সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেখানেই থাকুন, যিহোবার রব শুনুন

যেখানেই থাকুন, যিহোবার রব শুনুন

“তোমার কর্ণ পশ্চাৎ হইতে এই বাণী শুনিতে পাইবে, এই পথ।” —যিশা. ৩০:২১.

১, ২. কীভাবে যিহোবা তাঁর দাসদের সঙ্গে ভাববিনিময় করেন?

ইতিহাসজুড়ে, যিহোবা তাঁর লোকেদের নির্দেশনা দিয়ে এসেছেন। অতীতে, তিনি স্বর্গদূত, দর্শন ও স্বপ্নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের বিভিন্ন বিষয় জানিয়েছিলেন অথবা সুনির্দিষ্ট কার্যভার প্রদান করেছিলেন। (গণনা. ৭:৮৯; যিহি. ১:১; দানি. ২:১৯) ঈশ্বর মাঝে মাঝে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এবং তাঁর নির্দেশনা প্রকাশ করার জন্য মানুষদের বেছে নিয়েছিলেন। যিহোবার লোকেরা তাঁর বাক্য যেভাবেই লাভ করে থাকুক না কেন, যারা তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করেছে, তারা আশীর্বাদ পেয়েছে।

বর্তমানে যিহোবা বাইবেল, তাঁর পবিত্র আত্মা এবং মণ্ডলীকে ব্যবহার করে আমাদের নির্দেশনা দেন। (প্রেরিত ৯:৩১; ১৫:২৮; ২ তীম. ৩:১৬, ১৭) তাঁর নির্দেশনা এতই স্পষ্ট, যেন আমরা তাঁকে এই কথা বলতে শুনি: “এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।” (যিশা. ৩০:২১) এ ছাড়া, যিহোবা যিশুর মাধ্যমে আমাদের কাছে তাঁর রব প্রকাশ করেন। তিনি যিশুকে নিযুক্ত করেছেন, যিনি ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে মণ্ডলীকে নেতৃত্ব দেন। (মথি ২৪:৪৫) এই নির্দেশনা ও পরিচালনাকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে কারণ তা করার ওপরই আমাদের অনন্তজীবন নির্ভর করে।—ইব্রীয় ৫:৯.

৩. কী আমাদেরকে পূর্ণরূপে যিহোবার বাধ্য হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

শয়তান জানে, যিহোবার নির্দেশনা আমাদের জীবন রক্ষা করে আর তাই সে আমাদেরকে তা শোনা থেকে বিক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করে। এ ছাড়া, আমাদের হৃদয়ের অসিদ্ধ প্রবণতাও হয়তো পূর্ণরূপে যিহোবার বাধ্য হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়। (যির. ১৭:৯) এই প্রবন্ধে আমরা দেখব, ঈশ্বরের রব শোনার ক্ষেত্রে এই  বাধাগুলো আমরা কীভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি। আমরা এটাও দেখব, আমাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, যিহোবার রব শোনা এবং প্রার্থনায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা কীভাবে আমাদেরকে তাঁর নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে।

শয়তানের দ্বারা প্রতারিত হওয়া এড়িয়ে চলুন

৪. কীভাবে শয়তান লোকেদের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে?

শয়তান মিথ্যা তথ্য এবং অপপ্রচারের মাধ্যমে লোকেদের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। (পড়ুন, ১ যোহন ৫:১৯.) সংবাদপত্র, বই, পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট সারা পৃথিবীতে তথ্য ছড়িয়ে দেয়। এসব উৎস যদিও কিছু সাহায্যকারী তথ্য দিয়ে থাকে, কিন্তু এগুলো প্রায়ই এমন আচরণকে তুলে ধরে, যা যিহোবার মানের বিপরীত। (যির. ২:১৩) উদাহরণ স্বরূপ, এগুলোতে হয়তো বলা হয়, সমলিঙ্গের ব্যক্তিদের মধ্যে বিয়ে হলে তাতে অন্যায় কিছু নেই। এই বিষয়টা অনেক লোককে এইরকম মনে করতে পরিচালিত করেছে, সমকামিতা সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, তা অত্যন্ত কঠোর।—১ করি. ৬:৯, ১০.

৫. কীভাবে আমরা শয়তানের অপপ্রচারের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি?

