সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করুন—এই পরামর্শ কি এখনও ব্যাবহারিক?

“কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করুন—এই পরামর্শ কি এখনও ব্যাবহারিক?

“মণ্ডলীতে আমি কোনো উপযুক্ত সাথি খুঁজে পাই না আর আমি চিরজীবন আইবুড়ো হয়ে থাকতে চাই না।”

“জগতের কোনো কোনো পুরুষ সাধারণত সদয়, প্রেমময় এবং বিবেচক হয়ে থাকে। তারা আমার ধর্মের বিরোধিতা করে না এবং তাদেরকে কোনো কোনো ভাইয়ের চেয়ে আরও বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে হয়।”

ঈশ্বরের কিছু দাস, যারা অবিবাহিত, তারা একইরকম কথা বলে থাকে। তারা জানে, যিহোবা চান যেন তাঁর দাসেরা “কেবল প্রভুতেই” অর্থাৎ সত্যে রয়েছে এমন খ্রিস্টানদের বিয়ে করে। (১ করি. ৭:৩৯) তাহলে, কেন কিছু খ্রিস্টান এইরকম কথা বলে থাকে?

যে-কারণে কারো কারো মনে সন্দেহ রয়েছে

যে-খ্রিস্টানরা এইরকম কথা বলে থাকে, তারা হয়তো মনে করে, অবিবাহিত ভাইদের চেয়ে অবিবাহিত বোনদের সংখ্যা আরও বেশি। অনেক দেশে এটা সত্য। উদাহরণ স্বরূপ, কোরিয়াতে অবিবাহিত খ্রিস্টানদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ হল বোন এবং ৪৩ শতাংশ হল ভাই। আর কলম্বিয়াতে অবিবাহিত খ্রিস্টানদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ বোন এবং ৩৪ শতাংশ ভাই।

কোনো কোনো জায়গায় ন-সাক্ষি বাবা-মায়েরা হয়তো মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় যৌতুক হিসেবে অনেক টাকা অথবা দামি দামি জিনিসপত্র দাবি করে। আর কিছু অবিবাহিত ভাইদের পক্ষে হয়তো এইরকম দাবি পূরণ করা কঠিন। এর ফলে কিছু বোন কখনো একজন খ্রিস্টান স্বামী খুঁজে পাবে কি না, সেটা নিয়ে উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়ে। *

যিহোবার উপর আস্থা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

আপনারও যদি একইরকম অনুভূতি থেকে থাকে, তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন, যিহোবা আপনার পরিস্থিতি ও একান্ত অনুভূতি বুঝতে পারেন।—২ বংশা. ৬:২৯, ৩০.

তা সত্ত্বেও, বাইবেলে যিহোবা আমাদের কেবল প্রভুতেই বিয়ে করার আজ্ঞা দিয়েছেন। কেন? কারণ তিনি জানেন, আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম কোনটা আর তিনি আমাদের সুরক্ষা করতে চান। তিনি চান না, আমরা এমন ভুল বাছাই করি, যা আমাদের জন্য কষ্ট অথবা দুঃখ নিয়ে আসবে। নহিমিয়ের দিনে, অনেক যিহুদি এমন নারীদের বিয়ে করেছিল, যারা ঈশ্বরের সেবা করত না। তাই, নহিমিয় শলোমনের মন্দ উদাহরণ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি “আপন ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র ছিলেন, এবং ঈশ্বর তাঁহাকে সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজা করিয়াছিলেন; তথাপি বিজাতীয় স্ত্রীরা তাঁহাকেও পাপ করাইয়াছিল।” (নহি. ১৩:২৩-২৬) যিহোবা জানেন, তাঁর সাক্ষ্য বা অনুস্মারকগুলো আমাদের জন্য মঙ্গলজনক আর এই কারণে তিনি খ্রিস্টানদের কেবল প্রভুতেই বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন। (গীত. ১৯:৭-১০; যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) আমরা অনেক কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাদের এমন পরামর্শ দেন, যা প্রেমময় এবং নির্ভরযোগ্য। আমরা যখন আমাদের শাসক হিসেবে যিহোবার বাধ্য হই, তখন আমরা এই বিষয়টা মেনে নিই যে, আমরা কী করব, তা বলার অধিকার তাঁর রয়েছে।—হিতো. ১:৫.

