সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জীবনকাহিনি

যিহোবার প্রতি বাধ্যতা আমার জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে

যিহোবার প্রতি বাধ্যতা আমার জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে

“নোহের কাছ থেকে আমরা কত চমৎকার শিক্ষাই না লাভ করতে পারি!” আমার বাবা ব্যাখ্যা করেছিলেন। “নোহ যিহোবার প্রতি বাধ্য ছিলেন ও তার পরিবারকে ভালোবাসতেন এবং তারা সকলে জলপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছিল কারণ পরিবারের সকলে জাহাজে প্রবেশ করেছিল।”

বাবাকে নিয়ে এটাই আমার সবচেয়ে পুরোনো স্মৃতি, যিনি একজন বিনয়ী ও পরিশ্রমী ব্যক্তি ছিলেন। বাবার ন্যায়বিচারবোধ বেশ দৃঢ় ছিল আর সেই কারণেই ১৯৫৩ সালে তিনি যখন বাইবেলের বার্তা শুনেছিলেন, তখন সঙ্গেসঙ্গে সেই বার্তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সেই সময় থেকে, তিনি যা-কিছু শিখতেন, তা আমাদেরও শেখানোর জন্য যথাসাধ্য করতেন। আমার মা প্রথমে তার ক্যাথলিক বিশ্বাস ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু, এক সময় তিনিও বাইবেলের শিক্ষাগুলোকে নিজের করে নিয়েছিলেন।

আমার বাবা-মার জন্য আমাদের সঙ্গে অধ্যয়ন করা কঠিন ছিল। কারণ মা বলতে গেলে পড়াশোনা জানতেনই না আর বাবাকে প্রতিদিন দীর্ঘসময় ধরে মাঠে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। মাঝে মাঝে তিনি এতটাই ক্লান্ত থাকতেন যে, অধ্যয়নের সময় জেগে থাকা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ত। তবে, তার প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছিল। আমি সবার বড়ো ছিলাম আর তাই আমিই আমার বোন ও দুই ভাইকে সত্য শিখতে সাহায্য করেছিলাম। তাদের শেখানোর সময় আমিও বাবা প্রায়ই যে-কথাগুলো বলতেন, সেগুলো উল্লেখ করতাম আর তা হল, নোহের পরিবারের জন্য নোহের ভালোবাসা ঈশ্বরের প্রতি তার বাধ্যতার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। বাইবেলের এই বিবরণ আমার খুবই ভালো লাগত! শীঘ্র, আমরা সবাই ইতালির অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলের একটা শহর রোজেতো দেলিই আব্রুত্‌সির একটা কিংডম হলের সভাতে যোগ দিতে শুরু করেছিলাম।

১৯৫৫ সালে যখন আমার বয়স ১১ বছর, সেই সময়ে মা এবং আমি পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকা পেরিয়ে রোমে গিয়ে প্রথম বারের মতো জেলা সম্মেলনে যোগদান করেছিলাম। সেই সময় থেকে আমি এই ধরনের বড়ো বড়ো সমাবেশকে খ্রিস্টীয় জীবনের সবচেয়ে চমৎকার এক দিক বলে মনে করে এসেছি।

পরের বছরেই আমি বাপ্তিস্ম নিই এবং এর অল্পসময় পর পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করি। আমার বয়স যখন ১৭ বছর, তখন আমাকে একজন বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে রোমের দক্ষিণে লাতিনা শহরে নিযুক্ত করা হয়, যা আমার বাড়ি থেকে ৩০০ কিলোমিটার (১৯০ মাইল) দূরে। এটা একেবারে নতুন এক শহর ছিল আর তাই পাড়াপ্রতিবেশীরা কী ভাববে, তা নিয়ে কেউই বেশি মাথা ঘামাত না। আমি ও আমার অগ্রগামী সঙ্গী অনেক বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি বিতরণ করতে পেরে খুবই খুশি হতাম, তবে বয়স কম থাকায় তখন বাড়ির জন্যও আমার মন খারাপ লাগত! তার পরও, আমাকে দেওয়া নির্দেশনার প্রতি আমি বাধ্য থাকতে চেয়েছিলাম।

