সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সুমেরুবৃত্তের কাছাকাছি এলাকায় পঞ্চাশ বছর ধরে পূর্ণসময়ের সেবা করা

সুমেরুবৃত্তের কাছাকাছি এলাকায় পঞ্চাশ বছর ধরে পূর্ণসময়ের সেবা করা

জীবনকাহিনি

সুমেরুবৃত্তের কাছাকাছি এলাকায় পঞ্চাশ বছর ধরে পূর্ণসময়ের সেবা করা

বলেছে আইলি এবং আনিকি মাটিলা

“তোমার জন্য অগ্রগামীর কাজ করা সহজ। তোমার বাবা-মা দুজনেই সত্যে আছে এবং তারা তোমাকে সাহায্য করতে পারে,” এই কথাগুলো আমরা আমাদের বান্ধবীকে বলেছিলাম, যে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা করছিল। “সেটা ঠিক! তবে, আমাদের সকলের পিতা কিন্তু একজনই,” সে উত্তর দিয়েছিল। তার উত্তরের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ছিল: আমাদের স্বর্গীয় পিতা তাঁর দাসদের যত্ন নেন এবং তাদের শক্তি প্রদান করেন। বস্তুতপক্ষে, আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা এই বিষয়টাকে সত্য বলে প্রমাণ করেছে।

আমরা ফিনল্যান্ডের অস্ট্রবথ্‌নিয়ার উত্তরাঞ্চলে খামার দেখাশোনা করে এমন একটা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলাম আর এই পরিবারে দশ জন সন্তান ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে আমাদের শৈশবকাল বেশি শান্তিপূর্ণ ছিল না। যদিও আমরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে শত শত মাইল দূরে বাস করতাম, তার পরও যুদ্ধের বিভীষিকা আমাদের ওপর এক গভীর ছাপ ফেলেছিল। আমাদের কাছাকাছি শহর উলু এবং কালাজকিতে যখন বোমা ফেলা হয়েছিল, তখন আমরা রাতের আকাশে এক লাল আভা দেখতে পেয়েছিলাম। বাবা-মা আমাদেরকে সাবধান করে দিয়েছিল, যেন যুদ্ধবিমান দেখার সঙ্গেসঙ্গেই আমরা লুকিয়ে পড়ি। তাই, আমাদের বড়ো দাদা টাউনঅ যখন এমন এক পরমদেশ পৃথিবীর কথা বলেছিল, যেখানে অবিচার থাকবে না, তখন সেটা আমাদের হৃদয় স্পর্শ করেছিল।

টাউনঅ ১৪ বছর বয়সে বাইবেল ছাত্রদের সাহিত্যাদির মাধ্যমে বাইবেলের সত্য শিখেছিল। যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন সে তার বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেকের কারণে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে প্রত্যাখ্যান করেছিল আর এর ফলে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তার সঙ্গে পাশবিক আচরণ করা হয়েছিল। সেটা কেবল যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে তার দৃঢ়সংকল্পকে শক্তিশালীই করেছিল এবং মুক্তি পাওয়ার পর সে পরিচর্যায় আরও বেশি উদ্যোগী হয়ে উঠেছিল। আমাদের দাদার উত্তম উদাহরণ আমাদেরকে পার্শ্ববর্তী একটা গ্রামে সাক্ষিদের সভাগুলোতে যেতে উৎসাহিত করেছিল। এ ছাড়া, আমরা সম্মেলনগুলোতেও যোগ দিতাম, যদিও সেখানে যাওয়ার জন্য টাকা জমাতে গিয়ে আমাদের যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হতো। আমরা প্রতিবেশীদের জন্য কাপড় সেলাই করতাম, পেঁয়াজ চাষ করতাম, এবং বেরি ফল সংগ্রহ করতাম। যেহেতু আমাদের খামারে অনেক কাজ ছিল, তাই আমরা সাধারণত সবাই একসঙ্গে সম্মেলনে উপস্থিত হতে পারতাম না আর সেইজন্য আমরা পালাক্রমে সম্মেলনে যেতাম।

