সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একত্রে এই পুরোনো জগতের শেষকে মোকাবিলা করা

একত্রে এই পুরোনো জগতের শেষকে মোকাবিলা করা

“আমরা পরস্পর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।”—ইফি. ৪:২৫.

১, ২. ঈশ্বরের লোকেরা অল্পবয়সি এবং বৃদ্ধ, যে-ই হোক না কেন কীভাবে তাঁকে উপাসনা করুক বলে তিনি চান?

তুমি কি একজন অল্পবয়সি? যদি তা-ই হয়, তাহলে তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো যে, তুমি হলে যিহোবার বিশ্বব্যাপী মণ্ডলীর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেক দেশে, যারা বাপ্তিস্ম নিয়ে থাকে, তাদের মধ্যে বিরাট সংখ্যক ব্যক্তিই হল অল্পবয়সি। এটা দেখা খুবই উৎসাহজনক যে, অনেক অল্পবয়সি যিহোবাকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে!

একজন অল্পবয়সি হিসেবে তুমি কি তোমার বয়সি ব্যক্তিদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসো? সম্ভবত। আমরা আমাদের সমবয়সি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি। তা সত্ত্বেও, যিহোবা চান যেন আমরা আমাদের সমস্ত ভাই-বোনের সঙ্গে একত্রে তাঁকে উপাসনা করি। তিনি চান, তাঁর লোকেরা যেন একতাবদ্ধ থাকে, তা তাদের বয়স অথবা পটভূমি যা-ই হোক না কেন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছা এই যেন “সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীম. ২:৩, ৪) আর প্রকাশিত বাক্য ৭:৯ পদ, যারা ঈশ্বরের উপাসনা করে, তাদেরকে এভাবে বর্ণনা করে যে, তারা ‘প্রত্যেক জাতি ও বংশ ও প্রজাবৃন্দ ও ভাষা’ থেকে এসেছে।

৩, ৪. (ক) বর্তমানে অনেক অল্পবয়সির মনোভাব কেমন? (খ) ইফিষীয় ৪:২৫ পদে পৌল মণ্ডলীকে কীভাবে বর্ণনা করেছেন?

যে-অল্পবয়সিরা যিহোবাকে সেবা করে এবং যারা করে না, তাদের মধ্যে এক বিরাট পার্থক্য রয়েছে। যিহোবাকে সেবা করে না এমন অনেকে কেবল নিজেদের  ব্যাপারে এবং তারা যা চায়, সেই বিষয়ে আগ্রহী। বাস্তবিকপক্ষে কিছু গবেষক বলেছেন, বর্তমানে অল্পবয়সিরা আগের চেয়ে আরও বেশি স্বার্থপর হয়ে গিয়েছে। তারা যেভাবে কথা বলে এবং পোশাক-আশাক পরে, তা দেখায় যে, অন্যদের প্রতি, বিশেষভাবে বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি তাদের কোনো সম্মানই নেই।

এই মনোভাব চারিদিকে দেখা যায়, তাই তা এড়িয়ে চলার এবং যিহোবাকে খুশি করার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টার প্রয়োজন। এমনকী প্রথম শতাব্দীতেও পৌল খ্রিস্টানদেরকে একইরকম মনোভাব সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়েছিলেন। তিনি এই আত্মা বা মনোভাবকে এভাবে বর্ণনা করেছেন, “যে আত্মা এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে।” (পড়ুন, ইফিষীয় ২:১-৩.) এটা দেখা খুবই উৎসাহজনক, মণ্ডলীতে যে-অল্পবয়সিরা রয়েছে, তাদের মনোভাব এইরকম নয়। তারা তাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে যিহোবাকে সেবা করতে চায়। তারা উপলব্ধি করে, মণ্ডলী হল বিভিন্ন অঙ্গ বা সদস্য নিয়ে গঠিত একটা দেহের মতো, যেগুলো একত্রে কাজ করে। পৌল যেমন লিখেছিলেন, “আমরা পরস্পর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।” (ইফি. ৪:২৫) যতই আমরা শয়তানের জগতের শেষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, ততই আমাদের ভাই ও বোনদের সঙ্গে একতাবদ্ধ হওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। পরবর্তী বাইবেলের উদাহরণগুলো আমাদের দেখতে সাহায্য করবে যে, কেন আমাদের পরস্পরের কাছাকাছি থাকতে অর্থাৎ একতাবদ্ধ হতে হবে।

তারা পরস্পরের কাছাকাছি ছিল

৫, ৬. লোট ও তার পরিবারের কাছ থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?

