সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অল্পসংখ্যক লোকের দ্বারা অনেক লোককে খাদ্য জোগানো

অল্পসংখ্যক লোকের দ্বারা অনেক লোককে খাদ্য জোগানো

অল্পসংখ্যক লোকের দ্বারা অনেক লোককে খাদ্য জোগানো

“[যিশু] রুটী কয়খানি ভাঙ্গিয়া শিষ্যদিগকে দিলেন, শিষ্যেরা লোকদিগকে দিলেন।” —মথি ১৪:১৯.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

বিস্তর লোককে খাওয়ানোর সময় যিশু কোন আদর্শ অনুসরণ করেছিলেন?

কীভাবে যিশু যিরূশালেমের প্রেরিতদের এবং প্রাচীনবর্গকে ব্যবহার করেছিলেন?

খ্রিস্ট কখন আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রদান করার ব্যাপারে এক সংগঠিত মাধ্যমকে নিযুক্ত করেছিলেন?

১-৩. বৈৎসদার কাছাকাছি এলাকায় বিস্তর লোককে যিশু কীভাবে খাইয়েছিলেন, তা বর্ণনা করুন। (শিরোনামের পাশে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

 দৃশ্যটা কল্পনা করুন। (পড়ুন, মথি ১৪:১৪-২১.) সময়টা হল, ৩২ খ্রিস্টাব্দে নিস্তারপর্বের মাত্র কয়েক দিন আগে। স্ত্রী ও শিশু ছাড়া প্রায় ৫,০০০ পুরুষ, গালীল সমুদ্রের উত্তর উপকূলে অবস্থিত বৈৎসদা নামক এক গ্রামের কাছাকাছি একটা নির্জন স্থানে যিশু ও তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে আছে।

সেই জনতাকে দেখে যিশু করুণাবিষ্ট হন, তাই তিনি তাদের মধ্যে যে-অসুস্থ ব্যক্তিরা ছিল, তাদের সুস্থ করেন এবং তাদেরকে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে অনেক শিক্ষা দেন। যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে, তখন শিষ্যরা যিশুকে সেই লোকেদের বিদায় করার জন্য অনুরোধ করে, যাতে লোকেরা নিকটবর্তী গ্রামগুলোতে গিয়ে নিজেদের জন্য খাবার কিনতে পারে। কিন্তু, যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেন: “তোমরাই উহাদিগকে আহার দেও।” তাঁর কথাগুলো তাদের কাছে নিশ্চয়ই আশ্চর্যজনক বলে মনে হয়েছিল কারণ তাদের কাছে যে-খাবার ছিল, তা খুবই সামান্য—পাঁচটা রুটি ও দুটো ছোটো মাছ।

সমব্যথী হয়ে যিশু এক অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেন—একমাত্র অলৌকিক কাজ, যা চার জন সুসমাচার লেখকই লিপিবদ্ধ করেছে। (মার্ক ৬:৩৫-৪৪; লূক ৯:১০-১৭; যোহন ৬:১-১৩) যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেন, তারা যেন লোকেদেরকে সবুজ ঘাসের ওপর ৫০ জন ও ১০০ জন করে সারি সারি বসে যাওয়ার আজ্ঞা দেয়। সেগুলো নিয়ে আশীর্বাদ করার পর, তিনি রুটি ভাঙতে এবং মাছ ভাগ করতে শুরু করেন। এরপর, নিজে সরাসরি লোকেদেরকে খাবার দেওয়ার পরিবর্তে, যিশু তা “শিষ্যদিগকে দিলেন, শিষ্যেরা লোকদিগকে দিলেন।” অলৌকিক বিষয় হল, সেখানে প্রত্যেকের যতটুকু প্রয়োজন, সেটার চেয়েও বেশি খাবার ছিল! একটু চিন্তা করুন: অল্পসংখ্যক লোকের—তাঁর শিষ্যদের—দ্বারা যিশু হাজার হাজার লোককে খাইয়েছিলেন। *

৪. (ক) যিশু কোন ধরনের খাদ্য জোগানোর জন্য এমনকী আরও বেশি চিন্তিত ছিলেন এবং কেন? (খ) এই অধ্যয়ন প্রবন্ধে ও পরবর্তী অধ্যয়ন প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?

