সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে”

“তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে”

“তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।”—মথি ২২:৩৭.

১. কেন ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের মধ্যে পরস্পরের প্রতি প্রেম বৃদ্ধি পেয়েছিল?

যিহোবার পুত্র যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন: “আমি পিতাকে প্রেম করি।” (যোহন ১৪:৩১) আর যিশু এটাও বলেছিলেন: “পিতা পুত্রকে ভালবাসেন।” (যোহন ৫:২০) এই বাক্য শুনে আমরা অবাক হই না। কারণ, যিশু মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আসার আগে যুগ যুগ ধরে ঈশ্বরের কাছে “কার্য্যকারী” ছিলেন। (হিতো. ৮:৩০) যিহোবা ও যিশু যখন একসঙ্গে কাজ করেছিলেন, তখন পুত্র তাঁর পিতার গুণাবলি সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখেছিলেন আর পিতাকে ভালোবাসার পিছনে তাঁর কাছে অসংখ্য কারণ ছিল। আসলে, ঘনিষ্ঠ মেলামেশা স্পষ্টতই পরস্পরের প্রতি তাদের প্রেমকে বৃদ্ধি করেছিল।

২. (ক) প্রেমের সঙ্গে কী জড়িত? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো আলোচনা করব?

প্রেমের সঙ্গে গভীর অনুরাগ বা স্নেহ থাকা জড়িত। গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “হে সদাপ্রভু! মম বল! আমি তোমাতে অনুরক্ত।” (গীত. ১৮:১) ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাদেরও একইরকম মনে করা উচিত কারণ আমাদের প্রতি তাঁর স্নেহ রয়েছে। আমরা যদি যিহোবার বাধ্য হই, তাহলে তিনি আমাদের প্রতি তাঁর প্রেম প্রকাশ করবেন। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৭:১২, ১৩.) কিন্তু আমরা যেহেতু ঈশ্বরকে দেখতে পারি না, তাই আমরা কি সত্যি সত্যিই তাঁকে ভালোবাসতে পারি? যিহোবাকে ভালোবাসার অর্থ কী? কেন আমাদের তাঁকে ভালোবাসতে হবে? আর কীভাবে আমরা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করতে পারি?

যে-কারণে আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসতে পারি

৩, ৪. কেন আমাদের পক্ষে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম প্রকাশ করা সম্ভব?

“ঈশ্বর আত্মা”; তাই, আমরা তাঁকে দেখতে পারি না। (যোহন ৪:২৪) তা সত্ত্বেও,  যিহোবাকে ভালোবাসা সম্ভব এবং শাস্ত্রে আমাদেরকে সেই ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য আজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, মোশি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবে।”—দ্বিতীয়. ৬:৫.

কেন আমরা ঈশ্বরের প্রতি গভীর প্রেম প্রকাশ করতে পারি? কারণ তিনি আমাদের মধ্যে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার এক চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের সেই প্রেম প্রকাশ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আমাদের এই চাহিদা যখন যথাযথভাবে পরিতৃপ্ত হয়, তখন যিহোবার জন্য আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের সুখী হওয়ার পিছনে উত্তম ভিত্তি থাকে। যিশু যখন বলেছিলেন, “ধন্য যাহারা আত্মাতে দীনহীন,” তখন তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, যারা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন, তারা সুখী। (মথি ৫:৩) উপাসনা করার জন্য মানুষের মধ্যে যে-সহজাত ইচ্ছা রয়েছে, সেই সম্বন্ধে এভাবে বলা হয়েছে: “সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে যে এক সর্বোচ্চ সত্তাকে অন্বেষণ করার ও সেই সত্তার প্রতি বিশ্বাস করার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তা দেখে আমাদের মধ্যে সশ্রদ্ধ ভয়, বিস্ময় এবং শ্রদ্ধা জেগে ওঠে।”—এ. সি. মরিসনের রচিত মানুষ একা টিকে থাকতে পারে না (ইংরেজি)।

৫. কীভাবে আমরা জানি যে, ঈশ্বরকে অন্বেষণ করার প্রচেষ্টা নিষ্ফল নয়?

