যিহোবার শাসন যেন আপনাকে গঠন করে
“তুমি নিজ মন্ত্রণায় আমাকে গমন করাইবে, শেষে সপ্রতাপে আমাকে গ্রহণ করিবে।” —গীত. ৭৩:২৪.
১, ২. (ক) যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্কের জন্য অপরিহার্য বিষয়গুলো কী? (খ) ঈশ্বরের শাসনের প্রতি লোকেদের সাড়া দেওয়ার বিষয়ে যে-শাস্ত্রীয় বিবরণগুলো রয়েছে, সেগুলো পরীক্ষা করার মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকার লাভ করব?
“ঈশ্বরের নিকটে থাকা আমারই পক্ষে মঙ্গল; আমি প্রভু সদাপ্রভুর শরণ লইলাম।” (গীত. ৭৩:২৮) এখানে গীতরচক ঈশ্বরের প্রতি তার আস্থা প্রকাশ করেছেন। কোন পরিস্থিতিগুলো তাকে এইরকম গভীর উপসংহারে আসতে পরিচালিত করেছিল? দুষ্ট লোকেদের কল্যাণ দেখে গীতরচক প্রথমে মনে মনে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন: “আমি বৃথাই চিত্ত পরিষ্কার করিয়াছি, নির্দ্দোষতায় হস্ত প্রক্ষালন করিয়াছি।” (গীত. ৭৩:২, ৩, ১৩, ২১) কিন্তু, তিনি যখন “ঈশ্বরের ধর্ম্মধামে” প্রবেশ করেছিলেন, তখন তা তার চিন্তাভাবনা রদবদল করতে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গতা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। (গীত. ৭৩:১৬-১৮) এই অভিজ্ঞতা সেই ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তিকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক শিক্ষা প্রদান করেছিল: ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে থাকা, মন্ত্রণা বা পরামর্শ গ্রহণ করা এবং তা কাজে লাগানো, যিহোবার সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য।—গীত. ৭৩:২৪.
২ আমরাও সত্য এবং জীবন্ত ঈশ্বরের সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের তাঁর পরামর্শ বা শাসনের দ্বারা গঠিত হওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ আর এর ফলে আমরা এমন ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারব, যাদের প্রতি তাঁর অনুমোদন রয়েছে! অতীতে, ঈশ্বর করুণার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং জাতিকে তাঁর শাসনের প্রতি সাড়া দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। তাদের সাড়া দেওয়ার বিবরণ বাইবেলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে আর তা “আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে” এবং “আমাদেরই চেতনার জন্য . . . যাহাদের উপরে যুগকলাপের অন্ত আসিয়া পড়িয়াছে।” (রোমীয় ১৫:৪; ১ করি. ১০:১১) এই বিবরণগুলো পরীক্ষা করা যিহোবার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে এবং সেইসঙ্গে দেখাবে যে, আমরা কীভাবে তাঁর দ্বারা গঠিত হওয়া থেকে উপকার লাভ করতে পারি।
কুম্ভকার যেভাবে তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করেন
৩. যিশাইয় ৬৪:৮ এবং যিরমিয় ১৮:১-৬ পদে, লোকদের ওপর যিহোবার ক্ষমতাকে কীভাবে দৃষ্টান্তের সাহায্যে তুলে ধরা হয়েছে? (শিরোনামের পাশে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৩ ব্যক্তি-বিশেষ এবং বিভিন্ন জাতির ওপর যিহোবার ক্ষমতাকে দৃষ্টান্তের সাহায্যে বর্ণনা করে যিশাইয় ৬৪:৮ পদ বলে: “হে সদাপ্রভু, তুমি আমাদের পিতা; আমরা মৃত্তিকা, আর তুমি আমাদের কুম্ভকার; আমরা সকলে তোমার হস্তকৃত বস্তু।” মাটি দিয়ে তার পছন্দমতো একটা পাত্র গঠন করার পূর্ণ ক্ষমতা একজন কুম্ভকারের রয়েছে। এর ওপর মাটির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মানুষ এবং ঈশ্বরের বেলায়ও একই বিষয় বলা যায়। উপযুক্তভাবে মানুষ ঈশ্বরের সঙ্গে তর্ক করতে পারে না, যেমন মাটি সেই কুম্ভকারের সঙ্গে করতে পারে না, যিনি মাটিকে আকার দান করেন।—পড়ুন, যিরমিয় ১৮:১-৬.
