সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিন

বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিন

বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিন

“তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।”—হিতো. ৩:৫.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সুবুদ্ধির আত্মা ব্যবহার করার অর্থ কী?

কীভাবে আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি?

কী আমাদেরকে আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১, ২. আপনি কি সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করেন এবং আপনার গৃহীত কিছু সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন?

 সিদ্ধান্ত! প্রতিদিন আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেই সিদ্ধান্তগুলো সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন, যেগুলো আপনাকে রোজ নিতে হয়? কিছু লোক নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পছন্দ করে। তারা জোর দিয়ে বলে যে, নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল তাদের নিজেদেরই, এমনকী অন্য কেউ তাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা চিন্তা করেও তারা বিরক্ত হয়। কিন্তু, এমন ব্যক্তিরাও রয়েছে, যারা জীবনের দৈনন্দিন তালিকার বাইরে অন্যান্য সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায়। কেউ কেউ নির্দেশগ্রন্থের সহায়তা নেয় অথবা পরামর্শদাতার শরণাপন্ন হয় এবং নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় উপদেশ লাভ করতে গিয়ে হয়তো প্রচুর অর্থও ব্যয় করে।

আমাদের মধ্যে অনেকেই এর মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছি। আমরা বুঝতে পারি যে, কিছু বিষয় আমাদের আয়ত্তের বাইরে আর সেগুলোর ব্যাপারে আমরা কিছুই করতে পারি না; তবে, আমরা এও উপলব্ধি করি যে, জীবনের এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে আমরা আমাদের পছন্দ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারি। (গালা. ৬:৫) তা সত্ত্বেও, আমরা সম্ভবত এই বিষয়টা স্বীকার করব, আমরা যে-সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকি, সেগুলোর সবই যে সবসময় বিজ্ঞ এবং উপকারজনক হয় এমন নয়।

৩. সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কাছে কোন নির্দেশনাগুলো রয়েছে কিন্তু কোন সমস্যা থেকে যায়?

যিহোবার দাস হিসেবে আমরা আনন্দিত হতে পারি যে, আমাদের জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বন্ধে তিনি স্পষ্ট নির্দেশনা জুগিয়েছেন। আমরা জানি যে, আমরা যদি এই নির্দেশনাগুলো পালন করি, তাহলে আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারব, যা যিহোবাকে খুশি করবে এবং একইসঙ্গে আমাদের জন্যও উপকার নিয়ে আসবে। তবে, আমরা হয়তো এমন বিষয় এবং পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, যেগুলো সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্যে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা নেই। তাহলে, সেই সময়ে আমাদের কী করা উচিত, তা আমরা কীভাবে নির্ধারণ করব? উদাহরণ স্বরূপ, আমরা জানি যে, আমাদের চুরি করা উচিত নয়। (ইফি. ৪:২৮) কিন্তু, ঠিক কোন বিষয়টা নির্ধারণ করে যে, এটা চুরি? এটা কি চুরি করা জিনিসের মূল্য, চুরি করার পিছনে যে-উদ্দেশ্য রয়েছে, সেটা অথবা অন্য কিছু দ্বারা নির্ধারিত হয়? কারো কারো কাছে অস্পষ্ট বলে মনে হয় এমন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমরা কী করব, সেটা আমরা কীভাবে নির্ধারণ করি? আমাদেরকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য কী রয়েছে?

সুবুদ্ধির আত্মা

৪. আমরা যখন কোনো সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছি, তখন আমরা হয়তো কোন উপদেশ লাভ করেছি?

