সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিশুর পুনরুত্থান—আমাদের জন্য এর অর্থ

যিশুর পুনরুত্থান—আমাদের জন্য এর অর্থ

“তিনি উঠিয়াছেন।”—মথি ২৮:৬.

১, ২. (ক) কিছু ধর্মীয় নেতা কী জানতে চেয়েছিল আর পিতর কীভাবে উত্তর দিয়েছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) কেন পিতর সাহসের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলেন?

যিশুর মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ পর, প্রেরিত পৌল একদল উগ্র যিহুদি ধর্মীয় নেতার মুখোমুখি হন। এই লোকেরাই যিশুকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। এখন তারা পিতরের ওপর রেগে গিয়েছে কারণ পিতর এমন একজন ব্যক্তিকে সুস্থ করেছেন, যিনি হাঁটতে পারতেন না। তারা পিতরকে জিজ্ঞেস করে: “কি ক্ষমতায় অথবা কি নামে তোমরা এই কর্ম্ম করিয়াছ?” পিতর সাহসের সঙ্গে উত্তর দেন: “নাসরতীর যীশু খ্রীষ্টের নামে, যাহাকে আপনারা ক্রুশে দিয়াছিলেন, যাহাকে ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইলেন, তাঁহারই গুণে এই ব্যক্তি আপনাদের সম্মুখে সুস্থ শরীরে দাঁড়াইয়া আছে।”—প্রেরিত ৪:৫-১০.

এর আগে, পিতর এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি তিন বার যিশুকে অস্বীকার করেছিলেন। (মার্ক ১৪:৬৬-৭২) কিন্তু এই বার, পিতর ধর্মীয় নেতাদের সামনে ভয় না পেয়ে বরং সাহসী হয়েছিলেন। কেন? পবিত্র আত্মার সাহায্যের পাশাপাশি পিতরের এই আস্থাও ছিল, যিশু জীবিত আছেন। কেন সেই প্রেরিত এতটা নিশ্চিত হয়েছিলেন? আর কেন আমরা একই আস্থা রাখতে পারি?

৩, ৪. (ক) যিশুর প্রেরিতদের জন্মের আগে পুনরুত্থানের কোন কোন ঘটনা ঘটেছিল? (খ) যিশু কাদের পুনরুত্থিত করেছিলেন?

মৃত ব্যক্তিরা যে আবার বেঁচে উঠতে পারে, তা প্রেরিতরা জানত।  প্রেরিতদের জন্মের অনেক আগে, ঈশ্বর ভাববাদী এলিয় ও ইলীশায়কে মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। (১ রাজা. ১৭:১৭-২৪; ২ রাজা. ৪:৩২-৩৭) এমনকী যখন ইলীশায়ের কবরে একজন মৃত ব্যক্তির দেহ ফেলে দেওয়া হয়েছিল আর তা ইলীশায়ের অস্থি স্পর্শ করেছিল, তখন সেই ব্যক্তি জীবিত হয়ে উঠেছিলেন। (২ রাজা. ১৩:২০, ২১) প্রাথমিক খ্রিস্টানরা এই বিবরণগুলো বিশ্বাস করত, ঠিক যেমনটা এখন আমরা বিশ্বাস করি, ঈশ্বরের বাক্য হল সত্য।

একইভাবে, আপনি যখন সেই বিবরণগুলো পড়েন, যেখানে যিশু মৃত ব্যক্তিদের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন, তখন সেগুলো আপনার হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দেয়। উদাহরণ স্বরূপ, যিশু যখন বিধবার একমাত্র ছেলেকে পুনরুত্থিত করেন, তখন সেই বিধবা কতটা অবাক হয়েছিলেন, তা একটু কল্পনা করুন। (লূক ৭:১১-১৫) অথবা সেই সময়ের কথা চিন্তা করুন, যখন যিশু এক অল্পবয়সি মেয়েকে পুনরুত্থিত করেছিলেন। তার বাবা-মা যখন তাদের মেয়েকে জীবিত দেখতে পেয়েছিল, তখন তাদের গভীর কষ্ট নিশ্চয়ই আনন্দে পরিণত হয়েছিল! (লূক ৮:৪৯-৫৬) আর লাসার যখন তার কবর থেকে জীবিত অবস্থায় হেঁটে বের হয়ে এসেছিলেন, তখন লোকেরা নিশ্চয়ই কতই-না রোমাঞ্চিত হয়েছিল!—যোহন ১১:৩৮-৪৪.

