সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাইবেল কি আমাদেরকে যিশুর পুরো জীবনী সম্বন্ধে জানায়?

বাইবেল কি আমাদেরকে যিশুর পুরো জীবনী সম্বন্ধে জানায়?

বাইবেল কি আমাদেরকে যিশুর পুরো জীবনী সম্বন্ধে জানায়?

বাইবেল যেমন বলে যে, যিশু গল্‌গথায় মারা গিয়েছিলেন, কিন্তু এমনটা কি হতে পারে যে, তিনি সেখানে মারা যাননি বরং বেঁচেছিলেন? এটা কি সম্ভব যে, তিনি মগ্দলীনী মরিয়মকে বিয়ে করেছিলেন ও তার দ্বারা সন্তানের বাবা হয়েছিলেন? অথবা এরকম কি হতে পারে যে, তিনি রহস্যময় এক সন্ন্যাসী ছিলেন যিনি পার্থিব জীবনের সমস্ত সুখভোগকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন? এটা কি সম্ভব যে, তিনি এমন মতবাদগুলো শিক্ষা দিয়েছিলেন, যেগুলো বাইবেলে আমরা যা পড়ি সেগুলো থেকে আলাদা?

এই ধরনের অনুমানগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে আর এর আংশিক কারণ হল জনপ্রিয় সিনেমা এবং উপন্যাসগুলো এই ধারণা ছড়িয়ে দিয়েছে। মনগড়া কাহিনি ছাড়াও, এমন অনেক বই ও প্রবন্ধও রয়েছে যেগুলো সা.কা. দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীর এমন অপ্রামাণিক লেখাগুলোর ওপর মনোযোগ আকর্ষণ করে, যেগুলো দাবি করে যে, সেগুলো যিশু সম্বন্ধীয় এমন বিষয়গুলোকে প্রকাশ করে যেগুলো সুসমাচারের বইগুলো থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই দাবিগুলো কি যুক্তিযুক্ত হতে পারে? আমরা কি নিশ্চিত হতে পারি যে, বাইবেল আমাদেরকে যিশুর পুরো, সত্য জীবনী সম্বন্ধে জানায়?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে, তিনটে মূল বিষয় বিবেচনা করা সাহায্যকারী হবে। প্রথমত, যে-ব্যক্তিরা সুসমাচারের বিবরণগুলো লিখেছিল তাদের সম্বন্ধে এবং কখন তারা সেগুলো লিখেছিল সেই সম্বন্ধে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে হবে; দ্বিতীয়ত, আমাদের জানতে হবে যে, শাস্ত্রের প্রামাণিক অংশগুলো কারা ও কীভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল; এবং তৃতীয়ত, অপ্রামাণিক লেখাগুলো সম্বন্ধে ও কীভাবে সেগুলো প্রামাণিক অংশগুলো থেকে ভিন্ন, সেই সম্বন্ধে আমাদের কিছু পটভূমি প্রয়োজন। *

খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র কখন ও কাদের দ্বারা লেখা হয়েছিল?

কিছু তথ্যগ্রন্থ অনুসারে, মথির সুসমাচারটি খ্রিস্টের মৃত্যুর পর, অষ্টম বৎসরের শুরুর দিকে অর্থাৎ সা.কা. প্রায় ৪১ সালে লেখা হয়েছিল। যদিও অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করে যে, এটি কিছু সময় পরে লেখা হয়েছিল কিন্তু সাধারণভাবে এই বিষয়ে সকলে একমত যে, খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর সমস্ত বই সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে লেখা হয়েছিল।

যিশুর জীবন, মৃত্যু ও পুনরুত্থান সম্বন্ধীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা তখনও জীবিত ছিল; তারা সুসমাচারের বিবরণগুলোকে যাচাই করতে পারত। এ ছাড়া, তারা ভুলগুলোকে সহজেই প্রকাশ করতে পারত। বাইবেল পণ্ডিত এফ. এফ. ব্রুস বলেন: “প্রেরিতদের প্রারম্ভিক প্রচারের মধ্যে একটা জোরালো বিষয় হল শ্রোতাদের জ্ঞানের প্রতি দৃঢ়প্রত্যয়জনক আবেদন; তারা কেবল একথাই বলেনি যে, ‘আমরা এই সমস্তকিছুর সাক্ষি,’ কিন্তু এও বলেছিল যে, ‘যেমন তোমরা নিজেরাও জান’ (প্রেরিত ২:২২)।”

খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর লেখক কারা ছিল? যিশুর ১২ জন প্রেরিতের কয়েক জন তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা এবং বাইবেলের অন্য লেখকরা, যেমন যাকোব, যিহূদা আর সম্ভবত মার্ক সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে উপস্থিত ছিল, যখন খ্রিস্টীয় মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল। পৌলসহ সমস্ত লেখক, প্রেরিত ও যিরূশালেমের প্রাচীনবর্গ নিয়ে গঠিত প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর প্রারম্ভিক পরিচালকগোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে একতাবদ্ধ ছিল।—প্রেরিত ১৫:২, ৬, ১২-১৪, ২২; গালাতীয় ২:৭-১০.

যিশু প্রচার করার ও শিক্ষা দেওয়ার যে-কাজ শুরু করেছিলেন, সেই কাজ করে যাওয়ার জন্য তিনি তাঁর অনুসারীদের নিযুক্ত করেছিলেন। (মথি ২৮:১৯, ২০) এমনকী তিনি বলেছিলেন: “যে তোমাদিগকে মানে, সে আমাকেই মানে।” (লূক ১০:১৬) অধিকন্তু, তিনি তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা বা সক্রিয় শক্তি সেই কাজ করার জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করবে। তাই লেখাগুলো যখন প্রেরিত অথবা তাদের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের অর্থাৎ যে-লোকেরা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছিল, তাদের কাছ থেকে এসেছিল তখন প্রাথমিক খ্রিস্টানেরা স্বভাবতই এই ধরনের বইগুলোকে নির্ভরযোগ্য বলে গ্রহণ করে নিয়েছিল।

কিছু বাইবেল লেখক তাদের সহলেখকদের লেখাগুলোর নির্ভরযোগ্যতা ও ঐশিক অনুপ্রেরণার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত পিতর পৌলের চিঠিগুলোকে নির্দেশ করে সেগুলোকে ‘অন্য সমস্ত শাস্ত্রলিপির’ অংশ বলে উল্লেখ করেছিলেন। (২ পিতর ৩:১৫, ১৬) পৌল নিজে স্বীকার করেছিলেন যে, প্রেরিত ও অন্য খ্রিস্টান ভাববাদীরা ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।—ইফিষীয় ৩:৫.

তাই সুসমাচারের বিবরণগুলো এই নিশ্চয়তা দেয় যে, এগুলো নির্ভরযোগ্য এবং প্রামাণিক। এগুলো কেবল লোককাহিনি ও রূপকথা ছিল না। এগুলো হল প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় মনুষ্যদের দ্বারা লিখিত মনোযোগপূর্বক লিপিবদ্ধ ইতিহাস।

বাইবেলের প্রামাণ্য অংশগুলোকে কারা নির্বাচন করেছিল?

কিছু লেখক দাবি করেছে যে, খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর প্রামাণ্য অংশগুলোকে অনেক শতাব্দী পর একটা গির্জা বেছে নিয়েছিল, যেটা সম্রাট কনস্ট্যানটিনের নির্দেশাধীন এক প্রতিষ্ঠিত শক্তি ছিল। কিন্তু, প্রমাণ অন্য কিছু দেখায়।

