সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিবর্তনবাদ কি বাইবেলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ?

বিবর্তনবাদ কি বাইবেলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ?

বিবর্তনবাদ কি বাইবেলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ?

 এমনটা কি হতে পারে যে, ঈশ্বর প্রাণী থেকে মানুষ সৃষ্টির জন্য বিবর্তনকে ব্যবহার করেছিলেন? ঈশ্বর কি ব্যাকটিরিয়াকে মাছে বিকশিত করেছিলেন আর এরপর সেগুলোকে ক্রমান্বয়ে সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীতে বিকশিত করেছিলেন, যাতে শেষপর্যন্ত বানরের একটা প্রজাতি মানুষ হয়ে ওঠে? কিছু বিজ্ঞানী ও ধর্মীয় নেতা বিবর্তনবাদ ও বাইবেল উভয়ই বিশ্বাস করে বলে দাবি করে। তারা বলে যে, বাইবেলের আদিপুস্তক বইটি হচ্ছে এক রূপক কাহিনি। সম্ভবত আপনি ভেবেছেন যে, ‘প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে মানুষের উদ্ভব হয়েছে, এই মতবাদ কি বাইবেলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ?’

আমরা কারা, আমরা কোথায় যাচ্ছি এবং কীভাবে আমাদের জীবনযাপন করা উচিত, তা বোঝার জন্য আমাদের উৎপত্তি সম্বন্ধে বোঝা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। একমাত্র মানুষের উৎপত্তি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করার দ্বারাই আমরা বুঝতে পারি যে, কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন এবং মানুষের ভবিষ্যতের বিষয়ে তাঁর উদ্দেশ্য কী। ঈশ্বরই আমাদের সৃষ্টিকর্তা কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত না হলে আমরা তাঁর সঙ্গে এক অনুমোদিত সম্পর্ক উপভোগ করতে পারি না। তাই আসুন আমরা পরীক্ষা করি যে, মানুষের উৎপত্তি, তার বর্তমান অবস্থা এবং তার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে। তাহলে আমরা দেখতে পাব যে, বিবর্তনবাদ বাইবেলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি না।

যখন একজন মানুষ ছিল

বিবর্তনবাদীরা সাধারণত দাবি করে যে, প্রাণীগোষ্ঠী ক্রমান্বয়ে বিকশিত হয়ে মানবগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে, তাই তারা এই বিষয়টাকে অস্বীকার করে যে, একসময়ে কেবল একজন মানুষ ছিল। কিন্তু, বাইবেল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র তুলে ধরে। এটি বলে যে, আমরা একজন মানুষ আদম থেকে এসেছি। বাইবেলের বিবরণ আদমকে একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরে। এটি আমাদেরকে তার স্ত্রীর ও তার কয়েকটা সন্তানের নাম জানায়। এটি আমাদেরকে সে কী করেছিল, কী বলেছিল, কখন বেঁচে ছিল এবং কখন মারা গিয়েছিল, সেই সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে জানায়। যিশু এই বিবরণকে অশিক্ষিত লোকেদের জন্য এক কাহিনি বলে বিবেচনা করেননি। সুশিক্ষিত ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন: “তোমরা কি পাঠ কর নাই যে, সৃষ্টিকর্ত্তা আদিতে পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন?” (মথি ১৯:৩-৫) এরপর যিশু আদম ও হবা সম্বন্ধে আদিপুস্তক ২:২৪ পদে লিপিবদ্ধ কথাগুলোকে উদ্ধৃতি করেছিলেন।

একজন বাইবেল লেখক ও সতর্ক ইতিহাসবেত্তা লূক, আদমকে যিশুর মতোই একজন বাস্তব ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। লূক, যিশুর বংশবৃত্তান্তের আদি উৎস হিসেবে প্রথম মানুষ আদমের কথা বর্ণনা করেছিলেন। (লূক ৩:২৩-৩৮) এ ছাড়া, প্রেরিত পৌল যখন এমন শ্রোতাদের সামনে কথা বলেছিলেন, যাদের মধ্যে বিখ্যাত গ্রিক স্কুলগুলোতে শিক্ষাপ্রাপ্ত দার্শনিকরা ছিল, তখন তিনি তাদের বলেছিলেন: “ঈশ্বর, যিনি জগৎ ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত বস্তু নির্ম্মাণ করিয়াছেন, . . . তিনি এক ব্যক্তি হইতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎপন্ন করিয়াছেন, যেন তাহারা সমস্ত ভূতলে বাস করে।” (প্রেরিত ১৭:২৪-২৬) স্পষ্টতই, বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, আমরা সেই “এক ব্যক্তি” থেকেই এসেছি। মানুষের আদি অবস্থা সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, সেটা কি বিবর্তনবাদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ?