নিশ্চিতভাবেই, আপনি “অসমভাবে যোঁয়ালিতে বদ্ধ” হতে চাইবেন না অর্থাৎ এমন কাউকে বিয়ে করতে চাইবেন না, যিনি যিহোবাকে ভালোবাসেন না। সেই ব্যক্তি হয়তো আপনাকে ঈশ্বরের সেবা করায় বাধা দিতে পারে। (২ করি. ৬:১৪) ঈশ্বরের পরামর্শ সবসময়ই কার্যকরী আর বর্তমানে অনেক খ্রিস্টান বিজ্ঞতার সঙ্গে যিহোবার বাধ্য থাকা বেছে নিয়েছে। কিন্তু, অন্যেরা তা বেছে নেয়নি।

এখনও ব্যাবহারিক

ম্যাগি নামে অস্ট্রেলিয়ার একজন বোন এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে ডেটিং করতে শুরু করেন, যিনি যিহোবার উপাসক ছিলেন না। * তিনি বলেন: “শুধু তার সঙ্গে ডেটিং করার জন্যই আমি অনেক সভা বাদ দিয়েছিলাম। ঈশ্বরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।” রত্না নামে ভারতের একটা মেয়ে তার সহপাঠীর সঙ্গে ডেটিং করত, যে বাইবেল অধ্যয়ন করা শুরু করেছিল। কিন্তু, সেই ছেলে কেবল রত্নার সঙ্গে ডেটিং করার জন্য বাইবেল অধ্যয়ন করত। অবশেষে, রত্না যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দেয় এবং আরেকটা ধর্মে যোগ দেয়, যাতে সে ছেলেটাকে বিয়ে করতে পারে।

ডেনকে নামে ক্যামেরুনের একজন বোন ১৯ বছর বয়সে এমন এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন, যিনি যিহোবাকে সেবা করতেন না। বিয়ের আগে সেই ব্যক্তি কথা দিয়েছিলেন যে, বোন সাক্ষি হিসেবে তার উপাসনা চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু, বিয়ের দু-সপ্তাহ পরই, তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, বোন আর মণ্ডলীর সভাগুলোতে যেতে পারবেন না। বোন বলেন: “আমি সম্পূর্ণ একা হয়ে গিয়েছিলাম এবং কাঁদতে শুরু করেছিলাম। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, নিজের জীবনের উপর আমার আর নিয়ন্ত্রণ নেই। আমি অনুশোচনা করতে শুরু করেছিলাম।”

এটা ঠিক, কিছু খ্রিস্টান এমন একজন সাথিকে বিয়ে করেছেন, যিনি যিহোবাকে সেবা করেন না, তবে তার পরও তিনি সদয় এবং কোমল। কিন্তু, আপনার ন-সাক্ষি সাথি যদি সদয়ও হন, তবুও যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কীভাবে প্রভাবিত হবে? এটা জেনে আপনার কেমন লাগবে যে, তিনি আপনাকে সুখী হওয়ার জন্য যে-পরামর্শ দিয়েছেন, তা আপনি শোনেননি? আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আপনি যা করেছেন, তা দেখে যিহোবার কেমন লাগবে?—হিতো. ১:৩৩.

