সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাক”

“প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাক”

“সংযমশীল হও, এবং প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাক।”—১ পিতর ৪:৭.

১, ২. (ক) ‘প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাকা’ কেন অতীব গুরুত্বপূর্ণ? (খ) প্রার্থনা সম্বন্ধে কোন দৃষ্টিভঙ্গিমূলক প্রশ্নগুলো নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত?

 “রাতের যে-প্রহরটা জেগে থাকা সবচেয়ে কঠিন, সেটা হল ভোরবেলা,” আগে রাতে কাজ করতেন এমন একজন কর্মী বলেন। খুব সম্ভবত সেই ব্যক্তিরাও এর সঙ্গে একমত হবে, যাদেরকে সারারাত জেগে থাকতে হয়। বর্তমান দিনের খ্রিস্টানরাও একইরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয় কারণ শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থার দীর্ঘ রাত এখন ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকারময় মুহূর্তে রয়েছে। (রোমীয় ১৩:১২) এই শেষ মুহূর্তে ঘুমিয়ে পড়া আমাদের জন্য কতই-না বিপদজনক হবে! আমাদের জন্য ‘সংযমশীল হওয়া’ এবং ‘প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাকিবার’ বিষয়ে শাস্ত্রীয় পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য।—১ পিতর ৪:৭.

বিশেষভাবে এখন আমরা যে-সময়টাতে রয়েছি, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা বিজ্ঞতার কাজ: ‘প্রার্থনার নিমিত্তে আমি কতটা প্রবুদ্ধ? আমি কি সর্ববিধ প্রার্থনা করি এবং আমি কি ক্রমাগতভাবে প্রার্থনা করি? অন্যদের জন্য প্রার্থনা করা কি আমার অভ্যাস, নাকি আমার প্রার্থনা কেবল ব্যক্তিগত চাহিদা ও প্রয়োজনগুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত থাকে? আর আমার পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?’

সর্ববিধ প্রার্থনা করুন

৩. অন্যান্য কিছু প্রার্থনা কী?

ইফিষীয়দের প্রতি লেখা চিঠিতে, প্রেরিত পৌল ‘সর্ব্ববিধ প্রার্থনার’ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। (ইফি. ৬:১৮) আমাদের প্রার্থনায় আমরা হয়তো প্রায়ই আমাদের চাহিদাগুলো পূরণ করার এবং বিভিন্ন বাধা কাটিয়ে ওঠার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চাই। “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” হিসেবে তিনি সাহায্যের জন্য করা আমাদের অনুরোধগুলো প্রেমের সঙ্গে শুনে থাকেন। (গীত. ৬৫:২) কিন্তু, আমাদের অন্যান্য প্রার্থনার ওপরও মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করা উচিত। এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল, প্রশংসা, ধন্যবাদ এবং বিনতির প্রার্থনা।

৪. কেন আমাদের প্রার্থনায় প্রায়ই যিহোবাকে প্রশংসা করা উচিত?

অনেক কারণে যিহোবার কাছে করা আমাদের প্রার্থনায় প্রশংসার বাক্য অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যখন ‘তাঁহার পরাক্রম-কার্য্য সকল’ এবং ‘তাঁহার মহিমার বাহুল্য’ সম্বন্ধে চিন্তা করি, তখন আমরা তাঁর প্রশংসা করতে অনুপ্রাণিত হই। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৫০:১-৬.) বাস্তবিকপক্ষে, গীতসংহিতার ১৫০ গীতের ছয়টি পদে আমাদেরকে ১৩ বার যিহোবার প্রশংসা করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে! ঈশ্বরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা সহকারে, আরেকটা গীতের রচয়িতা গেয়েছিলেন: “আমি দিনে সাত বার তোমার স্তব করি, তোমার ধর্ম্মময় শাসনকলাপের জন্য।” (গীত. ১১৯:১৬৪) নিশ্চিতভাবেই, যিহোবা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তাই, আমাদের কি “দিনে সাত বার” অর্থাৎ প্রায়ই আমাদের প্রার্থনায় তাঁকে প্রশংসা করা উচিত নয়?

৫. প্রার্থনায় এক কৃতজ্ঞ মনোভাব কীভাবে একটা সুরক্ষা?

