ঈশ্বরের শক্তি নক্ষত্ররাজির মধ্যে প্রকাশ পায়
ঈশ্বরের শক্তি নক্ষত্ররাজির মধ্যে প্রকাশ পায়
“ঊর্দ্ধ্বদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, ঐ সকলের সৃষ্টি কে করিয়াছে? তিনি বাহিনীর ন্যায় সংখ্যানুসারে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনেন, সকলের নাম ধরিয়া তাহাদিগকে আহ্বান করেন; তাঁহার সামর্থ্যের আধিক্য ও শক্তির প্রাবল্য প্রযুক্ত তাহাদের একটাও অনুপস্থিত থাকে না।”—যিশাইয় ৪০:২৬.
আমাদের সূর্য কেবলমাত্র একটা সাধারণ আকারের নক্ষত্র। তা সত্ত্বেও, এটার ভর পৃথিবীর ভরের চেয়ে ৩,৩০,০০০ গুণ বেশি। পৃথিবীর কাছাকাছি নক্ষত্রগুলোর অধিকাংশই আকারে সূর্যের চেয়ে ছোটো। কিন্তু, অন্যান্য নক্ষত্র যেমন, ভি৩৮২ সিগনি নামের নক্ষত্রের ভর আমাদের সূর্যের ভরের চেয়ে কমপক্ষে ২৭ গুণ বেশি।
আমাদের সূর্য কতটুকু শক্তি নির্গত করে? আপনি যদি কোনো আগুন থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়েও এর উত্তাপ অনুভব করতে পারেন, তাহলে সেই আগুন কতটা ভয়ংকর হবে, তা কল্পনা করুন। পৃথিবী থেকে সূর্য গড়ে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তবুও, কোনো প্রখর রোদের দিনে এর তাপে চামড়ায় ফোসকা পড়ে যেতে পারে! এটা উল্লেখযোগ্য যে, সূর্যের শক্তির কেবল প্রায় একশো কোটি ভাগের এক ভাগ পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। তারপরও, সূর্যের শক্তির এই ক্ষুদ্র অংশই আমাদের গ্রহে জীবনকে টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট।
বস্তুতপক্ষে, বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছে যে, কেবলমাত্র আমাদের সূর্য থেকে সর্বমোট যে-পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়, তা পৃথিবীর মতো প্রায় ৩১ লক্ষ কোটি গ্রহকে টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট। অথবা আরেকটা উপায়ে এই অপরিমেয় শক্তিকে পরিমাপ করার জন্য: যদি সূর্যের সমস্ত শক্তিকে কেবলমাত্র এক সেকেন্ডের জন্য একত্রে সংগ্রহ করা যেত, তাহলে সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে “আগামী ৯০,০০,০০০ বছরের জন্য বর্তমানে এটা যে-হারে শক্তি ব্যবহার করে, সেই পরিমাণ শক্তি” জুগিয়ে দিত, স্পেইস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টার (এসডব্লুপিসি) ওয়েব সাইট বলে।
সূর্যের শক্তি এর কেন্দ্র—নিয়ন্ত্রিতভাবে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের জন্য যন্ত্রবিশেষ—থেকে নির্গত হয়, যা পরমাণুগুলোকে একত্রে ভেঙে টুকরো টুকরো করে প্রচুর শক্তি উৎপাদন করে। সূর্য এতই বিশাল এবং এর কেন্দ্র এতই গভীর যে, এর কেন্দ্রে উৎপাদিত শক্তি বর্হিভাগে এসে পৌঁছাতে লক্ষ লক্ষ বছর সময় লাগে। “আজকে যদি সূর্য শক্তি উৎপাদন করা বন্ধ করে দেয়,” এসডব্লুপিসি ওয়েব সাইট বলে, “তাহলে পৃথিবীতে এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব বোঝার জন্য ৫,০০,০০,০০০ বছর সময় লাগবে!”
এখন এই বিষয়টা বিবেচনা করুন: আপনি যখন পরিষ্কার রাতে আকাশের দিকে তাকান, তখন আপনি হাজার হাজার নক্ষত্র দেখতে পান, যেগুলোর প্রত্যেকটাই আমাদের সূর্যের মতো প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত করে। আর বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছে যে, নিখিলবিশ্বে শত শত কোটি নক্ষত্র রয়েছে!
এইসমস্ত নক্ষত্র কোথা থেকে এসেছে? অধিকাংশ গবেষকই এখন বিশ্বাস করে, কিছু কারণের জন্য নিখিলবিশ্ব প্রায় ১,৪০০ কোটি বছর আগে হঠাৎ করেই অস্তিত্বে এসেছে আর সেই কারণগুলো তারা এখনও বুঝে উঠতে পারে না। বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে: “আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন।” (আদিপুস্তক ১:১) কোনো সন্দেহ নেই যে, শক্তি উৎপাদনকারী এই বিশাল যন্ত্রগুলো, যেগুলোকে আমরা নক্ষত্র বলে থাকি, সেগুলো যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁকে “শক্তির প্রাবল্য প্রযুক্ত” বলে বর্ণনা করা যেতে পারে।—যিশাইয় ৪০:২৬.
