সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

শেষ শত্রু, মৃত্যুকে বিলুপ্ত করা হবে

শেষ শত্রু, মৃত্যুকে বিলুপ্ত করা হবে

“শেষ শত্রু যে মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে।”—১ করি. ১৫:২৬.

১, ২. শুরুতে আদম ও হবার জীবন কেমন ছিল আর কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

আদম ও হবাকে যখন সৃষ্টি করা হয়েছিল, তখন তাদের কোনো শত্রু ছিল না। তারা সিদ্ধ ছিল এবং এক পরমদেশে বাস করেছিল। তারা তাদের সৃষ্টিকর্তার পুত্র ও কন্যা হিসেবে তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেছিল। (আদি. ২:৭-৯; লূক ৩:৩৮) ঈশ্বর তাদের এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (পড়ুন, আদিপুস্তক ১:২৮.) এই দায়িত্ব পরিপূর্ণ করার জন্য তাদের কত দিন সময় লাগত? ‘পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত করিবার’ জন্য যদিও তাদের চিরকাল বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিল না, তবে “ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর” যত্ন নেওয়ার জন্য তাদের চিরকাল বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিল। তারা অনন্তকাল ধরে সেই দায়িত্ব উপভোগ করতে পারত।

কিন্তু, কেন এখন পরিস্থিতি অনেক আলাদা? কেন আমাদেরকে আমাদের আনন্দকে বিঘ্নিত করে এমন অনেক শত্রুর মোকাবিলা করতে হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো শত্রু হচ্ছে মৃত্যু? কীভাবে ঈশ্বর এই শত্রুদের ধবংস করবেন? বাইবেলে এসব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে আর এই প্রবন্ধে আমরা এখন সেগুলো পরীক্ষা করব।

 এক প্রেমপূর্ণ সতর্কবাণী

৩, ৪. (ক) আদম ও হবাকে ঈশ্বর কোন আদেশ দিয়েছিলেন? (খ) সেই আদেশের বাধ্য হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

যদিও আদম ও হবাকে চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল, কিন্তু তারা অমর ছিল না। বেঁচে থাকার জন্য, তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হতো, জল পান করতে হতো, ঘুমাতে হতো এবং খাবার খেতে হতো। কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, তাদের জীবনের উৎস যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বজায় রাখতে হতো। (দ্বিতীয়. ৮:৩) তারা যদি যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে নিত, তাহলে তারা বেঁচে থাকতে এবং জীবন উপভোগ করতে পারত। হবাকে সৃষ্টি করার আগে, যিহোবা আদমকে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন: “তুমি এই উদ্যানের সমস্ত বৃক্ষের ফল স্বচ্ছন্দে ভোজন করিও; কিন্তু সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।”—আদি. ২:১৬, ১৭.

‘সদসদ্‌’ বা ভালো-মন্দ ‘জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ’ ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, কোনটা ভালো এবং কোনটা মন্দ তা নির্ধারণ করার অধিকার ঈশ্বরের রয়েছে। ইতিমধ্যেই আদমের ভালো-মন্দ বিষয়ের জ্ঞান ছিল কারণ তাকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তার বিবেক ছিল। কিন্তু সেই বৃক্ষ আদম ও হবাকে এটা মনে করিয়ে দিয়েছিল, তাদের সবসময় যিহোবার নির্দেশনা প্রয়োজন। তারা যদি সেই বৃক্ষের ফল খায়, তাহলে তারা আসলে ঈশ্বরকে এই কথা বলবে, “তোমার শাসন আমাদের প্রয়োজন নেই।” আর এর দুঃখজনক পরিণতি হিসেবে, তারা ও তাদের সন্তানরা মারা যাবে, ঠিক যেমনটা ঈশ্বর তাদের সাবধান করেছিলেন।

মৃত্যু যেভাবে মানবপরিবারে প্রবেশ করে

৫. কেন আদম ও হবা যিহোবার অবাধ্য হয়েছিল?