ধন্যবাদের প্রার্থনা হচ্ছে আরেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনা। ফিলিপী নগরের খ্রিস্টানদের পৌল এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর।” (ফিলি. ৪:৬) যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার সময় আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের জন্য একটা সুরক্ষা। বিশেষভাবে এর কারণ হল যে, আমরা শেষকালে বাস করছি, যখন লোকেরা “অকৃতজ্ঞ।” (২ তীম. ৩:১, ২) সত্যিই, এই জগতের চারিদিকে অকৃতজ্ঞ মনোভাব ছেয়ে আছে। আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তাহলে এই মনোভাব সহজেই আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। প্রার্থনায় ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে এবং আমাদেরকে “বচসাকারী, স্বভাগ্যনিন্দক” হওয়া থেকে রোধ করে। (যিহূদা ১৬) সর্বোপরি, পরিবারের মস্তকরা যখন তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে প্রার্থনা করার সময় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে, তখন তারা তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে এক কৃতজ্ঞ মনোভাব জাগিয়ে তোলে।

৬, ৭. বিনতি কী এবং কোন বিষয়ে আমরা যিহোবার কাছে বিনতি করতে পারি?

বিনতি হচ্ছে গভীর অনুভূতিপূর্ণ এক আন্তরিক প্রার্থনা। কোন বিষয়ে আমরা যিহোবার কাছে বিনতি করতে পারি? নিশ্চিতভাবেই যখন আমরা তাড়িত হই অথবা কোনো মারাত্মক অসুস্থতার মুখোমুখি হই, তখন আমরা তা করতে পারি। এই সময়গুলোতে, ঈশ্বরের সাহায্য চেয়ে করা আমাদের প্রার্থনা স্বাভাবিকভাবেই বিনতির প্রার্থনা হয়ে ওঠে। কিন্তু, শুধু এই সময়গুলোতেই কি আমরা যিহোবার কাছে বিনতি করতে পারি?

যিশুর আদর্শ প্রার্থনার কথা বিবেচনা করে দেখুন এবং ঈশ্বরের নাম, তাঁর রাজ্য এবং তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধে তিনি যা বলেছিলেন, তা লক্ষ করুন। (পড়ুন, মথি ৬:৯, ১০.) জগৎ দুষ্টতায় ছেয়ে আছে এবং মানব সরকারগুলো এমনকী তাদের প্রজাদের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতেও ব্যর্থ হচ্ছে। তাই, নিশ্চিতভাবেই আমাদের স্বর্গীয় পিতার নামের পবিত্রীকরণের জন্য এবং পৃথিবীকে শয়তানের শাসন থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে তাঁর রাজ্যের জন্য আমাদের প্রার্থনা করা উচিত। এখন যিহোবার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে, তেমনই পৃথিবীতে পূর্ণ হওয়ার বিষয়েও বিনতি করার সময়। তাই, আসুন আমরা প্রবুদ্ধ থাকি, সবসময় সমস্ত ধরনের প্রার্থনা করে চলি।

‘প্রার্থনা করিয়া’ চলুন

৮, ৯. গেৎশিমানী বাগানে ঘুমিয়ে পড়েছিল বলে পিতর এবং অন্যান্য প্রেরিতকে বিচার করার বিষয়ে কেন আমাদের সাবধান থাকা উচিত?

যদিও প্রেরিত পিতর খ্রিস্টানদেরকে ‘প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাকিবার’ বিষয়ে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি নিজে অন্ততপক্ষে এক বার তা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সেই শিষ্যদের মধ্যে তিনিও ছিলেন, যারা গেৎশিমানী বাগানে যিশুর প্রার্থনার সময় ঘুমিয়ে পড়েছিল। এমনকী যিশু তাদেরকে ‘জাগিয়া থাকিবার, ও প্রার্থনা করিয়া’ চলার বিষয়ে বলার পরও, তারা তা করেনি।—পড়ুন, মথি ২৬:৪০-৪৫.

কিন্তু, জেগে থাকতে ব্যর্থ হয়েছে বলে পিতর এবং অন্যান্য প্রেরিতকে কঠোরভাবে বিচার করার পরিবর্তে, আমাদের মনে রাখা উচিত যে, সেই দিন স্পষ্টতই তারা শারীরিকভাবে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তারা নিস্তারপর্বের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল এবং সেই দিন সন্ধ্যায় তা পালন করেছিল। এরপর, যিশু প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রবর্তন করেছিলেন, ভবিষ্যতে উদ্‌যাপন করার জন্য তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থ দিবসের আদর্শ স্থাপন করেছিলেন। (১ করি. ১১:২৩-২৫) “তাঁহারা গীত গান করিয়া বাহির হইয়া” যিরূশালেমের সরু রাস্তাগুলো দিয়ে কিছুটা পথ হেঁটে “জৈতুন পর্ব্বতে গেলেন।” (মথি ২৬:৩০, ৩৬) সেই সময়, মধ্যরাত পার হয়ে গিয়েছিল। সেই দিন রাতে আমরা যদি গেৎশিমানী বাগানে থাকতাম, তাহলে আমরাও হয়তো ঘুমিয়ে পড়তাম। পরিশ্রান্ত প্রেরিতদের নিন্দা করার পরিবর্তে, যিশু প্রেমের সঙ্গে স্বীকার করেছিলেন যে, “আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।”

