সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার গৌরব ধরে রাখার ক্ষেত্রে কোনো কিছুকেই বাধা হতে দেবেন না

আপনার গৌরব ধরে রাখার ক্ষেত্রে কোনো কিছুকেই বাধা হতে দেবেন না

আপনার গৌরব ধরে রাখার ক্ষেত্রে কোনো কিছুকেই বাধা হতে দেবেন না

“নম্রচিত্ত ব্যক্তি সম্মান পাইবে।”—হিতো. ২৯:২৩.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

ঈশ্বরের কাছ থেকে আমরা কোন গৌরব লাভ করতে পারি?

কী আমাদেরকে গৌরব ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে?

কোন অর্থে আমাদের ধৈর্য অন্যদের জন্য “গৌরব”?

১, ২. (ক) “সম্মান” বা গৌরবের জন্য মূল ভাষায় যে-শব্দগুলো রয়েছে, সেগুলোর তাৎপর্য কী? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

 আপনি যখন “সম্মান” বা গৌরব শব্দটি শোনেন, তখন আপনার মনে কোন বিষয়টা আসে? সৃষ্টির চমৎকার সৌন্দর্য? (গীত. ১৯:১) সেই প্রশংসা এবং গৌরব, যা প্রচুর ধনসম্পদ, প্রজ্ঞা অথবা সাফল্য রয়েছে এমন মানুষদের প্রদান করা হয়? শাস্ত্রে “সম্মান” বা গৌরবের জন্য মূল ভাষায় যে-শব্দগুলো রয়েছে, সেগুলো ভারী কোনো কিছুর অর্থও প্রদান করে। প্রাচীনকালের মুদ্রাগুলো মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি ছিল আর একটা মুদ্রা যত বেশি ভারী হতো, এর মূল্যও হতো তত বেশি। যে-শব্দগুলো ভারী কোনো কিছুর ধারণা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হতো, সেগুলো মূল্যবান, চমৎকার অথবা প্রভাববিস্তারকারী বিষয়গুলো বোঝানোর জন্য রূপকভাবে ব্যবহার করা হতো।

যদিও আমরা হয়তো একজন ব্যক্তির ক্ষমতা, পদমর্যাদা অথবা সুনামের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারি কিন্তু ঈশ্বর মানুষের মধ্যে কোন বিষয়টা দেখেন? শাস্ত্র আসলে এমন সম্মান বা গৌরব সম্বন্ধে বলে, যা ঈশ্বর মানুষকে প্রদান করেন। উদাহরণস্বরূপ, হিতোপদেশ ২২:৪ পদ বলে: “নম্রতার ও সদাপ্রভুর ভয়ের পুরস্কার, ধন, সম্মান ও জীবন।” আর শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “প্রভুর [ঈশ্বরের] সাক্ষাতে নত হও, তাহাতে তিনি তোমাদিগকে উন্নত করিবেন।” (যাকোব ৪:১০) সেই গৌরব কী, যা যিহোবা মানুষকে প্রদান করেন? কী আমাদেরকে গৌরব ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে? আর কীভাবে আমরা অন্যদেরকে এই গৌরব ধরে রাখার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি?

৩-৫. যিহোবা আমাদেরকে কোন গৌরবের দিকে পরিচালিত করতে পারেন?

গীতরচক এই আস্থা প্রকাশ করেছিলেন যে, যিহোবা তার দক্ষিণ হস্ত ধরে তাকে প্রকৃত প্রতাপ বা গৌরবের দিকে পরিচালিত করবেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৭৩:২৩, ২৪.) কীভাবে যিহোবা তা করেন? যিহোবা তাঁর নম্র দাসদেরকে অসংখ্য উপায়ে সমাদর করার মাধ্যমে তাদেরকে গৌরবের দিকে পরিচালিত করেন। তিনি তাঁর ইচ্ছা বুঝতে সাহায্য করার মাধ্যমে তাদেরকে আশীর্বাদ করেন। (১ করি. ২:৭) যারা তাঁর কথা শোনে এবং তাঁর বাধ্য থাকে, তাদেরকে তিনি তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ দিয়ে সমাদর করেন।—যাকোব ৪:৮.

