সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি ‘জাগিয়া থাকিবেন’?

আপনি কি ‘জাগিয়া থাকিবেন’?

“অতএব জাগিয়া থাক; কেননা তোমরা সেই দিন বা সেই দণ্ড জান না।”—মথি ২৫:১৩.

১, ২. (ক) শেষকাল সম্বন্ধে যিশু কী প্রকাশ করেছিলেন? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব?

কল্পনা করার চেষ্টা করুন, যিশু জৈতুন পর্বতের উপরে বসে যিরূশালেম মন্দির দেখছেন। চার জন প্রেরিত—পিতর, আন্দ্রিয়, যাকোব এবং যোহনও—তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যিশু তাদের এক আগ্রহজনক ভবিষ্যদ্‌বাণী বলছেন আর তারা মন দিয়ে তা শুনছেন। সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা হয়, এই দুষ্ট জগতের শেষ সময়ে কী কী ঘটবে, যখন যিশু ঈশ্বরের রাজ্যে শাসন করবেন। যিশু তাদের বলেন, সেই উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে তাঁর “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌দাস” পৃথিবীতে তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করবেন এবং তাঁর অনুসারীদের উপযুক্ত সময়ে আধ্যাত্মিক খাবার দেবেন।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.

পরে, সেই একই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে যিশু দশ কুমারীর দৃষ্টান্ত বলেন। (পড়ুন, মথি ২৫:১-১৩.) এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে প্রশ্ন আলোচনা করব: (১) সেই দৃষ্টান্তের মূল বার্তাটা কী? (২) বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিরা কীভাবে এই দৃষ্টান্তের পরামর্শ কাজে লাগিয়েছে এবং এর ফল কী হয়? (৩) বর্তমানে, কীভাবে আমরা প্রত্যেকে যিশুর দৃষ্টান্ত থেকে উপকার লাভ করতে পারি?

দৃষ্টান্তের বার্তাটা কী?

৩. অতীতে আমাদের সাহিত্যাদিতে দশ কুমারীর দৃষ্টান্ত কীভাবে ব্যাখ্যা করা হতো আর এর ফলে হয়তো কী হতো?

আগের প্রবন্ধে আমরা শিখেছি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বস্ত দাস বাইবেলের কিছু বিবরণ ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে রদবদল করেছেন। বিশ্বস্ত দাস এখন ব্যাবহারিক শিক্ষার উপর আরও বেশি জোর দিচ্ছেন এবং রূপক কিংবা ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক অর্থের উপর কম জোর দিচ্ছেন। উদাহরণ স্বরূপ, যিশুর বলা দশ কুমারীর দৃষ্টান্তের কথা চিন্তা করুন। আমাদের সাহিত্যাদিতে আগে বলা হতো, প্রদীপ, তেল এবং পাত্র কোনো বিষয়কে অথবা কোনো ব্যক্তিকে চিত্রিত করে। ছোটো ছোটো বিষয়ের উপর অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়ার ফলে দৃষ্টান্তের সহজসরল ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা কি হারিয়ে যাচ্ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. (ক) কীভাবে আমরা বলতে পারি, দৃষ্টান্তে বলা বর কে? (খ) কীভাবে আমরা বলতে পারি, দৃষ্টান্তে বলা কুমারী কারা?

