সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পারিবারিক উপাসনা​—⁠এটাকে কি আপনি আরও উপভোগ্য করে তুলতে পারেন?

পারিবারিক উপাসনা​—⁠এটাকে কি আপনি আরও উপভোগ্য করে তুলতে পারেন?

“পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যায় আমরা আলোচনায় এতটাই ডুবে যাই যে, আমি যদি সেই আলোচনা বন্ধ না করি, তাহলে তা প্রায়ই অনেক রাত পর্যন্ত চলে,” ব্রাজিলের একজন বাবা বলেন। জাপানের একটা পরিবারের একজন মস্তক বলেন, তার দশ বছরের ছেলের সময়ের প্রতি কোনো খেয়ালই থাকে না এবং সে আলোচনা চালিয়ে যেতে যায়। কেন? “সে এতটাই উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ে যে, এতে সে আনন্দ লাভ করে,” বাবা বলেন।

সব সন্তানই যে উচ্ছ্বাস অনুভব করে এমন নয় আর সত্যি বলতে কী কেউ কেউ হয়তো পারিবারিক উপাসনা উপভোগ করে না। কিন্তু কেন? টোগোর একজন বাবা এভাবে বলেন: “যিহোবাকে উপাসনা করার বিষয়টা কখনোই একঘেয়ে হওয়া উচিত নয়।” যদি তা-ই হয়, তাহলে পারিবারিক উপাসনা যেভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, এটা কি তারই প্রতিফলন? অনেক পরিবার দেখেছে যে, পারিবারিক উপাসনা যিশাইয় বইয়ে বিশ্রামবার সম্বন্ধে যেমন বলা হয়েছে, তেমনই “আমোদদায়ক” হতে পারে।—যিশা. ৫৮:১৩, ১৪.

খ্রিস্টান বাবারা উপলব্ধি করে যে, পারিবারিক উপাসনায় যদি আনন্দ পেতে হয়, তাহলে সেখানে এক আরামদায়ক পরিবেশ থাকা উচিত। রাল্ফ, যার তিন জন মেয়ে এবং এক জন ছেলে রয়েছে, তিনি বলেন, তাদের পারিবারিক উপাসনা অধ্যয়নের মতো না হয়ে বরং সাধারণ কথাবার্তার মতো হয়; সেখানে সকলে অংশগ্রহণ করে। এটা ঠিক যে, যে-বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাতে প্রত্যেকের আগ্রহ এবং মনোযোগ ধরে রাখা মাঝে মাঝে কঠিন হতে পারে। একজন মা স্বীকার করেন: “পারিবারিক উপাসনাকে আমি যেরকম চাই, সেইরকম উপভোগ্য করে তোলার মতো শক্তি আমার সবসময় থাকে না।” আপনি কি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাটিয়ে উঠতে পারেন?

নমনীয়তা এবং বৈচিত্র্য

“আমাদের নমনীয় হতে হবে,” জার্মানির দুই সন্তানের একজন বাবা বলেন। “আমাদের পরিবারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বৈচিত্র্য,” দুই সন্তানের মা ন্যাটালিয়া বলেন।  অনেক পরিবার তাদের পারিবারিক উপাসনাকে কয়েকটা অংশে ভাগ করে থাকে। “এটা অধ্যয়নকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে এবং পরিবারের সকলে এতে অংশ নেয়,” ব্রাজিলের কিশোরবয়সি দুই সন্তানের বাবা ক্ল্যাটন ব্যাখ্যা করেন। অধ্যয়নের সময় ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে, বাবা-মায়েরা প্রতিটা সন্তানের প্রয়োজনের প্রতি মনোযোগ দিতে পারে, বিশেষভাবে সন্তানদের বয়সের মধ্যে যদি যথেষ্ট পার্থক্য থাকে। বাবা-মায়েরা পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের প্রয়োজনের ওপর মনোযোগ দিতে এবং বিষয়বস্তু ও আলোচনার ধরন বাছাই করার ক্ষেত্রে নমনীয় হতে পারে।

বৈচিত্র্য নিয়ে আসার জন্য কিছু পরিবার কী করে থাকে? কিছু পরিবার যিহোবার উদ্দেশে গান গাওয়ার মাধ্যমে তাদের পারিবারিক উপাসনা শুরু করে। “এটা উত্তম পরিবেশ তৈরি করে এবং আলোচ্য বিষয়বস্তুর জন্য আমাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে,” মেক্সিকোর খয়ান বলেন। তার পরিবার, উপাসনার সন্ধ্যায় আলোচ্য কিছু বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল রেখে গান বাছাই করে থাকে।

শ্রীলঙ্কা

অনেক পরিবার একসঙ্গে বাইবেলের একটা অংশ পড়ে। বৈচিত্র্য নিয়ে আসার জন্য, পরিবারের বিভিন্ন সদস্য বাইবেলের কোনো ঘটনার বিভিন্ন চরিত্রের বিষয়বস্তু পড়ে থাকে। জাপানের একজন বাবা বলেন, তার কাছে “এভাবে পড়তে প্রথম প্রথম কিছুটা অস্বাভাবিক” লাগত। কিন্তু, তাদের বাবা-মাকে তাদের সঙ্গে কিছু উপভোগ করতে দেখে তার দুই ছেলে আনন্দিত হতো। কিছু পরিবার এমনকী বাইবেলের গল্পগুলো অভিনয় করে দেখায়। রজার নামে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ছেলের একজন বাবা বলেন, তাদের সন্তানদের “প্রায়ই বাইবেলের কোনো একটা ঘটনার এমন বিষয়গুলো চোখে পড়ে, যেগুলো বাবা-মা হিসেবে সাধারণত তাদের চোখে পড়ে না।”