উদাহরণস্বরূপ, গির্জার ইতিহাসের অধ্যাপক অস্কার স্কারসাউনি যা বলেন তা লক্ষ করুন: “কোন লেখাগুলো নূতন নিয়ম-এর অন্তর্ভুক্ত হবে আর কোন লেখাগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে না, সেটা গির্জার কোনো পরিষদের অথবা আলাদা কোনো ব্যক্তির দ্বারা কখনো নির্ধারিত হতো না . . . মানদণ্ড খোলাখুলি ও খুবই যুক্তিসংগত ছিল: সা.কা. প্রথম শতাব্দীর লেখাগুলো, যেগুলো প্রেরিত অথবা তাদের সহকর্মীদের দ্বারা লিখিত বলে মনে করা হতো, সেগুলোকেই নির্ভরযোগ্য বলে গণ্য করা হয়েছিল। অন্য লেখাগুলো, চিঠিগুলো অথবা ‘সুসমাচারের বইগুলো’ যেগুলো পরে লেখা হয়েছিল, সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি . . . এই প্রক্রিয়া কনস্ট্যানটিনের এবং তার ক্ষমতাসীন গির্জা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বহু পূর্বে পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। ক্ষমতাসীন গির্জা নয় বরং শহীদ খ্রিস্টানরাই আমাদেরকে নূতন নিয়ম প্রদান করেছিল।”

একজন সহযোগী অধ্যাপক কেন্‌ বার্ডিং যার অধ্যয়নের বিষয় হল খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র, তিনি বাইবেলের প্রামাণ্য অংশগুলো কীভাবে এসেছে সেই বিষয়ে এই মন্তব্যটি করেন: “গির্জা তার পছন্দমতো বাইবেলের কোনো প্রামাণ্য অংশকে প্রতিষ্ঠা করেনি; এর চেয়ে এটা বলা আরও সঠিক হবে যে, গির্জা সেই বইগুলোকে স্বীকার করে নিয়েছিল, যেগুলোকে খ্রিস্টানরা সবসময়েই ঈশ্বরের কাছ থেকে এক নির্ভরযোগ্য বাক্য হিসেবে বিবেচনা করত।”

কিন্তু, বাইবেলের প্রামাণ্য অংশগুলোকে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে শুধু কি প্রথম শতাব্দীর অতি সাধারণ খ্রিস্টানরাই ছিল? বাইবেল আমাদের জানায় যে, আরও গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী কোনো কিছু কার্যরত ছিল।

বাইবেল অনুসারে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলী পবিত্র আত্মার ‘নানা প্রকার অনুগ্রহ-দান’ লাভ করেছিল। (১ করিন্থীয় ১২:৪) এর ফলে, পবিত্র আত্মা কিছু খ্রিস্টানকে কোন লেখাগুলো প্রকৃতই ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত আর কোন লেখাগুলো অনুপ্রাণিত নয়, সেটার মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করেছিল। তাই, আজকেও খ্রিস্টানরা আস্থা রাখতে পারে যে, যে-শাস্ত্রগুলোকে বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো অনুপ্রাণিত বলে স্বীকৃত।

তাহলে স্পষ্টতই, বাইবেলের প্রামাণিক অংশগুলোকে পবিত্র আত্মার নির্দেশনাধীনে শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সা.কা. দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষের দিকে, কিছু লেখক বাইবেলের বইগুলোর প্রামাণিকতা সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিল। কিন্তু, এই লেখকরা বাইবেলের প্রামাণ্য অংশগুলোকে প্রতিষ্ঠা করেনি; তারা শুধু ঈশ্বর ইতিমধ্যে তাঁর পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত তাঁর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যা গ্রহণ করেছিলেন, সেটার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিল।

এ ছাড়া, প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলোও বর্তমানে সাধারণ্যে গৃহীত বাইবেলের প্রামাণ্য অংশগুলোকে সমর্থন করার জন্য জোরালো প্রমাণ জোগায়। মূল ভাষাতে গ্রিক শাস্ত্র-এর ৫,০০০-রেরও বেশি পাণ্ডুলিপি রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে কিছু দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীর। অপ্রামাণিক লেখাগুলো নয় বরং এগুলো ছিল সেই লেখা, যেগুলোকে সা.কা. প্রাথমিক শতাব্দীর সময়ে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হতো আর তাই সেগুলোকে প্রতিলিপি করে ব্যাপকভাবে বিতরণ করা হয়েছিল।

