সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যৌবনের হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়া

যৌবনের হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়া

যৌবনের হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়া

বলেছেন এয়ুসেবিও মরসিও

১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, আমি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সম্বলিত একটা জেলখানা পরিদর্শন করেছিলাম। সেই পরিদর্শনের কারণ ছিল আমার ছোটো বোন মারিভির বাপ্তিস্ম, যে সেখানে একজন বন্দি ছিল। আমি অনুষ্ঠানটা পরিচালনা করার সময় কয়েক জন সহবন্দিনী ও জেলের কর্মকর্ত্রী সম্মানের সঙ্গে তা লক্ষ করেছিল। সে এবং আমি কীভাবে সেখানে গিয়েছিলাম, সেই বিষয়ে বলার আগে আমি আমাদের ছেলেবেলার জীবন সম্বন্ধে বলছি।

 উনিশশো চুয়ান্ন সালের ৫ মে স্পেনে আমার জন্ম হয় আর আটজন ছেলেমেয়ের মধ্যে আমিই ছিলাম প্রথম সন্তান। মারিভি ছিল তৃতীয় সন্তান। আমাদের দিদিমা আমাদেরকে ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক হিসেবে বড় করে তুলেছিলেন আর ছেলেবেলায় তার সঙ্গে থাকাকালীন ঈশ্বরের প্রতি একনিষ্ঠ থাকার মনোরম স্মৃতি আমার রয়েছে। কিন্তু, আমার বাবামার বাড়ির পরিবেশ একেবারেই আধ্যাত্মিক ছিল না। বাবা প্রায়ই মাকে আর আমাদেরকে মারধর করতেন। ভয় পাওয়া আমাদের জীবনের একটা অংশ হয়ে উঠেছিল এবং মাকে কষ্ট পেতে দেখে আমার খুব দুঃখ হতো।

স্কুলে, আমি আরও হতাশাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম। আমরা যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে না পারতাম, তাহলে একজন শিক্ষক, যিনি একজন যাজক ছিলেন, তিনি আমাদের মাথা দেওয়ালে ঠুকে দিতেন। আরেকজন যাজক ছাত্রদের হোমওয়ার্ক দেখার সময় তাদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালাতেন। অধিকন্তু, নরকাগ্নির মতো ক্যাথলিক শিক্ষাগুলো আমাকে বিভ্রান্ত এবং আতঙ্কিত করেছিল। শীঘ্রই ঈশ্বরের প্রতি আমার ভক্তি কমতে শুরু করেছিল।

এক অর্থহীন জীবনের ফাঁদে আটকা পড়া

আধ্যাত্মিক নির্দেশনার অভাবে, আমি ডিস্কোথেকগুলোতে অনৈতিক, দৌরাত্ম্যপরায়ণ লোকেদের সঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করেছিলাম। সেখানে প্রায়ই মারপিট শুরু হতো আর ছুরি, চেইন, গ্লাস এবং বসার টুলগুলোকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এমনকি যদিও আমি এই ধরনের দৌরাত্ম্যে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতাম না, তবুও একবার আমাকে এমন আঘাত করা হয়েছিল যে, আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।

সেই পরিবেশে থাকতে থাকতে শেষ পর্যন্ত আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম আর নিরূপদ্রব ডিস্কোথেকগুলো খুঁজেছিলাম। এমনকি সেই জায়গাগুলোতেও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার খুবই সাধারণ ব্যাপার ছিল। কিন্তু পরিতৃপ্তি ও মনের শান্তি লাভ করার পরিবর্তে মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে আমার হ্যালুসিনেশন (দৃষ্টিভ্রম) হতো আর আমি ভয় পেতাম।

যদিও আমি নিজে অসন্তুষ্ট ছিলাম, তবুও আমি আমার ছোটো ভাই হোসে লুইস এবং আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিগেলকে সেই একই জীবনযাপন করতে প্রলুব্ধ করেছিলাম। সেই সময়ে স্পেনের অন্যান্য অনেক যুবক-যুবতীর মতো আমরাও এক কলুষিত জগতের ফাঁদে আটকা পড়েছিলাম। মাদকদ্রব্য কেনার টাকা যোগাড় করার জন্য আমি যেকোনোকিছুই করতাম। আমি আমার আত্মসম্মানবোধ একেবারেই হারিয়ে ফেলেছিলাম।

