সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আমার স্মরণার্থে ইহা করিও”

“আমার স্মরণার্থে ইহা করিও”

“[যিশু] ধন্যবাদপূর্ব্বক [রুটি] ভাঙ্গিলেন, ও কহিলেন, ‘ইহা আমার শরীর, ইহা তোমাদের জন্য; আমার স্মরণার্থে ইহা করিও’।”—১ করি. ১১:২৪.

১, ২. যিরূশালেমে যাত্রা করার সময় সম্বন্ধে প্রেরিতরা হয়তো কী চিন্তা করেছিল?

 ‘মেঘ সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, আমরা এক ফালি চাঁদ দেখতে পাই। গতকাল সন্ধ্যায়, যিরূশালেমের প্রহরীরা নিশ্চয়ই এই নতুন চাঁদ দেখতে পেয়েছে। মহাসভা এই সম্বন্ধে জানার পর, একটা নতুন মাস অর্থাৎ নিশান মাস শুরু হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরপর আগুন জ্বালিয়ে সংকেত দেওয়া হয় অথবা বার্তাবাহকরা সংবাদ ছড়িয়ে দেয়, এমনকী এখানেও। যিশু নিশ্চয়ই নিস্তারপর্বের আগে যিরূশালেমে পৌঁছানোর জন্য সেখানকার উদ্দেশে রওনা দিতে চাইবেন।’

আমরা কল্পনা করতে পারি যে, সেই সময় কিছু ব্যক্তির মনে এইরকম চিন্তা এসেছিল, যারা যিরূশালেমের উদ্দেশে যিশুর শেষ যাত্রার সময় তাঁর সঙ্গে পিরিয়াতে (যর্দনের ওপারে) ছিল। (মথি ১৯:১; ২০:১৭, ২৯; মার্ক ১০:১, ৩২, ৪৬) একবার যিহুদি নিশান মাসের প্রথম দিন নির্ধারিত হয়ে গেলে এর ১৩-তম দিনে সূর্যাস্তের পর অর্থাৎ ১৪ নিশান নিস্তারপর্ব পালন করা হবে।

৩. কেন খ্রিস্টানরা উপযুক্তভাবেই নিস্তারপর্বের তারিখের ব্যাপারে আগ্রহী?

প্রভুর সান্ধ্যভোজের তারিখ, যা নিস্তারপর্বের দিনই পড়ে, তা ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল সূর্যাস্তের পরে পড়বে। সত্য খ্রিস্টান এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য এটা হবে এক বিশেষ দিন। কেন? কারণ ১ করিন্থীয় ১১:২৩-২৫ পদে আমরা পড়ি: ‘যীশু যে রাত্রিতে সমর্পিত হন, সেই রাত্রিতে তিনি রুটী লইলেন, এবং ধন্যবাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন, ও কহিলেন, “ইহা আমার শরীর, ইহা তোমাদের জন্য; আমার স্মরণার্থে ইহা করিও”। তিনি পানপাত্রও লইয়া সেই প্রকার কহিলেন।’

৪. (ক) স্মরণার্থ দিবস সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হতে পারে? (খ) প্রতি বছর স্মরণার্থ দিবসের তারিখ কীভাবে নির্ধারণ করা হয়? (“স্মরণার্থ দিবস ২০১৪” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)

কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি এইরকম একটা উপলক্ষ্যে উপস্থিত থাকবেন, যা যিশু তাঁর অনুসারীদের বছরে একবার উদ্‌যাপন করতে বলেছিলেন। আগে থেকেই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘সেই সন্ধ্যার জন্য আমার কীভাবে প্রস্তুত হওয়া উচিত? কোন প্রতীকগুলো ব্যবহার করা হবে? সেই উপলক্ষ্যের সময় কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে? আর সেই অনুষ্ঠান এবং সেখানে ব্যবহৃত প্রতীকগুলো আমার জন্য কোন অর্থ রাখে?’

স্মরণার্থে যে-প্রতীকগুলো ব্যবহার করা হয়

৫. প্রেরিতদের সঙ্গে শেষ নিস্তারপর্বের জন্য যিশু কোন প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছিলেন?