এ ছাড়া, যিহোবা তাঁর দাসদেরকে আস্থা সহকারে খ্রিস্টীয় পরিচর্যার মতো গৌরবান্বিত ধন বা সম্পদ প্রদান করেন। (২ করি. ৪:১, ৭) আর এই পরিচর্যা গৌরবের দিকে পরিচালিত করে। যারা তাঁর প্রশংসা করার এবং অন্যদের উপকারের জন্য তাদের সেবার বিশেষ সুযোগ কাজে লাগায়, তাদের কাছে যিহোবা এই প্রতিজ্ঞা করেন: “যাহারা আমাকে গৌরবান্বিত করে, তাহাদিগকে আমি গৌরবান্বিত করিব।” (১ শমূ. ২:৩০) এই ধরনের ব্যক্তিরা যিহোবার কাছে সুনাম অর্জন করার মতো গৌরব বা সমাদর লাভ করে ও সেইসঙ্গে ঈশ্বরের অন্যান্য দাসও তাদের সুনাম করে থাকে।—হিতো. ১১:১৬; ২২:১.

সেই ব্যক্তিদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা ‘সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাকে, তাঁহার পথে চলে’? তাদের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে: “তিনি [সদাপ্রভু] তোমাকে দেশের অধিকার ভোগের জন্য উন্নত করিবেন; দুষ্টগণের উচ্ছেদ হইলে তুমি তাহা দেখিতে পাইবে।” (গীত. ৩৭:৩৪) তারা অনন্তজীবনের মতো অতুলনীয় সম্মান লাভ করার জন্য প্রতীক্ষা করে আছে।—গীত. ৩৭:২৯.

“আমি মনুষ্যদের হইতে গৌরব গ্রহণ করি না!”

৬, ৭. কেন অনেকে যিশুর ওপর বিশ্বাস দেখাতে চায়নি?

কী আমাদেরকে সেই গৌরব লাভ করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে, যা যিহোবা আমাদের প্রদান করতে ইচ্ছুক? একটা বিষয় হল, সেই ব্যক্তিদের মতামতের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া, ঈশ্বরের কাছে যাদের কোনো সুনাম নেই। প্রেরিত যোহন যিশুর দিনে কর্তৃত্বে থাকা কিছু ব্যক্তি সম্বন্ধে কী লিখেছিলেন, তা বিবেচনা করুন: “অধ্যক্ষদের মধ্যেও অনেকে [যিশুতে] বিশ্বাস করিল; কিন্তু ফরীশীদের ভয়ে স্বীকার করিল না, পাছে সমাজচ্যুত হয়; কেননা ঈশ্বরের কাছে গৌরব অপেক্ষা তাহারা বরং মনুষ্যদের কাছে গৌরব অধিক ভালবাসিত।” (যোহন ১২:৪২, ৪৩) সেই অধ্যক্ষরা যদি ফরীশীরা কী চিন্তা করে, সেটার ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব না দিত, তাহলে তা তাদের জন্য কত উত্তমই না হতো।

তাঁর পরিচর্যার শুরুর দিকে যিশু স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছিলেন যে, কেন অনেকে তাঁকে গ্রহণ করবে না এবং তাঁর ওপর বিশ্বাস দেখাবে না। (পড়ুন, যোহন ৫:৩৯-৪৪.) ইস্রায়েল জাতি শত শত বছর ধরে মশীহের আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিল। যিশু যখন শিক্ষা দিতে শুরু করেছিলেন, তখন কেউ কেউ দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী থেকে হয়তো উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, খ্রিস্টের উপস্থিতির নিরূপিত সময় এসে গিয়েছে। কয়েক মাস আগে যখন যোহন বাপ্তাইজক প্রচার করছিলেন, তখন অনেকে এই কথা বলাবলি করছিল: “কি জানি, ইনিই বা সেই খ্রীষ্ট।” (লূক ৩:১৫) দীর্ঘপ্রতীক্ষিত মশীহ এখন তাদের মাঝে শিক্ষা দিচ্ছেন। কিন্তু, ব্যবস্থাবেত্তারা তাঁকে গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এর সঠিক কারণ ব্যাখ্যা করে যিশু তাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তোমরা কিরূপে বিশ্বাস করিতে পার? তোমরা ত পরস্পরের নিকটে গৌরব গ্রহণ করিতেছ, এবং একমাত্র ঈশ্বরের নিকট হইতে যে গৌরব আইসে, তাহার চেষ্টা কর না।”

৮, ৯. আলোর দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে দেখান যে, কীভাবে মানুষের কাছ থেকে পাওয়া গৌরব ঐশিক গৌরবকে অস্পষ্ট করে দিতে পারে।