  যিশু তাঁর অনুসারীদের জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর বিষয়ে এমনকী আরও বেশি চিন্তিত ছিলেন। তিনি জানতেন যে, আধ্যাত্মিক খাদ্য অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত সত্যগুলো গ্রহণ করা অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করে। (যোহন ৬:২৬, ২৭; ১৭:৩) যে-সমবেদনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি বিস্তর লোককে রুটি ও মাছ খাইয়েছিলেন, সেই একই সমবেদনার দ্বারা পরিচালিত হয়ে তিনি তাঁর অনুসারীদের ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা দেওয়ার জন্য অনেক সময় ব্যয় করেছিলেন। (মার্ক ৬:৩৪) কিন্তু, তিনি জানতেন যে, পৃথিবীতে তিনি আর অল্পসময়ের জন্য থাকবেন এবং এরপর স্বর্গে ফিরে যাবেন। (মথি ১৬:২১; যোহন ১৪:১২) কীভাবে যিশু স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে তাঁর অনুসারীদেরকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ভালোভাবে খাদ্য জোগাবেন? তিনি একই আদর্শ অনুসরণ করবেন—অল্পসংখ্যক লোকের দ্বারা অনেক লোককে খাদ্য জোগাবেন। কিন্তু, সেই অল্পসংখ্যক লোক কারা? আসুন আমরা দেখি যে, প্রথম শতাব্দীতে বসবাসরত তাঁর অনেক অভিষিক্ত অনুসারীকে খাদ্য জোগানোর জন্য যিশু কীভাবে অল্পসংখ্যক লোককে ব্যবহার করেছিলেন। এরপর, পরের প্রবন্ধে আমরা আমাদের প্রত্যেকের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্ন আলোচনা করব: কীভাবে আমরা সেই অল্পসংখ্যক লোককে শনাক্ত করতে পারি, যাদের দ্বারা খ্রিস্ট বর্তমানে আমাদের জন্য খাদ্য জোগান?

যিশু অল্পসংখ্যক লোককে মনোনীত করেন

৫, ৬. (ক) তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীরা যেন আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ভালোভাবে খাদ্য লাভ করে, সেই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য যিশু কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? (খ) যিশু কীভাবে তাঁর প্রেরিতদেরকে তাঁর মৃত্যুর পর এক মুখ্য ভূমিকা পালন করার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন?

পরিবারের একজন দায়িত্ববান মস্তক বিভিন্ন ব্যবস্থা করে রাখেন, যাতে তিনি যদি মারাও যান, তার পরিবার যেন ভালো যত্ন লাভ করে। একইভাবে যিশুও—যিনি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক হতে যাচ্ছিলেন—এই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করেন যে, তাঁর মৃত্যুর পর শিষ্যরা যেন আধ্যাত্মিকভাবে ভালো যত্ন লাভ করে। (ইফি. ১:২২) উদাহরণস্বরূপ, মারা যাওয়ার দু-বছর আগে, যিশু এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি অল্পসংখ্যক লোকের মধ্যে থেকে প্রথম কয়েক জনকে বেছে নিয়েছিলেন, যাদেরকে তিনি পরবর্তী সময়ে অনেকের জন্য খাদ্য জোগানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন। কী ঘটেছিল, তা বিবেচনা করুন।

সারারাত প্রার্থনা করার পর, যিশু তাঁর শিষ্যদের একত্রিত করেন এবং তাদের মধ্যে থেকে ১২ জন প্রেরিতকে মনোনীত করেন। (লূক ৬:১২-১৬) পরবর্তী দু-বছর, তিনি বিশেষভাবে সেই ১২ জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাদেরকে কথা ও উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি জানতেন যে, তাদের অনেক কিছু শিখতে হবে; বস্তুতপক্ষে, তাদেরকে সবসময় ‘শিষ্য’ বলেই সম্বোধন করা হয়েছিল। (মথি ১১:১; ২০:১৭) তিনি পরিচর্যার সময় তাদেরকে মূল্যবান ব্যক্তিগত পরামর্শ এবং ব্যাপক প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। (মথি ১০:১-৪২; ২০:২০-২৩; লূক ৮:১; ৯:৫২-৫৫) স্পষ্টতই, তিনি তাঁর মৃত্যু এবং স্বর্গে ফিরে যাওয়ার পর তারা যে-মুখ্য ভূমিকা পালন করবে, সেটার জন্য তাদেরকে প্রস্তুত করছিলেন।

৭. প্রেরিতদের প্রধান চিন্তার বিষয় কী হবে, সেই সম্বন্ধে যিশু কীভাবে একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন?

