আমার কতটা দান দেওয়া উচিত?
আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য
আমার কতটা দান দেওয়া উচিত?
“ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভাল বাসেন।” (২ করিন্থীয় ৯:৭) সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ লোক এই কথাগুলোর সঙ্গে পরিচিত রয়েছে। কিন্তু, নিয়মিতভাবে গির্জায় যায় এমন কিছু লোক হয়তো তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত দান দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা বোধ করতে পারে। বস্তুতপক্ষে, কিছু ধর্মীয় সম্প্রদায় তাদের সদস্যদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দান হিসেবে দাবি করে থাকে। এই রীতিকে দশমাংশ বলা হয়ে থাকে, অর্থাৎ একজনের আয়ের শতকরা দশ ভাগ গির্জায় দান করা।
বাইবেল কি প্রকৃতপক্ষে দাবি করে যে, আমরা যেন দান হিসেবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করি? ব্যক্তিগতভাবে বললে, আমার কতটা দান দেওয়া উচিত?
অতীতে বাধ্যতামূলক এবং স্বেচ্ছাকৃত দানগুলো
ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতির কাছ থেকে কতটা দান দাবি করেছিলেন, সেই বিষয়ে বাইবেলে স্পষ্ট নির্দেশাবলি রয়েছে। (লেবীয় পুস্তক ২৭:৩০-৩২; গণনাপুস্তক ১৮:২১, ২৪; দ্বিতীয় বিবরণ ১২:৪-৭, ১১, ১৭, ১৮; ১৪:২২-২৭) এই চাহিদাগুলো তাদের সাধ্যের বাইরে ছিল না। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তাঁর আইনগুলোর বাধ্য হওয়ার প্রতিদানে তিনি সেই জাতিকে “ঐশ্বর্য্যশালী” করবেন।—দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১, ২, ১১, ১২.
অন্যান্য ক্ষেত্রে, ইস্রায়েলীয়রা স্বেচ্ছায় কম-বেশি যতটা চাইত, ততটা দান দিতে পারত। উদাহরণস্বরূপ, রাজা দায়ূদ যখন যিহোবার জন্য মন্দির তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিলেন, তখন তার প্রজারা “পাঁচ সহস্র তালন্ত স্বর্ণ” দান দিয়েছিল। * (১ বংশাবলি ২৯:৭) পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু যা লক্ষ করেছিলেন, সেটার সঙ্গে এর তুলনা করুন। তিনি দেখেছিলেন যে, “একটী দীনহীনা বিধবা” মন্দিরের ভাণ্ডারে “দুইটী সিকি পয়সা রাখিতেছে।” তার দানের মূল্য কত ছিল? মাত্র এক দিনের মজুরির ১/৬৪ ভাগের সমান। তবুও যিশু বলেছিলেন যে, এই সামান্য পরিমাণ অর্থ গ্রহণযোগ্য ছিল।—লূক ২১:১-৪.
খ্রিস্টানদের কাছ থেকে কি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দাবি করা হয়?
খ্রিস্টানরা ইস্রায়েলকে দেওয়া ব্যবস্থা চুক্তির অধীন নয়। তাই ঈশ্বরকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তাদের নেই। কিন্তু, সত্য খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে দান দেওয়া প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসে। যিশু খ্রিস্ট নিজে বলেছিলেন: “পাওয়ার চেয়ে দেওয়ারই মধ্যে বেশি সুখ।”—প্রেরিত (শিষ্যচরিত) ২০:৩৫, বাংলা জুবিলী বাইবেল।
যিহোবার সাক্ষিরা স্বেচ্ছাকৃত দান দেওয়ার দ্বারা তাদের শিক্ষামূলক কাজকে সমর্থন করে থাকে। সেই দান সাহিত্যাদি, যেমন আপনি যে-পত্রিকাটি পড়ছেন সেটি ছাপাতে, কিংডম হল বলে পরিচিত তাদের উপাসনাস্থলগুলো তৈরি করতে এবং সেগুলোর দেখাশোনা করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সংগৃহীত কোনো দানই বেতন দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় না। কিছু ব্যক্তি, যারা শিষ্য তৈরির কাজে পূর্ণসময়ের জন্য নিজেদেরকে নিয়োজিত করে থাকে, তারা তাদের যাতায়াতের খরচ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচ বহন করার জন্য সাহায্য পেয়ে থাকে। কিন্তু কেউই এই ধরনের সাহায্যের জন্য দাবি করে না। বস্তুতপক্ষে, অধিকাংশ যিহোবার সাক্ষি তাদের শিক্ষামূলক কাজকে সমর্থন করার জন্য কোনোরকম আর্থিক সাহায্য পায় না। এর পরিবর্তে, অধিকাংশই নিজেদের ভরণপোষণ করার জন্য কাজ করে, ঠিক যেমন পৌল একজন তাঁবু নির্মাতা হিসেবে কাজ করেছিলেন।—২ করিন্থীয় ১১:৯; ১ থিষলনীকীয় ২:৯.
যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা সম্পাদিত কাজের জন্য যদি কোনো ব্যক্তি দান দিতে চান, তাহলে তার কতটা দেওয়া উচিত? প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছে, তদনুসারে দান করুক, মনোদুঃখপূর্ব্বক কিম্বা আবশ্যক বলিয়া না দিউক; কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভাল বাসেন।”—২ করিন্থীয় ৮:১২; ৯:৭. (w০৯ ০৮/০১)
[পাদটীকা]
^ ২০০৮ সালে, প্রায় ২৮·৩৫ গ্রাম সোনার গড় মূল্য ছিল ৮৭১ ডলার, তাই এই হিসাব অনুসারে সেই দানের মূল্য প্রায় ৪,৭৯,৪৮,৫৫,০০০ ডলার।