ঈশ্বরকে অন্বেষণ করার প্রচেষ্টা কি নিষ্ফল হয়? না, তা হয় না। কারণ তিনি চান যেন আমরা তাঁর সন্ধান পাই। প্রেরিত পৌল এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, যখন তিনি আরেয়পাগে জড়ো হওয়া একদল লোকের সামনে সাক্ষ্যদান করেছিলেন। এটা সেই জায়গায় ঘটেছিল, যেখান থেকে পারথেনন অর্থাৎ প্রাচীন আথীনীতে সুরক্ষার দেবী এথেনার উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত মন্দিরটা দেখা যায়। কল্পনা করুন আপনি সেখানে আছেন। সেখানে পৌল সেই “ঈশ্বর” সম্বন্ধে কথা বলছেন, “যিনি জগৎ ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত বস্তু নির্ম্মাণ করিয়াছেন” আর এরপর ব্যাখ্যা করছেন, তিনি “হস্তনির্ম্মিত মন্দিরে বাস করেন না।” প্রেরিত এটাও বলছেন যে, ঈশ্বর “এক ব্যক্তি হইতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎপন্ন করিয়াছেন, যেন তাহারা সমস্ত ভূতলে বাস করে; তিনি তাহাদের নির্দ্দিষ্ট কাল ও নিবাসের স্থির করিয়াছেন; যেন তাহারা ঈশ্বরের অন্বেষণ করে, যদি কোন মতে হাঁতড়িয়া হাঁতড়িয়া তাঁহার উদ্দেশ পায়; অথচ তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।” (প্রেরিত ১৭:২৪-২৭) হ্যাঁ, লোকেরা ঈশ্বরের সন্ধান পেতে পারে। পঁচাত্তর লক্ষেরও বেশি যিহোবার সাক্ষি “তাঁহার উদ্দেশ” বা সন্ধান ‘পাইয়াছে’ এবং তারা সত্যিই তাঁকে ভালোবাসে।

ঈশ্বরকে ভালোবাসা বলতে যা বোঝায়

৬. যিশু কোনটাকে “মহৎ ও প্রথম আজ্ঞা” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন?

যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা হৃদয় থেকে আসতে হবে। যিশু এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, যখন একজন ফরীশী তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “গুরু, ব্যবস্থার মধ্যে কোন আজ্ঞা মহৎ?” যিশু তাকে উত্তর দিয়েছিলেন: “‘তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে,’ এইটী মহৎ ও প্রথম আজ্ঞা।”—মথি ২২:৩৪-৩৮.

৭. ঈশ্বরকে ভালোবাসার অর্থ কী (ক) আমাদের “সমস্ত অন্তঃকরণ” দিয়ে? (খ) আমাদের “সমস্ত প্রাণ” দিয়ে? (গ) আমাদের “সমস্ত মন” দিয়ে?

যিশু যখন বলেছিলেন আমাদের “সমস্ত অন্তঃকরণ” বা হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরকে ভালোবাসতে হবে, তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? তিনি বুঝিয়েছিলেন যে, আমাদের সম্পূর্ণ রূপক হৃদয় দিয়ে যিহোবাকে ভালোবাসতে হবে। রূপক হৃদয় বলতে আমাদের আকাঙ্ক্ষা, আবেগ ও অনুভূতিকে বোঝায়। এ ছাড়া, আমাদের “সমস্ত প্রাণ” অর্থাৎ আমাদের জীবন বা সত্তা দিয়ে তাঁকে ভালোবাসতে হবে। সেইসঙ্গে আমাদের “সমস্ত মন” বা আমাদের সম্পূর্ণ বোধগম্যতা ব্যবহার করে ঈশ্বরকে ভালোবাসতে হবে। মূল বিষয়টা হল, আমাদের নিঃশর্তে যিহোবাকে পূর্ণরূপে ভালোবাসতে হবে।

৮. ঈশ্বরকে পূর্ণরূপে ভালোবাসা আমাদেরকে কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে?

আমরা যদি আমাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, প্রাণ ও মন দিয়ে ঈশ্বরকে ভালোবাসি, তাহলে আমরা তাঁর বাক্যের অধ্যবসায়ী ছাত্র হব, পূর্ণহৃদয়ে তাঁর উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করব এবং উদ্যোগের সঙ্গে রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করব। (মথি ২৪:১৪; রোমীয় ১২:১, ২) যিহোবার প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা আমাদেরকে তাঁর আরও নিকটবর্তী করবে। (যাকোব ৪:৮) অবশ্য, আমরা হয়তো ঈশ্বরকে ভালোবাসার পিছনে সমস্ত কারণ  সম্বন্ধে তালিকা তৈরি করতে পারি না। তবে আসুন, আমরা সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা নিয়ে আলোচনা করি।

যে-কারণে যিহোবাকে আমাদের ভালোবাসতে হবে

৯. কেন আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও জোগানদাতা যিহোবাকে ভালোবাসি?

