সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“এই দিন তোমাদের স্মরণীয় হইবে”

“এই দিন তোমাদের স্মরণীয় হইবে”

“এই দিন তোমাদের স্মরণীয় হইবে, এবং তোমরা এই দিনকে সদাপ্রভুর উৎসব বলিয়া পালন করিবে।”—যাত্রা. ১২:১৪.

১, ২. কোন বার্ষিকী সমস্ত খ্রিস্টানের কাছে বিশেষ আগ্রহের বিষয় হওয়া উচিত এবং কেন?

 আপনি যখন কোনো বার্ষিকী সম্বন্ধে চিন্তা করেন, তখন কোন বার্ষিকীর কথা সহজেই আপনার মনে আসে? “আমার বিবাহবার্ষিকী,” একজন বিবাহিত ব্যক্তি হয়তো বলতে পারেন। অন্যদের জন্য এটা হতে পারে, ব্যাপকভাবে পালিত কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার তারিখ, যেমন যে-দিন তাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু, আপনি কি এমন একটা জাতীয় বার্ষিকী সম্বন্ধে জানেন, যা ৩,৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে উদ্‌যাপিত হয়ে আসছে?

এইরকম একটা উপলক্ষ্য রয়েছে আর সেটা হল নিস্তারপর্ব। এটা হল মিশরের দাসত্ব থেকে প্রাচীন ইস্রায়েলের মুক্তির দিন। এই উপলক্ষ্য আপনার কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। কেন? কারণ এটা আপনার জীবনের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কিছু দিকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ‘তবে,’ আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন, ‘যদিও যিহুদিরা নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করত কিন্তু আমি তো যিহুদি নই। আমার কেন সেই বার্ষিকীর প্রতি আগ্রহী হওয়া উচিত?’ এর উত্তর এই জোরালো বিবৃতি থেকে পাওয়া যেতে পারে: “আমাদের নিস্তারপর্ব্বীয় মেষশাবক বলীকৃত হইয়াছেন, তিনি খ্রীষ্ট।” (১ করি. ৫:৭) এই সত্যের অর্থ বোঝার জন্য আমাদের যিহুদি নিস্তারপর্ব সম্বন্ধে জানতে এবং সেটা এমন এক আজ্ঞার আলোকে বিবেচনা করতে হবে, যা সমস্ত খ্রিস্টানের প্রতি দেওয়া হয়েছিল।

নিস্তারপর্ব—কেন?

৩, ৪. প্রথম নিস্তারপর্বের পিছনের ঘটনা কী?

সারা পৃথিবীর কোটি কোটি লোক, যারা যিহুদি নয়, তাদের প্রথম নিস্তারপর্বের পিছনের ঘটনা সম্বন্ধে কিছুটা জ্ঞান রয়েছে। তারা হয়তো এই সম্বন্ধে বাইবেলের যাত্রাপুস্তক বইয়ে পড়েছে, কারো কাছ থেকে গল্প শুনেছে অথবা এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা কোনো চলচ্চিত্র দেখেছে।

ইস্রায়েলীয়রা যখন বহু বছর ধরে মিশরে দাস হিসেবে ছিল, তখন যিহোবা মোশি এবং তার ভাই হারোণকে এই কথা বলার জন্য ফরৌণের কাছে পাঠিয়েছিলেন, যেন তিনি তাঁর লোকেদের মুক্ত করে দেন। সেই উদ্ধত মিশরীয় শাসক ইস্রায়েলীয়দের ছেড়ে দেননি, তাই যিহোবা সেই দেশের ওপর ধারাবাহিকভাবে মারাত্মক আঘাত নিয়ে এসেছিলেন। পরিশেষে, ঈশ্বর দশম আঘাত নিয়ে এসেছিলেন আর তা হল মিশরের প্রথমজাতদের মৃত্যু, যা ফরৌণকে ইস্রায়েলীয়দের ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছিল।—যাত্রা. ১:১১; ৩:৯, ১০; ৫:১, ২; ১১:১, ৫.

