পরস্পরের প্রতি বিবেচনা দেখান ও পরস্পরকে উৎসাহিত করুন
পরস্পরের প্রতি বিবেচনা দেখান ও পরস্পরকে উৎসাহিত করুন
“আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি।”—ইব্রীয় ১০:২৪.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
‘পরস্পর মনোযোগ করার’ বা পরস্পরের প্রতি বিবেচনা দেখানোর অর্থ কী?
কীভাবে আমরা “প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি”?
কীভাবে আমরা পরস্পরকে উৎসাহিত করতে পারি?
১, ২. কী ২৩০ জন যিহোবার সাক্ষিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে মৃত্যুযাত্রার সময় রক্ষা পেতে সাহায্য করেছিল?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে যখন নাতসি শাসনের পতন হতে যাচ্ছিল, তখন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে থেকে যাওয়া হাজার হাজার লোককে শেষ করে দেওয়ার এক আদেশ প্রদান করা হয়েছিল। জ্যাক্সেনহোজেন ক্যাম্প থেকে বন্দিদের বের করে সমুদ্রবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে তাদেরকে জাহাজে ওঠানোর পর সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া হবে। এটা ছিল সেই চক্রান্তের একটা অংশ যেটা মৃত্যুযাত্রা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল।
২ জ্যাক্সেনহোজেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে ৩৩,০০০ বন্দিকে জার্মানির একটা বন্দরনগরী লুবেকে যাওয়ার জন্য ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল) পথ পদযাত্রা করতে হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছয়টা দেশ থেকে ২৩০ জন যিহোবার সাক্ষি ছিল, যাদেরকে একসঙ্গে যাত্রা করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছিল। সকলে ক্ষুধার তাড়নায় ও অসুস্থতার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কীভাবে আমাদের ভাই-বোনেরা সেই পদযাত্রার সময় রক্ষা পেয়েছিল? “আমরা সবসময় পরস্পরকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিলাম,” তাদের মধ্যে একজন বলেছিলেন। ঈশ্বরদত্ত “পরাক্রমের উৎকর্ষ [“অসাধারণ মহাশক্তি,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]” ও সেইসঙ্গে পরস্পরের প্রতি প্রেম তাদেরকে সেই কঠিন পরীক্ষার মধ্যে রক্ষা পেতে সাহায্য করেছিল।—২ করি. ৪:৭.
৩. কেন আমাদের পরস্পরকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন?
৩ বর্তমানে, আমরা যদিও এই ধরনের কোনো মৃত্যুযাত্রা করছি না, কিন্তু আমরা বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হচ্ছি। ১৯১৪ সালে ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, শয়তানকে স্বর্গ থেকে নিক্ষেপ করে পৃথিবীর সীমানার মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে আর সে “অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।” (প্রকা. ১২:৭-৯, ১২) এই জগৎ আরমাগিদোনের দিকে যতই এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য শয়তান ততই পরীক্ষা ও চাপ নিয়ে আসছে। এর সঙ্গে রয়েছে রোজকার জীবনের বিভিন্ন উদ্বিগ্নতা। (ইয়োব ১৪:১; উপ. ২:২৩) মাঝে মাঝে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার প্রভাব একসঙ্গে মিলে আমাদেরকে এতটাই অবসন্ন করে ফেলতে পারে যে, আমরা যে-আবেগগত ও আধ্যাত্মিক শক্তি সঞ্চয় করি, তা আমাদের নিরুৎসাহিতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট না-ও হতে পারে। একজন ভাইয়ের কথা বিবেচনা করুন, যিনি অনেক দশক ধরে অনেক ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করেছেন। তার বয়স যখন বেড়ে যায়, তখন তিনি ও তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন আর তিনি অনেক নিরুৎসাহিত বোধ করতে শুরু করেন। সেই ভাইয়ের মতো, আমাদের সকলের যিহোবার কাছ থেকে “অসাধারণ মহাশক্তি” ও সেইসঙ্গে পরস্পরের কাছ থেকে উৎসাহ প্রয়োজন হয়।
৪. আমরা যদি অন্যদের উৎসাহ দিতে চাই, তাহলে আমাদেরকে প্রেরিত পৌলের কোন পরামর্শে মনোযোগ দিতে হবে?