যিশুর পুনরুত্থান যে-কারণে অদ্বিতীয়

৫. কীভাবে যিশুর পুনরুত্থান এর আগে সংঘটিত পুনরুত্থান থেকে আলাদা ছিল?

প্রেরিতরা জানত, যিশুর পুনরুত্থান এর আগে সংঘটিত অন্য সমস্ত পুনরুত্থান থেকে আলাদা। আগে পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের মাংসিক দেহ দেওয়া হয়েছিল আর পরে তারা আবার মারা গিয়েছিল। কিন্তু, যিশুকে এক আত্মিক দেহ দেওয়া হয়েছিল, যা কখনো ধবংস হতে পারে না। (পড়ুন, প্রেরিত ১৩:৩৪.) পিতর লিখেছিলেন, যিশু “মাংসে হত, কিন্তু আত্মায় জীবিত হইলেন।” এ ছাড়া, “তিনি স্বর্গে গমন করিয়া ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন; দূতগণ ও কর্ত্তৃত্ব সকল ও পরাক্রমসমূহ তাঁহার বশীকৃত হইয়াছে।” (১ পিতর ৩:১৮-২২) অন্যান্য পুনরুত্থানের ঘটনা ছিল অসাধারণ অলৌকিক কাজ, কিন্তু যিশুর পুনরুত্থান ছিল সর্বকালের সবচেয়ে মহৎ অলৌকিক কাজ।

৬. যিশুর পুনরুত্থান তাঁর শিষ্যদের কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?

যিশুর পুনরুত্থান শিষ্যদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর শত্রুরা মনে করেছিল তিনি মৃত, কিন্তু আসলে তখন তিনি আর মৃত অবস্থায় ছিলেন না। এর পরিবর্তে, তিনি একজন শক্তিশালী আত্মিক ব্যক্তি হিসেবে জীবিত হয়ে উঠেছিলেন এবং কোনো মানুষই তাঁর কোনো ক্ষতি করতে পারত না। তাঁর পুনরুত্থান প্রমাণ করেছিল, তিনি ঈশ্বরের পুত্র। শিষ্যরা যেহেতু জানত যিশু জীবিত আছেন, তাই তারা আর তখন দুঃখিত কিংবা আতঙ্কিত ছিল না। বরং তারা উদ্যমী এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। যিশু যদি পুনরুত্থিত না হতেন, তাহলে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হতো না এবং তারা যে-সুসমাচার প্রচার করেছিল, সেগুলোর কোনো অর্থই থাকত না।

৭. যিশু এখন কী করছেন আর আমরা কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?

আমরা জানি, যিশু কেবল একজন মহান ব্যক্তিই ছিলেন না। যিশু এখন জীবিত আছেন এবং বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজ তত্ত্বাবধান করছেন। তিনি হচ্ছেন ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের রাজা। এই রাজ্য শীঘ্রই পৃথিবী থেকে সমস্ত মন্দতা দূর করে দেবে এবং এই পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করবে, যেখানে লোকেরা চিরকাল বেঁচে থাকবে। (লূক ২৩:৪৩) যিশু যদি পুনরুত্থিত না হতেন, তাহলে এগুলোর কোনোটাই ঘটত না। তাহলে কেন আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি, যিশু মৃত্যু থেকে উত্থিত হয়েছেন? আর তাঁর পুনরুত্থান আমাদের জন্য কী অর্থ রাখে?

