সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এক বৃক্ষ “যাহার পত্র ম্লান হয় না”

এক বৃক্ষ “যাহার পত্র ম্লান হয় না”

এক বৃক্ষ “যাহার পত্র ম্লান হয় না”

 আ পনি কি কখনো সতেজ, সবুজ গাছগাছালিতে ঢাকা কোনো গ্রাম দেখেছেন? আপনি সম্ভবত একমত হবেন যে, তা খুবই মনোরম এক দৃশ্য। আপনি যদি পাতা-ভরা অনেক বড়ো বড়ো বৃক্ষ দেখে থাকেন, তাহলে আপনি কি কল্পনা করবেন যে, সেই এলাকায় অনাবৃষ্টি রয়েছে? এর পরিবর্তে, আপনি বুঝতে পারবেন যে, এখানে নিশ্চয়ই প্রচুর জলের সরবরাহ রয়েছে, যা গাছগুলোকে সজীব ও পুষ্ট রাখে।

উপযুক্তভাবেই, বাইবেল আধ্যাত্মিকভাবে পুষ্ট বা বলবান ব্যক্তিদেরকে বড়ো, সতেজ বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম গীতের প্রথম তিনটে পদ থেকে এই অপূর্ব অংশটুকু লক্ষ করুন:

“ধন্য [“সুখী,” NW] সেই ব্যক্তি, যে দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলে না, পাপীদের পথে দাঁড়ায় না, নিন্দকদের সভায় বসে না। কিন্তু সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে। সে জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষের সদৃশ হইবে, যাহা যথাসময়ে ফল দেয়, যাহার পত্র ম্লান হয় না; আর সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।”

অনুরূপভাবে, যিরমিয় ১৭:৭, ৮ পদে আমরা পড়ি: “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে সদাপ্রভুতে নির্ভর করে, যাহার বিশ্বাসভূমি সদাপ্রভু। সে জলের নিকটে রোপিত এমন বৃক্ষের ন্যায় হইবে, যাহা নদীকূলে মূল বিস্তার করে, গ্রীষ্মের আগমনে সে ভয় করিবে না, এবং তাহার পত্র সতেজ থাকিবে; অনাবৃষ্টির বৎসরেও সে নিশ্চিন্ত থাকিবে, ফলদানেও নিবৃত্ত হইবে না।”

যে-ব্যক্তি যা সঠিক, তা-ই করেন, ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করেন এবং তাঁর ওপর পূর্ণরূপে নির্ভর করেন, তার প্রতি কী ঘটে সেই বিষয়টা দেখানোর জন্য উভয় পদেই বৃক্ষকে দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এটা আমাদেরকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পরিচালিত করে যে, কোন কোন উপায়ে এই ধরনের একজন ব্যক্তি রূপকভাবে বলতে গেলে সতেজ এক বৃক্ষের মতো? আসুন আমরা এই পদগুলো আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখি।

“জলস্রোতের তীরে রোপিত”

যে-বৃক্ষগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলোকে “জলস্রোতের তীরে” বা “জলের নিকটে” রোপিত বৃক্ষ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যিশাইয় ৪৪:৩, ৪ পদেও একইরকম রূপক বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে যিহোবা ঈশ্বর বলেছেন যে, তিনি কীভাবে অনুতপ্ত যিহুদিদের যত্ন নিয়েছিলেন, যারা বাবিলের বন্দিত্ব থেকে ফিরে এসেছিল। ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা বলেছিলেন: “আমি তৃষিত ভূমির উপরে জল, এবং শুষ্ক স্থানের উপরে জলপ্রবাহ ঢালিয়া দিব; . . . জলস্রোতের ধারে যেমন বাইশী বৃক্ষ, তেমনি তৃণের মধ্যে তাহারা অঙ্কুরিত হইবে।” এখানে “জলপ্রবাহ” ও ‘জলস্রোত’ ঈশ্বরের আশীর্বাদপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের, পাতা-ভরা বাইশী বৃক্ষের মতো বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে বলে বলা হয়েছে।

এমনকী আজকে কৃষিপ্রধান অঞ্চলগুলোতেও, আপনি দেখতে পাবেন যে, জলের এক বৃহৎ উৎস থেকে, যেমন কোনো গভীর কুয়ো, নদী, হ্রদ বা কোনো বাঁধ থেকে জলপ্রবাহ বা জলস্রোত প্রবাহিত হয়। সাধারণত সেগুলো হচ্ছে খেতখামারে বা আবাদী জমিতে জলসেচন ব্যবস্থার অংশ। মাঝে মাঝে, ফলের বাগানের দিকে জল সেচনের জন্য নালা কেটে দেওয়া হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে, জলস্রোত বা নালাগুলো একদিকে খেতগুলোতে আর অন্যদিকে সবুজ পাতা-ভরা বৃক্ষের সারিগুলো, সম্ভবত যেগুলো জমির সীমানা চিহ্নিত করার জন্য রোপিত, সেগুলোতে জলসেচন করে।