৪ আমরা যদি অন্যদের উৎসাহের উৎস হতে চাই, তাহলে আমাদেরকে প্রেরিত পৌলের সেই পরামর্শে মনোযোগ দিতে হবে, যা তিনি ইব্রীয় খ্রিস্টানদের উদ্দেশে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি—যেমন কাহারও কাহারও অভ্যাস—বরং পরস্পরকে চেতনা [“উৎসাহ,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] দিই; আর তোমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছ, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।” (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এই অর্থপূর্ণ বাক্যের মধ্যে যে-পরামর্শ রয়েছে, তা আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি?
‘পরস্পর মনোযোগ করুন’
৫. ‘পরস্পর মনোযোগ করার’ বা পরস্পরের প্রতি বিবেচনা দেখানোর অর্থ কী আর এর জন্য কোন প্রচেষ্টা করা প্রয়োজন?
৫ ‘পরস্পর মনোযোগ করার’ বা পরস্পরের প্রতি বিবেচনা দেখানোর অর্থ হচ্ছে “অন্যদের প্রয়োজনকে উপলব্ধি করা, তাদের সম্বন্ধে চিন্তা করা।” আমরা যদি কিংডম হলে আমাদের কথাবার্তাকে ছোট্ট সম্ভাষণ জানানোর অথবা কেবল সাধারণ বিষয় আলোচনা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখি, তাহলে আমরা কি অন্যদের প্রয়োজনের প্রতি ভালোভাবে বিবেচনা দেখাচ্ছি? আসলে তা দেখাচ্ছি না। অবশ্য, আমরা ‘আপন আপন কার্য্য করিবার’ জন্য এবং ‘অনধিকারচর্চ্চাকারি’ না হওয়ার জন্য সতর্ক থাকতে চাইব। (১ থিষল. ৪:১১; ১ তীম. ৫:১৩) তা সত্ত্বেও, আমরা যদি আমাদের ভাই-বোনদের উৎসাহিত করতে চাই, তাহলে আমাদের সত্যিই তাদেরকে—তাদের জীবনের পরিস্থিতি, তাদের গুণাবলি, তাদের আধ্যাত্মিকতা, তাদের সামর্থ্য এবং তাদের দুর্বলতা—জানতে হবে। তাদের এইরকম মনে করতে হবে যে, আমরা তাদের বন্ধু এবং আমরা তাদের ভালোবাসি। এর জন্য আমাদের তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে, শুধুমাত্র তারা যখন সমস্যার মুখোমুখি ও নিরুৎসাহিত হয় এমন সময়েই নয়, বরং অন্যান্য সময়েও।—রোমীয় ১২:১৩.
৬. কী একজন প্রাচীনকে তার যত্নাধীনে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি ‘মনোযোগ করিতে’ বা বিবেচনা দেখাতে সাহায্য করবে?
৬ মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে ইচ্ছাপূর্বক ও উৎসুকভাবে ‘ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন করিবার’ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। (১ পিতর ৫:১-৩) তারা যদি তাদের যত্নাধীনে থাকা মেষদের সম্বন্ধে সত্যিই না জানে, তাহলে তারা কীভাবে তাদের পালকীয় কাজ কার্যকরীভাবে সম্পন্ন করতে পারবে? (পড়ুন, হিতোপদেশ ২৭:২৩.) সহবিশ্বাসীরা যদি প্রাচীনদের কাছে সহজে যেতে পারে এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটানো উপভোগ করতে পারে, তাহলে মেষেরা সম্ভবত তাদের প্রয়োজনের সময়ে প্রাচীনদের কাছ থেকে আরও বেশি সহযোগিতা চাইবে। ভাই এবং বোনেরা তাদের সত্যিকারের অনুভূতি ও চিন্তার বিষয়গুলো আরও বেশি প্রকাশ করবে আর এভাবে প্রাচীনদেরকে তাদের যত্নাধীন ব্যক্তিদের প্রতি ‘মনোযোগ করিতে’ বা বিবেচনা দেখাতে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য জোগাতে সমর্থ করবে।
৭. বিষণ্ণ ব্যক্তিদের বলা ‘অসংলগ্ন বাক্যকে’ আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?