আমরা যখন বলি যে, আমরা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি, তখন একজন সহখ্রিস্টান হয়তো আমাদেরকে পরামর্শ দেন, যেন আমরা সুবুদ্ধির আত্মা কাজে লাগিয়ে তা নিই। অবশ্যই, এটা এক উত্তম উপদেশ। বাইবেল আমাদেরকে হঠকারিতা বা তাড়াহুড়ো করে কাজ করার বিরুদ্ধে এই সাবধানবাণী প্রদান করে: “যে কেহ হঠকারী, তাহার কেবল অভাব ঘটে।” (হিতো. ২১:৫) কিন্তু, সুবুদ্ধির আত্মা কাজে লাগানোর অর্থ কী? এর অর্থ কি কেবল এই যে, আমাদের সময় নিয়ে, ভালোভাবে চিন্তা করে, যুক্তিবাদী হয়ে এবং উত্তম বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত? উত্তম সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য যদিও এই বিষয়গুলো উপকারজনক কিন্তু এক সুবোধ বা সুবুদ্ধির আত্মা কাজে লাগানোর সঙ্গে আরও বেশি কিছু জড়িত।—রোমীয় ১২:৩; ১ পিতর ৪:৭.

৫. কেন আমরা নিখুঁতভাবে সুবুদ্ধি নিয়ে জন্মগ্রহণ করিনি?

আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, আমাদের মধ্যে কেউই একেবারে নিখুঁতভাবে সুবুদ্ধি নিয়ে জন্মগ্রহণ করিনি। কেন? কারণ আমরা সকলেই পাপ ও অসিদ্ধতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করি আর তাই পুরোপুরিভাবে সুস্থ দেহ অথবা সুস্থ মনের অধিকারী নই। (গীত. ৫১:৫; রোমীয় ৩:২৩) অধিকন্তু, আমাদের মধ্যে অনেকে আগে সেই ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলাম, যাদের মন শয়তানের দ্বারা “অন্ধ” ছিল; আমরা আগে যিহোবা ও তাঁর ধার্মিক মান সম্বন্ধে অজ্ঞাত ছিলাম। (২ করি. ৪:৪; তীত ৩:৩) তাই, আমরা নিজেরা যেটাকে উত্তম এবং যুক্তিযুক্ত বলে মনে করতাম, কেবল সেটার ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নিতাম আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা যতই চিন্তা করতাম না কেন, এভাবে হয়তো আমরা নিজেদের প্রতারিত করে চলছিলাম।—হিতো. ১৪:১২.

৬. কী আমাদেরকে সুবুদ্ধি গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে?

যদিও আমরা পুরোপুরিভাবে সুস্থ দেহ এবং মনের অধিকারী নই, কিন্তু আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা প্রতিটা ক্ষেত্রে সিদ্ধ। (দ্বিতীয়. ৩২:৪) আনন্দের বিষয় হল, আমাদের জন্য তিনি আমাদের মনকে নতুন করা এবং সুবুদ্ধির আত্মা গড়ে তোলা সম্ভবপর করেছেন। (পড়ুন, ২ তীমথিয় ১:৭.) খ্রিস্টান হিসেবে আমরা বিচক্ষণতার সঙ্গে চিন্তা করতে ও যুক্তি করতে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে চাই। আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি সংযত বা নিয়ন্ত্রিত করতে হবে এবং যিহোবার মতো করে চিন্তা করতে, অনুভব করতে এবং কাজ করতে হবে।

৭, ৮. বিভিন্ন চাপ অথবা কষ্ট সত্ত্বেও, কীভাবে সুবুদ্ধি সহকারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে, সেই সম্বন্ধে একটা অভিজ্ঞতা বলুন।

একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। কিছু অভিবাসীদের মধ্যে এক প্রচলিত প্রথা হল, তাদের নবজাত শিশুদের দেখাশোনা করার জন্য শিশুদেরকে নিজেদের আত্মীয়ের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া, যাতে অভিবাসী বাবা-মায়েরা চাকরি করতে এবং অর্থ উপার্জন করতে পারে। * অন্য একটা দেশে বসবাসরত একজন মহিলা এক সুন্দর ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। তিনি ইতিমধ্যেই বাইবেল অধ্যয়ন করছিলেন এবং চমৎকার আধ্যাত্মিক অগ্রগতিও করেছিলেন। বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনরা তাকে ও তার স্বামীকে চাপ দিতে থাকে, যেন তারা তাদের বাচ্চাকে বাড়িতে ঠাকুরদাদা-ঠাকুরমার কাছে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু, অধ্যয়নের মাধ্যমে বিশেষভাবে সেই স্ত্রী বুঝতে পারেন যে, একজন মা হিসেবে তার সন্তানকে মানুষ করে তোলার দায়িত্ব তার নিজের, যা তিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে পেয়েছেন। (গীত. ১২৭:৩; ইফি. ৬:৪) তার কি সেই প্রথা অনুসরণ করা উচিত, যেটাকে অনেকের কাছে যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়? নাকি তার বাইবেল থেকে তিনি যা শিখছিলেন, সেটা অনুসরণ করা উচিত আর এভাবে হয়তো আর্থিক কষ্ট ভোগ করার ও সেইসঙ্গে কিছু লোকের ঘৃণার পাত্রী হওয়ার ঝুঁকি নেওয়া উচিত? আপনি যদি তার জায়গায় থাকতেন, তাহলে কী করতেন?

চাপ অনুভব করে সেই যুবতী মহিলা মনপ্রাণ উজাড় করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন এবং তাঁর নির্দেশনা চান। পরিস্থিতিটা নিয়ে বাইবেল শিক্ষক এবং মণ্ডলীর অন্যদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে তিনি এই বিষয়ে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে শুরু করেন। এ ছাড়া, ছোটো বাচ্চারা তাদের এই বেড়ে ওঠার বছরগুলোতে বাবা-মায়ের কাছ থেকে পৃথক থাকলে আবেগগত দিক দিয়ে কোন ক্ষতি হতে পারে, তা-ও তিনি বিবেচনা করেন। শাস্ত্রের আলোকে বিষয়টা বিবেচনা করার পর, তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, তার বাচ্চাকে দূরে পাঠিয়ে দেওয়া সঠিক কাজ হবে না। তার স্বামী নিজের চোখে দেখতে পান যে, কীভাবে মণ্ডলীর সদস্যরা একত্রে সহযোগিতা করেছে এবং তাদের বাচ্চা এখন কতখানি আনন্দিত ও সুস্থ আছে। তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করেন।

৯, ১০. সুবুদ্ধির আত্মা ব্যবহার করার অর্থ কী এবং আমরা কীভাবে তা করতে পারি?

এটা হল মাত্র একটা ক্ষেত্র কিন্তু এটা দেখায় যে, সুবুদ্ধির আত্মা ব্যবহার করার অর্থ কেবল আমরা অথবা অন্যেরা যেটাকে যুক্তিযুক্ত বা উপযুক্ত বলে চিন্তা করি অথবা মনে করি, সেই মতো কাজ করা নয়। আমাদের অসিদ্ধ মন এবং হৃদয়কে এমন একটা ঘড়ির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যেটা হয় খুব দ্রুত নতুবা খুব আস্তে চলে। এর দ্বারা পরিচালিত হওয়া আমাদের জন্য গুরুতর সমস্যা নিয়ে আসতে পারে। (যির. ১৭:৯) ঈশ্বরের নির্ভরযোগ্য মানগুলোর দ্বারা আমাদের মন ও হৃদয়কে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।—পড়ুন, যিশাইয় ৫৫:৮, ৯.

১০ উত্তম কারণেই বাইবেল আমাদের উপদেশ দেয়: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” (হিতো. ৩:৫, ৬) এই অভিব্যক্তিটি লক্ষ করুন, “তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।” এর পরেই বলা হয়েছে, “[যিহোবাকে] স্বীকার কর।” তিনিই হলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি প্রকৃতই সুবুদ্ধির অধিকারী। তাই, যখনই আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন সেই বিষয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি কী, তা জানার জন্য আমাদের বাইবেল দেখতে হবে। এরপর, আমাদের সেটির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এটাই হচ্ছে সুবুদ্ধির আত্মা ব্যবহার করা—যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গিকে অনুকরণ করা।

আপনার জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল প্রশিক্ষিত করুন

১১. বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে শেখার একটা প্রধান উপায় কী?