১০, ১১. (ক) গেৎশিমানী বাগানে তার অভিজ্ঞতা থেকে পিতর কোন শিক্ষা লাভ করেছিলেন? (খ) পিতরের অভিজ্ঞতা কীভাবে আপনাকে প্রভাবিত করে?

১০ গেৎশিমানী বাগানের অভিজ্ঞতা পিতরের ওপর ছাপ ফেলেছিল। তিনি প্রবুদ্ধ থাকতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে এক কঠিন শিক্ষা লাভ করেছিলেন। এর আগে, যিশু বলেছিলেন: “এই রাত্রিতে তোমরা সকলে আমাতে বিঘ্ন পাইবে।” সেই সময় পিতর জোরের সঙ্গে বলেছিলেন: “যদি সকলে আপনাতে বিঘ্ন পায়, আমি কখনও বিঘ্ন পাইব না।” এর উত্তরে যিশু বলেছিলেন যে, পিতর তাঁকে তিন বার অস্বীকার করবে। পিতর দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন: “যদি আপনার সহিত মরিতেও হয়, কোন মতে আপনাকে অস্বীকার করিব না।” (মথি ২৬:৩১-৩৫) কিন্তু, যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী পিতর ঠিকই বিঘ্ন পেয়েছিলেন। শেষ বার যিশুকে অস্বীকার করে প্রচণ্ড দুঃখিত হয়ে পিতর ‘অত্যন্ত রোদন করিয়াছিলেন।’—লূক ২২:৬০-৬২.

১১ নিশ্চিতভাবেই পিতর এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ করেছিলেন এবং আত্মবিশ্বাসী হওয়ার প্রবণতা কাটিয়ে উঠেছিলেন। এ ক্ষেত্রে, স্পষ্টতই প্রার্থনা পিতরকে সাহায্য করেছিল। আসলে, এই বিষয়টা উল্লেখযোগ্য যে, ‘প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাকিবার’ বিষয়ে পিতরই পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা কি এই অনুপ্রাণিত পরামর্শে মনোযোগ দিচ্ছি? অধিকন্তু, আমরা কি ‘প্রার্থনা করিয়া’ চলি এবং এভাবে যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভরতা প্রকাশ করি? (গীত. ৭৮:৭) আসুন আমরা প্রেরিত পৌলের এই উপদেশও মনে রাখি: “যে মনে করে, আমি দাঁড়াইয়া আছি, সে সাবধান হউক, পাছে পড়িয়া যায়।”—১ করি. ১০:১২.

নহিমিয়ের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছিল

১২. কেন নহিমিয় আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ?

১২ নহিমিয়ের কথা বিবেচনা করুন, যিনি পঞ্চম খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্যরাজ অর্তক্ষস্তের পানপাত্রবাহক হিসেবে কাজ করতেন। নহিমিয় ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করার এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন। যিরূশালেমে বসবাসরত যিহুদিদের অবস্থা সম্বন্ধে জানার পর, তিনি বেশ কয়েক দিন ধরে ‘ঈশ্বরের সাক্ষাতে উপবাস ও প্রার্থনা’ করেছিলেন। (নহি. ১:৪) অর্তক্ষস্ত যখন তাকে জিজ্ঞেস করেন যে, তার মুখ বিষণ্ণ কেন এবং তিনি তার জন্য কী করতে পারেন, তখন সঙ্গেসঙ্গে ‘নহিমিয় স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করিয়াছিলেন।’ (নহি. ২:২-৪) এর ফল কী হয়েছিল? যিহোবা তার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন এবং বিষয়গুলোকে এমনভাবে পরিচালিত করেছিলেন, যেন তাঁর লোকেরা উপকৃত হয়। (নহি. ২:৫, ৬) এটা নহিমিয়ের বিশ্বাসকে নিশ্চয়ই কত শক্তিশালীই না করেছিল!