এইরকম জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষগুলো কীরকম হয়? গীতসংহিতা ১:৩ পদ এইরকম এক বৃক্ষের বিষয়ে বলে, “যাহা যথাসময়ে ফল দেয়।” বাইবেলে বর্ণিত দেশগুলোতে, ডুমুর, ডালিম, আপেল ও সেইসঙ্গে খেজুর ও জলপাই গাছ রয়েছে। যদিও ডালপালা-ভরতি একটা ডুমুর গাছ উচ্চতায় ৯ মিটার পর্যন্ত বেড়ে উঠতে পারে কিন্তু অধিকাংশ ফলের গাছ খুব বেশি লম্বা হয় না। তা সত্ত্বেও, সেগুলো সতেজ ও পুষ্ট হতে পারে এবং যথাসময়ে প্রচুর ফল উৎপন্ন করতে পারে।

প্রাচীনকালে, সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনের নদী ও জলস্রোতের তীরে বড়ো বড়ো বাইশী বৃক্ষ জন্মাতো। বাইবেলে বাইশী বৃক্ষ সম্বন্ধে বিভিন্ন উল্লেখ সাধারণত ‘নদীর তীরের’ সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। (লেবীয় পুস্তক ২৩:৪০) ‘উইলো গাছ,’ যেগুলো বাইশী বৃক্ষেরই গোত্রের, সেগুলোও যেখানে প্রচুর জল রয়েছে, সেখানে পাওয়া যেতে পারে। (যিহিষ্কেল ১৭:৫, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) এই বড়ো, সতেজ গাছগুলো উপযুক্তভাবেই সেই ধারণাকে প্রকাশ করে, যা গীতরচক এবং যিরমিয় দুজনেই জানাতে চেয়েছিল: যারা ঈশ্বরের ব্যবস্থা মেনে চলার চেষ্টা করে এবং তাঁর ওপর পূর্ণরূপে নির্ভর করে, তারা আধ্যাত্মিকভাবে বলবান থাকবে ‘আর তাহারা যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হইবে।’ জীবনে সাফল্য—আমরা কি তা-ই চাই না?

যিহোবার ব্যবস্থায় আমোদ করা

আজকে লোকেরা বিভিন্নভাবে সফল হওয়ার চেষ্টা করে থাকে। তারা সেই সব বিষয়ের পিছনে ছোটায় মগ্ন হয়, যেগুলো তাদের খ্যাতি ও ধনসম্পদ এনে দিতে পারে, কিন্তু প্রায়ই সেই সমস্তকিছুই অলীক ও হতাশাজনক বলে প্রমাণিত হয়। তাহলে, কী জীবনে প্রকৃত পরিতৃপ্তি ও স্থায়ী সুখ এনে দিতে পারে? যিশুর পর্বতেদত্ত উপদেশের কথাগুলোতে উত্তরটি পাওয়া যায়। তিনি বলেছিলেন: “ধন্য [“সুখী,” NW] যাহারা আত্মাতে দীনহীন, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই।” (মথি ৫:৩) বস্তুতপক্ষে, অনেক বস্তুগত জিনিস থাকার দ্বারা প্রকৃত সুখ আসে না কিন্তু আত্মাতে দীনহীন বা আধ্যাত্মিক চাহিদাকে উপলব্ধি ও পূরণ করার দ্বারাই তা আসে, যাতে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে বলবান থাকি, সেই সতেজ বৃক্ষগুলোর মতো, যেগুলো যথাসময়ে ফল দেয়। কীভাবে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করতে পারি?

গীতরচকের কথা অনুসারে, প্রথমত কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলোকে আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। তিনি ‘দুষ্টদের মন্ত্রণা,’ ‘পাপীদের পথ’ এবং ‘নিন্দকদের সভা’ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছেন। সুখী হওয়ার জন্য, আমাদের সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকে সরে আসতে হবে, যারা ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে উপহাস অথবা এমনকী অবজ্ঞা করে।

এরপর, আমাদের যিহোবার ব্যবস্থায় আমোদ করা উচিত। আমরা যখন কোনো কিছুতে বা কোনো কাজ করে আমোদিত হই, তখন আমরা সেই কাজে রত হওয়ার জন্য প্রতিটা সুযোগ খুঁজতে থাকি, তাই নয় কি? তাই, ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করার অর্থ হচ্ছে, ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি গভীর উপলব্ধি থাকা, এটি সম্বন্ধে আরও বেশি শেখার এবং এটিকে আরও ভালোভাবে বোঝার ইচ্ছা থাকা।

পরিশেষে, আমাদের নিয়মিত বাইবেল পড়তে হবে এবং ‘তাহা দিবারাত্র ধ্যান করিতে’ হবে। ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে আমাদের গীতরচকের মতো একইরকম অনুভব করা উচিত, যিনি গেয়েছিলেন: “আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়।”—গীতসংহিতা ১১৯:৯৭.

হ্যাঁ, যখন আমরা যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান ও বোধগম্যতা লাভ করি এবং তাঁর ওপর ও তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখি, তখন আমরা নিশ্চয়ই আধ্যাত্মিকভাবে বলবান হব। সেই ক্ষেত্রে, আমরা গীতরচকের দ্বারা বর্ণিত সেই সুখী ব্যক্তির মতো হব—‘যে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।’ (w০৯ ৩/১)