যিহোবা হলেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা এবং জোগানদাতা। “তাঁহাতেই আমাদের জীবন, গতি ও সত্তা,” পৌল লিখেছিলেন। (প্রেরিত ১৭:২৮) যিহোবা আমাদেরকে গৃহ হিসেবে অপূর্ব এই পৃথিবী দিয়েছেন। (গীত. ১১৫:১৬) এ ছাড়া, তিনি আমাদের জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য খাদ্য ও অন্যান্য বিষয় জুগিয়েছেন। তাই, পৌল লুস্ত্রার প্রতিমাপূজক অধিবাসীদের কাছে “জীবন্ত ঈশ্বরের” বিষয়ে এই কথা বলতে পেরেছিলেন, “তিনি আপনাকে সাক্ষ্যবিহীন রাখেন নাই, কেননা তিনি মঙ্গল করিতেছেন, আকাশ হইতে আপনাদিগকে বৃষ্টি এবং ফলোৎপাদক ঋতুগণ দিয়া ভক্ষ্যে ও আনন্দে আপনাদের হৃদয় পরিতৃপ্ত করিয়া আসিতেছেন।” (প্রেরিত ১৪:১৫-১৭) এটা কি আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা ও প্রেমময় জোগানদাতাকে ভালোবাসার একটা কারণ নয়?—উপ. ১২:১.

১০. ঈশ্বর যে আমাদের পাপ ও মৃত্যু দূর করার জন্য ব্যবস্থা করেছেন, সেজন্য আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?

১০ আমরা আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে যে-পাপ এবং মৃত্যু পেয়েছি, ঈশ্বর তা দূর করা সম্ভবপর করেছেন। (রোমীয় ৫:১২) আসলে, “ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন করিতেছেন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন।” (রোমীয় ৫:৮) কোনো সন্দেহ নেই যে, আমাদের হৃদয়ে যিহোবার প্রতি ভালোবাসা উপচে পড়ে কারণ আমাদের অনুতাপ এবং যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের প্রতি বিশ্বাস দেখিয়ে চলার ভিত্তিতে তিনি আমাদের পাপের ক্ষমা লাভের ব্যবস্থা করেছেন।—যোহন ৩:১৬.

১১, ১২. যিহোবা আমাদের কোন কোন প্রত্যাশা দিয়েছেন?

১১ যিহোবা ‘প্রত্যাশা’ দেন, যা ‘আমাদিগকে আনন্দে এবং শান্তিতে পরিপূর্ণ করে।’ (রোমীয় ১৫:১৩) ঈশ্বরদত্ত প্রত্যাশা আমাদেরকে বিশ্বাসের পরীক্ষা সহ্য করার জন্য সমর্থ করে। বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের স্বর্গে অনন্তকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে। (প্রকা. ২:১০) আর পার্থিব আশাসম্পন্ন নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিরা পৃথিবীব্যাপী প্রতিজ্ঞাত পরমদেশে অনন্ত আশীর্বাদ উপভোগ করবে। (লূক ২৩:৪৩) এই ধরনের প্রত্যাশার প্রতি আমাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া কেমন? আমাদের হৃদয় কি আনন্দ, শান্তি ও সেইসঙ্গে ‘সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বরের’ দাতার জন্য ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয় না?—যাকোব ১:১৭.

১২ ঈশ্বর আমাদের পুনরুত্থানের আশা দিয়েছেন, যা আমাদের হৃদয়কে আনন্দিত করে। (প্রেরিত ২৪:১৫) অবশ্যই আমরা আমাদের প্রিয়জনের মৃত্যুতে দুঃখ পাই, কিন্তু আমরা পুনরুত্থানের প্রত্যাশার কারণে, ‘যাহাদের প্রত্যাশা নাই, সেই অন্য সকল লোকের মত দুঃখার্ত্ত হই না।’ (১ থিষল. ৪:১৩) প্রেমের কারণে যিহোবা মৃত ব্যক্তিদের, বিশেষভাবে ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি ইয়োবের মতো বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের, পুনরুত্থান করার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষী। (ইয়োব ১৪:১৫) সেই আনন্দপূর্ণ পুনর্মিলনের কথা কল্পনা করুন, যখন পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের এই পৃথিবীতে জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হবে। যিনি আমাদের সেই অপূর্ব পুনরুত্থানের প্রত্যাশা দিয়েছেন, সেই স্বর্গীয় পিতার প্রতি আমাদের হৃদয় নিশ্চয়ই ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে যায়!

