সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা হলেন ভাববিনিময়কারী ঈশ্বর

যিহোবা হলেন ভাববিনিময়কারী ঈশ্বর

“বিনয় করি, নিবেদন শুন, আমি কিছু বলি।”—ইয়োব ৪২:৪.

গান সংখ্যা: ৪৮, ৫২

১-৩. (ক) কেন যিহোবার চিন্তাভাবনা ও ভাষা মানুষের ভাষার চেয়ে আরও উচ্চ? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?

যিহোবা চেয়েছিলেন যেন অন্যেরা জীবন ও আনন্দ উপভোগ করে আর তাই তিনি স্বর্গদূত ও পরবর্তী সময়ে মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন। (গীত. ৩৬:৯) যিহোবা প্রথমে এমন একজনকে সৃষ্টি করেছিলেন, যাঁকে প্রেরিত যোহন “বাক্য” বলে সম্বোধন করেন। (যোহন ১:১; প্রকা. ৩:১৪) যিহোবা সেই বাক্য অর্থাৎ যিশুর সঙ্গে ভাববিনিময় করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে নিজের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। (যোহন ১:১৪, ১৭; কল. ১:১৫) প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, স্বর্গদূতেরাও ভাববিনিময় করেন আর তাদেরও একটা ভাষা রয়েছে, যা মানুষের ভাষা থেকে অনেক আলাদা।—১ করি. ১৩:১.

যিহোবা তাঁর সৃষ্ট কোটি কোটি স্বর্গদূত ও মানুষ সম্বন্ধে সমস্ত কিছু জানেন। তিনি একই সময়ে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির করা প্রার্থনা শুনতে পারেন এবং তারা যে-ভাষাতেই প্রার্থনা করুক না কেন, তা বুঝতে পারেন। সেইসমস্ত প্রার্থনা শোনার সময়ও, তিনি স্বর্গদূতদের সঙ্গে ভাববিনিময় করতে ও তাদের নির্দেশনা দিতে পারেন। যিহোবা যেহেতু এই সমস্ত কিছু করতে পারেন, তাই তাঁর চিন্তাভাবনা ও ভাষা নিশ্চয়ই মানুষের চিন্তাভাবনা ও ভাষার চেয়ে আরও উচ্চ। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৫:৮, ৯.) আর এই কারণে, মানুষের সঙ্গে ভাববিনিময় করার  সময় তিনি তাঁর বার্তা সহজভাবে তুলে ধরেন, যেন আমরা তা বুঝতে  পারি।

এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, যিহোবা কীভাবে মানুষের সঙ্গে স্পষ্ট উপায়ে ভাববিনিময় করেন। এ ছাড়া, আমরা দেখব, পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে তিনি কীভাবে তাঁর ভাববিনিময়ের উপায় পরিবর্তন করেন।

ঈশ্বর মানুষের সঙ্গে ভাববিনিময় করেন

৪. (ক) মোশি, শমূয়েল ও দায়ূদের সঙ্গে ভাববিনিময় করার জন্য যিহোবা কোন ভাষা ব্যবহার করেছিলেন? (খ) বাইবেলে কী রয়েছে?

যিহোবা এদন উদ্যানে আদমের সঙ্গে যখন প্রথম বার কথা বলেছিলেন, তখন তিনি খুব সম্ভবত ইব্রীয় ভাষার কোনো একটা আদিরূপ ব্যবহার করেছিলেন। পরে যিহোবা বিভিন্ন ব্যক্তি, যেমন মোশি, শমূয়েল ও দায়ূদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। যদিও এই বাইবেল লেখকরা ইব্রীয় ভাষা ব্যবহার করে নিজেদের মতো করে লিখেছিলেন আর তাদের লেখার ধরন আলাদা ছিল, কিন্তু তাদের লেখায় তারা আসলে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা তুলে ধরেছিলেন। তারা যিহোবার সরাসরি উক্তি লিখেছিলেন আর লোকেদের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্কের ইতিহাস সম্বন্ধেও লিখেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, বাইবেলে তাদের বিশ্বাস ও ঈশ্বরের প্রতি তাদের প্রেম সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে আর সেইসঙ্গে তাদের ভুলত্রুটি ও অবিশ্বস্ততার কাজ সম্বন্ধেও উল্লেখ করা হয়েছে। এসব তথ্য আমাদের উপকারের জন্যই লেখা হয়েছিল।—রোমীয় ১৫:৪.