প্রেরিতদের ভূমিকা কী হবে? ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন যতই নিকটবর্তী হচ্ছিল, ততই এই বিষয়টা স্পষ্ট হচ্ছিল যে, প্রেরিতরা এক ‘অধ্যক্ষ-পদে’ সেবা করবে। (প্রেরিত ১:২০) কিন্তু, তাদের প্রধান চিন্তার বিষয় কী হবে? পুনরুত্থানের পর, প্রেরিত পিতরের সঙ্গে এক আলোচনার সময় যিশু এই বিষয়ে একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। (পড়ুন, যোহন ২১:১, ২, ১৫-১৭.) অন্য কয়েক জন প্রেরিতের উপস্থিতিতে যিশু পিতরকে বলেছিলেন: “আমার মেষশাবকগণকে চরাও।” যিশু এভাবে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর প্রেরিতরা সেই অল্পসংখ্যক লোকের মধ্যে থাকবে, যাদের দ্বারা তিনি অনেকের জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগাবেন। যিশু তাঁর ‘মেষশাবকগণের’ বিষয়ে কেমন বোধ করেন, সেটার কতই না হৃদয়গ্রাহী ও স্পষ্ট এক ইঙ্গিত! *

পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে শুরু করে অনেক লোককে ক্রমাগত খাদ্য জোগানো

৮. পঞ্চাশত্তমীর দিনে নতুন বিশ্বাসীরা কীভাবে দেখিয়েছিল যে, তারা সেই মাধ্যমকে স্পষ্টভাবে শনাক্ত করতে পেরেছে, যে-মাধ্যম খ্রিস্ট ব্যবহার করছিলেন?

তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে শুরু করে, পুনরুত্থিত খ্রিস্ট তাঁর প্রেরিতদেরকে ক্রমাগত এমন এক মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন, যেটার দ্বারা তিনি তাঁর বাকি অভিষিক্ত শিষ্যদের জন্য খাদ্য জোগান। (পড়ুন, প্রেরিত ২:৪১, ৪২.) এই মাধ্যমকে সেই যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা স্পষ্টভাবে শনাক্ত করতে পেরেছিল, যারা ওই সময়ে আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টান হয়ে উঠেছিল। নিঃসংকোচে, তারা ‘প্রেরিতদের শিক্ষায় নিবিষ্ট থাকিল।’ একজন পণ্ডিত ব্যক্তির মতানুসারে, যে-গ্রিক ক্রিয়াপদটিকে “নিবিষ্ট থাকিল” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির অর্থ “কোনো নির্দিষ্ট কাজের প্রতি দৃঢ় এবং একনিষ্ঠ আনুগত্য” বজায় রাখাও হতে পারে। নতুন বিশ্বাসী ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিক খাদ্যের জন্য তীব্র ক্ষুধা ছিল আর তারা জানত যে, ঠিক কোথায় তা পাওয়া যেতে পারে। তারা যিশুর কথা ও কাজের ব্যাখ্যা শোনার জন্য এবং তাঁর সম্বন্ধে বলা আছে এমন শাস্ত্রপদগুলোর অর্থের ওপর স্পষ্ট আলো বর্ষণ করার জন্য অটল আনুগত্য সহকারে প্রেরিতদের ওপর নির্ভর করেছিল। *প্রেরিত ২:২২-৩৬.

৯. কীভাবে প্রেরিতরা দেখিয়েছিল যে, তারা যিশুর মেষদের জন্য খাদ্য জোগানোর দায়িত্বকে স্পষ্টভাবে মনে রেখেছিল?

