সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এটা আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার

এটা আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার

এটা আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার

‘যিহোবার দাসদের এই অধিকার।’—যিশা. ৫৪:১৭.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

ঈশ্বর তাঁর লিখিত বাক্য সংরক্ষণ করার জন্য কী করেছেন?

লোকেদের ব্যবহারের জন্য যিহোবার নামকে কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে?

আধ্যাত্মিক সত্যের ওপর বিভিন্ন আক্রমণ আসা সত্ত্বেও ঈশ্বর যেভাবে সত্যকে সংরক্ষণ করেছেন, তা ব্যাখ্যা করুন।

১. মানবজাতির মঙ্গলের জন্য যিহোবা প্রেমের সঙ্গে কী সংরক্ষণ করেছেন?

 যিহোবা, * যিনি ‘জীবন্ত ঈশ্বর ও অনন্তকালস্থায়ী’, তিনি মানবজাতির জন্য তাঁর জীবন রক্ষাকারী বার্তা সংরক্ষণ করেছেন। এটা নিশ্চিতভাবে চিরস্থায়ী হবে কারণ ‘যিহোবার বাক্য চিরকাল থাকে।’ (দানি. ৬:২৬; ১ পিতর ১:২৩-২৫) যিহোবা প্রেমের সঙ্গে তাঁর লিখিত বাক্য বাইবেলে এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করেছেন বলে আমরা কতই না কৃতজ্ঞ!

২. ঈশ্বর তাঁর লিখিত বাক্যে তাঁর লোকেদের ব্যবহারের জন্য কী সংরক্ষণ করেছেন?

ঈশ্বর তাঁর বাক্যে, তিনি নিজের জন্য যে-যথার্থ নাম বেছে নিয়েছেন তা সংরক্ষণ করেছেন, যাতে লোকেরা সেটা ব্যবহার করতে পারে। শাস্ত্র “আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর বৃত্তান্ত” তুলে ধরার সময় সেখানে প্রথম বারের মতো ‘যিহোবা ঈশ্বর’ শব্দটি উল্লেখ করে। (আদি. ২:৪) ঈশ্বরের নাম দশ আজ্ঞা সমন্বিত প্রস্তরফলকের ওপরে বেশ কয়েক বার অলৌকিকভাবে খোদাই করা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম আজ্ঞা এভাবে শুরু হয়েছে: ‘আমি তোমার ঈশ্বর যিহোবা।’ (যাত্রা. ২০:১-১৭) ঈশ্বরের নাম টিকে রয়েছে কারণ সার্বভৌম প্রভু যিহোবা, তাঁর বাক্য ও তাঁর নামকে দূর করে দেওয়ার ব্যাপারে শয়তানের সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, সেগুলো সংরক্ষণ করেছেন।

৩. সারা বিশ্ব যদিও ধর্মীয় ভুলভ্রান্তিতে আচ্ছন্ন, কিন্তু ঈশ্বর কী সংরক্ষণ করেছেন?

এ ছাড়া, যিহোবা তাঁর বাক্যে সত্য সংরক্ষণ করেছেন। সারা বিশ্ব যদিও ধর্মীয় ভুলভ্রান্তিতে আচ্ছন্ন, কিন্তু যিহোবা আমাদের আধ্যাত্মিক দীপ্তি ও সত্য দিয়েছেন বলে আমরা কতই না কৃতজ্ঞ! (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪৩:৩, ৪.) যেখানে মানবজাতির অধিকাংশই আধ্যাত্মিক অন্ধকারে চলছে, সেখানে আমরা আনন্দের সঙ্গে ঈশ্বরদত্ত আধ্যাত্মিক জ্যোতিতে চলছি।—১ যোহন ১:৬, ৭.

মূল্যবান বলে গণ্য করার মতো আমাদের এক উত্তরাধিকার রয়েছে

৪, ৫. ১৯৩১ সাল থেকে আমরা কোন বিশেষ সুযোগ লাভ করেছি?

খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের মহামূল্য এক উত্তরাধিকার রয়েছে। কলিন্স কোবিল্ড ইংলিশ ডিকশনারি বলে: “একটা দেশের উত্তরাধিকার হল সেইসমস্ত গুণাবলি, ঐতিহ্য অথবা জীবনযাপনের বিভিন্ন দিক, যেগুলো সেখানে বছরের পর বছর ধরে টিকে থাকে এবং যেগুলো এক প্রজন্ম তার পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়ে যায়।” একইভাবে, আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের মধ্যে রয়েছে, ঈশ্বরের বাক্যের সঠিক জ্ঞান উপভোগ করার আশীর্বাদ ও সেইসঙ্গে ঈশ্বর এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধীয় সত্যের এক স্পষ্ট বোধগম্যতা লাভ করা। আর এর সঙ্গে এক অতি বিশেষ সুযোগও জড়িত।

সেই বিশেষ সুযোগটা ১৯৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর কলাম্বাসে অনুষ্ঠিত আমাদের সম্মেলনে আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের অংশ হয়। ছাপানো প্রোগ্রামের ওপরে “জেডব্লু” অক্ষরগুলো দেখা গিয়েছিল। একজন বোন বলেছিলেন: “জেডব্লু দিয়ে কী বোঝায়, সেই বিষয়ে বিভিন্ন অনুমান করা হচ্ছিল—জাস্ট ওয়েট, জাস্ট ওয়াচ এবং সঠিকটাও।” তখন আমাদের বাইবেল ছাত্র বলে ডাকা হতো, কিন্তু ১৯৩১ সালের ২৬ জুলাই, রবিবারে উত্থাপিত এক প্রস্তাবের মাধ্যমে আমরা যিহোভাস্‌ উইট্‌নেসেস্‌ বা যিহোবার সাক্ষি নাম গ্রহণ করেছিলাম। সেই শাস্ত্রীয় নাম লাভ করা এক রোমাঞ্চকর বিষয় ছিল। (পড়ুন, যিশাইয় ৪৩:১২.) একজন ভাই স্মরণ করে বলেন, “আমি কখনো সেই প্রবল আনন্দধ্বনি ও হাততালির শব্দ ভুলতে পারব না, সেই শব্দে সভাস্থল কেঁপে উঠেছিল।” বিশ্বের আর কেউই সেই নাম চায়নি, কিন্তু ঈশ্বর আট দশকেরও বেশি সময় ধরে আমাদেরকে সেই নাম ব্যবহার করতে দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন। যিহোবার সাক্ষি হতে পারা কতই না বিশেষ এক সুযোগ!

৬. আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের মধ্যে কোন সঠিক তথ্যগুলো রয়েছে?

আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের মধ্যে অতীত থেকে প্রাপ্ত সঠিক ও মূল্যবান তথ্যের এক ভাণ্ডার রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কথা বিবেচনা করুন। এই কুলপতিরা ও তাদের পরিবার নিশ্চয়ই কীভাবে যিহোবাকে খুশি করা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা করত। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি যোষেফ যৌন অনৈতিকতা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যেন “ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ” না করেন। (আদি. ৩৯:৭-৯) এ ছাড়া, খ্রিস্টীয় শিক্ষামালা বা ঐতিহ্য মৌখিকভাবে অথবা দৃষ্টান্তের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে দেওয়া হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে প্রভুর সান্ধ্যভোজ সংক্রান্ত সেই বিষয়গুলোও ছিল, যেগুলো প্রেরিত পৌল খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলোকে দিয়েছেন। (১ করি. ১১:২, ২৩) বর্তমানে, “আত্মায় ও সত্যে” ঈশ্বরকে উপাসনা করার জন্য প্রয়োজনীয় বিস্তারিত বিষয় তাঁর লিখিত বাক্যেরই অংশ। (পড়ুন, যোহন ৪:২৩, ২৪.) যদিও সমস্ত মানবজাতিকে জ্ঞানালোকিত করার জন্য বাইবেল দেওয়া হয়েছে, কিন্তু যিহোবার দাস হিসেবে আমরা এটিকে বিশেষভাবে মূল্যবান বলে গণ্য করি।

৭. আমাদের উত্তরাধিকারের মধ্যে কোন উৎসাহজনক প্রতিজ্ঞা রয়েছে?

আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের আরও কিছু অংশ হল অতি সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন বিবরণ, যেগুলো প্রমাণ দেয় যে, ‘যিহোবা আমাদের সপক্ষ।’ (গীত. ১১৮:৭) এগুলো আমাদেরকে নিরাপত্তার অনুভূতি এনে দেয়, এমনকী সেই সময়ও, যখন আমরা তাড়িত হই। আমাদের বৃদ্ধিরত আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের এক উৎসাহজনক অংশ হচ্ছে এই প্রতিজ্ঞা: ‘যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না; যে কোন জিহ্বা বিচারে তোমার প্রতিবাদিনী হয়, তাহাকে তুমি দোষী করিবে। যিহোবার দাসদের এই অধিকার’ বা উত্তরাধিকার ‘এবং আমা হইতে তাহাদের এই ধার্ম্মিকতা লাভ হয়, ইহা যিহোবা কহেন।’ (যিশা. ৫৪:১৭) শয়তানের কোনো অস্ত্রই আমাদের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারবে না।

৮. এই প্রবন্ধে ও পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

শয়তান ঈশ্বরের বাক্যকে নষ্ট করে ফেলার, যিহোবা নামটি মুছে ফেলার এবং সত্যকে চেপে রাখার চেষ্টা করে এসেছে। কিন্তু, সে কখনোই যিহোবার সমকক্ষ নয়, যিনি এইসমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করেছেন। এই প্রবন্ধে ও পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা দেখব যে, (১) কীভাবে ঈশ্বর তাঁর বাক্যকে সংরক্ষণ করেছেন; (২) কীভাবে যিহোবা তাঁর নাম সংরক্ষণের বিষয়টার প্রতি লক্ষ রেখেছেন; এবং (৩) কীভাবে আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমরা যে-সত্য উপভোগ করি, সেই সত্যের উৎস ও সংরক্ষক।

যিহোবা তাঁর বাক্যকে সংরক্ষণ করেছেন

৯-১১. কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, বিভিন্ন আক্রমণের মুখেও বাইবেল রক্ষা পেয়েছে?

যিহোবা চরম বাধাবিপত্তির মধ্যেও তাঁর বাক্যকে সংরক্ষণ করেছেন। এনচিক্লোপিদিয়া কাতলিকা (ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া) বলে: “টুলুসের পরিষদ ১২২৯ সালে, অ্যালবিবাদী ও ওয়ালডোবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ লোকেদের [মাতৃভাষার বাইবেলগুলো] ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিল . . . ১২৩৪ সালে স্পেনের তারাগোনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে জেমস্‌ ১ম-এর অধীনে একইরকম একটা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। . . . পোপতন্ত্র ১৫৫৯ সালে প্রথম বারের মতো এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছিল, যখন পল ৪র্থ-র উপস্থাপিত নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় পবিত্র কার্যালয়-এর অনুমতি ছাড়া মাতৃভাষার বাইবেল ছাপানো এবং নিজের কাছে রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।”

১০ বাইবেলের ওপর বিভিন্ন আক্রমণ আসা সত্ত্বেও, এটিকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ১৩৮২ সালের দিকে জন ওয়াইক্লিফ ও তার সহযোগীরা সর্বপ্রথম ইংরেজি ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করে। আরেকজন বাইবেল অনুবাদক হলেন উইলিয়াম টিনডেল, যাকে ১৫৩৬ সালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কথিত আছে যে, একটা দণ্ডে বেঁধে রাখা অবস্থায় তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন, “প্রভু, তুমি ইংল্যান্ডের রাজার চোখ খুলে দাও।” এরপর তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় ও পোড়ানো হয়।