যিহোবা এবং তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে আমরা যে-সত্যগুলো শিখেছিলাম, সেগুলো তাঁর প্রতি আমাদের প্রেমকে আরও গভীর করেছিল এবং আমরা তাঁর কাছে আমাদের জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ১৯৪৭ সালে, আমরা দুজনেই আমাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম—আনিকি ১৫ বছর বয়সে এবং আইলি ১৭ বছর বয়সে। আমাদের সাইমি দিদিও সেই বছর বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। এ ছাড়া, আমরা লিনিয়া দিদিকেও বাইবেল অধ্যয়ন করাতাম, ইতিমধ্যেই যার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। সে এবং তার পরিবারও যিহোবার সাক্ষি হয়েছিল। বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর, আমরা অগ্রগামী কাজ করার, হতে পারে মাঝে মাঝে অবকাশকালীন (বা সহায়ক) অগ্রগামী হিসেবে কাজ করার লক্ষ্য স্থাপন করেছিলাম।

পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করা

১৯৫৫ সালে, আমরা আরও উত্তরে কেমি নামে একটা শহরে গিয়েছিলাম। যদিও আমরা দুজনেই পূর্ণসময়ের চাকরি করতাম, তবুও আমরা অগ্রগামীর কাজ করতে চেয়েছিলাম, তবে আমাদের ভয় ছিল যে, আমরা নিজেদের ভরণপোষণ জোগাতে পারব কি না। আমরা চিন্তা করেছিলাম যে, প্রথমে আমাদের কিছু টাকা জমানো উচিত। ঠিক এই সময়ই ওপরে উল্লেখিত অগ্রগামী বোনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছিল। সেই আলোচনা আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছিল যে, যিহোবাকে পূর্ণসময়ের জন্য সেবা করা, পুরোপুরি নিজেদের সম্পদ অথবা পরিবারের সাহায্যের ওপর নির্ভর করে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা যেন আমাদের স্বর্গীয় পিতার ওপর নির্ভর করি।

সেই সময় আমরা দুই মাসের ভরণপোষণ জোগানোর জন্য যথেষ্ট টাকা জমাতে পেরেছিলাম। তাই, ১৯৫৭ সালের মে মাসে, আমরা সুমেরুবৃত্তের ওপরের দিকে ল্যাপল্যান্ডের পৌরসভার অধীনস্থ একটা শহর পিলঅতে দুই মাস অগ্রগামীর কাজ করার জন্য ভয়ে ভয়ে আবেদন করেছিলাম। দুই মাস পর, তখনও আমাদের কাছে জমানো সমস্ত টাকা ছিল আর তাই আমরা আরও দুই মাস অগ্রগামীর কাজ করার জন্য আবেদন করি। দুই মাস পর, আবারও আমাদের কাছে জমানো টাকা রয়ে গিয়েছিল। সেই সময় আমরা নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, যিহোবা আমাদের যত্ন নেবেন। ৫০ বছর ধরে অগ্রগামীর সেবা করার পর, এখনও আমাদের কাছে জমানো টাকা রয়েছে! পিছনে ফিরে তাকালে, আমরা অনুভব করি, যেন যিহোবা আমাদের হাত ধরে এই কথাগুলো বলছিলেন: “ভয় করিও না, আমি তোমার সাহায্য করিব।”—যিশা. ৪১:১৩.

১৯৫৮ সালে, আমাদের সীমা অধ্যক্ষ সুপারিশ করেছিলেন, যেন আমরা ল্যাপল্যান্ডের সডানকুইলাতে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে সেবা করি। সেই সময়, সেখানে মাত্র একজন সাক্ষি বোন ছিলেন। তিনি আগ্রহজনক এক উপায়ে সত্য শিখেছিলেন। তার এক ছেলে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে শিক্ষা সফরে গিয়েছিল। সেই শিক্ষা সফরের দল যখন শহরের মধ্যে দিয়ে হাঁটছিল, তখন একজন বয়স্ক বোন লাইনের সবচেয়ে শেষের একটি ছেলের হাতে একটি প্রহরীদুর্গ পত্রিকা দিয়ে বলেছিলেন, যেন সে পত্রিকাটি তার মাকে দেয়। ছেলেটি তা-ই করেছিল এবং তার মা সঙ্গেসঙ্গে বুঝতে পেরেছিলেন যে, এটাই সত্য।