৫. ঈশ্বর কি মানুষের সঙ্গে শুধু ইব্রীয় ভাষাতেই কথা বলেছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।

যিহোবা মানুষের সঙ্গে সবসময় ইব্রীয় ভাষায় ভাববিনিময় করেননি। ইস্রায়েলীয়রা যখন বাবিলের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়েছিল, তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতিদিনের কথাবার্তায় অরামীয় ভাষা ব্যবহার করত। সম্ভবত এই কারণেই দানিয়েল, যিরমিয় ও ইষ্রা বাইবেলের কিছু অংশ অরামীয় ভাষায় লিখেছিলেন। *

৬. কেন ইব্রীয় শাস্ত্র গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল?

পরবর্তী সময়ে মহান আলেকজান্ডার পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গা জয় করেছিলেন আর সেই সময়ে সাধারণ বা কইনে গ্রিক অধিকাংশ দেশের প্রধান ভাষা হয়ে উঠেছিল। অনেক যিহুদি গ্রিক ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছিল আর অবশেষে ইব্রীয় শাস্ত্র গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। এই অনুবাদের নাম হল সেপ্টুয়াজিন্ট। এটা হল বাইবেলের প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুবাদ। পণ্ডিত ব্যক্তিরা মনে করেন, ৭২ জন অনুবাদক সেপ্টুয়াজিন্ট অনুবাদের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। * তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইব্রীয় শাস্ত্রের প্রতিটা শব্দ ধরে ধরে অনুবাদ করেছিলেন, আবার অন্যেরা তা করেননি। তা সত্ত্বেও, গ্রিকভাষী যিহুদিরা ও খ্রিস্টানরা এটা বিশ্বাস করেছিল, সেপ্টুয়াজিন্ট হল ঈশ্বরের বাক্য।

৭. যিশু তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য কোন ভাষা ব্যবহার করেছিলেন?

যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি সম্ভবত ইব্রীয় ভাষায় কথা বলতেন। (যোহন ১৯:২০; ২০:১৬; প্রেরিত ২৬:১৪) এ ছাড়া, তিনি হয়তো কিছু অরামীয় অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন, যা সেই সময়ে প্রচলিত ছিল। কিন্তু, তিনি প্রাচীন ইব্রীয় ভাষাও জানতেন। কারণ সমাজগৃহে প্রতি সপ্তাহে মোশি ও অন্যান্য ভাববাদীর লিখিত বিবরণ পাঠ করা হতো, যে-ভাববাদীরা প্রাচীন ইব্রীয় ভাষায় কথা বলতেন। (লূক ৪:১৭-১৯; ২৪:৪৪, ৪৫; প্রেরিত ১৫:২১) যিশুর সময়ে যদিও গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষা প্রচলিত ছিল তবে যিশু এই ভাষাগুলোতে কথা বলতেন কি না, বাইবেল তা জানায় না।

৮, ৯. কেন অনেক খ্রিস্টান গ্রিক ভাষায় কথা বলত আর এটা যিহোবা সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

যিশুর প্রথম অনুসারীরা ইব্রীয় ভাষায় কথা বলত, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর শিষ্যরা অন্যান্য ভাষায়ও কথা বলেছিল। (পড়ুন, প্রেরিত ৬:১.) সুসমাচার যখন ছড়িয়ে যেতে থাকে, তখন অনেক খ্রিস্টান ইব্রীয়ের পরিবর্তে গ্রিক ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছিল। যেহেতু তখন গ্রিক ভাষা প্রচলিত ছিল, তাই মথি, মার্ক, লূক ও যোহনের বিবরণ গ্রিক ভাষায় বিতরণ করা হয়েছিল। * এ ছাড়া, প্রেরিত পৌলের বিভিন্ন পত্র এবং বাইবেলের অন্যান্য বই গ্রিক ভাষায় লেখা হয়েছিল।

একটা আগ্রহজনক বিষয় হল, খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর লেখকরা যখন ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন, তখন তারা প্রায় সময়ই সেপ্টুয়াজিন্ট ব্যবহার করেছিলেন। কখনো কখনো, সেই উদ্ধৃতিগুলো মূল ইব্রীয় শব্দ থেকে একটু আলাদা ছিল। এভাবে অসিদ্ধ অনুবাদকদের সেই অনুবাদ বর্তমানে আমাদের কাছে যে-বাইবেল রয়েছে, সেটার অংশ হয়ে গিয়েছিল। এটা আমাদের শিক্ষা দেয়, যিহোবা কোনো একটা ভাষা অথবা সংস্কৃতিকে অন্য ভাষা ও সংস্কৃতির চেয়ে আরও ভালো বলে মনে করেন না।—পড়ুন, প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫.