৭ থিষলনীকীর মণ্ডলীর উদ্দেশে লেখার সময় পৌল বলেছিলেন: “দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর।” (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:১৪.) ‘ক্ষীণসাহসদিগেরা [‘বিষণ্ণরা,’ NW]’ এবং নিরুৎসাহিত ব্যক্তিরা হচ্ছে এক অর্থে দুর্বল। হিতোপদেশ ২৪:১০ পদ বলে: “সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত।” অত্যন্ত অবসন্ন বা নিরুৎসাহিত একজন ব্যক্তির “বাক্য” হয়তো “অসংলগ্ন” হয়ে পড়তে পারে। (ইয়োব ৬:২, ৩) এইরকম ব্যক্তিদের প্রতি ‘মনোযোগ করিবার’ বা বিবেচনা দেখানোর সময় আমাদের মনে রাখতে হবে যে, তারা যা বলছে, সেটা তাদের আসল ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ নয়। এই বিষয়টা রেশেল ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পেরেছেন, যার মা অনেক বিষণ্ণতায় ভুগেছিলেন। রেশেল বলেন: “অনেক সময় মা খুব খারাপ কথা বলেছেন। তখন বেশিরভাগ সময়ই আমি মনে করার চেষ্টা করেছি, মা আসলে কেমন ব্যক্তি—প্রেমময়, সদয় ও উদার। আমি শিখতে পেরেছি, বিষণ্ণ লোকেরা এমন অনেক কিছু বলে থাকে, যেগুলো তারা কোনো কিছু চিন্তা না করেই বলে। সেটার প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে একজন ব্যক্তি সবচেয়ে খারাপ যে-বিষয়টা করতে পারেন, তা হল তাদের সঙ্গে খারাপভাবে কথা বলা অথবা আচরণ করা।” হিতোপদেশ ১৯:১১ পদ বলে: “মানুষের বুদ্ধি তাহাকে ক্রোধে ধীর করে, আর দোষ ছাড়িয়া দেওয়া তাহার শোভা।”
৮. বিশেষভাবে কাদের প্রতি আমাদের প্রেম “স্থির” করতে হবে এবং কেন?
৮ আমরা সেই ব্যক্তির প্রতি কীভাবে ‘মনোযোগ করিতে’ বা বিবেচনা দেখাতে পারি, যিনি এখনও অতীতের কোনো ভুলের জন্য লজ্জা ও হতাশা বোধ করার কারণে মনমরা হয়ে থাকেন, এমনকী যদিও তিনি বিষয়গুলো সংশোধন করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন? করিন্থের একজন অনুতপ্ত অন্যায়কারীর বিষয়ে পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা বরং তাহাকে ক্ষমা করিলে ও সান্ত্বনা করিলে ভাল হয়, পাছে অতিরিক্ত মনোদুঃখে তাদৃশ ব্যক্তি কবলিত হয়। এ কারণ বিনতি করি, তোমরা তাহার প্রতি প্রেম স্থির কর।” (২ করি. ২:৭, ৮) একটা অভিধান অনুসারে, “স্থির” হিসেবে অনুবাদিত শব্দটির অর্থ হল “আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া, প্রমাণ করা, আইনগতভাবে বাধ্য করা।” আমরা এমনি এমনি ধরে নিতে পারি না যে, সেই ব্যক্তি তার জন্য আমাদের প্রেম ও চিন্তা সম্বন্ধে বুঝে নেবেন। তাকে আমাদের মনোভাব ও আচরণের মধ্যে সেটার প্রকাশ দেখতে হবে।
‘প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলুন’
৯. ‘প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করা’ বলতে কী বোঝায়?