১৩, ১৪. আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী রাখার এবং আমাদেরকে নিরুৎসাহিত করার ব্যাপারে শয়তানের প্রচেষ্টার সঙ্গে লড়াই করার জন্য কী করা উচিত?

১৩ নহিমিয়ের মতো ক্রমাগতভাবে প্রার্থনা করা আমাদেরকে দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রাখতে সাহায্য করে। শয়তান খুবই নিষ্ঠুর এবং আমরা যখন দুর্বল থাকি, তখন প্রায়ই আমাদের আক্রমণ করে। আমরা যদি অসুস্থতার সঙ্গে মোকাবিলা করে থাকি অথবা বিষণ্ণতার সঙ্গে লড়াই করি, তাহলে আমরা হয়তো এইরকমটা মনে করতে শুরু করি যে, প্রতি মাসে পরিচর্যায় আমরা যে-সময় ব্যয় করি, সেটাকে ঈশ্বর মূল্যবান বলে গণ্য করেন না। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো অতীতের নানা অভিজ্ঞতার কথা চিন্তা করে দুঃখিত হয়ে পড়ে। শয়তান আমাদের এইরকম মনে করতে পরিচালিত করে যে, আমরা অযোগ্য। সে প্রায়ই এমনভাবে আক্রমণ নিয়ে আসে, যাতে সে আমাদের আবেগ নিয়ে খেলা করতে আর এভাবে আমাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিতে পারে। কিন্তু, “প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ” থাকার মাধ্যমে আমরা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী রাখতে পারি। প্রকৃতপক্ষে, ‘বিশ্বাসের ঢাল দ্বারা আমরা সেই পাপাত্মার সমস্ত অগ্নিবাণ নির্ব্বাণ করিতে পারিব।’—ইফি. ৬:১৬.

১৪ আমরা যদি “প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ” থাকি, তাহলে আমাদের ওপর অপ্রত্যাশিতভাবে বিশ্বাসের কোনো পরীক্ষা আসলে, আমরা অপ্রস্তুত অবস্থায় থাকব না আর এভাবে আপোশ করে ফেলব না। বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হলে, আসুন আমরা নহিমিয়ের উদাহরণ মনে রাখি এবং সঙ্গেসঙ্গে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি। একমাত্র যিহোবার সাহায্যেই আমরা বিভিন্ন প্রলোভন প্রতিরোধ করার এবং আমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাগুলো সহ্য করার ক্ষেত্রে সফল হতে পারি।

অন্যদের জন্য প্রার্থনা করুন

১৫. অন্যদের জন্য প্রার্থনা করার বিষয়ে নিজেদেরকে আমাদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

১৫ যিশু পিতরের জন্য বিনতি করেছিলেন, যেন এই প্রেরিতের বিশ্বাস লোপ না পায়। (লূক ২২:৩২) প্রথম শতাব্দীতে, ইপাফ্রা নামে একজন বিশ্বস্ত খ্রিস্টান এই ক্ষেত্রে যিশুকে অনুকরণ করেছিলেন এবং কলসীতে বসবাসরত তার ভাই-বোনদের জন্য মনপ্রাণ উজাড় করে প্রার্থনা করেছিলেন। “তিনি সব সময় তোমাদের জন্য ব্যাকুলভাবে প্রার্থনা করেন,” পৌল তাদেরকে লিখেছিলেন, “যেন তোমরা ঈশ্বরের ইচ্ছায় আত্মিকভাবে বৃদ্ধিলাভ কর, সিদ্ধ হও ও ঈশ্বরের অভিপ্রেত সব কিছুতে তোমরা পূর্ণ হও।” (কল. ৪:১২, ইজি-টু-রিড ভারসন) নিজেদেরকে আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি কি সারা পৃথিবীর ভাই-বোনদের জন্য আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি? সেই সহবিশ্বাসীদের জন্য আমি কত বার প্রার্থনা করি, যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? যিহোবার সংগঠনে গুরু দায়িত্ব পালন করছে এমন ব্যক্তিদের জন্য আমি শেষ কবে মনপ্রাণ উজাড় করে প্রার্থনা করেছিলাম? সম্প্রতি, আমি কি মণ্ডলীর সেই ব্যক্তিদের জন্য প্রার্থনা করেছি, যারা কষ্টভোগ করছে?’