৫. মুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে ইস্রায়েলীয়দের কী করতে হয়েছিল? ( শিরোনামের পাশে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

কিন্তু, মুক্ত হওয়ার আগে ইস্রায়েলীয়দের কী করতে হয়েছিল? সময়টা ছিল ১৫১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আবীব মাসের বসন্তকাল, যে-মাসকে পরে নিশান মাস হিসেবে অভিহিত করা হয়। * ঈশ্বর বলেছিলেন যে, সেই মাসের দশম দিনে ইস্রায়েলীয়দের, নিশান মাসের ১৪ তারিখে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে। সেই দিন শুরু হয়েছিল সূর্যাস্তের পর, কারণ ইব্রীয় দিন সাধারণত এক সূর্যাস্ত থেকে আরেক সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্থায়ী হতো। উদাহরণ স্বরূপ, বৃহস্পতিবার সূর্যাস্ত থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত ছিল এক দিন। নিশান মাসের ১৪ তারিখে, প্রত্যেক পরিবারকে একটা পুংমেষশাবক (অথবা ছাগ) বধ করতে এবং এর কিছুটা রক্ত নিয়ে দরজার দুই বাজুতে ও কপালীতে লেপন করতে হয়েছিল। (যাত্রা. ১২:৩-৭, ২২, ২৩) সেই পরিবারকে তাড়িশূন্য রুটি ও শাকের সঙ্গে ঝলসানো মেষ খেতে হয়েছিল। ঈশ্বরের দূত সেই দেশের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল এবং মিশরের প্রথমজাতদের হত্যা করেছিল কিন্তু বাধ্য ইস্রায়েলীয়দের সুরক্ষা করা হয়েছিল আর এরপর তারা মুক্ত হয়ে চলে যেতে পেরেছিল।—যাত্রা. ১২:৮-১৩, ২৯-৩২.

৬. পরবর্তী সময়ে ঈশ্বরের লোকেদের নিস্তারপর্বকে কীভাবে দেখতে হয়েছিল?

নিস্তারপর্বের সঙ্গে যুক্ত ঘটনা ছিল এটাই আর ইস্রায়েলীয়দের পরবর্তী বছরগুলোতে তাদের এই মুক্ত হওয়ার বিষয়টাকে স্মরণ করতে হতো। ঈশ্বর তাদেরকে বলেছিলেন: “এই দিন তোমাদের স্মরণীয় হইবে, এবং তোমরা এই দিনকে সদাপ্রভুর উৎসব বলিয়া পালন করিবে; পুরুষানুক্রমে চিরস্থায়ী বিধিমতে এই উৎসব পালন করিবে।” ১৪ তারিখে নিস্তারপর্ব পালনের পর, সাত দিনব্যাপী উৎসব পালন করা হতো। ১৪ নিশান ছিল আসল নিস্তারপর্বের দিন কিন্তু আট দিনব্যাপী পালিত পুরো উৎসবকেই নিস্তারপর্ব বলা যেতে পারে। (যাত্রা. ১২:১৪-১৭; লূক ২২:১; যোহন ১৮:২৮; ১৯:১৪) নিস্তারপর্ব ছিল এমন একটা উৎসব, যে-উৎসব ইব্রীয়দের প্রতি বছর পালন করতে হতো।—২ বংশা. ৮:১৩.

৭. শেষ নিস্তারপর্বের সময় যিশু কী প্রবর্তন করেছিলেন?

যিশু ও তাঁর প্রেরিতরা যিহুদি ছিল এবং মোশির ব্যবস্থা মেনে চলত আর তাই তারা নিস্তারপর্ব পালন করত। (মথি ২৬:১৭-১৯) শেষ বার তারা যখন তা পালন করেছিল, তখন যিশু একটা নতুন অনুষ্ঠান প্রবর্তন করেছিলেন, যা এরপর থেকে তাঁর অনুসারীদের প্রতি বছর পালন করতে হবে আর সেটা হল প্রভুর সান্ধ্যভোজ। কিন্তু, কোন দিন তাদের তা পালন করতে হবে?

প্রভুর সান্ধ্যভোজ—কোন দিন?