১১ বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে শেখার বিষয়টা এমনি এমনিই হয় না। এটা বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিদের জন্য কঠিন হতে পারে, যারা সত্যে নতুন অথবা যারা সবেমাত্র আধ্যাত্মিক পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। কিন্তু, এই ধরনের ব্যক্তিদের পক্ষে প্রকৃত উন্নতি করা সম্ভব, যাদেরকে বাইবেলে আধ্যাত্মিক শিশু বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একটা শিশু না পড়েই কীভাবে হাঁটতে শেখে, তা বিবেচনা করুন। সাধারণত সফল হওয়ার প্রধান উপায় হল, ছোটো ছোটো পদক্ষেপ নেওয়া এবং তা বার বার নেওয়া। আধ্যাত্মিকভাবে শিশু এমন ব্যক্তিদের বেলায়ও একই বিষয় সত্য, যখন তাদেরকে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মনে করে দেখুন যে, প্রেরিত পৌল সেই ব্যক্তিদের সিদ্ধবয়স্ক বা পরিপক্ব হিসেবে বর্ণনা করেছেন, “যাহাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু হইয়াছে।” “অভ্যাস প্রযুক্ত” এবং “পটু হইয়াছে” বা প্রশিক্ষিত হয়েছে শব্দগুলো ক্রমাগত এবং বার বার প্রচেষ্টা করাকে বোঝায় আর নতুন ব্যক্তিদের ঠিক তা-ই করতে হবে।—পড়ুন, ইব্রীয় ৫:১৩, ১৪.

১২. কীভাবে আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি?

১২ আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রতিদিন আমাদেরকে ছোটো-বড়ো অসংখ্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একটা গবেষণা অনুযায়ী, আমাদের ৪০ শতাংশ কাজ পূর্বপরিকল্পিত নয় বরং সেগুলো আমরা চিরাচরিত অভ্যাসের কারণে করে থাকি। উদাহরণ স্বরূপ, প্রতিদিন সকালে আপনাকে হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে, আপনি কোন পোশাক পরবেন। আপনি হয়তো এটাকে একটা তুচ্ছ বিষয় বলে মনে করতে এবং এই বিষয়ে বেশি চিন্তা না করেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, বিশেষভাবে আপনি যদি তাড়াহুড়োর মধ্যে থাকেন। কিন্তু, এটা নিয়ে চিন্তা করা গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনি যা পরেন, তা যিহোবার একজন দাস হিসেবে আপনার যে-ভূমিকা রয়েছে, সেটার উপযোগী কি না। (২ করি. ৬:৩, ৪) আপনি যখন কাপড় কেনার জন্য দোকানে যান, তখন আপনি হয়তো স্টাইল এবং হাল ফ্যাশনের কথা চিন্তা করেন কিন্তু শালীনতা ও মূল্য সম্বন্ধে কী বলা যায়? এই ক্ষেত্রগুলোতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল প্রশিক্ষিত করতে সাহায্য করবে আর এটা আমাদেরকে আরও গুরুতর বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য করবে।—লূক ১৬:১০; ১ করি. ১০:৩১.

যা সঠিক, তা করার ইচ্ছা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

১৩. আমরা যে-সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছি, সেই অনুযায়ী কাজ করার বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য কীসের প্রয়োজন?

