সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘ক্লান্ত হইও না’

‘ক্লান্ত হইও না’

‘ক্লান্ত হইও না’

“আইস, আমরা সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হই।”—গালা. ৬:৯.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কোন ব্যবস্থাগুলো সত্যের প্রতি আমাদের উদ্যোগ বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করে?

কীভাবে যিহোবার উপাসনার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা আমাদের সভার উপস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলে?

আমাদের সিদ্ধান্তগুলো কীভাবে দেখাতে পারে যে, আমরা আমাদের পরিচর্যায় ধৈর্য ধরব, নাকি ক্লান্ত হয়ে পড়ব?

১, ২. যিহোবার সর্বজনীন সংগঠন সম্বন্ধে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করার মাধ্যমে কীভাবে আমাদের আস্থা আরও বৃদ্ধি পায়?

 আমরা যে বিশাল সর্বজনীন সংগঠনের একটা অংশ, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা আমাদের বিস্মিত করে তোলে। যিহিষ্কেল ১ অধ্যায় এবং দানিয়েল ৭ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ দর্শনগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যিহোবা বিভিন্ন বিষয়কে দক্ষতার সঙ্গে চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে পরিচালিত করছেন। যিশু সুসমাচার প্রচার কাজের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার, এই কাজে রত ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিকভাবে যত্ন নেওয়ার এবং যিহোবার সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর সংগঠনের পার্থিব অংশকে পরিচালনা দেওয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই বিষয়টা যিহোবার সংগঠনের ব্যাপারে আমাদের কতই না আস্থা প্রদান করে!—মথি ২৪:৪৫.

আমরা কি ব্যক্তিগতভাবে এই অপূর্ব সংগঠনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলি? সত্যের প্রতি আমাদের উদ্যম কি বেড়েই চলছে, নাকি কমে যাচ্ছে? এই ধরনের প্রশ্নগুলো নিয়ে বিবেচনা করলে আমরা হয়তো দেখতে পাব যে, আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়তে শুরু করেছি অথবা আমাদের উদ্যোগ হয়তো কিছুটা হারিয়ে গিয়েছে। এমনটা হতে পারে। প্রথম শতাব্দীতে, প্রেরিত পৌলকে সহখ্রিস্টানদের জোরালো পরামর্শ দিতে হয়েছিল, যেন তারা যিশুর উদ্যোগী উদাহরণ বিবেচনা করে। পৌল বলেছিলেন যে, তা করা তাদেরকে “প্রাণের ক্লান্তিতে অবসন্ন” না হতে সাহায্য করবে। (ইব্রীয় ১২:৩) একইভাবে, আগের প্রবন্ধ, যেখানে যিহোবার সংগঠনের দ্বারা সম্পাদিত কাজগুলো তুলে ধরা হয়েছে, তা মনোযোগের সঙ্গে পরীক্ষা করা যেন আমাদের উদ্যম এবং ধৈর্য বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট সাহায্য করে।

৩. আমরা যদি ক্লান্ত হতে না চাই, তাহলে কীসের প্রয়োজন এবং এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

কিন্তু, পৌল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, আমরা যদি ক্লান্ত হতে না চাই, তাহলে আমাদের আরও বেশি কিছু করা প্রয়োজন। তিনি বলেছিলেন, আমাদের অবশ্যই ‘সৎকর্ম্ম করিয়া’ চলতে হবে। (গালা. ৬:৯) তাই, আমাদের কাজ করা প্রয়োজন। আসুন আমরা কাজের পাঁচটা ক্ষেত্র বিবেচনা করি, যেগুলো আমাদের সুস্থির থাকতে এবং যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। তাহলে আমরা ব্যক্তিগতভাবে নির্ণয় করতে পারব যে, এমন দিকগুলো রয়েছে কি না, যেগুলোতে আমাদের অথবা আমাদের পরিবারের আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

পারস্পরিক উৎসাহ এবং উপাসনার জন্য মিলিত হোন

৪. কেন আমরা বলতে পারি যে, একত্রে মিলিত হওয়া সত্য উপাসনার এক অপরিহার্য অংশ?

