যিহোবার অনুস্মারকগুলো নির্ভরযোগ্য
যিহোবার অনুস্মারকগুলো নির্ভরযোগ্য
“সদাপ্রভুর সাক্ষ্য বিশ্বসনীয়, অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক।” —গীত. ১৯:৭.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
যিহোবা শাস্ত্রে কোন ধরনের অনুস্মারক জোগান?
বর্তমানে, যিহোবার অনুস্মারকগুলো কীভাবে খ্রিস্টানদের সাহায্য করতে পারে?
যিহোবার অনুস্মারকগুলোর ওপর নির্ভর করার কোন কোন কারণ আমাদের রয়েছে?
১. ঈশ্বরের লোকেরা নিয়মিতভাবে কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে থাকে এবং সেগুলো পুনরালোচনা করার মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকার লাভ করি?
পরবর্তী কোনো প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আপনি কি কখনো এইরকম চিন্তা করেছেন যে, ‘এই একই বিষয়বস্তু কি আমরা আগেও বিবেচনা করিনি?’ আপনি যদি কিছু সময় ধরে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করে থাকেন, তাহলে আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন যে, কিছু বিষয়বস্তু নিয়ে বার বার আলোচনা করা হয়। ঈশ্বরের রাজ্য, মুক্তির মূল্য, শিষ্য তৈরির কাজ এবং প্রেম ও বিশ্বাসের মতো গুণাবলি নিয়ে অধ্যয়ন করা আমাদের আধ্যাত্মিক খাদ্যের এক নিয়মিত অংশ। এই বিষয়গুলো পুনরালোচনা করার মাধ্যমে আমরা বিশ্বাসে সমৃদ্ধ থাকতে এবং ‘বাক্যের কার্য্যকারী হইতে, আপনাদিগকে ভুলাইয়া শ্রোতামাত্র না হইতে’ সাহায্য লাভ করি।—যাকোব ১:২২.
২. (ক) ঈশ্বরের অনুস্মারক প্রায়ই কোন বিষয়গুলোকে নির্দেশ করে? (খ) ঈশ্বরের অনুস্মারক কীভাবে মানুষের অনুস্মারক থেকে আলাদা?
২ যে-ইব্রীয় বিশেষ্যপদকে “সাক্ষ্যকলাপ” বা অনুস্মারক হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা প্রায়ই সেইসমস্ত আইন, আজ্ঞা এবং বিধিকে নির্দেশ করে, যেগুলো যিহোবা তাঁর লোকেদের প্রদান করেন। যেখানে মানব নিয়মনীতিকে প্রায়ই সংশোধন এবং পুনর্বর্ধিত করতে হয়, সেখানে যিহোবার আইন এবং বিধি সবসময়ই বিশ্বসনীয় বা নির্ভরযোগ্য। যদিও সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু নির্দিষ্ট একটা সময়ের বা পরিস্থিতির জন্য দেওয়া হয়েছে কিন্তু সেগুলো কখনোই ত্রুটিযুক্ত অথবা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে না। গীতরচক বলেছিলেন: “তোমার সাক্ষ্যকলাপ” বা অনুস্মারক “অনন্তকাল ধর্ম্মময়।”—গীত. ১১৯:১৪৪.
৩, ৪. (ক) যিহোবার অনুস্মারকগুলোর অন্তর্ভুক্ত কী হতে পারে? (খ) ইস্রায়েলীয়রা যদি সেগুলোতে মনোযোগ দিত, তাহলে তারা কীভাবে উপকার লাভ করতে পারত?
৩ আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন যে, যিহোবার অনুস্মারকের মধ্যে মাঝে মাঝে সতর্কবার্তাও রয়েছে। ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরের ভাববাদীদের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সতর্কবার্তা লাভ করত। উদাহরণ স্বরূপ, ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার কিছু সময় আগে, মোশি তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান, পাছে তোমাদের হৃদয় ভ্রান্ত হয়, এবং তোমরা পথ ছাড়িয়া অন্য দেবগণের সেবা কর ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত কর; করিলে তোমাদের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে।” (দ্বিতীয়. ১১:১৬, ১৭) বাইবেল প্রকাশ করে যে, ঈশ্বর তাঁর লোকেদের অসংখ্য উপকারজনক অনুস্মারক প্রদান করেছিলেন।
৪ অন্যান্য অনেক সময়ে, যিহোবা ইস্রায়েলীয়দেরকে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেন তারা তাঁকে ভয় করে, তাঁর কথা শোনে এবং তাঁর নামকে পবিত্রীকৃত করে। (দ্বিতীয়. ৪:২৯-৩১; ৫:২৮, ২৯) তারা যদি এই অনুস্মারকগুলোর প্রতি মনোযোগ দিত, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তারা অনেক আশীর্বাদ লাভ করত।—লেবীয়. ২৬:৩-৬; দ্বিতীয়. ২৮:১-৪.