আদম যিহোবার আজ্ঞা সম্বন্ধে হবাকে জানিয়েছিলেন। হবা সেই আজ্ঞা এত ভালোভাবে জানতেন যে, পরে সেটা প্রায় হুবহু বলতে পেরেছিলেন। (আদি. ৩:১-৩) হবা সেই আজ্ঞা শয়তানের সামনে পুনরায় উল্লেখ করেছিলেন, যে একটা সর্পের মাধ্যমে হবার সঙ্গে কথা বলেছিল। শয়তান নিজের মধ্যে গড়ে ওঠা ক্ষমতা ও স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধি পেতে দিয়েছিল। (তুলনা করুন, যাকোব ১:১৪, ১৫.) সে হবাকে বলেছিল, ঈশ্বর হচ্ছেন মিথ্যাবাদী এবং যদি হবা ঈশ্বরের অবাধ্য হন, তাহলে তিনি মারা যাবেন না বরং ঈশ্বরের সমান হয়ে উঠবেন। (আদি. ৩:৪, ৫) হবা তার কথা বিশ্বাস করেছিলেন, সেই ফল খেয়ে স্বাধীন ব্যক্তির মতো আচরণ করেছিলেন এবং আদমকেও একই কাজ করতে বলেছিলেন। (আদি. ৩:৬, ১৭) শয়তান হবাকে মিথ্যা বলেছিল। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ২:১৪.) আদম যদিও জানতেন, এই কাজটা ভুল, তবুও তিনি তার স্ত্রীর কথা শুনেছিলেন। সেই সর্পকে হয়তো একজন বন্ধু বলে মনে হয়েছিল, কিন্তু এটার মাধ্যমে এমন একজন নিষ্ঠুর শত্রু কথা বলেছিল, যে জানত তার মিথ্যা কথার পরিণতি কত ভয়াবহ হবে।

৬, ৭. আদম ও হবার বিচার যিহোবা কীভাবে পরিচালনা করেছিলেন?

আদম ও হবা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল, যিনি তাদের জীবন দিয়েছিলেন এবং তাদের জন্য সমস্ত উত্তম বিষয় জুগিয়েছিলেন। কী ঘটেছে, সেটা যিহোবা ভালোভাবেই জানতেন। (১ বংশা. ২৮:৯; পড়ুন, হিতোপদেশ ১৫:৩.) কিন্তু তিনি আদম, হবা ও শয়তানকে এটা প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছিলেন, তারা তাঁর সম্বন্ধে আসলে কেমন বোধ করে। একজন পিতা হিসেবে, তিনি নিশ্চয়ই তাদের কাজে অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। (তুলনা করুন, আদি. ৬:৬.) তবে একজন বিচারক হিসেবে, তিনি পাপীদের প্রতি ন্যায়বিচার করেছিলেন।

ঈশ্বর সদসদ্‌ জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ সম্বন্ধে আদমকে এই কথা বলেছিলেন: “যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” সম্ভবত আদম মনে করেছিলেন, এর মানে হচ্ছে তিনি সেই  দিন সূর্যাস্তের আগেই মারা যাবেন। কিন্তু, সেই দিনই পরে যিহোবা আদম ও হবার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। (আদি. ৩:৮) একজন ধার্মিক বিচারক হিসেবে, তিনি প্রথমে তাদের কথা শুনেছিলেন। (আদি. ৩:৯-১৩) তারপর, তিনি দুই পাপীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। (আদি. ৩:১৪-১৯) তিনি যদি তখনই তাদের মেরে ফেলতেন, তাহলে মানবজাতির জন্য তাঁর উদ্দেশ্য কখনো পরিপূর্ণ হতো না। (যিশা. ৫৫:১১) যদিও আদম ও হবার পাপের প্রভাব সঙ্গেসঙ্গেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু যিহোবা তাদের বাঁচিয়ে রেখেছিলেন যাতে তারা সন্তানসন্ততির জন্ম দিতে পারে, যারা আরও ভালো এক ভবিষ্যৎ লাভ করতে পারবে। তিনি আদম ও হবাকে তাদের পাপের দিন থেকেই মৃত হিসেবে দেখেছিলেন। আর যেহেতু ১,০০০ বছর যিহোবার চোখে এক দিনের সমান, তাই তারা এক “দিনের” মধ্যে মারা গিয়েছিল।—২ পিতর ৩:৮.