কীভাবে মানুষের কাছ থেকে পাওয়া গৌরব ঐশিক গৌরবকে অস্পষ্ট করে দিতে পারে, তা আলোর দ্যুতির সঙ্গে তুলনা করার মাধ্যমে তুলে ধরা যেতে পারে। আমাদের চমৎকার নিখিলবিশ্ব গৌরবে পরিপূর্ণ। আপনার কি মনে আছে যে, শেষ কবে আপনি পরিষ্কার এক রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আপনার চারপাশে হাজার হাজার নক্ষত্র দেখেছেন? ‘নক্ষত্রগণের তেজ’ সশ্রদ্ধ ভয় জাগিয়ে তোলে। (১ করি. ১৫:৪০, ৪১) কিন্তু, আলো দ্বারা সজ্জিত শহরের রাস্তা থেকে সেই একই আকাশ দেখতে কেমন লাগে? আসলে, শহরের আলোর কারণে আমাদের পক্ষে দূরের নক্ষত্রগুলো থেকে বিচ্ছুরিত আলো দেখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে! এর কারণ কি এই যে, রাস্তার, স্টেডিয়ামের এবং দালানকোঠার আলো নক্ষত্রের আলো থেকে আরও বেশি শক্তিশালী অথবা আরও বেশি সুন্দর? না! এর কারণ হল, শহরের আলো আমরা অনেক কাছ থেকে দেখতে পাই এবং যিহোবার সৃষ্টি থেকে আমরা যা প্রত্যক্ষ করতে পারি, সেটার ক্ষেত্রে এই আলো বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রাতের আকাশের বিস্ময়কর সৌন্দর্য দেখার জন্য আমাদের অবশ্যই কৃত্রিম আলো থেকে আসা বাধা কোনো না কোনোভাবে বন্ধ করতে অথবা পরিহার করতে হবে।

একইভাবে, মানুষের গৌরব আমাদেরকে সেই চির গৌরব উপলব্ধি এবং অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে, যা যিহোবা আমাদের প্রদান করতে ইচ্ছুক। পরিচিত ব্যক্তিরা অথবা পরিবারের সদস্যরা তাদের সম্বন্ধে কী চিন্তা করবে, সেই ভয়ে অনেকে রাজ্যের বার্তা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু, এমনকী ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত দাসদেরও কি মানুষের কাছ থেকে গৌরব পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রভাবিত করতে পারে? ধরুন, একজন যুবককে এমন একটা এলাকায় প্রচার করার কার্যভার দেওয়া হয়েছে, যেখানে সে যদিও বেশ পরিচিত কিন্তু এখনও যিহোবার একজন সাক্ষি হিসেবে পরিচিত নয়। সে কি ভয় পেয়ে পিছিয়ে পড়বে? কিংবা ঈশতান্ত্রিক লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করার জন্য কেউ যদি তাকে উপহাস করে, তাহলে? সে কি এমন ব্যক্তিদেরকে তার জীবনের বাছাইয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে দেবে, যাদের স্পষ্ট আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই? অথবা ধরুন একজন খ্রিস্টান কোনো গুরুতর পাপ করেছেন। মণ্ডলীতে তার সুনাম নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে অথবা প্রিয়জনদের হতাশ করতে চান না বলে, তিনি কি তার অন্যায় কাজ লুকাবেন? দ্বিতীয় পরিস্থিতির ক্ষেত্রে, তার প্রধান চিন্তার বিষয় যদি যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক পুর্নস্থাপন করা হয়, তাহলে তিনি “মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে আহ্বান” করবেন এবং তাদের কাছ থেকে সাহায্য চাইবেন।—পড়ুন, যাকোব ৫:১৪-১৬.

১০. (ক) অন্যেরা আমাদের কোন দৃষ্টিতে দেখবে, সেই সম্বন্ধে অতিরিক্ত চিন্তা করা আমাদের বিচারবুদ্ধিকে কীভাবে নষ্ট করে দিতে পারে? (খ) আমরা যদি নম্রতা সহকারে কাজ করি, তাহলে আমাদের কোন বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে?

