যখন যিহোবা নিজের সম্বন্ধে বর্ণনা দিয়েছিলেন
ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন
যখন যিহোবা নিজের সম্বন্ধে বর্ণনা দিয়েছিলেন
যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭
আপনি ঈশ্বর—তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং পথ—সম্বন্ধে কীভাবে বর্ণনা করবেন? কল্পনা করুন যে, আপনি ঈশ্বরকে তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করতে পারেন আর তিনি যখন নিজের গুণাবলি সম্বন্ধে বর্ণনা করেন, তখন তা শুনতে পারেন। ভাববাদী মোশির ঠিক এইরকমই এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আনন্দের বিষয় হল, যা ঘটেছিল তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তাকে অনুপ্রাণিত করা হয়েছিল।
সীনয় পর্বতে মোশি যিহোবার কাছে মিনতি করেছিলেন: “বিনয় করি, তুমি আমাকে তোমার প্রতাপ দেখিতে দেও।” (যাত্রাপুস্তক ৩৩:১৮) পরের দিন, ভাববাদীকে ঈশ্বরের প্রতাপ বা গৌরবের আভাস দেখার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। * সেই চমৎকার দর্শনে মোশি যা দেখেছিলেন, তার বিস্তারিত বর্ণনা তিনি দেননি। এর পরিবর্তে, তিনি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু—ঈশ্বর যা বলেছিলেন তা—লিপিবদ্ধ করেছিলেন। আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যিহোবা কী বলেছিলেন, যেমনটা যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭ পদে পাওয়া যায়।
যিহোবা নিজের সম্বন্ধে সবচেয়ে প্রথমে যে-বিষয়টা প্রকাশ করেন তা হল, তিনি হলেন “স্নেহশীল [“করুণাময়,” NW] ও কৃপাময় ঈশ্বর।” (৬ পদ) একজন পণ্ডিত ব্যক্তির মতানুসারে, “করুণাময়” হিসেবে অনুবাদিত ইব্রীয় শব্দটি ঈশ্বরের “কোমল সমবেদনাকে” নির্দেশ করে, “ঠিক যেমনটা একজন বাবার তার সন্তানদের প্রতি থাকে।” “কৃপাময়” বা সদয় হিসেবে অনুবাদিত শব্দটি এমন একটি ক্রিয়াপদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যা “সেই ব্যক্তির আন্তরিকভাবে সাড়া দেওয়াকে চিত্রিত করে, যার অভাবী কাউকে দেওয়ার জন্য কিছু রয়েছে।” স্পষ্টতই, যিহোবা চান আমরা যেন জানি যে, ঠিক যেমন বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের—কোমল প্রেম এবং তাদের প্রয়োজনগুলোর প্রতি গভীর চিন্তা সহকারে—তত্ত্বাবধান করে থাকে, তেমনই তিনি তাঁর উপাসকদের তত্ত্বাবধান করে থাকেন।—গীতসংহিতা ১০৩:১৩.
এরপর যিহোবা বলেন যে, তিনি হলেন “ক্রোধে ধীর।” (৬ পদ) তাঁর পার্থিব দাসদের সঙ্গে তিনি সহজেই রেগে যান না। এর পরিবর্তে, তিনি তাদের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু বা ধৈর্যশীল, তাদেরকে তাদের পাপপূর্ণ পথ পরিবর্তন করার জন্য সময় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভুলত্রুটিগুলোকে সহ্য করেন।—২ পিতর ৩:৯.
ঈশ্বর আরও বলেন, তিনি হলেন “দয়াতে [“প্রেমপূর্ণ-দয়া,” NW] ও সত্যে মহান্।” (৬ পদ) প্রেমপূর্ণ-দয়া অথবা অনুগত প্রেম হল এক মূল্যবান গুণ, যার দ্বারা যিহোবা নিজের এবং তাঁর লোকেদের মধ্যে এমন এক বন্ধন গড়ে তোলেন, যা অটুট ও চিরস্থায়ী। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৯) এ ছাড়া, যিহোবা হলেন সত্যের উৎস। তিনি প্রতারণা করেন না কিংবা কারো দ্বারা প্রতারিত হন না। যেহেতু তিনি হলেন “সত্যের ঈশ্বর,” তাই ভবিষ্যতের বিষয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোসহ তিনি যা-কিছু বলেন, সমস্ত কিছুতেই আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস রাখতে পারি।—গীতসংহিতা ৩১:৫.
যিহোবা চান আমরা যেন তাঁর সম্বন্ধে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ সত্য জানি আর তা হল, তিনি ‘অপরাধ, অধর্ম্ম ও পাপ’ ক্ষমা করেন। (৭ পদ) তিনি অনুতপ্ত পাপীদের প্রতি “ক্ষমাবান্” বা তাদের ক্ষমা করার জন্য তৈরি। (গীতসংহিতা ৮৬:৫) একইসময়ে, যিহোবা কখনোই মন্দতাকে প্রশ্রয় দেন না। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, “তিনি অবশ্য [পাপের] দণ্ড দেন [“কোনভাবেই শাস্তি থেকে রেহাই দেবেন না,” NW]।” (৭ পদ) পবিত্র এবং ন্যায়পরায়ণ ঈশ্বর স্বেচ্ছাকৃত পাপীদের শাস্তি থেকে রেহাই দেবেন না। আজ হোক বা কাল হোক, তাদের পাপপূর্ণ কাজের পরিণতি তাদেরকে ভোগ করতেই হবে।
তাঁর গুণাবলি সম্বন্ধে যিহোবার বর্ণনা হল এক স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, তিনি চান আমরা যেন তাঁকে জানি এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং পথের সঙ্গে পরিচিত হই। আপনি কি তাঁর চমৎকার গুণাবলি সম্বন্ধে আরও শেখার জন্য অনুপ্রাণিত হন না? (w০৯ ৫/১)
[পাদটীকা]
^ মোশি যিহোবাকে সরাসরি দেখেননি, কারণ কোনো মানুষ ঈশ্বরকে দেখলে বাঁচতে পারে না। (যাত্রাপুস্তক ৩৩:২০) যিহোবা স্পষ্টতই মোশিকে তাঁর গৌরব সম্বন্ধীয় এক দর্শন দিয়েছিলেন, প্রতিনিধিস্বরূপ একজন স্বর্গদূতের মাধ্যমে তার সঙ্গে ভাববিনিময় করেছিলেন।