১৯৬৩ সালে আমাকে “অনন্তকালীন সুসমাচার” আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তুতিতে সাহায্য করার জন্য মিলানে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল। সম্মেলন চলাকালীন আমি একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনেকের সঙ্গে কাজ করেছিলাম, যাদের মধ্যে ফ্লোরেন্স থেকে আগত পাওলো পিচোলি নামে একজন যুবক ভাইও ছিলেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন তিনি অবিবাহিত জীবনের ওপর এক উদ্যমী বক্তৃতা দিয়েছিলেন। আমার মনে আছে, আমি তখন এমন চিন্তা করেছিলাম যে, ‘এই ভাই নিশ্চয়ই কখনো বিয়ে করবেন না।’ কিন্তু, আমরা একে অন্যের কাছে চিঠি লিখতে শুরু করেছিলাম আর এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, আমাদের মধ্যে অনেক বিষয়ে মিল রয়েছে, যেমন, আমাদের লক্ষ্য, যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম এবং তাঁর প্রতি বাধ্য থাকার ব্যাপারে আমাদের প্রবল আকাঙ্ক্ষা। ১৯৬৫ সালে পাওলো এবং আমি বিয়ে করি।

পাদরিদের সঙ্গে আলোচনা

আমি ফ্লোরেন্সে দশ বছর ধরে একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেছি। বিভিন্ন মণ্ডলীতে বৃদ্ধি দেখা, বিশেষ করে অল্পবয়সিরা কীভাবে উন্নতি করছে তা দেখা, সত্যিই অনেক রোমাঞ্চকর ছিল। পাওলো আর আমার তাদের সঙ্গে আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি বিনোদনের জন্যও সময় কাটাতে ভালো লাগত আর তাই পাওলো প্রায়ই তাদের সঙ্গে ফুটবল খেলত। এটা ঠিক যে, আমার স্বামীর সঙ্গে সময় কাটাতে আমার ভালো লাগত, তবে আমি এও বুঝতে পারতাম, ওই অল্পবয়সিদের এবং মণ্ডলীর পরিবারগুলোর প্রতি সে যে সদয়ভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছে ও সময় দিচ্ছে, তা থেকে তারা উপকৃত হচ্ছে এবং তাদের সেটা প্রয়োজন।

আমরা যে অনেকগুলো বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে পেরেছি, তা চিন্তা করলে এখনও আমার খুব ভালো লাগে। সেগুলোর মধ্যে একটা অধ্যয়ন ছিল আড্রিয়ানার সঙ্গে, তিনি যা-কিছু শিখছিলেন তা অন্য দুটো পরিবারকেও জানাতেন। সেই পরিবারগুলো গির্জার বিভিন্ন মতবাদ যেমন, ত্রিত্ব এবং আত্মার অমরত্ব সম্বন্ধে একজন যাজকের সঙ্গে আলোচনা সভার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে তিন জন উচ্চপদস্থ পাদরি সেই সভাতে এসেছিল। সেই পাদরিদের ব্যাখ্যা জটিল ও অসংগতিপূর্ণ ছিল আর আমাদের বাইবেল ছাত্ররা যখন বাইবেলের স্পষ্ট শিক্ষার সঙ্গে সেগুলো তুলনা করেছিল, তখন তারা সহজেই তা বুঝতে পেরেছিল। হ্যাঁ, সেই সভা এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সময় হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। পরে, সেই দুটো পরিবারের ১৫ জন সদস্য যিহোবার সাক্ষি হয়েছে।

অবশ্য, বর্তমানে আমাদের প্রচার করার পদ্ধতি বেশ আলাদা। সেই সময়ে পাওলো পাদরিদের সঙ্গে আলোচনা করার ব্যাপারে “দক্ষ” হয়ে উঠেছিল আর তাকে বেশ কয়েক বার এইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আমার মনে আছে, একবার ন-সাক্ষি শ্রোতাদের সামনে এইরকম এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। পরিষ্কার বোঝা গিয়েছিল যে, বিরোধীরা আগে থেকেই শ্রোতাদের মধ্যে কাউকে কাউকে বিব্রতকর প্রশ্নগুলো করার জন্য বলে রেখেছিল। কিন্তু, সেই আলোচনার মোড় ঘুরে গিয়েছিল। কেউ একজন জিজ্ঞেস করেছিল যে, রাজনীতিতে গির্জার হস্তক্ষেপ করা ঠিক কি না, কারণ শত শত বছর ধরে গির্জা তা করে আসছে। সেই মুহূর্তে পাদরিরা যে বিপদে পড়ে যায়, তা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ করে, লাইট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আর সভাটা সেখানেই শেষ করে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক বছর পর আমরা জানতে পেরেছিলাম, এই বিষয়টা আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিল যে, আলোচনা যদি পাদরিদের আশা অনুযায়ী ঠিকমতো না এগোয়, তাহলে যেন লাইট নিভিয়ে দেওয়া হয়।