আসুন আমরা যিশুর দৃষ্টান্তের মূল বার্তাটা পরীক্ষা করে দেখি। প্রথমত, দশ কুমারীর দৃষ্টান্তের চরিত্রগুলো সম্বন্ধে চিন্তা করুন। বর কে? যিশু। আমরা তা বলতে পারি, কারণ আগে যিশু নিজেকে বর বলে উল্লেখ করেছিলেন। (লূক ৫:৩৪, ৩৫) কুমারী কারা? তারা হল অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের “ক্ষুদ্র মেষপাল।” কীভাবে আমরা তা বলতে পারি? দৃষ্টান্ত অনুসারে কুমারীদের সেই সময় প্রদীপ জ্বালিয়ে তৈরি থাকতে হবে, যখন বর আসবে। এখন লক্ষ করুন, যিশু তাঁর অভিষিক্ত অনুসারীদের কী বলেছিলেন: “তোমাদের কটি বাঁধিয়া রাখ ও প্রদীপ জ্বালিয়া রাখ; এবং তোমরা এমন লোকদের তুল্য হও, যাহারা আপনাদের প্রভুর অপেক্ষায় থাকে যে, তিনি বিবাহভোজ হইতে কখন ফিরিয়া আসিবেন।” (লূক ১২:৩২, ৩৫, ৩৬) এ ছাড়া, প্রেরিত পৌল এবং প্রেরিত যোহন, দু-জনেই খ্রিস্টের অভিষিক্ত অনুসারীদের সতী কন্যা বা কুমারীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। (২ করি. ১১:২; প্রকা. ১৪:৪) তাই, আমরা বুঝতে পারি, মথি ২৫:১-১৩ পদে দেওয়া পরামর্শ ও সাবধানবাণী যিশুর অভিষিক্ত অনুসারীদের প্রতি প্রযোজ্য।

৫. তাঁর দৃষ্টান্ত কোন সময়কালের জন্য প্রযোজ্য, তা যিশু কীভাবে প্রকাশ করেছেন?

দ্বিতীয়ত, যিশুর পরামর্শ কোন সময়কালের জন্য প্রযোজ্য? দৃষ্টান্তের শেষে বলা যিশুর কথাগুলো আমাদের তা জানতে সাহায্য করে। তিনি বলেছিলেন: “বর আসিলেন।” (মথি ২৫:১০) ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় আমরা শিখেছি, মথি ২৪ ও ২৫ অধ্যায়ে বলা যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীতে আট বার যিশুর ‘আসিবার’ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। যিশু যখন তাঁর ‘আসিবার’ বিষয়ে উল্লেখ করেন, তখন তিনি মহাক্লেশের সেই সময়কে নির্দেশ করছিলেন, যখন তিনি বিচার করার ও এই দুষ্ট জগৎকে ধবংস করার জন্য আসেন। তাই, আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি, যিশুর দৃষ্টান্ত শেষকালের জন্য প্রযোজ্য কিন্তু তিনি মহাক্লেশের সময় ‘আসিবেন।’

৬. এই দৃষ্টান্তের মূল বার্তাটা কী?

এই দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কোন বার্তা শিখতে পারি? বাইবেলের এই বিবরণের প্রসঙ্গ মনে করে দেখুন। মথি ২৪ অধ্যায়ে যিশু ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সেই দাস হবেন, অভিষিক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত এক ছোট্ট দল, যারা শেষকালে খ্রিস্টের অনুসারীদের নেতৃত্ব দেবে। যিশু সেই ব্যক্তিদের সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, তাদের অবশ্যই বিশ্বস্ত থাকতে হবে। আর পরের অধ্যায়ে যিশু শেষকালে তাঁর সমস্ত অভিষিক্ত অনুসারীকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য দশ কুমারীর দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেন। তাই বার্তাটা ছিল, ‘জাগিয়া থাকিবার’ বিষয়ে, যাতে তারা তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার হারিয়ে না ফেলে। (মথি ২৫:১৩) এখন আসুন আমরা দৃষ্টান্ত পরীক্ষা করি ও দেখি, কীভাবে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা সেই পরামর্শ কাজে লাগিয়েছে।

অভিষিক্ত ব্যক্তিরা দৃষ্টান্তের পরামর্শ কীভাবে কাজে লাগিয়েছে?

৭, ৮. (ক) কেন সুবদ্ধি কুমারীরা তৈরি ছিল? (খ) অভিষিক্ত ব্যক্তিরা কীভাবে প্রস্তুত?

