ঈশ্বরের সেবা করাই হচ্ছে তার আসল ওষুধ!
কেনিয়ায় দু-জন অগ্রগামীকে যখন একটা ঘরে ঢোকার আমন্ত্রণ জানানো হয়, তখন তারা বিছানায় শুয়ে থাকা একজন ব্যক্তির ছোট্ট আকার দেখে অবাক হয়ে যায়। তার দেহ এবং হাত দুটো অনেক ছোটো ছিল। তারা যখন তার সঙ্গে ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করে যে, “খঞ্জ হরিণের ন্যায় লম্ফ দিবে,” তখন তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন।—যিশা. ৩৫:৬.
অগ্রগামীরা জানতে পারে যে, ওনিস্মাস, যার বয়স এখন ৩০-এর কোঠায়, তিনি অস্টিওজেনেসিস ইনপারফেক্টা নামে এক ধরনের অস্থির রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, যেটার কারণে অস্থি সহজে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। তার অস্থি অত্যন্ত দুর্বল ছিল—এতটাই দুর্বল যে, সামান্য চাপের কারণেও সেগুলো ভেঙে যেত। যেহেতু এই রোগের কোনো প্রতিকার বা কার্যকরী চিকিৎসা ছিল না, তাই ওনিস্মাস তার বাকি জীবনটা ব্যথা নিয়ে এবং হুইলচেয়ারের মধ্যে কাটানোর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন।
ওনিস্মাস বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন। কিন্তু, তার মা খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যাওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানান কারণ এর ফলে ওনিস্মাস হয়তো আহত হতে এবং আরও ব্যথা পেতে পারেন। তাই, ভাইয়েরা সভার বিষয়বস্তু রেকর্ড করত এবং ওনিস্মাস বাড়িতে বসে সেগুলো শুনতেন। পাঁচ মাস অধ্যয়ন করার পর ওনিস্মাস সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি ঝুঁকি সত্ত্বেও সভাগুলোতে যেতে চান।
খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার কারণে ওনিস্মাসের ব্যথা কি বেড়ে গিয়েছিল? এর উলটোটাই হয়েছিল। “ক্রমাগত আমি যে-ব্যথা অনুভব করতাম, তা সভার সময়গুলোতে একেবারে কমে যেত বলে মনে হতো,” ওনিস্মাস স্মরণ করে বলেন। তিনি মনে করেছিলেন, তার এই নবলব্ধ আশার কারণেই তিনি কিছুটা সুস্থ বোধ করতেন। ওনিস্মাসের মা তার ছেলের মনোভাবের পরিবর্তন লক্ষ করেন এবং এতটাই আনন্দিত হন যে, তিনিও বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন। “ঈশ্বরের সেবা করাই হচ্ছে আমার ছেলের আসল ওষুধ,” তিনি এভাবে বলেছিলেন।
অল্পসময়ের মধ্যেই ওনিস্মাস একজন অবাপ্তাইজিত প্রকাশক হয়ে ওঠেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাপ্তিস্ম নেন এবং এখন একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করছেন। যদিও ওনিস্মাস তার পা এবং একটা হাত ব্যবহার করতে পারেন না, তবুও তিনি যিহোবার সেবায় তার সর্বোত্তমটা করতে ইচ্ছুক ছিলেন। তিনি সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেটার জন্য আবেদন করতে দ্বিধা করছিলেন। কেন? কারণ তিনি জানতেন যে, তার হুইলচেয়ার ঠেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে সম্পূর্ণরূপে আরেকজনের ওপর নির্ভর করতে হবে। তিনি যখন সহখ্রিস্টানদের কাছে তার উদ্বিগ্নতার কথা প্রকাশ করেন, তখন তারা তাকে সমর্থন জোগানোর আশ্বাস দেয়। ওনিস্মাসকে সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করার ব্যাপারে সাহায্য করে তারা তা করেছিল।
একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার কথা ভেবেও তিনি একই উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু, একবার তিনি দৈনিক শাস্ত্রপদ থেকে প্রয়োজনীয় উৎসাহ লাভ করেছিলেন। এটি গীতসংহিতা ৩৪:৮ পদ থেকে নেওয়া হয়েছিল: “আস্বাদন করিয়া দেখ, সদাপ্রভু মঙ্গলময়।” সেই শাস্ত্রপদটি নিয়ে ধ্যান করার পর, ওনিস্মাস একজন নিয়মিত অগ্রগামী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন তিনি সপ্তাহে চার দিন প্রচার করেন এবং তার কয়েক জন বাইবেল ছাত্র রয়েছে, যারা উত্তম আধ্যাত্মিক উন্নতি করছে। ২০১০ সালে, তিনি অগ্রগামী পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ যোগদান করেন। যে-দু-জন ভাই তার কাছে প্রথম প্রচার করেছিল, তাদের মধ্যে একজনকে নির্দেশক হিসেবে পেয়ে ওনিস্মাস কতই-না আনন্দিত হয়েছিলেন!
ওনিস্মাসের বাবা-মা এখন আর বেঁচে নেই কিন্তু মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা তার দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিয়ে থাকে। তিনি এখন যে-আশীর্বাদগুলো উপভোগ করছেন, সেগুলোর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ আর তিনি সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করে আছেন, যখন “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।”—যিশা. ৩৩:২৪.