যিহোবা উদ্ধার করেন

সেই সময়, আমি বেশ কয়েক বার আমার বন্ধুদের সঙ্গে ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং জীবনের অর্থ নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারব এমন কাউকে খোঁজার মাধ্যমে আমি ঈশ্বরকে খুঁজতে শুরু করি। আমি লক্ষ করেছিলাম যে, ফ্রানথিস্কো নামে আমার একজন সহকর্মী অন্যদের চেয়ে আলাদা ছিলেন। তাকে সুখী, সৎ এবং দয়ালু বলে মনে হয়েছিল আর তাই আমি তার কাছে আমার মনের কথা খুলে বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ফ্রানথিস্কো একজন যিহোবার সাক্ষি ছিলেন এবং তিনি আমাকে একটি প্রহরীদুর্গ পত্রিকা দিয়েছিলেন, যেটির মধ্যে মাদকদ্রব্যের ওপর একটা প্রবন্ধ ছিল।

সেই প্রবন্ধটি পড়ার পর আমি সাহায্যের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম: “প্রভু, আমি জানি তুমি আছ আর আমি তোমাকে ও তোমার ইচ্ছা জানতে চাই। দয়া করে আমাকে সাহায্য করো!” ফ্রানথিস্কো এবং অন্য সাক্ষিরা আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বাইবেল ব্যবহার করেছিল আর আমাকে বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি পড়তে দিয়েছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তারা আমাকে সেই সাহায্য প্রদান করছিল, যেটার জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। আমি যা শিখছিলাম, শীঘ্রই আমি সেগুলো আমার বন্ধুবান্ধব এবং হোসে লুইসকে জানাতে শুরু করি।

একদিন একটা কনসার্ট থেকে কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়ে আসার সময়ে আমি নিজেকে সেই দল থেকে আলাদা করেছিলাম। আমি একজন নিরপেক্ষ দর্শক হিসেবে তাদেরকে লক্ষ করেছিলাম আর মাদকদ্রব্যের প্রভাবের ফলে আমাদের আচরণ যে কতটা বিরক্তিকর হয়ে উঠেছিল, তা দেখে আমার চেতনা ফিরে এসেছিল। সেই মুহূর্তেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমি এই জীবনধারা পরিত্যাগ করব ও একজন যিহোবার সাক্ষি হব।

আমি ফ্রানথিস্কোর কাছে একটি বাইবেল চেয়েছিলাম আর তিনি আমাকে বাইবেলের সঙ্গে যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায় বইটিও দিয়েছিলেন। * আমি যখন সমস্ত নেত্রজল মুছে দেওয়ার এবং এমনকি মৃত্যুকে দূর করে দেওয়ার বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে পড়েছিলাম, তখন আমার এই বিষয়ে কোনো সন্দেহই ছিল না যে, আমি সেই সত্য খুঁজে পেয়েছি, যা মানবজাতিকে স্বাধীন করতে পারে। (যোহন ৮:৩২; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) পরবর্তী সময়ে, আমি যিহোবার সাক্ষিদের কিংডম হলে একটা সভাতে যোগ দিয়েছিলাম। সেখানে আমি যে-বন্ধুসুলভ মনোভাব এবং আন্তরিকতা দেখেছিলাম, তা আমার ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল।

কিংডম হলে আমার সেই অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে অন্যদেরকে বলার জন্য আমি খুবই উৎসুক হয়ে পড়ি আর তাই আমি দেরি না করেই হোসে লুইস ও আমার বন্ধুবান্ধবকে একত্রিত করে তাদেরকে সেই সম্বন্ধে বলি। বেশ কিছুদিন পর, আমরা সবাই একটা সভাতে যোগ দিয়েছিলাম। আমাদের সামনের সারিতে বসা একটা মেয়ে আমাদের দিকে এক ঝলক তাকিয়েছিল। স্পষ্টতই সে লম্বা চুলওয়ালা হিপ্পিদের এই দলটাকে দেখে চমকে উঠেছিল আর দ্বিতীয় বার ফিরে না তাকানোর ব্যাপারে সতর্ক ছিল। পরের সপ্তাহে আমরা যখন কিংডম হলে ফিরে গিয়েছিলাম, তখন সে নিশ্চয়ই অবাক হয়ে গিয়েছিল কারণ এবার আমরা স্যুট ও টাই পরে ছিলাম।