সেবার নতুন নতুন দিক

আমাদের বিয়ের দশ বছর পর, আমাদেরকে সীমার কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। পাওলোর বেশ ভালো একটা চাকরি ছিল আর তাই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সহজ ছিল না। তবে, প্রার্থনাপূর্বক চিন্তাভাবনা করার পর, আমরা সেই নতুন সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা যে-পরিবারগুলোর সঙ্গে থাকতাম, তাদের সঙ্গে আমরা চমৎকার সময় কাটাতাম। সন্ধ্যায় প্রায়ই আমরা দলগতভাবে অধ্যয়ন করতাম এবং এরপর পাওলো ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের হোমওয়ার্ক করতে সাহায্য করত, বিশেষ করে সেটা যদি গণিত হতো। তা ছাড়া, পাওলো পড়তে খুব ভালোবাসত এবং কোনো আগ্রহজনক ও গঠনমূলক বিষয় পড়ার পর সে উদ্যমের সঙ্গে তা অন্যদেরকে জানাত। সোমবারে, আমরা প্রায়ই এমন সব শহরে প্রচারে যেতাম, যেখানে কোনো সাক্ষি নেই আর সেখানকার লোকেদের সন্ধ্যার বক্তৃতায় উপস্থিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতাম।

মাত্র দু-বছর সীমার কাজ করার পর, আমাদেরকে রোমের বেথেলে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। পাওলোকে আইন সংক্রান্ত বিষয়গুলোর দেখাশোনা করতে হতো আর আমাকে পত্রিকা বিভাগ-এ কার্যভার দেওয়া হয়েছিল। এই পরিবর্তন খুব সহজ ছিল না, কিন্তু আমরা বাধ্য থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলাম। ক্রমান্বয়ে শাখা অফিসের সম্প্রসারণ এবং ইতালিতে ভ্রাতৃসমাজের ব্যাপক বৃদ্ধি দেখা খুবই আনন্দদায়ক বিষয় ছিল। সেই সময় ইতালির যিহোবার সাক্ষিরা বৈধ স্বীকৃতি লাভ করেছিল, যা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা এই ধরনের সেবায়ও সত্যি সত্যিই আনন্দ লাভ করেছিলাম।

আমরা বেথেলে সেবা করার সময় রক্তের বিষয়ে আমাদের বাইবেলভিত্তিক অবস্থান ইতালির লোকেদের কাছে প্রকাশ পেয়েছিল। ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকে, এই বিষয়ের ওপর একটা আইনি মামলা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এক সাক্ষি দম্পতিকে তাদের মেয়ের মৃত্যুর জন্য মিথ্যা দোষারোপ করা হয়েছিল, যদিও সেই মেয়ে আসলে এমন এক গুরুতর রক্ত সংক্রান্ত রোগে মারা গিয়েছিল, যা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অনেকেরই বংশগতভাবে হয়ে থাকে। বেথেল পরিবারের ভাইবোনেরা সেই খ্রিস্টান দম্পতির আইনজীবীদের সহায়তা করেছিল। ইতালীয় ভাষায় একটা ট্র্যাক্ট ও সচেতন থাক! পত্রিকার এক বিশেষ সংখ্যা লোকেদেরকে প্রকৃত তথ্য জানতে এবং রক্তের বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্য কী বলে, তা সঠিকভাবে বুঝতে সাহায্য করেছিল। সেই মাসগুলোতে, পাওলোকে প্রায় দিনই একটানা ১৬ ঘন্টা করে কাজ করতে হতো। আমি তাকে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজে সমর্থন করার জন্য যথাসাধ্য করেছি।

জীবনে আরেকটা পরিবর্তন

আমরা ইতিমধ্যেই ২০ বছর ধরে বিবাহিত জীবন কাটিয়েছিলাম আর সেই সময়ে আমাদের জীবনে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে যায়। আমি যখন পাওলোকে বলেছিলাম যে, আমার মনে হয় আমি প্রেগন্যান্ট, তখন আমার বয়স ৪১ বছর আর পাওলোর ৪৯ বছর। তার ডায়েরিতে আমি এই কথাগুলো দেখতে পেয়েছিলাম, যা সে সেই দিন লিখেছিল: “প্রার্থনা: যদি এটা সত্যি হয়, তাহলে আমাদের সাহায্য করো, যাতে আমরা পূর্ণসময়ের সেবা করে যেতে পারি, আধ্যাত্মিকভাবে শিথিল হয়ে না পড়ি এবং আমাদের উদাহরণের মাধ্যমে উত্তম বাবা-মা হতে পারি। সর্বোপরি, বিগত ৩০ বছর ধরে প্ল্যাটফর্ম থেকে আমি যা-কিছু বলেছি, সেগুলোর অন্ততপক্ষে ১ ভাগও যেন আমি আমার কাজে দেখাতে পারি সেইজন্য আমাকে সাহায্য করো।” ফলাফল বিবেচনা করলে বুঝতে পারি, যিহোবা তার এবং আমার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন।