যিহোবার দাসদের জন্য একত্রে মিলিত হওয়া সবসময়ই এক প্রধান কাজ হয়ে এসেছে। অদৃশ্য রাজ্যে, আত্মিক প্রাণীদেরকে উপযুক্ত সময়ে যিহোবার একেবারে সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। (১ রাজা. ২২:১৯; ইয়োব ১:৬; ২:১; দানি. ৭:১০) প্রাচীনকালে, ইস্রায়েল জাতিকে একত্রিত হতে হতো, “যেন তাহারা শুনিয়া শিক্ষা পায়।” (দ্বিতীয়. ৩১:১০-১২) প্রথম শতাব্দীতে, যিহুদিদের রীতি ছিল সমাজগৃহে গিয়ে শাস্ত্র থেকে পাঠ করা। (লূক ৪:১৬; প্রেরিত ১৫:২১) খ্রিস্টীয় মণ্ডলী গঠিত হওয়ার সময়ও একত্রে মিলিত হওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল আর এটা এখনও আমাদের উপাসনার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সত্য খ্রিস্টানরা ‘পরস্পর মনোযোগ করে, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারে।’ আমাদের “পরস্পরকে চেতনা” বা উৎসাহ দিয়ে যেতে হবে ‘আর আমরা [ঈশ্বরের] সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছি, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।’—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

৫. কীভাবে আমরা আমাদের সভাগুলোতে পরস্পরকে উৎসাহিত করতে পারি?

একটা গুরুত্বপূর্ণ যে-উপায়ে আমরা পরস্পরকে উৎসাহিত করি, তা হল আমাদের সভাগুলোতে মন্তব্য করা। আমরা ছাপানো কোনো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, কোনো শাস্ত্রপদের প্রয়োগ দেখিয়ে, বাইবেলের নীতি অনুসরণ করার প্রজ্ঞা সম্বন্ধে তুলে ধরে এমন সংক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতা বলে অথবা অন্যান্য উপায়ে জনসমক্ষে আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে প্রকাশ করতে পারি। (গীত. ২২:২২; ৪০:৯) নিশ্চিতভাবেই, আপনি এই বিষয়ে একমত হবেন যে, সভাগুলোতে আমরা যত বছর ধরেই যোগদান করি না কেন, আমাদের বয়স্ক ও অল্পবয়সি ভাইবোনদের আন্তরিক মন্তব্য শোনা সবসময়ই উৎসাহের এক উৎস।

৬. কীভাবে আমাদের সভাগুলো আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে?

আমাদের ঈশ্বর অন্যান্য আর কোন কারণে নিয়মিতভাবে একত্রে মিলিত হওয়ার ওপর এইরকম গুরুত্ব আরোপ করেছেন? আমাদের সভা এবং সম্মেলনগুলো আমাদেরকে প্রচারের এলাকায় নির্ভীকভাবে কথা বলার এবং বিরোধিতা বা উদাসীনতার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সাহস অর্জন করতে সাহায্য করে। (প্রেরিত ৪:২৩, ৩১) শাস্ত্রীয় আলোচনার মাধ্যমে আমরা সুস্থির বা শক্তিশালী হই এবং বিশ্বাসে স্থিরীকৃত হই। (প্রেরিত ১৫:৩২; রোমীয় ১:১১, ১২) উপাসনার জন্য একত্রিত হয়ে আমরা যে-শিক্ষা এবং পারস্পরিক উৎসাহ লাভ করি, তা আমাদেরকে প্রকৃত সুখ অর্জন করতে সাহায্য করে এবং “বিপৎকাল হইতে বিশ্রাম” প্রদান করে। (গীত. ৯৪:১২, ১৩) পরিচালকগোষ্ঠীর টিচিং (শিক্ষাদান সংক্রান্ত) কমিটি, পৃথিবীব্যাপী যিহোবার লোকেদের নির্দেশনা প্রদান করার জন্য যে-সমস্ত আধ্যাত্মিক কার্যক্রম প্রস্তুত করতে হয়, তা তত্ত্বাবধান করে। বছরের প্রতিটা সপ্তাহে আমাদের সভাগুলোতে গঠনমূলক শিক্ষা উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি!

৭, ৮. (ক) আমাদের মণ্ডলীর সভাগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য কী? (খ) কীভাবে সভাগুলো আপনাকে আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করে?