মৃত্যুর ওপর যিহোবার ক্ষমতা

৮, ৯. (ক) কেন যিহুদি ধর্মীয় নেতারা যিশুর কবর পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছিল? (খ) দু-জন নারী যখন কবরের কাছে এসেছিল, তখন কী ঘটেছিল?

যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর, যিহুদি ধর্মীয়  নেতারা পীলাতের কাছে গিয়েছিল এবং এই কথা বলেছিল: “মহাশয়, আমাদের মনে পড়িতেছে, সেই প্রবঞ্চক জীবিত থাকিতে বলিয়াছিল, তিন দিনের পরে আমি উঠিব। অতএব তৃতীয় দিবস পর্য্যন্ত তাহার কবর চৌকি দিতে আজ্ঞা করুন; পাছে তাহার শিষ্যরা আসিয়া তাহাকে চুরি করিয়া লইয়া যায়, আর লোকদিগকে বলে, তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন; তাহা হইলে প্রথম ভ্রান্তি অপেক্ষা শেষ ভ্রান্তি আরও মন্দ হইবে।” পীলাত তাদের বলেছিলেন: “তোমাদের নিকটে প্রহরি-দল আছে; তোমরা গিয়া যথাসাধ্য রক্ষা কর।” তারা ঠিক সেটাই করেছিল।—মথি ২৭:৬২-৬৬.

যিশুর মৃতদেহ বিরাট পাথর কেটে তৈরি করা এক কবরে সমাহিত করা হয়েছিল, যেটার প্রবেশমুখে একটা বড়ো পাথর ছিল। ধর্মীয় নেতারা চেয়েছিল যেন যিশু চিরকাল সেই কবরে থাকেন। কিন্তু, যিহোবার চিন্তাভাবনা পুরোপুরি ভিন্ন ছিল। তিন দিন পর, যিশুর দু-জন অনুসারী, মগ্দলীনী মরিয়ম ও অন্য মরিয়ম, সেই কবরের কাছে এসেছিল। সেখানে তারা দেখতে পেয়েছিল, পাথরটা সরানো রয়েছে আর একজন স্বর্গদূত সেটার ওপরে বসে আছেন। সেই স্বর্গদূত ওই নারীদেরকে কবরের ভিতরে তাকিয়ে সেটা যে খালি, তা দেখতে বলেছিলেন। স্বর্গদূত তাদের বলেছিলেন: “তিনি এখানে নাই; কেননা তিনি উঠিয়াছেন।” (মথি ২৮:১-৬) যিশু জীবিত হয়েছেন!

১০. যিশু যে পুনরুত্থিত হয়েছেন, সেই বিষয়ে পৌল কীভাবে প্রমাণ দিয়েছিলেন?

১০ পরবর্তী ৪০ দিন পর্যন্ত যা ঘটেছে, তাতে আর কোনো সন্দেহই থাকে না যে, যিশু পুনরুত্থিত হয়েছেন। প্রেরিত পৌল করিন্থীয়দের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন; আর তিনি কৈফাকে, পরে সেই বারো জনকে দেখা দিলেন; তাহার পরে একেবারে পাঁচ শতের অধিক ভ্রাতাকে দেখা দিলেন, তাহাদের অধিকাংশ লোক অদ্যাপি বর্ত্তমান রহিয়াছে, কিন্তু কেহ কেহ নিদ্রাগত হইয়াছে। তাহার পরে তিনি যাকোবকে, পরে সকল প্রেরিতকে দেখা দিলেন। সকলের শেষে অকালজাতের ন্যায় যে আমি, আমাকেও দেখা দিলেন।”—১ করি. ১৫:৩-৮.

যে-চারটে কারণে আমরা জানি, যিশু পুনরুত্থিত হয়েছেন

১১. কীভাবে “শাস্ত্রানুসারে” যিশুর পুনরুত্থান হয়েছিল?