৯ “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি,” পৌল লিখেছিলেন। আমাদের সহবিশ্বাসীদেরকে অনুপ্রাণিত করতে হবে, যেন তারা প্রেম প্রকাশ করে ও সৎক্রিয়ায় রত হয়। কোনো আগুন যখন নিভে যেতে থাকে, তখন আমাদের হয়তো কয়লা নেড়ে দিতে ও এতে বাতাস দিতে হয়। একইভাবে, আমরা আমাদের ভাই-বোনদেরকে ঈশ্বর ও প্রতিবেশীদের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য প্রেমের সঙ্গে উদ্দীপিত করতে পারি। অন্যদেরকে সৎক্রিয়া করার জন্য উদ্দীপিত করতে উপযুক্ত প্রশংসা করা আবশ্যক।
১০, ১১. (ক) আমাদের মধ্যে কাদের প্রশংসা প্রয়োজন? (খ) ‘কোন অপরাধে ধরা পড়ে’ এমন একজন ব্যক্তিকে প্রশংসা কীভাবে সাহায্য করতে পারে, তা ব্যাখ্যা করুন।
১০ আমরা নিরুৎসাহিত হই বা না হই, আমাদের সকলের প্রশংসা প্রয়োজন। “আমার বাবা কখনোই বলেননি যে, আমি ভালো কিছু করেছি,” একজন প্রাচীন লিখেছিলেন। “তাই আমি আত্মসম্মানের অভাব নিয়েই বড়ো হয়েছি। . . . যদিও আমার বয়স এখন ৫০ বছর, কিন্তু এখনও আমার বন্ধুরা যখন আমাকে আশ্বস্ত করে যে, একজন প্রাচীন হিসেবে আমি ভালোভাবে কাজ করছি, তখন আমি সেটা উপলব্ধি করি। . . . অন্যদের উৎসাহিত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পেরেছি আর তাই আমি তা করার জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা করে থাকি।” প্রশংসা সকলকে উদ্দীপিত করতে পারে আর এর মধ্যে রয়েছে অগ্রগামীরা, বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং নিরুৎসাহিত ব্যক্তিরা।—রোমীয় ১২:১০.
১১ ‘কোন অপরাধে ধরা পড়ে, সেই প্রকার ব্যক্তিকে সুস্থ করিবার’ সময় “আত্মিক” বা আধ্যাত্মিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা যখন প্রেমময় পরামর্শ দেন ও উপযুক্ত প্রশংসা করেন, তখন তা সেই অন্যায়কারীকে সৎক্রিয়ার পথে ফিরে আসতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। (গালা. ৬:১) মিরিয়াম নামে একজন বোনের ক্ষেত্রে এটা সত্য হয়েছিল। তিনি লেখেন: “আমার জীবনে আমি প্রচণ্ড কষ্টের এক সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম, যখন আমার কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু সত্য ছেড়ে চলে গিয়েছিল আর একই সময়ে আমার বাবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। আমি অনেক হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমার হতাশা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমি জগতের এক ছেলেবন্ধুর সঙ্গে ডেটিং করতে শুরু করি।” এর ফলে সেই বোন নিজেকে যিহোবার ভালোবাসা লাভের অযোগ্য বলে মনে করেছিলেন এবং সত্য পরিত্যাগ করার চিন্তা করেছিলেন। একজন প্রাচীন যখন তাকে তার অতীতের বিশ্বস্ত সেবার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, তখন সেটা তার আবেগকে নাড়া দিয়েছিল। তিনি প্রাচীনদের সুযোগ দিয়েছিলেন, যেন তারা তাকে যিহোবার প্রেম সম্বন্ধে আশ্বস্ত করতে পারে। এর ফলে, তার প্রেম পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল। তিনি সেই অবিশ্বাসীর সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ করেছিলেন এবং যিহোবাকে সেবা করা চালিয়ে গিয়েছিলেন।
১২. অন্যদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তাদেরকে লজ্জা দেওয়া, তাদের সমালোচনা করা অথবা তাদেরকে অপরাধবোধ করানো সম্বন্ধে কী বলা যায়?