কিন্তু, আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্যপ্রমাণ হল প্রামাণিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। প্রামাণ্য লেখাগুলো ‘সেই নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শের’ সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেগুলোকে আমরা বাইবেলের বাকি অংশে পাই। (২ তীমথিয় ১:১৩) এগুলো পাঠকদেরকে যিহোবাকে ভালোবাসতে, উপাসনা করতে এবং সেবা করতে জোরালো পরামর্শ দেয় আর সেইসঙ্গে কুসংস্কার, ভৌতিক ক্রিয়াকলাপ এবং মানুষ ও দূতদের উপাসনার বিরুদ্ধে সাবধান করে। এগুলো ঐতিহাসিকভাবে সঠিক এবং এগুলোতে সত্য ভবিষ্যদ্‌বাণী রয়েছে। আর এগুলো পাঠকদেরকে তাদের সহমানবদেরকে ভালোবাসতে উৎসাহিত করে। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর বইগুলোতে এরকম স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অপ্রামাণিক লেখাগুলো সম্বন্ধে কি একই কথা বলা যায়?

অপ্রামাণিক লেখাগুলো কীভাবে আলাদা?

অপ্রামাণিক লেখাগুলো প্রামাণিক লেখাগুলো থেকে একেবারে আলাদা। এই অপ্রামাণিক বইগুলো হল দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রায় মাঝামাঝি সময়ের, যা প্রামাণিক লেখাগুলোর অনেক পরে। সেগুলো যিশু ও খ্রিস্টধর্ম সম্বন্ধে এমন এক চিত্র তুলে ধরে, যা অনুপ্রাণিত শাস্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

উদাহরণস্বরূপ, থমাসের সুসমাচার যেটা অপ্রামাণিক, যিশু সম্বন্ধে কিছু অদ্ভুত বিষয় উল্লেখ করে যেমন, স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করা সম্ভবপর করার জন্য তিনি মরিয়মকে একজন পুরুষে পরিণত করেছিলেন। শৈশবকাল সম্বন্ধীয় থমাসের সুসমাচার, শিশু যিশুকে এক হীন শিশু হিসেবে বর্ণনা করে, যিনি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য শিশুদের মৃত্যুর কারণ হয়েছিলেন। পৌলের ও পিতরের অপ্রামাণিক কার্যবিবরণীগুলো যৌনসম্পর্ক করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার ওপর জোর দেয় আর এমনকী বর্ণনা করে যে, প্রেরিতরা স্ত্রীলোকদেরকে তাদের স্বামীদের কাছ থেকে পৃথক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। যিহূদার সুসমাচার বর্ণনা করে যে, তাঁর শিষ্যরা যখন খাবারের আগে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিল, তখন যিশু হেসেছিলেন। এই ধারণাগুলো প্রামাণিক বইগুলোতে যা পাওয়া যায়, সেটার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।—মার্ক ১৪:২২; ১ করিন্থীয় ৭:৩-৫; গালাতীয় ৩:২৮; ইব্রীয় ৭:২৬.

অপ্রামাণিক লেখাগুলোর অধিকাংশই খ্রিস্টীয় রহস্যবাদীদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে যারা এই ধারণা পোষণ করত যে, সৃষ্টিকর্তা যিহোবা একজন ভালো ঈশ্বর নন। এ ছাড়া, তারা এও বিশ্বাস করত যে, পুনরুত্থান আক্ষরিক নয়, সমস্ত ভৌত বিষয়ই মন্দ আর শয়তান হল বিয়ে ও সন্তান জন্মদানের উৎস।

বেশ কিছু অপ্রামাণিক বইগুলোর লেখক হিসেবে বাইবেলের চরিত্রগুলোকে নির্দেশ করা হয় কিন্তু আসলে তা সঠিক নয়। কোনো গোপন চক্রান্ত কি বাইবেল থেকে এই বইগুলোকে বাদ দিয়েছিল? অপ্রামাণিক বিষয় সম্বন্ধীয় একজন বিশেষজ্ঞ এম. আর. জেমস বলেছিলেন: “নূতন নিয়ম থেকে কেউ এগুলোকে বাদ করে দিতে পারে সেই প্রশ্নই ওঠে না, সেগুলো নিজে নিজেই বাদ হয়েছে।”