ঈশ্বরের অনুস্মারকগুলোর প্রতি ইস্রায়েল যেভাবে সাড়া দিয়েছিল
৫. যিহোবা কেন রাজা হিষ্কিয়ের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন?
৫ ইস্রায়েলের কঠিন সময়ে, ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, যখন অশূরীয় রাজা সন্হেরীব যিহূদা আক্রমণ করেন এবং রাজা হিষ্কিয়কে পরাজিত করার হুমকি দেন, তখন যিহোবা একজন স্বর্গদূত প্রেরণ করার মাধ্যমে বিষয়টাতে হস্তক্ষেপ করেন। মাত্র এক রাতের মধ্যেই ঈশ্বরের দূত অশূরীয় সেনাবাহিনীর “সমস্ত বলবান বীরকে” ধ্বংস করে দিয়েছিল, যাতে সন্হেরীব অপমানিত হয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হন। (২ বংশা. ৩২:২১; ২ রাজা. ১৯:৩৫) ঈশ্বর কেন রাজা হিষ্কিয়ের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন? কারণ ‘তিনি [হিষ্কিয়] সদাপ্রভুতে আসক্ত ছিলেন। তাঁহার পশ্চাদ্গমন হইতে ফিরিলেন না, বরং সদাপ্রভুর সমস্ত আজ্ঞা পালন করিতেন।’—২ রাজা. ১৮:১, ৫, ৬.
৬. রাজা যোশিয় কীভাবে যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন?
৬ যিহোবার আদেশের বাধ্য হয়েছিলেন এমন আরও একজনের উদাহরণ হল রাজা যোশিয়। মাত্র আট বছর বয়সেই তিনি “সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাহা ন্যায্য, . . . তাহাই করিতেন, . . . তাহার দক্ষিণে কি বামে ফিরিতেন না।” (২ বংশা. ৩৪:১, ২) যোশিয় দেশ থেকে প্রতিমা দূর করার এবং সত্য উপাসনা পুনর্স্থাপন করার মাধ্যমে যিহোবার প্রতি তাঁর নির্ভরতা প্রদর্শন করেছিলেন। তা করার মাধ্যমে যোশিয় কেবল নিজের জন্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে পুরো জাতির জন্য আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিলেন।—পড়ুন, ২ বংশাবলি ৩৪:৩১-৩৩.
৭. ইস্রায়েল যখন যিহোবার অনুস্মারকগুলোকে অবহেলা করেছিল, তখন ফল কী হয়েছিল?
৭ কিন্তু, দুঃখের বিষয় হল, ঈশ্বরের লোকেরা সবসময় যিহোবার অনুস্মারকের ওপর তাদের পূর্ণ নির্ভরতা দেখায়নি। শত শত বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা একবার বাধ্যতা দেখিয়েছিল আবার অন্য সময় অবাধ্য হয়েছিল। তাদের বিশ্বাস যখন দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তখন তারা প্রায়ই, প্রেরিত পৌলের কথা অনুযায়ী, ‘যে সে শিক্ষাবায়ুতে ইতস্ততঃ পরিচালিত হইয়াছিল।’ (ইফি. ৪:১৩, ১৪) আর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, তারা যখন ঈশ্বরের অনুস্মারকের ওপর তাদের পূর্ণ নির্ভরতা দেখায়নি, তখন তারা তিক্ত ফল লাভ করেছিল।—লেবীয়. ২৬:২৩-২৫; যির. ৫:২৩-২৫.
৮. ইস্রায়েলের উদাহরণ থেকে আমরা কীভাবে শিক্ষা লাভ করতে পারি?
