সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?

কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?

আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য

কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?

 মানুষের দুঃখকষ্টের কারণ ঈশ্বর নন। “ইহা দূরে থাকুক যে, ঈশ্বর দুষ্কার্য্য করিবেন!” বাইবেল বলে। (ইয়োব ৩৪:১০) তাহলে, এই দুঃখকষ্টের প্রধান প্ররোচক কে?

যিশু শয়তানকে “জগতের অধিপতি” বলেছেন। (যোহন ১৪:৩০) এটা সত্য যে, যিহোবা হচ্ছেন নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম প্রভু। এই পদকে তিনি কখনোই পরিত্যাগ করবেন না। কিন্তু, কিছুসময় পর্যন্ত ঈশ্বর শয়তানকে অধিকাংশ মানবজাতির ওপর শাসন করতে দিয়েছেন।—১ যোহন ৫:১৯.

শয়তান কী ধরনের শাসক হয়ে এসেছে? মানুষের সঙ্গে তার প্রথম যোগাযোগ থেকেই শয়তান একজন ঘাতক এবং প্রতারক প্রমাণিত হয়ে এসেছে। শয়তান মানবসমাজের ওপর তীব্রভাবে চরম সংকট নিয়ে আসে। যিশু এই কথাগুলো বলে তাকে অভিযুক্ত করেছিলেন: “সে আদি হইতেই নরঘাতক, সত্যে থাকে নাই, কারণ তাহার মধ্যে সত্য নাই। সে যখন মিথ্যা বলে, তখন আপনা হইতেই বলে, কেননা সে মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতা।” (যোহন ৮:৪৪) যিশু এও বলেছিলেন, যে-লোকেরা তাঁকে হত্যা করার জন্য খুঁজছিল, তারা সেই প্রথম ঘাতক শয়তানেরই সন্তান। তারা তার মতো কাজ করে নিজেদেরকে তার সন্তান করে তুলেছে। এটা খুবই সত্য যে, ছেলেমেয়েরা তাদের বাবাকে অনুকরণ করে।

শয়তান এখনও মানুষের হৃদয়ে ঘাতকসুলভ মনোভাব বৃদ্ধি করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আর. জে. রুমেল অনুমান করেন যে, ১৯০০ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকার রাজনৈতিক সংস্কারসাধনের, গণহত্যার এবং বাছবিচারহীন দৌরাত্ম্যমূলক কাজগুলোর মাধ্যমে ১৬,৯১,৯৮,০০০ জনকে হত্যা করেছে। এই নিহতদের সংখ্যা একই সময়কালে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত কোটি কোটি ব্যক্তির সংখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করে না।

যদি দুঃখকষ্টের কারণ ঈশ্বর না হয়ে থাকেন, তাহলে কেন তিনি তা থাকতে দিয়েছেন? কারণ দীর্ঘসময় আগে উত্থিত সর্বজনীন বিচার্য বিষয়গুলো, কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল, এই প্রশ্নগুলো এখনও মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন। আসুন আমরা এগুলোর মধ্যে কেবল একটা বিবেচনা করি।

মানব ইতিহাসের শুরুতে আদম ও হবা শয়তানের পক্ষ নিয়েছিল। তারা ঈশ্বরের শাসনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং নিজে নিজে শাসন করা বেছে নিয়েছিল, যদিও প্রকৃতপক্ষে এটার মানে ছিল দিয়াবলের শাসনের অধীনে থাকা।—আদিপুস্তক ৩:১-৬; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯.

যিহোবার ন্যায়বিচারের মানদণ্ড অনুযায়ী প্রমাণ সংগ্রহ করতে সময় দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি কী? শয়তানের প্রভাবাধীনে মানব শাসন কেবলমাত্র দুঃখকষ্টের দিকেই চালিত হয়। আসলে, ঈশ্বর যে সময় দিয়ে আসছেন, তা শেষপর্যন্ত মানুষের জন্য উপকারজনক প্রমাণিত হয়েছে। কীভাবে? যারা প্রমাণ সম্বন্ধে অধ্যয়ন করে ও তা বিশ্বাস করে, তাদের পক্ষে ঈশ্বরের শাসনাধীনে থাকার জন্য তাদের ইচ্ছুক মনোভাব প্রদর্শন করার সুযোগ রয়েছে। যারা ঈশ্বরের মানগুলো সম্বন্ধে শেখে এবং সেইমতো জীবনযাপন করে, তাদের অনন্তজীবনের প্রত্যাশা রয়েছে।—যোহন ১৭:৩; ১ যোহন ২:১৭.

এটা ঠিক যে, শয়তান এখন এই জগৎকে তার মন্দ দৃঢ়মুষ্টির মধ্যে রেখেছে। কিন্তু, দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়। শীঘ্রই যিহোবা তাঁর পুত্রকে ‘দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করিবার’ জন্য ব্যবহার করবেন। (১ যোহন ৩:৮) ঈশ্বরের নির্দেশনাধীনে, যিশু মানুষের মনোকষ্টকে দূর করবেন এবং লোকেদের জীবনের দুঃখজনক পরিস্থিতিগুলো পুনরুদ্ধার করবেন। তিনি সেই কোটি কোটি লোককে পৃথিবীতে পুনরুত্থিত করবেন, যারা শত শত বছর ধরে দুঃখকষ্ট ভোগ করেছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে।—যোহন ১১:২৫.

যিশুর পুনরুত্থান হচ্ছে, দিয়াবলের কাজগুলোর ওপর ঈশ্বরের বিজয়ের এক উদাহরণ—যারা ঈশ্বরের শাসন বেছে নেয়, সেই মানুষদের জন্য এক প্রামাণিক সাক্ষ্য। (প্রেরিত ১৭:৩১) বাইবেল আমাদেরকে ভবিষ্যতের সময় সম্বন্ধে এই সান্ত্বনাদায়ক কথাগুলোর মাধ্যমে বুঝতে সাহায্য করে: “ঈশ্বর আপনি [মানবজাতির] সঙ্গে থাকিবেন, ও তাহাদের ঈশ্বর হইবেন। আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪. (w০৮ ২/১)