৪. ঈশ্বর কি নিজের ইচ্ছাখুশিমতো লোকেদের বা বিভিন্ন জাতিকে গঠন করেন? ব্যাখ্যা করুন।
৪ যিহোবা প্রাচীন ইস্রায়েলের কাছে তাঁর ক্ষমতা প্রকাশ করার জন্য একজন কুম্ভকার মাটিকে যেভাবে গঠন করেন, সেটা তুলে ধরেছিলেন। তবে, এখানে এক উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। একজন কুম্ভকার সাধারণত মাটি দিয়ে এমন পাত্র তৈরি করে থাকেন, যেটা তিনি তৈরি করতে সমর্থ। যিহোবা কি নিজের ইচ্ছাখুশিমতো লোকেদের বা বিভিন্ন জাতিকে গঠন করেন, কিছু লোক বা জাতিকে উত্তম এবং অন্য লোক বা জাতিকে মন্দ হিসেবে গঠন করেন? বাইবেলের উত্তর হল, না। যিহোবা মানবজাতিকে অত্যন্ত মূল্যবান এক উপহার দিয়েছেন আর তা হল, স্বাধীন ইচ্ছা। তিনি তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতাকে এমন উপায়ে ব্যবহার করেন না, যা এই উপহারকে মূল্যহীন করে দেয়। মানুষের অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা, যিহোবার দ্বারা গঠিত হওয়া বেছে নিতে হবে।—পড়ুন, যিরমিয় ১৮:৭-১০.
৫. মানুষ যখন যিহোবার দ্বারা গঠিত হওয়ার বিষয়টা প্রত্যাখ্যান করে, তখন কীভাবে তিনি তাদের ওপর তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করেন?
৫ কিন্তু, কী হবে যদি মানুষ একগুঁয়েভাবে মহান কুম্ভকারের দ্বারা গঠিত হতে প্রত্যাখ্যান করে? সেই সময়, তিনি কীভাবে তাঁর ঐশিক ক্ষমতা ব্যবহার করেন? কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত হয়ে পড়লে সেই মাটিকে কী করা হয়, সেটা চিন্তা করুন। আসলে, কুম্ভকার তা দিয়ে হয় অন্য ধরনের কোনো পাত্র তৈরি করতে পারেন অথবা চাইলে তা ফেলে দিতে পারেন! কিন্তু, মাটি যখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে, তখন দোষ সাধারণত কুম্ভকারের। তবে, মহান কুম্ভকারের ক্ষেত্রে বিষয়টা কখনো এমন নয়। (দ্বিতীয়. ৩২:৪) একজন ব্যক্তি যখন যিহোবার দ্বারা গঠিত হওয়ার বিষয়টা প্রত্যাখ্যান করেন, তখন দোষ সবসময় সেই ব্যক্তির। যিহোবা মানুষের ওপর তাঁর কুম্ভকারতুল্য অধিকার বা ক্ষমতা ব্যবহার করেন আর তা তিনি তাঁর দ্বারা গঠিত হওয়ার প্রতি মানুষ যেভাবে সাড়া দেয়, সেটার ওপর ভিত্তি করে তাঁর আচরণকে রদবদল করার মাধ্যমে করে থাকেন। যারা সঠিকভাবে সাড়া দেয়, তাদেরকে উপকারী হিসেবে গঠন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা হল ‘দয়াপাত্র’ যাদেরকে “সমাদরের পাত্র” হিসেবে গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে, যারা একগুঁয়েভাবে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে, তারা হল, ‘বিনাশার্থে পরিপক্ব ক্রোধপাত্র।’—রোমীয় ৯:১৯-২৩.
৬, ৭. যিহোবার পরামর্শের প্রতি রাজা দায়ূদ এবং রাজা শৌলের সাড়া কীভাবে আলাদা ছিল?
