন জগতে দেখতে চান?’ এই ধরনের গুরুগম্ভীর প্রশ্ন নিয়ে কেবল দুশ্চিন্তা করার পরিবর্তে, আমরা এগুলোকে নিজেদের বিশ্লেষণ করার জন্য ব্যবহার করতে চাই এবং এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাই যে, যিহোবার সেবায় আমরা আমাদের যথাসাধ্য করছি। তা না হলে, আমরা এমন এক জীবনের পথে চলতে থাকব, যার ফলে হয়তো আরও বেশি অনুশোচনা করতে হবে।—২ তীম. ২:১৫.
আপনার পবিত্র সেবা নিয়ে কখনো অনুশোচনা করবেন না
১৫, ১৬. (ক) অনেকে ঈশ্বরের সেবাকে তাদের জীবনে প্রথমে রাখার জন্য কোন ত্যাগস্বীকারগুলো করেছে? (খ) রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখার জন্য আমরা যে-ত্যাগস্বীকার করেছি, সেটার জন্য কেন অনুশোচনা করা উচিত নয়?
১৫ আপনাদের মধ্যে যারা যিহোবাকে পূর্ণসময়ের সেবা করার জন্য বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার করেছেন, তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আপনি হয়তো আপনার জীবনকে সাদাসিধে করার এবং রাজ্যের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় দেওয়ার জন্য কোনো সম্ভাবনাময় কেরিয়ার অথবা সফল ব্যাবসা পরিত্যাগ করেছেন। অথবা আপনি হয়তো অবিবাহিত থেকে গিয়েছেন কিংবা যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনারা সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে পূর্ণসময়ের সেবার এমন ক্ষেত্রে প্রবেশ করার জন্য নিজেদের স্বাধীন রাখতে পারেন, যেখানে সন্তান থাকলে আপনাদের পক্ষে যাওয়া সম্ভব হতো না—বেথেল সেবা, আন্তর্জাতিক নির্মাণকাজ, সীমার কাজ অথবা মিশনারি সেবা। এখন যিহোবার সেবা করতে করতে যখন আপনার বয়স বেড়ে যাচ্ছে, তখন আপনার কি সেই সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে অনুশোচনা করা উচিত? আপনার কি এইরকম মনে করা উচিত, আপনি যে-ত্যাগস্বীকারগুলো করেছেন, সেগুলো অপ্রয়োজনীয় অথবা সময়ের অপব্যবহার ছিল? একেবারেই না!
১৬ আপনি যিহোবার প্রতি আপনার গভীর ভালোবাসার ভিত্তিতে এবং যারা তাঁকে সেবা করতে চায়, তাদেরকে সাহায্য করার জন্য আন্তরিক আকাঙ্ক্ষার কারণে সেই সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলেন। আপনার এইরকম চিন্তা করার দরকার নেই যে, আপনি যদি ভিন্নভাবে জীবনযাপন করতেন, তাহলে আপনি আরও ভালো কিছু করতে পারতেন। আপনি এটা জেনে গভীর পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারেন যে, আপনি ঠিক সেই কাজটাই করেছেন, যেটা করা আপনার জন্য সঠিক হবে বলে আপনি জানতেন। যিহোবার সেবায় আপনার সর্বোত্তমটা করেছেন বলে আপনি আনন্দিত হতে পারেন। তিনি আপনার জীবনের ত্যাগস্বীকারগুলো ভুলে যাবেন না। প্রকৃত জীবন আসার এখনও বাকি আছে আর তাই তিনি আপনাকে এমন আশীর্বাদ দিয়ে পুরস্কৃত করবেন, যা এখন আপনার কাছে কল্পনাতীত!—গীত. ১৪৫:১৬; ১ তীম. ৬:১৯.