অতীতে যিহোবার লোকেরা অত্যন্ত বিপদজনক কিছু পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল। তারা যখন একতাবদ্ধ ছিল এবং পরস্পরকে সাহায্য করেছিল, তখন যিহোবা তাদেরকে সুরক্ষা করেছিলেন। অল্পবয়সি এবং বৃদ্ধ হিসেবে আমরা সকলেই বাইবেলের এই উদাহরণগুলো থেকে শিখতে পারি। আসুন আমরা দেখি যে, লোটের প্রতি কী ঘটেছিল।

লোট এবং তার পরিবার বিপদের মধ্যে ছিলেন। যিহোবা সদোম নগরটা ধবংস করতে যাচ্ছিলেন, যে-নগরে তারা বাস করতেন। তিনি স্বর্গদূতদের পাঠিয়ে লোটকে সাবধান করে দিয়েছিলেন, যেন তিনি সেই নগর ছেড়ে পাহাড়ে পালিয়ে যান। তারা লোটকে বলেছিলেন, “প্রাণরক্ষার্থ পলায়ন কর।” (আদি. ১৯:১২-২২) লোট এবং তার দুই মেয়ে সেই নির্দেশনার প্রতি বাধ্য হয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় হল, লোটের পরিবারের অন্যান্যরা বাধ্য হননি। লোট যখন তার ভাবী জামাতাদের সেই জায়গা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন, তখন তারা সেই বৃদ্ধ ব্যক্তিকে ‘উপহাসকারী বলিয়া জ্ঞান করিয়াছিলেন।’ তারা তার কথাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেননি, তাই যখন ওই নগর ধবংস করে দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা মারা গিয়েছিলেন। (আদি. ১৯:১৪) কেবলমাত্র লোট ও তার দুই মেয়ে রক্ষা পেয়েছিলেন কারণ তারা বাধ্য থেকেছিলেন এবং পরস্পরের কাছাকাছি ছিলেন।

৭. কীভাবে যিহোবা সেই লোকেদের একতাবদ্ধ দলকে সাহায্য করেছিলেন, যারা মিশর ত্যাগ করেছিল?

এ ছাড়া, আমরা ইস্রায়েলীয়দের উদাহরণ থেকেও শিখতে পারি, যখন তারা মিশর ত্যাগ করেছিল। তারা ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে যায়নি এবং প্রতিটা দল যার যার মতো করে প্রতিজ্ঞাত দেশে যাওয়ার পথ বেছে নেয়নি। এর পরিবর্তে, তারা একতাবদ্ধ একটা দল হিসেবে যাত্রা করেছিল। আর যিহোবা যখন লোহিত সাগরের জল দু-ভাগ করেছিলেন, তখন মোশি কেবল একা অথবা মাত্র কয়েক জন ইস্রায়েলীয়কে নিয়ে সেখান দিয়ে যাননি। বরং, পুরো জাতি একত্রে মোশির সঙ্গে গিয়েছিল এবং যিহোবা তাদেরকে সুরক্ষা করেছিলেন। (যাত্রা. ১৪:২১, ২২, ২৯, ৩০) এমনকী ইস্রায়েলীয় নয় এমন অনেকে যিহোবাকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে মিশর ত্যাগ করেছিল। সমস্ত লোক পরস্পরের কাছাকাছি ছিল। (যাত্রা. ১২:৩৮) একটা ছোটো দল হিসেবে লোকেরা, হতে পারে অল্পবয়সিরা যদি নিজ নিজ পথে যেত, যেটাকে তারা হয়তো সর্বোত্তম পথ বলে মনে করত, তাহলে তা মূর্খতার কাজ হতো। কেউ যদি নিজের ইচ্ছেমতো কোনো পথে যেতেন, তাহলে তিনি যিহোবার কাছ থেকে সুরক্ষা লাভ করতেন না।—১ করি. ১০:১.

৮. যিহোশাফটের দিনে ঈশ্বরের লোকেরা কীভাবে একতাবদ্ধ হয়েছিল?