আমরা সমিলের ওপরে অবস্থিত একটা রুম ভাড়া নিয়েছিলাম। আমরা সেখানে সভা করতাম। প্রথম প্রথম, কেবল আমরা দুজন এবং সেই স্থানীয় বোন ও তার মেয়ে উপস্থিত থাকতাম। আমরা অধ্যয়নের বিষয়বস্তু একসঙ্গে পড়তাম। পরে, যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতেন এমন একজন ব্যক্তি সমিলে কাজ করার জন্য এসেছিলেন। তিনি এবং তার পরিবার আমাদের দলের সঙ্গে মেলামেশা করা শুরু করেছিলেন। পরে, তিনি এবং তার স্ত্রী দুজনেই বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। এই ভাই আমাদের সভাগুলোতে নেতৃত্ব দিতেন। এ ছাড়া, সমিলে কাজ করত এমন কিছু ব্যক্তিও সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করেছিল এবং বাইবেলের সত্য গ্রহণ করেছিল। কয়েক বছর পর, আমাদের দল এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, একটা মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল।

বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা

দীর্ঘ দূরত্ব আমাদের প্রচার কাজে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে এসেছিল। গ্রীষ্মকালে আমরা হেঁটে এবং সাইকেল ও নৌকা চালিয়ে আমাদের এলাকার লোকেদের কাছে যেতাম। বিশেষভাবে সাইকেল আমাদের জন্য অনেক উপকারী ছিল। এ ছাড়া, সম্মেলনে যাওয়ার এবং শত শত মাইল দূরে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমরা সাইকেল ব্যবহার করতাম। শীতকালে, আমরা সেই এলাকার একটা গ্রামে যাওয়ার জন্য ভোরের বাস ধরতাম এবং এরপর হেঁটে হেঁটে ঘরে ঘরে প্রচার করতাম। একটা গ্রাম শেষ করার পর আমরা আরেকটা গ্রামে যেতাম। সেখানে ভারী তুষারপাত হতো এবং রাস্তাও সবসময় পরিষ্কার থাকত না। আমরা প্রায়ই বরফের ওপর ঘোড়ায়-টানা স্লেজ গাড়ির দাগ অনুসরণ করে হাঁটতাম। মাঝে মাঝে আগের ভ্রমণকারীদের চলার দাগ তুষারে ঢেকে যেত এবং বসন্তের শুরুতে তুষার এতই নরম ও আর্দ্র থাকত যে, আমাদের কষ্ট করে পা টেনে টেনে হাঁটতে হতো।

জমে যাওয়ার মতো তাপমাত্রা এবং প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে আমাদের একসঙ্গে কয়েকটা গরম কাপড় পরার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। আমরা উলের বড়ো মোজা এবং দু-তিন জোড়া মোজা ও সেইসঙ্গে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা বুট পরতাম। তার পরও, আমাদের বুট তুষারে ভরে যেত। আমরা যখন কোনো বাড়ির সিঁড়িতে উঠতাম, তখন আমরা আমাদের বুট খুলে সেখান থেকে তুষার ঝেড়ে ফেলতাম। এ ছাড়া, তুষারের মধ্যে দিয়ে কষ্টেসৃষ্টে হাঁটার সময় আমাদের শীতের লম্বা কোটের কিনারাগুলো ভিজে যেত। এরপর, যখন ঠাণ্ডা আরও বাড়ত তখন এই কোটের কিনারাগুলো জমে শক্ত হয়ে যেত এবং সেগুলোকে ধাতুর পাতের মতো শক্ত বলে মনে হতো। একজন গৃহকর্ত্রী বলেছিলেন যে, “আপনাদের প্রকৃত বিশ্বাস আছে বলেই আপনারা এইরকম আবহাওয়ার মধ্যে বের হওয়ার ঝুঁকি নিয়েছেন।” সেই বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমাদের ১১ কিলোমিটারেরও (৭ মাইলেরও) বেশি পথ হাঁটতে হয়েছিল।