১২ অন্যদের সঙ্গে অযৌক্তিক তুলনা করে একজন ব্যক্তিকে লজ্জা দেওয়া, কঠোর নিয়ম বানিয়ে তাকে সমালোচনা করা অথবা আরও বেশি না করতে পারার কারণে তাকে অপরাধবোধ করানো হয়তো তাকে হঠাৎ করে অনেক সক্রিয় হতে অনুপ্রাণিত করতে পারে, তবে এর ফলাফল হবে ক্ষণস্থায়ী। অন্যদিকে, একজন সহবিশ্বাসীকে প্রশংসা করার এবং ঈশ্বরের প্রতি তার প্রেমকে জাগিয়ে তোলার এক স্থায়ী ও ইতিবাচক প্রভাব থাকতে পারে।—পড়ুন, ফিলিপীয় ২:১-৪.
‘পরস্পরকে উৎসাহ দিন’
১৩. অন্যদের উৎসাহিত করার সঙ্গে কী জড়িত? (শিরোনামের পাশে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১৩ আমরা ‘সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছি, ততই যেন অধিক পরস্পরকে উৎসাহ দিতে তৎপর’ হই। অন্যদের উৎসাহ দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত হল, তাদেরকে ঈশ্বরের সেবায় এগিয়ে চলার জন্য অনুপ্রাণিত করা। ঠিক যেমন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে উদ্দীপিত করাকে প্রায় নিভে যাচ্ছে এমন আগুনকে উসকে দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, তেমনই অন্যদের উৎসাহিত করাকে সেই আগুন জ্বালিয়ে রাখার অথবা সেটার মাত্রা বাড়ানোর জন্য জ্বালানি সরবরাহ করার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। অন্যদের উৎসাহিত করার সঙ্গে অবসন্ন ব্যক্তিদের শক্তিশালী করা ও তাদের সান্ত্বনা দেওয়া জড়িত। আমাদের যখন এইরকম একজন ব্যক্তিকে উৎসাহিত করার সুযোগ দেওয়া হয়, তখন আমাদের আন্তরিকতা ও কোমলতার সঙ্গে কথা বলতে হবে। (হিতো. ১২:১৮) এ ছাড়া, আমরা যেন “শ্রবণে সত্বর” এবং “কথনে ধীর” হই। (যাকোব ১:১৯) আমরা যদি সহানুভূতির সঙ্গে তাদের কথা শুনি, তাহলে আমরা হয়তো সেই পরিস্থিতি শনাক্ত করতে পারব, যা একজন সহখ্রিস্টানকে নিরুৎসাহিত করেছে এবং তাকে এমন কিছু বলতে পারব, যা তাকে সেই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।
১৪. একজন নিরুৎসাহিত ভাইকে কীভাবে সাহায্য করা হয়েছিল?
১৪ কয়েক বছর ধরে নিষ্ক্রিয় ছিলেন এমন একজন ভাইকে, একজন সমবেদনাময় প্রাচীন কীভাবে সাহায্য করতে সমর্থ হয়েছিলেন, তা বিবেচনা করুন। প্রাচীন যখন সেই ভাইয়ের কথা শুনেছিলেন, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, যিহোবার জন্য তখনও সেই ভাইয়ের গভীর ভালোবাসা রয়েছে। তিনি অধ্যবসায়ের সঙ্গে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার প্রতিটা সংখ্যা অধ্যয়ন করতেন এবং নিয়মিতভাবে সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা করতেন। কিন্তু, মণ্ডলীর কোনো কোনো ব্যক্তির আচরণ তাকে হতাশ ও কিছুটা তিক্তবিরক্ত করেছিল। সেই প্রাচীন দ্রুত মতামত দেওয়ার পরিবর্তে বরং সমবেদনার সঙ্গে তার কথা শুনেছিলেন এবং সেই ভাই ও তার পরিবারের জন্য প্রেমময় চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন। ধীরে ধীরে, সেই ভাই বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি অতীতের খারাপ অভিজ্ঞতাগুলোকে সেই ঈশ্বরের প্রতি তার সেবাকে বাধা দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছিলেন, যাঁকে তিনি ভালোবাসেন। প্রাচীন সেই ভাইকে তার সঙ্গে প্রচার কাজে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। প্রাচীনের সাহায্যে, সেই ভাই আবার পরিচর্যা করতে শুরু করেছিলেন এবং অবশেষে আবারও একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করার যোগ্য হয়ে উঠেছিলেন।