প্রেরিতরা যিশুর মেষদেরকে খাদ্য প্রদান করার ব্যাপারে তাদের দায়িত্বের কথা স্পষ্টভাবে মনে রেখেছিল। উদাহরণস্বরূপ, নবগঠিত মণ্ডলীতে স্পর্শকাতর এবং বিভেদ তৈরি করতে পারে এমন একটা বিষয় তারা কীভাবে সমাধান করেছিল, তা লক্ষ করুন। আশ্চর্যের বিষয় হল, বিষয়টা খাদ্য—দৈহিক খাদ্য—সংক্রান্ত ছিল। দৈনিক খাদ্য বিতরণের সময় গ্রিকভাষী বিধবারা উপেক্ষিত হচ্ছিল কিন্তু ইব্রীয়ভাষী বিধবারা উপেক্ষিত হচ্ছিল না। প্রেরিতরা কীভাবে এই স্পর্শকাতর বিষয়ের সমাধান করেছিল? “সেই বারো জন [প্রেরিত]” খাদ্য বিতরণের এই “কার্য্যের ভার” দেখাশোনা করার জন্য সাত জন যোগ্য ভাইকে নিযুক্ত করেছিল। প্রেরিতরা—নিঃসন্দেহে যাদের মধ্যে অধিকাংশই, যিশু যে-জনতাকে অলৌকিকভাবে খাইয়েছিলেন, তাদেরকে খাদ্য বিতরণ করেছিল—উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, তাদের জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানো আরও গুরুত্বপূর্ণ। তাই, তারা “বাক্যের পরিচর্য্যায়” নিবিষ্ট ছিল।—প্রেরিত ৬:১-৬.

১০. কীভাবে খ্রিস্ট যিরূশালেমে প্রেরিতদের ও প্রাচীনবর্গকে ব্যবহার করেছিলেন?

১০ ঊনপঞ্চাশ খ্রিস্টাব্দে, অবশিষ্ট প্রেরিতদের সঙ্গে আরও কয়েক জন যোগ্য প্রাচীন যোগ দিয়েছিল। (পড়ুন, প্রেরিত ১৫:১, ২.) ‘যিরূশালেমে প্রেরিতগণ ও প্রাচীনবর্গ’ পরিচালকগোষ্ঠী হিসেবে কাজ করেছিল। মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে খ্রিস্ট যোগ্য পুরুষদের এই ছোট্ট দলকে মতবাদ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সমাধান করার এবং রাজ্যের সুসমাচার প্রচার আর শিক্ষাদানের কাজ দেখাশোনা ও তাতে নির্দেশনা প্রদান করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন।—প্রেরিত ১৫:৬-২৯; ২১:১৭-১৯; কল. ১:১৮.

১১, ১২. (ক) কী দেখায় যে, যিহোবা সেই ব্যবস্থাকে আশীর্বাদ করেছিলেন, যেটার মাধ্যমে তাঁর পুত্র প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীগুলোর জন্য খাদ্য জুগিয়েছিলেন? (খ) আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর জন্য খ্রিস্ট যে-মাধ্যম ব্যবহার করেছিলেন, সেটাকে কীভাবে স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা গিয়েছিল?

১১ যিহোবা কি সেই ব্যবস্থাকে আশীর্বাদ করেছিলেন, যেটার দ্বারা তাঁর পুত্র প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীগুলোর জন্য খাদ্য জুগিয়েছিলেন? নিশ্চয়ই! কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি? প্রেরিত বই আমাদেরকে এই তথ্য জানায়: “আর তাঁহারা নগরে নগরে ভ্রমণ করিতে করিতে যিরূশালেমস্থ প্রেরিতগণের ও প্রাচীনবর্গের নিরূপিত নিয়মাবলী পালন করিতে ভ্রাতৃগণের হস্তে অর্পণ করিলেন। এইরূপে মণ্ডলীগণ বিশ্বাসে দৃঢ়ীকৃত হইতে থাকিল, এবং দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি পাইল।” (প্রেরিত ১৬:৪, ৫) লক্ষ করুন যে, সেই মণ্ডলীগুলো যিরূশালেমের পরিচালকগোষ্ঠীকে অনুগতভাবে সহযোগিতা করার ফলে সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। এটা কি সেই ব্যবস্থার প্রতি যিহোবার আশীর্বাদের প্রমাণ নয়, যেটার দ্বারা তাঁর পুত্র মণ্ডলীগুলোর জন্য খাদ্য জুগিয়েছিলেন? আসুন, আমরা যেন ভুলে না যাই যে, আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি কেবল যিহোবার প্রচুর আশীর্বাদের কারণেই সম্ভবপর হয়।—হিতো. ১০:২২; ১ করি. ৩:৬, ৭.