৮. নিস্তারপর্ব এবং প্রভুর সান্ধ্যভোজ সম্বন্ধে বিবেচনা করার পর, কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়?

যেহেতু যিশু শেষ নিস্তারপর্বের ঠিক পরেই প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রবর্তন করেছিলেন, তাই এই নতুন অনুষ্ঠান নিস্তারপর্বের দিনই করা হয়েছিল। কিন্তু, আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন যে, কিছু আধুনিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যিহুদি নিস্তারপর্বের তারিখের সঙ্গে হয়তো আমরা যে-দিন খ্রিস্টের মৃত্যু দিবস উদ্‌যাপন করি, সেই তারিখের মধ্যে এক দিন বা এরও বেশি দিনের পার্থক্য রয়েছে। কেন এই পার্থক্য? এর উত্তর ইস্রায়েলীয়দের প্রতি দেওয়া ঈশ্বরের আজ্ঞার সঙ্গে কিছুটা জড়িত। ‘ইস্রায়েল-মণ্ডলীর সমস্ত সমাজকে’ মেষ ‘হনন করিবার’ কথা বলার পর, মোশি নির্দিষ্টভাবে বলেন যে, ১৪ নিশান কখন তা করতে হবে।—পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ১২:৫, ৬.

৯. যাত্রাপুস্তক ১২:৬ পদ অনুযায়ী, কখন নিস্তারপর্বের মেষ বধ করতে হতো?

যাত্রাপুস্তক ১২:৬ পদ অনুযায়ী, সেই মেষ “সন্ধ্যাকালে” বধ করতে হতো। যিহুদি তানাখ-সহ কিছু বাইবেল সংস্করণ এই অভিব্যক্তিকে “গোধূলি” হিসেবে অনুবাদ করেছে। তাই, মেষ বধ করতে হতো সূর্যাস্তের পর, যখন দিনের শেষ আলোটুকু থাকত অর্থাৎ নিশান মাসের ১৪ তারিখ দিন শুরু হওয়ার প্রথম দিকে।

১০. কিছু ব্যক্তির মতানুযায়ী কখন মেষ বধ করা হতো কিন্তু কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়?

১০ পরবর্তী সময়ে কিছু যিহুদি এইরকম ধারণা করেছিল যে, মন্দিরে নিয়ে আসা সমস্ত মেষ বধ করতে কয়েক ঘন্টা লেগে যেত। তাই, মনে করা হতো যে, যাত্রাপুস্তক ১২:৬ পদ নিশান মাসের ১৪ তারিখে দিনের শেষ সময়কে অর্থাৎ সূর্য অস্ত যাওয়া শুরু হতো এমন সময় (বিকেলবেলা) থেকে সূর্যাস্তের মাধ্যমে দিন শেষ হওয়ার মধ্যবর্তী সময়কে উল্লেখ করে। কিন্তু, যদি তা-ই হয়, তাহলে কখন ভোজ খাওয়া হতো? প্রাচীন যিহুদি ধর্মে বিশেষজ্ঞ একজন অধ্যাপক যোনাথন ক্লাওয়ান্স বলেছিলেন: “সূর্য অস্ত যাওয়ার মাধ্যমে একটা নতুন দিন শুরু হতো, তাই বলি উৎসর্গ করা হতো ১৪ তারিখে কিন্তু নিস্তারপর্বের শুরু এবং ভোজ হতো আসলে ১৫ তারিখে, যদিও এই ধারাবাহিক তারিখ সম্বন্ধে যাত্রাপুস্তক বইয়ে নির্দিষ্ট করে বলা নেই।” তিনি আরও লিখেছিলেন: “রব্বীদের বইপুস্তিকা . . . আমাদের এমনকী জানায় না যে,” ৭০ খ্রিস্টাব্দে “যিরূশালেম ধ্বংস হওয়ার আগে কীভাবে সেডার [নিস্তারপর্বের ভোজ] পালন করা হতো।”—বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।