১১ চরম বিরোধিতার মধ্যেও বাইবেল রক্ষা পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৫৩৫ সালে মাইলস্‌ কভারডেইলের অনুবাদিত ইংরেজি বাইবেল বের হয়। কভারডেইল, টিনডেলের অনুবাদ থেকে “নূতন নিয়ম” এবং “পুরাতন নিয়ম”-এর আদিপুস্তক থেকে বংশাবলি পর্যন্ত ব্যবহার করেছিলেন। তিনি শাস্ত্রের অন্যান্য অংশ ল্যাটিন ভাষা থেকে এবং মার্টিন লুথারের জার্মান ভাষার বাইবেল থেকে অনুবাদ করেছিলেন। বর্তমানে, পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলের মূল্যকে উপলব্ধি করা হয় আর এর কারণ হচ্ছে এটির স্পষ্টতা, বাইবেল পাঠ্যাংশের সঙ্গে এটির হুবহু মিল এবং আমাদের পরিচর্যায় এটির উপকারিতা। আমরা আনন্দিত যে, কোনো মন্দশক্তি অথবা মানবশক্তি যিহোবার বাক্য সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারবে না।

যিহোবা তাঁর নাম সংরক্ষণ করেছেন

১২. ঐশিক নাম সংরক্ষণে নতুন জগঅনুবাদ কোন ভূমিকা পালন করেছে?

১২ যিহোবা ঈশ্বর এই বিষয়টার প্রতি লক্ষ রেখেছেন যেন তাঁর বাক্যে তাঁর নাম সংরক্ষণ করা হয়। এই ক্ষেত্রে, নতুন জগৎ অনুবাদ প্রধান ভূমিকা পালন করছে। এই বাইবেলের ভূমিকায় এটির একনিষ্ঠ অনুবাদকদের কমিটি লিখেছিল: “এই অনুবাদের সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য হল ইংরেজি পাঠ্যাংশে ঐশিক নামকে এর উপযুক্ত স্থানে পুনরায় স্থাপন করা। সাধারণভাবে গৃহীত ইংরেজি রূপ ‘যিহোবা’ শব্দটি ইব্রীয় শাস্ত্র-এ ৬,৯৭৩ বার এবং খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ ২৩৭ বার ব্যবহার করার মাধ্যমে তা সম্পাদন করা হয়েছে।” নতুন জগৎ অনুবাদ এখন সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে ১১৬টারও বেশি ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে এবং ১৭,৮৫,৪৫,৮৬২টিরও বেশি কপি ছাপানো হয়েছে।

১৩. কেন এটা বলা যেতে পারে যে, মানবজাতির শুরু থেকে লোকেরা ঈশ্বরের নাম জানত?

১৩ মানবজাতির শুরু থেকেই লোকেরা ঈশ্বরের নাম জানত। আদম ও হবা এই নাম জানত এবং তারা এটার সঠিক উচ্চারণ জানত। জলপ্লাবনের পর হাম যখন তার বাবার প্রতি অসম্মান দেখিয়েছিলেন, তখন নোহ বলেছিলেন: ‘শেমের ঈশ্বর যিহোবা ধন্য; [হামের পুত্র] কনান তাহার দাস হউক।’ (আদি. ৪:১; ৯:২৬) ঈশ্বর নিজে বলেছিলেন: “আমিই প্রভু। আমার নাম যিহোবা। আমার মহিমা আমি অপরকে দেব না।” ঈশ্বর আরও বলেছিলেন: ‘আমিই যিহোবা, আর কেহ নয়; আমি ব্যতীত অন্য ঈশ্বর নাই।’ (যিশা. ৪২:৮, ইজি-টু-রিড ভারসন; ৪৫:৫) যিহোবা লক্ষ রেখেছেন যেন তাঁর নাম সংরক্ষণ করা হয় এবং সমস্ত পৃথিবীর লোকেদের কাছে জানানো হয়। যিহোবা নাম ব্যবহার করতে পেরে এবং তাঁর সাক্ষি হিসেবে তাঁকে সেবা করতে পেরে আমরা কতই না বিশেষ সুযোগ লাভ করেছি! মূলত আমরা উচ্চস্বরে বলছি: “আমরা . . . আমাদের ঈশ্বরের নামে পতাকা তুলিব।”—গীত. ২০:৫.