১৬. অন্যদের জন্য আমাদের প্রার্থনা করা কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ? ব্যাখ্যা করুন।

১৬ অন্যদের জন্য যিহোবা ঈশ্বরের কাছে করা আমাদের প্রার্থনা সত্যি সত্যিই তাদেরকে সাহায্য করতে পারে। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১:১১.) তাঁর উপাসকদের মধ্যে এক বিরাট সংখ্যক ব্যক্তি বার বার প্রার্থনা করে অনুরোধ জানিয়েছে বলে যদিও যিহোবা সেই অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য নন, তার পরও তিনি তাদের সমবেত আগ্রহ লক্ষ করেন এবং তাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে তাদের অকৃত্রিম ও গভীর চিন্তার প্রতি মনোযোগ দেন। তাই, অন্যদের জন্য প্রার্থনা করার বিশেষ সুযোগ এবং দায়িত্বকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। ইপাফ্রার মতো আমাদেরও আমাদের খ্রিস্টান ভাই-বোনদের জন্য মনপ্রাণ উজাড় করে প্রার্থনা করার মাধ্যমে তাদের প্রতি আন্তরিক প্রেম এবং চিন্তা দেখানো উচিত। এতে আমাদের সুখ বৃদ্ধি পাবে কারণ “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য” বা সুখী “হইবার বিষয়।”—প্রেরিত ২০:৩৫.

‘আমাদের পরিত্রাণ সন্নিকট’

১৭, ১৮. কীভাবে “প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ” থাকা আমাদের জন্য সাহায্যকারী হবে?

১৭ “রাত্রি প্রায় গেল, দিবস আগতপ্রায়,” এই কথাগুলো বলার ঠিক আগে পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা এই কাল জ্ঞাত আছ; ফলতঃ এখন তোমাদের নিদ্রা হইতে জাগিবার সময় হইল; কেননা যখন আমরা বিশ্বাস করিয়াছিলাম, তখন অপেক্ষা এখন পরিত্রাণ আমাদের আরও সন্নিকট।” (রোমীয় ১৩:১১, ১২) ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগৎ একেবারে কাছে এবং আমাদের পরিত্রাণ আমরা যতটা মনে করছি, সেটার চেয়ে আরও নিকটে। আমরা অবশ্যই আধ্যাত্মিকভাবে নিদ্রা যাব না আর জগতের বিক্ষেপগুলোকে আমাদের কখনোই যিহোবার কাছে একান্তে প্রার্থনা করার সময়কে কেড়ে নিতে দেওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, আসুন আমরা ‘প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাকি।’ তা করা আমাদেরকে যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করার সময় ‘পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তির’ কাজে রত থাকতে সাহায্য করবে। (২ পিতর ৩:১১, ১২) আমাদের জীবনধারা এভাবে দেখাবে যে, আমরা আধ্যাত্মিকভাবে সজাগ আছি এবং আমরা প্রকৃতই বিশ্বাস করি যে, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ সন্নিকট। তাই, আমরা যেন ‘অবিরত প্রার্থনা করি।’ (১ থিষল. ৫:১৭) এ ছাড়া, আসুন আমরা একান্তে প্রার্থনা করার জন্য নির্জন স্থান খোঁজার মাধ্যমে যিশুকে অনুকরণ করি। আমরা যদি দীর্ঘসময় নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তাহলে আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী হতে পারব। (যাকোব ৪:৭, ৮) আর সেটা কী এক আশীর্বাদ হিসেবেই-না প্রমাণিত হবে!

১৮ শাস্ত্র বলে: “ইনি [খ্রিস্ট] মাংসে প্রবাসকালে প্রবল আর্ত্তনাদ ও অশ্রুপাত সহকারে তাঁহারই [ঈশ্বরেরই] নিকটে প্রার্থনা ও বিনতি উৎসর্গ করিয়াছিলেন, যিনি মৃত্যু হইতে তাঁহাকে রক্ষা করিতে সমর্থ, এবং আপন ভক্তি প্রযুক্ত উত্তর পাইলেন।” (ইব্রীয় ৫:৭) যিশু বিনতি ও যাচ্ঞা করেছিলেন এবং পার্থিব জীবনের একেবারে শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন। ফল স্বরূপ, যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রকে মৃত্যু থেকে উদ্ধার করেছিলেন এবং স্বর্গে অমর জীবন দান করার মাধ্যমে তাঁকে পুরস্কৃত করেছিলেন। আমরাও আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি বিশ্বস্ত হতে পারি, তা সেটা ভবিষ্যতে আমাদের ওপর যে-প্রলোভন এবং পরীক্ষাই আসুক না কেন। বস্তুতপক্ষে, আমরা অনন্তজীবন লাভ করতে পারি—যদি আমরা “প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ” থাকি।