১১. (ক) ৩৩ খ্রিস্টাব্দে নিস্তারপর্বের দিন যিশুর প্রতি কী করা হয়েছিল? (খ) কেন ৩৩ খ্রিস্টাব্দের নিশান মাসের ১৫ তারিখকে ‘মহা’ বিশ্রামবার বলা হয়? (পাদটীকা দেখুন।)

১১ তাই, এটা জিজ্ঞেস করা আমাদের জন্য যুক্তিযুক্ত যে, ৩৩ খ্রিস্টাব্দের নিস্তারপর্ব সম্বন্ধে কী বলা যায়? আসলে, নিশান মাসের ১৩ তারিখে যখন ‘নিস্তারপর্ব্বের মেষশাবক বলিদান করিবার’ দিন এগিয়ে এসেছিল, তখন খ্রিস্ট পিতর ও যোহনকে বলেছিলেন: “তোমরা, গিয়া আমাদের জন্য নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত কর, আমরা ভোজন করিব।” (লূক ২২:৭, ৮) “পরে” সূর্যাস্তের পর যখন নিশান মাসের ১৪ তারিখ শুরু হয়েছিল, তখন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা নিস্তারপর্বের ভোজের ‘সময় উপস্থিত হইয়াছিল।’ যিশু তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে সেই ভোজ খেয়েছিলেন এবং এরপর প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রবর্তন করেছিলেন। (লূক ২২:১৪, ১৫) সেই রাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার এবং বিচার করা হয়েছিল। যিশুকে ১৪ নিশান দুপুরের দিকে বিদ্ধ করা হয়েছিল এবং বিকেল বেলা তিনি মারা গিয়েছিলেন। (যোহন ১৯:১৪) তাই, ‘আমাদের নিস্তারপর্ব্বীয় মেষশাবক খ্রিস্ট’ সেই একই দিনে ‘বলীকৃত হইয়াছিলেন,’ যে-দিন নিস্তারপর্বের মেষ বধ করা হয়েছিল। (১ করি. ৫:৭; ১১:২৩; মথি ২৬:২) যখন সেই যিহুদি দিন শেষ হওয়ার সময় এগিয়ে এসেছিল, তখন যিশুকে কবর দেওয়া হয়েছিল—১৫ নিশান শুরু হওয়ার আগে। *লেবীয়. ২৩:৫-৭; লূক ২৩:৫৪.

এক স্মরণীয় দিন, যা আপনার জন্য অর্থ রাখে

১২, ১৩. যিহুদি সন্তানরা কীভাবে নিস্তারপর্ব পালনের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত ছিল?

১২ কিন্তু, আসুন আমরা মিশরের সেই অনুষ্ঠানে ফিরে যাই। মোশি বলেছিলেন যে, ভবিষ্যতে ঈশ্বরের লোকেদের নিস্তারপর্ব পালন করতে হবে আর তা ‘যুগানুক্রমের’ এক বিধি। বার্ষিক উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে, সন্তানরা তাদের বাবা-মাকে সেই উপলক্ষ্যের অর্থ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করবে। (পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ১২:২৪-২৭; দ্বিতীয়. ৬:২০-২৩) তাই, এমনকী সন্তানদের জন্যও নিস্তারপর্ব এক “স্মরণীয়” দিন হিসেবে অর্থ রাখত।—যাত্রা. ১২:১৪.

১৩ নতুন প্রজন্ম বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলোর ওপর জোর দেওয়া হবে, যা বাবারা তাদের সন্তানদের শেখাবে। এর মধ্যে একটা ছিল, যিহোবা তাঁর উপাসকদের সুরক্ষা করতে পারেন। সন্তানরা শিখতে পেরেছিল যে, তিনি কোনো অস্পষ্ট, নৈর্ব্যক্তিক দেবতা নন। যিহোবা এক বাস্তব এবং জীবন্ত ঈশ্বর, যিনি তাঁর লোকেদের প্রতি আগ্রহী এবং যিনি তাদের পক্ষে কাজ করেন। তিনি সেই সময় এর প্রমাণ দিয়েছিলেন, যখন তিনি ‘মিস্রীয়দিগকে আঘাত করিবার’ সময় ইস্রায়েলীয় প্রথমজাতদের সুরক্ষা করেছিলেন। তিনি প্রথমজাতদের জীবিত রেখেছিলেন।

১৪. খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের কোন বিষয়টা উপলব্ধি করতে সাহায্য করার জন্য নিস্তারপর্বের ঘটনা ব্যবহার করতে পারে?