১০. যিহোবা যেভাবে মানুষের সঙ্গে ভাববিনিময় করেন, তা থেকে আমরা কী শিখেছি?

১০ আমরা আগেই জানতে পেরেছি, যিহোবা মানুষের প্রয়োজন ও পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের সঙ্গে ভাববিনিময় করেন। আমরা তাঁর এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানার জন্য কেবল একটা নির্দিষ্ট ভাষায় কথা বলব, তিনি আমাদের কাছ থেকে এমনটা আশা করেন না। (পড়ুন, সখরিয় ৮:২৩; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০.) আমরা এটাও জানতে পেরেছি, যিহোবা যদিও বাইবেল লেখকদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন, তবে তিনি তাদেরকে তাঁর চিন্তাভাবনা নিজেদের ভাষায় লেখার সুযোগ দিয়েছিলেন।

ঈশ্বর তাঁর বার্তা সংরক্ষণ করেন

১১. মানুষেরা যে বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করে থাকে, তা কেন যিহোবার জন্য কোনো সমস্যা নয়?

১১ মানুষেরা যদিও বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করে থাকে, তবে তা যিহোবার জন্য কোনো সমস্যা নয়। সেটা আমরা কীভাবে জানি? বাইবেলে যিশুর কেবল কয়েকটা কথা, তিনি যে-মূল ভাষায় কথা বলতেন, সেই ভাষায় রয়েছে। (মথি ২৭:৪৬; মার্ক ৫:৪১; ৭:৩৪; ১৪:৩৬) তবে যিহোবা এটা নিশ্চিত করেছিলেন, যেন যিশুর বার্তা লিখে রাখা হয় এবং তা প্রথমে গ্রিক ভাষায় ও পরে অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এ ছাড়া, যিহুদিরা ও খ্রিস্টানরা যেহেতু অনেক বার ঈশ্বরের বাক্যের প্রতিলিপি তৈরি করেছিল, তাই ঈশ্বরের বার্তা সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এই প্রতিলিপিগুলো পরে অন্যান্য অনেক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। জন ক্রিসেসটম প্রায় ৪০০ খ্রিস্টাব্দে বলেছিলেন, যিশুর শিক্ষা অরামীয়, মিশরীয়, ভারতীয়, পারসীক, ইথিয়পীয় ও অন্যান্য লোকেদের ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।

১২. কীভাবে বাইবেলের উপর আক্রমণ এসেছে?

১২ ইতিহাসজুড়ে, বাইবেল এবং যে-ব্যক্তিরা এটা অনুবাদ করেছেন ও বিতরণ করেছেন, তাদের উপর অনেক আক্রমণ এসেছিল। যিশুর জন্মের প্রায় ৩০০ বছর পর, রোমীয় সম্রাট ডায়োক্লেশিয়ান আদেশ দিয়েছিলেন, যেন বাইবেলের যত কপি আছে, সবগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়। এর প্রায় ১,২০০ বছর পর, উইলিয়াম টিনডেল ইংরেজি ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করতে শুরু করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ঈশ্বর যদি তাকে দীর্ঘসময় বেঁচে থাকতে দেন, তা হলে তিনি এটা নিশ্চিত করবেন যেন খামারে কাজ করে এমন কোনো বালকও একজন যাজকের চেয়ে ভালোভাবে বাইবেল বুঝতে পারে। তাড়নার কারণে টিনডেলকে ইংল্যান্ড থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছিল, যাতে তিনি বাইবেল অনুবাদ করে ছাপাতে পারেন। পাদরিরা বাইবেলের সমস্ত কপি পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা সত্ত্বেও, টিনডেলের অনুবাদ অনেক লোকের কাছে বিতরণ করা হয়েছিল। অবশেষে, টিনডেলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল আর এরপর যাতনাদণ্ডে পোড়ানো হয়েছিল। কিন্তু, তার অনুবাদ পাদরিদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছিল আর এটা একটা বাইবেল অনুবাদ প্রস্তুত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, যেটার নাম কিং জেমস্‌ ভারশন।পড়ুন, ২ তীমথিয় ২:৯.

১৩. বাইবেলের প্রাচীন পাণ্ডুলিপি অধ্যয়ন করার ফল কী হয়েছে?