সিদ্ধতা থেকে মানুষের পতন

বাইবেল অনুসারে, যিহোবা প্রথম মানুষকে সিদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করেছিলেন। কোনোকিছুকে অসিদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করা ঈশ্বরের পক্ষে অসম্ভব। সৃষ্টির বিবরণ বলে: “ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; . . . পরে ঈশ্বর আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম।” (আদিপুস্তক ১:২৭, ৩১) একজন সিদ্ধ মানুষ কীরকম?

একজন সিদ্ধ মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা রয়েছে আর সে ঈশ্বরের গুণাবলিকে পুরোপুরিভাবে অনুকরণ করতে সমর্থ। বাইবেল বলে: “ঈশ্বর মনুষ্যকে সরল করিয়া নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহারা অনেক কল্পনার অন্বেষণ করিয়া লইয়াছে।” (উপদেশক ৭:২৯) আদম ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা বেছে নিয়েছিল। তার বিদ্রোহের দ্বারা আদম নিজের ও তার বংশধরদের জন্য সিদ্ধতা হারিয়েছিল। সিদ্ধতা থেকে মানুষের পতন ব্যাখ্যা করে যে, যদিও আমরা যা সঠিক তা-ই করতে চাই, তারপরেও কেন আমরা প্রায়ই হতাশ হই। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আমি যাহা ইচ্ছা করি, তাহাই যে কাজে করি, এমন নয়, বরং যাহা ঘৃণা করি, তাহাই করি।”—রোমীয় ৭:১৫.

বাইবেল অনুসারে, একজন সিদ্ধ মানুষ নিখুঁত স্বাস্থ্য নিয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। ঈশ্বর আদমকে যা বলেছিলেন, সেটা থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, প্রথম মানুষ যদি ঈশ্বরের অবাধ্য না হতো, তাহলে সে কখনো মারা যেত না। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭; ৩:২২, ২৩) মানুষের যদি অসুস্থ হয়ে পড়ার অথবা বিদ্রোহ করার প্রবণতা থাকত, তাহলে যিহোবা মানুষের সৃষ্টিকে “অতি উত্তম” বলে ঘোষণা করতেন না। সিদ্ধতা থেকে মানুষের পতন ব্যাখ্যা করে যে, মানুষকে বিস্ময়করভাবে সৃষ্টি করা সত্ত্বেও, কেন মানবদেহ বিকলাঙ্গতা ও রোগব্যাধির ব্যাপারে নাজুক। তাই, বিবর্তনবাদ বাইবেলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বিবর্তন আধুনিক মানুষকে এক উন্নতিশীল প্রাণী হিসেবে তুলে ধরে। বাইবেল আধুনিক মানুষকে এক সিদ্ধ মানুষের, অধঃপতিত বংশধর হিসেবে তুলে ধরে।

এ ছাড়া, ঈশ্বর বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষকে উৎপন্ন করেছেন এই ধারণাটা, ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, সেটার সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ নয়। ঈশ্বর যদি বিবর্তনের প্রক্রিয়া পরিচালনা করে থাকেন, তাহলে এর অর্থ বোঝাবে যে, তিনি মানবজাতিকে বর্তমান অসুস্থতাপূর্ণ ও দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার দিকে পরিচালিত করেছিলেন। কিন্তু, ঈশ্বর সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল। ইহারা তাঁহার সম্বন্ধে ভ্রষ্টাচারী, তাঁহার সন্তান নয়, এই ইহাদের কলঙ্ক।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪, ৫) তাই, মানবজাতির বর্তমান কষ্টকর অবস্থা ঈশ্বরের দ্বারা পরিচালিত বিবর্তনের ফল নয়। এটা হল ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার মাধ্যমে একজন মানুষের নিজের ও তার বংশধরদের জন্য সিদ্ধতা হারানোর ফল। আদম সম্বন্ধে বিবেচনা করার পর এখন আমরা যিশুর দিকে তাকাতে পারি। যিশুর সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, বিবর্তনবাদ কি সেটার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ?