১৪ খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা প্রতি বছর তাদের ছেলে-মেয়েদের কাছে নিস্তারপর্বের অর্থ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে না। কিন্তু, আপনারা কি আপনাদের সন্তানদের একই শিক্ষা প্রদান করেন—যে, ঈশ্বর তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করেন? আপনারা কি তাদের কাছে এই দৃঢ়প্রত্যয় প্রকাশ করেন যে, যিহোবা এখনও তাঁর লোকেদের জন্য এক বাস্তব সুরক্ষাকারী হিসেবে কাজ করেন? (গীত. ২৭:১১; যিশা. ১২:২) বিষয়টা কি আপনারা এক নিষ্প্রাণ বক্তৃতা হিসেবে তুলে না ধরে বরং আপনাদের এবং সন্তানদের মধ্যে এক উপভোগ্য আলোচনা হিসেবে তুলে ধরেন? আপনাদের পরিবারের আধ্যাত্মিকতাকে আরও বৃদ্ধি করার জন্য এই শিক্ষাটা অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা করুন।

১৫, ১৬. যিহোবা সম্বন্ধে কোন বিষয়টা তুলে ধরার জন্য নিস্তারপর্ব এবং যাত্রার বিবরণ ব্যবহার করা যেতে পারে?

১৫ নিস্তারপর্ব থেকে কেবল এই শিক্ষাই লাভ করা যায় না যে, যিহোবার তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে। তিনি তাদের উদ্ধারও করেছিলেন, ‘তাহাদিগকে মিসর হইতে বাহির করিয়া’ এনেছিলেন। এর অন্তর্ভুক্ত কী, তা চিন্তা করুন। তাদেরকে মেঘ ও অগ্নিস্তম্ভ দ্বারা পরিচালনা দেওয়া হয়েছিল। সূফসাগর যখন ডান দিকে এবং বাম দিকে উঁচু দেওয়ালের মতো দাঁড়িয়ে পড়েছিল, তখন তারা সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে হেঁটে পার হয়েছিল। নিরাপদে পার হওয়ার পর তারা সেই জল মিশরীয়দের ওপর ভেঙে পড়তে দেখেছিল। এরপর উদ্ধারপ্রাপ্ত ইস্রায়েলীয়রা এই গীত গেয়েছিল: “আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান করিব; . . . তিনি অশ্ব ও তদারোহীকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করিলেন। সদাপ্রভু আমার বল ও গান, তিনি আমার পরিত্রাণ হইলেন।”—যাত্রা. ১৩:১৪, ২১, ২২; ১৫:১, ২; গীত. ১৩৬:১১-১৫.

১৬ আপনাদের যদি সন্তান থাকে, তাহলে আপনারা কি তাদেরকে একজন উদ্ধারকর্তা হিসেবে যিহোবার ওপর নির্ভর করার জন্য সাহায্য করছেন? তারা কি আপনাদের মধ্যে অর্থাৎ আপনাদের কথাবার্তায় এবং সিদ্ধান্তে তা দেখতে পায়? যাত্রাপুস্তক ১২-১৫ অধ্যায়ের যে-ঘটনা আমরা পাঠ করলাম, তা নিশ্চিতভাবেই আপনারা আপনাদের একটা পারিবারিক উপাসনার আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন এবং কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করেছিলেন, সেই বিষয়ের ওপর জোর দিতে পারেন। অন্যান্য সময়ে আপনারা হয়তো প্রেরিত ৭:৩০-৩৬ পদ অথবা দানিয়েল ৩:১৬-১৮, ২৬-২৮ পদ বিবেচনা করার সময় সেই বিষয়টা তুলে ধরতে পারেন। হ্যাঁ, যুবক-বৃদ্ধ সকলেরই এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে, যিহোবা কেবল অতীতেই একজন উদ্ধারকর্তা ছিলেন না। মোশির দিনে তিনি যেমন তাঁর লোকেদের উদ্ধার করেছিলেন, ভবিষ্যতেও তিনি আমাদের উদ্ধার করবেন।—পড়ুন,  ১ থিষলনীকীয় ১:৯, ১০.