১৩ আমরা সকলে জানি যে, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া একটা বিষয় কিন্তু সেটাতে স্থির থাকা ও সেই অনুযায়ী কাজ করা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। উদাহরণ স্বরূপ, ধূমপান ত্যাগ করতে চান এমন কিছু ব্যক্তি তা করায় ব্যর্থ হন, কারণ তাদের যথেষ্ট অনুপ্রেরণার অভাব রয়েছে। এর জন্য যা প্রয়োজন, তা হল যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেই অনুযায়ী কাজ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ মনোভাব। কেউ কেউ মনে করে যে, ইচ্ছাশক্তি হল অনেকটা মাংসপেশির মতো। আমরা যত বেশি এটা ব্যবহার করব, তত বেশি এটা শক্তিশালী হবে। আমরা যদি এটাকে কেবল মাঝেমধ্যে ব্যবহার করি, তাহলে এটা দুর্বল হয়ে যেতে বা হ্রাস পেতে পারে। তাহলে, আমরা যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাতে স্থির থাকার এবং সেই অনুযায়ী কাজ করার বিষয়ে আমাদের ইচ্ছাশক্তি গড়ে তোলার জন্য অথবা সেটাকে শক্তিশালী করার জন্য কী আমাদের সাহায্য করতে পারে? যিহোবার ওপর নির্ভর করা সাহায্যকারী হতে পারে।—পড়ুন, ফিলিপীয় ২:১৩.

১৪. কেন পৌলের সেই বিষয়টা করার শক্তি ছিল, যেটা তার করা উচিত বলে তিনি জানতেন?

১৪ পৌল নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তা জানতে পেরেছিলেন। একবার তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন: “আমার ইচ্ছা উপস্থিত বটে, কিন্তু উত্তম ক্রিয়া সাধন উপস্থিত নয়।” তিনি জানতেন যে, তিনি কী করতে চান অথবা কী তার করা উচিত কিন্তু তার পরও তিনি তা করতে পারতেন না। তিনি স্বীকার করেন: “বস্তুতঃ আন্তরিক মানুষের ভাব অনুসারে আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করি। কিন্তু আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অন্য প্রকার এক ব্যবস্থা দেখিতে পাইতেছি; তাহা আমার মনের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এবং পাপের যে ব্যবস্থা আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আছে, আমাকে তাহার বন্দি দাস করে।” তার পরিস্থিতি কি আশাহীন ছিল? একেবারেই না। তিনি বলেছিলেন: “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমি ঈশ্বরের ধন্যবাদ করি।” (রোমীয় ৭:১৮, ২২-২৫) আরেক জায়গায় তিনি লিখেছিলেন: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।”—ফিলি. ৪:১৩.

১৫. কীভাবে চূড়ান্ত পদক্ষেপ অথবা এর অভাব, সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিদের প্রভাবিত করতে পারে?

১৫ স্পষ্টতই, ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। কর্মিল পর্বতে বালের উপাসকদের এবং ধর্মভ্রষ্ট ইস্রায়েলীয়দের উদ্দেশে বলা এলিয়ের কথাগুলো স্মরণ করে দেখুন: “তোমরা কত কাল দুই নৌকায় পা দিয়া থাকিবে? সদাপ্রভু যদি ঈশ্বর হন, তবে তাঁহার অনুগামী হও; আর বাল যদি ঈশ্বর হয়, তবে তাহার অনুগামী হও।” (১ রাজা. ১৮:২১) ইস্রায়েল সন্তানরা জানত যে, তাদের কী করা উচিত কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতার কারণে তারা “দুই নৌকায় পা দিয়া” ছিল। এর একেবারে বিপরীতে, কয়েক বছর আগে, যিহোশূয় এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন, যখন তিনি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “যদি সদাপ্রভুর সেবা করা তোমাদের মন্দ বোধ হয়, তবে যাহার সেবা করিবে, তাহাকে অদ্য মনোনীত কর; . . . আমি ও আমার পরিজন আমরা সদাপ্রভুর সেবা করিব।” (যিহো. ২৪:১৫) তার এই দৃঢ়সংকল্পের ফল কী হয়েছিল? যিহোশূয় এবং যারা তার সঙ্গে সঙ্গে ছিল, তারা প্রতিজ্ঞাত দেশে, ‘দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে’ স্থায়ীভাবে বাস করার আশীর্বাদ লাভ করেছিল।—যিহো. ৫:৬.

বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিন এবং আশীর্বাদ লাভ করুন

১৬, ১৭. ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে যে-উপকারগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

১৬ আধুনিক দিনের একটা পরিস্থিতি বিবেচনা করুন। নতুন বাপ্তাইজিত একজন বিবাহিত ভাই এবং তার স্ত্রীর তিন জন ছোটো সন্তান রয়েছে। একদিন, তার একজন সহকর্মী প্রস্তাব দেন যে, তিনি এবং সেই ভাই এমন একটা কোম্পানিতে চাকরি নেবেন, যেখানে উচ্চ বেতন এবং আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। আমাদের ভাই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করেন এবং প্রার্থনা করেন। বর্তমানে তিনি যে-চাকরিটা করছেন, সেখানে বেশি বেতন না দেওয়া হলেও তিনি মূলত এই কারণে তা বেছে নিয়েছিলেন যে, সেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন পাওয়া যাবে আর এতে তিনি তার পরিবারের সঙ্গে সভাগুলোতে এবং পরিচর্যায় যোগ দিতে পারবেন। তিনি এই বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করেন যে, তিনি যদি নতুন চাকরি নেন, তাহলে তিনি এই তালিকা বজায় রাখতে পারবেন না—অন্ততপক্ষে কিছু সময়ের জন্য। আপনি হলে কী করতেন?

১৭ উচ্চ বেতনের কথা না ভেবে বরং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে সেই ভাই অন্য চাকরিটা না করার সিদ্ধান্ত নেন। আপনার কি মনে হয় যে, তিনি পরে তার সিদ্ধান্তের জন্য অনুশোচনা করেছিলেন? কখনোই না। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, উচ্চ বেতনের চেয়ে আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ তার ও তার পরিবারের জন্য আরও বেশি উপকারজনক হবে। তিনি এবং তার স্ত্রী অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন, যখন তাদের দশ বছর বয়সি মেয়ে বলেছিল যে, সে তার বাবা-মাকে, ভাই-বোনদেরকে এবং যিহোবাকে খুবই ভালোবাসে। সে বলেছিল, সে যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে এবং বাপ্তিস্ম নিতে চায়। তার বাবা যিহোবার উপাসনাকে জীবনে প্রথমে রেখে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিল বলে সে কতই-না কৃতজ্ঞ হয়েছিল!

১৮. কেন আমাদের রোজ বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ?

১৮ মহান মোশি, যিশু খ্রিস্ট অনেক দশক ধরে শয়তানের জগতের প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে যিহোবার সত্য উপাসকদের পরিচালনা দিয়ে আসছেন। মহান যিহোশূয় হিসেবে যিশু এখন কলুষিত বিধিব্যবস্থার শেষ আনার এবং তাঁর অনুসারীদেরকে প্রতিজ্ঞাত ধার্মিক নতুন জগতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। (২ পিতর ৩:১৩) তাই, এখন আমাদের আগের চিন্তাভাবনা, পুরোনো অভ্যাস, মূল্যবোধ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার দিকে ফিরে যাওয়ার সময় নয়। বরং আমাদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা কী, তা আরও স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করার সময়। (রোমীয় ১২:২; ২ করি. ১৩:৫) রোজ আপনি যে-সিদ্ধান্ত নেন এবং বাছাই করেন, সেগুলোতে যেন এটা প্রতিফলিত হয় যে, আপনি ঈশ্বরের অনন্ত আশীর্বাদ পাওয়ার মতো যোগ্য একজন ব্যক্তি।—পড়ুন, ইব্রীয় ১০:৩৮, ৩৯.

[পাদটীকা]

^ এই প্রথার পিছনে আরেকটা কারণ হল, ঠাকুরদাদা-ঠাকুরমারা যেন তাদের নাতি-নাতনিকে বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনকে দেখাতে পারে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমরা যখন রোজকার বিষয়গুলোতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল প্রশিক্ষিত হয় (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিন এবং ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করুন (১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)