১১ প্রথমত, “শাস্ত্রানুসারে” যিশুর পুনরুত্থান হয়েছিল। ঈশ্বরের বাক্যে সেই পুনরুত্থান সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাজা দায়ূদ লিখেছিলেন, ঈশ্বরের “সাধুকে [“অনুগত ব্যক্তিকে,” NW]” পাতালে বা কবরে পরিত্যাগ করা হবে না। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৬:১০.) ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন, পিতর ব্যাখ্যা করেছিলেন, যিশুই ছিলেন সেই “অনুগত ব্যক্তি।” তিনি বলেছিলেন: “পূর্ব্ব হইতে দেখিয়া [দায়ূদ] খ্রীষ্টেরই পুনরুত্থান বিষয়ে এই কথা কহিলেন যে, তাঁহাকে পাতালে পরিত্যাগও করা হয় নাই, তাঁহার মাংস ক্ষয়ও দেখে নাই।”—প্রেরিত ২:২৩-২৭, ৩১.

১২. কারা পুনরুত্থিত যিশুকে দেখেছিল?

১২ দ্বিতীয়ত, অনেক চাক্ষুষ সাক্ষি পুনরুত্থিত যিশুকে দেখেছিল। যিশু পুনরুত্থানের পর ৪০ দিন পর্যন্ত, তাঁর কবরের কাছাকাছি বাগানে, ইম্মায়ূ গ্রামে যাওয়ার পথে এবং অন্যান্য জায়গায় তাঁর শিষ্যদের দেখা দিয়েছিলেন। (লূক ২৪:১৩-১৫) তিনি পিতর-সহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে এবং দলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। একবার, যিশু এমনকী পাঁচ-শোরও বেশি লোকের সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন। অনেক চাক্ষুষ সাক্ষি পুনরুত্থিত যিশুকে দেখেছিল আর এই সত্য আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।

১৩. শিষ্যদের উদ্যোগ কীভাবে দেখায় যে, তারা যিশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে নিশ্চিত ছিল?

১৩ তৃতীয়ত, শিষ্যরা যিশুর পুনরুত্থান সম্বন্ধে উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করেছিল। তারা  তাড়িত হয়েছিল, কষ্টভোগ করেছিল এবং কেউ কেউ প্রচার করার কারণে মৃত্যুবরণ করেছিল। এই বিষয়টা ভেবে দেখুন: যিশু যদি জীবনে উত্থিত না হতেন, তাহলে পিতর কি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই একই ব্যক্তিদের কাছে খ্রিস্টের পুনরুত্থান সম্বন্ধে প্রচার করতেন, যারা যিশুকে ঘৃণা করেছিল এবং তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল? পিতর এবং অন্য শিষ্যদের এই আস্থা ছিল, যিশু জীবিত হয়েছেন এবং প্রচার কাজ তত্ত্বাবধান করছেন। এ ছাড়া, যিশুর পুনরুত্থান তাঁর অনুসারীদেরকে এই দৃঢ় আশা প্রদান করেছিল, তারাও পুনরুত্থিত হবে। উদাহরণ স্বরূপ, স্তিফান এই দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে মারা গিয়েছিলেন, তিনি পুনরুত্থিত হবেন।—প্রেরিত ৭:৫৫-৬০.

১৪. কেন আপনি বিশ্বাস করেন, যিশু জীবিত আছেন?