১৩. ঈশ্বর যে আমাদের জন্য সত্যিই চিন্তা করেন, সেটার কী প্রমাণ রয়েছে?

১৩ যিহোবা সত্যিই আমাদের জন্য চিন্তা করেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৪:৬, ১৮, ১৯; ১ পিতর ৫:৬, ৭.) আমরা যেহেতু জানি, আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছেন, তাই আমরা ‘তাহার চরাণির মেষ’ হিসেবে নিরাপদ বোধ করি। (গীত. ৭৯:১৩) তা ছাড়া, ঈশ্বর মশীহ রাজ্যের মাধ্যমে আমাদের জন্য যা সম্পাদন করবেন, তাতে আমাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা উল্লেখযোগ্যভাবে দেখা যাবে। তাঁর মনোনীত রাজা যিশু খ্রিস্ট পৃথিবী থেকে দৌরাত্ম্য, অত্যাচার ও দুষ্টতা দূর করে দেওয়ার পর বাধ্য মানবজাতি চিরস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করবে। (গীত. ৭২:৭, ১২-১৪, ১৬) আপনি কি এই বিষয়ে একমত হবেন না যে, এইরকম প্রত্যাশা থাকায় আমাদের যত্নশীল ঈশ্বরকে সমস্ত অন্তঃকরণ, প্রাণ, শক্তি ও চিত্ত দিয়ে ভালোবাসার উপযুক্ত কারণ আমাদের রয়েছে?—লূক ১০:২৭.

১৪. যিহোবা কোন অমূল্য সুযোগ দিয়ে আমাদের প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়েছেন?

১৪ যিহোবা তাঁর সাক্ষি হিসেবে সেবা করার অমূল্য সুযোগ দিয়ে আমাদের প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়েছেন। (যিশা. ৪৩:১০-১২) ঈশ্বর আমাদের তাঁর সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করার এবং এই সমস্যাপূর্ণ জগতে লোকেদের জন্য প্রকৃত আশার বার্তা এনে দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন বলে আমরা তাঁকে ভালোবাসি। এ ছাড়া, আমরা  বিশ্বাস ও দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে কথা বলতে পারি কারণ আমরা সত্য ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে সুসমাচার ঘোষণা করি। আর তাঁর আশাপ্রদানকারী প্রতিজ্ঞাগুলো কখনো নিষ্ফল হয় না। (পড়ুন, যিহোশূয়ের পুস্তক ২১:৪৫; ২৩:১৪.) অবশ্য, যিহোবার আশীর্বাদ এবং তাঁকে ভালোবাসার পিছনে আমাদের যে-সমস্ত কারণ রয়েছে, সেগুলো বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু কীভাবে আমরা তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করতে পারি?

যেভাবে আমরা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করতে পারি

১৫. ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন ও তা কাজে লাগানো কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে?

১৫ অধ্যবসায়ের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করুন এবং তা কাজে লাগান। তা করার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি এবং সত্যিকার অর্থেই চাই যেন তাঁর বাক্য “আমার পথের আলোক” হয়। (গীত. ১১৯:১০৫) আমরা যদি দুর্দশার মধ্যে থাকি, তাহলে আমরা এই প্রেমপূর্ণ আশ্বাস থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে পারি: “হে ঈশ্বর, তুমি ভগ্ন ও চূর্ণ অন্তঃকরণ তুচ্ছ করিবে না।” “হে সদাপ্রভু, তোমার দয়া [“অটল ভালোবাসা,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] আমাকে সুস্থির রাখিত। আমার আন্তরিক ভাবনার বৃদ্ধিকালে তোমার দত্ত সান্ত্বনা আমার প্রাণকে আহ্লাদিত করে।” (গীত. ৫১:১৭; ৯৪:১৮, ১৯) যারা কষ্ট ভোগ করে, তাদের প্রতি যিহোবা করুণা দেখান আর একইভাবে যিশুও লোকেদের জন্য করুণা বোধ করেন। (যিশা. ৪৯:১৩; মথি ১৫:৩২) আমরা বাইবেল অধ্যয়ন করে আমাদের প্রতি যিহোবার প্রেমপূর্ণ চিন্তা সম্বন্ধে অনেক ভালোভাবে জানতে পারব আর এর ফলে আমরা তাঁর প্রতি গভীর প্রেম দেখাতে চাইব।

১৬. নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করা কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমকে বৃদ্ধি করতে পারে?