যে-লোকেরা যিহোবার মানগুলোকে ভালোবাসে, তারা কীভাবে শয়তানের অপপ্রচারের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এড়িয়ে চলতে পারে? কীভাবে তারা জানতে পারে যে, কোনটা ভালো এবং কোনটা মন্দ? বাইবেল উত্তর দেয়: ‘[ঈশ্বরের] বাক্যানুসারে সাবধান হইয়া।’ (গীত. ১১৯:৯) ঈশ্বরের লিখিত বাক্য আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কোনটা সত্য এবং কোনটা মিথ্যা। (হিতো. ২৩:২৩) যিশু বলেছিলেন, “ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়,” তা আমাদের প্রয়োজন। (মথি ৪:৪) বাইবেলে যিহোবা আমাদের এমন নীতিগুলো দিয়েছেন, যেগুলো আমাদের প্রয়োগ করা শিখতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, পারদারিকতার বিরুদ্ধে কোনো লিখিত আইন দেওয়ার অনেক আগেই যোষেফ জানতেন, পোটীফরের স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করলে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ হবে। তিনি এমনকী যিহোবার অবাধ্য হওয়ার কথা কখনো চিন্তাও করেননি। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩৯:৭-৯.) যদিও পোটীফরের স্ত্রী দীর্ঘসময় ধরে তাকে চাপ দিয়েছিলেন, কিন্তু যোষেফ তার রব নয় বরং যিহোবার রব শোনা বেছে নিয়েছিলেন। বর্তমানে আমাদেরও শয়তানের অপপ্রচারের অবিরাম উচ্চরব নয়, বরং যিহোবার রব শুনতে হবে।

৬, ৭. শয়তানের কুপরামর্শ এড়িয়ে চলার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

এই জগতে বিভ্রান্তিকর ধর্মীয় ধ্যানধারণা ছেয়ে আছে আর তাই অনেক লোক মনে করে, সত্য ধর্ম খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু আমরা যদি যিহোবার রব শুনতে ইচ্ছুক হই, তাহলে তিনি সহজে সত্য খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। আমাদের নির্ধারণ করতে হবে, আমরা কার রব শুনব। একই সময়ে দুটো রব শোনা বলতে গেলে অসম্ভব। মেষেরা যেমন তাদের পালকের কথা শোনে, তেমনই আমাদেরকে যিশুর রব শুনতে হবে, যাঁকে যিহোবা আমাদের পালন করার জন্য মনোনীত করেছেন।—পড়ুন, যোহন ১০:৩-৫.

যিশু বলেছিলেন: “তোমরা দেখিও, কি শুন।”  (মার্ক ৪:২৪) যিহোবার নির্দেশনা স্পষ্ট এবং সঠিক, কিন্তু তিনি যা বলেন, তা যেন আমরা মেনে নিতে পারি, সেজন্য আমাদের সঠিক মনোভাব থাকতে হবে। আমরা যদি সতর্ক না হই, তাহলে আমরা হয়তো ঈশ্বরের প্রেমময় নির্দেশনার পরিবর্তে শয়তানের কুপরামর্শ শুনতে পারি। জগতের সংগীত, ভিডিও, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, বইপত্র, সঙ্গীসাথি, শিক্ষক অথবা তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা যেন কখনোই আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ না করে।—কল. ২:৮.

৮. (ক) আমাদের নিজেদের হৃদয় কীভাবে আমাদেরকে প্রভাবিত করার জন্য শয়তানকে পথ করে দিতে পারে? (খ) আমরা যদি সতর্কসংকেত উপেক্ষা করি, তাহলে কী হতে পারে?

শয়তান জানে, আমাদের মধ্যে পাপপূর্ণ প্রবণতা রয়েছে। তাই সে যখন আমাদের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগায়, তখন আমাদের জন্য যিহোবার প্রতি অনুগত থাকা অনেক কঠিন হয়ে পড়তে পারে। (যোহন ৮:৪৪-৪৭) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা হয়তো প্রার্থনা করা বন্ধ করে দিয়েছি, আমাদের পরিচর্যায় ধীর হয়ে পড়েছি অথবা সভায় যাওয়া বাদ দিতে শুরু করেছি। এগুলো আমাদের হৃদয়ে যা ঘটছে, সেটার এক সতর্কসংকেত আর এগুলোকে উপেক্ষা করা বিপদজনক হতে পারে। আমরা যদি সাবধান না হই, তাহলে ধীরে ধীরে আমরা হয়তো যিহোবার রব শোনা বন্ধ করে দিতে পারি। অবশেষে, আমরা নিজেদের আকাঙ্ক্ষার কাছে নতিস্বীকার করতে পারি এবং এমন কোনো অন্যায় করতে পারি, যেটা করার কথা আমরা কখনো চিন্তাও করিনি। (রোমীয় ৭:১৫) কিন্তু, আমরা যদি সতর্কসংকেতের ব্যাপারে সাবধান থাকি এবং বিভিন্ন বিষয় সংশোধন করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নিই, তাহলে আমরা সেই মারাত্মক ভুল করা এড়িয়ে চলতে পারব। আর আমরা যদি মনোযোগ সহকারে যিহোবার রব শুনি, তাহলে আমরা কখনোই কোনো পাষণ্ড বা ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তির ধ্যানধারণার প্রতি কান দেব না।—হিতো. ১১:৯.