১০ এইরকমটা হতে পারে যে, আমরা খ্রিস্টীয় পরিপক্বতার দিকে অগ্রগতি লাভ করছি কিন্তু একজন সহবিশ্বাসী আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। তার অকপট মন্তব্য আমাদের সাহায্য করতে পারে, যদি আমরা গর্ব, মুখ রক্ষা করার ইচ্ছা অথবা আমাদের কাজকে ন্যায্য বলে প্রতিপন্ন করার প্রলোভনের কারণে প্রতিরক্ষামূলক ঢাল তুলে না ধরি। অথবা ধরুন আপনি একজন সহবিশ্বাসীর সঙ্গে একটা প্রকল্পে কাজ করছেন। এই সম্মিলিত কাজে আপনার উত্তম ধারণা এবং কাজের জন্য কে কৃতিত্ব লাভ করবে, সেটা নিয়ে কি আপনি বেশি চিন্তা করেন? আপনি যদি এইরকম কোনো পরিস্থিতিতে পড়েন, তাহলে নিশ্চিত থাকুন যে, “নম্রচিত্ত ব্যক্তি সম্মান” বা গৌরব “পাইবে।”—হিতো. ২৯:২৩.

১১. প্রশংসার প্রতি আমাদের ভিতরের প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত এবং কেন?

১১ অধ্যক্ষরা এবং যারা এই দায়িত্বের জন্য “আকাঙ্ক্ষী,” তাদেরও মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা চাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। (১ তীম. ৩:১; ১ থিষল. ২:৬) সেই সময় একজন ভাইয়ের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, যখন তিনি একটা কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করার জন্য আন্তরিক প্রশংসা লাভ করেন? তিনি হয়তো নিজের জন্য একটা স্তম্ভ তৈরি করবেন না, যেমনটা রাজা শৌল করেছিলেন। (১ শমূ. ১৫:১২) কিন্তু, তিনি কি সহজেই স্বীকার করেন যে, তার সাফল্য কেবল যিহোবার অযাচিত দয়ার কারণে সম্ভবপর হয়েছে এবং ভবিষ্যতের যেকোনো সফলতার আশাও কেবল ঈশ্বরের আশীর্বাদ এবং সাহায্যের ওপর নির্ভর করে? (১ পিতর ৪:১১) প্রশংসার প্রতি আমাদের ভিতরের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে যে, আমরা কোন ধরনের গৌরব আশা করি।—হিতো. ২৭:২১.

“তোমাদের পিতার অভিলাষ সকল পালন করাই তোমাদের ইচ্ছা”

১২. কী কিছু যিহুদিকে যিশুর কথা শোনার ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছিল?

১২ আরেকটা যে-বিষয় ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত গৌরব ধরে রাখার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা দিতে পারে, সেটা হল আমাদের আকাঙ্ক্ষা। অন্যায় আকাঙ্ক্ষাগুলো আমাদেরকে সত্য শোনার ক্ষেত্রে সবসময় বাধা দিতে পারে। (পড়ুন, যোহন ৮:৪৩-৪৭.) যিশু কিছু যিহুদিকে বলেছিলেন যে, তারা তাঁর বার্তা শোনেনি কারণ ‘তাহাদের পিতা দিয়াবলের অভিলাষ সকল পালন করাই তাহাদের ইচ্ছা।’

১৩, ১৪. (ক) মানুষের কথাবার্তার ব্যাপারে আমাদের মস্তিষ্কের প্রক্রিয়া সম্বন্ধে গবেষকরা কী বলে? (খ) কী নির্ধারণ করে যে, আমরা কার কথা শুনব?

১৩ মাঝে মাঝে আমরা কেবল সেই বিষয়টাই শোনা বেছে নিই, যা আমরা শুনতে চাই। (২ পিতর ৩:৫) যিহোবা আমাদেরকে অনাবশ্যক শব্দ না শোনার অসাধারণ ক্ষমতা দিয়ে তৈরি করেছেন। একটু থামুন এবং ঠিক এই মুহূর্তে আপনি কতগুলো স্বতন্ত্র শব্দ শুনতে পারছেন, সেটার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন। একটু আগেও হয়তো আপনি এগুলোর মধ্যে অনেক শব্দ লক্ষ করেননি। আপনার মস্তিষ্কের গঠন প্রণালী আপনাকে একটা বিষয়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করছিল, যদিও বিভিন্ন ধরনের শব্দ শোনার ক্ষমতা আপনার রয়েছে। কিন্তু, গবেষকরা দেখেছে যে, ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন শব্দের মধ্যে পার্থক্য করা ধীরে ধীরে সেই সময়ে কঠিন হয়ে ওঠে, যখন এর সঙ্গে মানুষের কথাবার্তা শোনার বিষয়টা জড়িত থাকে। এর অর্থ হল, আপনি যখন একইসঙ্গে দুটো স্বর শোনেন, তখন আপনাকে বেছে নিতে হয় যে, আপনি কোনটার প্রতি মনোযোগ দেবেন। আপনি কার কথা শুনতে চান, সেটার ওপর আপনার বাছাই নির্ভর করবে। যে-যিহুদিরা তাদের পিতা দিয়াবলের অভিলাষ পালন করতে চেয়েছিল, তারা যিশুর কথা শোনেনি।