রাজা যিহোশাফটের দিনে, এক বৃহৎ এবং শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী ঈশ্বরের লোকেদের আক্রমণ করার জন্য আসছিল। (২ বংশা. ২০:১, ২) ভয়ংকর শত্রুরা যখন ইস্রায়েলীয়দের ঘিরে ফেলেছিল, তখন তারা কী করেছিল? তারা যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিল এবং তাঁর নির্দেশনা চেয়ে প্রার্থনা করেছিল। (পড়ুন,  ২ বংশাবলি ২০:৩, ৪.) ইস্রায়েলীয়রা যার যার মতো করে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেনি বরং তারা সকলে একত্রিত হয়েছিল। বাইবেল বলে: “শিশু, স্ত্রীলোক ও সন্তানগণের সহিত সমস্ত যিহূদা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে দণ্ডায়মান হইল।” (২ বংশা. ২০:১৩) অল্পবয়সি ও বৃদ্ধ, পুরো জাতি যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিল এবং তাদেরকে যা করতে বলা হয়েছিল, তা-ই করেছিল। তারা একত্রে ছিল এবং যিহোবা তাদেরকে তাদের শত্রুদের হাত থেকে সুরক্ষা করেছিলেন। (২ বংশা. ২০:২০-২৭) এটা হল ঈশ্বরের লোকেরা একটা দল হিসেবে কীভাবে বিরোধিতার মোকাবিলা করতে পারে, সেটার এক উত্তম উদাহরণ।

৯. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

প্রথম শতাব্দীতে খ্রিস্টানরা শান্তিতে ও একতাবদ্ধভাবে যিহোবার উপাসনা করত। উদাহরণ স্বরূপ, অনেক যিহুদি এবং ন-যিহুদি খ্রিস্টান হওয়ার পর, প্রেরিতদের শিক্ষা অনুসরণ করেছিল। তারা একত্রে সময় কাটাত, খাবার খেত এবং প্রার্থনা করত। (প্রেরিত ২:৪২) আর খ্রিস্টানদের যখন তাড়না করা হয়েছিল, তখন তারা একতাবদ্ধ ছিল। সেই সময়ই তাদের পরস্পরের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। (প্রেরিত ৪:২৩, ২৪) আমরাও যখন তাড়িত হই, তখন আমাদেরও একতাবদ্ধ থাকতে এবং পরস্পরকে সমর্থন করতে হবে।

যিহোবার দিন আসার আগে একতাবদ্ধ হওয়া

১০. কখন আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি একতাবদ্ধ হতে হবে?

১০ খুব শীঘ্র আমরা মানবইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হব। ভাববাদী যোয়েল সেই সময়কে “তিমির ও অন্ধকারের দিন” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (যোয়েল ২:১, ২; সফ. ১:১৪) সেই সময় ঈশ্বরের লোকেদের আগের চেয়ে আরও বেশি একতাবদ্ধ হতে হবে। যিশুর কথাগুলো মনে রাখবেন: “যে কোন রাজ্য আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তাহা উচ্ছিন্ন হয়।”—মথি ১২:২৫.

১১. গীতসংহিতা ১২২:৩, ৪ পদ থেকে ঈশ্বরের লোকেরা একতা সম্বন্ধে কী শিখতে পারে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১১ আমাদের কতটা একতাবদ্ধ হতে হবে? প্রাচীন যিরূশালেমে যেভাবে বাড়ি নির্মাণ করা হতো, সেটা থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করতে পারি। সেগুলো এত কাছাকাছি নির্মাণ করা হতো যে, গীতরচক সেটাকে “একত্র সংযুক্ত” শহর হিসেবে বর্ণনা করেছেন। লোকেরা সুরক্ষিত বোধ করত কারণ তারা কাছাকাছি বাস করত এবং সহজেই পরস্পরকে সাহায্য ও সুরক্ষা করতে পারত। সেই বাড়িগুলোর কাছাকাছি নির্মাণ প্রক্রিয়া হয়তো গীতরচককে ইস্রায়েলের বিভিন্ন বংশের কথা মনে করিয়ে দিত, যখন তারা একটা জাতি হিসেবে যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য একত্রিত হতো। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১২২:৩, ৪.) এখন এবং আসন্ন কঠিন সময়ে যিহোবার লোকেদের জন্য “একত্র সংযুক্ত” থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১২. গোগ যখন যিহোবার লোকেদের আক্রমণ করবে, তখন কী আমাদেরকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে?