১৪. বাইবেল ছাড়াও আর কোথায় ঈশ্বরের নাম খুঁজে পাওয়া গিয়েছে?

১৪ ঈশ্বরের নাম শুধুমাত্র বাইবেলেই দেখা যায় না। ডেড সি-র ২১ কিলোমিটার (১৩ মাইল) পূর্বে অবস্থিত দিবানে (দিবনে) খুঁজে পাওয়া মোয়াবীয় প্রস্তর সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। এই প্রস্তর ইস্রায়েলের রাজা অম্রি সম্বন্ধে উল্লেখ করে এবং ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে মোয়াবের রাজা মেশার বিদ্রোহ সম্বন্ধে মেশার নিজের বর্ণনা তুলে ধরে। (১ রাজা. ১৬:২৮; ২ রাজা. ১:১; ৩:৪, ৫) তবে মোয়াবীয় প্রস্তরটা একটা বিশেষ কারণে আগ্রহজনক আর তা হল, এতে টেট্রাগ্র্যামাটোন বা চারটে ইব্রীয় বর্ণ, যেটার প্রতিবর্ণীকরণ YHWH, ব্যবহার করে ঈশ্বরের নাম দেখানো হয়েছে। * এ ছাড়া, এই ইব্রীয় বর্ণগুলো লাখীশের চিঠিগুলো-তে অর্থাৎ ইস্রায়েলে খুঁজে পাওয়া পোড়া মাটির টুকরোগুলোতেও বার বার দেখা যায়।

১৫. সেপ্টুয়াজিন্ট কী আর কেন এটি তৈরি করা হয়েছে?

১৫ প্রাথমিক বাইবেল অনুবাদকরা ঐশিক নাম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা পালন করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৭ সাল পর্যন্ত বাবিলে নির্বাসনে থাকার পর, অনেক যিহুদি যিহূদা ও ইস্রায়েলে ফিরে যায়নি। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া এমন অসংখ্য যিহুদির আবাস হয়ে উঠেছিল, যাদের ইব্রীয় শাস্ত্র-এর গ্রিক অনুবাদ প্রয়োজন হয়েছিল, যা সেই সময়ে আন্তর্জাতিক এক ভাষা ছিল। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যে সেই অনুবাদ সম্পন্ন হয়েছিল আর সেটির নাম হল সেপ্টুয়াজিন্ট। এর কিছু প্রতিলিপিতে ইব্রীয় বর্ণে যিহোবা নাম রয়েছে।

১৬. ১৬৪০ সালে প্রকাশিত সর্বপ্রথম বইয়ে ঈশ্বরের নামের ব্যবহার সম্বন্ধে একটা উদাহরণ দিন।

১৬ ঐশিক নাম, ইংল্যান্ডের আমেরিকান ঔপনিবেশিক এলাকাগুলোতে প্রকাশিত সর্বপ্রথম সাহিত্য বে সাম বুক-এ পাওয়া যায়। এটির মূল সংস্করণে (যা ১৬৪০ সালে ছাপানো হয়) গীতসংহিতা রয়েছে, যেগুলো ইব্রীয় ভাষা থেকে সেই সময়ের ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। এটি বিভিন্ন বাক্যাংশে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করেছে যেমন, গীতসংহিতা ১:১, ২ পদ বলে একজন “ধন্য ব্যক্তি” দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলেন না, “বরং ইহোভার আইনকানুনেই তার পরম আনন্দ।” ঈশ্বরের নাম সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য ঐশ্বরিক নামটি যা চিরকাল থাকবে (ইংরেজি) ব্রোশার দেখুন।

যিহোবা আধ্যাত্মিক সত্যকে সংরক্ষণ করেছেন

১৭, ১৮. (ক) আপনি কীভাবে “সত্য” শব্দকে ব্যাখ্যা করবেন? (খ) ‘সুসমাচারের সত্যের’ অন্তর্ভুক্ত কী?

