বিশ্বজুড়ে করা এক অনুরোধ
বিশ্বজুড়ে করা এক অনুরোধ
কল্পনা করুন যে কোটি কোটি লোক, সকলে একই বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করছে। তারা নিখিলবিশ্বের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে একটা সুনির্দিষ্ট অনুরোধ পূর্ণ করার জন্য প্রার্থনা করছে। কিন্তু, তাদের মধ্যে খুব অল্প লোকই সঠিকভাবে জানে যে, তারা যেটার জন্য প্রার্থনা করছে, সেটা কী। এই ধরনের কোনো বিষয় কি আসলেই ঘটতে পারে? বস্তুতপক্ষে, এটা প্রতিদিনই ঘটছে। এই সমস্ত লোক কীসের জন্য প্রার্থনা করছে? তারা ঈশ্বরের রাজ্য আসার জন্য প্রার্থনা করছে!
একটা হিসেব অনুসারে, প্রায় ৩৭,০০০ ধর্ম রয়েছে, যেগুলো নিজেদেরকে খ্রিস্টান বলে গণ্য করে ও যিশু খ্রিস্টকে তাদের নেতা হিসেবে দাবি করে। এই ধর্মগুলোর সদস্য সংখ্যা দুশো কোটিরও বেশি। তাদের মধ্যে বহু সংখ্যক লোক প্রায়ই প্রভুর প্রার্থনা বলে পরিচিত প্রার্থনাটা করে থাকে। আপনি কি এই প্রার্থনাটা জানেন? যিশু যেমন তাঁর অনুসারীদেরকে শিখিয়েছিলেন, এটা এভাবে শুরু হয়: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক, তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।”—মথি ৬:৯, ১০.
শত শত বছর ধরে, গির্জাগুলোতে উপাসকরা সশ্রদ্ধভাবে এই কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি করে এসেছে। এ ছাড়া, তারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে, পরিবারগতভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে সেগুলো মুখস্থ বলে এসেছে। তারা এই কথাগুলোকে আন্তরিকতার সঙ্গে, এমনকি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে বলে এসেছে। অনেকে এই কথাগুলোকে মুখস্থ করেছে এবং অর্থ সম্বন্ধে সামান্য কিংবা একেবারেই চিন্তা না করে নিয়মিতভাবে সেগুলো বলে থাকে। কেবলমাত্র খ্রিস্টীয়জগতের এই সদস্যরাই যে ঈশ্বরের রাজ্যের আসার বিষয়ে প্রত্যাশা ও প্রার্থনা করে থাকে, তা নয়।
ধর্মীয় সীমানাকে অতিক্রম করে এমন এক অনুরোধ
যিহুদি বিশ্বাসের একটা সুপরিচিত প্রার্থনা হল শোকার্ত ব্যক্তির কাডিশ (এক যিহুদি প্রার্থনা যা সমাজগৃহে প্রতিদিন অথবা কোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয়র মৃত্যুর পরে করা হতো)। যদিও মৃত্যু অথবা শোকের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে কিন্তু এটা সাধারণত প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক করার সময়ে করা হয়ে থাকে। এই প্রার্থনায় বলা হয়: “তিনি [ঈশ্বর] যেন আপনার জীবনকালে তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন . . . , এমনকি আরও আগেই।” * প্রাচীন সমাজগৃহের আরেকটা প্রার্থনা দায়ূদের কুল থেকে আসা মশীহের রাজ্যের আশা সম্বন্ধে বলে থাকে।