আমরা যা মনে রাখতে পারি

১৭, ১৮. প্রথম নিস্তারপর্বের সময় রক্তের ব্যবহার নিয়ে চিন্তা করলে আমাদের কোন বিষয়টা মনে আসা উচিত?

১৭ সত্য খ্রিস্টানরা যিহুদি নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করে না। সেই বার্ষিকী মোশির ব্যবস্থার অংশ ছিল এবং আমরা ব্যবস্থার অধীন নই। (রোমীয় ১০:৪; কল. ২:১৩-১৬) এর পরিবর্তে, আমরা আরেকটা উপলক্ষ্যকে, ঈশ্বরের পুত্রের মৃত্যুকে মূল্যবান বলে গণ্য করি। তবে, মিশরে প্রবর্তিত সেই নিস্তারপর্ব পালনের এমন অনেক দিক রয়েছে, যেগুলো আমাদের জন্য অর্থ রাখে।

১৮ দরজার দুই বাজুতে এবং কপালীতে লেপন করা মেষের রক্ত, জীবন রক্ষা করার একটা মাধ্যম ছিল। বর্তমানে, আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করি না—নিস্তারপর্ব যে-তারিখে পড়ে, সেই দিনেও না অথবা অন্য কোনো দিনেও না। কিন্তু আরও উত্তম এক বলিদান রয়েছে, যা চিরস্থায়ীভাবে জীবনকে রক্ষা করতে পারে। প্রেরিত পৌল ‘স্বর্গে লিখিত প্রথমজাতদের মণ্ডলী’ সম্বন্ধে লিখেছিলেন। সেই অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের জীবন রক্ষা করার মাধ্যম হল, “প্রোক্ষণের রক্ত” অর্থাৎ যিশুর রক্ত। (ইব্রীয় ১২:২৩, ২৪) যে-খ্রিস্টানরা চিরকাল পৃথিবীতে বাস করার আশা রাখে, তারাও রক্ষার জন্য সেই একই রক্তের ওপর নির্ভর করে। তাদের নিয়মিতভাবে নিজেদেরকে এই আশ্বাস সম্বন্ধে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত: “যাঁহাতে আমরা তাঁহার রক্ত দ্বারা মুক্তি, অর্থাৎ অপরাধ সকলের মোচন পাইয়াছি; ইহা তাঁহার সেই অনুগ্রহ-ধন অনুসারে হইয়াছে।”—ইফি. ১:৭.

১৯. নিস্তারপর্বে হত ব্যক্তির প্রতি যা করা হয়েছিল, তা কীভাবে ভবিষ্যদ্‌বাণীর প্রতি আমাদের আস্থাকে শক্তিশালী করতে পারে?