৬ একটা যে-উপায়ে যিহোবা লোকেদের গঠন করেন, তা হল পরামর্শ বা শাসনের মাধ্যমে। যাদেরকে তিনি গঠন করেন, তাদের ওপর কীভাবে তিনি ক্ষমতা ব্যবহার করেন, তা আমরা ইস্রায়েলের প্রথম দুই রাজা—শৌল এবং দায়ূদ—সম্বন্ধে বিবেচনা করার মাধ্যমে দেখতে পারি। রাজা দায়ূদ যখন বৎশেবার সঙ্গে ব্যভিচার করেছিলেন, তখন তার কাজ তার জন্য এবং অন্যদের জন্য দুর্দশা নিয়ে এসেছিল। যদিও দায়ূদ রাজা ছিলেন, তবুও যিহোবা তাকে কড়া শাসন প্রদান করা থেকে বিরত হননি। দায়ূদকে এক জোরালো বার্তা বলার জন্য ঈশ্বর তাঁর ভাববাদী নাথনকে পাঠিয়েছিলেন। (২ শমূ. ১২:১-১২) দায়ূদ কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন? তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হয়েছিলেন এবং অনুতাপ প্রকাশ করেছিলেন। এর ফলে দায়ূদ ঈশ্বরের করুণা লাভ করেছিলেন।—পড়ুন, ২ শমূয়েল ১২:১৩.
৭ এর বৈসাদৃশ্যে, দায়ূদের পূর্বসূরি, রাজা শৌল পরামর্শের প্রতি ভালোভাবে সাড়া দেননি। ভাববাদী শমূয়েলের মাধ্যমে যিহোবা শৌলকে এই স্পষ্ট আজ্ঞা দিয়েছিলেন: সমস্ত অমালেকীয়দের এবং তাদের সমস্ত পশুপাল নিঃশেষে বিনষ্ট করো। শৌল এই ঐশিক আজ্ঞার অবাধ্য হয়েছিলেন। তিনি রাজা অগাগকে এবং বাছাইকৃত পশুপাল জীবিত রেখেছিলেন। কেন? অন্ততপক্ষে, কিছুটা হলেও এর কারণ হল তিনি নিজের জন্য সম্মান নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। (১ শমূ. ১৫:১-৩, ৭-৯, ১২) শৌলকে যখন পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তখন তার নমনীয় হওয়া উচিত ছিল, মহান কুম্ভকারের দ্বারা গঠিত হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করা উচিত ছিল। তা না করে, শৌল যিহোবার দ্বারা গঠিত হওয়া প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি তার কাজকে ন্যায্য বলে প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিলেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, তিনি যা করেছিলেন তা অনুমোদনযোগ্য ছিল কারণ পশুপাল বলিদান করা যেতে পারে আর তিনি শমূয়েলের পরামর্শকে তুচ্ছ করেছিলেন। যিহোবা শৌলকে রাজা হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং শৌল আর কখনো সত্য ঈশ্বরের সঙ্গে তার উত্তম সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করতে পারেননি।—পড়ুন, ১ শমূয়েল ১৫:১৩-১৫, ২০-২৩.
ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন না
৮. যিহোবার দ্বারা গঠিত হওয়ার প্রতি ইস্রায়েল যেভাবে সাড়া দিয়েছিল, সেটা থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?
৮ যিহোবা কেবল ব্যক্তি-বিশেষকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে বিভিন্ন জাতিকেও তাঁর দ্বারা গঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে সাড়া দেওয়ার সুযোগ দেন। ১৫১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ইস্রায়েলের লোকেরা ঈশ্বরের সঙ্গে এক চুক্তির সম্পর্কে প্রবেশ করেছিল। ইস্রায়েল তাঁর মনোনীত জাতি ছিল এবং তাঁর দ্বারা গঠিত হওয়ার, এমন যেন মহান কুম্ভকারের চক্রে গঠিত হওয়ার বিশেষ সুযোগ তাদের ছিল। কিন্তু, লোকেরা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা-ই করে চলছিল, এমনকী আশেপাশের জাতিগুলো যে-সমস্ত দেবতার উপাসনা করত, তা গ্রহণ করে নিয়েছিল। বার বার, যিহোবা তাদের চেতনা ফিরিয়ে আনার জন্য ভাববাদীদের পাঠিয়েছিলেন কিন্তু ইস্রায়েল তাতে কান দেয়নি। (যির. ৩৫:১২-১৫) তাদের একগুঁয়ে কাজের জন্য ইস্রায়েলকে কঠোরভাবে শাসন প্রদান করতে হয়েছিল। বিনাশার্থে পরিপক্ব পাত্রের মতো, উত্তরের দশ বংশের রাজ্য অশূরীয়দের দ্বারা পরাজিত হয়েছিল এবং একইভাবে দক্ষিণের দুই বংশের রাজ্য বাবিলীয়দের দ্বারা পরাজিত হয়েছিল। এই বিষয়টা থেকে আমাদের কতই না জোরালো এক শিক্ষা লাভ করা উচিত! যিহোবার দ্বারা গঠিত হওয়ার বিষয়টা কেবলমাত্র সেই সময়ই আমাদের উপকৃত করবে, যদি আমরা সেটার প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দিই।
৯, ১০. নীনবীর লোকেরা ঐশিক সাবধানবাণীর প্রতি কীভাবে সাড়া দিয়েছিল?