৮, ৯. আদমের পাপ কীভাবে তার সমস্ত সন্তানকে প্রভাবিত করেছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

আদম ও হবার সন্তানরা কি তাদের পিতা-মাতার কাজের কারণে প্রভাবিত হয়েছিল? হ্যাঁ, হয়েছিল। রোমীয় ৫:১২ পদ ব্যাখ্যা করে, “এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।” প্রেরিত পৌল আরও বলেন: “এক মনুষ্যের অনাজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে পাপী বলিয়া ধরা হইল।” (রোমীয় ৫:১৯) সবচেয়ে প্রথমে, বিশ্বস্ত ব্যক্তি হেবল মারা গিয়েছিলেন। (আদি. ৪:৮) তারপর, আদমের অন্যান্য সন্তান ও তার নাতিনাতনিরা বৃদ্ধ হয়েছিল ও মারা গিয়েছিল। মানুষেরা উত্তরাধিকার সূত্রে পাপ ও মৃত্যু অর্থাৎ এমন দুই শত্রুকে পেয়েছিল, যাদের কাছ থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। পাপ ও মৃত্যু ঠিক কীভাবে আদমের কাছ থেকে তার সন্তানদের শরীরে প্রবেশ করেছে, তা আমরা যদিও জানি না, তবে আমরা পরিণতি দেখতে পারছি।

তাই এটা যুক্তিযুক্ত যে, বাইবেল পাপ ও মৃত্যুকে ‘সর্ব্বজাতীয় লোকদের সম্মুখে টাঙ্গান আবরক বস্ত্রের’ সঙ্গে তুলনা করে, যেটার কারণে ‘সর্ব্বদেশীয় লোকেরা আচ্ছাদিত আছে।’ (যিশা. ২৫:৭) কোনো মানুষই পাপ ও মৃত্যু থেকে রেহাই পায় না। সেই কারণে বাইবেল বলে, “আদমে . . . সকলে মরে।” (১ করি. ১৫:২২) তাই, পৌল এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন: “এই মৃত্যুর দেহ হইতে কে আমাকে নিস্তার করিবে?” (রোমীয় ৭:২৪) কেউ কি পৌলকে উদ্ধার করতে পারতেন? *

পাপ এবং মৃত্যুকে বিলুপ্ত করা হবে

১০. (ক) কোন শাস্ত্রপদগুলো দেখায় যে, যিহোবা মৃত্যুকে শেষ করবেন? (খ) এই শাস্ত্রপদগুলো যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

১০ হ্যাঁ, যিহোবা পৌলকে উদ্ধার করতে পারতেন। বাইবেলে আমরা পড়ি: “তিনি মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিয়াছেন, ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন।” (যিশা. ২৫:৮) একজন বাবা যেমন তার সন্তানদের কষ্টের কারণ দূর করে তাদের চোখের জল মুছে দেন, তেমনই যিহোবা মৃত্যু বিলুপ্ত করে অনেক আনন্দিত হবেন! যিশু এক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করেন। আমরা ১ করিন্থীয় ১৫:২২ পদে পড়ি: “খ্রীষ্টেই সকলে জীবনপ্রাপ্ত হইবে।” এ ছাড়া, “কে আমাকে নিস্তার করিবে?” এই প্রশ্নের উত্তর পৌল নিজেই এভাবে দিয়েছিলেন: “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমি ঈশ্বরের ধন্যবাদ করি।” (রোমীয় ৭:২৫) এই বিষয়টা স্পষ্ট যে, আদম ও হবার পাপের কারণে যিহোবা মানবজাতির প্রতি তাঁর প্রেম প্রকাশ করা বন্ধ করে দেননি। আর  যিশু, যাঁকে যিহোবা আদম ও হবাকে সৃষ্টি করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন, তিনিও মানুষের প্রতি প্রেম প্রকাশ করে যাচ্ছেন। (হিতো. ৮:৩০, ৩১) কিন্তু, কীভাবে মানবপরিবারকে পাপ ও মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করা যেত?

১১. মানবজাতিকে সাহায্য করার জন্য যিহোবা কী করেছিলেন?