১৪ আমরা ‘প্রজ্ঞার গৃহ’ এবং ‘হীনবুদ্ধির গৃহ’ থেকে বার্তা লাভ করি। (হিতো. ৯:১-৫, ১৩-১৭) প্রজ্ঞা এবং হীনবুদ্ধি, উভয়ই রূপকভাবে আমাদের আহ্বান করছে আর এটা আমাদের যেকোনো একটা বিষয় বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়। আমরা কার আমন্ত্রণ গ্রহণ করব? এর উত্তর, আমরা কার ইচ্ছা পালন করতে চাই, সেটার ওপর নির্ভর করে। যিশুর মেষরা তাঁর রব শোনে এবং তাঁকে অনুসরণ করে। (যোহন ১০:১৬, ২৭) তারা “সত্যের” পক্ষে। (যোহন ১৮:৩৭) “অপর লোকদের রব তাহারা জানে না।” (যোহন ১০:৫) এই ধরনের নম্র ব্যক্তিরা গৌরব ধরে রাখে।—হিতো. ৩:১৩, ১৬; ৮:১, ১৮.

“সে সকল তোমাদের গৌরব”

১৫. কীভাবে পৌলের ক্লেশ অন্যদের জন্য “গৌরব” ছিল?

১৫ যিহোবার ইচ্ছা পালন করার ব্যাপারে আমাদের অধ্যবসায় অন্যদেরকেও গৌরব ধরে রাখতে সাহায্য করে। ইফিষের মণ্ডলীকে পৌল লিখেছিলেন: “আমার যাচ্ঞা এই, তোমাদের নিমিত্ত আমার যে সকল ক্লেশ হইতেছে, তাহাতে যেন নিরুৎসাহ না হও; সে সকল তোমাদের গৌরব।” (ইফি. ৩:১৩) কোন অর্থে, পৌলের ক্লেশ ইফিষীয়দের জন্য “গৌরব” ছিল? বিভিন্ন পরীক্ষা সত্ত্বেও ক্রমাগত তাদের সেবা করার বিষয়ে পৌলের ইচ্ছুক মনোভাব ইফিষীয়দের এই বিষয়টা দেখিয়েছিল যে, খ্রিস্টান হিসেবে তারা যে-বিশেষ সুযোগগুলো উপভোগ করছিল, সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং নিঃসন্দেহে অতিশয় মূল্যবান। পৌল যদি ক্লেশের মধ্যে হাল ছেড়ে দিতেন, তাহলে সেটা কি এই বার্তা প্রদান করত না যে, যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক, তাদের পরিচর্যা এবং তাদের বিশ্বাস মূল্যবান নয়? পৌলের ধৈর্য খ্রিস্ট ধর্মকে উচ্চীকৃত করেছিল এবং দেখিয়েছিল যে, শিষ্যত্বের জন্য যেকোনো ত্যাগস্বীকার উপযুক্ত।

১৬. লুস্ত্রায় পৌল কোন ক্লেশ ভোগ করেছিলেন?

১৬ পৌলের উদ্যোগ এবং ধৈর্যের যে-প্রভাব ছিল, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করুন। প্রেরিত ১৪:১৯, ২০ পদ জানায়: “আন্তিয়খিয়া ও ইকনিয় হইতে কয়েক জন যিহূদী আসিল; আর তাহারা লোকসমূহকে প্রবৃত্তি দিয়া পৌলকে পাথর মারিল, এবং নগরের [লুস্ত্রার] বাহিরে টানিয়া লইয়া গেল, মনে করিল, তিনি মরিয়া গিয়াছেন। কিন্তু শিষ্যগণ তাঁহার চারি পার্শ্বে দাঁড়াইলে তিনি উঠিয়া নগরমধ্যে প্রবেশ করিলেন। পরদিন তিনি বার্ণবার সহিত দর্বীতে চলিয়া গেলেন।” কল্পনা করুন যে, তাকে মৃত বলে ফেলে রাখার পরদিনই তিনি আধুনিক কোনো পরিবহন ছাড়াই ১০০ কিলোমিটার (৬০ মাইল) পথ যাত্রা করেছিলেন!