৮ ইস্রায়েলের উদাহরণ থেকে আমরা কীভাবে উপকার লাভ করতে পারি? তাদের মতো ঈশ্বরের আধুনিক দিনের দাসেরাও পরামর্শ এবং শাসন লাভ করে থাকে। (২ পিতর ১:১২) প্রতি বার আমরা যখন ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য পাঠ করি, তখন সেটি আমাদের জন্য এক অনুস্মারক হিসেবে কাজ করতে পারে। নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে আমরা যিহোবার নির্দেশনার প্রতি বাধ্য হওয়া বেছে নিতে পারি অথবা আমাদের দৃষ্টিতে যেটাকে সঠিক বলে মনে হয়, সেটা করতে পারি। (হিতো. ১৪:১২) কেন আমরা যিহোবার অনুস্মারকের ওপর নির্ভর করতে পারি, সেটার কিছু কারণ এবং সেগুলোতে মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে কীভাবে আমরা উপকার লাভ করতে পারি, আসুন আমরা তা বিবেচনা করি।
ঈশ্বরের বশীভূত হোন এবং জীবন লাভ করুন
৯. ইস্রায়েলীয়রা যখন প্রান্তরে ছিল, তখন কীভাবে যিহোবা তাদেরকে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদেরকে সমর্থন করছেন?
৯ ইস্রায়েল যখন যাত্রা শুরু করেছিল, যা এক ‘ভয়ঙ্কর প্রান্তরে’ ৪০ বছরের সুদীর্ঘ যাত্রায় পরিণত হয়েছিল, তখন যিহোবা কীভাবে তাদের পরিচালনা দেবেন, সুরক্ষা করবেন এবং যত্ন নেবেন, সেই বিষয়ে তাদেরকে আগে থেকেই বিস্তারিত বিষয় জানাননি। তবে, তিনি বার বার দেখিয়েছিলেন যে, তারা তাঁর ও তাঁর নির্দেশনাগুলোর ওপর নির্ভর করতে পারে। দিনের বেলায় একটা মেঘস্তম্ভ এবং রাতের বেলায় একটা অগ্নিস্তম্ভ ব্যবহার করে, যিহোবা ইস্রায়েলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদেরকে জনশূন্য এলাকার মধ্যে দিয়ে পরিচালনা দেওয়ার সময় সমর্থন করছেন। (দ্বিতীয়. ১:১৯; যাত্রা. ৪০:৩৬-৩৮) এ ছাড়া, তিনি তাদের মৌলিক চাহিদাগুলোও পূরণ করেছিলেন। “তাহাদের বস্ত্র জীর্ণ হইল না, ও তাহাদের পা ফুলিল না।” সত্যি বলতে কী, “তাহাদের অভাব হইল না।”—নহি. ৯:১৯-২১.
১০. বর্তমানে, কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের পরিচালনা দিচ্ছেন?
১০ বর্তমানে, ঈশ্বরের দাসেরা ধার্মিক নতুন জগতের একেবারে দোরগোড়ায় রয়েছে। আসন্ন “মহাক্লেশ” থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের যা প্রয়োজন, তা জোগানোর ব্যাপারে আমরা কি যিহোবার ওপর নির্ভর করি? (মথি ২৪:২১, ২২; গীত. ১১৯:৪০, ৪১) এটা ঠিক যে, নতুন জগতে যাওয়ার জন্য যিহোবা আমাদেরকে কোনো মেঘস্তম্ভ বা অগ্নিস্তম্ভ জোগাননি। কিন্তু, সতর্ক থাকার ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করার জন্য তিনি তাঁর সংগঠনকে ব্যবহার করছেন। উদাহরণ স্বরূপ, ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন, পারিবারিক উপাসনা সন্ধ্যা ও সেইসঙ্গে নিয়মিতভাবে সভায় উপস্থিত হওয়ার এবং পরিচর্যায় যাওয়ার মাধ্যমে আমাদের আধ্যাত্মিকতা গড়ে তোলার ওপর ক্রমাগত জোর দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করার জন্য আমরা কি রদবদল করেছি? তা করা আমাদের এমন বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, যার ফলে আমরা নতুন জগতে বেঁচে থাকতে পারব।
১১. কোন কোন উপায়ে ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁর যত্ন প্রকাশ করেন?