১৬ ঈশ্বরের কাছে নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করুন। আমাদের প্রার্থনা আমাদেরকে ‘প্রার্থনা-শ্রবণকারীর’ আরও নিকটবর্তী করে। (গীত. ৬৫:২) আমরা যখন বুঝতে পারি, ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিচ্ছেন, তখন তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও গভীর হয়। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা হয়তো লক্ষ করেছি, তিনি আমাদের প্রতি এমন পরীক্ষা ঘটতে দেন না, যা আমরা সহ্য করতে পারি না। (১ করি. ১০:১৩) আমরা যদি উদ্‌বিগ্নতার সময়ে যিহোবার কাছে আন্তরিক প্রার্থনা করি, তাহলে আমরা হয়তো “ঈশ্বরের” অতুলনীয় “শান্তি” উপভোগ করতে পারি। (ফিলি. ৪:৬, ৭) কখনো কখনো, নহিমিয়ের মতো আমরা হয়তো নীরবে প্রার্থনা করি আর এরপর বুঝতে পারি, সেই প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছে। (নহি. ২:১-৬) আমরা যখন ‘প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকি’ এবং বুঝতে পারি যিহোবা আমাদের যাচ্ঞার উত্তর দিচ্ছেন, তখন তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। আর সেইসঙ্গে আমাদের এই আস্থাও বৃদ্ধি পায় যে, তিনি আমাদেরকে বিশ্বাসের  অন্যান্য পরীক্ষার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবেন।—রোমীয় ১২:১২.

১৭. আমরা যদি যিহোবাকে ভালোবাসি, তাহলে সভাতে যোগ দেওয়ার বিষয়টাকে আমরা কীভাবে দেখব?

১৭ খ্রিস্টীয় সভা ও সম্মেলনে যোগ দেওয়ার বিষয়টাকে আপনার অভ্যাসে পরিণত করুন। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) ইস্রায়েলীয়রা যিহোবা সম্বন্ধে শোনার ও শিক্ষালাভ করার জন্য একত্রে মিলিত হতো, যেন তারা যিহোবার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় গড়ে তুলতে এবং তাঁর ব্যবস্থা পালন করতে পারে। (দ্বিতীয়. ৩১:১২) আমরা যদি সত্যি সত্যিই ঈশ্বরকে ভালোবাসি, তাহলে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করাকে আমাদের কাছে দুর্বহ বলে মনে হবে না। (পড়ুন, ১ যোহন ৫:৩.) তাই, আমরা যেন এমন কোনো কিছুকে সুযোগ না দিই, যা আমাদেরকে সভাতে যোগ দেওয়ার গুরুত্বকে হালকা করে দেখতে প্ররোচিত করে। আমরা নিশ্চিতভাবেই চাই না, কোনো কিছুর কারণে যিহোবার প্রতি আমাদের প্রথম প্রেম হারিয়ে যাক।—প্রকা. ২:৪.

১৮. ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আমাদেরকে কী করতে অনুপ্রাণিত করে?

১৮ উদ্যোগের সঙ্গে অন্যদের “সুসমাচারের সত্য” জানান। (গালা. ২:৫) ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আমাদেরকে মশীহ রাজ্য সম্বন্ধে কথা বলতে অনুপ্রাণিত করে, যে-রাজ্যের রাজা হলেন তাঁর প্রিয় পুত্র, যিনি আরমাগিদোনের যুদ্ধের সময় ‘সত্যের পক্ষে বাহনে চড়িয়া যাইবেন।’ (গীত. ৪৫:৪; প্রকা. ১৬:১৪, ১৬) লোকেদেরকে ঈশ্বরের প্রেম এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাত নতুন জগৎ সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করার মাধ্যমে শিষ্য তৈরি কাজে অংশ নেওয়া কতই-না আনন্দদায়ক!—মথি ২৮:১৯, ২০.

১৯. যিহোবা তাঁর মেষপালকে পালন করার জন্য যে-ব্যবস্থা করেছেন, সেটার প্রতি আমাদের কেন উপলব্ধি দেখানো উচিত?