আপনি কি বিবর্তনবাদ ও খ্রিস্টধর্ম উভয়ই বিশ্বাস করতে পারেন?

“খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন।” আপনি সম্ভবত জানেন যে, এটা হচ্ছে খ্রিস্টধর্মের মৌলিক শিক্ষাগুলোর মধ্যে একটা। (১ করিন্থীয় ১৫:৩; ১ পিতর ৩:১৮) কেন বিবর্তনবাদ এই বিবৃতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, তা বোঝার জন্য আমাদেরকে প্রথমে বুঝতে হবে যে, কেন বাইবেল আমাদের পাপী বলে এবং পাপের ফলে আমাদের কী হয়।

আমরা সকলেই এই অর্থে পাপী যে, আমরা প্রেম ও ন্যায়বিচারের মতো ঈশ্বরের চমৎকার গুণাবলিকে নিখুঁতভাবে অনুকরণ করতে পারি না। তাই, বাইবেল বলে: “সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।” (রোমীয় ৩:২৩, ২৪) বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, পাপই হল মৃত্যুর কারণ। “মৃত্যুর হুল পাপ,” ১ করিন্থীয় ১৫:৫৬ পদ বলে। এ ছাড়া, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আমাদের পাপ অসুস্থতারও মূল কারণ। যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, অসুস্থতা ও আমাদের পাপপূর্ণ অবস্থার মধ্যে এক সম্পর্ক রয়েছে। একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিকে তিনি বলেছিলেন, “তোমার পাপ ক্ষমা হইল” আর এরপর ব্যক্তিটি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন।—মথি ৯:২-৭.

যিশুর মৃত্যু কীভাবে আমাদের সাহায্য করে? বাইবেল যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে আদমের বৈসাদৃশ্য তুলে ধরে এবং বলে: “আদমে যেমন সকলে মরে, তেমনি আবার খ্রীষ্টেই সকলে জীবনপ্রাপ্ত হইবে।” (১ করিন্থীয় ১৫:২২) তাঁর জীবন উৎসর্গ করার দ্বারা, যিশু সেই পাপের মূল্য প্রদান করেছিলেন, যেটা আমরা আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। তাই, যারা যিশুকে বিশ্বাস করে চলে ও তাঁর বাধ্য থাকে, তারা সকলেই আদম যা হারিয়েছিল—অনন্তজীবনের প্রত্যাশা—লাভ করবে।—যোহন ৩:১৬; রোমীয় ৬:২৩.

তাহলে, আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন যে, বিবর্তনবাদ খ্রিস্টধর্মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়? ‘আদমে সকলে মরে,” এই বিষয়ে আমাদের সন্দেহ থাকলে কী করে আমরা আশা করতে পারি যে, “খ্রীষ্টেই সকলে জীবনপ্রাপ্ত হইবে”?

যেকারণে বিবর্তনবাদ লোকেদেরকে আকৃষ্ট করে

বাইবেল প্রকাশ করে যে, কীভাবে বিবর্তনবাদের মতো শিক্ষাগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি বলে: “এমন সময় আসিবে, যে সময় লোকেরা নিরাময় শিক্ষা সহ্য করিবে না, কিন্তু কাণচুল্‌কানি-বিশিষ্ট হইয়া আপন আপন অভিলাষ অনুসারে আপনাদের জন্য রাশি রাশি গুরু ধরিবে, এবং সত্য হইতে কাণ ফিরাইয়া গল্পের দিকে বিপথে যাইবে।” (২ তীমথিয় ৪:৩, ৪) যদিও বিবর্তনবাদকে সাধারণত বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় তুলে ধরা হয়েছে কিন্তু এটা প্রকৃতপক্ষে একটা ধর্মীয় মতবাদ। এটা এক জীবনদর্শন ও ঈশ্বরের প্রতি এক দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়। এর বিভিন্ন বিশ্বাস মানবজাতির স্বার্থপর, স্বাধীন প্রবণতাগুলোর কাছে সূক্ষ্মভাবে আকর্ষণীয় হয়। বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করে এমন অনেকে বলে থাকে যে, তারা ঈশ্বরেও বিশ্বাস করে। কিন্তু, তারা ঈশ্বরকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে চিন্তা করতে স্বচ্ছন্দবোধ করে, যিনি বিভিন্ন বস্তু সৃষ্টি করেননি, মানুষের বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন না এবং লোকেদের বিচার করবেন না। এটা হচ্ছে এমন এক মতবাদ, যা লোকেদের কানে সুড়সুড়ি দেয়।