১১ আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সজাগ থাকতে সাহায্য করা ছাড়াও, আমরা যে-নির্দেশনাগুলো লাভ করেছি, সেগুলো আমাদের রোজকার জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। এই নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, বস্তুগত বিষয়গুলোর প্রতি এক ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা এবং উদ্বিগ্নতা কমানোর জন্য চোখকে সরল রাখা। এ ছাড়া, আমরা আমাদের পোশাক-আশাক এবং সাজগোজের, গঠনমূলক আমোদপ্রমোদ বাছাই করার ও সেইসঙ্গে কতখানি শিক্ষা গ্রহণ করা উপযুক্ত, তা নির্ধারণ করার বিষয়ে যে-নির্দেশনাগুলো পাই, সেগুলো থেকে উপকার লাভ করেছি। আর আমরা আমাদের বাড়িঘর, মোটরগাড়ি, কিংডম হল এবং সম্ভাব্য জরুরি মুহূর্তের জন্য প্রস্তুতির ব্যাপারে যে-নিরাপত্তামূলক অনুস্মারকগুলো লাভ করেছি, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। এই ধরনের পরামর্শ দেখায় যে, ঈশ্বর আমাদের মঙ্গলের জন্য চিন্তা করেন।
অনুস্মারকগুলো প্রাথমিক খ্রিস্টানদের বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছিল
১২. (ক) একটা বিষয় কী, যে-সম্বন্ধে যিশু বার বার তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন? (খ) নম্রতার কোন কাজ পিতরের ওপর এক স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল এবং এই কাজ দ্বারা আমাদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত?
১২ প্রথম শতাব্দীতে, ঈশ্বরের লোকেরা নিয়মিতভাবে অনুস্মারক লাভ করত। যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে বার বার নম্রতা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বলেছিলেন। কিন্তু, নম্র হওয়ার অর্থ কী, তা কেবল তাঁর শিষ্যদের বলার চেয়ে তিনি আরও বেশি কিছু করেছিলেন—তিনি তাদেরকে তা করে দেখিয়েছিলেন। একজন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে তাঁর শেষ দিনে, যিশু তাঁর প্রেরিতদেরকে নিস্তারপর্বের জন্য একত্রিত করেছিলেন। তাঁর প্রেরিতরা খাওয়ার সময় যিশু ভোজ থেকে উঠে তাদের পা ধুইয়ে দেন—এমন একটা কাজ, যা সাধারণত একজন দাস করে থাকেন। (যোহন ১৩:১-১৭) এই নম্র কাজ তাদের ওপর এক স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। প্রায় ৩০ বছর পর, প্রেরিত পিতর, যিনি সেই ভোজে উপস্থিত ছিলেন, তিনি সহবিশ্বাসীদেরকে নম্রতা সম্বন্ধে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ পিতর ৫:৫) যিশুর উদাহরণ যেন আমাদের সকলকে পরস্পরের সঙ্গে আমাদের আচরণের সময় নম্র হতে পরিচালিত করে।—ফিলি. ২:৫-৮.
১৩. যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে কোন অপরিহার্য গুণ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন?
১৩ দৃঢ় বিশ্বাস রাখার প্রয়োজনীয়তাও ছিল আরেকটা বিষয়, যে-সম্বন্ধে যিশু প্রায়ই তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। একজন ভূতগ্রস্ত বালকের মধ্যে থেকে মন্দ আত্মা বের করতে ব্যর্থ হওয়ার পর, শিষ্যরা যিশুকে জিজ্ঞেস করেছিল: “কি জন্য আমরা উহা ছাড়াইতে পারিলাম না?” যিশু উত্তর দিয়েছিলেন: “তোমাদের বিশ্বাস অল্প বলিয়া; কেননা আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যদি তোমাদের একটী সরিষা-দানার ন্যায় বিশ্বাস থাকে . . . তোমাদের অসাধ্য কিছুই থাকিবে না।” (মথি ১৭:১৪-২১) পরিচর্যার সময়কালে যিশু তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, বিশ্বাস হল এক অপরিহার্য গুণ। (পড়ুন, মথি ২১:১৮-২২.) সম্মেলন এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে জোগানো গঠনমূলক নির্দেশনার মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার যে-সুযোগগুলো আমরা পাই, আমরা কী সেগুলোর সদ্ব্যবহার করি? এগুলো কেবল আনন্দিত সমাবেশের চেয়ে আরও বেশি কিছু; এগুলো হল যিহোবার প্রতি আমাদের নির্ভরতা প্রকাশ করার সময়।
১৪. কেন বর্তমানে খ্রিস্টতুল্য প্রেম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ?