অনুশোচনা না করে যেভাবে সেবা করা যায়
১৭, ১৮. (ক) কোন নীতিটা পৌলকে অনুশোচনা না করেই সেবা করতে সাহায্য করেছিল? (খ) যিহোবার সেবায় আপনার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আপনার দৃঢ়সংকল্প কী?
১৭ পৌল এমন কোন নীতি শিখেছিলেন, যা তাকে আরও অনুশোচনা না করে ঈশ্বরকে সেবা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল? জে. বি. ফিলিপস্ অনুবাদে যেমন তুলে ধরা হয়েছে, পৌল লিখেছিলেন: “আমি অতীতকে পিছনে ফেলে এসেছি এবং সামনে যা-কিছু রয়েছে সেগুলোর প্রতি হাত বাড়িয়ে সোজা লক্ষ্যের দিকে চলছি।” (পড়ুন, ফিলিপীয় ৩:১৩, ১৪.) পৌল সেই ভুল পথই ধরে রাখেননি, যে-পথের অনুধাবন তিনি যিহুদি ধর্মে থাকার সময়ে করেছিলেন। এর পরিবর্তে, ভবিষ্যতে অনন্তজীবনের পুরস্কার লাভ করার জন্য নিজেকে যোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে তার সমস্ত শক্তি নিয়োজিত করেছিলেন।
১৮ আমরা সবাই পৌলের বাক্যের পিছনে যে-নীতি রয়েছে, তা কাজে লাগাতে পারি। আমাদের অতীত নিয়ে অস্থির না হয়ে, যা পরিবর্তন করা যাবে না তা নিয়ে অনবরত চিন্তা না করে বরং সামনে যা রয়েছে, সেটার দিকে এগিয়ে চলা উচিত। তবে হ্যাঁ, আমরা হয়তো অতীতের ভুলগুলো সত্যি সত্যিই ভুলে যেতে পারি না, কিন্তু সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের অনবরত নিজেদের তিরস্কার করার প্রয়োজন নেই। আমরা আমাদের অতীতকে পিছনে ফেলে দেওয়ার, আমাদের যথাশক্তি দিয়ে এখন ঈশ্বরের সেবা করার এবং সামনে গৌরবান্বিত ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি রাখার জন্য প্রচেষ্টা করতে পারি!
[পাদটীকা]
^ নারীরাও যে পৌলের তাড়নার শিকার হয়েছিল, সেই সম্বন্ধে পুনরাবৃত্তি করা এটা প্রকাশ করে যে, নারীরা প্রথম শতাব্দীতে খ্রিস্ট ধর্ম ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছিল, যেমনটা বর্তমানেও করে থাকে।—গীত. ৬৮:১১.
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৫ পৃষ্ঠার বাক্স]
কোন অর্থে যিহোবা অনুশোচনা করেন?
বেশ কয়েকটা ঘটনায় বাইবেল উল্লেখ করে যে, যিহোবা “অনুশোচনা করিলেন।” (যোনা ৩:১০; আদি. ৬:৬, ৭; ১ শমূ. ১৫:১১) যেহেতু ঈশ্বরের কাজ হল নিখুঁত, তাই তিনি কখনো এই কারণে অনুশোচনা করেন না যে, তিনি ভুল করেছেন। (গণনা. ২৩:১৯; দ্বিতীয়. ৩২:৪) এর পরিবর্তে, ইব্রীয় ভাষায় অনুশোচনা করা বলতে একজনের মন অথবা উদ্দেশ্য পরিবর্তন করাকে বোঝাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যেহেতু যিহোবা হলেন যুক্তিবাদী, নমনীয় ও করুণাময়, তাই অন্যায়কারীরা অনুতাপ করে যে-পরিবর্তন করে, সেটার প্রতি সাড়া দিয়ে তিনি তাদের প্রতি যা করার চিন্তা করেছিলেন তাতে সমন্বয় সাধন করেন।—যির. ১৮:৭-১০.
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
পৌল অনুশোচনা না করে সেবা করতে শিখেছিলেন