বিবর্তনবাদের শিক্ষকরা প্রায়ই প্রকৃত বিষয়ের দ্বারা নয় বরং ‘আপন আপন অভিলাষের’—সম্ভবত বিবর্তনবাদ এক সর্বজনস্বীকৃত মতবাদ, এমন এক বৈজ্ঞানিকমহলের দ্বারা অনুমোদিত হওয়ার অভিলাষের—দ্বারা পরিচালিত হয়। জৈবরসায়নের অধ্যাপক মাইকেল বিহি, যিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় সজীব কোষগুলোর জটিল আভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়েছেন, তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, যারা কোষের গঠনের বিবর্তনবাদ সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়, তাদের দাবির কোনো ভিত্তি নেই। এই অতি ক্ষুদ্র, আণবিক পর্যায়ে কি বিবর্তন ঘটতে পারে? “আণবিক বিবর্তনবাদ কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে নয়,” তিনি লিখেছিলেন। “বৈজ্ঞানিক সাহিত্যাদিতে—বিখ্যাত পত্রিকাগুলোতে, বিশেষজ্ঞদের পত্রিকাগুলোতে অথবা বইপত্রে—এমন কোনো প্রকাশনা নেই, যেটি বর্ণনা করে যে, কোনো বাস্তব, জটিল, জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়ায় আণবিক বিবর্তন ঘটেছিল বা এমনকি ঘটতে পারে। . . . ডারউইনের আণবিক বিবর্তন সম্বন্ধীয় উক্তি হচ্ছে নিছক দম্ভোক্তি।”

বিবর্তনবাদীরা যদি প্রমাণ-ই দিতে না পারে, তাহলে কেন তারা এত জোরালোভাবে তাদের ধারণাগুলোকে প্রচার করে? বিহি ব্যাখ্যা করেন: “অনেক লোক, যাদের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও অতি সম্মানীয় বিজ্ঞানী রয়েছে, তারা প্রকৃতির ঊর্ধ্বে এমন কোনোকিছু জানতে চায় না।”

বিবর্তনবাদ এমন অনেক পাদরিকে আকৃষ্ট করে, যারা নিজেদের বিজ্ঞ বলে জাহির করতে চায়। তারা রোমের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা প্রেরিত পৌলের চিঠিতে বর্ণিত ব্যক্তিদের মতো। পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের বিষয়ে যাহা জানা যাইতে পারে, তাহা তাহাদের মধ্যে সপ্রকাশ আছে . . . তাঁহার অদৃশ্য গুণ, অর্থাৎ তাঁহার অনন্ত পরাক্রম ও ঈশ্বরত্ব, জগতের সৃষ্টিকাল অবধি তাঁহার বিবিধ কার্য্যে বোধগম্য হইয়া দৃষ্ট হইতেছে, এ জন্য তাহাদের উত্তর দিবার পথ নাই; কারণ ঈশ্বরকে জ্ঞাত হইয়াও তাহারা তাঁহাকে ঈশ্বর বলিয়া তাঁহার গৌরব করে নাই, ধন্যবাদও করে নাই; কিন্তু আপনাদের তর্কবিতর্কে অসার হইয়া পড়িয়াছে, এবং তাহাদের অবোধ হৃদয় অন্ধকার হইয়া গিয়াছে। আপনাদিগকে বিজ্ঞ বলিয়া তাহারা মূর্খ হইয়াছে।” (রোমীয় ১:১৯-২২) কীভাবে আপনি মিথ্যা শিক্ষকদের দ্বারা প্রতারিত হওয়াকে এড়াতে পারেন?