১৭ আমরা আনন্দের সঙ্গে ‘যিহোবার, সত্যের ঈশ্বরের’ সেবা করি। (গীত. ৩১:৫) কলিন্স কোবিল্ড ইংলিশ ডিকশনারি বলে, “কোনো কিছু সম্বন্ধে সত্য হল, সেই বিষয় সম্বন্ধে সমস্ত প্রকৃত ঘটনা, কোনো কল্পিত অথবা বানানো বিষয় নয়।” বাইবেলের ইব্রীয় ভাষায় “সত্য” হিসেবে অনুবাদিত শব্দটি প্রায়ই এমন কিছুর প্রতি প্রযোজ্য, যা নির্ভুল, নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত অথবা বাস্তবসম্মত। গ্রিক ভাষায় অনুবাদিত “সত্য” শব্দটি দিয়ে সেই বিষয়কে বোঝায়, যা প্রকৃত ঘটনার অথবা উপযুক্ত ও সঠিক বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

১৮ যিহোবা আধ্যাত্মিক সত্য সংরক্ষণ করেছেন এবং এখন আমাদের জন্য সেই জ্ঞান প্রচুর পরিমাণে জুগিয়ে যাচ্ছেন। (২ যোহন ১, ২) সত্য সম্বন্ধে আমাদের বোঝার ক্ষমতা দিন দিন আরও স্পষ্ট হচ্ছে, কারণ “ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়!” (হিতো. ৪:১৮) নিশ্চিতভাবেই, আমরা যিশুর সঙ্গে পুরোপুরি একমত পোষণ করি, যিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় বলেছিলেন: “তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।” (যোহন ১৭:১৭) ঈশ্বরের লিখিত বাক্যের মধ্যে “সুসমাচারের সত্য” রয়েছে, যার অন্তর্ভুক্ত হল সমগ্র খ্রিস্টীয় শিক্ষা। (গালা. ২:১৪) এই খ্রিস্টীয় শিক্ষার কিছু অংশ হচ্ছে যিহোবার নাম, তাঁর সার্বভৌমত্ব, যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান, পুনরুত্থান এবং রাজ্য সম্বন্ধে বাস্তব বিষয়গুলো। আসুন আমরা এখন বিবেচনা করি যে, সত্যকে চেপে রাখার জন্য শয়তানের বিভিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ঈশ্বর কীভাবে সত্যকে সংরক্ষণ করেছেন।

যিহোবা সত্যের ওপর আসা আক্রমণকে ব্যর্থ করেছেন

১৯, ২০. নিম্রোদ কে ছিলেন আর তার দিনের কোন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল?

১৯ জলপ্লাবনের পরে, এইরকম একটা কথা প্রচলিত ছিল: ‘যিহোবার সাক্ষাতে পরাক্রান্ত ব্যাধ নিম্রোদের তুল্য।’ (আদি. ১০:৯) যিহোবা ঈশ্বরের একজন বিরোধী হিসেবে নিম্রোদ আসলে শয়তানের উপাসনা করতেন আর তিনি সেই বিরোধীদের মতো ছিলেন, যাদের উদ্দেশে যিশু বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদের পিতা দিয়াবলের, এবং তোমাদের পিতার অভিলাষ সকল পালন করাই তোমাদের ইচ্ছা; সে . . . সত্যে থাকে নাই।”—যোহন ৮:৪৪.