দৃষ্টান্তের মধ্যে যিশু জোর দিয়েছিলেন, যখন বর এসেছিলেন, তখন সুবুদ্ধি কুমারীরা তৈরি ছিল, নির্বুদ্ধি কুমারীরা নয়। কেন? কারণ তারা প্রস্তুত এবং সজাগ ছিল। দশ জন কুমারীকেই রাতের বেলা সতর্ক থাকতে এবং তাদের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে হতো। নির্বুদ্ধি কুমারীদের বিপরীতে, পাঁচ কুমারী প্রস্তুত ছিল কারণ তারা তাদের প্রদীপের সঙ্গে বাড়তি তেল নিয়ে এসেছিল। বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা কীভাবে যিশুর আগমনের জন্য প্রস্তুত ছিল?

অভিষিক্ত ব্যক্তিরা শেষ আসার আগে পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব পরিপূর্ণ করার জন্য প্রস্তুত। তারা উপলব্ধি করে, ঈশ্বরকে সেবা করার জন্য তাদের শয়তানের জগতের বস্তুগত সুযোগ-সুবিধা ত্যাগ করা প্রয়োজন আর তা করার জন্য তারা ইচ্ছুক। তারা শেষ কাছে বলে নয় বরং যিহোবা ও তাঁর পুত্রকে ভালোবাসে বলে অনুগতভাবে যিহোবার সেবা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। তারা বিশ্বস্ততা বজায় রাখে এবং জগতের বস্তুবাদী, অনৈতিক ও স্বার্থপর মনোভাবের দ্বারা নিজেদের প্রভাবিত হতে দেয় না। প্রদীপ নিয়ে তৈরি ছিল এমন সুবুদ্ধি কুমারীদের মতো অভিষিক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত দেদীপ্যমান হচ্ছে, বর আসার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে, এমনকী তার আসতে যদি দেরি হচ্ছে বলেও মনে হয়।—ফিলি. ২:১৫.

৯. (ক) “ঢুলিতে” থাকার বিষয়ে যিশু কোন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন? (খ) অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এই উচ্চরবের প্রতি কেমন সাড়া দিয়েছে: “দেখ, বর!”? (এ ছাড়া, পাদটীকা দেখুন।)

এ ছাড়া, সুবুদ্ধি কুমারীরা বর আসার জন্য তৈরি ছিল কারণ তারা সজাগ থেকেছিল। কিন্তু, দৃষ্টান্ত অনুসারে দশ কুমারীই বরের জন্য অপেক্ষা করার সময় ‘ঢুলিতে ঢুলিতে ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল,’ যার আসতে দেরি হচ্ছে বলে মনে হয়েছিল। তাই, আজকে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে কি ‘ঘুমাইয়া পড়া’ অর্থাৎ খ্রিস্টের আগমনের জন্য অপেক্ষা করার সময় বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়া সম্ভব? হ্যাঁ। যিশু জানতেন, এমনকী একজন ইচ্ছুকমনা ও উৎসুক ব্যক্তিও তাঁর আগমনের জন্য অপেক্ষা করার সময় দুর্বল ও বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়তে পারেন। তাই, বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা সজাগ থাকার জন্য এমনকী আরও কঠোর প্রচেষ্টা করে। কীভাবে? দৃষ্টান্ত অনুসারে, দশ কুমারীই এই উচ্চরবে সাড়া দিয়েছিল: “দেখ, বর!” কিন্তু, কেবল সুবুদ্ধি কুমারীরাই সজাগ ছিল। (মথি ২৫:৫, ৬; ২৬:৪১) একইভাবে, শেষকালে বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা এই উচ্চরবে সাড়া দিয়েছে, “দেখ, বর!” তারা এই দৃঢ় প্রমাণ গ্রহণ করেছে যে, যিশু আসতে যাচ্ছেন আর তাই তারা তাঁর আগমনের জন্য তৈরি। * আসুন আমরা যিশুর দৃষ্টান্তের শেষ অংশটা পরীক্ষা করে দেখি, যা এক নির্দিষ্ট সময়কালকে নির্দেশ করে।

সুবুদ্ধি কুমারীদের জন্য পুরস্কার এবং নির্বুদ্ধি কুমারীদের জন্য শাস্তি

১০. সুবুদ্ধি কুমারী এবং নির্বুদ্ধি কুমারীদের মধ্যে যে-কথাবার্তা হয়, সেই সম্বন্ধে আমরা হয়তো কী জিজ্ঞেস করতে পারি?