১৪ চতুর্থত, আমাদের কাছে এই প্রমাণ রয়েছে, যিশু এখন রাজা হিসেবে শাসন করছেন এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে কাজ করছেন। সত্য খ্রিস্ট ধর্ম ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে। যিশু যদি মৃত্যু থেকে উত্থিত না হতেন, তাহলে কি সেটা ঘটত? আসলে, যিশু যদি পুনরুত্থিত না হতেন, তাহলে আমরা হয়তো কখনো তাঁর সম্বন্ধে শুনতে পেতাম না। কিন্তু, আমাদের কাছে এটা বিশ্বাস করার জোরালো কারণ রয়েছে, যিশু জীবিত আছেন এবং বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজের তত্ত্বাবধান করছেন।

যিশুর পুনরুত্থান আমাদের জন্য যে-অর্থ রাখে

১৫. কেন যিশুর পুনরুত্থান আমাদের প্রচার করার সাহস জোগায়?

১৫ খ্রিস্টের পুনরুত্থান আমাদেরকে প্রচার করার জন্য সাহস জোগায়। যিশুর সময় থেকে, ঈশ্বরের শত্রুরা প্রচার কাজ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন জঘন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে যেমন, ধর্মভ্রষ্টতা, উপহাস, দৌরাত্ম্য, নিষেধাজ্ঞা, অত্যাচার এবং মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু, বাইবেল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল: “যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না।” (যিশা. ৫৪:১৭) শয়তান যে-ব্যক্তিদের ব্যবহার করে, তাদের আমরা ভয় পাই না। যিশু তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী আমাদের সাহায্য করছেন। (মথি ২৮:২০) আমরা আত্মবিশ্বাসী হতে পারি, কারণ আমাদের শত্রুরা যা-ই করুক না কেন, তারা কখনোই আমাদের থামাতে পারবে না!

যিশুর পুনরুত্থান আমাদেরকে প্রচার করার জন্য সাহস জোগায় (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬, ১৭. (ক) যিশুর পুনরুত্থান কীভাবে তাঁর সমস্ত শিক্ষাকে সত্য বলে প্রমাণ করেছিল? (খ) যোহন ১১:২৫ পদ অনুসারে, ঈশ্বর যিশুকে কোন ক্ষমতা দিয়েছেন?

১৬ যিশুর পুনরুত্থান তাঁর সমস্ত শিক্ষাকে সত্য বলে প্রমাণ করেছিল। একজন বাইবেল পণ্ডিত লিখেছিলেন, খ্রিস্ট যদি পুনরুত্থিত না হয়ে থাকেন, তাহলে খ্রিস্টানরা হচ্ছে এমন বোকা লোক, যারা একটা বিরাট মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করে। পৌল লিখেছিলেন, যিশু যদি পুনরুত্থিত না হয়ে থাকেন, তাহলে খ্রিস্টানদের প্রচার কাজ এবং তাদের বিশ্বাস ব্যর্থ হয়ে যেত। সত্যি বলতে কী, সুসমাচারের বিবরণগুলো কেবল এমন এক বেদনাদায়ক কাহিনি হয়ে যেত, যে-কাহিনিতে একজন ভালো ও বিজ্ঞ ব্যক্তিকে তাঁর শত্রুরা হত্যা করে। কিন্তু, যিশু পুনরুত্থিত হয়েছিলেন আর এটা প্রমাণ দিয়েছিল, তাঁর সমস্ত শিক্ষা সত্য।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:১৪, ১৫, ২০.

১৭ যিশু বলেছিলেন: “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন; যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে মরিলেও জীবিত থাকিবে।” (যোহন ১১:২৫) যিশুর এই প্রতিজ্ঞা নিশ্চিতভাবেই পরিপূর্ণ হবে। যিহোবা যিশুকে ক্ষমতা দিয়েছেন, যেন তিনি স্বর্গে শাসন করবে এমন ব্যক্তিদের ও সেইসঙ্গে পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে এমন কোটি কোটি ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত করেন। যিশুর বলিদান এবং পুনরুত্থান এই নিশ্চয়তা দেয়, পৃথিবীতে আর মৃত্যু হবে না। তাই, আমরা যেকোনো পরীক্ষা সহ্য করার আর এমনকী সাহসের সঙ্গে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার শক্তি লাভ করতে পারি!