 ১২ এযাবৎ আমরা লক্ষ করেছি যে, যিশু তাঁর অনুসারীদের খাদ্য জোগানোর জন্য একটা আদর্শ অনুসরণ করেছেন: তিনি অল্পসংখ্যক লোকের দ্বারা অনেক লোককে খাদ্য জুগিয়েছেন। আধ্যাত্মিকভাবে খাদ্য জোগানোর জন্য তিনি যে-মাধ্যম ব্যবহার করেছিলেন, তা স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা গিয়েছিল। সবচেয়ে বড়ো কথা হল, প্রেরিতরা—পরিচালকগোষ্ঠীর প্রথম সদস্যরা—স্বর্গীয় সমর্থনের দৃশ্যত প্রমাণ জোগাতে পারত। “প্রেরিতদের হস্ত দ্বারা লোকদের মধ্যে অনেক চিহ্ন-কার্য্য ও অদ্ভুত লক্ষণ সাধিত হইত,” প্রেরিত ৫:১২ পদ বলে। * তাই, যারা খ্রিস্টান হয়ে উঠেছিল, তাদের এই বিষয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণই ছিল না যে, ‘কারা সেই ব্যক্তি, যাদের মাধ্যমে খ্রিস্ট তাঁর মেষদের জন্য খাদ্য জোগাচ্ছিলেন?’ কিন্তু, প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল।

যে-সময় শ্যামাঘাস অনেক এবং গম অল্প ছিল

১৩, ১৪. (ক) আক্রমণ সম্বন্ধে যিশু কোন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন এবং তাঁর কথাগুলো কখন পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল? (খ) কোন দুটো জায়গা থেকে আক্রমণ আসবে? (টীকা দেখুন।)

১৩ যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, খ্রিস্টীয় মণ্ডলী আক্রমণের মুখে পড়বে। মনে রাখবেন যে, গম এবং শ্যামাঘাস সম্বন্ধে তাঁর ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক দৃষ্টান্তে যিশু সাবধান করে দিয়েছিলেন, নতুন বপন করা গমের (অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের) ক্ষেত্রে শ্যামাঘাস (নকল খ্রিস্টানদের) বপন করা হবে। তিনি বলেছিলেন, সেই দলগুলোকে পাশাপাশি বড়ো হতে দেওয়া হবে—‘যুগান্তের’ সময়ে শস্যচ্ছেদনের আগে পর্যন্ত সেগুলোকে কিছু করা হবে না। (মথি ১৩:২৪-৩০, ৩৬-৪৩) খুব শীঘ্র যিশুর কথাগুলো পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল। *

১৪ প্রথম শতাব্দীতে ধর্মভ্রষ্টতা কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছিল কিন্তু যিশুর বিশ্বস্ত প্রেরিতরা “বাধা” হিসেবে কাজ করেছিল, মিথ্যা শিক্ষাগুলোর কলুষতা এবং প্রভাবকে দূরে রেখেছিল। (২ থিষল. ২:৩, ৬, ৭) তবে, একেবারে শেষ প্রেরিত মারা যাওয়ার পর, বৃদ্ধি পাওয়ার এক দীর্ঘ সময়কালে ধর্মভ্রষ্টতা শিকড় বিস্তার করেছিল এবং ছড়িয়ে পড়েছিল, যে-সময়কাল অনেক শতাব্দী ধরে স্থায়ী ছিল। এ ছাড়া, সেই সময় শ্যামাঘাস অনেক বেড়ে গিয়েছিল এবং গমের সংখ্যা অল্প ছিল। তখন আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রদান করার জন্য কোনো দৃঢ়, সংগঠিত মাধ্যম ছিল না। এটা পরিশেষে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হল, কখন?