৯ এ ছাড়া, যিহোবা অশূরের রাজধানী নীনবীর লোকেদেরও তাঁর সাবধানবাণীর প্রতি সাড়া দেওয়ার সুযোগ প্রদান করেছিলেন। যোনার কাছে তাঁর এই বাক্য উপস্থিত হয়েছিল: “তুমি উঠ, নীনবীতে, সেই মহানগরে যাও, আর নগরের বিরুদ্ধে ঘোষণা কর, কেননা তাহাদের দুষ্টতা আমার সম্মুখে উঠিয়াছে।” নীনবীকে ধ্বংসের যোগ্য বলে গণ্য করা হয়েছিল।—যোনা ১:১, ২; ৩:১-৪.
১০ কিন্তু, যোনা যখন বিচারের বার্তা ঘোষণা করেছিলেন, তখন “নীনবীয় লোকেরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করিল; তাহারা উপবাস ঘোষণা করিল এবং মহান্ হইতে ক্ষুদ্র পর্য্যন্ত সকলে চট পরিধান করিল।” তাদের রাজা “আপন সিংহাসন হইতে উঠিলেন, গাত্রের শাল রাখিয়া দিলেন, এবং চট পরিধান করিয়া ভস্মে বসিলেন।” নীনবীর লোকেরা যিহোবার দ্বারা গঠিত হওয়ার প্রচেষ্টার প্রতি সাড়া দিয়েছিল এবং অনুতপ্ত হয়েছিল। ফল স্বরূপ, যিহোবা বিপর্যয় নিয়ে আসেননি।—যোনা ৩:৫-১০.
১১. ইস্রায়েল এবং নীনবীর সঙ্গে তাঁর আচরণের ক্ষেত্রে যিহোবার কোন গুণ পরিলক্ষিত হয়?
১১ মনোনীত জাতি হওয়ার ফলে ইস্রায়েল যে শাসন থেকে অব্যাহতি পেয়েছিল এমন নয়। অন্যদিকে, নীনবীর লোকেরা ঈশ্বরের সঙ্গে কোনো চুক্তির সম্পর্কের অধীন ছিল না। তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাদের কাছে তাঁর বিচারের বার্তা ঘোষণা করিয়েছিলেন এবং তারা যখন তাঁর হাতে নরম মাটি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল, তখন তাদের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন। এই দুটো উদাহরণ কত স্পষ্টভাবে দেখায় যে, আমাদের ঈশ্বর যিহোবা “কাহারও মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাত,” জুবিলী বাইবেল] করেন না”!—দ্বিতীয়. ১০:১৭.
যিহোবা যুক্তিবাদী এবং নমনীয়
১২, ১৩. (ক) ব্যক্তি-বিশেষরা যখন তাঁর দ্বারা গঠিত হওয়ার প্রতি সাড়া দেয়, তখন কেন ঈশ্বর তাঁর আচরণ পরিবর্তন করেন? (খ) যিহোবার ‘অনুশোচনা করা’ বলতে কী বোঝায়, শৌলের ক্ষেত্রে? নীনবীর ক্ষেত্রে?
১২ ঈশ্বর যেভাবে আমাদের গঠন করতে ইচ্ছুক, তা দেখায় যে, তিনি যুক্তিবাদী এবং নমনীয়। এটা সেই পরিস্থিতিগুলোতে দেখা যায়, যেখানে যিহোবা লোকেদের প্রতি তাঁর ন্যায্য বিচারের ওপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নেওয়া স্থির করেন কিন্তু এরপর তাদের সাড়া দেওয়ার কারণে তাঁর মন পরিবর্তন করেন। ইস্রায়েলের প্রথম রাজা সম্বন্ধে শাস্ত্র বলে যে, যিহোবা ‘শৌলকে রাজা করিয়াছেন বলিয়া অনুশোচনা’ করেছিলেন। (১ শমূ. ১৫:১১) বাইবেল বলে, নীনবীর লোকেরা যখন অনুতপ্ত হয়েছিল এবং তাদের কুপথ থেকে বিমুখ হয়েছিল, তখন “ঈশ্বর . . . তাহাদের যে অমঙ্গল করিবেন বলিয়াছিলেন, তদ্বিষয়ে অনুশোচনা করিলেন; তাহা করিলেন না।”—যোনা ৩:১০.