কিন্তু, সভাগুলো থেকে ব্যক্তিগতভাবে উপকার লাভ করার চেয়ে এমনকী আরও গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয় রয়েছে। আমাদের একত্রে মিলিত হওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হল, যিহোবাকে “প্রণিপাত [“উপাসনা,” ইজি-টু-রিড ভারসন]” করা। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৯৫:৬.) আমাদের বিস্ময়কর সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করার কী এক বিশেষ সুযোগই না আমাদের রয়েছে! (কল. ৩:১৬) যিহোবা আমাদের নিয়মিত উপাসনা পাওয়ার যোগ্য আর ঈশতান্ত্রিক সমাবেশে উপস্থিত হয়ে এবং সেখানে অংশগ্রহণ করে আমরা তাঁকে উপাসনা করতে পারি। (প্রকা. ৪:১১) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমাদের জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেন ‘আমরা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি—যেমন কাহারও কাহারও অভ্যাস’!—ইব্রীয় ১০:২৫.

আমাদের খ্রিস্টীয় সভাগুলোকে কি আমরা এমন এক ব্যবস্থা হিসেবে দেখি, যা যিহোবা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আগে পর্যন্ত আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে? যদি দেখে থাকি, তাহলে সভাগুলো সেই “ভিন্ন প্রকার [বা শ্রেয়ঃ]” বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত হবে, যেগুলোর জন্য আমরা আমাদের ব্যস্ত জীবনে সময় করে নিই। (ফিলি. ১:১০, পাদটীকা) অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া যেন আমরা আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে যিহোবার উপাসনায় একতাবদ্ধ হওয়ার সুযোগ বাদ না দিই।

সৎহৃদয়ের লোকেদের খুঁজুন

৯. কীভাবে আমরা জানি যে, প্রচার কাজ গুরুত্বপূর্ণ?

প্রচার কাজে পূর্ণরূপে অংশগ্রহণ করাও আমাদেরকে যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করে। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি এই কাজ শুরু করেছিলেন। (মথি ২৮:১৯, ২০) সেই সময় থেকে রাজ্যের প্রচার এবং শিষ্য তৈরির কাজ যিহোবার পুরো সংগঠনের এক প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে। আধুনিক দিনের অনেক অভিজ্ঞতা এই বিষয়ে প্রমাণ দেয় যে, স্বর্গদূতেরা আমাদের কাজকে সমর্থন করছে এবং আমাদেরকে “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত [“সঠিক প্রবণতা সম্পন্ন,” NW]” ব্যক্তিদের কাছে যেতে পরিচালিত করছে। (প্রেরিত ১৩:৪৮; প্রকা. ১৪:৬, ৭) যিহোবার সংগঠনের পার্থিব অংশ বর্তমানে কার্যরত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই কাজকে সমর্থন করার জন্য সংগঠিত। পরিচর্যাও কি আমাদের জীবনে মনোযোগের প্রধান বিষয়বস্তু?

১০. (ক) সত্যের প্রতি আমরা কীভাবে আমাদের উদ্যম বজায় রাখতে পারি, তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন। (খ) কীভাবে পরিচর্যা আপনাকে ক্লান্ত না হতে সাহায্য করেছে?

১০ পরিচর্যায় উদ্যোগী হওয়া, সত্যের প্রতি আমাদের উদ্যম বজায় রাখতে সাহায্য করে। দীর্ঘসময়ের একজন প্রাচীন এবং নিয়মিত অগ্রগামী মিচেলের মন্তব্য বিবেচনা করুন। তিনি বলেন: “লোকেদের সত্য জানাতে আমার খুবই ভালো লাগে। সাধারণত আমি প্রহরীদুর্গ অথবা সচেতন থাক! পত্রিকার একটা নতুন প্রবন্ধ নিয়ে চিন্তা করি এবং প্রতিটি সংখ্যায় যে-প্রজ্ঞা, অন্তর্দৃষ্টি এবং নিখুঁত ভারসাম্য তুলে ধরা হয়, তা দেখে বিস্মিত হয়ে যাই। এরপর লোকেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং আমি কীভাবে তাদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পারি, তা দেখার আশায় পরিচর্যায় যাওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে উঠি। এভাবে আমার পরিচর্যা আমাকে দৃঢ় থাকতে সাহায্য করে। আমি সাধারণত পরিচর্যার ক্ষেত্রে যে-সময় নির্ধারণ করে রাখি, সেটার আগে বা পরে অন্য সমস্তকিছু করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি।” একইভাবে, আমরা যদি পবিত্র পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকি, তাহলে তা আমাদেরকে ক্রমাগত এই শেষকালে সুস্থির থাকার জন্য সাহায্য করতে পারে।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.

আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণ করুন

১১. কেন আমাদের যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত আধ্যাত্মিক খাদ্যের সদ্‌ব্যবহার করা উচিত?

১১ আমাদের শক্তি প্রদান করার জন্য যিহোবা প্রচুররূপে লিখিত আধ্যাত্মিক খাদ্যের সরবরাহ জুগিয়েছেন। কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি এমন এক সময়ের কথা মনে করতে পারেন, যখন কোনো একটা প্রকাশনা পড়ার পর, আপনি এইরকম চিন্তা করেছেন: ‘ইস্‌, এইরকম একটি পত্রিকাই আমি চাচ্ছিলাম! যিহোবা এটি আমার জন্যই লিখেছেন!’ এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। এই ব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে যিহোবা আমাদের নির্দেশনা এবং পরিচালনা দান করেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমাকে বুদ্ধি দিব, ও তোমার গন্তব্য পথ দেখাইব।” (গীত. ৩২:৮) আমরা যে-সমস্ত আধ্যাত্মিক খাদ্য লাভ করি, সেগুলো গ্রহণ করার এবং সেগুলো নিয়ে ধ্যান করার জন্য কি প্রচেষ্টা করি? এগুলো করা আমাদেরকে এই শেষকালে ক্রমাগত ফল উৎপন্ন করতে এবং আধ্যাত্মিকভাবে ম্লান না হয়ে পড়তে সাহায্য করবে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১:১-৩; ৩৫:২৮; ১১৯:৯৭.

১২. কোন বিষয়টা আমাদেরকে আধ্যাত্মিক খাদ্য হালকাভাবে না নিতে সাহায্য করতে পারে?

১২ আমরা যেন গঠনমূলক আধ্যাত্মিক খাদ্যের নিয়মিত সরবরাহ লাভ করি, তা নিশ্চিত করার সঙ্গে যে-কাজ জড়িত, তা বিবেচনা করা আমাদের জন্য উত্তম। পরিচালকগোষ্ঠীর রাইটিং (লিখন সংক্রান্ত) কমিটি আমাদের ছাপানো প্রকাশনা ও সেইসঙ্গে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত বিষয়বস্তু গবেষণা করার, লিখনের কাজ করার, প্রুফরিডিং করার এবং ছবি সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার বিষয়টা দেখাশোনা করে। যে-শাখাগুলো মুদ্রণের কাজ করে, সেগুলো কাছের এবং দূরের মণ্ডলীগুলোতে সাহিত্য পাঠিয়ে থাকে। কেন এই কাজগুলো করা হয়? যিহোবার লোকেরা যেন আধ্যাত্মিকভাবে পুষ্ট থাকে। (যিশা. ৬৫:১৩) আমরা যেন যিহোবার সংগঠনের মাধ্যমে প্রাপ্ত সমস্ত আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণ করার ব্যাপারে অধ্যবসায়ী হই।—গীত. ১১৯:২৭.

সাংগঠনিক ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করুন

১৩, ১৪. স্বর্গে কারা যিহোবার ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করছে আর কীভাবে আমরা পৃথিবীতে একইরকম সমর্থন প্রকাশ করতে পারি?

১৩ প্রেরিত যোহনকে দেওয়া দর্শনে যিশুকে যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের পরাজিত করার জন্য শ্বেতবর্ণ অশ্বের ওপর আরোহিত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। (প্রকা. ১৯:১১-১৫) এটা জানা আমাদের বিশ্বাসকে কতই না শক্তিশালী করে যে, যিশুর ঠিক পিছনেই বিশ্বস্ত স্বর্গদূতেরা রয়েছে এবং তাঁর সঙ্গে পৃথিবী থেকে নীত সেই অভিষিক্ত বিজয়ীরাও রয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করেছে! (প্রকা. ২:২৬, ২৭) যিহোবার ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করার কী এক চমৎকার উদাহরণ!