১৪ খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ আমাদের জন্য পরস্পরের প্রতি প্রেম দেখানোর বিষয়ে অনেক অনুস্মারক রয়েছে। যিশু বলেছিলেন যে, দ্বিতীয় মহৎ আজ্ঞা হল, “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৯) একইভাবে, যিশুর সৎভাই যাকোব প্রেমকে “রাজকীয় ব্যবস্থা” হিসেবে অভিহিত করেছেন। (যাকোব ২:৮) প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “প্রিয়তমেরা, আমি তোমাদিগকে নূতন আজ্ঞা লিখিতেছি না; বরং এমন এক পুরাতন আজ্ঞা লিখিতেছি, যাহা তোমরা আদি হইতে পাইয়াছ।” (১ যোহন ২:৭, ৮) কোন বিষয়টাকে যোহন এক “পুরাতন আজ্ঞা” বলে উল্লেখ করছিলেন? তিনি প্রেম করার আজ্ঞা সম্বন্ধে উল্লেখ করছিলেন। এটা এই অর্থে “পুরাতন” ছিল যে, যিশু কয়েক দশক আগে অর্থাৎ “আদি হইতে” এটা প্রদান করেছিলেন। কিন্তু, এটা এই অর্থে ‘নূতনও’ ছিল যে, এর জন্য আত্মত্যাগমূলক প্রেম প্রয়োজন, যা হয়তো শিষ্যদের নতুন পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজন হবে। খ্রিস্টের শিষ্য হিসেবে আমরা কি সেই সাবধানবাণীগুলো উপলব্ধি করি না, যেগুলো আমাদেরকে এই জগতের অতি সাধারণ এক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, স্বার্থপর মনোভাব গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে সাহায্য করে, যে-বৈশিষ্ট্য প্রতিবেশীদের প্রতি আমাদের প্রেমকে হ্রাস করে দিতে পারে?
১৫. পৃথিবীতে যিশুর প্রধান কাজ কী ছিল?
১৫ যিশু লোকেদের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। আমরা সেই সময় তাঁর প্রেমময় চিন্তা দেখতে পাই, যখন তিনি অসুস্থ এবং দুর্বল ব্যক্তিদের সুস্থ করেছিলেন এবং মৃতদের পুনরুত্থিত করেছিলেন। কিন্তু, লোকেদের শারীরিকভাবে সুস্থ করা যিশুর প্রধান কাজ ছিল না। তাঁর প্রচার এবং শিক্ষাদানের কাজ লোকেদের ওপর আরও স্থায়ী এক প্রভাব ফেলেছিল। কীভাবে? উদাহরণস্বরূপ, আমরা জানি যে, প্রথম শতাব্দীতে যিশু যাদের সুস্থ এবং পুনরুত্থিত করেছিলেন, তারা পরিশেষে বৃদ্ধ হয়েছে এবং মারা গিয়েছে কিন্তু অন্যদিকে যারা তাঁর প্রচারিত বার্তার প্রতি অনুকূলভাবে সাড়া দিয়েছে, তাদের অনন্তজীবন লাভ করার আশা রয়েছে।—যোহন ১১:২৫, ২৬.
১৬. বর্তমানে, রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ কতটা ব্যাপক মাত্রায় করা হচ্ছে?
১৬ প্রথম শতাব্দীতে যিশু যে-প্রচার কাজ শুরু করেছিলেন, তা বর্তমানে এমনকী আরও ব্যাপক মাত্রায় করা হচ্ছে। হ্যাঁ, যিশু তাঁর শিষ্যদের আজ্ঞা দিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর।” (মথি ২৮:১৯) তারা তা-ই করেছিল আর আমরা বলতে পারি যে, আমরাও তা-ই করছি! সত্তর লক্ষেরও বেশি সক্রিয় যিহোবার সাক্ষি দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩০-টারও বেশি জায়গায় উদ্যোগের সঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করছে এবং সাক্ষিরা নিয়মিতভাবে আরও লক্ষ লক্ষ লোককে বাইবেল অধ্যয়ন করাচ্ছে। এই প্রচার কাজ প্রমাণ দেয় যে, আমরা শেষকালে বাস করছি।
বর্তমানে যিহোবার ওপর নির্ভর করুন
১৭. পৌল এবং পিতর কোন পরামর্শ দিয়েছিল?