১৩ যে-ইব্রীয় শব্দটিকে “অনুশোচনা করিলেন” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি আসলে মনোভাব অথবা উদ্দেশ্য পরিবর্তন করার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। শৌলের প্রতি যিহোবার মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছিল অর্থাৎ প্রথমে তাকে রাজা হিসেবে মনোনীত করে পরে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই পরিবর্তনের কারণ এই নয় যে, যিহোবা শৌলকে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভুল করেছিলেন বরং এই যে, শৌল বিশ্বাসের অভাব দেখিয়ে কাজ করেছিলেন এবং অবাধ্য হয়েছিলেন। নীনবীর লোকেদের ক্ষেত্রে সত্য ঈশ্বর অনুশোচনা বোধ করেছিলেন; অর্থাৎ তাদের প্রতি তিনি তাঁর উদ্দেশ্য পরিবর্তন করেছিলেন। এটা জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে, আমাদের কুম্ভকার যিহোবা যুক্তিবাদী এবং নমনীয়, সদয় এবং করুণাময়, ভুল করেছে এমন ব্যক্তিদের ইতিবাচক পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে তাঁর আচরণ পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক!
আসুন আমরা যিহোবার শাসনকে প্রত্যাখ্যান না করি
১৪. (ক) বর্তমানে, যিহোবা কীভাবে আমাদের গঠন করেন? (খ) ঈশ্বরের দ্বারা গঠিত হওয়ার প্রতি আমাদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত?
১৪ বর্তমানে, যিহোবা আমাদেরকে মূলত তাঁর বাক্য বাইবেল এবং তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে গঠন করেন। (২ তীম. ৩:১৬, ১৭) এই মাধ্যমগুলোর দ্বারা আমরা যে-পরামর্শ বা শাসনই লাভ করি না কেন, তা কি আমাদের গ্রহণ করা উচিত নয়? আমরা যত বছর ধরেই বাপ্তাইজিত হই না কেন বা আমরা সেবা করার যত বিশেষ সুযোগই পাই না কেন, আমাদের ক্রমাগত যিহোবার পরামর্শের প্রতি সাড়া দেওয়া উচিত, সেটার দ্বারা সমাদরের পাত্রে পরিণত হতে চাওয়া উচিত।
১৫, ১৬. (ক) শাসনের সঙ্গে যখন বিশেষ সুযোগগুলো হারানো জড়িত থাকে, তখন কোন নেতিবাচক অনুভূতিগুলো দেখা দিতে পারে? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন। (খ) কী আমাদেরকে শাসনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নেতিবাচক আবেগের সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য করতে পারে?
১৫ আমাদের জন্য কিছু শাসন নির্দেশনা অথবা সংশোধনের আকারে আসে। কিন্তু, অন্যান্য সময় আমরা সঠিকভাবে কিছু করি না বলে হয়তো আমাদের শাসন করার প্রয়োজন হয়। এই শাসনের সঙ্গে হয়তো বিশেষ সুযোগগুলো হারানো জড়িত। ডেনিস * নামে একজন ভাইয়ের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যিনি একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছিলেন। ব্যবসায়িক কাজের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার অভাব দেখিয়েছিলেন বলে তিনি অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন আর তাই তাকে একান্তে তিরস্কার করা হয়েছিল। সেই রাতে ডেনিস কেমন অনুভব করেছিলেন, যখন মণ্ডলীতে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, তিনি আর একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছেন না? “নিজেকে আমার পুরোপুরি ব্যর্থ বলে মনে হয়েছিল,” তিনি বলেন। “বিগত ৩০ বছর ধরে আমার বিভিন্ন বিশেষ সুযোগ ছিল। আমি একজন নিয়মিত অগ্রগামীর কাজ করতাম, বেথেলে সেবা করেছিলাম, আমাকে একজন পরিচারক দাস হিসেবে এবং এরপর একজন প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। এ ছাড়া, আমি সবেমাত্র একটা জেলা সম্মেলনে আমার প্রথম বক্তৃতা দিয়েছিলাম। হঠাৎ করে আমার সমস্ত দায়িত্ব চলে যায়। লজ্জা এবং অপরাধবোধের পাশাপাশি আমি মনে করেছিলাম যে, মণ্ডলীতে বুঝি আমার আর কোনো স্থান নেই।”
