সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমরা কোথা থেকে এসেছি?

আমরা কোথা থেকে এসেছি?

আমরা কোথা থেকে এসেছি?

 উত্তরটা জানা কেন গুরুত্বপূর্ণ? অনেক লোককে শেখানো হয়ে থাকে যে, পৃথিবীতে হঠাৎ করেই জীবনের উদ্ভব হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়ে থাকে যে, অনিশ্চিত, দৈবক্রমে ঘটা এক ধারাবাহিক ঘটনার মধ্যে দিয়ে বিবর্তন প্রক্রিয়া আবেগগত, মেধাগত এবং আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসহ মানবজাতির বিকাশ করেছে।

কিন্তু, চিন্তা করুন: আমরা যদি সত্যি সত্যিই বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছি আর কোনো সৃষ্টিকর্তা যদি না-ই থাকেন, তাহলে এক অর্থে মানবজাতি অনাথ হয়ে পড়ত। মানবজাতির জন্য উপদেশ লাভের সর্বোচ্চ প্রজ্ঞার কোনো উৎসই থাকত না—আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করার ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য কেউই থাকত না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানোর, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বগুলো সমাধান করার এবং আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোর ব্যাপারে নির্দেশনার জন্য আমাদেরকে মানব প্রজ্ঞার ওপরই নির্ভর করতে হতো।

এই ধরনের চিন্তাভাবনা কি আপনাকে মনের শান্তি প্রদান করে? যদি না করে, তাহলে এর বিকল্পটা চিন্তা করুন। এটা কেবলমাত্র আরও বেশি আবেদনময়ই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আরও বেশি অর্থপূর্ণ।

বাইবেল যা বলে

বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, মানবজাতি হল ঈশ্বরের এক সরাসরি সৃষ্টি। আমরা চিন্তাভাবনাহীন, অর্থহীন বিবর্তনের মাধ্যমে আসিনি। এর পরিবর্তে, আমরা এক প্রেমময়, বুদ্ধিমান পিতার সন্তান। বাইবেলে উল্লেখিত এই স্পষ্ট বিবৃতিগুলো লক্ষ করুন।

আদিপুস্তক ১:২৭. “ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।”

গীতসংহিতা ১৩৯:১৪. “আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত; তোমার কর্ম্ম সকল আশ্চর্য্য, তাহা আমার প্রাণ বিলক্ষণ জানে।”

মথি ১৯:৪-৬. “তোমরা কি পাঠ কর নাই যে, সৃষ্টিকর্ত্তা আদিতে পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, আর বলিয়াছিলেন, ‘এই কারণ মনুষ্য পিতা ও মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং সে দুই জন একাঙ্গ হইবে’? সুতরাং তাহারা আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ। অতএব ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।”

প্রেরিত ১৭:২৪, ২৫. “ঈশ্বর, যিনি জগৎ ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত বস্তু নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তিনিই স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, সুতরাং হস্তনির্ম্মিত মন্দিরে বাস করেন না; কোন কিছুই অভাব প্রযুক্ত মনুষ্যদের হস্ত দ্বারা সেবিতও হন না, তিনিই সকলকে জীবন ও শ্বাস ও সমস্তই দিতেছেন।”

প্রকাশিত বাক্য ৪:১১. “হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।”

বাইবেলের উত্তর যেভাবে প্রকৃত মনের শান্তি নিয়ে আসে

“পৃথিবীস্থ সমস্ত পিতৃকুল” ঈশ্বর “হইতে নাম পাইয়াছে” এই বিষয়টা জানা, অন্যদের সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করে। (ইফিষীয় ৩:১৪) এই ধরনের জ্ঞান থাকা আমরা নিজেদেরকে এবং আমাদের সমস্যাগুলোকে যেভাবে দেখে থাকি, সেগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলে। আমাদের চিন্তাভাবনা নীচে উল্লেখিত উপায়গুলোর মাধ্যমে প্রভাবিত হবে।

কঠিন সিদ্ধান্তগুলোর মুখোমুখি হওয়ার সময়, আমরা লোকেদের পরস্পরবিরোধী মতামতগুলো নিয়ে অযথা উদ্বিগ্ন হব না। এর পরিবর্তে, আমরা আস্থা সহকারে বাইবেলের পরামর্শের ওপর নির্ভর করব। কেন? কারণ “ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত হয়।”—২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.

এটা ঠিক যে, বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগানোর সঙ্গে প্রচেষ্টা ও আত্মশাসন জড়িত। এমনকি কখনো কখনো এটির নির্দেশনা হয়তো আমাদেরকে এমনভাবে আচরণ করতে বলে, যেটাকে আমাদের প্রবণতাগুলোর বিপরীত বলে মনে হয়। (আদিপুস্তক ৮:২১) কিন্তু, আমরা যদি মেনে নিই যে, আমরা একজন প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার দ্বারা সৃষ্ট, শুধুমাত্র তাহলেই এই সিদ্ধান্তে আসা যুক্তিযুক্ত যে, তিনি আমাদের জন্য সর্বোত্তম পথটা জানেন। (যিশাইয় ৫৫:৯) তাই, তাঁর বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয়: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) আমরা যদি এই পরামর্শ কাজে লাগাই, তাহলে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হওয়ার সময় আমাদের উদ্বিগ্নতার অনেকটাই দূরীভূত হবে।

ভেদাভেদের মুখোমুখি হওয়ার সময়, আমরা নিজেদের ছোটো মনে করার অনুভূতি দ্বারা ভারগ্রস্ত হব না, এইরকম চিন্তা করব না যে, অন্য কোনো জাতি বা সংস্কৃতির লোকেদের তুলনায় আমরা কোনো না কোনোভাবে কম যোগ্য। এর পরিবর্তে, আমরা এক ভারসাম্যপূর্ণ আত্মসম্মানবোধ গড়ে তুলব। কেন? কারণ আমাদের পিতা যিহোবা ঈশ্বর, “মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাত,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।”—প্রেরিত (শিষ্যচরিত) ১০:৩৪, ৩৫.

এ ছাড়া, এই বিষয়টা জানা অন্যদের প্রতি আমাদের মনোভাবকে বিকৃত করার জন্য ভেদাভেদকে সুযোগ দেওয়া থেকে আমাদের বিরত করবে। আমরা উপলব্ধি করব যে, ঈশ্বর যেহেতু “এক ব্যক্তি হইতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎপন্ন করিয়াছেন, যেন তাহারা সমস্ত ভূতলে বাস করে,” তাই অন্য জাতির লোকেদের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই।—প্রেরিত ১৭:২৬.

আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য চিন্তা করেন, এই বিষয়টা জানা নিশ্চিতভাবেই প্রকৃত মনের শান্তি লাভ করার জন্য ভিত্তি স্থাপন করে। কিন্তু আমরা যদি সেই মনের শান্তি বজায় রাখতে চাই, তাহলে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। (w০৮ ২/১)

[৪ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

মানবজাতি কি বিবর্তনের মাধ্যমে বিকাশ লাভ করেছিল?

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য চিন্তা করেন এই বিষয়টা জানা প্রকৃত মনের শান্তি প্রদান করে