১০ দৃষ্টান্তের শেষে, নির্বুদ্ধি কুমারীরা সুবুদ্ধি কুমারীদের কাছে তাদের প্রদীপের জন্য তেল চায়। কিন্তু, সুবুদ্ধি কুমারীরা সাহায্য করতে প্রত্যাখ্যান করে। (পড়ুন, মথি ২৫:৮, ৯.) কিন্তু, বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা কখন এমন কাউকে সাহায্য করতে প্রত্যাখ্যান করেছে, যার প্রয়োজন রয়েছে? সেই দৃষ্টান্ত কোন সময়কালের জন্য প্রযোজ্য, তা মনে করে দেখুন। বর অর্থাৎ যিশু মহাক্লেশের শেষের দিকে বিচার করার জন্য আসেন। তাই, তাদের মধ্যে এই কথাবার্তা সম্ভবত মহাক্লেশের ঠিক আগে যা ঘটে, সেটাকে নির্দেশ করে। কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ সেই সময়ের মধ্যে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তাদের চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কন লাভ করবে।

১১. (ক) মহাক্লেশ শুরু হওয়ার ঠিক আগে কী ঘটবে? (খ) সুবুদ্ধি কুমারীরা যে নির্বুদ্ধি কুমারীদের তেল কিনে আনতে বলে, সেটার দ্বারা কী বোঝানো হয়েছিল?

১১ তাহলে বলা যায়, মহাক্লেশ শুরু হওয়ার আগে, পৃথিবীতে থাকা সমস্ত বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তি তাদের চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কন লাভ করবে। (প্রকা. ৭:১-৪) সেই সময়ের পর থেকে এটা নিশ্চিত যে, তারা স্বর্গে যাবে। কিন্তু, মহাক্লেশের আগের বছরগুলোর কথা চিন্তা করুন। সেই অভিষিক্ত ব্যক্তিদের প্রতি কী ঘটবে, যারা সজাগ থাকেনি এবং অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছে? তারা চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কন লাভ করবে না। সেই সময়ের মধ্যে অন্যান্য বিশ্বস্ত খ্রিস্টানকে অভিষিক্ত করা হবে। মহাক্লেশ শুরু হয়ে যাওয়ার পর, নির্বুদ্ধি কুমারীরা মহতী বাবিলকে ধবংস হতে দেখে হয়তো হতভম্ব হয়ে যাবে। হয়তো তখনই তারা বুঝতে পারবে, যিশুর আগমনের জন্য তারা তৈরি নয়। সেই সময়, তারা যদি সাহায্য চায়, তাহলে কী ঘটবে? এর উত্তর দৃষ্টান্তের মধ্যে রয়েছে। সুবুদ্ধি কুমারীরা নির্বুদ্ধি কুমারীদের তেল দিতে প্রত্যাখ্যান করে এবং এর পরিবর্তে তাদের তেল কিনে আনার কথা বলে। যেহেতু তখন ছিল ‘মধ্য রাত্রি,’ তাই তাদের কাছে তেল বিক্রি করার মতো কেউ ছিল না। খুব বেশি দেরি হয়ে গিয়েছিল!