সৃষ্টিকর্তার ওপর প্রমাণভিত্তিক বিশ্বাস

বিশ্বাসকে সংজ্ঞায়িত করার সময় বাইবেল প্রমাণের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়। এটি বলে: “বিশ্বাস প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয়জ্ঞান, অদৃশ্য বিষয়ের প্রমাণপ্রাপ্তি।” (ইব্রীয় ১১:১) ঈশ্বরের ওপর প্রকৃত বিশ্বাস প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত, যা সৃষ্টিকর্তার বাস্তবতাকে প্রদর্শন করে। বাইবেল দেখায় যে, কোথায় আপনি এই প্রমাণ পেতে পারেন।

অনুপ্রাণিত বাইবেল লেখক দায়ূদ লিখেছিলেন: “আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৪) আমাদের নিজ দেহের ও অন্যান্য সজীব বস্তুর বিস্ময়কর নকশা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য সময় করে নেওয়া, আমাদেরকে আমাদের নির্মাতার প্রজ্ঞার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয়ে পূর্ণ করে। হাজার হাজার তন্ত্রের প্রতিটা অংশ, যেগুলো আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজ করে, সেগুলোকে আদর্শরূপে নকশা করা হয়েছে। এ ছাড়া, ভৌত নিখিলবিশ্ব গাণিতিক নির্ভুলতা ও শৃঙ্খলার প্রমাণ দেয়। দায়ূদ লিখেছিলেন: “আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে, বিতান তাঁহার হস্তকৃত কর্ম্ম জ্ঞাপন করে।”—গীতসংহিতা ১৯:১.

স্বয়ং বাইবেলই সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধীয় প্রমাণের এক বিরাট উৎস। বাইবেলের ৬৬টি বইয়ের মধ্যে সংগতি, এটির নৈতিক মানগুলোর উৎকৃষ্টতা এবং এটির বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণীর অব্যর্থ পরিপূর্ণতা পরীক্ষা করার জন্য সময় করে নেওয়া, আপনাকে এই বিষয়ে প্রচুর প্রমাণ জোগাবে যে, এটির গ্রন্থকার হলেন সৃষ্টিকর্তা। এ ছাড়া, বাইবেলের শিক্ষাগুলো বুঝতে পারা আপনাকে এই আস্থা প্রদান করবে যে, বাস্তবিকই বাইবেল হল সৃষ্টিকর্তার বাক্য। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন দুঃখকষ্টের কারণ, ঈশ্বরের রাজ্য, মানবজাতির ভবিষ্যৎ এবং যেভাবে সুখ খুঁজে পাওয়া যায় ইত্যাদির মতো বাইবেলের শিক্ষাগুলো বুঝতে পারেন, তখন আপনি ঈশ্বরের প্রজ্ঞার স্পষ্ট প্রমাণ দেখতে পাবেন। আপনার অনুভূতি হয়তো পৌলের মতোই হবে, যিনি লিখেছিলেন: “আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ! তাঁহার বিচার সকল কেমন বোধাতীত! তাঁহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয়!”—রোমীয় ১১:৩৩.

আপনি যতই প্রমাণ পরীক্ষা করেন ও আপনার বিশ্বাস যতই বৃদ্ধি পায়, আপনি ততই দৃঢ়প্রত্যয়ী হবেন যে, আপনি যখন বাইবেল পড়েন, তখন আপনি স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার কথা শুনছেন। তিনি বলেন: “আমি পৃথিবী নির্ম্মাণ করিয়াছি, ও পৃথিবীর উপরে মনুষ্যের সৃষ্টি করিয়াছি; আমি নিজ হস্তে আকাশমণ্ডল বিস্তীর্ণ করিয়াছি, এবং আকাশের সমস্ত বাহিনীকে আজ্ঞা দিয়া আসিতেছি।” (যিশাইয় ৪৫:১২) নিশ্চিতভাবে, যিহোবাই যে সমস্তকিছুর সৃষ্টিকর্তা এই বিষয়ের প্রমাণ পরীক্ষা করার জন্য প্রচেষ্টা করলে আপনি কখনো আপশোস করবেন না। (w০৮ ১/১)

[১৪ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

প্রেরিত পৌল শিক্ষিত গ্রিকদের বলেছিলেন: “ঈশ্বর . . . এক ব্যক্তি হইতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎপন্ন করিয়াছেন”

[১৫ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

বিবর্তনবাদ আধুনিক মানুষকে এক উন্নতশীল প্রাণী হিসেবে তুলে ধরে। বাইবেল আধুনিক মানুষকে এক সিদ্ধ মানুষের এক অধঃপতিত বংশধর হিসেবে তুলে ধরে

[১৬ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

“আণবিক বিবর্তনবাদ কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে নয়”

[১৭ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

সজীব বস্তুর বিস্ময়কর নকশা আমাদেরকে আমাদের নির্মাতার প্রজ্ঞার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয়ে পূর্ণ করে