১৯ ঈশ্বর তাঁর মেষপালকে পালন করার জন্য যে-ব্যবস্থা করেছেন, সেটার প্রতি উপলব্ধি দেখান। (প্রেরিত ২০:২৮) খ্রিস্টান প্রাচীনরা হচ্ছে যিহোবার কাছ থেকে এক মাধ্যম, যারা সবসময় আমাদের মঙ্গলের জন্য কাজ করে। প্রাচীনরা ‘বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল, শুষ্ক স্থানে জলস্রোত ও শ্রান্তিজনক ভূমিতে কোন প্রকাণ্ড শৈলের ছায়ার’ মতো। (যিশা. ৩২:১, ২) প্রবল বাতাস অথবা প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির সময় আশ্রয় পেলে আমরা সেটাকে কতই-না উপলব্ধি করি! সূর্যের প্রখর রোদে কোনো পাহাড়ের ছায়া পেলে আমরা নিশ্চয়ই খুশি হই। এসব বাক্যালঙ্কার আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, প্রাচীনরা প্রয়োজনীয় আধ্যাত্মিক সাহায্য ও সতেজতা জুগিয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের প্রতি বাধ্য থাকার মাধ্যমে আমরা দেখাই, আমরা এই ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষদের অনেক উপলব্ধি করি ও সেইসঙ্গে আমরা প্রমাণ দিই, ঈশ্বর এবং মণ্ডলীর মস্তক খ্রিস্টকে আমরা ভালোবাসি।—ইফি. ৪:৮; ৫:২৩; ইব্রীয় ১৩:১৭.

যিহোবা এমন পালকদের জুগিয়েছেন, যারা পালের মেষদের প্রতি আন্তরিক আগ্রহ দেখায় (১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

ঈশ্বরের প্রতি আপনার ভালোবাসা বৃদ্ধি করে চলুন

২০. আপনি যদি ঈশ্বরকে ভালোবাসেন, তাহলে যাকোব ১:২২-২৫ পদের কথাগুলোর প্রতি আপনি কীভাবে সাড়া দেবেন?

২০ যিহোবার সঙ্গে আপনার যদি প্রেমপূর্ণ সম্পর্ক থাকে, তাহলে আপনি ‘বাক্যের কার্য্যকারী হইবেন, শ্রোতামাত্র নয়।’ (পড়ুন, যাকোব ১:২২-২৫.) একজন ‘কার্য্যকারীর’ এমন বিশ্বাস রয়েছে, যা তাকে উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করতে এবং খ্রিস্টীয় সভাতে অংশ নিতে পরিচালিত করে। আপনি যদি সত্যি সত্যিই ঈশ্বরকে ভালোবাসেন, তাহলে আপনি যিহোবার ‘সিদ্ধ ব্যবস্থা’ অর্থাৎ তিনি আপনার কাছ থেকে যা যা চান, সেইসমস্ত কিছু পালন করবেন।—গীত. ১৯:৭-১১.

২১. আপনার আন্তরিক প্রার্থনাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে?

২১ যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আপনার ভালোবাসার কারণে, আপনি প্রায়ই আন্তরিক প্রার্থনায় তাঁর শরণাপন্ন হবেন। ব্যবস্থা চুক্তির অধীনে প্রতিদিন সুগন্ধি ধূপ উৎসর্গ করার ব্যবস্থার বিষয়ে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করে গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “আমার প্রার্থনা তোমার [যিহোবার] সম্মুখে সুগন্ধি ধূপরূপে, আমার অঞ্জলি-প্রসারণ সান্ধ্য উপহাররূপে সাজান হউক।” (গীত. ১৪১:২; যাত্রা. ৩০:৭, ৮) ঈশ্বরের উদ্দেশে আপনার বলা নম্র অনুরোধ, আন্তরিক যাচ্ঞা এবং হৃদয় থেকে প্রশংসা ও ধন্যবাদের বাক্য যেন এমন সুগন্ধি ধূপের মতো হয়, যা গ্রহণযোগ্য প্রার্থনাকে চিত্রিত করে।—প্রকা. ৫:৮.

২২. পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?

২২ যিশু বলেছিলেন, ঈশ্বরকে ও সেইসঙ্গে আমাদের প্রতিবেশীকে আমাদের ভালোবাসতে হবে। (মথি ২২:৩৭-৩৯) এই গুণ সম্বন্ধে আরও আলোচনা করার সময় আমরা দেখব যে, যিহোবা এবং তাঁর নীতিগুলোর প্রতি আমাদের ভালোবাসা আমাদেরকে সহমানবদের সঙ্গে ভালোভাবে আচরণ করতে ও সেইসঙ্গে আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম প্রকাশ করতে সাহায্য করবে।