এর অল্প সময় পরে, মিগেল আর আমি যিহোবার সাক্ষিদের একটা সীমা সম্মেলনেও যোগ দিয়েছিলাম। আমরা আর কখনো এই ধরনের কোনোকিছুর—সমস্ত বয়সের লোকেদের নিয়ে গঠিত এক প্রকৃত ভ্রাতৃসমাজের—অভিজ্ঞতা লাভ করিনি। আর অবাক করার মতো বিষয়টা হল, ওই সম্মেলনটা সেই একই থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে কিছুদিন আগেই আমরা একটা কনসার্টে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু, এবারের অনুষ্ঠানের পরিবেশ এবং যে-সংগীত আমরা শুনেছিলাম, তা আমাদের উদ্দীপিত করেছিল।

আমাদের পুরো দলটাই বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিল। প্রায় আট মাস পরে, ১৯৭৪ সালের ২৬ জুলাই মিগেল এবং আমি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম। আমাদের দুজনের বয়সই তখন ২০ বছর। এর কয়েক মাস পর আমাদের দলের আরও চারজন বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। বাইবেল থেকে আমি যে-প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলাম, তা আমাকে দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট সহ্য করে চলা আমার মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করতে এবং আমার নতুন বিশ্বাস তাকে জানাতে পরিচালিত করেছিল। আমাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এ ছাড়া, আমি আমার ছোটো ভাইবোনদের সাহায্য করার জন্যও অনেকটা সময় ব্যয় করতাম।

পরবর্তী সময়ে, আমার এক ভাই ছাড়া সব ভাইবোন এবং মা বাইবেলের সত্য শিখেছিল এবং যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। ১৯৭৭ সালে আমি সোলেদাদকে বিয়ে করি। সে ছিল সেই মেয়ে, যে-মেয়েটা আমরা যখন প্রথম বার কিংডম হলে গিয়েছিলাম, তখন আমাদের দেখে চমকে উঠেছিল। কয়েক মাসের মধ্যেই, আমরা দুজনেই সুসমাচারের পূর্ণসময়ের প্রচারক হয়েছিলাম, যাদেরকে যিহোবার সাক্ষিরা অগ্রগামী বলে থাকে।

এক প্রিয়জন মুক্তি লাভ করে

আমার ছোট বোন মারিভি ছেলেবেলায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল আর সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। কিশোর বয়সেই সে এক অনৈতিক জীবনযাপন করতে শুরু করেছিল, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল মাদকদ্রব্য গ্রহণ, চুরি করা এবং বেশ্যাবৃত্তি। ২৩ বছর বয়সে তাকে জেলে পাঠানো হয় আর সেখানেও সে স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপন করা চালিয়ে গিয়েছিল।

সেই সময়ে আমি একজন সীমা অধ্যক্ষ অর্থাৎ যিহোবার সাক্ষিদের একজন ভ্রমণ পরিচারক হিসেবে কাজ করছিলাম। ১৯৮৯ সালে সোলেদাদ এবং আমাকে সেই এলাকাতে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, যেখানে মারিভি জেলে বন্দি ছিল। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ তার ছেলেকে তার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়েছিল; তাই সে একেবারে ভেঙে পড়েছিল আর তার বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। একদিন আমি তার সঙ্গে দেখা করে একসঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম আর সে এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল। এক মাস অধ্যয়ন করার পর, সে মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও ধূমপান বন্ধ করে দিয়েছিল। তার জীবনে এই পরিবর্তন করার জন্য যিহোবা তাকে যে-শক্তি জুগিয়েছিলেন, তা দেখে আমি রোমাঞ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম।—ইব্রীয় ৪:১২.