১৩ এটা ঠিক, বাইবেলের কিছু প্রাচীন প্রতিলিপিতে ছোটোখাটো ভুল ও পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু, বাইবেল পণ্ডিতরা হাজার হাজার পাণ্ডুলিপি, পাণ্ডুলিপির অংশ-বিশেষ এবং বাইবেলের প্রাচীন অনুবাদ নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে অধ্যয়ন করেছিলেন। সেগুলো তুলনা করার পর তারা বুঝতে পেরেছিলেন, খুব অল্পসংখ্যক পদে ছোটোখাটো পার্থক্য রয়েছে আর সেগুলো খুবই সামান্য। কিন্তু এই কারণে বাইবেলের বার্তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই ধরনের অধ্যয়নের ফলে আন্তরিক বাইবেল ছাত্ররা নিশ্চিত হয়েছেন, বর্তমানে তাদের কাছে যে-বাইবেল রয়েছে, সেটা যিহোবার অনুপ্রাণিত বাক্য।—যিশা. ৪০:৮. *

১৪. বর্তমানে বাইবেল কতটা প্রাপ্তিসাধ্য?

১৪ বাইবেলের উপর অনেক আক্রমণ আসা সত্ত্বেও, ২,৮০০-রও বেশি ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করা হয়েছে। বর্তমানে অন্য যেকোনো বইয়ের চেয়ে আরও বেশি ভাষায় বাইবেল পাওয়া যায়। যদিও অনেক লোক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, কিন্তু তাঁর বাক্য ইতিহাসজুড়ে সবচেয়ে বেশি বিতরণ করা হয়েছে। যদিও বাইবেলের কিছু অনুবাদ সহজে পড়া যায় না কিংবা পুরোপুরি সঠিক নয়, কিন্তু প্রায় সকল অনুবাদে আশা এবং অনন্তজীবন লাভের সহজ বার্তা রয়েছে।

একটা নতুন বাইবেল অনুবাদ প্রয়োজন ছিল

১৫. (ক) ১৯১৯ সালের পর থেকে, আমাদের সাহিত্যাদির ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন দেখা গিয়েছে? (খ) কেন আমাদের সাহিত্যাদি প্রথমে ইংরেজি ভাষায় লেখা হয়?

১৫ উনিশ-শো উনিশ সালে, বাইবেল ছাত্রদের একটা ছোটো দলকে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। সেই সময়ে, বিশ্বস্ত দাস ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে মূলত ইংরেজি ভাষায় ভাববিনিময় করত। (মথি ২৪:৪৫) কিন্তু বর্তমানে, বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি ৭০০-রও বেশি ভাষায় পাওয়া যায়। অতীতের গ্রিক ভাষার মতো, ইংরেজি ভাষাও এখন ব্যাবসাবাণিজ্য এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। তাই, আমাদের সাহিত্যাদি প্রথমে ইংরেজি ভাষায় লেখা হয় আর এরপর সেগুলো অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়।

১৬, ১৭. (ক) ঈশ্বরের লোকেদের কী প্রয়োজন ছিল? (খ) কীভাবে সেই প্রয়োজন মেটানো হয়েছিল? (গ) ভাই নর কোন ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন?

১৬ আমাদের সাহিত্যাদির ভিত্তি হচ্ছে বাইবেল। ঈশ্বরের লোকেরা প্রথমে কিং জেমস্‌ ভারশন ব্যবহার করত, যেটার অনুবাদ ১৬১১ সালে শেষ হয়েছিল। কিন্তু, এই বাইবেলের ভাষা অনেক পুরোনো আর তা বোঝা কঠিন। এই বাইবেলে ঈশ্বরের নাম মাত্র কয়েক বার ব্যবহার করা হয়েছিল, অথচ প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে তা হাজার হাজার বার ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ছাড়া, এই সংস্করণে কিছু ভুল অনুবাদ ছিল এবং অতিরিক্ত শাস্ত্রপদ যুক্ত ছিল, যেগুলো প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলোতে ছিল না। অন্যান্য ইংরেজি বাইবেল অনুবাদেও একই সমস্যা ছিল।

১৭ নিশ্চিতভাবেই, ঈশ্বরের লোকেদের এমন একটা বাইবেল অনুবাদ প্রয়োজন ছিল, যেটা সঠিক এবং সহজে বোঝা যায়। তাই, নতুন জগৎ বাইবেল অনুবাদ কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং এই কমিটির ভাইয়েরা ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে বাইবেলের কিছু অংশ প্রকাশ করেছিল। ১৯৫০ সালের ২ আগস্ট একটা সম্মেলনে প্রথম ছয়টা খণ্ড প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই সম্মেলনে ভাই নর বলেছিলেন, ঈশ্বরের লোকেদের এমন একটা আধুনিক বাইবেল অনুবাদ প্রয়োজন, যা সঠিক, সহজে বোঝা যায় এবং যা তাদেরকে আরও স্পষ্টভাবে সত্য জানতে সাহায্য করবে। তাদের এমন একটা অনুবাদ প্রয়োজন, যা খ্রিস্টের শিষ্যরা মূল ভাষায় যেভাবে লিখেছিলেন, সেভাবেই সহজে পড়া যায় ও বোঝা যায়। ভাই নর এই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, নতুন জগৎ অনুবাদ লক্ষ লক্ষ লোককে যিহোবা সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করবে।

১৮. কোন সিদ্ধান্তগুলো বাইবেল অনুবাদের ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে?

