সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আদর্শ প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করুন—দ্বিতীয় ভাগ

আদর্শ প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করুন—দ্বিতীয় ভাগ

“তোমাদের কি কি প্রয়োজন, তাহা . . . তোমাদের পিতা জানেন।”—মথি ৬:৮.

১-৩. কেন একজন বোন নিশ্চিত হয়েছিলেন, যিহোবা তার প্রয়োজন বুঝতে পেরেছেন?

লানা নামে একজন নিয়মিত অগ্রগামী বোন, ২০১২ সালে যখন জার্মানিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন, তখন যা ঘটেছিল, তা তিনি কখনো ভুলবেন না। তিনি মনে করেন, যিহোবা তার দুটো প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। ট্রেনে করে এয়ারপোর্ট যাওয়ার সময় তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, যেন প্রচার করার জন্য তিনি কাউকে খুঁজে পান। এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর পর তিনি দেখেন, তার ফ্লাইট ডিলে হয়েছে এবং সেটা পরের দিন যাবে। লানা সাহায্য চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন, কারণ তিনি তার বেশিরভাগ টাকা খরচ করে ফেলেছেন এবং রাত কাটানোর জন্য তার একটা জায়গা প্রয়োজন।

লানা তার প্রার্থনা শেষ করার পর পরই শুনতে পান, কেউ তাকে বলছে, “আরে লানা, তুমি এখানে কী করছ?” লানা তাকিয়ে একজন যুবককে দেখতে পান, যিনি তার সঙ্গে একই স্কুলে পড়তেন। সেই যুবকের সঙ্গে তার মা এবং দিদিমা ছিলেন। তারা তাকে বিদায় জানাতে এসেছিলেন কারণ তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছিলেন। লানা যখন তাদেরকে তার পরিস্থিতি সম্বন্ধে বলেন, তখন মা এবং দিদিমা লানাকে রাতে তাদের ঘরে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তারা লানাকে তার বিশ্বাস ও অগ্রগামী কাজ সম্বন্ধে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন।

পরের দিন সকালে খাবার খাওয়ার পর, লানা বাইবেল সম্বন্ধে তাদের আরও প্রশ্নের উত্তর দেন। লানা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার উপায় জানতে চান, যাতে অন্য কেউ তাদের প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারেন। লানা নিরাপদে বাড়ি ফিরে যান আর তিনি এখনও অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছেন। তিনি মনে করেন, যিহোবা তার প্রার্থনা শুনেছেন, তার প্রয়োজন বুঝতে পেরেছেন এবং তাকে সাহায্য করেছেন।—গীত. ৬৫:২.

৪. আমরা কোন প্রয়োজনগুলো নিয়ে আলোচনা করব?

আমরা যখন হঠাৎ কোনো সমস্যায় পড়ি, তখন আমরা সহজেই যিহোবার সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করি আর তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনে আনন্দিত হন। (গীত. ৩৪:১৫; হিতো. ১৫:৮) কিন্তু, যিশুর আদর্শ প্রার্থনা আমাদের শিক্ষা দেয়, এমন আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন রয়েছে, যেগুলোর জন্য আমাদের প্রার্থনা করতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে আদর্শ প্রার্থনার শেষ চারটে অনুরোধ আমাদের যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার জন্য সাহায্য করতে পারে।—পড়ুন, মথি ৬:১১-১৩.

“আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য আজ আমাদিগকে দেও”

৫, ৬. কেন যিশু আমাদেরকে ‘আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যের’ জন্য প্রার্থনা করতে শিক্ষা দিয়েছিলেন, এমনকী আমাদের যদি খাবারের অভাব না-ও থাকে?

যিশু “আমার প্রয়োজনীয় খাদ্য” নয় বরং ‘আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যের’ জন্য প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। ভিক্টর নামে আফ্রিকার একজন সীমা অধ্যক্ষ বলেন: “আমি সবসময় যিহোবাকে মন থেকে ধন্যবাদ দিই কারণ আমাকে ও আমার স্ত্রীকে কখনো এই বিষয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না, আমাদের পরবর্তী খাবার কোথা থেকে আসবে। কিংবা আমরা কখনো এই বিষয় নিয়েও উদ্‌বিগ্ন হই না, কে আমাদের বাড়ি ভাড়া দেবে। আমাদের ভাই-বোনেরা সদয়ভাবে প্রতিদিন আমাদের যত্ন নেন। কিন্তু আমি প্রার্থনা করি, যারা আমাদের সাহায্য করছেন, তারা যেন তাদের অর্থনৈতিক চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন।”

আমাদের নিজেদের হয়তো খাবারের কোনো অভাব নেই কিন্তু আমাদের অনেক ভাই-বোনের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া, কেউ কেউ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা তাদের জন্য প্রার্থনা করার পাশাপাশি তাদেরকে সাহায্য করার জন্য কিছু করতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের যা রয়েছে, তা আমরা তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি। এ ছাড়া, যিহোবার লোকেদের বিশ্বব্যাপী কাজের জন্য আমরা নিয়মিতভাবে দানও দিতে পারি। আমরা জানি, আমাদের দান দীনহীন বা অভাবী ভাই-বোনদের প্রয়োজন মেটাতে পারে।—১ যোহন ৩:১৭.

৭. কীভাবে যিশু উদাহরণের সাহায্য আমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, আমাদের ‘কল্যকার নিমিত্ত ভাবিত হওয়া’ উচিত নয়?

আদর্শ প্রার্থনা সম্বন্ধে শেখানোর পর, যিশু আমাদের এটাও শিক্ষা দিয়েছিলেন, যেন আমরা বস্তুগত বিষয়ের উপর মনোযোগ না দিই। তিনি বলেছিলেন, যিহোবা যদি বুনো ফুলের যত্ন নেন, তাহলে “হে অল্প-বিশ্বাসীরা, তোমাদিগকে কি আরও অধিক নিশ্চয় বিভূষিত করিবেন না? অতএব ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে, ‘কি পরিব?’” এরপর, তিনি পুনরায় বলেছিলেন: “কল্যকার নিমিত্ত ভাবিত হইও না।” (মথি ৬:৩০-৩৪) আমাদের ভাবী প্রয়োজনগুলো নিয়ে আমাদের ভাবিত বা উদ্‌বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে, রোজকার মৌলিক প্রয়োজনগুলো নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা আমাদের বাসস্থানের ব্যাপারে, পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য একটা চাকরির ব্যাপারে এবং আমাদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে উত্তম সিদ্ধান্তের জন্য প্রজ্ঞার ব্যাপারে প্রার্থনা করতে পারি। কিন্তু, আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যেটার জন্য আমাদের প্রার্থনা করতে হবে।

৮. আমাদের রোজকার খাদ্য সম্বন্ধে যিশুর কথাগুলো আমাদের কী মনে করিয়ে দেয়? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

আমাদের রোজকার খাদ্য সম্বন্ধে যিশুর কথাগুলো আমাদের আরেকটা বিষয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যে-সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন: “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।” (মথি ৪:৪) তাই, আমাদের প্রার্থনা করা উচিত, যেন যিহোবা সবসময় আমাদের শিক্ষা দেন এবং তাঁর নিকটবর্তী থাকার জন্য আমাদের যা-কিছু প্রয়োজন, তা জুগিয়ে দেন।

“আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা কর”

৯. কেন আমাদের পাপকে ঋণের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?

যিশু বলেছিলেন: “আমাদের অপরাধ [ঋণ, পাদটীকা] সকল ক্ষমা কর।” (মথি ৬:১২; লূক ১১:৪) আমাদের অপরাধ বা পাপ হচ্ছে ঋণের মতো। ১৯৫১ সালে, প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার একটা সংখ্যায় ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, “ঈশ্বরের আইনের বিরুদ্ধে পাপ করলে আমরা তাঁর কাছে ঋণী হয়ে পড়ি। . . . আমাদের পাপের কারণে ঈশ্বর চাইলে আমাদের জীবন নিয়ে নিতে পারতেন। . . . তিনি আমাদের সঙ্গে তাঁর শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারতেন। . . . আমাদের কর্তব্য হল তাঁর প্রতি প্রেম দেখানো, যা বাধ্যতার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়; আর আমরা যখন পাপ করি, তখন আমরা তাঁর ঋণ পরিশোধ করতে অর্থাৎ তাঁর প্রতি প্রেম দেখাতে ব্যর্থ হই কারণ ঈশ্বরের প্রতি প্রেম না দেখানোই হচ্ছে পাপ।”—১ যোহন ৫:৩.

১০. কীসের ভিত্তিতে যিহোবা আমাদের পাপ ক্ষমা করতে পারেন আর এই বিষয়ে আমাদের কেমন বোধ করা উচিত?

১০ যিহোবা, যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে আমাদের পাপ ক্ষমা করেছেন বলে আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ! আমাদের প্রতিদিন যিহোবার কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করা প্রয়োজন। যদিও যিশু প্রায় ২,০০০ বছর আগে আমাদের জন্য মারা গিয়েছেন কিন্তু এখনও আমরা মুক্তির মূল্য থেকে উপকার লাভ করছি। এই অমূল্য উপহারের জন্য সবসময় যিহোবাকে আমাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আমাদের মধ্যে কেউই কখনো সেই মুক্তির মূল্য দিতে পারত না, যা আমাদের পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন ছিল। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪৯:৭-৯; ১ পিতর ১:১৮, ১৯.) এ ছাড়া, “আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা কর,” আদর্শ প্রার্থনার এই কথাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের যেমন মুক্তির মূল্যের প্রয়োজন, তেমনই আমাদের ভাই-বোনদের জন্যও তা প্রয়োজন। যিহোবা চান যেন আমরা তাদের জন্য ও সেইসঙ্গে তাঁর সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারেও চিন্তা করি। এর অন্তর্ভুক্ত হল, তারা যখন আমাদের বিরুদ্ধে পাপ করে, তখন দ্রুত তাদের ক্ষমা করে দেওয়া। প্রায়ই দেখা যায়, সেগুলো হচ্ছে সামান্য ভুলত্রুটি। কিন্তু আমরা যখন আমাদের ভাই-বোনদের ক্ষমা করি, তখন আমরা প্রমাণ দিই, আমরা তাদের ভালোবাসি। এ ছাড়া, আমরা এও প্রমাণ দিই, আমাদের ক্ষমা করেছেন বলে আমরা যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞ।—কল. ৩:১৩.

আপনি যদি আশা করেন, ঈশ্বর আপনাকে ক্ষমা করবেন, তাহলে আপনাকেও অন্যদের ক্ষমা করতে হবে (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১. কেন অন্যদের ক্ষমা করা গুরুত্বপূর্ণ?

১১ যেহেতু আমরা অসিদ্ধ, তাই যারা আমাদের অসন্তুষ্ট করে, তাদেরকে মাঝে মাঝে ক্ষমা করা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে। (লেবীয়. ১৯:১৮) তারা আমাদের প্রতি যা করেছে, তা নিয়ে যদি আমরা বলাবলি করতে শুরু করি, তাহলে মণ্ডলীর অন্যেরা হয়তো আমাদের পক্ষ নেবে আর এটা মণ্ডলীর একতাকে নষ্ট করবে। আমরা যদি এমনটা করে চলি, তাহলে এটা দেখাবে, আমরা ঈশ্বরের মুক্তির মূল্যের দানকে মূল্যবান বলে মনে করি না আর এর ফলে আমরা এর থেকে উপকারও লাভ করব না। (মথি ১৮:৩৫) আমরা যদি অন্যদের ক্ষমা না করি, তাহলে যিহোবা আমাদের ক্ষমা করেন না। (পড়ুন, মথি ৬:১৪, ১৫.) এ ছাড়া, আমরা যদি আশা করি, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করবেন, তাহলে আমরা এমন কিছু করব না, যা তিনি ঘৃণা করেন।—১ যোহন ৩:৪, ৬.

“আমাদিগকে পরীক্ষাতে আনিও না”

১২, ১৩. (ক) যিশু বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর পরই কী ঘটেছিল? (খ) আমরা যদি প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করি, তাহলে কেন অন্য কাউকে দোষ দেওয়া উচিত নয়? (গ) মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকার মাধ্যমে যিশু কী প্রমাণ দিয়েছিলেন?

১২ “আমাদিগকে পরীক্ষাতে আনিও না” বা প্রলোভনে ফেলো না, আদর্শ প্রার্থনার এই কথাগুলো, যিশু বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর পরই কী ঘটেছিল, সেটা আমাদের মনে করিয়ে দেয়। ঈশ্বরের আত্মা তাঁকে “দিয়াবল দ্বারা পরীক্ষিত” বা প্রলোভিত “হইবার জন্য” প্রান্তরে পরিচালিত করেছিল। (মথি ৪:১; ৬:১৩) কেন যিহোবা এমনটা ঘটতে দিয়েছিলেন? যিহোবা যিশুকে এমন একটা বিষয় মীমাংসা করার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, যে-বিষয়টা আদম ও হবা যিহোবার শাসন প্রত্যাখ্যান করার পর উত্থাপিত হয়েছিল। তাদের বিদ্রোহের ফলে এমন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়েছিল, যেগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল। উদাহরণ স্বরূপ, যিহোবা মানুষকে যেভাবে সৃষ্টি করেছিলেন, তাতে কি কোনো ভুল ছিল? একজন সিদ্ধ মানুষ “মন্দ [“দুষ্ট ব্যক্তির,” NW]” দ্বারা প্রলোভিত হলে কি যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পারবে? আর মানুষেরা যদি নিজেরাই নিজেদের শাসন করে, তাহলে সেটা কি তাদের জন্য আরও ভালো হবে? (আদি. ৩:৪, ৫) ভবিষ্যতে যখন যিহোবার সন্তোষজনক উপায়ে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে, তখন স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রত্যেকে জানতে পারবে, যিহোবার শাসন পদ্ধতি হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম।

১৩ যিহোবা হলেন পবিত্র আর তাই তিনি কখনো কাউকে মন্দ বিষয়ের দ্বারা পরীক্ষা করেন না বা প্রলোভনে ফেলেন না। শয়তানই হল “পরীক্ষক” বা প্রলোভনকারী। (মথি ৪:৩) শয়তান আমাদের বিভিন্ন উপায়ে প্রলোভিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু, আমাদের বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমরা শয়তানের প্রলোভন প্রতিরোধ করব কি করব না, সেই ব্যাপারে আমরা প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। (পড়ুন, যাকোব ১:১৩-১৫.) শয়তান যখন যিশুকে প্রলোভনে ফেলার চেষ্টা করেছিল, তখন যিশু ঈশ্বরের বাক্য থেকে উদ্ধৃত করার মাধ্যমে তাকে সঙ্গেসঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। যিশু ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ছিলেন। কিন্তু, শয়তান হাল ছেড়ে দেয়নি। সে “কিয়ৎকালের জন্য” যিশুর কাছ থেকে চলে গিয়েছিল। (লূক ৪:১৩) তবে, শয়তান যা-ই করুক না কেন, যিশু সবসময় তাঁর শাসক ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য ছিলেন। যিশু প্রমাণ দিয়েছিলেন, একজন সিদ্ধ মানুষ যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পারে আর তা এমনকী কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও। তা সত্ত্বেও, শয়তান যিশুর অনুসারীদের যিহোবার অবাধ্য হওয়ার জন্য প্রলোভনে ফেলার চেষ্টা করে আর এর মধ্যে আপনিও রয়েছেন।

১৪. প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৪ যিহোবার শাসন নিয়ে যে-সমস্ত প্রশ্ন উঠেছিল, সেগুলোর উত্তর দেওয়া এখনও বাকি আছে। তাই, আমাদের পরীক্ষায় ফেলার জন্য শয়তানকে যিহোবা এখনও সুযোগ দিচ্ছেন। যিহোবা আমাদের ‘পরীক্ষাতে আনেন’ না বা প্রলোভনে ফেলেন না। আসলে তিনি নিশ্চিত, আমরা তাঁর প্রতি অনুগত থাকতে পারব আর এই ব্যাপারে তিনি আমাদের সাহায্য করতে চান। কিন্তু, যা সঠিক, তা করার জন্য তিনি কখনো আমাদের জোর করেন না। তিনি আমাদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখান। তাই, আমরা তাঁর প্রতি অনুগত থাকব কি না, সেই ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তিনি আমাদের দেন। প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করা এড়িয়ে চলতে হলে আমাদের দুটো বিষয় করতে হবে: যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে হবে এবং তাঁর সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করে চলতে হবে। কীভাবে যিহোবা প্রলোভন প্রতিরোধ করার ব্যাপারে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন?

যিহোবার নিকটবর্তী থাকুন এবং প্রচার কাজে উদ্যোগ বজায় রাখুন (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫, ১৬. (ক) কিছু প্রলোভন কী, যেগুলো আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে? (খ) আমরা যদি প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করি, তাহলে সেটা কার দোষ?

১৫ শয়তানের প্রলোভনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যিহোবা আমাদের তাঁর শক্তিশালী পবিত্র আত্মা দেন। এ ছাড়া, যিহোবা আমাদের বিভিন্ন বিপদ থেকে সাবধান করার জন্য বাইবেল দিয়েছেন এবং মণ্ডলীর ব্যবস্থা করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি আমাদের অধিকাংশ সময়, অর্থ এবং শক্তি এমন বিষয়গুলোর পিছনে ব্যয় না করার জন্য সাবধান করেন, যেগুলো আসলে আমাদের প্রয়োজন নেই। এস্পেন ও ইয়ানে ইউরোপের একটা ধনী দেশে বাস করেন। অনেক বছর ধরে তারা সেই দেশের এমন একটা জায়গায় নিয়মিত অগ্রগামীর কাজ করেছিলেন, যেখানে প্রকাশকের অনেক প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, পরে তাদের সন্তান হওয়ার কারণে অগ্রগামীর কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল আর এখন তাদের দুটো সন্তান রয়েছে। এস্পেন বলেন: “আমরা যেহেতু আগের মতো আধ্যাত্মিক কাজে সময় ব্যয় করতে পারি না, তাই আমরা সবসময় প্রার্থনা করি যেন আমরা এখন প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার না করি। ঈশ্বরের সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক এবং প্রচার কাজের প্রতি উদ্যোগ বজায় রাখার জন্য আমরা যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করি।”

১৬ আরেকটা প্রলোভন হল পর্নোগ্রাফি দেখা, যেটা আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা যদি এই প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করি, তাহলে আমরা শয়তানকে দোষ দিতে পারি না। কেন? শয়তান ও তার জগৎ আমাদের এমন কিছু করার জন্য জোর করতে পারে না, যা অন্যায়। কেউ কেউ পর্নোগ্রাফি দেখে, কারণ তারা নেতিবাচক চিন্তাভাবনা প্রত্যাখ্যান করে না। কিন্তু, আমাদের অনেক ভাই-বোন এই প্রলোভন প্রতিরোধ করতে পেরেছে আর আমরাও পারব।—১ করি. ১০:১২, ১৩.

‘আমাদিগকে দুষ্ট ব্যক্তির হাত হইতে রক্ষা কর’

১৭. (ক) কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, আমরা চাই যেন যিহোবা ‘আমাদিগকে দুষ্ট ব্যক্তির হাত হইতে রক্ষা করেন’? (খ) শীঘ্রই আমরা কোন স্বস্তি লাভ করব?

১৭ কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, আমরা চাই যেন যিহোবা আমাদের ‘দুষ্ট ব্যক্তির হাত হইতে রক্ষা করেন’? আমরা অবশ্যই ‘জগতের হইব না’ এবং ‘জগৎকে প্রেম করিব না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিব না।’ (যোহন ১৫:১৯; ১ যোহন ২:১৫-১৭) যিহোবা যখন শয়তানকে দূর করে দেবেন এবং এই দুষ্ট জগৎ ধ্বংস করবেন, তখন তা কত স্বস্তিদায়কই-না হবে! কিন্তু, এর আগে পর্যন্ত আমাদের মনে রাখতে হবে, শয়তান “অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।” আমরা যেন যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দিই, এর জন্য শয়তান যথাসাধ্য করবে। তাই, যিহোবা যেন শয়তানের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করেন, সেইজন্য আমাদের ক্রমাগত প্রার্থনা করতে হবে।—প্রকা. ১২:১২, ১৭.

১৮. আমরা যদি শয়তানের জগতের ধ্বংস থেকে রক্ষা পেতে চাই, তাহলে আমাদের কী করতে হবে?

১৮ আপনি কি এমন একটা জগতে বাস করতে চান, যেখানে শয়তান নেই? তাহলে, ঈশ্বরের রাজ্য আসার জন্য, ঈশ্বরের নামের পবিত্রীকরণের জন্য এবং পৃথিবীতে তাঁর ইচ্ছা পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য প্রার্থনা করে চলুন। সবসময় যিহোবার উপর এই নির্ভরতা রাখুন, তিনি আপনার যত্ন নেবেন এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকার জন্য আপনার যা-কিছু প্রয়োজন, তা জোগাবেন। হ্যাঁ, আদর্শ প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার জন্য যথাসাধ্য করুন।