২০ বাবিল ও সেইসঙ্গে টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর মাঝামাঝি অন্যান্য নগর নিম্রোদের শাসনের অধীনে ছিল। (আদি. ১০:১০) সম্ভবত তার নির্দেশেই খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২২৬৯ সালে বাবিলের দালান এবং গগনস্পর্শী উচ্চগৃহ নির্মাণ শুরু হয়েছিল। মানবজাতি সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে, যিহোবার এই ইচ্ছার বিপরীতে সেই নির্মাতারা বলেছিল: “আইস, আমরা আপনাদের নিমিত্তে এক নগর ও গগনস্পর্শী এক উচ্চগৃহ নির্ম্মাণ করিয়া আপনাদের নাম বিখ্যাত করি, পাছে সমস্ত ভূমণ্ডলে ছিন্নভিন্ন হই।” কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়ে গিয়েছিল, যখন ঈশ্বর “সমস্ত পৃথিবীর ভাষার ভেদ জন্মাইয়াছিলেন” এবং যে-গগনস্পর্শী উচ্চগৃহ নির্মিত হতে যাচ্ছিল, সেটার নির্মাতাদের ছিন্নভিন্ন করেছিলেন। (আদি. ১১:১-৪, ৮, ৯) সেই কাজের দ্বারা শয়তান যদি এমন একটা ধর্ম প্রবর্তন করার পরিকল্পনা করেও থাকে, যে-ধর্মে সবাই শুধু তার উপাসনা করবে, তার পরও তার সেই কুচক্রান্ত একেবারে ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল। মানবজাতির ইতিহাসজুড়ে লোকেরা যিহোবার উপাসনা করেছে এবং প্রতিদিন এই উপাসনা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২১, ২২. (ক) কেন মিথ্যা ধর্ম কখনোই সত্য উপাসনার ওপর গুরুতর কোনো হুমকি নিয়ে আসতে পারেনি? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

২১ মিথ্যা ধর্ম কখনোই সত্য উপাসনার ওপর গুরুতর কোনো হুমকি নিয়ে আসতে পারেনি। কেন? কারণ আমাদের শিক্ষক তাঁর লিখিত বাক্য সংরক্ষণের বিষয়টার প্রতি লক্ষ রেখেছেন, মানবজাতির কাছে তাঁর নামকে রক্ষা করেছেন এবং আধ্যাত্মিক সত্যের অফুরন্ত উৎস হয়ে এসেছেন। (যিশা. ৩০:২০, ২১) সত্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈশ্বরের উপাসনা করা যদিও আমাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে, কিন্তু তা করার জন্য আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে সদাজাগ্রত থাকতে হবে, যিহোবার ওপর পূর্ণ নির্ভরতা রাখতে হবে এবং তাঁর পবিত্র আত্মার নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

২২ পরের প্রবন্ধে আমরা কিছু মিথ্যা মতবাদের উৎস খুঁজে দেখব। আমরা দেখব যে, সেগুলোকে যখন শাস্ত্রের আলোতে পরীক্ষা করা হয়, তখন সেগুলোর কোনো ভিত্তি থাকে না। এ ছাড়া, আমরা দেখব যে, কীভাবে সত্যের অতুলনীয় সংরক্ষক যিহোবা আমাদেরকে সেই সত্য শিক্ষাগুলো দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন, যেগুলোকে আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের অংশ হিসেবে মূল্যবান বলে গণ্য করি।

[পাদটীকাগুলো]

^ এই প্রবন্ধে যে-শাস্ত্রপদগুলোতে “সদাপ্রভু” শব্দটি এসেছে, সেখানে মূল ভাষার বাইবেল অনুযায়ী “যিহোবা” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

^ দয়া করে ২০১১ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৮ পৃষ্ঠা দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

[৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

১৯৩১ সালে অনুষ্ঠিত আমাদের সম্মেলনে যিহোবার সাক্ষি নাম গ্রহণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

টিনডেলের মতো ব্যক্তিরা ঈশ্বরের বাক্যের জন্য তাদের জীবন দিয়েছিল

[সৌজন্যে]

From Foxe’s Book of Martyrs