যিশু যখন তাঁর প্রেরিতদের নিস্তারপর্বের ভোজের জন্য একটা কামরা প্রস্তুত করতে বলেছিলেন, তখন তিনি অতিরিক্ত সজ্জিত কোনো কামরার কথা বলেননি; এর পরিবর্তে, তিনি হয়তো কেবল একটা উপযুক্ত ও পরিষ্কার কামরা চেয়েছিলেন, যেখানে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। (পড়ুন, মার্ক ১৪:১২-১৬.) তাড়িশূন্য রুটি এবং লাল দ্রাক্ষারস-সহ ভোজের জন্য তাদেরকে কিছু জিনিস প্রস্তুত করতে হবে। নিস্তারপর্বের ভোজ শেষ হওয়ার পর, যিশু সেই প্রতীক দুটোর প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন।

৬. (ক) নিস্তারপর্বের ভোজের পর, রুটি সম্বন্ধে যিশু কী বলেছিলেন? (খ) স্মরণার্থের সময় কোন ধরনের রুটি ব্যবহার করা হয়?

প্রেরিত মথি সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে লিখেছিলেন: “যীশু রুটী লইয়া আশীর্ব্বাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন, এবং শিষ্যদিগকে দিলেন, আর কহিলেন, লও, ভোজন কর।” (মথি ২৬:২৬) সেই “রুটী” ছিল তাড়িশূন্য রুটি, যেমনটা নিস্তারপর্বের জন্য ব্যবহার করা হতো। (যাত্রা. ১২:৮; দ্বিতীয়. ১৬:৩) সেই রুটি ময়দা এবং জল দিয়ে তৈরি করা হতো, যেখানে কোনো তাড়ি অথবা লবণের মতো স্বাদনদ্রব্য মেশানো হতো না। যেহেতু এর মধ্যে কোনো তাড়ি থাকত না, তাই এটা ফুলে উঠত না। এটাকে সমান, শুকনো এবং মচমচে হতে হতো, যেটাকে সহজেই ভাঙা যায়। বর্তমানে, স্মরণার্থের আগেই মণ্ডলীর প্রাচীনরা, ময়দা এবং জল দিয়ে এইরকম রুটি বানানোর জন্য কাউকে দায়িত্ব দিতে পারে, যা সামান্য তেল দিয়ে সেঁকতে হবে। (যদি ময়দা পাওয়া না যায়, তাহলে সেটা চাল, যব, ভুট্টা অথবা এইরকম কোনো শস্যের ময়দা দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে।)

৭. যিশু কোন ধরনের দ্রাক্ষারসের কথা বলেছিলেন আর বর্তমানে স্মরণার্থ দিবসে কোন ধরনের দ্রাক্ষারস ব্যবহার করা যেতে পারে?

মথি আরও বলেন: “[যিশু] পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদপূর্ব্বক তাঁহাদিগকে দিয়া কহিলেন, তোমরা সকলে ইহা হইতে পান কর।” (মথি ২৬:২৭, ২৮) যিশু যে-পানপাত্র হাতে নিয়েছিলেন, সেটার মধ্যে লাল দ্রাক্ষারস ছিল। (এটা টাটকা আঙুরের রস ছিল না কারণ অনেক আগেই আঙুর সংগ্রহের সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল।) যদিও মিশরের সেই প্রথম ভোজে দ্রাক্ষারস ব্যবহার করা হয়নি, তবে তা নিস্তারপর্বে ব্যবহারের ক্ষেত্রে যিশু কোনো আপত্তি জানাননি। তিনি এমনকী প্রভুর সান্ধ্যভোজের সময় এর কিছুটা ব্যবহার করেছিলেন। এই কারণে খ্রিস্টানরা স্মরণার্থের সময় দ্রাক্ষারস ব্যবহার করে। ঠিক যেমন যিশুর রক্তের মূল্য অথবা উৎকর্ষ বৃদ্ধি করার কোনো প্রয়োজন ছিল না, তেমনই যে-দ্রাক্ষারস ব্যবহার করা হয়, সেটার উৎকর্ষের জন্য ব্র্যান্ডি অথবা অন্য কোনো উপাদান মেশানোর প্রয়োজন হয় না। সাধারণ লাল দ্রাক্ষারস ব্যবহার করা উচিত, ঘরে বানানো দ্রাক্ষারস অথবা বাজারে পাওয়া যায় এমন ওয়াইন যেমন বোজোলে, বার্গেন্ডি, কিয়ানটি ব্যবহার করা উচিত।