৯. আমাদের পাপপূর্ণ অবস্থার বিষয়ে যতটা সম্ভব আগে থেকে সতর্ক হওয়া কেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ?

গুরুতর অসুস্থ একজন ব্যক্তির সেই সময়ই সুস্থ হওয়ার আরও বেশি সম্ভাবনা থাকে, যদি রোগটা আগে থেকে নির্ণয় করা যায়। একইভাবে, আমরা যদি লক্ষ করি যে, আমাদের মধ্যে পাপপূর্ণ প্রবণতা রয়েছে, তাহলে আমাদের অবিলম্বে, ‘শয়তানের ইচ্ছা পালন করবার জন্য ধরা’ পড়ার আগেই পদক্ষেপ নিতে হবে। (২ তীম. ২:২৬, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) আমরা যদি বুঝতে পারি, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা চান, তা থেকে আমরা ভিন্ন চিন্তাভাবনা ও আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছি, তাহলে আমাদের কী করা উচিত? আমাদের অবিলম্বে তাঁর কাছে ফিরে আসতে হবে, তাঁর নির্দেশনা অন্বেষণ করতে হবে এবং তা অনুসরণ করতে হবে। (যিশা. ৪৪:২২) তবে বাস্তব ক্ষেত্রে, কিছু ভুলের পরিণতি হয়তো একজন ব্যক্তিকে যিহোবার কাছে ফিরে আসার পরও গভীরভাবে কষ্ট দিতে পারে। তাই, যিহোবাকে কখনোই পরিত্যাগ না করা আরও উত্তম।

নিয়মিতভাবে উপাসনা করা কীভাবে আপনাকে শয়তানের দ্বারা প্রতারিত হওয়া থেকে সুরক্ষা করতে পারে? (৪-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

 অহংকার এবং লোভ পরিত্যাগ করুন

১০, ১১. (ক) অহংকারী হয়ে ওঠার কিছু সংকেত কী? (খ) কোরহ, দাথন ও অবীরামের বিদ্রোহ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১০ আমাদের এটা স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের হৃদয় আমাদেরকে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা হয়তো অহংকারী অথবা লোভী হয়ে উঠতে পারি। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে আমরা গুরুতর ভুল করে ফেলতে পারি। একজন অহংকারী ব্যক্তি এইরকম মনে করতে পারেন, তিনি বিশেষ কেউ এবং তিনি তার ইচ্ছামতো কাজ করতে পারেন। তিনি হয়তো মনে করতে পারেন, তিনি কী করবেন, সেই বিষয়ে কারোরই—সহখ্রিস্টানদের, প্রাচীনদের অথবা এমনকী মণ্ডলীর—কিছু বলার অধিকার নেই। তিনি হয়তো যিহোবার কাছ থেকে এতটাই দূরে সরে গিয়েছেন যে, তাঁর রব বলতে গেলে তিনি শুনতেই পান না।

১১ যিহোবা প্রান্তরের মধ্যে ইস্রায়েলীয়দের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মোশি ও হারোণকে নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু কোরহ, দাথন ও অবীরাম বিদ্রোহ করেছিল কারণ তারা অহংকারী ছিল এবং তারা নিজেদের উপায়ে যিহোবার উপাসনা করতে চেয়েছিল। যিহোবা এতে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি বিদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। (গণনা. ২৬:৮-১০) এই উদাহরণ থেকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই। যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ধবংসের দিকে নিয়ে যায়। বাইবেল বলে, “বিনাশের পূর্ব্বে অহঙ্কার।”—হিতো. ১৬:১৮; যিশা. ১৩:১১.