ঈশ্বর যেভাবে তাঁর শক্তি ব্যবহার করেন
যারা তাঁর ইচ্ছা পালন করে তাদেরকে সমর্থন করার জন্য যিহোবা তাঁর শক্তি ব্যবহার করেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত পৌল ঈশ্বর সম্বন্ধে অন্যদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। পৌল অতিমানবীয় শক্তির অধিকারী ছিলেন না কিন্তু চরম বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি অনেক উত্তম ২ করিন্থীয় ৪:৭-৯.
কাজ সম্পাদন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। কীভাবে? তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে “পরাক্রমের উৎকর্ষ” লাভ করেছিলেন।—এ ছাড়া, যারা তাঁর নৈতিক মানগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করে, তাদের ধ্বংস করার জন্যও যিহোবা ঈশ্বর তাঁর শক্তি ব্যবহার করেন। যিহোবা যে কেবলমাত্র দুষ্টদের ওপর তাঁর ধ্বংসাত্মক শক্তি ব্যবহার করেন, সেটার উদাহরণ হিসেবে যিশু খ্রিস্ট সদোম ও ঘমোরার ধ্বংস এবং নোহের দিনের জলপ্লাবনকে নির্দেশ করেছিলেন। যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, যারা যিহোবার মানগুলোকে উপেক্ষা করে তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য শীঘ্রই তিনি আবারও তাঁর শক্তি ব্যবহার করবেন।—মথি ২৪:৩, ৩৭-৩৯; লূক ১৭:২৬-৩০.
আপনি কীভাবে প্রভাবিত হন?
নক্ষত্ররাজির মধ্যে ঈশ্বরের শক্তির যে-প্রমাণ দেখা যায়, সেই বিষয়ে ধ্যান করার পর আপনি হয়তো রাজা দায়ূদের মতো অনুভব করতে পারেন, যিনি বলেছিলেন: “আমি তোমার অঙ্গুলি-নির্ম্মিত আকাশমণ্ডল, তোমার স্থাপিত চন্দ্র ও তারকামালা নিরীক্ষণ করি, [বলি], মর্ত্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্য-সন্তান বা কি যে, তাহার তত্ত্বাবধান কর?”—গীতসংহিতা ৮:৩, ৪.
হ্যাঁ, নিখিলবিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের নিজেদেরকে কতটা নগণ্য বলে মনে হয়, তা উপলব্ধি করা নম্রতার কাজ। কিন্তু, ঈশ্বরের শক্তির তুলনায় আমাদের নগণ্য অবস্থার কারণে নিজেদেরকে শক্তিহীন বলে মনে করা উচিত নয়। যিহোবা ভাববাদী যিশাইয়কে এই আশ্বাসদায়ক কথাগুলো লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন: “তিনি [ঈশ্বর] ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন, ও শক্তিহীন লোকের বল বৃদ্ধি করেন। তরুণেরা ক্লান্ত ও শ্রান্ত হয়, যুবকেরা স্খলিত, স্খলিত হয়; কিন্তু যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারা উত্তরোত্তর নূতন শক্তি পাইবে; তাহারা ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊদ্ধের্ব উঠিবে; তাহারা দৌড়িলে শ্রান্ত হইবে না; তাহারা গমন করিলে ক্লান্ত হইবে না।”—যিশাইয় ৪০:২৯-৩১.
আপনি যদি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার আকাঙ্ক্ষা করে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, তিনি আপনাকে তা করে চলার জন্য সাহায্য করতে তাঁর পবিত্র আত্মা দেবেন। তবে আপনাকে এর জন্য যাচ্ঞা করতে হবে। (লূক ১১:১৩) ঈশ্বরের সমর্থনে আপনি যেকোনো পরীক্ষা সহ্য করতে এবং যা সঠিক তা করার শক্তি অর্জন করতে পারবেন।—ফিলিপীয় ৪:১৩. (w০৮ ৫/১)
[৭ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
ঈশ্বরের সমর্থনে আপনি যা সঠিক তা করার শক্তি অর্জন করতে পারেন
[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ওপরে বামদিক থেকে ডানদিকে: আবর্তমান ছায়াপথ, কৃত্তিকা নক্ষত্রপুঞ্জ, কালপুরুষ নীহারিকা, উত্তরভাদ্রপদ ছায়াপথ
[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
সূর্যের ভর পৃথিবীর ভরের চেয়ে ৩,৩০,০০০ গুণ বেশি
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
কৃত্তিকা: NASA, ESA and AURA/Caltech; ওপরের অন্য সবগুলো: National Optical Astronomy Observatories