রুটী এবং দ্রাক্ষারস যে-অর্থ বহন করে

৮. কেন খ্রিস্টানরা রুটি ও দ্রাক্ষারসের তাৎপর্যের ব্যাপারে আগ্রহী?

প্রেরিত পৌল এই বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন যে, প্রেরিতরা ছাড়াও খ্রিস্টানদের প্রভুর সান্ধ্যভোজ পালন করতে হবে। “আমি প্রভু হইতে এই শিক্ষা পাইয়াছি এবং তোমাদিগকে সমর্পণও করিয়াছি যে, প্রভু যীশু . . . রুটী লইলেন, এবং ধন্যবাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন, ও কহিলেন, ‘ইহা আমার শরীর, ইহা তোমাদের জন্য; আমার স্মরণার্থে ইহা করিও’।” (১ করি. ১১:২৩, ২৪) এই কারণে এখনও খ্রিস্টানরা বছরে একবার এই বিশেষ উপলক্ষ্য উদ্‌যাপন করে এবং রুটি ও দ্রাক্ষারসের তাৎপর্যের ব্যাপারে আগ্রহী।

৯. যিশু যে-রুটি ব্যবহার করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে অনেকের কোন ভুল দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে?

গির্জাগামী কিছু লোক বলে যে, যিশু এই কথাগুলো আক্ষরিকভাবে বলেছিলেন: “ইহা আমার শরীর,” তাই তারা মনে করে যে, রুটি অলৌকিকভাবে তাঁর আক্ষরিক মাংসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, বিষয়টা আসলে তা নয়। * যিশুর দেহ বিশ্বস্ত প্রেরিতদের সামনেই ছিল আর তাড়িশূন্য রুটিও তাদের সামনে ছিল, যা তারা গ্রহণ করেছিল। স্পষ্টতই, যিশু রূপকভাবে কথা বলছিলেন, যেমনটা তিনি অন্যান্য সময়েও বলেছিলেন।—যোহন ২:১৯-২১; ৪:১৩, ১৪; ১০:৭; ১৫:১.

১০. প্রভুর সান্ধ্যভোজে ব্যবহৃত রুটি কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে?

১০ প্রেরিতদের সামনে যে-রুটি ছিল এবং শীঘ্র তারা যেটা গ্রহণ করতে যাচ্ছিল, সেটার অর্থ ছিল যিশুর দেহ। কোন দেহ? একসময়, ঈশ্বরের দাসেরা মনে করত যে, যেহেতু যিশু রুটি ভেঙেছিলেন কিন্তু তাঁর একটা অস্থিও ভাঙা হয়নি, তাই রুটির অর্থ ছিল ‘খ্রীষ্টের দেহ’ অর্থাৎ অভিষিক্ত ব্যক্তিদের মণ্ডলী। (ইফি. ৪:১২; রোমীয় ১২:৪, ৫; ১ করি. ১০:১৬, ১৭; ১২:২৭) কিন্তু, পরবর্তী সময়ে বলা হয়, যুক্তি এবং শাস্ত্র আসলে ইঙ্গিত দেয় যে, রুটি যিশুর মানব দেহকে চিত্রিত করে, যা তাঁর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। যিশু ‘মাংসে দুঃখভোগ করিয়াছিলেন,’ এমনকী তাঁকে বিদ্ধ করা হয়েছিল। তাই, প্রভুর সান্ধ্যভোজের সময় রুটি সেই আক্ষরিক দেহকে চিত্রিত করে, যে-দেহে যিশু ‘আমাদের পাপভার তুলিয়া লইয়াছিলেন।’—১ পিতর ২:২১-২৪; ৪:১; যোহন ১৯:৩৩-৩৬; ইব্রীয় ১০:৫-৭.