১৮. যিশুর পুনরুত্থান কী নিশ্চয়তা দেয়?

১৮ যিশুর পুনরুত্থান আমাদের এই নিশ্চয়তা দেয়, যিহোবার প্রেমপূর্ণ মানদণ্ড অনুসারে  লোকেদের বিচার করা হবে। পৌল আথীনীতে একদল নারী-পুরুষের কাছে বলেছিলেন, ঈশ্বর “আপনার নিরূপিত ব্যক্তি দ্বারা ন্যায়ে জগৎসংসারের বিচার করিবেন; এই বিষয়ে সকলের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিয়াছেন, ফলতঃ মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠাইয়াছেন।” (প্রেরিত ১৭:৩১) ঈশ্বর যিশুকে আমাদের বিচারক হওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছেন আর তাঁর বিচার যে ন্যায্য ও প্রেমপূর্ণ হবে, সেই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি।—পড়ুন, যিশাইয় ১১:২-৪.

১৯. খ্রিস্টের পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস আমাদেরকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

১৯ যিশুর পুনরুত্থানে বিশ্বাস করি বলেই আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চাই। যিশুকে যদি তাঁর জীবন ফিরিয়ে দিয়ে পুনরুত্থিত করা না হতো, তাহলে আমরা পাপ ও মৃত্যুর অধীনেই থেকে যেতাম। (রোমীয় ৫:১২; ৬:২৩) আমাদের কোনো আশাই থাকত না আর আমরা হয়তো এভাবে বলতাম: “আইস, আমরা ভোজন পান করি, কেননা কল্য মরিব।” (১ করি. ১৫:৩২) কিন্তু, আমরা জীবনের আনন্দফুর্তির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি না। এর পরিবর্তে, আমরা পুনরুত্থানের আশাকে মূল্যবান বলে গণ্য করি এবং সবসময় যিহোবার বাধ্য হওয়ার জন্য ইচ্ছুক থাকি।

২০. যিশুর পুনরুত্থান কীভাবে যিহোবার মহত্ত্বের প্রমাণ দেয়?

২০ যিশুর পুনরুত্থান হচ্ছে যিহোবার মহত্ত্বের প্রমাণ, যিনি ‘তাহাদের পুরস্কারদাতা, যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে।’ (ইব্রীয় ১১:৬) যিশুকে স্বর্গে অমর জীবনে পুনরুত্থিত করার জন্য যিহোবা অসীম ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা ব্যবহার করেছিলেন। এ ছাড়া, ঈশ্বর দেখিয়েছিলেন, তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করার সামর্থ্য তাঁর রয়েছে। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, এক বিশেষ ‘বংশ’ নিখিলবিশ্বের শাসন সংক্রান্ত বিচার্য বিষয় মীমাংসা করবে। তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার জন্য, সেই বংশ অর্থাৎ যিশুকে মারা যেতে ও পুনরুত্থিত হতে হয়েছিল।—আদি. ৩:১৫.

২১. পুনরুত্থানের আশা আপনার জন্য কী অর্থ রাখে?

২১ যিহোবা আমাদের পুনরুত্থানের আশা দিয়েছেন বলে আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে: “দেখ, মনুষ্যদের সহিত ঈশ্বরের আবাস; তিনি তাহাদের সহিত বাস করিবেন, এবং তাহারা তাঁহার প্রজা হইবে; এবং ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন, ও তাহাদের ঈশ্বর হইবেন। আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” এই প্রতিজ্ঞা প্রেরিত যোহনের কাছে করা হয়েছিল আর তাকে এই কথা বলা হয়েছিল: “লিখ, কেননা এ সকল কথা বিশ্বসনীয় ও সত্য।” কে যোহনকে সেই প্রকাশিত বাক্য দিয়েছেন? পুনরুত্থিত যিশু খ্রিস্ট!—প্রকা. ১:১; ২১:৩-৫.