১৭ স্পষ্টতই, অনুস্মারকগুলো প্রাথমিক খ্রিস্টানদের বিশ্বাসে দৃঢ় থাকতে সাহায্য করেছিল। সেই উৎসাহের কথা কল্পনা করে দেখুন, যা তীমথিয় নিশ্চয়ই সেই সময় লাভ করেছিলেন, যখন প্রেরিত পৌল রোমে বন্দি থাকাকালীন তাকে এই কথাগুলো বলেছিলেন: “তুমি আমার কাছে যাহা যাহা শুনিয়াছ, সেই নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ . . . ধারণ কর।” (২ তীম. ১:১৩) ধৈর্য, ভ্রাতৃস্নেহ এবং ইন্দ্রিয়দমনের মতো গুণাবলি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার ব্যাপারে সহখ্রিস্টানদের উৎসাহিত করার পর, প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে এই সকল সর্ব্বদা স্মরণ করাইয়া দিতে প্রস্তুত থাকিব; যদিও তোমরা এ সকল জান, এবং বর্ত্তমান সত্যে সুস্থিরও আছ।”—২ পিতর ১:৫-৮, ১২.
১৮. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা অনুস্মারকগুলোকে কীভাবে দেখেছিল?
১৮ হ্যাঁ, পৌল এবং পিতর যে-চিঠিগুলো লিখেছিল, সেগুলো “পবিত্র ভাববাদিগণ কর্ত্তৃক পূর্ব্বকথিত বাক্য সকল” প্রকাশ করে। (২ পিতর ৩:২) আমাদের প্রথম শতাব্দীর ভাইয়েরা কি এই ধরনের নির্দেশনা পেয়ে অসন্তুষ্ট হয়েছিল? না, কারণ এটা ছিল ঈশ্বরের প্রেমের এক প্রকাশ, যা তাদেরকে ‘আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ ও জ্ঞানে বর্ধিষ্ণু হইতে’ সাহায্য করেছিল।—২ পিতর ৩:১৮.
১৯, ২০. কেন আমাদের যিহোবার অনুস্মারকগুলোর ওপর নির্ভর করা উচিত আর তা করা থেকে কীভাবে আমরা উপকার লাভ করতে পারি?
১৯ বর্তমানে, যিহোবার সেই অনুস্মারকগুলোর প্রতি নির্ভর করার যথেষ্ট কারণ আমাদের রয়েছে, যেগুলো তাঁর অব্যর্থ বাক্য বাইবেলে রয়েছে। (পড়ুন, যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪.) এর পাতায় পাতায় আমরা হাজার হাজার বছর ধরে অসিদ্ধ মানবজাতির সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ সম্বন্ধে দেখতে পাই। এই ঐতিহাসিক বিবরণগুলো আমাদের উপকারের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। (রোমীয় ১৫:৪; ১ করি. ১০:১১) আমরা বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা দেখতে পেয়েছি। ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে সেই অনুস্মারগুলোর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যেগুলো আগেই বলা হয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, লক্ষ লক্ষ লোক যিহোবার বিশুদ্ধ উপাসনার দিকে এসেছে, যা “শেষকালে” ঘটবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। (যিশা. ২:২, ৩) জগতের মন্দতর অবস্থাও বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা স্বরূপ ঘটছে। আর আগে বিশ্বব্যাপী যে-ব্যাপক প্রচার অভিযানের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটাও যিশুর কথাগুলোর সরাসরি পরিপূর্ণতা স্বরূপ ঘটছে।—মথি ২৪:১৪.
২০ আমাদের সৃষ্টিকর্তা এমন নথি গড়ে তুলেছেন, যেটার ওপর আমরা নির্ভর করতে পারি। আমরা কী তা থেকে উপকার লাভ করছি? তাঁর অনুস্মারকগুলোর প্রতি আমাদের বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। রোজলিন ঠিক তা-ই করেছিলেন। তিনি বলেন: “আমি যখন যিহোবার ওপর পূর্ণরূপে নির্ভর করতে শুরু করি, তখন আমি আরও স্পষ্টভাবে দেখতে আরম্ভ করি যে, তাঁর প্রেমময় হস্ত আমাকে ধরে রাখছে এবং শক্তিশালী করছে।” একইভাবে, আমরাও যেন যিহোবার অনুস্মারকগুলো রক্ষা করার মাধ্যমে উপকার লাভ করি।
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার অনুস্মারক যোশিয়কে সত্য উপাসনার পক্ষে পদক্ষেপ নিতে পরিচালিত করেছিল (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার অনুস্মারকগুলো কাজে লাগানো আমাদেরকে আমাদের কিংডম হল নিরাপদ এবং উন্মুক্ত রাখতে সাহায্য করে (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)