১১, ১২. (ক) দ্রাক্ষারস সম্বন্ধে যিশু কী বলেছিলেন? (খ) প্রভুর সান্ধ্যভোজে ব্যবহৃত দ্রাক্ষারস কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে?

১১ এটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, সেই সময় যিশু দ্রাক্ষারস সম্বন্ধে কী বলেছিলেন। আমরা পড়ি: “সেই প্রকারে তিনি ভোজনের পর পানপাত্রও লইয়া কহিলেন, ‘এই পানপাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম’।” (১ করি. ১১:২৫) যিশু যে-পানপাত্র হাতে নিয়েছিলেন, সেটা কী নতুন চুক্তি ছিল? না, “পানপাত্র” শব্দটা এর ভিতরে যা ছিল, সেটাকে—দ্রাক্ষারসকে—নির্দেশ করেছিল। দ্রাক্ষারসের অর্থ কী ছিল অথবা এটা কোন বিষয়কে চিত্রিত করে বলে যিশু বুঝিয়েছিলেন? তাঁর পাতিত রক্ত।

১২ মার্কের সুসমাচারে আমরা যিশুর এই কথাগুলো পাই: “ইহা আমার রক্ত, নূতন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য পাতিত হয়।” (মার্ক ১৪:২৪) হ্যাঁ, যিশুর রক্ত “অনেকের জন্য, পাপমোচনের নিমিত্ত, পাতিত” হয়েছিল। (মথি ২৬:২৮) তাই, লাল দ্রাক্ষারস উপযুক্তভাবেই যিশুর আক্ষরিক রক্তকে চিত্রিত করে। সেই রক্তের মাধ্যমে আমরা মুক্তি লাভ করতে অর্থাৎ ‘অপরাধ সকলের মোচন পাইতে’ পারি।—পড়ুন, ইফিষীয় ১:৭.

খ্রিস্টের মৃত্যু দিবস উদ্‌যাপন করা

১৩. খ্রিস্টের মৃত্যুবার্ষিকী কীভাবে উদ্‌যাপন করা হয়, তা বর্ণনা করুন।

১৩ আপনি যদি প্রথম বারের মতো যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে স্মরণার্থে যোগ দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি কী আশা করতে পারেন? সেই সমাবেশ হয়তো এক চমৎকার এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশে হবে, যেখানে সকলে স্বচ্ছন্দে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে। সেখানে হয়তো সামান্য ফুলের ব্যবস্থা থাকতে পারে, তবে সেখানে আপনি জমকালো সাজসজ্জা অথবা কোনো পার্টির মতো পরিবেশ দেখতে পাবেন না। সেই উপলক্ষ্য সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, তা একজন যোগ্য প্রাচীন স্পষ্টভাবে এবং মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে তুলে ধরবেন। তিনি আমাদের সকলকে খ্রিস্ট আমাদের জন্য যা করেছেন, সেটা উপলব্ধি করতে সাহায্য করবেন। খ্রিস্ট মুক্তির মূল্য জোগাতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন, যাতে আমরা বেঁচে থাকতে পারি। (পড়ুন, রোমীয় ৫:৮-১০.) বক্তা দুটো সুনির্দিষ্ট আশা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করবেন, যে-বিষয়ে বাইবেলে খ্রিস্টানদের জন্য বলা আছে।

১৪. স্মরণার্থের বক্তৃতার সময় কোন কোন আশা নিয়ে আলোচনা করা হবে?