অধ্যয়ন শুরু করার অল্প সময় পরেই মারিভি সহবন্দিনী ও জেলের কর্মকর্ত্রীদের কাছে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে বলতে শুরু করেছিল। যদিও তাকে এক জেল থেকে আরেক জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, তবুও সে তার প্রচার কাজ চালিয়ে গিয়েছিল। এমনকি একটা জেলে সে বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে সাক্ষ্য দিত। কয়েক বছরের মধ্যে, মারিভি বিভিন্ন জেলের অনেক সহবন্দিনীর সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিল।

একদিন মারিভি আমাকে জানায় যে, সে যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করতে ও বাপ্তিস্ম নিতে চায়। কিন্তু, তাকে জেল ছেড়ে কোথাও যাওয়ার অথবা তাকে বাপ্তিস্ম দেওয়ার জন্য কাউকে জেলের ভিতরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সে আরও চার বছর ধরে জেলের সেই কলুষিত পরিবেশ সহ্য করেছিল। তার বিশ্বাসকে বজায় রাখতে কী তাকে সাহায্য করেছিল? স্থানীয় মণ্ডলীতে যে-সময়ে একটা সভা অনুষ্ঠিত হতো, ঠিক সেই সময়েই সে জেলের কক্ষে বসে একই বিষয় পুনরালোচনা করত। এ ছাড়া, সে নিয়মিতভাবে ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন ও প্রার্থনা করত।

পরবর্তী সময়ে, মারিভিকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সম্বলিত একটা জেলে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে একটা সুইমিং পুল ছিল। তার মনে হয়েছিল যে, এই নতুন পরিস্থিতি হয়তো তার বাপ্তিস্ম নেওয়াকে সম্ভব করে তুলবে। আর সত্যি সত্যিই, মারিভিকে শেষপর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এভাবেই আমি সেখানে তার বাপ্তিস্মের বক্তৃতা দিতে পেরেছিলাম। তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূহূর্তে আমি তার সঙ্গেই ছিলাম।

তার আগের জীবনধারার ফলস্বরূপ মারিভি এইডসে আক্রান্ত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, তার উত্তম আচরণের জন্য সে ১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে নির্ধারিত সময়ের আগেই জেল থেকে মুক্তি লাভ করেছিল। দুবছর পর তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সে মায়ের সঙ্গেই ছিল এবং একজন সক্রিয় খ্রিস্টান হিসেবে জীবনযাপন করেছিল।

ধ্বংসাত্মক অনুভূতি কাটিয়ে ওঠা

আমিও আমার আগের জীবনযাপনের পরিণতিগুলোর হাত থেকে পুরোপুরি রেহাই পাইনি। আমার বাবার হাতে আমি যে-অত্যাচার সহ্য করেছিলাম আর সেইসঙ্গে কিশোর বয়সে আমি যেধরনের জীবনযাপন করতাম, সেগুলো আমার ব্যক্তিত্বকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। বড় হওয়ার পরও, প্রায়ই আমি অপরাধবোধ এবং অযোগ্যতার অনুভূতির দ্বারা জর্জরিত হয়ে কষ্ট পেতাম। কখনো কখনো আমি খুবই হতাশ হয়ে যেতাম। কিন্তু, এই ধরনের বিরক্তকর অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করতে আমাকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের বাক্য অমূল্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। যিশাইয় ১:১৮ এবং গীতসংহিতা ১০৩:৮-১৩ পদের ওপর ক্রমাগত ধ্যান করা বছরের পর বছর ধরে আমাকে সাহায্য করেছে, যেন আমি বার বার আমার অপরাধবোধের অনুভূতি নিয়ে চিন্তা করা কমাতে পারি।

প্রার্থনা হল আরেকটা হাতিয়ার, যেটা আমি আমার অযোগ্যতার অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করার জন্য ব্যবহার করেছি। যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার সময় প্রায়ই আমার চোখ জলে ভরে যায়। তা সত্ত্বেও, ১ যোহন ৩:১৯, ২০ পদে লিপিবদ্ধ কথাগুলো আমাকে শক্তিশালী করে: “ইহাতে জানিব যে, আমরা সত্যের, এবং তাঁহার সাক্ষাতে আপনাদের হৃদয় আশ্বাসযুক্ত করিব, কারণ আমাদের হৃদয় যদি আমাদিগকে দোষী করে, ঈশ্বর আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্‌, এবং সকলই জানেন।”

যেহেতু আমি “ভগ্ন ও চূর্ণ” হৃদয় নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতাম, তাই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, একসময় আমি নিজেকে যতটা খারাপ মনে করতাম ততটা খারাপ আমি নই। যিহোবার অন্বেষণ করে এমন সকলকে বাইবেল এই আশ্বাস দেয় যে, যারা তাদের আগের আচারআচরণের জন্য অকৃত্রিমভাবে অনুতপ্ত হয় এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য ফিরে আসে, তিনি তাদেরকে তুচ্ছ বলে মনে করেন না।—গীতসংহিতা ৫১:১৭.