দীর্ঘ দূরত্বের কারণে আমরা প্রায়ই স্থানীয় লোকেদের বাড়িতে রাত কাটাতাম। যখন অন্ধকার হতে শুরু করত, তখন আমরা থাকার জন্য জায়গা চেয়ে অনুরোধ করতে শুরু করতাম। বাড়িগুলো খুবই সাধারণ ছিল কিন্তু লোকেরা অনেক বন্ধুত্বপরায়ণ এবং অতিথিপরায়ণ ছিল আর তারা আমাদেরকে কেবল ঘুমানোর জায়গাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে খাবারও দিত। প্রায় সময়ই আমাদের বিছানা ছিল কোনো বল্‌গা হরিণ, চমরী গাই অথবা এমনকী ভল্লুকের চামড়া। অবশ্য, মাঝে মাঝে আমরা কিছুটা বিলাসবহুল বিছানাতেও ঘুমাতে পারতাম। উদাহরণস্বরূপ, একবার বিশাল একটা বাড়িতে একজন মহিলা আমাদেরকে ওপরের একটা গেস্টরুমে নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে আমাদের জন্য সাদা কারুকাজ করা পরিষ্কার চাদরে ঢাকা চমৎকার একটা বিছানা অপেক্ষা করছিল। বহুবার আমরা বিভিন্ন পরিবারের সঙ্গে অনেক রাত পর্যন্ত বাইবেল নিয়ে আলোচনা করেছি। একটা জায়গায় এক দম্পতি রুমের একদিকে আর আমরা অন্যদিকে ঘুমিয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে আমরা রাত থেকে ভোর পর্যন্ত শাস্ত্রীয় আলোচনা করেছিলাম। গৃহকর্তা এবং তার স্ত্রী একটার পর একটা প্রশ্ন করেই চলেছিল।

এক পরিতৃপ্তিদায়ক পরিচর্যা

ল্যাপল্যান্ড অনুর্বর হলেও অত্যন্ত সুন্দর একটা দেশ এবং এর সৌন্দর্য ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু, আমাদের কাছে সেই লোকেরা আরও চমৎকার ছিল, যারা যিহোবাকে গ্রহণ করে নিত। যে-আন্তরিক লোকেদের কাছে আমরা সাক্ষ্য দিতাম, তাদের মধ্যে সেই করাতিরাও ছিল, যারা ল্যাপল্যান্ডে গাছ কাটার জন্য তাদের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে আসত। আকারে আমরা দুজন ছোটো বোন যখন মাঝে মাঝে ছোট্ট একটা ঘরে ঢুকতাম, তখন আমরা একসঙ্গে অনেক লোককে দেখতে পেতাম। বিশালদেহী এই লোকেরা বাইবেলের বার্তা শুনত এবং আনন্দের সঙ্গে সাহিত্যাদি গ্রহণ করত।

আমাদের অনেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। একদিন, বাস স্টেশনের ঘড়ির কাঁটা পাঁচ মিনিট ফাস্ট ছিল আর তাই আমরা আমাদের বাসটা ধরতে পারিনি। আমরা অন্য একটা বাস ধরে ভিন্ন একটা গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই এলাকায় এর আগে আমরা কখনো কাজ করিনি। প্রথম বাড়িতেই তুলনামূলকভাবে কম বয়সি একজন মহিলার সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, যিনি আমাদেরকে দেখেই বলেছিলেন, “আপনারা দেখছি এসে গেছেন, আমি আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।” আমরা তার বোনের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করছিলাম। সেই কম বয়সি মহিলা তার বোনকে বলেছিলেন, যেন তিনি সেই দিনই আমাদের সঙ্গে তার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু, আমরা এই সংবাদটা পাইনি। সেই মহিলা এবং তার পাশের বাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হয়েছিল। অল্পসময়ের মধ্যেই, আমরা এই অধ্যয়নগুলোকে একটা অধ্যয়নে পরিণত করেছিলাম, যেখানে প্রায় বারো জন ব্যক্তি উপস্থিত হতো। তখন থেকে, এই পরিবারের অনেকেই যিহোবার সাক্ষি হয়েছিল।

১৯৬৫ সালে, আমাদেরকে আমাদের বর্তমান মণ্ডলী কুসামঅতে নিযুক্ত করা হয়েছিল, যা ঠিক সুমেরুবৃত্তের নীচের দিকে অবস্থিত। সেই সময়, মণ্ডলীতে মাত্র কয়েক জন প্রকাশক ছিল। প্রথম প্রথম, আমাদের নতুন এলাকায় কাজ করা একটু কঠিন বলে মনে হয়েছিল। লোকেরা অনেক ধর্মভীরু ছিল এবং আমাদের সম্বন্ধে তাদের প্রতিকূল ধারণা ছিল। তা সত্ত্বেও, অনেকেরই বাইবেলের প্রতি সম্মান ছিল, যেটা আলোচনার জন্য মতৈক্য স্থাপন করতে সাহায্য করত। তাই, আমরা একটু একটু করে লোকেদেরকে জানার চেষ্টা করেছিলাম এবং প্রায় দুই বছর পর বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা আমাদের জন্য সহজ হয়ে গিয়েছিল।