১৪ একইভাবে, বিস্তর লোক খ্রিস্টের সেই অভিষিক্ত ভাইদের কাজকে পূর্ণরূপে সমর্থন করছে, যারা এখনও পৃথিবীতে রয়েছে এবং বর্তমানে সংগঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। (পড়ুন, সখরিয় ৮:২৩.) যিহোবার ব্যবস্থাগুলোর প্রতি কীভাবে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত সমর্থন প্রকাশ করতে পারি? তা প্রকাশ করার একটা উপায় হল, সেই ব্যক্তিদের বশীভূত থাকা, যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে। (ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭) এই বশ্যতা দেখানো শুরু হয় আমাদের নিজেদের মণ্ডলী থেকেই। প্রাচীনদের সম্বন্ধে আমাদের মন্তব্য কি তাদের প্রতি এবং তাদের তত্ত্বাবধানের কাজের প্রতি সম্মান গড়ে তোলে? এই বিশ্বস্ত পুরুষদের প্রতি সম্মান দেখানোর এবং শাস্ত্রীয় উপদেশের জন্য তাদের ওপর নির্ভর করার ব্যাপারে আমরা কি আমাদের সন্তানদের উৎসাহিত করি? এ ছাড়া, দানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কাজকে সমর্থন করার জন্য কীভাবে আমরা আমাদের অর্থ ব্যবহার করতে পারি, তা কি আমরা পরিবারগতভাবে আলোচনা করি? (হিতো. ৩:৯; ১ করি. ১৬:২; ২ করি. ৮:১২) কিংডম হলের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে অংশ নেওয়ার বিশেষ সুযোগকে কি আমরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখি? যেখানে এই ধরনের সম্মান এবং একতা রয়েছে, সেখানে যিহোবার আত্মা স্বচ্ছন্দে কাজ করে। সেই আত্মার মাধ্যমে আমরা এই শেষকালে ক্লান্ত না হওয়ার জন্য ক্রমাগত সাহায্য লাভ করি।—যিশা. ৪০:২৯-৩১.

আমাদের বার্তার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করুন

১৫. যিহোবার মহৎ উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার জন্য কেন আমাদের ক্রমাগত লড়াই করতে হয়?

১৫ পরিশেষে বলা যায়, ধৈর্য ধরার এবং যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের ব্যক্তিগত জীবনযাপন, আমরা যে-বার্তা বহন করি, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে আর এই বিষয়টা ‘প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা করিবার’ মাধ্যমে করা যেতে পারে। (ইফি. ৫:১০, ১১) নিজেদের অসিদ্ধতা এবং শয়তানের বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও এই মন্দ জগতের কারণে আমরা জীবনে নেতিবাচক প্রভাবগুলোর সঙ্গে ক্রমাগত লড়াই করছি। আমাদের প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ যিহোবার সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন কঠিন লড়াই করছেন। এটা আপনাদেরকে তাঁর কাছে আরও প্রিয় করে তোলে। তাই, হাল ছেড়ে দেবেন না! যিহোবার উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা আমাদের জন্য অনেক পরিতৃপ্তি নিয়ে আসবে এবং এই বিষয়টা নিশ্চিত করবে যে, আমাদের উপাসনা অলীক বা নিরর্থক নয়।—১ করি. ৯:২৪-২৭.

১৬, ১৭. (ক) আমরা যদি কোনো গুরুতর পাপ করি, তাহলে আমাদের কী করা উচিত? (খ) অ্যানের উদাহরণ থেকে আমরা কীভাবে উপকার লাভ করতে পারি?