ইলারিয়ার জন্ম আমাদের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল। সত্যি বলতে কী, আমরা কখনো কখনো নিরুৎসাহিতও হয়েছি, ঠিক যেমন, হিতোপদেশ ২৪:১০ পদ বলে: “সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত।” কিন্তু, পারস্পরিক উৎসাহের যে মূল্য রয়েছে তা মনে রেখে, আমরা একে অপরকে সমর্থন করেছি।

ইলারিয়া এখন প্রায়ই বলে যে, পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিল এমন দু-জন সাক্ষির পরিবারে জন্মগ্রহণ করতে পেরে সে খুবই আনন্দিত। সে কখনোই নিজেকে অবহেলিত বোধ করেনি; সে একেবারে স্বাভাবিক একটা পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছে। দিনের বেলা আমি তার সঙ্গে থাকতাম। আর সন্ধ্যায় যখন পাওলো বাড়ি ফিরে আসত, তখন যদিও প্রায়ই তার নিজেরই অনেক কাজ থাকত, কিন্তু তা সত্ত্বেও সে ইলারিয়ার সঙ্গে খেলা করত এবং তার হোমওয়ার্ক করতে সাহায্য করত। সে তা করত, যদিও এর জন্য হয়তো তাকে রাত দুটো অথবা তিনটে পর্যন্ত জেগে থেকে নিজের কাজ শেষ করতে হতো। ইলারিয়া প্রায়ই বলত, “বাবা আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।”

আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, ইলারিয়াকে খ্রিস্টীয় পথে থাকতে সাহায্য করার জন্য আমাদের তাকে শাসন করতে হয়েছিল আর মাঝে মাঝে দৃঢ়ভাবেই তা করতে হয়েছিল। আমার মনে আছে, একবার সে তার এক বান্ধবীর সঙ্গে খেলা করছিল, কিন্তু সে খারাপ আচরণ করেছিল। আমরা বাইবেল থেকে তাকে ব্যাখ্যা করেছিলাম যে, কেন তার এইরকম আচরণ করা উচিত নয়। এ ছাড়া, আমরা তাকে আমাদের সামনেই তার বান্ধবীর কাছে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে বলেছিলাম।

ইলারিয়া আনন্দের সঙ্গে বলে যে, পরিচর্যার প্রতি তার বাবা-মা যে-প্রেম দেখিয়েছে, সেটার প্রতি তার উপলব্ধি রয়েছে। আর এখন যেহেতু সে নিজেই বিবাহিত, তাই সে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে যে, যিহোবার বাধ্য থাকা এবং তাঁর নির্দেশনা পালন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

দুঃখের সময়েও বাধ্য থাকা

২০০৮ সালে, পাওলো জানতে পারে যে, তার ক্যান্সার হয়েছে। প্রথমে মনে হয়েছিল, পাওলো তার অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে পারবে আর সে আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছিল। এ ছাড়া, প্রাপ্তিসাধ্য সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা খোঁজার সঙ্গে সঙ্গে আমি ও ইলারিয়া একত্রে দীর্ঘসময় যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিলাম, যাতে ভবিষ্যতের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি। তা সত্ত্বেও, আমার জন্য এমন একজন ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে দুর্বল হতে দেখা সত্যিই দুঃখজনক ছিল, যে একসময় শক্তিশালী এবং উদ্যমে পরিপূর্ণ ছিল। ২০১০ সালে, পাওলোর মৃত্যু আমার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল। কিন্তু, বিগত ৪৫ বছর ধরে আমরা একত্রে যা-কিছু সম্পাদন করেছি, তা আমাকে অনেক সান্ত্বনা প্রদান করে। আমরা যিহোবার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করেছি। আমি জানি আমাদের কাজের স্থায়ী মূল্য রয়েছে। আমি অধীর আগ্রহে সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছি, যখন পাওলো যোহন ৫:২৮, ২৯ পদে যিশুর বলা কথাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে পুনরুত্থিত হবে।

“মনের গভীরে আমি এখনও সেই ছোট্ট মেয়ে, যে নোহের গল্প অনেক ভালোবাসে। আমার সংকল্পের কোনো পরিবর্তন হয়নি”

মনের গভীরে আমি এখনও সেই ছোট্ট মেয়ে, যে নোহের গল্প অনেক ভালোবাসে। আমার সংকল্পের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমি যিহোবার বাধ্য থাকতে চাই, তা আমাকে যা-ই করতে বলা হোক না কেন। আমি নিশ্চিত যে, আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর যে-চমৎকার আশীর্বাদগুলো বর্ষণ করেন সেগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে যেকোনো বাধা, ত্যাগস্বীকার অথবা ক্ষতি খুবই নগণ্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেই অভিজ্ঞতা লাভ করেছি আর আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, তা সার্থক হয়।