১৯ নিস্তারপর্বের ভোজের জন্য যখন মেষ বধ করা হয়েছিল, তখন ইস্রায়েলীয়রা সেই মেষের কোনো অস্থি ভাঙতে পারেনি। (যাত্রা. ১২:৪৬; গণনা. ৯:১১, ১২) “ঈশ্বরের মেষশাবক” সম্বন্ধে কী বলা যায়, যিনি মুক্তির মূল্য জুগিয়েছিলেন? (যোহন ১:২৯) তাঁকে দুই অপরাধীর মাঝখানে বিদ্ধ করা হয়েছিল। যিহুদিরা পীলাতকে বিদ্ধ ব্যক্তিদের অস্থি ভাঙার জন্য বলেছিল। এটা তাদের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করবে আর এর ফলে তাদেরকে নিশান মাসের ১৫ তারিখে অর্থাৎ যে-দিন দুটো বিশ্রামবার একসঙ্গে পড়েছিল, সেই দিন দণ্ডের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখতে হবে না। সৈন্যরা দুই বিদ্ধ অপরাধীর পা ভেঙে দিয়েছিল, “কিন্তু তাহারা যখন যীশুর নিকটে আসিয়া দেখিল যে, তিনি মরিয়া গিয়াছেন, তখন তাঁহার পা ভাঙ্গিল না।” (যোহন ১৯:৩১-৩৪) এটা নিস্তারপর্বের মেষের প্রতি যা করা হয়েছিল, সেটার সঙ্গে মিলে গিয়েছিল, তাই নিস্তারপর্বের মেষ সেই অর্থে ৩৩ খ্রিস্টাব্দে নিশান মাসের ১৪ তারিখে যা ঘটতে যাচ্ছিল, সেটার “ছায়াবিশিষ্ট” ছিল। (ইব্রীয় ১০:১) এ ছাড়া, যেভাবে বিষয়গুলো ঘটেছিল, তা গীতসংহিতা ৩৪:২০ পদের কথাগুলোর পরিপূর্ণতা স্বরূপ ছিল, যা ভবিষ্যদ্‌বাণীর প্রতি আমাদের আস্থাকে শক্তিশালী করে।

২০. নিস্তারপর্ব এবং প্রভুর সান্ধ্যভোজের মধ্যে কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে?

২০ কিন্তু, নিস্তারপর্ব এবং প্রভুর সান্ধ্যভোজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যগুলো দেখায় যে, যিহুদিদের যে-নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করতে হতো, তা খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থ হিসেবে যা করতে বলেছিলেন, সেটার পূর্বাভাস ছিল না। অতীতে মিশরে, ইস্রায়েলীয়রা মেষের মাংস ভোজন করেছিল, এর রক্ত নয়। এখানেই যিশু তাঁর শিষ্যদের যা করতে বলেছিলেন, সেটার সঙ্গে পার্থক্য রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, যারা “ঈশ্বরের রাজ্যে” রাজত্ব করবে, তাদেরকে তাঁর মাংস এবং রক্তের প্রতীক হিসেবে রুটি এবং দ্রাক্ষারস গ্রহণ করতে হবে। পরের প্রবন্ধে আমরা এই বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিত বিবেচনা করব।—মার্ক ১৪:২২-২৫.

২১. নিস্তারপর্ব সম্বন্ধে জানা কেন উপকারজনক?

২১ তবে, এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, নিস্তারপর্ব ইস্রায়েলের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণের এক গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্য ছিল এবং এটা আমাদের প্রত্যেকের জন্য বিভিন্ন ব্যবহারিক শিক্ষা জুগিয়ে থাকে। তাই, যদিও নিস্তারপর্ব খ্রিস্টানদের জন্য নয় বরং যিহুদিদের জন্য “স্মরণীয়” ছিল, তবুও খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের এই সম্বন্ধে জানা উচিত আর সেইসঙ্গে ‘ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপির’ অংশ হিসেবে এটা থেকে যে-স্পষ্ট শিক্ষাগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত।—২ তীম. ৩:১৬.

^ যদিও ইব্রীয় মাসের জন্য নিশান নামটা, নির্বাসন থেকে ফিরে আসা যিহুদিদের দ্বারা ব্যবহৃত হতো কিন্তু সহজভাবে বোঝার জন্য আমরা যিহুদি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাসকে নিশান মাস হিসেবে উল্লেখ করব।

^ সূর্যাস্তের পর নিশান মাসের ১৫ তারিখ শুরু হয় অর্থাৎ সেই বছর নিয়মিত সাপ্তাহিক বিশ্রামবার (শনিবার) এবং তাড়িশূন্য রুটির উৎসবের প্রথম দিন একই দিনে পড়ে। উৎসবের প্রথম দিনটা সবসময়ই বিশ্রামবার হিসেবে পালিত হতো, তা সেটা সপ্তাহের যে-দিনই পড়ুক না কেন। দুটো বিশ্রামবার একসঙ্গে পড়েছিল বলে সেটা ছিল ‘মহা’ বিশ্রামবার।—পড়ুন, যোহন ১৯:৩১, ৪২.