শস্যচ্ছেদনের সময়—কারা খাদ্য প্রদান করার কাজ করবে?

১৫, ১৬. শাস্ত্র নিয়ে বাইবেল ছাত্রদের অধ্যবসায়ী অধ্যয়ন কোন ফল নিয়ে এসেছিল এবং কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল?

১৫ বৃদ্ধি পাওয়ার সময় শেষ হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাইবেলের সত্যের প্রতি প্রবল আগ্রহও বৃদ্ধি পাচ্ছিল। মনে করে দেখুন যে, ১৮৭০-এর দশকে সত্য অন্বেষণকারী এক আন্তরিক ছোটো দল একত্রিত হয়েছিল এবং শ্যামাঘাস—গির্জা ও খ্রিস্টীয়জগতের নকল খ্রিস্টানদের—থেকে আলাদা হয়ে বাইবেল শিক্ষার ক্লাস গঠন করেছিল। নম্র হৃদয়ে এবং খোলাখুলিভাবে সেই আন্তরিক বাইবেল ছাত্ররা, যে-নামে তারা সেই সময় নিজেদেরকে ডাকত, শাস্ত্র নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে এবং প্রার্থনাপূর্বক অনুসন্ধান করেছিল।—মথি ১১:২৫.

১৬ শাস্ত্র নিয়ে বাইবেল ছাত্রদের অধ্যবসায়ী অধ্যয়ন প্রচুর ফল নিয়ে এসেছিল। সেই অনুগত পুরুষ এবং নারীরা মিথ্যা মতবাদগুলোকে প্রকাশ করে দিয়েছিল এবং আধ্যাত্মিক সত্য ছড়িয়ে দিয়েছিল, বাইবেল সাহিত্যাদি প্রকাশ করেছিল ও সেগুলো দূরদূরান্তে ছড়িয়ে দিয়েছিল। তাদের কাজ এমন অনেকের হৃদয় জয় করেছিল ও তাদের প্রত্যয়ী করেছিল, যারা আধ্যাত্মিক সত্যের জন্য ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত ছিল। তাই, এক আগ্রহজনক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়: ১৯১৪ সালের আগের বছরগুলোতে যে-বাইবেল ছাত্ররা ছিল, তারা কি সেই নিযুক্ত মাধ্যম ছিল, যেটার দ্বারা খ্রিস্ট তাঁর মেষদের জন্য খাদ্য জোগাবেন? না। তখনও তারা বৃদ্ধি লাভ করার সময়কালে ছিল এবং আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর জন্য একটা মাধ্যমের ব্যবস্থা করার কাজ তখনও চলছিল। গমতুল্য সত্য খ্রিস্টানদের থেকে শ্যামাঘাসতুল্য নকল খ্রিস্টানদের পৃথকীকরণের সময় তখনও আসেনি।

১৭. উনিশ-শো চোদ্দো সালে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করেছিল?

১৭ আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন জেনেছি যে, শস্যচ্ছেদনের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯১৪ সালে। সেই সময় বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রকাশ পেতে শুরু করেছিল। যিশুকে রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত করা হয়েছিল এবং শেষকাল শুরু হয়েছিল। (প্রকা. ১১:১৫) ১৯১৪ সাল থেকে শুরু করে ১৯১৯ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত যিশু তাঁর পিতার সঙ্গে আধ্যাত্মিক মন্দিরে অত্যন্ত জরুরি এক পরীক্ষা এবং পরিষ্করণ কাজ করেছিলেন। * (মালাখি ৩:১-৪) এরপর, ১৯১৯ সাল থেকে গম সংগ্রহ করার সময় শুরু হয়ে গিয়েছিল। এটাই কি আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রদান করার ব্যাপারে এক সংগঠিত মাধ্যমকে নিযুক্ত করার জন্য খ্রিস্টের সময় ছিল? হ্যাঁ, ঠিক তা-ই ছিল!

১৮. যিশু কোন নিযুক্তিকরণের কাজ করবেন বলে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন এবং যেহেতু শেষকাল শুরু হয়ে গিয়েছে, তাই একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন কী ছিল?