১৫. অবসন্ন ব্যক্তিদের উৎসাহিত করার বিষয়ে যিহোবার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৫ আমরা যে-সাহায্যের প্রস্তাব দিই, একজন নিরুৎসাহিত ব্যক্তির হয়তো সেটা সঙ্গেসঙ্গে ভালো না-ও লাগতে পারে অথবা তিনি সেটার প্রতি দ্রুত সাড়া না-ও দিতে পারেন। আমাদের হয়তো তাকে ক্রমাগত সমর্থন করতে হবে। পৌল বলেছিলেন: “দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর” বা করে চলো, “সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হও।” (১ থিষল. ৫:১৪) দুর্বল ব্যক্তিদের সম্বন্ধে দ্রুত হাল ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে, আসুন আমরা তাদের “সাহায্য” এবং সমর্থন করে চলি। অতীতে, যিহোবা তাঁর সেই দাসদের সঙ্গে ধৈর্যপূর্বক আচরণ করেছিলেন, যারা কখনো কখনো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর এলিয়ের প্রতি অনেক কৃপা দেখিয়েছিলেন, তার অনুভূতি বিবেচনা করেছিলেন। যিহোবা সেই ভাববাদীকে তার সেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় জুগিয়েছিলেন। (১ রাজা. ১৯:১-১৮) দায়ূদ যেহেতু আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়েছিলেন, তাই যিহোবা সদয়ভাবে তাকে ক্ষমা করেছিলেন। (গীত. ৫১:৭, ১৭) এ ছাড়া, ঈশ্বর ৭৩ গীতের লেখককেও সাহায্য করেছিলেন, যিনি তাঁর সেবা করা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিলেন। (গীত. ৭৩:১৩, ১৬, ১৭) যিহোবা বিশেষভাবে সেই সময়ে আমাদের প্রতি কৃপা দেখান ও সদয় হন, যখন আমরা অবসন্ন ও নিরুৎসাহিত থাকি। (যাত্রা. ৩৪:৬) “প্রতি প্রভাতে” তাঁর “নূতন নূতন” করুণা দেখা যায় এবং সেগুলো ‘শেষ হয় না।’ (বিলাপ ৩:২২, ২৩) যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করি এবং বিষণ্ণ ব্যক্তিদের প্রতি কোমলভাবে আচরণ করি।
জীবনের পথে থাকার জন্য পরস্পরকে উৎসাহিত করুন
১৬, ১৭. এই বিধিব্যবস্থার শেষ যতই এগিয়ে আসছে, ততই আমাদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে এবং কেন?
১৬ যে-৩৩,০০০ বন্দি জ্যাক্সেনহোজেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প ছেড়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে হাজার হাজার ব্যক্তি মারা গিয়েছিল। কিন্তু, সেই ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়া ২৩০ জন যিহোবার সাক্ষির মধ্যে সকলেই সেই কঠিন পরীক্ষার মধ্যেও বেঁচে ছিল। পরস্পরের কাছ থেকে তারা যে-উৎসাহ ও সমর্থন পেয়েছিল, তা এক মৃত্যুযাত্রাকে তাদের জন্য পরিত্রাণের এক যাত্রায় পরিণত করায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল।
১৭ বর্তমানে, আমরা ‘জীবনে যাইবার পথে’ রয়েছি। (মথি ৭:১৪) খুব শীঘ্র যিহোবার সমস্ত উপাসক ঐক্যবদ্ধভাবে ধার্মিক নতুন জগতে প্রবেশ করবে। (২ পিতর ৩:১৩) আসুন আমরা সেই পথে পরস্পরকে সাহায্য করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, যে-পথ অনন্তজীবনের দিকে নিয়ে যায়।
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
অন্যদের সঙ্গে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নিন
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে উদ্দীপিত করুন
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
গঠনমূলক মেলামেশা উপভোগ করুন
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
উৎসাহের প্রয়োজন রয়েছে এমন একজন ব্যক্তির কথা ধৈর্যপূর্বক শুনুন (১৪, ১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)