১২ কেন আমাদের একতা ভবিষ্যতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে? যিহিষ্কেল ৩৮ অধ্যায় ভবিষ্যদ্‌বাণী করে, ‘মাগোগ দেশীয় গোগ’ যিহোবার লোকেদের আক্রমণ করবে। সেই সময় কোনো কিছুকেই আমাদের আলাদা করতে দেওয়া যাবে না। এইরকম চিন্তা করাও বিরাট ভুল হবে যে, শয়তানের জগৎ আমাদের সুরক্ষা করতে পারবে। এর পরিবর্তে, আমাদেরকে আমাদের ভাই-বোনদের কাছাকাছি থাকতে হবে। অবশ্য, কেবল একটা দলের অংশ হওয়ার কারণেই যে আমরা রক্ষা পাব এমন নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের যিহোবার ওপর নির্ভর করতে এবং তাঁর বাধ্য হতে হবে। তাহলে যিহোবা এবং যিশু আমাদেরকে সেই আক্রমণ থেকে রক্ষা করবেন এবং নতুন জগতে নিয়ে যাবেন। (যোয়েল ২:৩২; মথি ২৮:২০) তবে, আমাদেরকে ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে একতাবদ্ধও থাকতে হবে। আপনার কি মনে হয় যে, যারা নিজেদের পথানুযায়ী চলার সিদ্ধান্ত নেয়, তাদেরকে যিহোবা রক্ষা করবেন?—মীখা ২:১২.

১৩. আমরা যে-উদাহরণগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, সেগুলো থেকে অল্পবয়সিরা কোন কোন শিক্ষা লাভ করতে পারে?

১৩ তুমি যদি একজন অল্পবয়সি হয়ে থাকো, তাহলে তুমি কি দেখতে পাচ্ছো যে, তোমার ভাই-বোনদের কাছাকাছি থাকা কতটা বিজ্ঞতার কাজ? কেবল তোমার সমবয়সি ব্যক্তিদের সঙ্গে সময় কাটানো অথবা তোমার চারপাশের লোকজন থেকে নিজেকে আলাদা রাখার প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করো। শীঘ্র, অল্পবয়সি এবং বৃদ্ধ, আমাদের সকলের আগের চেয়ে আরও বেশি পরস্পরের প্রয়োজন হবে। এখনই তোমার ভাই ও  বোনদের সঙ্গে তোমার বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করো এবং তাদের সঙ্গে যিহোবাকে সেবা করা উপভোগ করো। ভবিষ্যতে, যিহোবার লোকেদের সঙ্গে একতাবদ্ধ হওয়া তোমার জীবন রক্ষা করবে!

“পরস্পর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ”

১৪, ১৫. (ক) কেন যিহোবা আমাদেরকে একতাবদ্ধ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন? (খ) যিহোবা আমাদের কোন পরামর্শ দেন, যাতে আমরা একতাবদ্ধ হতে পারি?

১৪ যিহোবা আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে ‘একযোগে তাঁহার আরাধনা করিতে’ সাহায্য করছেন। (সফ. ৩:৮, ৯) তিনি আমাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, যখন তিনি ‘সমস্তই খ্রীষ্টেই সংগ্রহ করিবেন।’ (পড়ুন, ইফিষীয় ১:৯, ১০.) যিহোবার উদ্দেশ্য হল, স্বর্গ এবং পৃথিবীর এমন সকলকে একটা পরিবার হিসেবে একতাবদ্ধ করা, যারা তাঁর উপাসনা করে। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবা অবশ্যই তাঁর এই উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন। অল্পবয়সিরা, তোমরা চিরকালের জন্য সেই পরিবারের অংশ হতে পারো। তোমরা কি যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে একতাবদ্ধ হতে চাও?