১৪ একটা আশা হল, স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে রাজত্ব করা, যে-আশা তুলনামূলকভাবে অল্পসংখ্যক খ্রিস্টের অনুসারী পোষণ করে থাকে, যাদের মধ্যে বিশ্বস্ত প্রেরিতরাও রয়েছে। (লূক ১২:৩২; ২২:১৯, ২০; প্রকা. ১৪:১) আরেকটা আশা হল, অধিকাংশ খ্রিস্টানের জন্য, যারা আমাদের সময়ে অনুগতভাবে ঈশ্বরের সেবা করছে। তাদের এক পুনর্স্থাপিত পৃথিবীতে চিরকাল বাস করার প্রত্যাশা রয়েছে। এরপর স্বর্গের মতো পৃথিবীতেও ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ হবে, যে-বিষয়টার জন্য খ্রিস্টানরা দীর্ঘসময় ধরে প্রার্থনা করে আসছে। (মথি ৬:১০) আর শাস্ত্র সেই অপূর্ব অবস্থা সম্বন্ধে চমৎকার ইঙ্গিত দেয়, যা তারা অনন্তকাল ভোগ করতে পারবে।—যিশা. ১১:৬-৯; ৩৫:৫, ৬; ৬৫:২১-২৩.

১৫, ১৬. প্রভুর সান্ধ্যভোজের সময় রুটি নিয়ে কী করা হয়?

১৫ সেই আলোচনার শেষের দিকে বক্তা ইঙ্গিত দেবেন যে, যিশু তাঁর অনুসারীদের যা করতে বলেছিলেন, তা করার সময় হয়েছে। ওপরে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে দুটো প্রতীক অর্থাৎ রুটি এবং লাল দ্রাক্ষারস ব্যবহার করা হবে। এগুলো হয়তো বক্তার কাছেই একটা টেবিলে রাখা হবে। এরপর তিনি এই উপলক্ষ্য প্রবর্তন করার সময় যিশু যা বলেছিলেন এবং করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ যা বর্ণনা করে, সেটার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করাবেন। উদাহরণ স্বরূপ, মথির বিবরণে আমরা পড়ি: “যীশু রুটী লইয়া আশীর্ব্বাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন, এবং শিষ্যদিগকে দিলেন, আর কহিলেন, লও, ভোজন কর, ইহা আমার শরীর।” (মথি ২৬:২৬) যিশু সেই তাড়িশূন্য রুটি ভেঙেছিলেন, যাতে তিনি সেগুলো তাঁর দু-পাশে বসা প্রেরিতদের সামনে দিয়ে ঘোরাতে পারেন। ১৪ এপ্রিল সভাতে আপনি এইরকম কিছু তাড়িশূন্য রুটি দেখতে পাবেন, যেগুলো ইতিমধ্যেই ভেঙে কয়েকটা প্লেটে রাখা হয়েছে।

১৬ যথেষ্ট প্লেট ব্যবহার করা হবে, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সেগুলো উপস্থিত সকলের সামনে দিয়ে ঘোরানো যেতে পারে। এটা কোনো বিরাট আচারঅনুষ্ঠানের মতো হবে না। এক সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা করার পর প্লেটগুলো সুসংগঠিতভাবে, স্থানীয়ভাবে ব্যবহারিক বলে মনে হয় এমনভাবে ঘোরানো হবে। অল্পসংখ্যক ব্যক্তি সেই রুটি গ্রহণ করবে (অথবা হয়তো কেউই করবে না), যেমনটা ২০১৩ সালের এই অনুষ্ঠানে রুটি ঘোরানোর সময় অধিকাংশ মণ্ডলীতেই হয়েছিল।

১৭. স্মরণার্থের দিন দ্রাক্ষারস সম্বন্ধে যিশুর নির্দেশনা কীভাবে অনুসরণ করা হয়?

১৭ এরপর, সেই বিষয়ের ওপর মনোযোগ দেওয়া হবে, যে-সম্বন্ধে মথি আরও বলেছিলেন: “[যিশু] পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদপূর্ব্বক তাঁহাদিগকে দিয়া কহিলেন, তোমরা সকলে ইহা হইতে পান কর; কারণ ইহা আমার রক্ত, নূতন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য, পাপমোচনের নিমিত্ত, পাতিত হয়।” (মথি ২৬:২৭, ২৮) এই আদর্শ অনুসরণ করে আরেক বার প্রার্থনা করা হবে এবং এরপর লাল দ্রাক্ষারসের ‘পানপাত্রগুলো’ উপস্থিত সকলের সামনে দিয়ে ঘোরানো হবে।

১৮. প্রতীকগুলো যদি অল্পসংখ্যক ব্যক্তি গ্রহণ করে বা কেউই না করে, তার পরও কেন উপস্থিত থাকা গুরুত্বপূর্ণ?