অন্যান্য ন-খ্রিস্টীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী লোকেরাও ঈশ্বরের রাজ্যের ধারণাকে আকর্ষণীয় বলে মনে করেছে। দ্যা টাইমস্ অভ্ ইন্ডিয়া অনুসারে, ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট ভারতীয় ধর্মীয় নেতা, যিনি হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের মধ্যে মতৈক্য স্থাপন করার ভিত্তি খোঁজার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন, তিনি বলেছিলেন: “যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য একত্রে সংযুক্ত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঈশ্বরের প্রকৃত রাজ্য বাস্তবায়িত হবে না।” আর অস্ট্রেলিয়ার স্ট্র্যাথফিল্ডের একটা ইসলামি কলেজের অধ্যক্ষা সম্প্রতি একটা সংবাদপত্রে লিখেছিলেন: “সমস্ত মুসলমানের মতো, আমিও বিশ্বাস করি [যে], যিশু প্রত্যাবর্তন করবেন ও ঈশ্বরের প্রকৃত রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন।”
কোনো সন্দেহ নেই যে, বর্তমানে যারা ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য আশা করছে ও সেটার জন্য প্রার্থনা করছে, তাদের সংখ্যা কোটি কোটি। কিন্তু একটা আগ্রহজনক বিষয় বিবেচনা করুন।
সম্ভবত আপনি জানেন যে, আমরা যিহোবার সাক্ষিরা, যারা এই পত্রিকা প্রকাশ করি, আমরা লোকেদেরকে বাইবেল সম্বন্ধীয় আলোচনায় জড়িত করার জন্য আপনার এলাকায়
ঘরে ঘরে যাই। এই প্রবন্ধটি লেখার সময় পর্যন্ত আমরা পৃথিবীব্যাপী দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৬টা জায়গায় এবং ৪০০রও বেশি ভাষায় এই কাজ করছি। আমাদের প্রচারের প্রধান বিষয়বস্তু হল ঈশ্বরের রাজ্য। বস্তুতপক্ষে লক্ষ করুন যে, এই পত্রিকার সম্পূর্ণ শিরোনাম হল প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে। আমরা প্রায়ই লোকেদেরকে জিজ্ঞেস করে থাকি যে, তারা সেই রাজ্যের জন্য প্রার্থনা করে কি না। অনেকেই উত্তর দেয়, হ্যাঁ করে। কিন্তু, যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে, সেই রাজ্য কী, তখন অধিকাংশ লোকই মূলত উত্তর দেয়, “আমি জানি না” অথবা তাদের উত্তর অস্পষ্ট ও অনিশ্চিত।কেন এত এত লোক এমন কিছুর জন্য প্রার্থনা করে, যেটাকে তারা সংজ্ঞায়িত করতে পারে না? এটা কি এই কারণে যে, ঈশ্বরের রাজ্য হল জটিল, অস্পষ্ট এক ধারণা? না। বাইবেলে এই রাজ্যের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ও স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অধিকন্তু, রাজ্য সম্বন্ধে বাইবেলের বার্তা আপনাকে এই অন্ধকারময় সময়ে প্রকৃত আশা প্রদান করতে পারে। পরের প্রবন্ধে আমরা দেখব যে, সেই আশা সম্বন্ধে বাইবেল কীভাবে ব্যাখ্যা করে। এরপর আমরা দেখব যে, রাজ্য আসার জন্য যিশুর প্রার্থনার উত্তর কখন দেওয়া হবে। (w০৮ ১/১)
[পাদটীকা]
^ যিশুর দেওয়া আদর্শ প্রার্থনার মতো, শোকার্ত ব্যক্তির কাডিশ প্রার্থনায়ও বলা হয় যে, ঈশ্বরের নাম পবিত্রীকৃত হোক। কাডিশ খ্রিস্টের সময়ের অথবা এমনকি আরও আগের কি না, এই প্রশ্ন নিয়ে যদিও কিছু বিতর্ক রয়েছে, তবে যেকোনো সাদৃশ্য থাকার কারণে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়। যিশুর প্রার্থনা কোনো নতুন বিষয় উপস্থাপন করার কিংবা বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনের উদ্দেশ্যে ছিল না। প্রত্যেকটা অনুরোধ পুরোপুরি শাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে ছিল, যে-শাস্ত্র সেই সময়ের সমস্ত যিহুদির কাছে প্রাপ্তিসাধ্য ছিল। যিশু তাঁর সহযিহুদিদেরকে সেই বিষয়গুলোর জন্য প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করছিলেন, যেগুলোর জন্য তাদের সবসময়ই প্রার্থনা করা উচিত ছিল।