১৫ যিহোবা আমাদেরকে এখনই একতাবদ্ধ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, যাতে আমরা নতুন জগতে পরস্পরের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করতে পারি। তিনি ধৈর্য সহকারে আমাদেরকে ‘পরস্পরের জন্য সমভাবে চিন্তা করিতে,’ ‘পরস্পর স্নেহশীল হইতে,’ ‘এক জন অন্য জনকে সান্ত্বনা দিতে’ এবং ‘এক জন অন্যকে গাঁথিয়া তুলিতে’ শিক্ষা দেন। (১ করি. ১২:২৫; রোমীয় ১২:১০; ১ থিষল. ৪:১৮; ৫:১১) যিহোবা জানেন যে, যেহেতু আমরা অসিদ্ধ, তাই সবসময় আমাদের জন্য একতাবদ্ধ হওয়া সহজ নয়। এই কারণে তিনি আমাদের বলেন যেন আমরা সবসময় ‘পরস্পর ক্ষমা করি।’—ইফি. ৪:৩২.

১৬, ১৭. (ক) কোন একটা কারণে আমাদের জন্য সভার ব্যবস্থা করা হয়? (খ) যিশুর উদাহরণ থেকে অল্পবয়সিরা কী শিখতে পারে?

১৬ আরেকটা যে-উপায়ে যিহোবা আমাদের পরস্পরের কাছাকাছি থাকতে শেখার জন্য সাহায্য করেন, তা হল আমাদের জন্য সভাগুলোর ব্যবস্থা করার মাধ্যমে। ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫ পদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একটা যে-কারণে আমরা একত্রিত হই, তা হল পরস্পরকে যা ভালো, তা করার জন্য “চেতনা [“উৎসাহ,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]” দেওয়া। আর আমরা যতই যিহোবার দিনের নিকটবর্তী হচ্ছি, ততই আমাদের আরও বেশি সভাগুলোর প্রয়োজন।

১৭ যিশু আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ কারণ তিনি যিহোবার লোকেদের সঙ্গে সভা উপভোগ করতেন। তার বয়স যখন ১২ বছর, তখন তিনি তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে মন্দিরে একটা বড়ো সভাতে গিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে, যিশুর বাবা-মা তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তিনি কি অন্যান্য অল্পবয়সিদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন? না। তাঁর বাবা-মা যখন তাঁকে খুঁজে পেয়েছিলেন, তখন যিশু মন্দিরে গুরুদের সঙ্গে ছিলেন, শাস্ত্র সম্বন্ধে কথা বলছিলেন।—লূক ২:৪৫-৪৭.

১৮. কীভাবে প্রার্থনা আমাদের একতাকে বৃদ্ধি করতে পারে?

 ১৮ আমাদের ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করার এবং নির্দিষ্ট উপায়ে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য যিহোবাকে বলার মাধ্যমে আমরাও আমাদের একতাকে বৃদ্ধি করতে পারি। আমাদের ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করা আমাদের মনে করিয়ে দেবে যে, আমরা তাদের জন্য কতটা চিন্তা করি। আমাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসা, সভাগুলোতে তাদের উৎসাহ দেওয়া এবং তাদের জন্য প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ। অল্পবয়সিরা, তোমরা কি এই বিষয়গুলো করার জন্য চেষ্টা করেছ, যাতে মণ্ডলীতে যারা রয়েছে, তাদের সঙ্গে তোমরা উত্তম বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারো? যখন শেষ আসবে, তখন রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদেরকে শয়তানের জগতের কাছাকাছি নয় বরং আমাদের ভাই-বোনদের কাছাকাছি থাকতে হবে।

আমরা সকলে আমাদের ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করতে পারি (১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

দেখান যে, ‘আমরা পরস্পর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’

১৯-২১. (ক) ‘আমরা পরস্পর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ বলে কী করার জন্য অনুপ্রাণিত হই? উদাহরণ দিন। (খ) দুর্যোগের সময় আমাদের ভাই-বোনেরা পরস্পরকে যেভাবে সাহায্য করে, তা থেকে আপনি কী শিখতে পারেন?