১২. (ক) মহাক্লেশের সময় এমন যে-কারো প্রতি কী ঘটবে, যিনি প্রথমে অভিষিক্ত ছিলেন কিন্তু পরবর্তী সময়ে চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কনের আগে অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছেন? (খ) সেই ব্যক্তিদের প্রতি কী ঘটবে, যারা নির্বুদ্ধি কুমারীদের মতো?

১২ মহাক্লেশের সময় বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এমন কাউকে সাহায্য করতে পারবে না, যিনি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েন। তখন খুব বেশি দেরি হয়ে যাবে। তাহলে, অবিশ্বস্ত ব্যক্তিদের প্রতি কী ঘটবে? তেল কিনে আনতে গিয়েছিল এমন নির্বুদ্ধি কুমারীদের প্রতি কী ঘটেছিল, তা লক্ষ করুন: “বর আসিলেন; এবং যাহারা প্রস্তুত ছিল, তাহারা তাঁহার সঙ্গে বিবাহবাটীতে প্রবেশ করিল; আর দ্বার রুদ্ধ হইল।” মহাক্লেশের শেষের দিকে যিশু যখন আপন গৌরবে আসবেন, তখন তিনি বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের স্বর্গে একত্রিত করবেন। (মথি ২৪:৩১; ২৫:১০; যোহন ১৪:১-৩; ১ থিষল. ৪:১৭) তবে, যিশু অবিশ্বস্ত ব্যক্তিদের প্রত্যাখ্যান করবেন। নির্বুদ্ধি কুমারীদের মতো তারা হয়তো বলবে: “প্রভু, প্রভু আমাদিগকে দ্বার খুলিয়া দিউন।” কিন্তু, যিশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? দুঃখের বিষয় হল, তিনি তাদেরকে ঠিক সেই উত্তরই দেবেন, যেমনটা তিনি অনেক ছাগতুল্য ব্যক্তিকে দেবেন: “তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, আমি তোমাদিগকে চিনি না।”—মথি ৭:২১-২৩; ২৫:১১, ১২.

১৩. (ক) কেন এই উপসংহারে আসা উচিত নয় যে, খ্রিস্টের অনেক অভিষিক্ত অনুসারী অবিশ্বস্ত হয়ে পড়বে? (খ) কেন আমরা বলতে পারি, যিশুর বলা দৃষ্টান্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের প্রতি তাঁর আস্থা প্রকাশ করে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৩ যিশু কি এই বলছিলেন, অভিষিক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে অবিশ্বস্ত হয়ে পড়বে এবং তাদের জায়গায় অন্যদের নেওয়া হবে? না। মথি ২৪ অধ্যায়ে আমরা পড়ি, যিশু বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসকে দুষ্ট দাসে পরিণত না হওয়ার জন্য সাবধান করে দিয়েছিলেন। এর অর্থ এই ছিল না যে, তিনি এইরকমটা ঘটবে বলে আশা করেছিলেন। একইভাবে, দশ কুমারীর দৃষ্টান্তও এক সাবধানবাণী। ঠিক যেমন পাঁচ কুমারী নির্বুদ্ধি ও পাঁচ কুমারী সুবুদ্ধি ছিল, তেমনই প্রত্যেক অভিষিক্ত খ্রিস্টানকে প্রস্তুত এবং সজাগ থাকা বেছে নিতে হবে। নতুবা তিনি নির্বুদ্ধি এবং অবিশ্বস্ত হয়ে পড়তে পারেন। পৌল তার অভিষিক্ত ভাই ও বোনদের একই সাবধানবাণী দিয়েছিলেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ৬:৪-৯; তুলনা করুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯.) যদিও তিনি তাদের স্পষ্ট সাবধানবাণী দিয়েছিলেন, তবুও তার এই আস্থা ছিল যে, তার ভাই ও বোনেরা তাদের পুরস্কার লাভ করবে। দশ কুমারীর দৃষ্টান্তের সাবধানবাণী প্রকাশ করে যে, অভিষিক্ত ব্যক্তিদের প্রতি যিশুরও একই আস্থা রয়েছে। তিনি জানেন, তার প্রত্যেক অভিষিক্ত দাস বিশ্বস্ত থাকতে এবং চমৎকার পুরস্কার লাভ করতে পারবে।

খ্রিস্টের “আরও মেষ” কীভাবে উপকার লাভ করতে পারে?