সারা পৃথিবীর যে-ভাই-বোনেরা “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করার ব্যাপারে যিহোবার পরামর্শের বাধ্য থেকেছে, তারা নিশ্চিত যে, এটাই হল সবচেয়ে উত্তম সিদ্ধান্ত। অবিবাহিত ভাই ও বোনেরা কেবল যিহোবাকেই উপাসনা করে এমন ব্যক্তিকে বিয়ে করে ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। মিচিকো নামে জাপানের একজন বোন ঈশ্বরের বাধ্য থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন, যদিও তার আত্মীয়স্বজন তাকে সত্যের বাইরে বিয়ে করার জন্য চাপ দিয়েছিল। আর তার কিছু বান্ধবী যখন খ্রিস্টান ভাইদের বিয়ে করেছিল, তখন তা দেখে তার জন্য অবিবাহিত থাকা কঠিন হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন: “আমি সবসময় নিজেকে মনে করিয়ে দিতাম, যেহেতু যিহোবা হলেন ‘পরম ধন্য’ বা সুখী ‘ঈশ্বর,’ তাই আমাদের সুখ আমরা বিবাহিত না অবিবাহিত, সেটার উপর নির্ভর করে না। আমি এও বিশ্বাস করি, তিনি আমাদের হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেন। তাই, বিয়ে করতে চাইলেও আমরা যদি কোনো সাথি খুঁজে না পাই, তাহলে কিছু সময়ের জন্য অবিবাহিত থাকা আমাদের জন্য উত্তম।” (১ তীম. ১:১১) পরবর্তী সময়ে, বোন মিচিকো এক চমৎকার ভাইকে বিয়ে করেছিলেন আর বোন আনন্দিত যে, তিনি যিহোবার পরামর্শ শুনেছেন।

এ ছাড়া, এমন ভাইয়েরাও রয়েছে, যারা বিয়ে করার জন্য উপযুক্ত সাথি খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, বিল নামে অস্ট্রেলিয়ার একজন ভাই স্বীকার করেন, মাঝে মাঝে তিনি ন-সাক্ষি মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি তাদের কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেননি কারণ তিনি এমন সম্পর্ক শুরু করতে চাননি, যা তাকে অবিশ্বাসীদের সঙ্গে “অসমভাবে যোঁয়ালিতে বদ্ধ” হতে পরিচালিত করবে। বিভিন্ন সময়ে তিনি কিছু বোনের প্রতিও আগ্রহ দেখিয়েছিলেন কিন্তু তারা ভাইয়ের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। তার মতো একই লক্ষ্য ছিল এমন একজন খ্রিস্টান বোনকে খুঁজে পাওয়ার জন্য বিলকে ৩০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তিনি বলেন: “আমার কোনো দুঃখ নেই। বরং আমি নিজেকে আশীর্বাদপ্রাপ্ত বলে মনে করি কারণ আমরা একসঙ্গে প্রচারে যাই, একসঙ্গে অধ্যয়ন করি এবং একসঙ্গে উপাসনা করি। আমি আমার স্ত্রীর বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পেরে আনন্দিত কারণ তারা সকলে যিহোবার উপাসক। আমরা আমাদের বিয়েতে বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগাই।”

যিহোবাতে অপেক্ষা করার সময় আপনি যা করতে পারেন

যিহোবার পরামর্শের উপর আস্থা রাখার সময় এবং তাঁকে সেবা করে এমন একজন স্বামী অথবা স্ত্রী খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার সময় আপনি কী করতে পারেন? আপনি চিন্তা করতে পারেন, কেন আপনি অবিবাহিত? আপনি যদি মনে করেন, এর কারণ হল আপনি যিহোবার আজ্ঞার বাধ্য থাকতে চান, তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন, এটা যিহোবাকে খুশি করবে। (১ শমূ. ১৫:২২; হিতো. ২৭:১১) এ ছাড়া, নিয়মিতভাবে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন এবং তাঁকে আপনার অনুভূতির কথা খুলে বলুন। (গীত. ৬২:৮) প্রলোভন প্রতিরোধ করার এবং মন্দ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে লড়াই করার সময় আপনি যখন আপনার সর্বোত্তমটা করবেন, তখন যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক দিন দিন আরও দৃঢ় হবে। আপনি এই আস্থা রাখতে পারেন, যিহোবা আপনার বাঞ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা এবং আপনার প্রয়োজনগুলো পূর্ণ করবেন, কারণ আপনি তাঁর দৃষ্টিতে অমূল্য। তিনি কাউকে স্বামী অথবা স্ত্রী দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন না। কিন্তু, আপনার যদি সত্যিই বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, তাহলে যিহোবা সেটাকে সর্বোত্তম উপায়ে পূর্ণ করতে জানেন।—গীত. ১৪৫:১৬; মথি ৬:৩২.