১১ আদম যখন পাপ করেছিলেন, তখন যিহোবা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। ফল স্বরূপ, সমস্ত মানুষ উত্তরাধিকার সূত্রে অসিদ্ধতা ও মৃত্যু পেয়েছে। (রোমীয় ৫:১২, ১৬) রোমীয় ৫:১৮ পদ ব্যাখ্যা করে: “এক অপরাধ দ্বারা সকল মনুষ্যের কাছে দণ্ডাজ্ঞা পর্য্যন্ত ফল উপস্থিত হইল।” যিহোবা নিজের মানকে উপেক্ষা না করে মানুষকে সাহায্য করার জন্য কী করতে পারতেন? যিশু এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন, তিনি “অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে” দিতে এসেছেন। (মথি ২০:২৮) একজন সিদ্ধ মানুষ হিসেবে, যিশু মুক্তির মূল্য দিতে পারতেন। এই মুক্তির মূল্য কীভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে?—১ তীম. ২:৫, ৬.

১২. কোন মুক্তির মূল্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছিল?

১২ একজন সিদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে, যিশু চিরকাল বেঁচে থাকতে পারতেন। যিহোবা সেটাই আদমের জন্য চেয়েছিলেন। যিশু তাঁর পিতা ও আদমের বংশধরদের জন্য প্রেমবশত নিজের মানবজীবন বলি দিয়েছিলেন, যেটা আদম যে-জীবন হারিয়েছিলেন, সেটার সমরূপ ছিল। পরে, যিহোবা যিশুকে স্বর্গে একজন আত্মিক ব্যক্তি হিসেবে পুনরুত্থিত করেছিলেন। (১ পিতর ৩:১৮) মুক্তির মূল্য যিহোবার ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠা করেছিল কারণ এক সিদ্ধ জীবনের বিনিময়ে আরেকটা সিদ্ধ জীবন দেওয়া হয়েছিল। যিশু আদমের বংশধরদের জন্য অনন্তজীবন সম্ভবপর করেছিলেন। তাই, পৌল যিশুকে “শেষ আদম” বলে উল্লেখ করেন, যিনি এখন এক জীবনদায়ক আত্মিক ব্যক্তি।—১ করি. ১৫:৪৫.

প্রথম মৃত্যুবরণকারী হেবল যিশুর মুক্তির মূল্য থেকে উপকৃত হবেন (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. যারা মারা গিয়েছে, তাদের জন্য “শেষ আদম” কী করবেন?

১৩ “শেষ আদম” খুব শীঘ্র আদমের বংশধরদের অনন্তজীবন দান করবেন। তাদের মধ্যে এমন অনেক ব্যক্তি থাকবে, যারা ইতিমধ্যে মারা গিয়েছে। তাদেরকে পৃথিবীতে পুনরুত্থিত করা হবে, তাদের জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হবে।—যোহন ৫:২৮, ২৯.

১৪. কীভাবে মানুষের পক্ষে অসিদ্ধতা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভবপর হবে?

১৪ কীভাবে মানুষের পক্ষে অসিদ্ধতা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভবপর হবে? তা সম্পাদন করার জন্য যিহোবা এক স্বর্গীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই সরকারের শাসক হচ্ছেন যিশু এবং মানবজাতির মধ্য থেকে মনোনীত ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তি। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০.) ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তি যেহেতু অসিদ্ধ ছিল, তাই তারা তাদের প্রজাদের পরিস্থিতি বুঝতে পারবে। যিশু ও তাঁর সহ-শাসকরা ১,০০০ বছর ধরে মানুষকে সিদ্ধতায় পৌঁছাতে সাহায্য করবে।—প্রকা. ২০:৬.

১৫, ১৬. (ক) ‘শেষ শত্রু’ কী আর কখন এটাকে বিলুপ্ত করা হবে? (খ) ১ করিন্থীয় ১৫:২৮ পদ অনুযায়ী যিশু কী করবেন?