১২, ১৩. (ক) লোভ যেভাবে ধবংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে, সেটার একটা উদাহরণ দিন। (খ) আমরা যদি লোভকে প্রশ্রয় দিই, তাহলে সেটা কীভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে, তা ব্যাখ্যা করুন।

১২ লোভ করাও বিপদজনক। একজন লোভী মনে করেন, যিহোবার নির্দেশনা তার প্রতি প্রযোজ্য নয়। তিনি মনে করেন, যে-বিষয়গুলো তার নয়, সেগুলো তিনি নিতে পারেন। অরামীয় সেনাপতি নামানের কুষ্ঠ রোগ ছিল আর ঈশ্বরের ভাববাদী ইলীশায় তাকে সুস্থ করেছিলেন। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ নামান ইলীশায়কে অর্থ ও বস্ত্র উপহার দিয়েছিলেন, কিন্তু ইলীশায় সেগুলো নেননি। তবে গেহসি নামে ইলীশায়ের একজন দাস ছিলেন, যিনি নিজের জন্য সেই উপহার পেতে চেয়েছিলেন। গেহসি লোভী হয়ে উঠেছিলেন। ইলীশায়কে না বলেই তিনি নামানের পিছন পিছন ছুটে গিয়েছিলেন এবং নামান যাতে তাকে উপহার দেন, সেজন্য মিথ্যা কথা বলেছিলেন। তখন লোভী গেহসির কী হয়েছিল? তাকে কুষ্ঠ রোগ দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল!—২ রাজা. ৫:২০-২৭.

১৩ আমরা যদি লোভকে প্রশ্রয় দিই, তাহলে সেটা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে একটা সামান্য আকাঙ্ক্ষা থেকে এমন কিছুতে পরিণত হতে পারে, যা আমাদের জীবনকে ধবংস করে দিতে পারে। বাইবেলে আখনের বিবরণ থেকে এই বিষয়টা স্পষ্ট হয়। তিনি বলেছিলেন: “আমি লুটিত দ্রব্যের মধ্যে উত্তম একখানি বাবিলীয় শাল, দুই শত শেকল রৌপ্য ও পঞ্চাশ শেকল পরিমিত এক থান স্বর্ণ দেখিয়া লোভে পড়িয়া হরণ করিয়াছি।” আখন ভুল আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করতে পারতেন। কিন্তু এর পরিবর্তে, তিনি কিছু জিনিস চুরি করেছিলেন এবং তার তাঁবুতে সেগুলো লুকিয়ে রেখেছিলেন। যিহোবা আখনের পাপ সকলের সামনে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন এবং সেই দিনই ওই চোর ও তার পরিবার পাথরের আঘাতে মারা গিয়েছিল। (যিহো. ৭:১১, ২১, ২৪, ২৫) আমাদের মধ্যে যে-কেউ আখনের মতো লোভী হয়ে উঠতে পারে। তাই, আমাদের ‘সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিতে’ হবে। (লূক ১২:১৫) অনৈতিকতাও হচ্ছে এক ধরনের লোভ। যদিও কখনো কখনো আমাদের মধ্যে হয়তো মন্দ আকাঙ্ক্ষা আসতে পারে কিন্তু আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ভুল আকাঙ্ক্ষার কারণে আমরা পাপ করে না ফেলি।—পড়ুন, যাকোব ১:১৪, ১৫.

১৪. অহংকার ও লোভের কারণে আমরা যদি ভুল কোনো কিছু করার জন্য প্রলোভিত হই, তাহলে আমাদের কী করা উচিত?

১৪ হ্যাঁ, অহংকার এবং লোভ, উভয়ই আমাদেরকে ধবংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কোনো ভুল কাজের বিভিন্ন পরিণতি নিয়ে চিন্তা করা, আমাদেরকে ক্রমাগত যিহোবার রব শুনতে সাহায্য করবে। (দ্বিতীয়. ৩২:২৯) যিহোবা বাইবেলের মধ্যে আমাদেরকে সঠিক বিষয় করার উপকার এবং ভুল কাজের পরিণতি, উভয়ই জানিয়েছেন। অহংকার ও লোভের কারণে আমরা যদি ভুল কোনো কিছু করার জন্য প্রলোভিত হই, তাহলে তা কীভাবে আমাদের নিজেদের, আমাদের  প্রিয়জনদের এবং যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, সেটা নিয়ে চিন্তা করা বিজ্ঞতার কাজ হবে।