১৮ শেষকাল সম্বন্ধে তাঁর ভবিষ্যদ্‌বাণীতে যিশু বলেছিলেন যে, তিনি “উপযুক্ত সময়ে” আধ্যাত্মিক “খাদ্য” প্রদান করার জন্য একটা মাধ্যম নিযুক্ত করবেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) তিনি কোন মাধ্যম ব্যবহার করবেন? প্রথম শতাব্দীতে তিনি যে-আদর্শ স্থাপন করেছিলেন, সেটার সঙ্গে মিল রেখে যিশু আবারও অল্পসংখ্যক লোকের দ্বারা অনেক লোককে খাদ্য জোগাবেন। কিন্তু, যেহেতু শেষকাল শুরু হয়ে গিয়েছিল, তাই একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল, সেই অল্পসংখ্যক লোক কারা? এই প্রশ্ন এবং যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণী সম্বন্ধে আরও প্রশ্ন পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।

টীকা: (সংযুক্ত অনুচ্ছেদের সঙ্গে পাদটীকা হিসেবে পড়ার জন্য।)

[পাদটীকা]

^ অনুচ্ছেদ ৩: পরবর্তী একটা সময়ে, যিশু যখন অলৌকিকভাবে স্ত্রী ও শিশু ছাড়া ৪,০০০ পুরুষকে খাইয়েছিলেন, তখন তিনি আবারও সেই খাবার ‘শিষ্যদিগকে দিয়াছিলেন, শিষ্যেরা লোকদিগকে দিয়াছিলেন।’—মথি ১৫:৩২-৩৮.

^ অনুচ্ছেদ ৭: পিতরের জীবনকালে, যে-‘মেষশাবকগণকে’ খাদ্য জোগানো হয়েছিল, তারা সকলেই স্বর্গীয় আশাসম্পন্ন ছিল।

^ অনুচ্ছেদ ৮: নতুন বিশ্বাসীরা যে ‘প্রেরিতদের শিক্ষায় নিবিষ্ট থাকিল,’ তা দেখায় যে, প্রেরিতরা নিয়মিতভাবে শিক্ষা দিচ্ছিল। প্রেরিতদের কিছু শিক্ষা সেই অনুপ্রাণিত বইগুলোতে স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল, যা এখন খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর অংশ।

^ অনুচ্ছেদ ১২: যেহেতু প্রেরিতরা ছাড়া অন্যেরাও আত্মার অলৌকিক দান লাভ করেছিল, তাই মনে হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অলৌকিক দান কোনো প্রেরিতের দ্বারা সরাসরি অথবা তার উপস্থিতিতে অন্যদের প্রদান করা হয়েছিল।—প্রেরিত ৮:১৪-১৮; ১০:৪৪, ৪৫.

^ অনুচ্ছেদ ১৩: প্রেরিত ২০:২৯, ৩০ পদে প্রাপ্ত প্রেরিত পৌলের কথাগুলো দেখায় যে, মণ্ডলী দুটো জায়গা থেকে আক্রমণের সম্মুখীন হবে। প্রথমটা হল, নকল খ্রিস্টানরা (“শ্যামাঘাস”) সত্য খ্রিস্টানদের “মধ্যে প্রবেশ” করবে। দ্বিতীয়টা হল, সত্য খ্রিস্টানদের ‘মধ্য হইতেও’ কেউ কেউ ধর্মভ্রষ্ট হয়ে পড়বে, “বিপরীত কথা” বলবে।

^ অনুচ্ছেদ ১৭: এই সংখ্যার ১১ পৃষ্ঠার ‘দেখ, আমিই প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি’ শিরোনামের প্রবন্ধের ৬ অনুচ্ছেদ দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

অল্পসংখ্যক লোকের দ্বারা হাজার হাজার লোককে খাদ্য জোগানো হয়

( ৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রথম শতাব্দীতে, এই বিষয়টা স্পষ্ট ছিল যে, মণ্ডলীর জন্য খাদ্য জোগানোর ব্যাপারে যিশু কাদের ব্যবহার করছিলেন

( ১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)