যখনই আত্মসন্দেহের অনুভূতি চলে আসে, তখনই আমি আমার মনকে ইতিবাচক চিন্তাভাবনার দ্বারা পূর্ণ করতে চেষ্টা করি, যেধরনের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে ফিলিপীয় ৪:৮ পদে বলা হয়েছে। আমি গীতসংহিতা ২৩ অধ্যায় এবং পর্বতেদত্ত উপদেশ মুখস্ত করেছি। আমার মনে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আসলে আমি শাস্ত্রের এই পদগুলো মনে মনে বলতে থাকি। মন থেকে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর করে দেওয়া বিশেষ করে নিদ্রাহীন রাতগুলোতে খুবই উপকারী হয়েছে।

সাহায্যের আরেকটা উৎস হল প্রশংসা, যা আমি আমার স্ত্রী ও অন্যান্য পরিপক্ক খ্রিস্টানের কাছ থেকে লাভ করেছি। যদিও প্রথম প্রথম তাদের বলা উৎসাহজনক কথাবার্তা মেনে নেওয়া আমার কাছে কঠিন বলে মনে হয়েছিল কিন্তু বাইবেল আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছে যে, প্রেম “সকলই বিশ্বাস করে।” (১ করিন্থীয় ১৩:৭) আর অবশ্যই আমি ধীরে ধীরে আমার দুর্বলতা এবং সীমাবদ্ধতাগুলোকে নম্রতার সঙ্গে মেনে নিতে শিখেছি।

এর একটা উপকারজনক দিক হচ্ছে, নেতিবাচক অনুভূতির সঙ্গে আমার নিজের লড়াই, আমাকে একজন সহানুভূতিশীল ভ্রমণ অধ্যক্ষ হতে সাহায্য করেছে। আমার স্ত্রী এবং আমি দুজনেই সুসমাচারের পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে প্রায় ৩০ বছর ব্যয় করেছি। অন্যদেরকে সেবা করার ফলে আমি যে-আনন্দ আমি পেয়েছি, তা আমাকে আমার নেতিবাচক অনুভূতি ও অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার স্মৃতিগুলোকে দূরে সরিয়ে দিতে ক্রমাগত সাহায্য করেছে।

এখন আমি যখন অতীতের দিকে ফিরে তাকাই এবং যিহোবা আমার ওপর যেসমস্ত আশীর্বাদ বর্ষণ করেছেন সেগুলো নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমি গীতরচকের মতো একই বিষয় বলতে অনুপ্রাণিত হই: “সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর; . . . তিনি তোমার সমস্ত অধর্ম্ম ক্ষমা করেন, তোমার সমস্ত রোগের প্রতীকার করেন। তিনি কূপ হইতে তোমার জীবন মুক্ত করেন, দয়া ও করুণার মুকুটে তোমাকে ভূষিত করেন।”—গীতসংহিতা ১০৩:১-৪. (w০৮ ১/১)

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত কিন্তু এখন আর ছাপানো হয় না।

[৩০ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

প্রায়ই আমি অপরাধবোধ এবং অযোগ্যতার অনুভূতির দ্বারা জর্জরিত হয়ে কষ্ট পেতাম। তবে, এই ধরনের বিরক্তকর অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করতে আমাকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের বাক্য অমূল্য বলে প্রমাণিত হয়েছে

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমার ভাই হোসে লুইস এবং বন্ধু মিগেল আমার মন্দ ও ভাল উভয় উদাহরণই অনুসরণ করেছিল

[২৮, ২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৭৩ সালে মরসিও পরিবার

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

জেলে একজন বন্দি হিসেবে মারিভি

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার স্ত্রী সোলেদাদের সঙ্গে