যিহোবার সঙ্গে উত্তম ভাববিনিময় বজায় রাখুন

১৫. যিশুর উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৫ যিহোবা চান যেন আমরা যথাসম্ভব সর্বোত্তম জীবনযাপন করি। (গীত. ১:১-৩) তিনি আমাদেরকে সঠিক সময়ে সঠিক নির্দেশনা দেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ৪:১৬.) যিশু যদিও সিদ্ধ ছিলেন কিন্তু তিনি যিহোবার সঙ্গে নিয়মিতভাবে ভাববিনিময় করতেন। তিনি সবসময় প্রার্থনা করতেন। যিহোবা যিশুকে বিভিন্ন চমৎকার উপায়ে সমর্থন করেছিলেন এবং নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি যিশুর যত্ন নেওয়ার জন্য স্বর্গদূতদের পাঠিয়েছিলেন, তাঁকে পবিত্র আত্মা দিয়েছিলেন এবং ১২ জন প্রেরিতকে বাছাই করার জন্য তাঁকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, যিহোবা যে যিশুকে সমর্থন করেন এবং তাঁকে অনুমোদন করেন, এই বিষয়টা প্রকাশ করার জন্য যিহোবা এমনকী স্বর্গ থেকে কথা বলেছিলেন। (মথি ৩:১৭; ১৭:৫; মার্ক ১:১২, ১৩; লূক ৬:১২, ১৩; যোহন ১২:২৮) যিশুর মতো, আমাদেরও সবসময় এবং হৃদয় উজাড় করে প্রার্থনা করতে হবে। (গীত. ৬২:৭, ৮; ইব্রীয় ৫:৭) প্রার্থনা আমাদেরকে যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে এবং তাঁর সম্মান নিয়ে আসে এমন উপায়ে জীবনযাপন করতে সাহায্য করে।

১৬. কীভাবে যিহোবা আমাদেরকে তাঁর রব শুনতে সাহায্য করেন?

১৬ যিহোবা তাঁর উপদেশ মেনে চলার জন্য আমাদের জোর করেন না, তবে আমরা যদি তা খুঁজি, তাহলে তিনি আমাদের তা পেতে সাহায্য করেন। আমাদেরকে পরিচালনা দেওয়ার জন্য তাঁর পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করতে হবে আর তাহলে তিনি উদারভাবে আমাদের তা দেবেন। (পড়ুন, লূক ১১:১০-১৩.) বাইবেল বলে: “দেখিও, তোমরা কিরূপে শুন।” (লূক ৮:১৮) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা যদি অনৈতিকতা এড়িয়ে চলার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চাই অথচ অনবরত পর্নোগ্রাফি অথবা অনৈতিক সিনেমা দেখি, তাহলে সেটা প্রকাশ করে যে, আমরা আসলে তাঁর সাহায্য চাই না। তাঁর সাহায্য লাভ করার জন্য আমাদেরকে সেই জায়গায় অথবা সেই পরিবেশে থাকতে হবে, যেখানে যিহোবার আত্মা রয়েছে, যেমন, আমাদের মণ্ডলীর সভাগুলোতে। যিহোবার অনেক দাস আমাদের সভাগুলোতে যিহোবার রব শোনার মাধ্যমে ধবংসাত্মক পরিণতি এড়াতে পেরেছে। তারা যখন বুঝতে পেরেছে যে, তারা এক ভুল আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলছে, তখন সেটা সংশোধন করেছে।—গীত. ৭৩:১২-১৭; ১৪৩:১০.

ক্রমাগত মনোযোগ সহকারে যিহোবার রব শুনুন

১৭. নিজেদের ওপর নির্ভর করা কেন বিপদজনক?

১৭ ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের কাছ থেকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করি। দায়ূদ যতদিন যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন, ততদিন তিনি বড়ো বড়ো বিষয় সম্পাদন করেছিলেন। অল্পবয়সে তিনি দৈত্যাকৃতির গলিয়াৎকে হত্যা করেছিলেন। পরে দায়ূদ একজন সৈন্য আর এর পরে একজন রাজা হয়েছিলেন। তার কাজ ছিল ইস্রায়েল জাতিকে সুরক্ষা করা এবং তাদের জন্য উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়া। কিন্তু, তিনি যখন নিজের ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছিলেন, তখন তিনি নিজ হৃদয় দ্বারা প্রতারিত হয়েছিলেন। তিনি বৎশেবার সঙ্গে একটা পাপ করেছিলেন আর এমনকী তার স্বামীকে হত্যা করেছিলেন। তবে, যিহোবা যখন দায়ূদকে সংশোধন করেছিলেন, তখন তিনি তা শুনেছিলেন, নিজের ভুল স্বীকার করেছিলেন এবং আবার যিহোবার বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন।—গীত. ৫১:৪, ৬, ১০, ১১.

১৮. কী আমাদেরকে সবসময় যিহোবার রব শোনার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১৮ প্রথম করিন্থীয় ১০:১২ পদ থেকে আমরা শিখতে পারি যে, আমরা নিজেদের ওপর নির্ভর করব না। বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে, আমরা নিজেদের সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারি না আর তাই আমরা হয় যিহোবার রব দ্বারা, নতুবা শয়তানের রব দ্বারা পরিচালিত হব। (যির. ১০:২৩) তাই সবসময় প্রার্থনা করা এবং পবিত্র আত্মার পরিচালনা অনুসরণ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাঁ, আমরা যেন সবসময় মনোযোগ সহকারে যিহোবার রব শুনি।