দক্ষিণ আফ্রিকা

বৈচিত্র্য নিয়ে আসার আরেকটা উপায় হল, কোনো একটা প্রকল্প নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা, যেমন নোহের জাহাজের অথবা শলোমনের মন্দিরের একটা নমুনা তৈরি করা। এই ধরনের প্রকল্পের জন্য গবেষণা করার প্রয়োজন, যা রোমাঞ্চকর হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, এশিয়ার একটা পরিবারের বসার ঘরে পাঁচ বছর বয়সি একটা মেয়ে তার বাবা-মা ও ঠাকুরমার সঙ্গে প্রেরিত পৌলের মিশনারি যাত্রার ওপর ভিত্তি করে একটা বোর্ড গেমস্‌ তৈরি করেছে। অন্যান্য পরিবার যাত্রাপুস্তক বইয়ের বিভিন্ন ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বোর্ড গেমস্‌ তৈরি করেছে। বৈচিত্র্য “আমাদের পারিবারিক উপাসনা আর এমনকী আমাদের পরিবারকেও প্রাণবন্ত করে তুলেছে,” টোগোতে বসবাসরত ১৯ বছর বয়সি ডোনাল্ড বলে। আপনি কি এমন একটা প্রকল্পের বিষয়ে চিন্তা করতে পারেন, যা আপনার পারিবারিক উপাসনাকে এমনকী আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলবে?

যুক্তরাষ্ট্র

প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য

যদিও বৈচিত্র্য এবং নমনীয়তা পারিবারিক উপাসনাকে আগ্রহজনক করে তোলে, তবে এটাকে সত্যিই কার্যকরী করে তোলার জন্য সকলের প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। মাঝে মাঝে অল্পবয়সি সন্তানরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাই বাবাদের ইতিমধ্যেই বাছাইকৃত বিষয়বস্তু নিয়ে আগে থেকে চিন্তা করতে এবং ভালোমতো প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সময় করে নিতে হবে। একজন বাবা বলেন, “আমি যখন প্রস্তুত থাকি, তখন প্রত্যেকে আরও বেশি অর্থপূর্ণ অধ্যয়ন উপভোগ করে।” জার্মানির একজন বাবা পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, তা আগে থেকে তার পরিবারকে জানিয়ে দেন। বেনিনে বসবাসরত ছয় সন্তানের একজন বাবা যখন পারিবারিক উপাসনার অংশ হিসেবে বাইবেলভিত্তিক একটা ডিভিডি দেখার পরিকল্পনা করেন, তখন তিনি আগে থেকেই কিছু প্রশ্ন দিয়ে দেন। সত্যিই, প্রস্তুতি নেওয়া আমাদের পারিবারিক উপাসনার গুণগত মানের ওপর অনেক প্রভাব ফেলে।

পরিবারের সদস্যরা যখন আগে থেকেই জানতে পারে যে, কোন বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হবে, তখন তারা সপ্তাহের দিনগুলোতে তা নিয়ে কথা বলতে এবং এভাবে তাদের উদ্যম গড়ে তুলতে পারে। আর প্রত্যেকের যদি একটা কার্যভার থাকে, তাহলে প্রত্যেকে উপলব্ধি করবে যে, এটা তার পারিবারিক উপাসনা।

নিয়মিতভাবে করার চেষ্টা করুন

বেশিরভাগ পরিবারই নিয়মিতভাবে তাদের পারিবারিক উপাসনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়ে থাকে।

অনেক বাবাকে কেবল পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর জন্যই দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ, মেক্সিকোর একজন বাবা সকাল ছয়টা সময় ঘর থেকে বের হন এবং বাড়ি ফিরতে ফিরতে তার রাত আটটা বেজে যায়। এ ছাড়া, মাঝে মাঝে হয়তো অন্য আরেকটা আধ্যাত্মিক কার্যক্রমের জন্য পারিবারিক উপাসনার সময় রদবদল করতে হয়।

তা সত্ত্বেও, নিয়মিতভাবে পারিবারিক উপাসনা চালিয়ে যাওয়া জন্য আমাদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। টোগোতে বসবাসরত এগারো বছর বয়সি লোয়িস তার পরিবারের দৃঢ়সংকল্প সম্বন্ধে এই কথা বলে: “দিনের বেলা কোনো কাজের কারণে যদিও আমাদেরকে পারিবারিক উপাসনা মাঝে মাঝে দেরিতে শুরু করতে হয়, তবুও আমরা কখনো পারিবারিক উপাসনা করা বাদ দিই না।” আপনি বুঝতে পারছেন যে, কেন কিছু পরিবার সপ্তাহের শুরুর দিকেই পারিবারিক উপাসনা করার জন্য তালিকা করে রাখে। যদি কোনো অপ্রত্যাশিত বিষয় ঘটে, তাহলে তারা সেই সপ্তাহের অন্য কোনো দিন পারিবারিক উপাসনা করার জন্য তালিকা করতে পারে।

“পারিবারিক উপাসনা” নামটাই প্রকাশ করে যে, এটা যিহোবার প্রতি আপনার উপাসনার একটা অংশ। আপনার পরিবারের সকল সদস্য যেন প্রতি সপ্তাহে যিহোবার উদ্দেশে ‘আপন আপন ওষ্ঠাধরের বৃষ’ দান করে। (হোশেয় ১৪:২) আর এটা যেন পরিবারের প্রত্যেকের জন্য এক আনন্দপূর্ণ সময় হয়ে ওঠে, “কেননা সদাপ্রভুতে যে আনন্দ, তাহাই তোমাদের শক্তি।”—নহি. ৮:৯, ১০.