১৬ ডেনিসকে তার পথ পরিবর্তন করতে হয়েছিল, সেই অন্যায় থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল, যেটার জন্য তাকে সংশোধন করার প্রয়োজন হয়েছিল। কিন্তু, কী তাকে নেতিবাচক অনুভূতিগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিল? তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আমি এক উত্তম আধ্যাত্মিক তালিকা বজায় রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলাম। আর এর পাশাপাশি খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের কাছ থেকে আমি যে-সমর্থন ও আমাদের প্রকাশনাগুলো থেকে যে-উৎসাহ লাভ করেছিলাম, সেগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০০৯ সালের ১৫ আগস্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ‘আপনি কি একসময়ে সেবা করতেন? আপনি কি আবারও সেবা করতে পারেন?’ নামক প্রবন্ধ আমার প্রার্থনার উত্তর হিসেবে এক ব্যক্তিগত চিঠির মতো ছিল। যে-পরামর্শকে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান বলে মনে হয়েছিল তা হল, ‘আপনার যখন মণ্ডলীর অতিরিক্ত দায়িত্বগুলো থাকে না, সেই সময় আপনার আধ্যাত্মিকতাকে শক্তিশালী করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন।’” শাসন থেকে ডেনিস কীভাবে উপকৃত হয়েছিলেন? কয়েক বছর পর, তিনি বলেন, “যিহোবা আবারও আমাকে একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করার বিশেষ সুযোগ দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন।”
১৭. সমাজচ্যুত করা একজন পাপী ব্যক্তিকে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার জন্য কোন ভূমিকা পালন করতে পারে? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।
১৭ সমাজচ্যুত করা যিহোবার কাছ থেকে আসা আরেক ধরনের শাসন। এটা মণ্ডলীকে এক মন্দ প্রভাব থেকে সুরক্ষা করে এবং সেইসঙ্গে পাপী ব্যক্তিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য একটা ভূমিকা পালন করতে পারে। (১ করি. ৫:৬, ৭, ১১) প্রায় ১৬ বছর ধরে রবার্ট সমাজচ্যুত অবস্থায় ছিলেন আর সেই সময়টাতে তার বাবা-মা এবং ভাইয়েরা দৃঢ়তার সঙ্গে এবং অনুগতভাবে অন্যায়কারীদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করার, এমনকী এই ধরনের ব্যক্তিকে সম্ভাষণ পর্যন্ত না জানানোর বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্যের নির্দেশনা কাজে লাগিয়েছিল। কয়েক বছর আগে রবার্টকে পুনর্বহাল করা হয়েছে এবং তিনি আধ্যাত্মিকভাবে ভালো উন্নতি করছেন। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, কী তাকে এত দীর্ঘসময় পর যিহোবার ও তাঁর লোকেদের কাছে ফিরে আসতে অনুপ্রাণিত করেছে, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, তার পরিবার যে-অবস্থান গ্রহণ করেছিল, তা তার ওপর প্রভাব ফেলেছিল। “আমার পরিবার যদি আমার সঙ্গে এমনকী সামান্য মেলামেশাও করত, হতে পারে খোঁজখবর নিত, তাহলে সেই সামান্য মেলামেশাই আমাকে সন্তুষ্ট করত এবং সেটা সম্ভবত আমার মেলামেশা করার আকাঙ্ক্ষাকে ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসার ক্ষেত্রে এক অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে দিত না।”
১৮. মহান কুম্ভকারের হাতে আমাদের কোন ধরনের মাটি বলে প্রমাণিত হওয়া উচিত?
১৮ আমাদের হয়তো একই শাসনের প্রয়োজন নেই কিন্তু মহান কুম্ভকারের হাতে আমরা কোন ধরনের মাটি বলে প্রমাণিত হব? আমাদেরকে শাসন করা হলে আমরা কীভাবে সাড়া দিব? আমরা কি দায়ূদের মতো হব, নাকি শৌলের মতো হব? মহান কুম্ভকার হলেন আমাদের পিতা। কখনো ভুলে যাবেন না যে, “সদাপ্রভু যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাস্তি প্রদান করেন, যেমন পিতা প্রিয় পুত্ত্রের প্রতি করেন।” তাই, “সদাপ্রভুর শাসন তুচ্ছ করিও না, তাঁহার অনুযোগে ক্লান্ত হইও না।”—হিতো. ৩:১১, ১২.
^ নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।