একজন মেষপালক যিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন
ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন
একজন মেষপালক যিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন
‘ঈশ্বর কি আমার জন্য চিন্তা করেন?’ আপনি যদি কখনো নিজেকে এই প্রশ্নটা করে থাকেন, তাহলে এক্ষেত্রে আপনি একা নন। আমাদের মধ্যে অনেকেই দুর্দশা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছি আর এই বিশাল নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আমাদের লক্ষ করেন কি না, তা নিয়ে হয়তো কখনো কখনো চিন্তাও করেছি। আমাদের জানা প্রয়োজন যে, যিহোবা ঈশ্বর কি ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে আমাদের জন্য চিন্তা করেন? পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু, যিনি যিহোবাকে সবচেয়ে ভালভাবে জানেন, তিনি একটা দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন যা এক হৃদয়গ্রাহী উত্তর প্রদান করে।
একজন মেষপালকের জীবনের বাস্তবতাকে ব্যবহার করে যিশু বলেছিলেন: “কোন ব্যক্তির যদি এক শত মেষ থাকে, আর তাহাদের মধ্যে একটী হারাইয়া যায়, তবে সে কি অন্য নিরানব্বইটা ছাড়িয়া পর্ব্বতে গিয়া ঐ হারান মেষটীর অন্বেষণ করে না? আর যদি সে কোন ক্রমে সেটী পায়, তবে আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে নিরানব্বইটা হারাইয়া যায় নাই, তাহাদের অপেক্ষা সেইটীর নিমিত্ত সে অধিক আনন্দ করে। সেইরূপ এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে এক জনও যে বিনষ্ট হয়, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার এমন ইচ্ছা নয়।” (মথি ১৮:১২-১৪) আসুন আমরা দেখি যে, যিশু এখানে কীভাবে প্রত্যেক উপাসকের জন্য যিহোবার কোমল চিন্তা সম্বন্ধে বর্ণনা করেছেন।
সেই মেষপালক তার প্রত্যেকটা মেষের প্রতি দায়িত্ব অনুভব করতেন। কোনো মেষ যদি পালের মধ্যে থেকে হারিয়ে যেত, তাহলে তিনি জানতে পারতেন যে, কোনটা হারিয়ে গিয়েছে। তিনি তার দেওয়া নাম দ্বারা প্রত্যেকটা মেষকে চিনতেন। (যোহন ১০:৩) একজন চিন্তাশীল মেষপালক হারিয়ে যাওয়া মেষটা পালের মধ্যে ফিরে না আসা পর্যন্ত সেটাকে খোঁজা থেকে বিরত হতেন না। তবে, হারিয়ে যাওয়া মেষটাকে খুঁজতে যাচ্ছেন বলে তিনি তার বাকি ৯৯টা মেষকে ঝুঁকির মুখে ফেলে যেতেন না। মেষপালকেরা প্রায়ই একসঙ্গে থাকত আর তাদের মেষপালকে অন্য মেষপালের সঙ্গে মিশতে দিত। * তাই সেই মেষপালক, যিনি হারানো মেষের খোঁজে যেতেন, তিনি তার বাকি মেষগুলোকে অল্পসময়ের জন্য সহমেষপালকদের তত্ত্বাবধানে রেখে যেতে পারতেন। সেই হারিয়ে যাওয়া মেষটাকে অক্ষত অবস্থায় খুঁজে পেলে তার আনন্দ করার উপযুক্ত কারণ থাকত। ভীত প্রাণীটাকে কাঁধে তুলে নিয়ে তিনি এটাকে পালের নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশের মধ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আসতেন।—লূক ১৫:৫, ৬.
এই দৃষ্টান্তটাকে ব্যাখ্যা করে যিশু বলেছিলেন যে, “এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে এক জনও যে বিনষ্ট হয়,” ঈশ্বর তা চান না। এর আগে যিশু তাঁর শিষ্যদের “যে ক্ষুদ্রগণ [তাঁহাকে] বিশ্বাস করে, . . . তাহাদের মধ্যে একজনেরও” বিঘ্ন জন্মানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন। (মথি ১৮:৬) তাহলে, যিশুর দেওয়া দৃষ্টান্তটা যিহোবা সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়? তিনি এমন একজন মেষপালক, যিনি তাঁর প্রত্যেকটা মেষের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন, যার অন্তর্ভুক্ত “ক্ষুদ্রগণ”—এমন ব্যক্তিরা যাদেরকে জগতের দৃষ্টিতে নগণ্য বলে মনে হয়। হ্যাঁ, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তাঁর প্রত্যেক উপাসকই অদ্বিতীয় এবং মূল্যবান।
ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আপনি যে মূল্যবান এই বিষয়ে যদি আপনি পুনরায় আশ্বস্ত হতে চান, তাহলে সর্বমহান মেষপালক যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে এবং কীভাবে আপনি তাঁর নিকটবর্তী হতে পারেন, সেই বিষয়ে আরও জানুন না কেন? তা করার দ্বারা, আপনিও হয়তো প্রেরিত পিতরের মতো আস্থা রাখতে পারেন, যিনি নিঃসন্দেহে স্বয়ং যিশুর কাছ থেকে হারানো মেষের দৃষ্টান্তটা শুনেছিলেন। পিতর পরে লিখেছিলেন: “তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার [ঈশ্বরের] উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।”—১ পিতর ৫:৭. (w০৮ ২/১)
[পাদটীকা]
^ যেহেতু প্রত্যেকটা মেষ তার নিজের মেষপালকের স্বতন্ত্র ডাকে সাড়া দিত, তাই মেষপালগুলোকে আলাদা করা কোনো সমস্যা ছিল না।—যোহন ১০:৪.