১৫ এক হাজার বছর পর, বাধ্য লোকেরা পাপ ও অসিদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে। পৌল ব্যাখ্যা করেন: “আদমে যেমন সকলে মরে, তেমনি আবার খ্রীষ্টেই সকলে জীবনপ্রাপ্ত হইবে। কিন্তু প্রত্যেক জন আপন আপন শ্রেণীতে; খ্রীষ্ট অগ্রিমাংশ, পরে খ্রীষ্টের লোক সকল [যে-ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে রাজত্ব করবে] তাঁহার আগমনকালে। তৎপরে পরিণাম হইবে; তখন তিনি সমস্ত আধিপত্য এবং সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও পরাক্রম লোপ করিলে পর পিতা ঈশ্বরের হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিবেন। কেননা যাবৎ তিনি ‘সমস্ত শত্রুকে তাঁহার পদতলে না রাখিবেন,’ তাঁহাকে রাজত্ব করিতেই হইবে। শেষ শত্রু যে মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে।” (১ করি. ১৫:২২-২৬) অবশেষে, আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকার  সূত্রে প্রাপ্ত মৃত্যুকে দূর করে দেওয়া হবে। যে-“আবরক” মানবজাতিকে আচ্ছাদন করে রেখেছিল, তা চিরকালের জন্য দূর হয়ে যাবে।—যিশা. ২৫:৭, ৮.

১৬ পৌল আরও বলেন: “সকলই তাঁহার বশীভূত করা হইলে পর পুত্র আপনিও তাঁহার বশীভূত হইবেন, যিনি সকলই তাঁহার বশে রাখিয়াছিলেন; যেন ঈশ্বরই সর্ব্বেসর্ব্বা হন।” (১ করি. ১৫:২৮) যিশুর শাসনের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। তাই তিনি আনন্দের সঙ্গে তাঁর কর্তৃত্ব যিহোবার কাছে ফিরিয়ে দেবেন এবং সিদ্ধ মানবপরিবারকে তাঁর সামনে উপস্থাপন করবেন।

১৭. শয়তানের কী হবে?

১৭ শয়তান, যে মানবজাতির সমস্ত দুর্দশার জন্য দায়ী, তার কী হবে? আমরা প্রকাশিত বাক্য ২০:৭-১৫ পদে এর উত্তর পাই। ১,০০০ বছর রাজত্বের শেষে, শয়তানকে সুযোগ দেওয়া হবে যেন সে সিদ্ধ মানবজাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য চূড়ান্ত পরীক্ষা করতে পারে। তারপর, শয়তান ও সেইসঙ্গে শয়তানকে অনুসরণ করা বেছে নেবে এমন যেকোনো ব্যক্তিকে চিরতরে ধবংস করা হবে। এটাকে “দ্বিতীয় মৃত্যু” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (প্রকা. ২১:৮) এই মৃত্যু কখনো “বিলুপ্ত হইবে” না কারণ যাদের “দ্বিতীয় মৃত্যু” হবে, তারা আর কখনো বেঁচে উঠবে না। আমরা যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তাহলে “দ্বিতীয় মৃত্যু” আমাদের ক্ষতি করতে পারে এমনটা ভেবে আমাদের উদ্‌বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই।

১৮. ঈশ্বর আদমকে যে-দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তা অবশেষে কীভাবে সম্পন্ন করা হবে?

১৮ সমস্ত মানুষ তখন সিদ্ধতায় পৌঁছাবে এবং অনন্তজীবন লাভ করার জন্য যিহোবার কাছ থেকে পুরোপুরিভাবে অনুমোদন লাভ করবে। মানুষের আনন্দকে বিঘ্নিত করে এমন সমস্ত শত্রু তখন দূর হয়ে যাবে। ঈশ্বর আদমকে যে-দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাকে ছাড়াই সেই দায়িত্ব সম্পন্ন করা হবে। তার বংশধরেরা এই পৃথিবী ও পশুপাখির যত্ন নেওয়ার কাজ উপভোগ করবে। খুব শীঘ্র যিহোবা আমাদের শেষ শত্রু অর্থাৎ মৃত্যুকে বিলুপ্ত করে দেবেন বলে আমরা কতই-না আনন্দিত হতে পারি!

^ অনু. 9 শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) বই বলে, বিজ্ঞানীরা যখন কেন আমরা বৃদ্ধ হই ও মারা যাই, সেটার প্রকৃতিগত কোনো কারণ খোঁজার চেষ্টা করে, তখন তারা একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপেক্ষা করে। তারা এটা স্বীকার করে না যে, সৃষ্টিকর্তাই প্রথম মানব দম্পতিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। সেই কারণে, তারা প্রক্রিয়াটা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে না।—খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৪৭.