আসন্ন ধর্মভ্রষ্টতা সম্বন্ধে বাইবেলের লেখকরা সাবধান করেছিল

প্রামাণিক লেখাগুলোতে, আমরা আসন্ন ধর্মভ্রষ্টতা সম্বন্ধে বেশ কিছু সতর্কবাণী পাই, যেগুলো খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলোকে কলুষিত করবে। বস্তুতপক্ষে, এই ধর্মভ্রষ্টতা প্রথম শতাব্দীতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছিল কিন্তু প্রেরিতরা সেটা ছড়িয়ে পড়াকে রোধ করেছিল। (প্রেরিত ২০:৩০; ২ থিষলনীকীয় ২:৩, ৬, ৭; ১ তীমথিয় ৪:১-৩; ২ পিতর ২:১; ১ যোহন ২:১৮, ১৯; ৪:১-৩) এই ধরনের সতর্কবাণীগুলো সেই লেখাগুলোর ওপর আলোকপাত করেছিল যেগুলো প্রেরিতদের মৃত্যুর পর বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল আর যিশুর শিক্ষাগুলোর সঙ্গে যেগুলোর মিল ছিল না।

এটা ঠিক যে, এই ধরনের লেখাগুলো কিছু পণ্ডিত ও ইতিহাসবেত্তার কাছে পুরোনো ও শ্রদ্ধেয় বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বিবেচনা করুন: কী হবে যদি পণ্ডিতদেরকে আজকের দিনে ছাপানো একগুচ্ছ অনির্ভরযোগ্য, সম্ভবত পরচর্চা সম্বন্ধীয় পত্রিকা এবং ধর্মীয় গোঁড়া দলগুলোর প্রকাশনাগুলো থেকে গৃহীত লেখাগুলোকে সংগ্রহ করতে হয় আর তারপর সিল করে সংরক্ষিত করে রাখে? সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কি সেই লেখাগুলো সত্য ও নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণিত হবে? ১,৭০০ বছর পর, সেই মিথ্যা ও অর্থহীন নথিগুলো শুধুমাত্র খুব পুরোনো বলেই কি সত্য বলে প্রমাণিত হবে?

অবশ্যই না! অপ্রামাণিক বইগুলো থেকে এইরকম দাবিগুলোর ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য যেমন, যিশু মগ্দলীনী মরিয়মকে বিয়ে করেছিলেন এবং আরও অন্যান্য বিকৃত মন্তব্য। তাই বিশেষ করে যখন নির্ভরযোগ্য লেখাগুলো হাতের কাছেই রয়েছে, তখন কেন-ই বা অনির্ভরযোগ্য তথ্যগ্রন্থগুলোর ওপর নির্ভর করব? তাঁর পুত্র সম্বন্ধে প্রত্যেকটা বিষয় যা আমরা জানি বলে ঈশ্বর চান তা বাইবেলেই রয়েছে—এমন এক বিবরণ যেটির ওপর আমরা নির্ভর করতে পারি। (w১০-E  ০৪/০১)

[পাদটীকা]

^ ৬৬টি বইকে সাধারণত বাইবেলের বইগুলোর এক সংগ্রহ বলে স্বীকার করা হয়, যেগুলো ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়ার দৃঢ় প্রমাণ জোগায় এবং যেগুলো ঈশ্বরের বাক্যের এক অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অংশ।

[২৬ পৃষ্ঠার ক্যাপশন]

যিশুর জীবন বাইবেলের গ্রিক অংশের লেখাগুলো অপ্রামাণিক বইয়ের লেখাগুলো

সা.কা.পূ.২ সাল সা.কা. ৩৩ সাল ৪১ ৯৮ ১৩০ ৩০০

[সৌজন্যে]

Kenneth Garrett/National Geographic Image Collection

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রেরিত পৌল বিভিন্ন অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেছিলেন, এমনকী একজনকে পুনরুত্থিত করেছিলেন যা এই বিষয়ে জোরালো প্রমাণ জুগিয়েছিল যে, ঈশ্বরের আত্মা তাকে ও তার লেখাগুলোতে সাহায্য করেছিল