১৬ কিন্তু, আমরা যদি কোনো গুরুতর পাপ করে ফেলি, তাহলে আমাদের কী করা উচিত? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাহায্য লাভের চেষ্টা করুন। পাপ গোপন করা বিষয়গুলোকে কেবল আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। মনে রাখবেন, দায়ূদ বলেছিলেন যে, তিনি যখন তার পাপ সম্বন্ধে চুপ করে ছিলেন, তখন ‘তাহার অস্থি সকল ক্ষয় পাইতেছিল, কারণ তিনি সমস্ত দিন আর্ত্তনাদ করিতেছিলেন।’ (গীত. ৩২:৩) হ্যাঁ, লুকিয়ে করা পাপগুলো গোপন করা আমাদেরকে আবেগগতভাবে এবং আধ্যাত্মিকভাবে কেবল ক্লান্তই করে দেবে, কিন্তু “যে তাহা স্বীকার করিয়া ত্যাগ করে, সে করুণা পাইবে।”—হিতো. ২৮:১৩.

১৭ অ্যানের উদাহরণ বিবেচনা করুন। * অ্যান যখন কিশোর বয়সের শেষ দিকে ছিলেন, তখন তিনি একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছিলেন। কিন্তু, তিনি দ্বৈত জীবনযাপন করতে শুরু করেছিলেন। এটা তার ওপর অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল। তিনি বলেন: “আমি সবসময় নিজেকে দোষী বলে মনে করতাম। আমি একটুও সুখী ছিলাম না এবং আমার সবসময়ই হতাশ লাগত।” তিনি কী করেছিলেন? তিনি বলেন, একদিন সভাতে যাকোব ৫:১৪, ১৫ পদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। অ্যান উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তার সাহায্যের প্রয়োজন আর তাই তিনি সাহায্যের জন্য প্রাচীনদের কাছে গিয়েছিলেন। আগের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন: “সেই শাস্ত্রপদগুলো আধ্যাত্মিকভাবে সুস্থতা  লাভ করার  জন্য যিহোবার দ্বারা লিখিত একটা প্রেসক্রিপশনের মতো। ওষুধ সেবন করা সহজ নয়, তবে তা সুস্থ করে তোলে। আমি সেই শাস্ত্রপদগুলোতে প্রাপ্ত উপদেশে মনোযোগ দিয়েছিলাম এবং তা কার্যকারী বলে প্রমাণিত হয়েছিল।” কয়েক বছর পার হয়ে গিয়েছে আর  অ্যান এখন এক উত্তম বিবেক নিয়ে নবশক্তি সহকারে পুনরায় উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করছেন।

১৮. আমাদের দৃঢ়সংকল্প কী হওয়া উচিত?

১৮ এই শেষকালে যিহোবার চমৎকার সংগঠনের অংশ হওয়া কতই না বিশেষ এক সুযোগ! আসুন আমরা আমাদের যা আছে, সেটাকে কখনো হালকাভাবে না নেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। এর পরিবর্তে, আসুন আমরা আমাদের স্থানীয় মণ্ডলীর সঙ্গে উপাসনা করার ব্যাপারে নিয়মিতভাবে সভাগুলোতে উপস্থিত হওয়ার জন্য, আমাদের এলাকায় সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের অধ্যবসায়ের সঙ্গে খোঁজার জন্য এবং আমরা যে-আধ্যাত্মিক খাদ্যের নিয়মিত সরবরাহ লাভ করি, সেটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করার জন্য পরিবারগতভাবে একত্রে কাজ করি। এ ছাড়া, আসুন আমরা সেই ব্যক্তিদের সমর্থন করি, যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং সেই বার্তার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করি, যা আমরা বহন করি। আমরা যদি তা করি, তাহলে আমরা যে কেবল যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলব এমন নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সৎকার্য করতে গিয়ে ক্লান্তও হব না!

[পাদটীকা]

^ নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

[২৯ পৃষ্ঠার বাক্স]

যিহোবার সংগঠনের পার্থিব অংশের অন্তর্ভুক্ত:

১. পরিচালকগোষ্ঠী

২. শাখা কমিটির সদস্যরা

৩. ভ্রমণ অধ্যক্ষ

৪. প্রাচীনবর্গ

৫. মণ্ডলী

৬. প্রত্যেক প্রকাশক

[চিত্র]

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

অন্যদেরকে এই বিষয়টা উপলব্ধি করার জন্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে সাহায্য করুন যে, তারাও যিহোবার বিশাল সংগঠনের অংশ হতে পারে