১৯ অনেক উদাহরণ দেখায় যে, যিহোবার লোকেরা বর্তমানে “পরস্পর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।” (রোমীয় ১২:৫) যখন আমাদের ভাই-বোনেরা বিভিন্ন দুর্যোগের শিকার হয়, তখন আমরা তাদের কষ্ট উপলব্ধি করি এবং তাদেরকে সাহায্য করতে চাই। ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে, ফিলিপিনসের মিনডানাও দ্বীপে এক উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। এক রাতের মধ্যে ৪০,০০০-রেরও বেশি ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছিল, যার মধ্যে আমাদের অনেক ভাই-বোনের ঘরবাড়িও ছিল। শাখা অফিস জানায় যে, এমনকী স্থানীয় কোনো ত্রাণ কমিটি থেকে সাহায্য পৌঁছানোর আগেই “অন্যান্য এলাকার খ্রিস্টান ভাই-বোনেরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।”

২০ জাপানে আমাদের ভাই-বোনেরা সেই সময় চরম কষ্ট ভোগ করেছিল, যখন এক মারাত্মক ভূমিকম্প ও সুনামি সেই দেশের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হেনেছিল। অনেকে সর্বস্ব হারিয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, ইয়োশিকো নামে এক বোন তার বাড়ি হারিয়েছিলেন। তিনি কিংডম হল থেকে অনেক দূরে, প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) দূরে বাস করতেন। তিনি বলেন: “পরবর্তী সময়ে, আমরা এটা দেখে খুবই অবাক হয়ে যাই যে, ভূমিকম্পের ঠিক পরের দিনই সীমা অধ্যক্ষ এবং আরেকজন ভাই আমাদেরকে দেখার জন্য আসেন।” অত্যন্ত খুশি হয়ে তিনি আরও বলেন: “মণ্ডলীর মাধ্যমে প্রচুররূপে আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা জোগানো হয়েছিল বলে আমরা সত্যিই খুব কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম। এ ছাড়া, আমাদেরকে অনেক কাপড়চোপড়, জুতো, ব্যাগ এবং প্যান্ট দেওয়া হয়েছিল।” ত্রাণ কমিটির একজন সদস্য বলেছিলেন: “পুরো জাপানের ভাই-বোনেরা একযোগে কাজ করেছিল, পরস্পরকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিল। সাহায্য করার জন্য এমনকী সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকেও ভাই-বোনেরা এসেছিল। তাদেরকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, কেন তারা এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে, তখন তারা বলেছিল, ‘আমরা জাপানে আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে একতাবদ্ধ এবং তাদের সাহায্যের প্রয়োজন।’” আপনি কি এমন একটা সংগঠনের অংশী হতে পেরে গর্বিত, যেখানে লোকেরা সত্যিই পরস্পরকে ভালোবাসে? কেবল কল্পনা করুন যে, এইরকম একতা দেখে যিহোবা নিশ্চয়ই কতটা আনন্দিত হন।

২১ আমরা যদি এখনই পরস্পরের ওপর নির্ভর করা শিখি, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা একত্রে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হব। এমনকী আমরা যদি পৃথিবীর অন্যান্য জায়গার ভাই-বোনদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলি, তবুও আমরা স্থানীয় ভাই-বোনদের সঙ্গে একতাবদ্ধ থাকব। ফুমিকো নামে জাপানের একজন বোন, যিনি প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন: “শেষ খুবই নিকটে। আমরা এমন একটা সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছি, যখন কোনো দুর্যোগ থাকবে না আর সেই সময়ের আগে পর্যন্ত আমাদের ক্রমাগত সহবিশ্বাসীদের সাহায্য করা প্রয়োজন।”

২২. কীভাবে আমাদের একতা ভবিষ্যতে আমাদের সাহায্য করবে?

২২ আপনার ভাই-বোনদের সঙ্গে একতাবদ্ধ থাকার জন্য আপনার যথাসাধ্য করার মাধ্যমে এখনই যিহোবার দিনের জন্য প্রস্তুত হোন। শয়তানের দুষ্ট জগৎকে যখন ধবংস করে দেওয়া হবে, তখন যিহোবা তাঁর লোকেদের রক্ষা করবেন, যেমনটা তিনি অতীতে করেছিলেন। (যিশা. ৫২:৯, ১০) আমরা অল্পবয়সি অথবা বৃদ্ধ, যে-ই হই না কেন, রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে একতাবদ্ধ থাকতে হবে। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব যে, ইতিমধ্যেই আমরা যা-কিছু পেয়েছি, সেগুলোর জন্য কেন আমাদের কৃতজ্ঞও থাকতে হবে।