১৭, ১৮. (ক) লুস্ত্রায় পৌল যে-কষ্টভোগ করেছিলেন, তা তীমথিয় কোন অর্থে অনুসরণ করেছিলেন? (খ) পৌলের ধৈর্য তীমথিয়ের ওপর কোন প্রভাব ফেলেছিল?

১৭ তীমথিয় কি সেই ‘শিষ্যগণের’ মধ্যে ছিলেন, যারা পৌলের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল? প্রেরিত বইয়ের বিবরণ স্পষ্টভাবে তা জানায় না, তবে হতে পারে, তিনিও তাদের মধ্যে ছিলেন। তীমথিয়ের কাছে লেখা তার দ্বিতীয় চিঠিতে পৌল কী লিখেছিলেন, তা বিবেচনা করে দেখুন: “তুমি আমার শিক্ষা, আচার ব্যবহার . . . অনুসরণ করিয়াছ; আন্তিয়খিয়াতে [নগর থেকে বহিষ্কার], ইকনিয়ে [পাথর নিক্ষেপ করার চেষ্টা], লুস্ত্রায় [পাথর মারা] আমার প্রতি কি কি ঘটিয়াছিল; কত তাড়না সহ্য করিয়াছি। আর সেই সমস্ত হইতে প্রভু আমাকে উদ্ধার করিয়াছেন।”—২ তীম. ৩:১০, ১১; প্রেরিত ১৩:৫০; ১৪:৫, ১৯.

১৮ তীমথিয় সেই ঘটনাগুলো “অনুসরণ” করেছিলেন এবং পৌলের ধৈর্য সম্বন্ধে ভালোভাবে জ্ঞাত ছিলেন। এটা তীমথিয়ের মনের ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল। পৌল যখন লুস্ত্রা পরিদর্শন করেছিলেন, তখন তিনি তীমথিয়কে এমন একজন উদাহরণযোগ্য খ্রিস্টান হিসেবে দেখেছিলেন, ‘লুস্ত্রা ও ইকনীয় নিবাসী ভ্রাতৃগণ যাঁহার পক্ষে সাক্ষ্য দিত [“সুখ্যাতি করত,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]।’ (প্রেরিত ১৬:১, ২) পরবর্তী সময়ে, তীমথিয় গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠেছিলেন।—ফিলি. ২:১৯, ২০; ১ তীম. ১:৩.

১৯. ধৈর্য অন্যদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে?

১৯ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ব্যাপারে আমাদের অধ্যবসায় অন্যদের ওপর একইরকম প্রভাব ফেলতে পারে আর তা বিশেষভাবে এমন অল্পবয়সিদের ওপর, যাদের মধ্যে অনেকে ঈশ্বরের অত্যন্ত মূল্যবান দাস হিসেবে বেড়ে উঠবে। অল্পবয়সি শিষ্যরা যে কেবল আমাদের লক্ষ করে এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় আমাদের কথাবার্তার গুণগত মান ও দক্ষতা থেকে শেখে এমন নয় কিন্তু সেইসঙ্গে জীবনের অবমাননাকর পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করি, তা দেখে উপকারও লাভ করে। পৌল ‘সকলই সহ্য করিয়াছিলেন,’ যেন যারা বিশ্বস্ততা বজায় রাখে, তারা “পরিত্রাণ অনন্তকালীয় প্রতাপের” বা গৌরবের “সহিত প্রাপ্ত হয়।”—২ তীম. ২:১০.

২০. কেন আমাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা গৌরব অন্বেষণ করে চলা উচিত?

২০ তাই, আমাদের কি ‘ঈশ্বরের নিকট হইতে যে গৌরব আইসে, তাহার চেষ্টা করা’ উচিত নয়? (যোহন ৫:৪৪; ৭:১৮) অবশ্যই! (পড়ুন, রোমীয় ২:৬, ৭.) যিহোবা “যাহারা প্রতাপ” বা গৌরব “অন্বেষণ করে, তাহাদিগকে অনন্ত জীবন” দান করেন। এ ছাড়া, আমাদের “সৎক্রিয়ায় ধৈর্য্য” অন্যদেরকে তাদের অনন্ত উপকারের জন্য স্থির থাকতে অনুপ্রাণিত করে। তাই, ঈশ্বরপ্রদত্ত গৌরব ধরে রাখার ক্ষেত্রে কোনো কিছুকেই বাধা হতে দেবেন না।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

অল্পবয়সিরা বয়স্ক খ্রিস্টানদের অধ্যবসায়ের প্রতি উপলব্ধি দেখায়