কখনো কখনো আপনি হয়তো দায়ূদের মতো মনে করতে পারেন, যিনি বলেছিলেন: “আমাকে উত্তর দানে সত্বর হও, সদাপ্রভু, আমার উৎসাহ শেষ হইয়াছে; আমা হইতে তোমার মুখ লুক্কায়িত করিও না।” (গীত. ১৪৩:৫-৭, ১০) হাল ছেড়ে দেবেন না। যিহোবা আপনার কাছ থেকে কী চান, তা বোঝার জন্য অপেক্ষা করুন। বাইবেল পড়ার মাধ্যমে যিহোবার কথা শুনুন এবং যা পড়েন, তা নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান করুন। এটা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে, যিহোবা আপনার কাছ থেকে কী চান এবং কীভাবে তিনি অতীতে তাঁর দাসদের সাহায্য করেছেন। তাঁর কথা শোনার মাধ্যমে আপনি আস্থা সহকারে ক্রমাগত তাঁর বাধ্য থাকতে পারবেন।

অবিবাহিত খ্রিস্টানদের মণ্ডলীতে মূল্যবান বলে গণ্য করা হয়, যারা প্রায়ই পরিবারগুলোকে এবং অল্পবয়সিদের সাহায্য করে

অবিবাহিত থাকার সময় আপনি সুখী ও ব্যস্ত থাকার জন্য আর কী করতে পারেন? আপনি যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার এবং এক সুনাম গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে পারেন। এ ছাড়া, আপনি উদার, পরিশ্রমী, সহজেই বন্ধুত্বপরায়ণ এবং যিহোবার প্রতি অনুগত হওয়া শিখতে পারেন। এক সুখী বিয়ের জন্য এই গুণগুলো প্রয়োজন। (আদি. ২৪:১৬-২১; রূৎ. ১:১৬, ১৭; ২:৬, ৭, ১১; হিতো. ৩১:১০-২৭) পরিচর্যায় এবং আপনার মণ্ডলীতে ব্যস্ত থাকার মাধ্যমে প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করুন। এগুলো আপনাকে মূর্খতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে রক্ষা করবে। বিল তার অবিবাহিত সময়ের কথা মনে করে বলেন: “সেই বছরগুলো খুব তাড়াতাড়ি কেটে গিয়েছিল! আমি সেই সময়টা একজন অগ্রগামী হিসেবে যিহোবার সেবায় ব্যয় করেছিলাম।”

“কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করার বিষয়ে যিহোবার আজ্ঞা সেকেলে বা পুরোনো হয়ে যায়নি। সত্যে রয়েছে এমন খ্রিস্টানকে বিয়ে করার মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে সম্মানিত করি এবং নিজেরা সুখী হই। বাইবেল বলে: “ধন্য সেই জন, যে সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার আজ্ঞাতে অতিমাত্র প্রীত হয়। তাহার গৃহে ধন ও ঐশ্বর্য্য থাকে, তাহার ধার্ম্মিকতা নিত্যস্থায়ী।” (গীত. ১১২:১, ৩) তাই, “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করার বিষয়ে ঈশ্বরের আজ্ঞার বাধ্য থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন।

^ অনু. 7 এই প্রবন্ধে আমরা এই বিষয়বস্তু বোনদের দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোচনা করছি। কিন্তু, এর নীতিগুলো ভাইদের জন্যও প্রযোজ্য।

^ অনু. 13 কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।