এখনও পরিচর্যায় সক্রিয়

বর্তমানে, ক্ষেত্রের পরিচর্যায় দীর্ঘসময় ব্যয় করার মতো শক্তি আমাদের নেই কিন্তু আমরা এখনও প্রায় প্রতিদিন পরিচর্যায় যোগদান করি। আমাদের বিশাল এলাকায় লোকেদের কাছে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়া আরও সহজ হয়ে গিয়েছিল, যখন আইলি আমাদের ভাইপোর দ্বারা উৎসাহিত হয়ে ড্রাইভিং শিখেছিল এবং ১৯৮৭ সালে ৫৬ বছর বয়সে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছিল। সেই সময় আমরা আরও সাহায্য পেয়েছিলাম, যখন একটা নতুন কিংডম হল তৈরি করা হয়েছিল আর আমরা এর সঙ্গে সংযুক্ত একটা অ্যাপার্টমেন্টে উঠেছিলাম।

আমরা যে-বৃদ্ধি দেখতে পেয়েছিলাম, তা আমাদের জন্য অনেক আনন্দ নিয়ে এসেছিল। আমরা যখন ফিনল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করেছিলাম, তখন সেই বিশাল এলাকার বিভিন্ন জায়গায় মাত্র কয়েক জন প্রকাশক ছিল। এখন বেশ কয়েকটা মণ্ডলী মিলে একটা সীমা গঠিত হয়েছে। সম্মেলনগুলোর সময় প্রায়ই দেখা যায়, কেউ একজন এসে নিজের পরিচয় দিয়ে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করছে যে, তার কথা আমাদের মনে আছে কি না। কেউ কেউ সেই সময় একেবারে ছোটো ছিল, যখন আমরা তার বাড়িতে গিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করাতাম। যে-বীজ কয়েক বছর অথবা এমনকী কয়েক দশক আগে বপন করা হয়েছিল, সেটা এখন ফল উৎপন্ন করেছে!—১ করি. ৩:৬.

২০০৮ সালে আমাদের বিশেষ অগ্রগামী পরিচর্যার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। আমরা যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাই যে, তাঁর মূল্যবান কাজে টিকে থাকার জন্য আমরা সবসময় পরস্পরকে উৎসাহিত করতে পেরেছি। আমাদের জীবন সবসময় সাদাসিধে ছিল কিন্তু কখনো আমাদের কোনো কিছুর অভাব হয়নি। (গীত. ২৩:১) প্রথম প্রথম আমরা অযথাই দ্বিধাবোধ করেছিলাম! আনন্দের বিষয় হল, পরিচর্যার এই বছরগুলোতে যিহোবা আমাদেরকে যিশাইয় ৪১:১০ পদের এই কথাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে শক্তি প্রদান করেছিলেন: “আমি তোমাকে পরাক্রম দিব; আমি তোমার সাহায্য করিব; আমি আপন ধর্ম্মশীলতার দক্ষিণ হস্ত দ্বারা তোমাকে ধরিয়া রাখিব।”

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আনিকি এবং আইলি তাদের বর্তমান কার্যভারে

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

[১৭ পৃষ্ঠার মানচিত্রগুলো]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

ফিনল্যান্ড

হেলসিংকি

সডাইনকুইল

পিলঅ

সু মে রু বৃ ত্ত

কুসামঅ

কেমি

উলু

কালাজকি

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাম দিক থেকে: ১৯৩৫ সালে, মাটি (বাবা), টাউনঅ, সাইমি, মারিয়া এমিলিয়া (মা), ভাইনো (শিশু), আইলি এবং আনিকি

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাম দিক থেকে: ১৯৪৯ সালে, অ্যাভা কালিঅ, সাইমি ম্যাটিলা-সিরজালা, আইলি, আনিকি এবং সারা নোপোনেন

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫২ সালে কুপিওর সম্মেলনে যাওয়ার সময়। বাম দিক থেকে: আনিকি, আইলি, ইভা কালিও

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

ক্ষেত্রের পরিচর্যায় কাইসু রেকো এবং আইলি

[১৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

৫০ বছর ধরে অগ্রগামীর সেবা করার পর, এখনও আমাদের কাছে জমানো টাকা রয়েছে!

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

শীতকালে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সময় পরিচর্যায় একত্রে

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

যাদেরকে আমরা অধ্যয়ন করাতাম, তাদের মধ্যে কয়েক জন

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

এমনকী বৃষ্টির দিনেও আমরা ক্ষেত্রের পরিচর্যা উপভোগ করি