১৮ প্রতীকগুলো তাদের সামনে দিয়ে ঘোরানোর সময় উপস্থিত অধিকাংশ ব্যক্তিই সম্মানের সঙ্গে সেগুলো গ্রহণ করবে না কারণ যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, কেবলমাত্র যারা তাঁর স্বর্গীয় রাজ্যে তাঁর সঙ্গে শাসন করবে, তারাই এগুলো গ্রহণ করবে। (পড়ুন, লূক ২২:২৮-৩০; ২ তীম. ৪:১৮) অন্যান্য সকলে সম্মাননীয় দর্শক হিসেবে উপস্থিত থাকবে। তা সত্ত্বেও, প্রভুর সান্ধ্যভোজে উপস্থিত থাকা গুরুত্বপূর্ণ কারণ সেখানে উপস্থিত থাকা দেখাবে যে, যিশুর বলিদানকে তারা কতটা উচ্চমূল্য দিয়ে থাকে। স্মরণার্থের দিন তারা সেই আশীর্বাদগুলো নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে চিন্তা করতে পারে, যেগুলো যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে তারা লাভ করতে পারে। তাদের সেই ‘বিস্তর লোকের’ অংশ হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে, যারা আসন্ন ‘মহাক্লেশ’ থেকে রক্ষা পাবে। তারা হল সেই উপাসক, যারা “মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়াছে, ও শুক্লবর্ণ করিয়াছে।”—প্রকা. ৭:৯, ১৪-১৭.

১৯. প্রভুর সান্ধ্যভোজের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার এবং তা থেকে উপকার লাভ করার জন্য আপনি কী করতে পারেন?

১৯ সারা পৃথিবীর যিহোবার সাক্ষিরা এই বিশেষ সভার জন্য প্রস্তুতি নেয়। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই, আমরা যত লোককে সম্ভব উপস্থিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর কাজে অংশ নেব। এ ছাড়া, স্মরণার্থের কয়েক দিন আগে থেকে আমাদের মধ্যে অধিকাংশই, ৩৩ খ্রিস্টাব্দের সেই একই তারিখে যিশু যা করেছিলেন এবং যা ঘটেছিল, সেই সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ পাঠ করব। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে এমনভাবে সংগঠিত করব, যাতে আমরা নিশ্চিতভাবেই উপস্থিত থাকতে পারি। শুরুর গান এবং প্রার্থনার আগেই উপস্থিত থাকা উত্তম, যাতে আমরা অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাতে এবং এরপর পুরো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারি। আমরা সকলে, মণ্ডলীর সদস্যরা এবং অতিথিরা, বাইবেলে উল্লেখিত বিষয়বস্তু অনুসরণ করা থেকে প্রকৃত উপকার লাভ করব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, স্মরণার্থে আমাদের উপস্থিতি যিশুর বলিদানের প্রতি আমাদের আন্তরিক উপলব্ধিকে ও সেইসঙ্গে তাঁর এই আজ্ঞার প্রতি আমাদের বাধ্যতা প্রকাশ করবে: “আমার স্মরণার্থে ইহা করিও।”—১ করি. ১১:২৪.

^ জার্মান পণ্ডিত হাইনরিখ্‌ মাইয়ার বলেন: “যেহেতু যিশুর দেহ তখনও অক্ষত (তখনও জীবিত ছিল) এবং তাঁর রক্ত তখনও পাতিত হয়নি, তাই অতিথিদের [প্রেরিতদের] মধ্যে কেউই এইরকমটা ধরে নিতে পারে না . . . যে, বাস্তবিকপক্ষেই তারা প্রভুর নিজ দেহ এবং রক্ত ভোজন ও পান করছিল, [আর] যিশু নিজেও এইরকম চাননি যে, তাঁর সহজ কথাগুলোকে এমন অর্থে বোঝা হোক, যেটা সম্বন্ধে সেই সময় তারা একমত হতো না।”