১৮ ভাই নরের সেই ইচ্ছা ১৯৬৩ সালের মধ্যে বাস্তবে পরিণত হয়েছিল। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) ইতালিয়ান, জার্মান, ডাচ, পোর্তুগিজ, ফ্রেঞ্চ ও স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছিল। ১৯৮৯ সালে, যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালকগোষ্ঠী বাইবেল অনুবাদকদের সাহায্য করার জন্য বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ে একটা নতুন ডিপার্টমেন্ট গঠন করেছিল। পরে ২০০৫ সালে, ইতিমধ্যে যে-ভাষাগুলোতে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা অনুবাদ করা হচ্ছিল, সেইসমস্ত ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ফল স্বরূপ, নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেল এখন পুরোপুরি এবং  আংশিকভাবে  ১৩০টারও বেশি ভাষায় পাওয়া  যাচ্ছে।

১৯. দু-হাজার তেরো সালে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল আর পরের প্রবন্ধ থেকে আমরা কী জানতে পারব?

১৯ নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলের প্রথম সংস্করণ যখন প্রকাশ করা হয়েছিল, তখন থেকে ইংরেজি ভাষা অনেক পরিবর্তন হয়েছে আর তাই এই বাইবেলের শব্দগুলো আধুনিক ভাষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রয়োজন হয়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের ৫ ও ৬ তারিখে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ৩১টা দেশের ১৪,১৩,৬৭৬  জন ব্যক্তি ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অভ্‌ পেনসিলভানিয়া-র  ১২৯তম বার্ষিক সভা সরাসরি অথবা ভিডিওর মাধ্যমে উপভোগ করেছিল। পরিচালকগোষ্ঠীর একজন সদস্য ইংরেজি ভাষার পরিমার্জিত নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেল প্রকাশ করার ঘোষণা করেছিলেন। শ্রোতারা অনেক রোমাঞ্চিত হয়েছিল আর এই নতুন অনুবাদের একটা কপি পেয়ে অনেকে কেঁদে দিয়েছিল। সেই সভায় বিভিন্ন বক্তা যখন পরিমার্জিত সংস্করণ থেকে পদ পড়েছিলেন, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এই পরিমার্জিত সংস্করণ আরও সহজে পড়া যায় এবং বোঝা যায়। পরের প্রবন্ধে আমরা এই পরিমার্জিত সংস্করণ সম্বন্ধে আর সেইসঙ্গে কীভাবে এটা  অন্যান্য ভাষায়  অনুবাদ করা হচ্ছে, তা জানতে  পারব।

^ অনু. 5 মূল ভাষার বাইবেলে ইষ্রা ৪:৮–৬:১৮, ৭:১২-২৬; যিরমিয় ১০:১১ এবং দানিয়েল ২:৪খ–৭:২৮ পদ অরামীয় ভাষায় লেখা হয়েছিল।

^ অনু. 6 সেপ্টুয়াজিন্ট অর্থ “সত্তর।” এটা হয়তো খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩০০ সালে অনুবাদ করা শুরু হয়েছিল এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ সালে শেষ হয়েছিল। বর্তমানেও এই অনুবাদের গুরুত্ব রয়েছে কারণ এটা কঠিন ইব্রীয় শব্দ বা পুরো পদ বোঝার ক্ষেত্রে পণ্ডিত ব্যক্তিদের সাহায্য করে থাকে।

^ অনু. 8 কেউ কেউ মনে করে, মথি তার বই প্রথমে ইব্রীয় ভাষায় লিখেছিলেন আর পরে সম্ভবত তিনি নিজেই তা গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন।

^ অনু. 13 পরিমার্জিত নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলের পরিশিষ্ট ক৩ দেখুন; এ ছাড়া, সমস্ত লোকের জন্য একটি পুস্তক (ইংরেজি) ব্রোশারের ৭-৯ পৃষ্ঠায় “কীভাবে এই বই রক্ষা পেয়েছিল?” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।