১৪. কেন “আরও মেষ” দশ কুমারীর দৃষ্টান্ত থেকে উপকার লাভ করতে পারে?

১৪ যিশুর বলা দৃষ্টান্ত মূলত অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে বলা হয়েছিল। কিন্তু, “আরও মেষ” কি যিশুর দৃষ্টান্ত থেকে উপকার লাভ করতে পারে? (যোহন ১০:১৬) হ্যাঁ, পারে! এই দৃষ্টান্তের বার্তাটা স্পষ্ট: “জাগিয়া থাক।” আর একবার যিশু বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে যাহা বলিতেছি, তাহাই সকলকে বলি, জাগিয়া থাকিও।” (মার্ক ১৩:৩৭) যিশু চান যেন তাঁর সমস্ত শিষ্য প্রস্তুত থাকে এবং সজাগ থাকে। আর সমস্ত খ্রিস্টান অভিষিক্ত ব্যক্তিদের উত্তম উদাহরণ অনুকরণ করতে পারে, যারা প্রচার কাজকে নিজেদের জীবনে প্রথমে রাখে। মনে করে দেখুন, নির্বুদ্ধি কুমারীরা সুবুদ্ধি কুমারীদের কাছে তেল চেয়েছিল। তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। এটা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা, প্রস্তুত থাকা এবং সজাগ থাকা আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত দায়িত্ব। অন্য কেউ আমাদের হয়ে তা করতে পারবে না। আমরা প্রত্যেকে ধার্মিক বিচারক যিশু খ্রিস্টের কাছে নিকাশ দিতে বাধ্য, যিনি শীঘ্র আসতে যাচ্ছেন। তাই, আমাদের অবশ্যই তৈরি থাকতে হবে!

কেউ আমাদের হয়ে বিশ্বস্ত থাকতে অথবা সজাগ থাকতে পারে না

১৫. কেন খ্রিস্ট এবং তাঁর কনের বিয়ে সমস্ত খ্রিস্টানের জন্য অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়?

১৫ যিশুর দৃষ্টান্তে বলা বিয়ের ব্যাপারে সমস্ত খ্রিস্টান অত্যন্ত আগ্রহী। ভবিষ্যতে অর্থাৎ হর্মাগিদোন যুদ্ধের শেষে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা খ্রিস্টের কনে হবে। (প্রকা. ১৯:৭-৯) সেই সময় পৃথিবীর সকলে স্বর্গে অনুষ্ঠিত এই বিয়ে থেকে উপকার লাভ করবে। কেন? কারণ এটা সমস্ত মানবজাতির জন্য এক নিখুঁত সরকারের নিশ্চয়তা দেয়। আমরা স্বর্গে অথবা পৃথিবীতে, যেখানেই চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রাখি না কেন, আসুন আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই যেন প্রস্তুত ও সজাগ থাকতে পারি। তা করলে আমরা অপূর্ব ভবিষ্যৎ উপভোগ করতে পারব, যা যিহোবা আমাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন!

^ অনু. 9 দৃষ্টান্তের মধ্যে “দেখ, বর!” (৬ পদ) এই উচ্চরব এবং বর আসার (১০ পদ) মধ্যে একটা সময়কাল রয়েছে। শেষকালজুড়ে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা সজাগ রয়েছে। তারা যিশুর উপস্থিতির চিহ্ন শনাক্ত করতে পেরেছে আর তাই তারা জানে, তিনি ঈশ্বরের রাজ্যে রাজা হিসেবে শাসন করছেন। তা সত্ত্বেও, তিনি আসার আগে পর্যন্ত তাদের অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে।