সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় ধ্যান করুন

আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় ধ্যান করুন

“এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর, যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়।”—১ তীম. ৪:১৫.

গান সংখ্যা: ২২, ৫২

১, ২. কোন বিষয়গুলোর কারণে মানুষ পশুপাখির চেয়ে আলাদা?

মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা করা যায় না। উদাহরণ স্বরূপ, মানুষের ভাষা শেখার ক্ষমতা রয়েছে। আর ভাষার কারণে আমরা পড়তে পারি, লিখতে পারি, কথা বলতে পারি এবং যা শুনি তা বুঝতে পারি। এ ছাড়া, এর মাধ্যমে আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি এবং তাঁর উদ্দেশে গান গাইতে পারি। এগুলোর কারণে আমরা পশুপাখির চেয়ে আলাদা। আমাদের মস্তিষ্ক ঠিক কীভাবে এসব বিস্ময়কর কাজ করে, তা বিজ্ঞানীরাও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেন না।

আমাদের ভাষা ব্যবহার করার দক্ষতা হচ্ছে যিহোবার কাছ থেকে এক উপহার। (গীত. ১৩৯:১৪; প্রকা. ৪:১১) এ ছাড়া, তিনি আমাদের এমন আরেকটা উপহার দিয়েছেন, যেটার কারণে আমরা পশুপাখির চেয়ে আলাদা। মানুষকে ‘ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতে’ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা অর্থাৎ নিজের জন্য বাছাই করার স্বাধীনতা রয়েছে। আর আমরা যিহোবার সেবা ও প্রশংসা করার জন্য ভাষা ব্যবহার করা বেছে নিতে পারি।—আদি. ১:২৭.

৩. আমাদের বিজ্ঞ করে তোলার জন্য যিহোবা কী দিয়েছেন?

যিহোবা বাইবেলের মাধ্যমে আমাদের দেখিয়েছেন কীভাবে আমরা তাঁর সেবা ও প্রশংসা করতে পারি। বাইবেল সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে ২,৮০০-রও বেশি ভাষায় পাওয়া যায়। বাইবেল যা বলে সেই বিষয় নিয়ে আমরা যখন ধ্যান করি, তখন আমরা ঈশ্বর যেভাবে চিন্তা করেন, সেভাবে চিন্তা করতে শুরু করি। (গীত. ৪০:৫; ৯২:৫; ১৩৯:১৭) আর যিহোবার মতো চিন্তাভাবনা করা আমাদের বিজ্ঞ করে তোলে এবং আমাদেরকে অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করে।—পড়ুন, ২ তীমথিয় ৩:১৪-১৭.

৪. ধ্যান করার অর্থ কী আর আমরা কোন প্রশ্নগুলো আলোচনা করব?

ধ্যান করার অর্থ হচ্ছে কোনো কিছুর প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং তা নিয়ে গভীরভাবে ও সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করা। (গীত. ৭৭:১২; হিতো. ২৪:১, ২) যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে আমরা যা শিখি, তা নিয়ে যখন ধ্যান করি, তখন আমরা সবচেয়ে বেশি উপকার লাভ করি। (যোহন ১৭:৩) এই প্রবন্ধে আমরা কিছু প্রশ্ন আলোচনা করব আর সেগুলো হল: কোন উপায়ে পাঠ করলে আমাদের জন্য ধ্যান করা আরও সহজ হয়ে উঠবে? কোন বিষয় নিয়ে আমরা ধ্যান করতে পারি? নিয়মিতভাবে ধ্যান করার এবং তা উপভোগ করার জন্য কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?

আপনি অধ্যয়ন থেকে উপকৃত হচ্ছেন কি না, তা পরীক্ষা করুন

৫, ৬. আপনি যা পড়েন, সেই বিষয়টা মনে রাখার এবং আরও ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে কী আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

আপনি কি কখনো লক্ষ করেছেন, এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো আপনি চিন্তা না করেই করতে পারেন, যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া, হাঁটা অথবা সাইকেল চালানো? কখনো কখনো আপনি হয়তো চিন্তা না করে এমনকী পড়তেও পারেন। কোনো কিছু পড়ার সময়, আপনি হয়তো এমনকী অন্যান্য বিষয় নিয়েও চিন্তা করা শুরু করতে পারেন। এটা এড়ানোর জন্য আপনি কী করতে পারেন? আপনি যা পড়ছেন সেটার প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং সেটার অর্থ কী তা নিয়ে চিন্তা করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই, আপনি যখন কোনো প্রকাশনার একটা অনুচ্ছেদ অথবা উপশিরোনাম পড়ে শেষ করেন, তখন একটু থামুন এবং সবেমাত্র যা পড়েছেন, তা নিয়ে ধ্যান করুন। আপনি যা শিখেছেন, তা নিয়ে চিন্তা করুন এবং বিষয়টা আসলেই বুঝতে পেরেছেন কি না, তা পরীক্ষা করুন।

বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, আমরা যখন কোনো কিছু জোরে জোরে পড়ি, তখন তা মনে রাখা আরও সহজ হয়। আমাদের সৃষ্টিকর্তা এটা জানেন আর তাই তিনি যিহোশূয়কে ব্যবস্থাপুস্তক “ধ্যান” করতে বলেছিলেন। আর ধ্যান হিসেবে অনুবাদিত ইব্রীয় শব্দটাকে “নীচুস্বরে পাঠ করা” হিসেবেও অনুবাদ করা যায়। (পড়ুন, যিহোশূয় ১:৮.) এ ছাড়া, জোরে জোরে বাইবেল পাঠ করার মাধ্যমে আপনি আরও ভালোভাবে মনোযোগ দিতে ও মনে রাখতে পারেন।

৭. বাইবেল নিয়ে ধ্যান করার সর্বোত্তম সময় কখন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

আমরা যে-বিষয়ে অধ্যয়ন করি, তা নিয়ে ধ্যান করার ও সেটার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তাই, সবচেয়ে ভালো হবে, যদি আপনি এমন সময়ে ধ্যান করেন, যখন আপনি ক্লান্ত না থাকেন আর সেইসঙ্গে নিরিবিলি জায়গা বেছে নেন, যেখানে অনেক কিছু আপনাকে বিক্ষিপ্ত করবে না। গীতরচক দায়ূদ রাতের বেলা তার বিছানায় জেগে থাকার সময়ে ধ্যান করেছিলেন। (গীত. ৬৩:৬) যিশু, যিনি একজন সিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, তিনি ধ্যান ও প্রার্থনা করার জন্য নিরিবিলি জায়গা বেছে নিয়েছিলেন।—লূক ৬:১২.

ধ্যান করার মতো উত্তম বিষয়

৮. (ক) আমরা কী নিয়ে ধ্যান করতে পারি? (খ) আমরা যখন অন্যদের কাছে যিহোবার বিষয়ে কথা বলি, তখন তিনি কেমন অনুভব করেন?

বাইবেল থেকে আপনি যা পড়েন, সেগুলো ছাড়াও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আপনি ধ্যান করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি যখন যিহোবার কোনো অপূর্ব সৃষ্টি লক্ষ করেন, তখন একটু থেমে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এটা যিহোবা সম্বন্ধে আমাকে কী শিক্ষা দেয়?’ এইরকম চিন্তাভাবনা নিশ্চিতভাবেই আপনাকে প্রার্থনায় যিহোবাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য অনুপ্রাণিত করবে। আর আপনি যখন অন্যদের সঙ্গে থাকবেন, তখন আপনি নিশ্চয়ই আপনার অনুভূতি তাদের জানাতে চাইবেন। (গীত. ১০৪:২৪; প্রেরিত ১৪:১৭) আমরা যখন ধ্যান করি, প্রার্থনা করি এবং একে অন্যের সঙ্গে তাঁর বিষয়ে কথা বলি, তখন যিহোবা তাতে মনোযোগ দেন এবং খুশি হন। বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয়: “যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, ও তাঁহার নাম ধ্যান করিত, তাহাদের জন্য তাঁহার সম্মুখে একখানি স্মরণার্থক পুস্তক লেখা হইল।”—মালাখি ৩:১৬.

আপনার বাইবেল ছাত্রকে কীভাবে সাহায্য করতে পারেন, সেই বিষয় নিয়ে আপনি কি ধ্যান করেন? (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯. (ক) পৌল তীমথিয়কে কী নিয়ে ধ্যান করতে বলেছিলেন? (খ) পরিচর্যার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে আমরা কী নিয়ে ধ্যান করতে পারি?

প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে বলেছিলেন, যেন তীমথিয় নিজের কথাবার্তা, আচরণ ও শিক্ষা অন্যদের উপর কেমন প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে ধ্যান করেন। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৪:১২-১৬.) এই বিষয়গুলো নিয়ে আপনিও ধ্যান করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি যখন কাউকে বাইবেল অধ্যয়ন করানোর জন্য প্রস্তুতি নেন, তখন সময় নিয়ে ধ্যান করা প্রয়োজন। আপনার ছাত্রের বিষয়ে চিন্তা করুন এবং এমন একটা প্রশ্ন অথবা উদাহরণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, যেটা তাকে উন্নতি করতে সাহায্য করবে। আপনি যখন এভাবে আপনার বাইবেল অধ্যয়নের জন্য প্রস্তুতি নেন, তখন আপনার নিজের বিশ্বাস শক্তিশালী হয় এবং আপনি বাইবেল সম্বন্ধে আরও উত্তম ও উদ্যোগী শিক্ষক হয়ে ওঠেন। এ ছাড়া, আপনি ক্ষেত্রের পরিচর্যায় বের হওয়ার আগে ধ্যান করার মাধ্যমে উপকৃত হবেন। (পড়ুন, ইষ্রা ৭:১০.) আপনি হয়তো প্রেরিত বইয়ের কোনো অধ্যায় পড়তে পারেন, যা আপনাকে পরিচর্যার জন্য আরও উদ্যোগী হতে সাহায্য করবে। কিংবা আপনি এমন শাস্ত্রপদগুলো নিয়ে ধ্যান করতে পারেন, যেগুলো সেই দিন ব্যবহার করার জন্য পরিকল্পনা করেছেন আর আপনি সেই প্রকাশনাগুলো নিয়েও ধ্যান করতে পারেন, যেগুলো আপনি সেই দিন অর্পণ করতে চান। (২ তীম. ১:৬) এলাকার লোকেদের বিষয়ে এবং তাদের আগ্রহ জাগিয়ে তোলার জন্য আপনি কী বলতে পারেন, সেই বিষয়ে চিন্তা করুন। আপনি যখন এভাবে প্রস্তুতি নেবেন, তখন অন্যদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আপনি আরও কার্যকরী উপায়ে বাইবেল ব্যবহার করতে পারবেন।—১ করি. ২:৪.

১০. অন্য আর কোন বিষয় নিয়ে আপনি ধ্যান করতে পারেন?

১০ অন্য আর কোন বিষয় নিয়ে আপনি ধ্যান করতে পারেন? আপনার যদি জনসাধারণের বক্তৃতার সময় এবং সম্মেলনের সময় নোট নেওয়ার অভ্যাস থাকে, তা হলে সময় নিয়ে নোটের বিষয়বস্তু পুনরালোচনা করুন। তা করার সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘ঈশ্বরের বাক্য ও তাঁর সংগঠনের কাছ থেকে আমি কী শিখেছি?’ এ ছাড়া, আপনি প্রতি মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকা আর সেইসঙ্গে সচেতন থাক! পত্রিকার তথ্য এবং সম্মেলনে প্রকাশিত নতুন প্রকাশনার বিষয়বস্তু নিয়ে ধ্যান করতে পারেন। বর্ষপুস্তক (ইংরেজি) থেকে কোনো অভিজ্ঞতা পড়ার পর, একটু থেমে তা নিয়ে চিন্তা করুন, যেন তা আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করে। আমাদের প্রকাশনা পড়ার সময়, আপনি হয়তো মূল ধারণার নীচে দাগ দিতে অথবা প্রকাশনার পাশে খালি জায়গায় নোট নিতে চাইবেন। এটা আপনাকে সেই সময়ে সাহায্য করবে, যখন আপনি কোনো পুনর্সাক্ষাৎ, পালকীয় সাক্ষাৎ অথবা বক্তৃতার জন্য প্রস্তুতি নেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, আপনি যখন কোনো কিছু পড়ার সময় একটু থেমে ধ্যান করেন, তখন আপনি আসলে সেই বিষয়বস্তু আপনার হৃদয়ে পৌঁছানোর সুযোগ দেন। এ ছাড়া, আপনি যে-উত্তম বিষয়গুলো শিখতে পেরেছেন, সেগুলোর জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রার্থনা করার সুযোগ লাভ করেন।

প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ধ্যান করুন

১১. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন বই নিয়ে আমাদের ধ্যান করা উচিত আর এটা কীভাবে আমাদের সাহায্য করবে?

১১ নিশ্চিতভাবে বাইবেলই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই, যেটা নিয়ে আমাদের ধ্যান করা উচিত। কিন্তু, কোনো একদিন যদি আপনাকে নিজের কাছে বাইবেল রাখতে দেওয়া না হয়, তখন কী হবে? * বাইবেলের যে-বিষয়গুলো আপনার মুখস্থ রয়েছে, যেমন আপনার প্রিয় কোনো শাস্ত্রপদ অথবা রাজ্যের গান, তা নিয়ে ধ্যান করা থেকে আপনাকে কেউ বিরত করতে পারবে না। (প্রেরিত ১৬:২৫) আর ঈশ্বরের আত্মা আপনাকে আপনার শেখা এমন বিষয়গুলো মনে করিয়ে দেবে, যেগুলো আপনাকে বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করবে।—যোহন ১৪:২৬.

১২. প্রতিদিন বাইবেল পড়ার জন্য আপনি কোন পরিকল্পনা করতে পারেন?

১২ প্রতিদিন বাইবেল পড়ার জন্য আপনি কোন পরিকল্পনা করতে পারেন? আপনি হয়তো সপ্তাহের কয়েকটা দিন ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এর সাপ্তাহিক বাইবেল পাঠের বিষয়বস্তু পড়তে পারেন এবং তা নিয়ে ধ্যান করতে পারেন। আর অন্যান্য দিন আপনি মথি, মার্ক, লূক ও যোহনের সুসমাচার পড়তে পারেন এবং যিশুর বাক্য ও কাজ নিয়ে ধ্যান করতে পারেন। (রোমীয় ১০:১৭; ইব্রীয় ১২:২; ১ পিতর ২:২১) এ ছাড়া, আমাদের একটা প্রকাশনা রয়েছে, যেখানে যিশুর জীবনের ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করা হয়েছে। এই প্রকাশনা আপনাকে সুসমাচারের বিবরণ পড়ার সময় আরও পূর্ণরূপে উপকৃত হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে।—যোহন ১৪:৬.

কেন ধ্যান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?

১৩, ১৪. কেন যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে ধ্যান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর এটা আমাদের কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে?

১৩ যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে ধ্যান করার ফলে একজন ব্যক্তি পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে উঠতে পারেন এবং দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রাখতে পারেন। (ইব্রীয় ৫:১৪; ৬:১) একজন ব্যক্তি যদি ঈশ্বর সম্বন্ধে চিন্তা করার জন্য খুব অল্প সময় ব্যয় করেন, তা হলে তিনি যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলবেন অথবা এমনকী তাঁকে ত্যাগ করবেন। (ইব্রীয় ২:১; ৩:১২) যিশু সতর্ক করেছিলেন, আমরা যদি “সৎ ও উত্তম হৃদয়ে” ঈশ্বরের বাক্য না শুনি বা গ্রহণ না করি, তা হলে আমরা সেই বাক্য ‘ধরিয়া রাখিতে’ পারব না। এর পরিবর্তে, আমরা খুব সহজেই “জীবনের চিন্তা ও ধন ও সুখভোগের দ্বারা চাপা পড়ে” যেতে পারি।—লূক ৮:১৪, ১৫.

১৪ তাই, আসুন আমরা সবসময় বাইবেল নিয়ে ধ্যান করি এবং যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জানি। এটা আমাদেরকে তাঁর গুণাবলি ও ব্যক্তিত্ব আরও পূর্ণরূপে অনুকরণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। (২ করি. ৩:১৮) আমরা অনন্তকাল ধরে আমাদের স্বর্গীয় পিতা সম্বন্ধে আরও বেশি জানতে ও তাঁকে অনুকরণ করতে পারব। এর চেয়ে সম্মানের বিষয় আর কিছুই নেই!—উপ. ৩:১১.

১৫, ১৬. (ক) যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে ধ্যান করে আপনি কীভাবে উপকৃত হয়েছেন? (খ) কেন মাঝে মাঝে ধ্যান করা কঠিন হতে পারে কিন্তু আমাদের সবসময় কী করার চেষ্টা করতে হবে?

১৫ যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে ধ্যান করা, আপনাকে সত্যের জন্য উদ্যোগ বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনার উদ্যোগ দেখে সহবিশ্বাসীরা ও সেইসঙ্গে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যাদের সঙ্গে আপনার দেখা হয়, সেই ব্যক্তিরা উৎসাহিত হবে। আর যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে যিহোবা আপনার জন্য যা-কিছু করেছেন, সেই বিষয়টা নিয়ে আপনি যখন ধ্যান করবেন, তখন আপনি ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে সবসময় মূল্যবান বলে গণ্য করবেন। (রোমীয় ৩:২৪; যাকোব ৪:৮) দক্ষিণ আফ্রিকায় মার্ক নামে একজন ভাই তার বিশ্বাসের জন্য তিন বছর জেলে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “ধ্যান করাকে একটা রোমাঞ্চকর অভিযানের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে আমরা যত বেশি ধ্যান করব, ততই আমাদের ঈশ্বর যিহোবা সম্বন্ধে নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার করব। কখনো কখনো, আমি যখন কিছুটা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি অথবা ভবিষ্যতের বিষয়ে উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়ি, তখন আমি বাইবেলের কোনো একটা বাক্যাংশ নিয়ে ধ্যান করি। আমার মনে হয়, এটা সত্যিই আমার মনকে শান্ত করে।”

১৬ এই জগতে জীবন বিক্ষেপে পরিপূর্ণ আর তাই বাইবেল নিয়ে ধ্যান করার জন্য সময় বের করা কঠিন। আফ্রিকার একজন ভাই প্যাট্রিক বলেছিলেন: “আমার মন এমন একটা ডাকবাক্সের মতো, যেখানে প্রত্যাশিত ও অপ্রত্যাশিত উভয় ধরনের তথ্য থাকে আর এগুলোকে প্রতিদিন আলাদা করতে হয়। আমি যখন আমার মনের বিষয়গুলো পরীক্ষা করি, তখন আমি প্রায়ই ‘ভাবনার’ বিষয় খুঁজে পাই। আমাকে তখন সেই বিষয়গুলো নিয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে হয়, যেন আমি এক পরিষ্কার মন নিয়ে ধ্যান করতে পারি। আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে ধ্যান করতে শুরু করার আগে তা করার জন্য যদিও কিছুটা সময় দরকার হয়, তবে আমি যিহোবার নিকটবর্তী অনুভব করি। এটা আমার মন খুলে দেয়, যেন আমি সত্য আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি।” (গীত. ৯৪:১৯) হ্যাঁ, আমরা যখন প্রতিদিন বাইবেল পড়ি ও তা নিয়ে ধ্যান করি, তখন আমরা অনেক উপায়ে উপকৃত হই।—প্রেরিত ১৭:১১.

আপনি কীভাবে সময় বের করতে পারেন?

১৭. আপনি কীভাবে ধ্যান করার জন্য সময় বের করেন?

১৭ কেউ কেউ পড়ার, ধ্যান করার ও প্রার্থনা করার জন্য ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠে। অন্যেরা দুপুরের খাবারের বিরতির সময় তা করে থাকে। হতে পারে, আপনার জন্য বাইবেল পড়ার সর্বোত্তম সময় হল, সন্ধ্যা বেলা অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। কেউ কেউ সকালে আর সেইসঙ্গে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আরও এক বার বাইবেল পড়তে পছন্দ করে। (যিহো. ১:৮) গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, আপনি যেন প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ধ্যান করতে পারেন, সেইজন্য “সুযোগ” বা সময় ‘কিনিয়া নেন’ অর্থাৎ কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো থেকে সময় বের করে নেন।—ইফি. ৫:১৫, ১৬.

১৮. যারা প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ধ্যান করে এবং তাদের শেখা বিষয়গুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করে, তাদের জন্য বাইবেলে কী প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে?

১৮ বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে, যারা যিহোবার বাক্য নিয়ে ধ্যান করে এবং তাদের শেখা বিষয়গুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করে, তাদের তিনি আশীর্বাদ করবেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১:১-৩.) যিশু বলেছিলেন: “ধন্য তাহারাই, যাহারা ঈশ্বরের বাক্য শুনিয়া পালন করে।” (লূক ১১:২৮) তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, প্রতিদিন যিহোবার বাক্য নিয়ে ধ্যান করা আপনাকে এমনভাবে কাজ করতে সাহায্য করবে, যা তাঁর গৌরব নিয়ে আসে। আমরা যদি তা করি, তা হলে পুরস্কার হিসেবে যিহোবা আমাদের এখন সুখী হতে সাহায্য করবেন এবং তাঁর নতুন জগতে অনন্তজীবন দান করবেন।—যাকোব ১:২৫; প্রকা. ১:৩.

^ অনু. 11 ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় “আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকার জন্য আমাদের যুদ্ধ” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।